ফুলতলার অস্থিরচন্দ্র
এই যে একটা লোক। বেঁটে বলা যায়, আবার লম্বাও। না, লম্বা কিছুতেই না। বেঁটেই। উহুঁ, মোটেই তা নয়, লম্বা।নানা জনের নানা মত। তারা সব মুনি। এই গাঁয়ের লোক সব মুনি।মুনি মানে? দাড়ি আছে নাকি,না নেই। গেরুয়া বসন পরে থাকে নাকি।না, মোটেই না। নিরিমিষ খায় নাকি? একদম না, মাছ ভাত না হলে কারোর ভাতই ওঠে না। তবু তারা নানাজন নানা মুনি। মুনি কেন? নানা মত দেয় বলে। যে মত দেয়, সে জ্ঞানী। আর মুনিরা তো জ্ঞানী হয়েই থাকেন।
যাই হোক, তার নাম অস্থির। অস্থিরচন্দ্র দাস। কিন্তু কেউ কেউ বলে, তার নাম, বালক, বালকচন্দ্র। অস্থির বলে তার অমন কোনো নাম আছে বলে সে জানে না। সে বলে তার নাম অস্থির। অস্থিরচন্দ্র দাস। হ্যাঁ, সে বসে থাকে না, সত্য। আজ এখানে কাল সেখানে। সেই কারণে নাকি অস্থির। লোকের নাম তো মুখে মুখে ছড়ায়। তার নাম ছড়িয়েছে অমনি করেই। অস্থির ঐ লোকটা। এ কথা ফুলতলার সর্বজনেই বলে। অস্থির কেন? না সে সব সময় নাকি চলমান। হাঁটছে। দুদন্ড দাঁড়িয়ে যে বিশ্রাম নেবে সে উপায় নেই। নেই কেন? তা বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। আর তা শুনতে হলে অনেক সময় দিতে হয়। যাকগে, কেউ শোনে কেউ শোনে না, কিন্তু আমি বলে যাই। বলাই আমার কাজ।
অস্থিরের বাড়ি অমুক গাঁয়ে। অমুক গাঁ কোথায়, না তমুক শহরের কাছেই। তমুক শহরের খুব নাম। কেন নাম, না তা বললে অনেক কথা বলতে হয়। তার নাম ছিল সবুজ শহর। বনের ভিতর বাড়ি, বনের ভিতরে ঘর। বনের ভিতরে রাস্তা। সব শাল সেগুন, পিয়াল, সোনাঝুরি, আম, জাম, এই গাছে ভরা। সবুজ শহরের নাম চতুদ্দিকে ছড়িয়েছিল। দলে দলে লোক আসত সবুজ শহরে ক’দিন কাটিয়ে যেতে। তার ফলে কী হলো, গাছ কাটা শুরু হলো,শুরু হলো থাকার জায়গা বের করা।বাড়ি হলো কত। সব বাইরের লোক এসে থাকতে লাগল। বাইরের ভালো লোক, মন্দ লোক, দুষ্ট লোক, নিরীহ লোক এসে গাছ কেটে জমি বের করে কুটির বানাতে লাগল। আর তাতে ভালো মানুষ আর মন্দ মানুষ, কোনো মানুষেই টের পেল না সবুজ শহরের সবুজ আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কথা তো সবুজ শহর নিয়ে নয়। আমার কথা লোকটাকে নিয়ে। সেই ঘুরুয়া লোক অস্থিরচন্দ্রকে নিয়ে।তাদের অমুক গ্রামের একটা নাম ছিল, নামটা হলো ফুলতলা। ফুলতলা ছিল ফুলে ফুলে ভরা গ্রাম। কত রকম ফুল, না হরেক রকম ফুল। তাদের হরেক রকম নাম। চম্পা, চামেলি, গোলাপ, অশোক, বেলি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী, গাঁদা, দোপাটি, করবী, কেয়া, কেতকী, আর বসন্তে শিমুল, পলাশ ও মন্দার। …কত ফুল কত রঙ, কত সুবাস। ফুলতলা যেতে হলে জামরুলতলায় নামতে হবে। জামরুলতলা ছিল সবুজ শহরে প্রবেশের মুখে একটি বাসস্টপ। সেখানে শুধুই ছিল আম আর জামরুল গাছ। মস্ত আম গাছ আর জামরুল গাছ। রসে ভরা মিষ্টি আম আর মিষ্টি জামরুল। জষ্টি মাসে আম আর আষাঢ় মাসে জামরুল পাকত। পাখিরা খেত, মানুষে খেত। বালকচন্দ্র কিংবা অস্থিরচন্দ্র বলে, জামরুলতলার আম কিংবা জামরুল যে না খেয়েছে সে বুঝবে কী করে তার সোয়াদ? তার জিভ এখনো আমের রঙে হলুদ হয়ে আছে। অস্থিরচন্দ্র কাকে বলে, না নিজেকে বলে। একা একা ফুলতলা থেকে জামরুলতলা যাওয়ার পথে বটতলায় বসে নিজে নিজে বলে। কেন বলে, না হয়েছে কি, জামরুলতলায় আম-জামরুল কোনো গাছই আর নেই। কে যেন একটা একটা করে কেটে দিল। কেন কাটল, না একটা হনুমানের বাড়ি ছিল সেই আম গাছের মাথায়। হনুমানের যা অভ্যেস, আম খেয়ে তার আঁটি ছুঁড়ে দিচ্ছিল নিচে। সেই আঁটি লাগল একটা দুষ্ট লোকের গায়ে, তার শাদা জামায় দাগ হয়ে গেল। সে খুব রাগী। সে করল কী, পরদিন একটা করাত এনে কেটেই দিল গাছটা। একটা কেন, অনেক। একে একে সব গাছ কেটে দিল রাগ করে। হুঁ, কথাটা সত্যি হতে পারে আবার মিথ্যেও হতে পারে। লোকে বলে, রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে নাকি আম-জামরুল গাছ কেটে দিয়েছে রাস্তা আর বাসওয়ালারা। একজন রাস্তাওয়ালার গায়েই নাকি আঁটি ছুঁড়ে মেরেছিল হনুমান। রাস্তাওয়ালা মানে যারা বালি, খোয়া, পাথর আর পিচ দিয়ে কালো রাস্তা বানায়। গাছ কাটতে হনুমানের ঘর ভাঙল, সে পালিয়েছে বন্দুক দেখে। আর পাখিরাও উড়ে গেছে কোন দিকে যেন। গাছ ছাড়া পাখিরা তো থাকতে পারে না। গাছ ছাড়া হনুমানই বা যাবে কোথায়। এখন জামরুলতলা স্টপ আছে কিন্তু জামরুল গাছ নেই। গাছগুলি সব কোথায় গেল? কে বলবে কোথায় গেল?গাছেদের মাটি নেই তাই তারাও নেই। তো অস্থিরচন্দ্র একদিন তাদের ফুলতলা গাঁয়ের লোকদের বলল, সবুজ শহর আর সবুজ নেই তা জানো?
গাঁয়ের লোক মাথা নাড়ে, তারা জানবে কী করে?
হ্যাঁ, কী করে জানবে? তারা সব স্থির মানুষ। ঘর ছেড়ে আর গাঁ ছেড়ে যায় না কোথাও। তাদের বাড়ির সামনে বাগান আছে ফুলের। তারা সকালে দুপুরে, খুব রোদের সময় গাছে জল দেয়। তাদের গাঁয়ে সবুজ শহর থেকে লোক আসে, ফুল নিয়ে যায় কিনে। এই রকমই চলছিল বহুদিন। ফুল বিক্রি করে ফুলতলার মানুষ চাল, ডাল, নুন, তেল কেনে।বই কেনে। মিঠাই কেনে। কিন্তু আজ কী বলছে অস্থিরচন্দ্র। সে তো গাঁয়ে থাকেই না বড় একটা। এই তো সে গাঁ ছেড়ে গিয়েছিল গেল ফাল্গুন মাসে।ফিরল এই আষাঢ়ে। আকাশে এখন মেঘ। বাগানে বাগানে রজনীগন্ধা ফুলের চাষ শুরু হয়ে গেছে। গন্ধরাজ গাছে ফুল ফুটেছে। কামিনী গাছে ফুলের কুঁড়ি এসেছে। অস্থির গিয়েছিল কোথায়, না অনেকদূর এক পাহাড়ের দেশে, নদীর দেশে। বলছে, পাহাড় ভাঙতে বড় বড় মেসিন এসেছে নীল পাহাড়ের দেশে। পাহাড়ের আর থাকা হবে না। অস্থির এক অদ্ভুত মানুষ। পাহাড়ের থাকা হবে না মানে? পাহাড়ের কি পা আছে যে চলে যাবে? সে না হয় অস্থির, কিন্তু পাহাড় তো স্থির বটে।
হ্যাঁ, পাহাড়ের পা নেই, পাহাড় স্থির, নিশ্চল, কিন্তু পাহাড়, ভেঙে পাথর সব চলে যাচ্ছে সবুজ শহরে, মস্ত সব দালান উঠছে, উঁচু উঁচু বাড়ি।
কত উঁচু, শাল গাছের মতো উঁচু? একজন জিজ্ঞেস করে।
অস্থিরচন্দ্র হাসে, তার চেয়েও উঁচু।
আকাশ পর্যন্ত? এক বুড়ো জিজ্ঞেস করে।
প্রায়, কিন্তু আকাশ এমন যে যত তুমি উপরে ওঠো, আকাশও উঠে যাবে উপরে।
বাহ, সেইটা ভালো। বুড়ো বলল।
আর একজন জিজ্ঞেস করল, আর কী খবর অস্থিরচন্দ্র?
অস্থিরচন্দ্র বলল, সবুজ শহরে গাছ কমে যাচ্ছে দিন দিন।
গাঁয়ের বুড়ো অনাথচন্দ্র বলল, আমাদের কী, আমরা তো আর আর সবুজ শহরে থাকতে যাচ্ছি না, আমি সবুজ শহরে যাইনি কোনোদিন।
অস্থিরচিন্দ্র বলল, আমরা সব ফুলের উপর বেঁচে থাকি।
তাইই তো। মাথা নেড়ে আর একজন বলল।
কিন্তু! অস্থিরচন্দ্র কী যেন বলতে গিয়ে চুপ করে গেল।
অস্থির বলল, জগতের অবস্থা ভালো না।
জগত কী? বুড়ো অনাথচন্দ্র বলল।
সব মিলিয়ে জগত। অস্থির বলে।
সব মিলিয়ে মানে? অনাথচন্দ্র জিজ্ঞেস করে বুঝতে না পেরে।
অস্থির বলল,পাহাড়তলীর গ্রাম, নদীর ধারের গ্রাম, ফুলের গ্রাম, গাছের গ্রাম, মানুষের গ্রাম, পাহাড়, বন, নদী…সব মিলিয়েই জগত।
বুঝলাম কিছুটা, সবটা না। একজন বলল।
পলাশ বলল, সবটা বুঝব কী করে, আমরা যে ফুলতলার বাইরে যাইনি কখনো।
অস্থির বলল, আরো কথা আছে?
কী কথা? পলাশ জিজ্ঞেস করল।
কী বলতে চায় অস্থির? অস্থির তার কুটিরে গিয়ে ঢুকল। মাটির বাড়ি, কিন্তু তার গায়ে শুধু গাছ আর ফুল। দুপুরে চাল-ডাল রাঁধল সে। খেয়ে লম্বা ঘুম লাগালো। বেলা পড়ার আগেই ঘুম থেকে উঠে বাঁশি নিয়ে বসল। বাঁশিতে সুর তুলল। কী সুন্দর বাজায় সে। গাঁয়ের লোক এল তার কুটিরের প্রাঙ্গণে। এক যুবক, যার নাম পলাশবরণ, বলল, হ্যাঁ গো অস্থিরচন্দ্র, তুমি কী বলতে কী বললে না?
অস্থির বলল, আমার মন বড় চঞ্চল হয়েছে, কেন যে চঞ্চল তা বুঝতে পারছি না।
তা শুনে বুড়ো অনাথচন্দ্র হেসে বলল, তোর মন কবে স্থির হয়েছে অস্থির, তোর নাম তো ওই জন্যই দেওয়া, তুই সব সময় চরকির মতো ঘুরছিস।
অস্থির বলল, পাহাড় চলে যাচ্ছে।
পাহাড় আবার যায় কী করে, পাহাড় ভাঙা মানে চলে যাওয়া নয়। একজন বলল।
অস্থিরচন্দ্র বলে, শোনো, পাহাড় মানে হাতির দল, পাহাড়ে গুমগুম ডিনামাইট ফাটছে, হাতির দল পাহাড় ছাড়ছে, দলে দলে চলে যাচ্ছে আরো দূরে, হাতিরাই তো এক একটা পাহাড়।
যদি এদিকে আসে? অনাথচন্দ্র জিজ্ঞেস করে।
অস্থিরচন্দ্র মাথা নাড়ে,বলে,কী জানি,তবে মনে হয় এদিকে আসবে না।
আসতেও তো পারে, তখন বাগান শেষ হয়ে যাবে হাতির পায়ে চেপে।
হুঁ, বুড়ো অনাথচন্দ্র বলল, অঘ্রান মাসে তার মামার বাড়ির গ্রামে হাতি ঢুকে সব ধান নষ্ট করে দিয়েছিল, সে বহুদিন আগের কথা।
অস্থিরচন্দ্র বলল, এমন হয়।
তাহলে আমাদের ফুলের বাগান গেছে! পলাশবরণ বলল।
অস্থিরচন্দ্র বলল, হুঁ, তারা আসবে কি আসবে না, তা তারা জানে, তাদের ঘর ভেঙেছে পাহাড়-ভাঙার দল, মানুষের উপর তারা রেগে আছে।
চুপ করে থাকে সকলে। অস্থির আর কী বলে, তা শুনবে। কিন্তু অস্থির কিছু বলে না।পরদিন সবুজ শহর থেকে পেয়াদা এল। পেয়াদার কালো জামা কালো ধুতি। মাথায় কালো পাগড়ি। কাঁধে বন্দুক। গোল গোল চোখ। মোটা পাকানো গোঁফ। বটতলায় দাঁড়িয়ে সে বলল, হুকুমজারি করতে এসেছে।
কিসের হুকুমজারি? জিজ্ঞেস করে পলাশ।
দেশের মালিক হুকুম দিয়েছেন এই ফুলতলা গ্রামে কারখানা হবে।
অস্থিরচন্দ্র বলল, এ তো আমাদের ফুলের বাগান, ফুল চাষ ফুলতলার মানুষের কাজ।
পেয়াদা বলল, মালিক হুকুম দিয়েছে, ফুলতলায় ফুলের কারখানা হবে।
সে আবার কী কথা,ফুল তো গাছে হয়।অস্থিরচন্দ্র বলল, কারখানায় ফুল হয় বলল কে?
পেয়াদা বলল, মিঠাই আর জল দাও, তাহলে সব খোলসা করে বলি।
পেয়াদাকে মিঠাই আর জল দেওয়া হলো। গোটা একটা পাকা কাঁটাল দেওয়া হলো। খেতে খেতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকতে লাগল। সকলে বসে থাকল চুপ করে। ভাবতে লাগল, ফুলতলায় সবই তো ফুলের বাগান। যত দূর চোখ যায় ফুলের রঙ আর রঙ। আর আছে আম কাঁটালের বাগান। এর ভিতরে কারখানা হবে কোথায়? কারখানা মানে অনেক জমি। ফুলের বাগান নষ্ট হবে। এইসব যখন ভাবছে সবাই, পেয়াদা উঠে বসল, বলল, মালিক হুকুম করেছে, ফুলতলায় ফুলের কারখানা হবে, প্লাস্টিক ফুল, সেই ফুল টেকে অনেক দিন, সাবান জলে ধুয়ে নিলে নতুন। মালিক বলেছে, ফুলতলার জমিতে ফুলের কারখানা হবে, মেসিনে ফুল বেরোবে।
আমরা, আমরা কোথায় যাব? পলাশ জিজ্ঞেস করল।
কারখানায় কাজ করবে। বলল পেয়াদা, সব জানিয়ে গেলাম, যদি কাজ চাও পাবে, না চাও তো যাবে।
কোথায় যাব? পলাশ জিজ্ঞেস করল।
যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাবে, কাল থেকে জমি মাপা হবে, পাঁচিল দেওয়া হবে, আর ফুল চাষ হবে না, সবুজ শহরে গাছ নেই, যা আছে সব প্লাস্টিকের গাছ। তারা প্লাস্টিক ফুল চায়, প্লাস্টিক গাছ চায় যাতে হনুমান, ভ্রমর আর প্রজাপতী না ঘুরঘুর করতে পারে। পেয়াদা গোঁফ মুচড়োতে মুচড়োতে বলল, প্লাস্টিক গাছ হলে আর মানুষও আসবে না গাছতলায়, হাওয়াও হবে না, পাখিরা বসবে না ডালে ডালে। পাখিরা কলরব, কিচির মিচির করতে পারবে না। কিচিরমিচিরে ঘুমতে পারে না মালিক।
সকলে চুপ।অস্থিরচন্দ্র এমনি দশ দিকে ঘুরে ঘুরে খবর আনে। প্রতিবার যখন ফেরে কত ভালো কথা বলে বিকেল থেকে সন্ধে রাত পর্যন্ত, কিন্তু এইবারই পেয়াদার খবরে চুপ হয়ে গেল। কী সব্বোনাশ! বাগান তুলে দিয়ে ফুলের কারখানা হবে। প্লাস্টিকের ফুল এসে আসল ফুলের গাছ নষ্ট করে দেবে।ফুলেদের বাড়ি হলো গাছ। গাছ থাকবে না। ফুল না থাকলে ফুলতলার মানুষও থাকবে না।
অস্থিরচন্দ্র বলল, এমনি হয়েছে অনেক দেশে, ফুলের ঘর নেই তাই ফুল জন্মায় না।
আমরা? পলাশ জিজ্ঞেস করে, আমাদের কী হবে?
অস্থিরচন্দ্র বলে, আগে ফুলতলার মানুষ ঘর ছাড়া হবে, তারপর ফুল।
কত রাত পর্যন্ত সকলে জেগে থাকল। জমি মাপতে কাল সকালে জমি মাপার আমিন আসবে। আমিনের দল ফুল বাগানের উপর দিয়ে হেঁটে যাবে। ফুল তার পায়ের তলায় থেঁতলে যাবে।সকলে অন্ধকারে বসে কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল। অস্থিরও ঘুমায়। কিন্তু শেষ রাতে মনে হলো মাটি দুলছে। কেন? ভূমিকম্প হলো নাকি? ডাকছে কারা? এ ডাক তো চেনা। লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসে অস্থিরচন্দ্র তার ঘর থেকে। ছুটতে থাকে। কারা এসেছে? চাঁদের আলোয় দেখতে পায় পাহাড় ঘিরে রেখেছে ফুলের বাগান আর ফুলতলা। ও পলাশবরণ, ও অনাথকাকা, ও শিমুল, ও গোলাপ, ও চন্দ্রমল্লিকা, বেরিয়ে এস বেরিয়ে এস। ঘরছাড়া পাহাড়ের দল এসেছে। ফুলতলার বিপদের কথা শুনতে পেয়ে ফুলের বাগান ফুলতলা ঘিরে নিয়েছে। ফুলতলার অধিকাংশ মানুষের নাম ফুলের নামেই। তারা সব বেরিয়ে এসে দেখল চাঁদের আলোয় মস্ত মস্ত পাহাড়ের মতো হাতি দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চল। একটা নয় অনেক। অনেক। ভোর হলে ঘরছাড়া হাতিরা তাদের ফুলের বাগান, বাগানের ফুল আর কুটির ও কুটিরের মানুষজনকে রক্ষা করবে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, হাতিরা খবর পেল কী করে?
অস্থিরচন্দ্র জানে, পাখিরা খবর দিয়েছে। মানুষ পশু-পক্ষীর ভাষা না বুঝলেও পশু-পক্ষী মানুষের ভাষা খুব ভালো বোঝে। মানুষের স্বভাব তারা জানে। জগতের কথা তারা অনেক বেশি জানে। সুতরাং …।