বৃষ্টির দিনে মনে মনে
এবারে বর্ষা প্রথম থেকেই জাঁকিয়ে বসেছে এসে৷ এবং জুলাইয়ের শেষেই নদী, খাল-বিল ভরে গেছে—তাই সেপ্টেম্বরের শেষে কী যে হবে, তা ভাবার৷
বর্ষা কখনও অতিবর্ষণ, প্লাবন এবং সর্বগ্রাসী খরস্রোতা নদীর বন্যায় তাণ্ডব করে বটে, কিন্তু তবু বলব বর্ষার মতো ঋতু নেই৷ রবীন্দ্রনাথ যত গান বর্ষার উপর লিখে গেছেন, তত গান আর কোনো ঋতুর উপরেই লেখেননি৷
যখনই বৃষ্টি পড়ে, আমার অফিস যেতে একেবারেই ইচ্ছে করে না; কোনো কাজই করতে ইচ্ছা করে না; শুধু ইচ্ছা করে, জানলার ধারে বসে একা-একা বৃষ্টি পড়া দেখি, নয়তো গুনগুন করে শুধু নিজেকে শুনিয়েই কোনো নরম গান গাই, যেমন গান বৃষ্টির সঙ্গে গাছ-পাতায় নদী-নালায় মিশে চারদিকের ভেজা প্রকৃতির সঙ্গে একেবারে একাকার হয়ে যায়৷ বাজে, করুণ সুরের মতো কোনো কোনো গান৷
বৃষ্টি পড়লেই অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে আমার৷ বৃষ্টির দিনে কত বিভিন্ন জায়গার ভেজা দিনগুলির কথা চকিতে ফিরে আসে মনের মধ্যে, ফিরে এসে, মনকে উদাস বিবশ করে দেয়৷
অনেক দিনের কথা, তখন আমি স্কুলে পাড়ি, এক বর্ষার বিকালে গারো পাহাড়ের রাজধানী তুরা থেকে বেরিয়েছি আমরা গাড়িতে গৌহাটির পথে৷ সুন্দর আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ ছেড়ে নেমে এসেছি আমরা সমতলে৷ সারা পথই বৃষ্টি পেয়েছি৷ সমতলে নামতেই বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল৷ প্রায় দেড়-দু’ঘণ্টা সমানে অমন বিদ্যুৎ চমকাতে আর কখনও দেখিনি কোথাওই৷ বিদ্যুৎ চমকালেই, সেই কথা মনে পড়ে যায়৷ বিদ্যুৎ-পৃষ্ট হইনি যদিও, কিন্তু বিদ্যুৎমোহিত হয়ে গেছিলাম এবং আজও হয়ে আছি এত বছর পরে৷
আসামের গোয়ালপাড়া জেলা আর গারো হিলস-এর সীমানা চিহ্নিত করে একটি খুব সরু গভীর নদী বয়ে গেছে৷ তার নাম জিঞ্জিরাম৷ গারো ও রাভা উপজাতিদের ছবির মতো বস্তির পাশ দিয়ে এঁকে-বেঁকে ছায়াচ্ছন্ন গভীর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে বর্ষায় কানায়-কানায় ভরা নদীর পথ৷ কুমিরের জন্যে এই নদী কুখ্যাত৷ প্রতি বর্ষায় অনেক লোক কুমিরের পেটে যায় এই অঞ্চলে৷ নানারকম কুমির! তবে মেছো-কুমিরের চেয়ে এমনি কুমিরই বেশি৷ ছোট্ট ছই-ওয়ালা নৌকাতে আমরা গেছিলাম, ভরা-বর্ষায়; ব্রহ্মপুত্র নদ বেরিয়ে সেই নদীতে৷ শীঁ শীঁ করে শিস দেয় সেখানে কুমিরেরা৷ এত বড়-বড় কুমির আছে জিঞ্জিরামে, যে তাদের মাথার কাছে চামড়া কুঁচকে ডাবের মতো উঁচু হয়ে থাকে৷ ওখানকার লোকে বলে ‘ঘট-ওয়ালা’ কুমির৷
কী বৃষ্টি, কী বৃষ্টি; অনুক্ষণ বৃষ্টি৷ নৌকা চলছে বৃষ্টির মধ্যে-মধ্যে, মাঝি লুঙ্গিটা গুটিয়ে কোমরে বেঁধে দাঁড় বাইছে—ওখানে লগি তল পায় না৷ ভেজা পানকৌড়ি আর বেলে হাঁস নদীর কাদায় পায়ের পাতার দাগ কেটে-কেটে কবিতা লিখছে৷ রাভাতলা গ্রামের মেয়েরা দু’পাশ থেকে ঝুঁকে পড়া বড়-বড় মহিরুহের ছায়ায় অন্ধকার সরু নদীর ঘাটে গা ধুতে, কাপড় কাচতে নেমেছে ভয়ে-ভয়ে৷ এইসব ঘাট থেকেই কুমির তাদের ধরে নিয়ে চলে যায় নদীর গর্ভে৷ ঘোলা অন্ধকারে, জলের গভীরে, নদীর পাড়ের কাদার মধ্যে তাদের গর্ত আছে৷ সেই গর্তে নিয়ে গিয়ে মানুষ খায় ওরা৷ কুমির মারা পড়লে তাদের পেট থেকে মেয়েদের চুড়ি, বালা, হার, ছোটদের কোমরের পৈছা, পুরুষ মানুষের আংটি সব পাওয়া যায়৷ তখনই বোঝা যায় যে, কোন কুমির কাকে খেয়েছে৷
বৃষ্টির কথা ছেড়ে অন্য কথায় চলে এলাম৷ কিন্তু বৃষ্টির কথা মনে হলেই জিঞ্জিরামের কথা মনে পড়েই আমার৷ বৃষ্টির সঙ্গে সেই স্মৃতি মাখামাখি হয়ে ভিজে রয়েছে৷ হলুদ আর কাঁচা লংকা দিয়ে রাঁধা ভাঙনি মাছের ঝোল দিয়ে মিষ্টি লাল চালের ভাত খেলাম৷ বৃষ্টির দিনের মাছ-ভাতের আঁশটে গন্ধটিও যেন এখনও আঙুলে জড়িয়ে রয়েছে৷ তিরিশ বছর পরও৷
আরও পেছিয়ে গেলে মনে পড়ে রংপুরের কথা৷ তিস্তা থেকে আসা ঘোঘট নদীর সঙ্গে যুক্ত ক্যান্যালের পারে ছিল বাবা-কাকাদের জমিজমা এবং তাঁদের বাড়ি৷ বর্ষাকালে সেই ক্যানাল দিয়ে হু-হু করে জল ছুটত৷ গো-বক ভিজত বিজ্ঞের মতো গাছে বসে৷ যেন, কনফুসিয়াসের ফার্স্ট কাজিন৷ গোরু, বলদ বিনা প্রতিবাদে ভিজতে-ভিজতে হঠাৎ ‘হাম্বা আ-আয়’ করে ডেকে উঠে বর্ষার ভেজা প্রকৃতিকে চমকে দিত৷ হাঁসেরা প্যাঁক-প্যাঁক করে মাথা খারাপ করে দিত৷ সন্ধে হলে, সদর থেকে ফিরে যেত ছোট-ছোট মুসলমান ছেলেরা দুধ বিক্রি করে দুধের পোড়া মাটির কালো হাঁড়ি বাজিয়ে গান গাইতে-গাইতে৷ তিস্তা নদীর গান, বগার ফাঁদে পড়ার গান, ফতিমা বিবির গান; কতরকমের গান৷ শংকামারীর শ্মশানের রাস্তার পাশের বাঁশঝাড়ে জোনাকি জ্বলত৷ প্রথম বসন্তের আমগাছে আমের মুকুল আসার মতো জোনাকিতে ছেয়ে যেত গাছপাতা৷ পিছনের মাঠে সাপে ব্যাঙ ধরত৷ শেয়াল ডাকত বৃষ্টিতে ভিজতে-ভিজতে৷ বাগানের জলপাইগাছের নীচের ঝোপের মধ্যে কুণ্ডলীপাকানো প্রকাণ্ড দরাজ সাপটা অস্বস্তিতে নড়েচড়ে উঠত৷
বরিশালে ইলশে-গুঁড়ি বৃষ্টি দেখেছি! তোমরা নিশ্চয়ই সেই বিখ্যাত কবিতাটি পড়েছো! ‘ইলশে-গুঁড়ি, ইলশে-গুঁড়ি, ইলিশ মাছের ডিম’—পড়োনি? না পড়লে পড়ো৷
স্টিমার ঘাটের অনেক দূরে জেলে নৌকোর ঘাট৷ চকচকে রুপোলি ইলিশ মাছে নৌকো ভর্তি করে জেলেরা এসে বৃষ্টির মধ্যে নৌকো ভেড়াত ঘাটে৷ এক টাকায় তিনটে মস্ত-মস্ত আড়াই-তিন কেজির ইলিশ৷ তোমরা কেউ কি জ্যান্ত ইলিশ দেখেছ? তোমরা কেন, খুব কম লোকই দেখেছে; এক জেলেরা ছাড়া৷ জল থেকে তুললেই ইলিশমাছ মরে যায়৷ বড় শখের প্রাণ ওদের, কষ্ট করে বাঁচতে চায় না অন্যদের মতো৷ রুই, কাতলা, কই, মাগুর, ট্যাংরা, পুঁটি জল থেকে তোলার পরও বেঁচে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করে৷ ভরা-বৃষ্টির রাতে খোলা নদীর মধ্যে তোমরা কেউ স্টিমারের সার্চলাইট দেখেছ? মনে হয়, হাজার-হাজার ইলিশ মাছ জল ছেড়ে উঠে পড়েছে—তাদের লক্ষ-লক্ষ আঁশ চকচক করছে আলোতে৷ তোমরা কেউ কি বৃষ্টির মধ্যে বরিশাল থেকে খুলনার পথে অথবা ঢাকা থেকে গোয়ালন্দের পথে খোলা ডেকে দাঁড়িয়ে ঝোড়ো জোলো হাওয়ায় স্টিমারের বাবুর্চির রাঁধা মুর্গির-ঝোল আর ভাত খেয়েছ? আহা কী স্বাদ! পৃথিবীর কত জায়গার কত রান্নাই তো খেলাম; অমন স্বাদ আর কোনো রান্নায় পেলাম না৷
উড়িষ্যার ঘন জঙ্গলে—মহানদীর অববাহিকায়—অন্ধকার বৃষ্টির মধ্যে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা অন্ধকার পাহাড়ের মতো হাতির দলকে তোমরা কি কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছো? তখন দেখলে মনে হয়, ওরা স্থবির—চিরদিন বুঝি ওরা এমনি করে দাঁড়িয়েই থাকবে৷ বৃষ্টির দিনে বাঘেদের বড়ই অসুবিধে৷ ওরা বেড়ালের বোনপো, বোনঝি বলে জলকে ওদের খুবই অপছন্দ! বৃষ্টির পর যখন গাছ-গাছালি থেকে টুপ-টাপ করে জল পড়ে, তখন ওরা বনের মধ্যে বন বিভাগের বানানো চওড়া পথে এসে বসে থাকে জল এড়াবার জন্য৷
কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ? তারা জলকে তেমন কেয়ার করে না৷ বর্ষার বিকেলে—এপার-ওপার দেখা যায় না এমন সময় মাতলা, হেড়েভাঙ্গা বা গোসাবা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে যখন মামা হাঁক দেয়, তখন সেই ডাক নদীর স্রোত বেয়ে মুহূর্তের মধ্যে কত মাইল যে ছুটে যায় তা যে শুনেছে, সেই জানে৷ সুন্দরবনের মধ্যে কিছু উঁচু জমি আছে, যা জোয়ারে এবং বর্ষাতেও জলে ডোবে না—জেলে-বাউলে-মউলেরা সেইরকম ডাঙাকে বলে, ট্যাঁক৷ বর্ষাকালে সেই ট্যাঁকের মালিকানা নিয়ে জানোয়ারদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়৷ শিঙাল হরিণেরা শিঙে-শিঙে খটাখট আওয়াজ করে আর বৃষ্টিতে ভিজতে-ভিজতে বাঁদরগুলো কিচিরমিচির করতে-করতে গাছ থেকে সাপোর্ট করে হাততালি দেয়—চেঁচায়—যেন গ্যালারিতে বসা দর্শক মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের শিল্ড-ফাইন্যাল দেখছে! পূর্ব-আফ্রিকাতে গোরোং গোরো (এর কথা আগে বলেছি) বলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরি আছে৷ সেই আগ্নেয়গিরি পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে বড় আগ্নেয়গিরি ছিল৷ তার বলয়ের গভীরে অনেক বর্গ কিলোমিটার পরিধির বিরাট এক গর্ত৷ টুপিকে উল্টো করে দিলে যেমন দেখায়, তেমন দেখতে লাগে গর্তটি৷ তার মধ্যে আবার হ্রদও আছে৷ বৃষ্টির মধ্যে সেই লেকে ফ্লেমিংগো পাখিরা তাদের আশ্চর্য গোলাপি-সাদা শরীর আবার লম্বা-লম্বা ঠ্যাং নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷ বৃষ্টির মধ্যেই চিতা থমসনস গ্যাজেল ধরে তার মাংস খায় ছিঁড়ে-ছিঁড়ে৷ সিংহ-সিংহী, ধাড়ী বাচ্চার দল বড় কালো মোষ মেরে তার পেটের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে রক্তে নাক-মুখ-গোঁফ-কপাল সব লাল করে বিরাট আওয়াজে ভূরিভোজ করে৷ জেব্রারা জংলি গাধার মতো দৌড়াদৌড়ি করে এদিকে-ওদিকে৷ পায়ের ক্ষুরে ভিজে, কালো, নিভে-যাওয়া আগ্নেয়গিরির মাটি-ছিটিয়ে৷ সুইজারল্যান্ডের লেক জেনিভার উপর যখন বৃষ্টি পড়ে, তখন বরফ ঘেরা পাহাড়-চুড়ো আর লেকের জলের রং এক হয়ে যায়৷ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যখন বৃষ্টি নামে, তখন হাওয়াইনরা কানে হাইবিসকাস ফুল গুঁজে, আমাদের দেশের লুঙ্গির মতো, রঙিন পাগো পরে খড়ের চালার নীচে নাচ-গান করে৷ ‘‘মাহে-লাহে’’ আর ‘‘লাই-টাই’’ খায়৷ মাহে-লাহে, মাছের একরকম রান্না—আর লাই-টাই, পানীয় একরকমের৷
আফ্রিকার রিফটভ্যালিতে যখন বৃষ্টি পড়ে—তখন সাত ফুট লম্বা মাসাই রাখাল হাতে বল্লম নিয়ে, লালরঙা এক পোশাক পরে—এক পায়ে দাঁড়িয়ে একটি পা গুটিয়ে নিয়ে অন্য পায়ের হাঁটুর কাছে রেখে এক-ঠ্যাং বকের মতো দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজে৷ ওদের চোখে-মুখে কোনো ভাবান্তর ঘটে না৷ নাক-চোখ দিয়ে জল গড়ালেও৷ মাঝে-মাঝে কেবল পিচিক পিচিক করে থুথু ফেলে এদিকে-ওদিকে, যেন সমস্ত নাগরিক মেকি সভ্যতার একেবারে মুখেরই উপর৷
তোমরা সবাই সুকুমার রায়ের ‘‘ভাল রে ভাল’’ কবিতাটি নিশ্চয়ই পড়েছ৷ আবোল তাবোল-এর সেই কবিতার শেষ লাইন, ‘‘কিন্তু সবার চাইতে ভাল পাউরুটি আর ঝোলাগুড়৷’’
ওঁকে আমি দেখিনি কখনও—দেখা সম্ভবও ছিল না৷ কারণ আমি জন্মাবার আগেই উনি মারা যান—কিন্তু উনি বেঁচে থাকলে সাজেসট করতাম কিন্তু ‘সবার চাইতে ভালো বর্ষারাতে খিচুড়ি’ লিখতে৷ সুনির্মল বসু অবশ্য লিখেছিলেন, ‘‘খিচুড়িতে ডিম-ভাজা, তরকারিতে সিম-ভাজা৷’’
বৃষ্টির রাতে, ভাজা মুগের ডালের মটরশুঁটি দেওয়া ভুনি খিচুড়ি, সুগন্ধি সোনারঙা গাওয়া ঘি, কড়কড়ে করে আলুভাজা, ডিমভাজা, তপসে মাছ অথবা ইলিশ মাছের গাদাভাজা, আর শুকনো লংকা ভাজা দিয়ে খেয়ে, আতর লাগানো নকশি-কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকার মতো রাজসিক আনন্দ বোধ হয় আর কিছুই নেই৷
কিন্তু তোমরা যারা শহরে থাকো, তারা বড়ই অভাগা৷ তোমাদের জন্যে আমার খুউব কষ্ট হয়৷ বৃষ্টির দিনে গ্রাম বা জঙ্গলে চলে যেও৷ আমাদের দেশটা কী সুন্দর৷ এমন বৈচিত্র্য, এমন সৌন্দর্য পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই৷ টিনের বা খাপরার বা খড়ের চালে বৃষ্টির শব্দ শোনার মতো আনন্দ আর কিছুই নেই৷ টিনের চালে বৃষ্টি পড়লে মনে হয় খই ভাজছে কেউ, নয়তো বৃষ্টির পুকুরে পুঁটি মাছ লাফাচ্ছে মনের আনন্দে ধেই-ধেই করে৷ খাপরার চালে বৃষ্টি পড়লে মনে হয়, ঝাচা-মাচা করে কোনো দেহাতি লোক দূর পাহাড়ের আড়াল থেকে বুঝি মাদল বাজাচ্ছে৷ আর খড়ের চালে বৃষ্টির শব্দকে মনে হয়, তোমার কোনো খুবই প্রিয়জন, মা, মাসি, ঠাকুমা বা দিদিমা তোমার একেবারে কানের কাছে ফিস ফিস করে কোনো গল্প বলছেন৷
হাজারিবাগ আর পালামৌর বৃষ্টিও এমনই ফিসফিসে৷ রূপকথার গল্পের মতো৷ পড়ছে তো পড়ছেই; কিন্তু যেন রাশ-রাশ পায়ের উড়াল-পাখি, সুরের পাখি; দূরের পাখি, রূপকথার পাঁয়জোর-পরা আলতো নরম সুন্দর পায়ে এসে বসছে—এখন যেমন স্মৃতির পাখিরা বসছে এসে ফিসফিস করে, আমারও বুকের দাঁড়ে, ফিরে-ফিরে৷ আর আমাকে উদাস, বিষণ্ণ করে দিচ্ছে আলসেতে ভেজা-পায়রা-ডাকা এই বিচ্ছিরি শহরের ইঁট কাঠের প্রাণহীন জঙ্গলের এক বৃষ্টির দুপুরে৷
—