ভুবনের রাগ গগনের হাসি

ভুবনের রাগ গগনের হাসি

ভুবন মণ্ডল যাচ্ছিল মুকুন্দপুর। সে কত দূর? অনেক দূর। অনেক মানে? হেঁটেই যাবে শুধু, পৌঁছবে না। বাসে গেলেও এমন জায়গায় নামিয়ে দেবে, হাঁটতেই হবে। ট্রেনে গেলেও তাই। ষ্টেশন থেকে হাঁটন। ভুবন মণ্ডল সেই মুকুন্দপুর যাচ্ছিল। কেন যাচ্ছিল, না তার দরকার ছিল। কী দরকার? না, দরকার ছিল, সব কথা সকলকে বলা যায় না। মুকুন্দপুর যাচ্ছিল, এমনিই হয়তো যাচ্ছিল। এমনি কি কোথাও কেউ যায় না? সকলেই কি কাজের বিবরণ বুক পকেটে নিয়ে হাঁটে। ভুবন যাচ্ছিল এমনি। এমনি নাকি সে যায়। কেন যায়, ইচ্ছে হলেই সে মুকুন্দপুর যায়। বাস থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে, কিংবা ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে…। মুকুন্দপুর যেতে হলে এই হাঁটন হাঁটতেই হবে। বিকল্প নেই। রিকশা কিংবা অটো বা টোটোর টিকিটি দেখা যাবে না। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হলেই মুকুন্দপুর। সেই মুকুন্দপুরে যেতে গিয়ে বা যাওয়ার পথে আজ ভুবনের বিপত্তি হয়েছে। সবদিন সে একা একা যায় মুকুন্দপুর,একা একা ফেরে চৈতন্যপুর, কিন্তু আজ সে একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে বাস থেকে নামতেই।বাসের নাম পঞ্চানন। পঞ্চানন বাস সার্ভিস। সেই বাস আসে হাসিমপুর থেকে,যায় কাশিমপুর।এই দুয়ের মধ্যখানে চৈতন্যপুর। ঠিক চৈতন্যপুরও নয়। জায়গাটার নাম বটতলা। বটতলা আর রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে চৈতন্যপুর। বাস দেখতে পেয়ে ছুটে এসেও ধরা যায় না। বাসের টাইম মনে রেখে বেরোতে হয়। চৈতন্যপুর বটতলায় বাস স্টপেজ। সেখানে উঠে মুকুন্দপুর চাঁপাতলায় নামতে হয়। আসলে জায়গাটা চাঁপাতলাই। যেমন আগের জায়গাটা বটতলা। মুকুন্দপুর অনেক দূর চাঁপাতলা থেকে।এই পথটা একা যেতে হয়, কিন্তু সেদিন, মানে সেই বুধবারে চাঁপাতলায় কেউ তার জন্য অপেক্ষা করছিল। লম্বা মানুষ, ঝোলা গোঁফ, ধুতি আর শার্ট পরা, পায়ে পামশু। মাথায় পাকা চুল আর কাঁচা চুল। বাস থেকে নেমেই লোকটাকে দেখতে পেয়েছিল সে। হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে ভুবনকে জিজ্ঞেস করেছিল, বাস কি লেট করল?

ভুবন চমকে গেল, বলল, না তো।

আপনি তাহলে লেট করেছেন? লোকটা বলেছিল।

না তো, আমি লেট করলে বাস মিস করতাম তো।

লোকটা বলল, ঠায় দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ, ছায়া ছোট হয়ে গেছে।

ছায়া ছোট হয়ে গেছে মানে লোকটা সকাল থেকে দাঁড়িয়ে। সূর্য যত উপরে ওঠে, ছায়া ততো ছোট হয়। ভুবন তা জানে। তার ইস্কুলের মাষ্টার অঘোরবাবু বলেছিল। সে তখন কান ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে। বেলা বারোটার পর নাকি ছায়া আবার বড় হবে। ভুবনের সব মনে আছে। সে বলল, ছায়ায় আমার কী যায় আসে, আমি কি ছায়া ধরতে এসেছি?

লোকটা বলল, আমি মুকুন্দপুর যাব।

ভুবন জিজ্ঞেস করে, কী নাম?

আঁজ্ঞে, অনেকগুলো নাম আছে, কোনটা শুনতি চান?

ভুবন বলল, কোনটা আমি জানব কী করে?

লোকটা বলল, আমিই বা বলব কী করে?

ভুবন রেগে যেতে যেতে রাগ সামলে নিল। রেগে যাওয়া ভুবনের স্বভাব। এই জন্য অনেক ডাক্তার বদ্যি করেছে, তাদের ওষুধ গিলেছে, কিন্তু রাগ পড়েনি। তখন একজন, কে তা বলব না, এক ভবঘুরের সঙ্গে দেখা তার বটতলার হাটে। সে জড়বটি বেচছিল আর বড় বড় কথা বলছিল। লোকটা কেমন যেন অদ্ভুত। অদ্ভুত কেন, না বুকের উপর পোস্টার ঝুলিয়ে বলছিল, কোনো সমস্যা নাই, আমার কাছে আসুন। পোস্টারে শুধু রঙ ছিল, লাল নীল, হলদে, সবুজ…। অনেক লোক অনেক সমস্যা নিয়ে যাচ্ছিল, কারোর দাঁতে ব্যথা, কারোর পায়ে ব্যথা, কারোর মাথা ব্যথা, কারোর গলায় ব্যথা, কারোর ছেলে পালিয়েছে,কারোর শুধু ঘুম পায়,কেউ আবার ঘুমায় না। তো ভুবন গিয়েছিল তার কাছে, তার কথা শুনে ভুবনের খুব রাগ হয়েছিল। গিয়ে বলেছিল,এই লোকটা তোমার নাম কী,এত যে বড় বড় কথা বলো।

সে বলল, আমার নাম ভুলে গেছি।

ভুবন চিৎকার করে বলেছিল,বুঝেছি,তোমার নাম ভুলো রায়, তাই তো।

লোকটা বলল, বলব না।

বলতে তোমার হবে,নইলে খুব খারাপ হবে। ভুবন খুব রেগে বলেছিল।

লোকটা বলেছিল, বুঝেছি বুঝেছি, তুমি মুকুন্দপুর চলে যাও।

ভুবন বলেছিল, কেন?

লোকটা হেসে বলেছিল,উপকার পাবে,রাগ কমবে, মাসে অন্তত তিনদিন যাবে, বেশি হলে ক্ষতি নেই।

ভুলো রায়ের কথায় তার মুকুন্দপুর আসা মাসে তিনবার, চারবার, পাঁচবার। থাকে না, ফিরে যায় লাস্ট বাসে। সারাদিনে বাস আসুক না আসুক ফার্স্ট বাস আর লাস্ট বাস আসবেই। আর তা দেরি করেই আসবে, সন্ধে হয়ে গেলে, আকাশে তারা ফুটে গেলে, চাঁদের দিন থাকলে চাঁদ উঠলে, চাঁদের দিন না হলে চাঁদের বদলে অন্ধকার ফুটলে। টর্চ হাতে ভুবন দাঁড়িয়ে থাকে ফেরার জন্য। একা একা।সে একা চাঁপাতলায় নামে, একা ফিরে যায়। আর কাউকে কোনোদিন নামতে দেখেনি হেথায়। ফেরার সময় উঠতেও দ্যাখেনি এখান থেকে। আজই একটা লোককে দেখল। সেই লোকটার নাকি অনেক নাম, কোন নামটা বলবে তা জিজ্ঞেস করছে। ভুবন বলল, নামটা বলো তুমি, আমাকে চিনলে কী করে?

সে হেসে বলল, চিনি না তো।

তবে যে হেসে এগিয়ে এলে? ভুবন অবাক। রাগ হচ্ছিল, তবু সামলে নিল আবার, বলল, অচেনা লোকের সঙ্গে আমি কথা বলতে চাইনে।

আমি মুকুন্দপুর যাব। লোকটা বলল, চল তোমার সঙ্গে যাই।

ভুবন রেগে গিয়ে বলল, আমি মুকুন্দপুর যাব কে বলল?

আমি জানি। লোকটা হেসে বলল।

জানলে কী করে? ভুবন ভ্রু কুঁচকে সন্দেহভরা গলায় জিজ্ঞেস করে।

লোকটা বলল, ভুলো রায় বলেছে।

ভুলো রায় মানে সেই ব্যথা নিরাময়ের হাটুরে লোকটা? ভুবন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, তার সঙ্গে কোথায় দেখা হলো?

আঁজ্ঞে ছোটনদীর পারে হলদিডাঙায়। হেসে বলল সেই লোক।

সে আবার কোথায়, জানিনে তো। বিরক্ত হয়ে ভুবন বলল।

ছোটনদী জানেন না? লোকটা জিজ্ঞেস করল।

না জানিনে, সব কিছু জানতে হবে নাকি? মুখ ঝামটা দিয়ে ওঠে ভুবন।

হলদিডাঙাও না? লোকটা নরম গলায় জিজ্ঞেস করে।

তুমি কি চৈতন্যপুর চেন? খুব রেগে গিয়ে ভুবন জিজ্ঞেস করে।

আঁজ্ঞে না, কিন্তু চিনব আমি, খুব শিগগির চৈতন্যপুর যাব। লোকটা বিনীত স্বরে বলল।

তোমাকে নিয়ে যাবে কে? ভুবন রেগে জিজ্ঞেস করে।

আঁজ্ঞে, আপনার সঙ্গে যাব।

ভুবন বলল, তুমি কে হে, যে তোমাকে চৈতন্যপুর নিয়ে যেতে হবে?

লোকটা বলল, আচ্ছা সে কথা পরে হবে।

তুমি এখানে কেন বলো দেখি? ভুবন জিজ্ঞেস করে।

আঁজ্ঞে তিনি আমাকে মাসে তিনদিন অন্তত মুকুন্দপুর আসতে বলেছেন, তাহলে আমার উপকার হবে।

এতক্ষণে সবটা খোলসা হয়ে গেল। কিন্তু এও কি রেগে যাওয়া মানুষ? কী সব্বোনাশ। তাহলে তো দুজনের ভিতরে মারামারি লেগে যাবে। আবার রাগ হয়ে গেল ভুবনের। ইস, ভুলো রায় কি আর কোনো গ্রাম চেনে না? মুকুন্দপুরেই পাঠাতে হবে সকলকে? এই লোকটাকে নিয়ে সে মুকুন্দপুর যাবে না। কিছুতেই না। বসে থাকবে চাঁপাতলায়। ছায়া ছোট হতে হতে আবার বড় হয়ে যাবে। বড় হতে হতে ছায়া ছড়িয়ে যাবে দিগন্তে। অন্ধকার হবে। শেষ বাস এলে সে ফিরে যাবে চৈতন্যপুর ভায়া বটতলা।

লোকটা হেসে বলল,যাবেন না, কেন যাবেন না, মুকুন্দপুর যেতেই তো এসেছেন।

ভুবন রেগে যায়, আমি কোথায় যেতে কোথায় এসেছি তা আমি বুঝব, তুমি বলার কে ?

লোকটা হাত জোড় করল, আঁজ্ঞে ভুলো রায় বলেছে আপনাকে নিয়েই মুকুন্দপুর যেতে।

আমি ওসব জানিনে,যাব না তো যাব না। অনেকদিন বাদে রাগ করতে পেরে ভুবনের খুব আরাম হচ্ছিল। মুকুন্দপুর যায় আর আসে। মুকুন্দপুর একটা নিঝুম গ্রাম। লোকজন বিশেষ নেই। একটা হোটেল আছে। সেখানে ভাত ডাল বেগুনভাজা, আলু পোস্ত ঝিঙে পোস্ত আর কাঁটাওয়ালা বাটা মাছের ঝোল পাওয়া যায়। চাটনি দিত না। সে একদিন খুব রাগ করতে চাটনি দিতে আরম্ভ করেছে। গরমে আমের। শীতে টোম্যাটোর। খুব গরমে তেঁতুলের চাটনিও করে। ভাত খেয়ে হোটেলের লম্বা বেঞ্চে শুয়ে একটা ঘুম মারে ভুবন। তারপর যায় মাঠের ধারে। চুপচাপ বসে থাকে আমতলায়।কেউ তাকে কিছু বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করে না। মুকুন্দপুর এক অদ্ভুত গ্রাম। লোকজন উঁচু গলায় কথা বলে না।ঝগড়া করে না।হোটেলে অনেক লোক খেতে আসে। কারোর গলা শোনা যায় না। মুকুন্দপুরের রাস্তায় কুটোটি পড়ে নেই। গাছে গাছে কত রঙের ফুল। কেউ ফুল ছেড়ে না। কিন্তু ইদানীং ভুবনের খুব অসুবিধে হচ্ছিল। সারাদিন চুপচাপ। কেন বসে গল্প তো করা যায়। তাকে জিজ্ঞেস করতে পারে তো, তার নাম কী, বাড়ি কোথায়, কেন আসে এখেনে? কিন্তু কেউ তা জিজ্ঞেস করে না। অচেনা কারোর সঙ্গে দেখা হলে হাসি মুখে তাকে সম্বোধন করে, ভালো আছেন তো? আরে তুমি আমাকে চেন যে ঐসব জিজ্ঞেস করো? ভালো আছি না মন্দ আছি তোমাকে বলব কেন?

হ্যাঁ, সে ভালো আছে কি খারাপ আছে তা জেনে ওর কী হবে? তবু তাকে বলতেই হয়, হ্যাঁ, ভালো আছি। আবার বলেও না কখনো। মুখ গম্ভীর করে চলে যায় তাকে এড়িয়ে।এতদিন আসছে, তবু কারো সঙ্গে বন্ধুতা হয়নি ভুবনের। বন্ধুতা চায়ও না ভুবন। বন্ধু তার কম ছিল না চৈতন্যপুর আর তার আশেপাশে অনেক বন্ধু। কিন্তু তার স্বভাবের জন্য বন্ধুরা সরে গেছে। রাগ তার খুব। ছোটবেলায় কতজনের মুখ ফাটিয়েছে রাগে। মারও খেয়েছে। এখন মনে হয় অত রাগ না থাকলে হতো। আবার এও মনে হয়, রাগ ছিল বলেই লোকে তাকে ভয় করত। তার বাড়িতে চোর-ডাকাত পড়ত না। একবার একটা লোক তাদের বাগানে আম চুরি করতে এসে আমের থলে সমেত ধরা পড়ে যায়। তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে জল বিচুটি লাগাবে যখন, ভুবনের বুড়ি মা এসে আটকায়। আরে দুটো আম বই তো নয়। খুলে দে বাঁধন। যাও বাবা, আম নিয়ে যাও। এরপরে যখন আসবে আমাকে বলে নেবে যা দরকার হয়, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা…। উফ, সেই চোর এরপর তার সামনে থেকেই থলে ভর্তি লিচু নিয়ে বেরিয়ে যেত, শুধু বলত, মা ঠাকরুন, লিচু নেব?

মা বারান্দায় বসে বলত,নাও বাবা নাও,ভগবান দিয়েছেন, তুমি নেবে।

উফ, কী রাগ হতো তখন, কিন্তু কিছু করার ছিল না। চোর এসে ফল-ফলারি এমন কি কাঁসার বাসন নিয়ে যাবে, চোখে দেখেও রাগ সামলে থাকতে হবে।

লোকটা বলল, চলুন, মুকুন্দপুর চলুন।

তুমি যাও, আমি পরের বাসে ফিরে যাব।

লোকটা হেসে বলল, এতদূর এসে ফিরে যাবেন?

যাব আমার ইচ্ছে। ভুবন গরগর করে বলল।

লোকটা বলল, আহা রাগ করছেন কেন, আমাকে তিনি পাঠালেন তাই আমি এলাম, না হলে আমি কি আসতাম।

তোমার নাম বললে না। ভুবন বলে।

বলছি, কিন্তু কোন নামটা বলি?

আবার সেই কথা,তোমায় লোকে কী বলে ডাকে? ভুবন জিজ্ঞেস করে।

লোকটা বলল, নানা মানুষ নানা নামে ডাকে?

সে আবার কী কথা?রেগে গেল ভুবন।তাকে কি গাধা ভেবেছে লোকটা?

হ্যাঁ,কেউ যদি ধরেন ভুবন নামে ডাকে আর একজন গগন নামে ডাকে, কেউ যদি গগন ডাকে তো আর একজন ডাকে স্বপন, স্বপন যদি কেউ ডাকে তো অন্য একজন ডাকে জুড়ান, জুড়ান ডাকে একজন তো আর একজন…।

ভুবন মণ্ডল হাত তোলে, হয়েছে হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না, উফ, আমার নামটাও আছে দেখি তোমার, ভুবন।

না আঁজ্ঞে, নেই, কিন্তু লোকে ডাকে, লোকে ডাকে যদি আমি কী করব, চলুন মুকুন্দপুর যাই, আজ ইলিশ মাছ আর খিচুড়ি হবে, দুপুরে বর্ষা হবে কি না।

ভুবন মণ্ডল বলল, হ্যাঁ, গগন কে বলল দুপুরে বৃষ্টি হবে?

লোকটা বলল, গগন আমার নাম না, কিন্তু কেউ কেউ ডাকে, যেমন আপনি ডাকলেন।

তুমিই বলো তাহলে তোমার নাম। ভুবন রেগে গিয়ে বলল।

লোকটা হেসে বলল, যার যেমন ইচ্ছে ডাকে, আমিও সাড়া দিই, আপনার যেমন মনে হয় ডাকুন।

এইবার ভুবন হেসে ফেলে। কেন হাসে? না রাস্তার ওপার দিয়ে এক ধোপা গাধার পিঠে জামা কাপড়ের পোটলা চাপিয়ে হাঁটছিল। ভুবনের মনে হলো লোকটাকে গাধা বলে ডাকে। ডাকলে কি সাড়া দেবে? না ডেকেও ভুবন হাসল। উফ, এতক্ষণে একটু হাসি এল। এই মুকুন্দপুরে এসে যে তার রাগ পড়বে, তা হয়ইনি। উলটে মুকুন্দপুরের লোকের হরেক রকম কথা শুনে সে মনে মনে রেগেছে কতবার! ফুলে হাত দেবে না, জিলিপি খেয়ে রাস্তায় শালপাতা ফেলবে না, জোরে কথা বলবে না…। আমি যা করব সব তোমার আদেশে করব? আমার ভালো লাগলে আমি গাছে ফোঁটা ফুল ছিড়বই। গম্ভীর হয়েই থেকেছে সে এতদিনে। আজ এই লোকটা, যার নাম ভুবন, গগন, স্বপন বা জুড়ান হতে পারে, তার আর একটা নাম গাধা ভেবেই…। খুকখুক করে হাসছে ভুবন। তখন লোকটা বলল, চলুন, অমনি হাসির কত কিছু আছে জগতে, রাগ করার চেয়ে আনন্দ করারই বেশি, হাসির ঘটনা বেশি, চলুন মুকুন্দপুর যাই।

সত্যি আছে হাসির? ভুবন জিজ্ঞেস করে।

আছে ভুবনদাদা,এই যে মেঘ করছে আকাশে, দেখলে ভালো লাগে কি না বলুন।

ভুবন মণ্ডল বলল, হলদিডাঙায় এমন মেঘ হয়?

কত হয়, রোদ চমকালেই মেঘ এসে ঢেকে দেয়, মুকুন্দপুরেও তাই, আপনার চৈতন্যপুরেও।

ভুবন বলল, খেয়াল করিনি, আরে ওই দ্যাখো, তালগাছের মতো ওই একটা লোক আসছে, মাথায় কত চুল।

হুঁ, গগন কিংবা জুড়ান বলল, দেখুন দেখুন লোকটা হাসছে আমাদের দেখে, আমাদের দিকেই আসছে, কেন আসছে?

ভুবন মণ্ডল বলল, হ্যাঁ, কেন আসছে বলো দেখি? তারপর হেসে বলল, দ্যাখো কত লম্বা, লোকটার মাথায় একটা টিয়া এসে বসল, পাখিটা ভেবেছে একটা গাছ।

গাছই তো, মানুষ না গাছই মনে হয়। বলে হা হা করে হাসতে লাগল গগন কিংবা জুড়ান। তা দেখে ভুবন কি না হেসে পারে। মুকুন্দপুরের দিকে হাসতে হাসতে হাঁটতে লাগল। তাদের মাথায় ছায়া দিয়ে দিয়ে মেঘ চলতে লাগল। বড়ই হাসির ব্যাপার। আনন্দেরও। ভুবনের মনে হলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *