॥ ৮ ॥
যখন আমাদের কথাবার্তা ও ব্যবস্থাদি বেশ খানিকটা এগিয়েছে, তখন আমি এই অন্তর্ধান-পর্বের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের ভার পেলাম। যেমন রোজ সন্ধ্যাবেলা যাই তেমনি সেদিনও রাঙাকাকা-বাবুর কাছে গিয়েছি। গিয়ে দেখলাম ঘর-ভরতি অনেক লোক। আমি তাই বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু উনি আমাকে ভেতরে ডেকে পাঠালেন এবং একজন সুদর্শন পাঠানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি হলেন মিয়া আকবর শাহ। রাঙাকাকাবাবু বললেন যে, সেদিন রাত্রেই মিয়াসাহেব দেশে ফিরে যাচ্ছেন, রাঙাকাকাবাবু তাঁর সেক্রেটারিকে আগেই হাওড়া স্টেশনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন মিয়া-সাহেবের রেল টিকেট ও রিজার্ভেশনের ব্যবস্থা করতে। আমাকে ভার দিলেন প্রথমে মিয়াসাহেবকে আমার গাড়িতে করে একটু কেনাকাটার জন্য বাজারে নিয়ে যেতে হবে, তারপর তাঁর হোটেল থেকে মালপত্র তুলে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিতে হবে। রাঙাকাকাবাবু আমাকে বিশেষ করে বলে দিলেন স্টেশনের ভিতরে যেন আমি না যাই। ওঁর সেক্রেটারি স্টেশনের সামনেই থাকবেন, এবং মিয়াসাহেবকে রওনা করে দেবেন। আমি যেন মিয়াসাহেবকে স্টেশনের গাড়ি-বারান্দায় ছেড়ে দিয়েই চলে আসি।
সেদিন আমার গাড়ির ড্রাইভার ছিল, আমি মিয়াসাহেবের সঙ্গে পিছনের সীটে বসে ইংরেজীতে আলাপ করতে লাগলাম। উনি আমাকে বললেন, রাঙাকাকাবাবু ওঁকে বলেছেন যে, তাঁর ওপর যেমন অপর প্রান্তের ও সীমান্তের ওপারের ব্যবস্থাপনার ভার ন্যস্ত হয়েছে, তেমনি এ প্রান্তে ওঁর সাহায্যকারী হিসাবে উনি আমাকে বেছে নিয়েছেন। মিয়াসাহেব আমাকে বললেন, ওঁকে ধর্মতলার ওয়াছেল মোল্লার দোকানে নিয়ে যেতে। উনি একটা টুপি ও পাজামা নেতাজীর ছদ্মবেশের জন্য কিনবেন। উনি যখন হাওড়া স্টেশনে নেমে যাবেন তখন ইচ্ছাকৃতভাবে প্যাকেটটা ভুলে ফেলে যাবেন, আর আমি প্যাকেটটির ভার গ্রহণ করব। আমি আগেই লক্ষ্য করেছিলাম যে, রাঙাকাকাবাবুর ঘরে একটা দরজীর জামা-কাপড় মাপার ফিতে পড়ে আছে।