আট
মার্টিন লুথার খ্রীষ্টানধর্মে নতুন ভাবধারা বয়ে নিয়ে এলেন। প্রাচীন ধর্মীয় রূপের শৃঙ্খলপাশ ছিন্ন করে বেরিয়ে এল প্রোটেস্টন্টবাদ। তার কণ্ঠে নবযুগের উদার আহ্বান। ইউরোপের সমাজদেহে প্রচণ্ড আলোড়নের সৃষ্টি হল। নতুন আদর্শ আর নতুন সম্ভাবনার দ্বারা খুলে গেল।
কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া সুদূর প্রাচ্যের মসলা-বাণিজ্যের উপর- যে এমনভাবে ঘা মেরে বসবে সে কথা কেইবা ভাবতে পেরেছিল! ঘন্টা বেজে উঠলঃ অঙ্ক শেষ, অভিনেতারা প্রস্তুত হও, তোমাদের প্রস্থানের সময় এসে গেছে। এখন নতুন অভিনেতারা মঞ্চে প্রবেশ করবে।
রোমের পোপ এখন আর সমস্ত খ্রীস্টানজগতের একচ্ছন্ন ধর্মীয় নেতা নন। তাঁর পবিত্র আদেশ এখন শুধু রোমান ক্যাথলিকদের উপরেই প্রযোজ্য।
পোপ নিকোলাস প্রাচ্যজয়ের অধিকার একমাত্র পোর্তুগালকেই দিয়েছিলেন। আর কোন খ্রীস্টান রাজ্যের সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। প্রোটেস্টান্টদের কাছে সেই নিষেধের কোন মূল্য নেই। এতদিন ধরে যারা মুগ্ধ আর লুব্ধ দৃষ্টিতে সম্পদশালিণী ভারতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা করছিল, তারা এবার প্রস্তুত হয়ে উঠে বসল।
ইউরোপের মধ্য-উত্তরাঞ্চলেই মসলার চাহিদা সবচেয়ে বেশী। ফলে মসলা বাণিজ্য পোর্তুগালের একচেটিয়া হলেও মসলার বাজার পোর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে উত্তর দিকে সরে গিয়েছিল। ইউরোপের ভেতরে মসলা নিয়ে ব্যবসা করবার ব্যাপারে ডাচ বণিকরা প্রধান স্থান অধিকার করে নিয়েছিল। একচেটিয়া বাণিজ্যের সুযোগে পোর্তুগাল মসলার দাম এত বেশী চড়িয়ে দিয়েছিল যে, ডাচ বণিকদের অসন্তোষ দিন দিনই বেড়ে চলছিল। তারা বলাবলি শুরু করল, এত চড়া দাম দিয়ে মসলা কেনা চলবে না, আমাদের বিকল্প পন্থ দেখতে হবে।
বিকল্প পন্থার মানে পোর্তুগীজদের হাত থেকে মসলার বাণিজ্যকে ছিনিয়ে নেওয়া। ডাচ বণিকদের কাছে এই খবরটা অজানা ছিল না যে, প্রাচ্য অঞ্চলে পোর্তুগীজদের শক্তির ভিত্তিটা খুবই কাঁচা। ভাল করে ঘা দিতে পারলে ওদের শক্তির সৌধটা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে।
১৫৯২ খ্রীষ্টাব্দে আমস্টারডামের বিশিষ্ট ডাচ বণিকরা এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবার জন্য একত্রিত হলেন। সেই সভায় তাঁরা স্থির করলেন যে, ভারতবর্ষের সঙ্গে বাণিজ্য করবার জন্য একটি কোম্পানী গঠন করতে হবে। কিন্তু ভারতবর্ষে যাবার পথঘাট এবং সেখানকার অবস্থার সম্পর্কে কোন পরিষ্কার ধারণা তাদের ছিল না। পোর্তুগীজরা ডোম ম্যানুয়েলের রাজত্বকালেও ভারতবর্ষে যাবার পথটাকে একান্তভাবে গোপন করে রাখবার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করে নি। ডোম ম্যানুয়েল ১৫০৪ খ্রীষ্টাব্দে এক নির্দেশ জারী করেন যে, তাদের অঙ্কিত মানচিত্রে ভারতবর্ষে যাবার পথ-সম্পর্কে কোন রকম ইঙ্গিত আভাস যেন না থাকে।
আগেকার যে-সব মানচিত্রে পথ-নির্দেশক চিহ্ন ছিল, তাদের সংগ্রহ করে, ঐ চিহ্নগুলো মুছে ফেলবার আদেশ দেওয়া হয়।
পোর্তুগীজরা তাদের এই মহামূল্যবান পথকে অন্য সকলের দৃষ্টি থেকে অতি সঙ্গোপনে রক্ষা করবার চেষ্টা করে চলত। কিন্তু এ যুগে কতদিন পর্যন্ত তা আর সম্ভব? ডাচ বণিকেরা এই সম্পর্কে অতি প্রয়োজনীয় গুপ্ত খবরাখবরগুলো সংগ্রহ করে আনবার জন্য কর্ণেলিয়াস দ্য হাউটম্যানকে লিসবনে পাঠান। এ ছাড়া তাদের আরও একটি সূত্র ছিল। জান হুইজেন লিন্সকোটেন এক সময়ে গোয়ার আর্কবিশপের সেক্রেটারি ছিলেন। সেখানে থাকার ফলে প্রাচ্য অঞ্চলে পোর্তুগীজদের শক্তি ও দুর্বলতা-সম্পর্কে ভাল করেই ওয়াকিফহাল ছিলেন তিনি। এইভাবে হাউটম্যান ও লিন্সকোটেনের সাহায্যে ডাচ বণিকেরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করে নিলেন।
১৫৯৫ খ্রীস্টাব্দে ডাচদের প্রথম বহর মসলার সন্ধানে যাত্রা করল। এই বহরে চারটি জাহাজ ছিল। পরিচালক ছিলেন স্বয়ং হাউট-ম্যান। ভারতবর্ষে নয়, এই বহর মসলার উৎপত্তি যেখানে সেই ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে পৌছল। এই প্রথম অভিযাত্রী দল, আড়াই বছর পরে ফিরে এল স্বদেশে। বহু দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। ক্ষয়ক্ষতিও কম ভোগ করতে হয় নি। এই বহর ২৫৯ জন লোক নিয়ে যাত্রা করেছিল। যখন ফিরে এল, তখন তাদের মধ্যে মাত্র ৮৯ জন লোক অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এই প্রথম যাত্রায় মুনাফার পরিমাণ দেখে ডাচ বণিকরা উল্লসিত হয়ে উঠল। যে—মসলা তারা আমদানি করেছিল, তা বিক্রি করে তাদের ৮০০০ ফ্লোরিন লাভ হয়েছিল।
এইবার পোর্তুগালের একচ্ছত্র সাম্রাজের নতুন ভাগীদার দেখা দিল। এর পর থেকে প্রাচ্য অঞ্চলে ডাচ বাণিজ্য জাহাজের নিয়মিত চলাচল শুরু হয়ে গেল। গড়ে উঠল ইউনাইটেড ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী। ১৬০২ খ্রীষ্টাব্দে এই কোম্পানী সরকার থেকে পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্য করবার একচেটিয়া অধিকার লাভ করল। শুধু তাই নয়, এই কোম্পানীকে সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করা, নতুন এলাকা জয় করা, দুর্গ গঠন করা এবং আরও কোন কোন বিষয়ে সর্বময় কর্তৃত্ব দেওয়া হোল।
এই অধিকারের জোরে কোম্পানী ১৬০৪ খ্রীষ্টাব্দে পোর্তুগীজদের চিরশত্রু ‘মালাবার সম্রাট জামোরিন’–এর সঙ্গে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হোল। সন্ধির উদ্দেশ্যে “সাম্রাটের” রাজ্য এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থান থেকে পার্তুগীজদের বিতাড়ন। কিন্তু অ্যালবুকার্ক এই সমুদ্র সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য যে রক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, তার মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে না পারলে এ কখনও সম্ভব হতে পারে না। ডাচ কোম্পানী স্থির করল, পোর্তুগীজদের প্রথমে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ থেকে অপসারিত করতে হবে; কেননা পোর্তুগীজরা তখনও সেখানে দৃঢ় হয়ে বসতে পারে নি।
কোম্পানী এবার তার কর্মসূচী-অনুযায়ী কাজ আরম্ভ করল। ১৬০৯ খ্রীস্টাব্দে তারা পোর্তুগীজদের হাত থেকে এমবয়না দ্বীপ দখল করে নিল। উপনিবেশ-স্থাপনের পথে এই তাদের প্রথম পদক্ষেপ। এর ১৪ বছর বাদে কোম্পানীর পক্ষে জান পিয়েটার্জ কোয়েন যখন জাকার্তা অধিকার করে বসলেন, সেই দিন থেকেই ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ প্রভুত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রাচ্য সমুদ্রের আতঙ্ক পোর্তুগীজ নৌ-বাহিনী এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়ে পেছনে হটল। এই উপলক্ষে বিজয়ী কোয়েন সেদিন কোম্পানীর ডিরেক্টরদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ উর্বরা ভূমি ও সমুদ্র আপনাদের করতলগত হয়েছে। বিবেচনা করে দেখুন, সাহস থাকলে কি না সম্পন্ন করা যায়। আরও দেখুন, সর্বশক্তিমান ভগবান কিভাবে আমাদের পক্ষ হয়ে সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের উপর সৌভাগ্য ধারা বর্ষণ করেছেন!
সেদিন প্রোটেস্টান্ট হল্যাণ্ডের সামাজিক স্বার্থরক্ষার জন্য তাদের ভগবানকে রোমান ক্যাথলিক পোর্তুগালের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামতে হয়েছিল। যুগ যুগ ধরে এই রীতিই প্রচলিত হয়ে আসছে। পররাজ্য লুণ্ঠন বা জয় করবার জন্যই হোক, অথবা মানুষকে অত্যাচার বা শোষণ করবার জন্যই হোক, কি খ্রীস্টান, কি হিন্দু, কি মুসলমান সকলের ভগবানকেই ভক্তদের সঙ্গে এই কাজে শরীক হতে হয়। অতীতেও তাদের এই দায়িত্ব ছিল, বর্তমানেও তা শেষ হয়ে যায় নি।
১৬৩৩ খ্রীষ্টাব্দের এন্টনি ভ্যান ভিয়েমেন এই নতুন ডাচ সাম্রাজ্যের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। তিনিই এই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন এবং পোর্তুগীজদের বিতাড়ন কার্য তার হাতেই সুস্পন্ন হয়।
১৬৪১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পোর্তুগীজদের হাত থেকে মালাক্কার শক্তিশালী ঘাটি ছিনিয়ে নিলেন। অ্যালবুকার্ক যে রক্ষা-ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, এবার তার মধ্যে ভাঙ্গন ধরল। এবার ঘাঁটিতে বসে ডাচ ঔপনিবেশিকেরা ভারতবর্ষের বাণিজ্যের দিকে শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সেই বাণিজ্য তখনও পোর্তুগীজদের হাতেই ছিল। পোর্তুগীজরা ইতিপূর্বে সিংহলের কলম্বো বন্দরে ঘাঁটি করে বসেছিল। ডাচদের পরিকল্পনা ছিল, এই কলম্বো থেকেই ভারতবর্ষের পোর্তুগীজ ঘাঁটিগুলোর উপর আক্রমণ চালাতে হবে। সে সময় কলম্বোর পোর্তুগীজদের সঙ্গে সিংহলের রাজাদের সংঘর্ষ চলছিল। ডাচরা মালাক্কা থেকে সিংহলের রাজাদের সাহায্য করতে লাগল। কিন্তু কলম্বো থেকে পোর্তুগীজদের হটিয়ে দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। অনেক দিন পর্যন্ত তারা ঐ ঘাঁটি আঁকড়ে ধরে ছিল। অবশেষে ১৬৫৪ খ্রীস্টাব্দে ভ্যানডারহেডেন বহুদিনের জন্য: এই বন্দর অবরোধ করে রাখেন। তার ফলে পোর্তুগীজরা সিংহল ছেড়ে যেতে, বাধ্য হয়।
কলম্বো হাত ছাড়া হয়ে যাবার পর পোর্তুগীজদের এই সমুদ্র-সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট যা ছিল, তা দ্রুত ভেঙ্গে পড়ল। পোর্তুগীজরা সর্বপ্রথম কোচিনে এসে বসেছিল। ১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে ডাচরা তাদের হাত থেকে সেই কোচি ছিনিয়ে নিয়ে গেল। তারপর ছোট ছোট বাণিজ্যকন্দ্রেগুলো একটির পর একটি খসে খসে পড়তে লাগল। পোর্তুগীজরা ১৬৬৫ খ্রীষ্টাব্দে তাদের বোম্বাই বন্দরকে ইংল্যাণ্ডের রাজার কাছে যৌতুরূপে উপহার দিয়েছিল। সব গিয়ে বাকী রইল গোয়া, ছোট দুটি দ্বীপ দোমন আর দিউ। সেই গোয়া, দামান আর দিউ সেদিন পর্যন্ত পোর্তুগীজদের হাতেই ছিল।
পোর্তুগীজরা এ অঞ্চলে মসলার বাণিজ্য করতে এসেছিল। এই বাণিজ্যকে মুষ্টিগত করেই তারা তৃপ্ত ছিল। কালিকট রাজ্য দখল করতে গিয়ে যেন চূড়ান্ত পরাজয় তাদের বরণ করতে হয়েছিল, তারপর থেকে কলম্বো ভূমিতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য আর তারা বেশী সচেষ্ট হয় নি। অবশ্য গোয়া, মালাক্কা এবং ইন্দোনেশিয়ার কোন কোন দ্বীপে তারা যে উপনিবেশ স্থাপন করে নি তা নয়, কিন্তু তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মসলার বাণিজ্যটাকে পাহারা দিয়ে রাখা। আরও কিছু সময় হাতে পেলে এখানেও তারা বড় বড় উপনিবেশ গড়ে তুলত, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী ডাচ সাম্রাজ্যবাদ সেই সুযোগ তাদের দিল না। তাদের হাতে বিষম মার খেয়ে তারা লেজ গুটিয়ে গোয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিল।
আমরা দেখেছি, ডাচরা পোর্তুগীজদের মতই মসলার গন্ধে গন্ধে ইন্দোনেশিয়ায় এসে পৌছেছিল। কিন্তু পোর্তুগীজদের ভাগিয়ে দিয়ে নিষ্কন্টক ইন্দোনেশিয়ায় একটু গুছিয়ে বসবার পরই তারা শুধু মসলার বাণিজ্য নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে সাম্রাজ্য গড়বার দিকেও মন দিল।
সাম্রাজ্যবাদের পুরোপুরি রূপটা এই ডাচ ঔপনিবেশিকদের মধ্যেই প্রথম দেখতে পাই। বান্দা, এমবয়না, মালাক্কাস প্রভৃতি অঞ্চলের অধিবাসীদের তারা এক নতুন প্রণালীতে শোষণ করতে শুরু করল। পোর্তুগীজরা মসলা নিয়ে বাণিজ্য করত, কিন্তু মসলা উৎপাদন করার কথাটা সম্ভবত তাদের মাথায় আসে নি, আর যদি এসেও থাকে, অতি উৎসাহ ও ধৈর্য তাদের ছিল না।
ডাচ বণিকরা মসলা-চাষীদের ফসলের জন্য আগাম হিসেবে দাদনের টাকা দিয়ে রাখত। সরলপ্রাণ চাষী তাদের এই ফাঁদে ধরা দিল। আর তার পরিণামে যা ঘটবার তাই ঘটল। এই দাদনের সুযোগ নিয়ে নানারকম ছল ছুতো ও প্রবঞ্চনার সাহায্যে চাষীদের জমি কোম্পানীর হাতে গিয়ে জমা হতে লাগল। ভারতবর্ষে ইংরাজের আমলে নীলকর সাহেবরা এই দাদন নিয়েই কেমন করে নীলচাষীদের সর্বস্বান্ত করেছিল, সেই নিদারুণ ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। অনুরূপ ঘটনাই সেদিন ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপে দ্বীপে ঘটে চলেছিল। রাজশক্তি ডাচদের হাতে, তাই ডাচ বণিকদের এই অত্যাচার থেকে দুর্ভাগা অসহায় চাষীদের রক্ষা করবার মত কেউ ছিল না। অভাব আর অত্যাচারে ক্লিষ্ট চাষীরা আল্লার নাম স্মরণ করে মাথা চাপড়ে মরছিল। কিন্তু জাকার্তা বিজয়ী ডাচ বীর জন পিয়েটার্চ কোয়েন তো আগেই বলেছিলেন, সর্বশক্তিমান ভগবান আমাদের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের উপর সৌভাগ্যধারা বর্ষণ করেছেন। এ অবস্থায় দুভাগা চাষীরা কি-ই করতে পারে!
এইভাবে চাষীদের হাত থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে কোম্পানী সেই সব জমিতে নিজ কর্তৃত্বে মসলা জন্মাতে লাগল। ক্ষেতে চাষের কাজ অবশ্য স্থানীয় চাষীরাই করত। তবে আগে তারা নিজেদের জমিতে কাজ করত, নিজের পরিশ্রমে ফল নিজেই ভোগ করতে পারত, আর এখন? এখন তারা কোম্পানীর বাগিচায় জনমজুর খেটে মরছে। মজুরী হিসেবে প্রভুরা যা দিত, তাতেই তাদের সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হোত। শুধু তাই নয়, আরও আছে। কোম্পানী নির্দেশ দিলঃ কোম্পানীর বাগিচার বাইরে যে-সমস্ত চাষীর নিজের জমি আছে, তারা সেই জমিতে লবঙ্গ গাছ লাগাতে পারবে না। আর তাদের জমিতে যে-লবঙ্গ গাছ আছে তা উপড়ে ফেলতে হবে।
চাষীরা ক্ষেপে উঠল, এ কেমন কথা, আমাদের জমিতে আমরা লবঙ্গ ফলাতে পারব না? এ কোন দেশী জুলুম? কিন্তু কোম্পানীর লোকেরা তাদের কথায় কান পাতল না। তারা ঘোষণা করে দিল, কোম্পানীর আদেশ মানতেই হবে। যারা মানবে না, তাদের কপালে দুঃখ আছে। তারা সত্য কথাই বলেছিল, যারা এই নির্দেশ অমান্য করেছিল, বহু দুঃখ দুর্ভোগে তাদের অদৃষ্টে ছিল। স্থানে স্থানে এই নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধল। অস্ত্রবিদ্যায় সুশিক্ষিত, সশস্ত্র চাষীদের রক্তে তাদের চাষের জমি লাল করে তুলল। যেই মসলা বাণিজ্যের দৌলতে দেশবিদেশের বণিকের এত সমৃদ্ধি, সেই মসলা উৎপাদনকারীদের এই হোল পরিণতি। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এই সমাজের এই তো রীতি। যারা উৎপাদন করে, অভাব ও অনশন তাদেরই প্রাপ্য। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গেলে দমন নীতির হিংস আক্রমণ তাদের উপরেই নেমে আসে। যুগ যুগ ধরে এই রীতিই চলে আসছে। আজও কি চলছে না?
কিন্তু ইতিহাসের পাতায় তার কাটা কথাই বা লেখা আছে? যারা ইতিহাস রচনা করেন, তাদের মধ্যে ক’জন এদের কথা চিন্তা করেন? যারা ইতিহাস পড়ে, তাদের মধ্যে ক’জনাই বা এদের কথা শুনতে চায়? তবু যাদের দেখবার মত চোখ আছে, তারা এই ইতিহাসের পাতায় ফাঁকে ফাঁকে এদের আশাআকাঙ্ক্ষা দুঃখ-লাঞ্ছনা। আর প্রতিরোধ ও সংগ্রামের আবিস্মরণীয় কাহিনীর সন্ধান পাবে।
একজন ডাচ ঐতিহাসিক মোলাক্কাসের মসলা চাষীদের দুর্দশার বর্ণণা প্রসঙ্গে বলেছেনঃ কোম্পানী তাদের লবঙ্গ বাগিচাকে ভেঙ্গে তা ধানের ক্ষেত্র ও সাগুর বাগিচায় পরিণত করতে বাধ্য করল। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্বতসংকুল দ্বীপগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন সম্ভবপর নয়। কাজেই স্থানীয় অধিবাসীরা কোম্পানীর কাছ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ চাউল কিনতে বাধ্য হোত। কোম্পানী অত্যধিক চড়া দরে তাদের কাছে চাউল বিক্রী করত। ফলে তাদের অবস্থা আরও দুঃসহ হয়ে দাঁড়াত। এইভাবে মোলাক্কাসের আর্থিক বুনিয়াদ ধ্বসে পড়ল এবং তার অধিবাসীরা চরম দারিদ্র্যের শিকারে পরিণত হোল। (Bervard H. M. Vlekke- “Nansautra”)
এতদিন এখানকার মসলা চাষীরা প্রাচুর্যে না হলেও সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু ডাচ কোম্পানী তাদের হাত থেকে মসলার চাষ জোর করে কেড়ে নিয়ে তাদের দুর্দশার চরম সীমায় পৌছে দিল। এ অবস্থা প্রথমে ঘটল মোলাক্কাসে। তারপর জাভায় তারপর অন্যান্য দ্বীপে। অর্থাৎ কোম্পানী যেই দ্বীপ অধিকার করে বসল, সকলেই ওই একই অবস্থায় গিয়ে পৌছল।
ইন্দোনেশিয়ায় ডাচদের শাসনব্যবস্থা ছিল চরম অব্যবস্থা। এজন ডাচ ঐতিহাসিক বলেছেনঃ ধ্বংস, প্রতিরোধ এবং পাল্টা অত্যাচার এই হচ্ছে মোলাক্কাসের ধারাবাহিক একঘেঁয়ে কাহিনী।
ইংরাজ লেখক জে, এস, ফার্নিভাল ডাচদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাদের ঔপনিবেশিখ নীতির সমর্থক। সেই কার্নিভালকেও একথা লিখতে হচ্ছেঃ সমস্ত পৃথিবীতে যত লবঙ্গের প্রয়াজেন, এক এমবয়না দ্বীপেই তার চেয়ে বেশী লবঙ্গের উৎপন্ন হতে পারে। সেইজন্যেই ডাচরা ‘টারনেট’-এর রাজাকে টাইডোর- এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে তুলেছিল, যাতে তার দেশের লোকেরা লবঙ্গ চাষ থেকে নিবৃত্ত থাকে। বান্দা দ্বীপের চাষীরা স্বাধীনভাবে লবঙ্গ চাষ করত, ডাচরা তাদে সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় ক্রীতদাসদের দিয়ে চাষ ব্যবস্থা করল। তারা জাভায় চাউলের সরবরাহ বন্ধ করে দিল। ফলে তাদের প্রধান খাদ্য হয়ে দাঁড়াল সাগু। চাউলের চেয়ে অনেক কম পুষ্টিকর। ক্রমাগত তাই খেয়ে চলবার ফলে পুষ্টির অভাবে জাভায় বহু লোক মারা গেল। তাদের অভাব পূর্ণ করবার জন্য আরও বেশি ক্রীতদাস আমদানি করা প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াল। বহুদূর থেকে এমনকি আরাকান থেকে পর্যন্ত ক্রীতদাস আমদানি করা হোত। তবে সবচেয়ে বেশী ক্রীতদাস মিলত এই দ্বীপগুলো থেকেই। যেই দ্বীপে খাদ্যাভাব ঘটত, সেখানকার লোকেরা অন্যান্য দ্বীপ থেকে ক্রীতদাস বন্দী করে নিয়ে এসে তাদের বিনিময় করে চাউল সংগ্রহ করত।
ডাচদের পক্ষ সমর্থক ফার্নিভাল, তার বর্ণনা থেকেই আমরা ডাচদের শাসনব্যবস্থার এই পরিচয় পাচ্ছি। যে-কোন পন্থায় লুণ্ঠন করা, এই ছিল তাদের রাজত্বের একমাত্র নীতি। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ মরুক আর বাঁচুক, তা নিয়ে তারা এতটুকুও মাথা ঘামাত না।
ইন্দোনেশিয়ার মানুষদের সম্বন্ধে কি ভাবত তারা?
বাটাভিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কোয়েন এ সম্বন্ধে তাঁর অভিমতটা স্পষ্ট ভাবেই বলে গেছেন। তিনি বলেছেনঃ ইউরোপের কোন লোক কি তার গরু ঘোড়াকে নিয়ে যা খুশী করতে পারে না? হল্যাণ্ডে পশুরা যেমন তার প্রভুদের সম্পত্তি, তেমনি এখানকার মানুষ এবং তার নিজস্ব বলতে যা কিছু আছে, সবই তার প্রভুর সম্পত্তি। রাজার ইচ্ছা হচ্ছে এদেশের আইন এবং সবচেয়ে শক্তিশালী যে, সেই হচ্ছে রাজা।
কোয়েন এ সম্পর্কে তাঁর মনগড়া উক্তি করছেন। কি হিন্দু, কি মুসলমান কারু শাসনব্যবস্থায় এমন বিধান নেই যার সাহায্যে শাসক তার প্রজাদের নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারেন। এটা কোয়েনের নিজের মতবাদ। ইন্দোনেশিয়ায় ডাচদের কার্যকলাপ এই মতবাদের উপরেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই মতবাদের সাহায্যেই ডাচরা ইন্দোনেশিয়ার লোকদের সঙ্গে একশো বছর ধরে কুলীর মতই ব্যবহার করে এসেছে।
এখন মসলার বাণিজ্যের অবস্থা কি দাঁড়াল, সেইটা বলি। আঠারো শতকের শুরু পর্যন্ত এই বাণিজ্য থেকে ডাচরা প্রচুর মুনাফা উসুল করে নিচ্ছিল। ডাচদের প্রথম জাহাজটি মোলাক্কাস থেকে যে-লবঙ্গ বোঝাই করে নিয়ে গিয়েছিল, সেই লবঙ্গ বিক্রী করে তারা শতকরা ২৫০০ ভাগ অর্থাৎ ২৫ গুণ মুনাফা লাভ করেছিল। কিন্তু আঠারো শতকের প্রথম ভাগ থেকেই তাদের মুনাফার হারটা ক্রমশই কমে যেতে লাগল।
ইতিমধ্যে কফি এসে বাজার জুড়ে বসল। সমস্ত ইউরোপময় অপর্যাপ্ত তার চাহিদা। যারা কফির বাণিজ্য করত, তারা প্রচুর মুনাফা লুটতে লাগল। ১৬৬০ খ্রীষ্টাব্দে ইউরোপের বাজারে কফি চালু হয়। দেখতে দেখতে তা অতি জনপ্রিয় পানীয় হয়ে দাঁড়াল। ডাচ কোম্পানীর দৃষ্টি এবার কফির উপর গিয়ে পড়ল। এই আঠারো শতকের প্রথম ভাগে তারা দক্ষিণ-ভারতের মালাবার অঞ্চল থেকে কফির চারা আনিয়ে জাভায় কফির চাষ শুরু করে দিল। কয়েক বছরের মধ্যেই কফি এই দ্বীপের প্রধান ফসল হয়ে দাঁড়াল। লবঙ্গ সসম্মানে পিছে হটে গেল।
দুনিয়ার বাজারে কফি তখন খুবই উচ্চ মূল্যে বিকাচ্ছে। এই ফসল দিয়েই এই সমস্ত দ্বীপবাসীদের হারানো সমৃদ্ধি আবার ফিরিয়ে আনা যেত। কিন্তু এদের সুখ সমৃদ্ধির কথা নিয়ে কোম্পানী কখনোই মাথা ঘামাতে না। শুধু তাই নয়, তারা মনে-প্রাণে ছিল এর বিরোধী। এই সময়কার দলিলপত্র ঘাঁটলে একটা জিনিস লক্ষ্য করা যায়, এগুলোর ছত্রে ছত্রে ‘পাছে জাভাবাসী অতিরিক্ত ধনী হয়ে যায়’ এই আশঙ্কা প্রতিফলিত হয়ে উঠেছে। ডাচদের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রথমত জাভার সম্পদ শোষণ করে নিজেদের ভান্ডারকে পূর্ণ করে তোলা। দ্বিতীয়ত জাভাবাসীদের সুখসমৃদ্ধির সম্ভাবনার পথে যত বেশী সম্ভব বাধা দান করা। এই কথাগুলো প্রকাশ্যে ও সোজাসুজি বলতে তাদের কোন সংকোচ বা কুণ্ঠা ছিল না।
এই উদ্দেশ্যকে হাসিল করবার জন্য তারা তিনটিপস্থা অবলম্বন করল?
(১) বাটাভিয়ার বাজারে কফির দরকে যথেষ্টভাবে কমিয়ে দেওয়া, (২) কফি-বাগানের প্রসার সীমাবদ্ধ করে রাখা, (৩) চাষীদের প্রবঞ্চিত করবার জন্য নানারকম সুপরিকল্পিত কৌশল। এই সমস্ত চক্রান্তের ফলে ইন্দোনেশিয়ার চাষীকে বাধ্য হয়ে সওয়া শো পাউন্ড কফির মূল্যে আড়াই শো পাউন্ড কফি বিক্ৰী করতে হোত। কিন্তু সেইখানেই এর শেষ নয়। নানারকম হিসেব দেখিয়ে কাট ছাঁট করবার পর শেষকালে মাত্র চৌদ্দ পাউণ্ড কফির দাম চাষীর ঘরে গিয়ে পৌছত।
অতি বীভৎস ও নগ্ন এই শোষণের রূপ। এভাবে প্রতারিত হয়ে চাষীরা কফি চাষ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে লাগল। কিন্তু এ বিষয়ে চাষীর স্বাধীন ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন স্থান ছিল না। ইংরাজের আমলে ভারতের নীলচাষীদের মত জোর করে এদের দিয়ে কফি চাষ করানো হতে লাগল। কোম্পানী নির্দেশ দিল কফি চাষ করতেই হবে এবং তাদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে তা বিক্রী করতে হবে। কোম্পানীর পক্ষের বক্তব্যটা অত্যন্ত স্পষ্ট, তার মধ্যে কোন ঘোরপ্যাঁচ নেই। এই দেশ এবং এই দেশের মানুষ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। সেইজন্যই সেই মানুষদের হটিয়ে মুনাফা অর্জন করবার পুরোপুরি অধিকার তাদের আছে। তাদের দৃষ্টিতে সমগ্র লাভা দ্বীপ ছিল একটা বিরাট কফিবাগান আর তারা সেই বাগানের একচ্ছত্র মালিক। তারা মনে করত এই মালিকানার জোরে তারা আইনত এখানকার লোকদের নেহাৎ বাঁচার মত মজুরী থেকেও বঞ্চিত করতে পারে। সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে এটা নতুন বা অস্বাভাবিক কথা নয়। কিন্তু ডাচ সাম্রাজ্যবাদীদের চক্ষুলজ্জা বলতে কিছু ছিল না। তাদের মনের কথাটা তারা স্পষ্টভাবেই বলত।
মসলার কথা বলতে বসেছি, কফির কথা আমাদের আলোচ্য নয়। তবু কফির চাষ ও বাণিজ্য সম্পর্কে এটুকু কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক নয়। কফির চাষ চালু হবার ফলেই এখানে লবঙ্গ ও অন্যান্য মসলার চাষ কমে আসতে থাকে। তাছাড়া আরও একটা কথা আছে। মসলার প্রশ্নে ডাচ ও ইন্দোনেশিয়ার চাষীদের যে সম্পর্ক ছিল, তা ক্রমে ক্রমে পরিবর্তিত হয়ে আসছিল। কখনও তা নিঃশব্দে এসেছে, কখনও বা এর বিরুদ্ধে চাষীরা প্রতিবাদ তুলেছে, সংগ্রাম করেছে। কিন্তু তা ডাচ ঔপনিবেশিকবাদীদের নির্মম আঘাতের ফলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কফি চাষের ব্যাপারে তা চূড়ান্ত পরিণতিতে গিয়ে পৌঁছল।
ডাচ বণিকরা প্রথম যখন এসেছিল, তখন তারা পোর্তুগীজদের মতই বণিকদের কাছ থেকে মসলা কিনত, আর সেই মসলা ইউরোপে চালান দিয়ে উচ্চহারে মুনাফা লুটত। বাণিজ্যটা তাদের একচেটিয়া হলেও এ ব্যাপার দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রার উপর তারা কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করত না।
কিন্তু এই মুনাফা নিয়ে বেশী দিন তারা সন্তুষ্ট রইল না। রক্তের স্বাদ পেয়ে তাদের লোভ ক্রমেই বেড়ে চলল। আমরা আগেই দেখেছি, লবঙ্গ-চাষীদের হাত থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে এবং চাষীদের মধ্যে লবঙ্গ চাষ নিষিদ্ধ করে দিয়ে কিভাবে তারা কোম্পানীর নিজস্ব বাগান গড়ে তুলছিল। এইভাবে এককালের স্বাধীন চাষী ডাচদের বাগানের কুলীতে পরিণত হতে লাগল। এই রূপান্তর চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌছল। বড় বড় কফি বাগান গড়ে তোলবার মধ্য দিয়ে।
যেন সমস্ত জাভা দ্বীপটিা একটা বাগান হয়ে দাঁড়াল। কয়েকজন বাগানের মালিক আর বাকী সবাই কুলী। মালিকরা শুধু বাগানেরই মালিক নয়, তারা কুলীদের জীবনের ভাগ্যবিধাতা। এই কুলীরা সকল রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। মালিকরা যত অত্যাচারই করুক, তার বিরুদ্ধে নালিশ জানাবার মত জায়গা তাদের ছিল না। এভাবে একটা দেশের সমস্ত মানুষকে কুলীতে পরিণত করবার মত দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে কিনা সন্দেহ।