বনের খবর – ৬

১৯০৩—১৯০৪৷ কেংটুং রাজ্য৷ এবছর দু-জন সাহেব আমার সঙ্গে দূরবিনের কাজ শিখতে গিয়েছিলেন৷ আমি দূরবিনের কাজ করব আর সাহেবরা চোদ্দো-পনেরোদিন আমার সঙ্গে-সঙ্গে থেকে কায়দাকানুন শিখে নিজের-নিজের কাজে চলে যাবে৷ আমাদের সর্বদাই রেলের লাইন ছেড়ে কুড়ি-বাইশদিনের পথ চলতে হয়, এবার তিনজনে একসঙ্গে যাচ্ছি, গল্পগুজবে বেশ পথ চলাটা আরামে কাটালাম৷ সকলেই ঘোড়া কিনেছিলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয় ঘোড়া কটাই সব বুনো৷ একে তো এইরকম হ্যাটকোটওয়ালা অদ্ভুত জীব তারা আগে কখনো দেখেনি, তার উপর আবার তাদের পিঠে নিয়মমতো বড়ো একটা কেউ চড়েনি৷ কাজেই ঘোড়াগুলোকে বাগ মানাতে যে আমাদের বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল সেকথা বলাই বাহুল্য৷ এক-এক সময়ে সামান্য কারণে বা অকারণে হঠাৎ দৌড় দেয়, আবার কখনো বা তাদের মেজাজ বিগড়ে যায়, আর কিছুতেই নড়বে না, চার পা শক্ত করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে!

ভোরে বেরিয়েছি, কুয়াশায় চারদিক ঢাকা৷ আগে-আগে চলেছে একজন শান পথ দেখিয়ে, তার পিছনে আমি, আমার পিছনে এক সাহেব, তার পিছনে অন্য সাহেব, তার পিছনে তিনজন সহিস৷ একটা বেশ বড়ো নালার কিনারায়-কিনারায় তিন-চার ফুট চওড়া রাস্তা এঁকেবেঁকে চলেছে, রাস্তার অন্য পাশে খাড়া পাহাড়৷

চলতে-চলতে সামনে একটা পাহাড়ি নদী পড়ল, তাতে বেশ জল আর স্রোত, কিনারাটা খাড়া আর বেজায় পিছল৷ শানটিকে পা টিপেটিপে নামতে দেখেই আমি ঘোড়ার রাশ টেনে ধরেছি, কিন্তু তবু একটু পিছলে গেল৷ চার-পাঁচ ধাপ চলার পর আমার খেয়াল হল যে পিছনের দুজনকে সাবধান করে দেওয়া দরকার৷ ডেকে বললাম— সাবধান, লুকআউট, আর সঙ্গে—সঙ্গে ঝপাং করে জলে পড়বার আওয়াজ! ফিরে দেখি একজন সাহেবের মাথা থেকে কোমর অবধি জলের নীচে খালি ঠ্যাং দুটো উপরে বেরিয়ে রয়েছে৷ টুপিটা জলে ভেসে যাচ্ছে৷

‘আরে, আরে,’ বলে সহিসটা দৌড়ে এসে সাহেবকে তুলল, টুপিটা ধরল৷

আর আমার সেই হতভাগা বুনো ঘোড়া, ওই পিছল ঢালু জায়গায় পৌঁছে ওই জলের স্রোত দেখে ভড়কে গিয়ে, হঠাৎ সামনের পা দুটো শক্ত করে আর মাথাটা মাটির দিকে ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে আর আমি তার মাথার উপর দিয়ে উল্টে একেবারে জলে!

বেচারা আমরা! ওই শীতের মধ্যে প্রায় সমস্তদিন ভিজে কাপড়ে থাকতে হল৷

আরেকদিন আমি একলাই চলেছি, সঙ্গে সহিস আর একজন খালাসি, আগে-আগে লাংরিয়া (পথ-প্রদর্শক)৷ একটা নালা পার হতে হবে, তাতে একহাঁটু কাদা আর দু-তিন ফুট উঁচু কিনারা৷ ঘোড়া তো নালায় নামল, কিন্তু অন্য পাড়ে আর কিছুতেই উঠবে না৷ তিন-চারবার চেষ্টা করেও তাকে ওপারে তুলতে পারলাম না৷ এক-একবার সামনের দু-পা পাড়ের উপর তুলে দেয় বটে, কিন্তু তক্ষুনি আবার নামিয়ে নেয়৷ একবার যেই সামনের দু-পা পাড়ের উপর তুলেছে অমনি আমি সপাং করে দু ঘা চাবুক লাগিয়েছি তার পিছনে, আর হতভাগা পিছনের পা দুটো গুটিয়ে নিয়ে, ঠিক কুকুরের মতো কাদার মধ্যে বসে পড়েছে! আমি তো কাদায় একেবারে ঢুকে গেলাম, ঘোড়াটাও ডিগবাজি খেয়ে আমার উপর দিয়ে ডিঙিয়ে গেল৷ সহিস ও খালাসি ‘হায়, হাঁয়’ করে ছুটে এল, না জানি কী হয়েছে! কিন্তু একহাঁটু কাদার মধ্যে পুঁতে গিয়েছিলাম বলে আমার কোনো চোটই লাগেনি, খালি কাদা মেখে ভূত!

এমনি করে হাসি-তামাশার মধ্যে নিজের-নিজের কাজের জায়গায় পৌঁছলাম৷ প্রায় দুশো-সওয়াদুশো মাইল পথ-চলার কষ্ট যেন বুঝতেই পারলাম না৷

একদিন একটা পাহাড়ে উঠেছি, দেখি সামনে অন্য একটা পাহাড়ের চুড়োর জঙ্গল না-কাটালে কাজ করা অসম্ভব৷ কিন্তু কুলিরা কিছুতেই ওই চুড়োর জঙ্গল কাটবে না৷ সেখানে নাকি তাদের ‘নাট’ থাকেন, সেখানকার গাছ কাটলে তিনি চটবেন, আর চটলে বড়োই মুশকিল হবে৷ কিন্তু সরকারি কাজ তো আর এসব কথায় বন্ধ থাকতে পারে না, কাজেই আমাদের খালাসিদের নিয়েই জঙ্গল কাটাতে হল৷ প্রায় সমস্ত গাছই কাটা হয়ে গেছে, শুধু দুটো বড়ো-বড়ো গাছ বাকি আছে, এমন সময় সেখানকার দুজন মাতববর লোক এসে বললে, ‘ও দুটি আমাদের পুজোর গাছ, ওদের ছেড়ে দিন৷’ তাই আর ও-গাছ দুটিকে কাটালাম না৷

এর পরের বছর আবার সেই পাহাড়ে আমার যাবার দরকার হয়েছিল৷ গিয়ে দেখি পাহাড়ের উপরের গ্রামটা আর সেখানে নেই, দু মাইল দূরে আরেকটা পাহাড়ে চলে গেছে৷ প্রধানকে জিগগেস করলাম, ‘গ্রাম ছেড়ে চলে এলে কেন?’

প্রধান বললে, ‘সে তো তোমাদেরই দোষ৷ তোমরা সেই যে বন কেটে ফেলেছিলে তাতে দেবতা চটে গিয়ে বাঘ হয়ে এসে আমাদের কি যেমন-তেমন সাজা দিয়েছে ভেবেছ! মানুষ গোরু শুয়োর সব মেরে আর কিছু বাকি রাখেনি৷ কাজেই আমাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে৷’

বন আর পাহাড়ের দেশ, পদে-পদেই বিপদের সম্ভাবনা৷ কাজেই ভূতের ভয়, বাঘের ভয়, ভালুকের ভয়, হাতির ভয়, লোকের মনে লেগেই আছে৷ বনের দেবতা আর ভূতের ভয় এদের বড্ড বেশি, আমি আগে সে কথা জানতাম না৷

এই পাহাড়টাতে বাস্তবিকই বড্ড বেশি বাঘ৷ বাঘের জ্বালায় গ্রাম ছেড়ে তো সকলে পালিয়ে গেল, দেবতাই এইসব করেছেন বলে নিজেদের মনকে প্রবোধ দিল আর দেবতাকে সন্তুষ্ট করবার জন্য পাহাড়ের উপর ঘটা করে পুজো দিল৷ বাঘের সংখ্যা কিন্তু তাতে একটুও কমল না৷

আমি ভোরবেলায় ওই পাহাড়ের চড়াই উঠছি৷ আমি উঠছি ঘোড়ায় চড়ে আর বাঘমশাইও হেলতে-দুলতে ওই পথেই নামছে! হঠাৎ দু-জনে চোখাচোখি, আর অমনি ‘হূপ’ করে শব্দ করে দে এক লাফ, হুড়মুড় করে একেবারে কুড়ি-পঁচিশ ফুট নীচে খাদের ভিতর পড়ল৷ একবার চেয়েও দেখল না যে কোথায় পড়ছে!

আরেকবার ওই পাহাড়ের উপর দিয়ে আমাদের দু-জন ডাকওয়ালা যাচ্ছিল৷ তাদের বিশেষ করে বলে দেওয়া হয়েছিল, যেন খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে যায় আর বেশ রোদ থাকতেই যেন পাহাড়ের অন্যদিকে নীচের গ্রামে পৌঁছে যায়, কেননা ওখানে বড়ো বাঘের ভয়!

তাদের আরও বলা হয়েছিল যে পাহাড়ের দুই-তৃতীয়াংশ পার হয়ে গেলে দুটো রাস্তা পাবে৷ একটা ডান দিকে পাহাড়ের ধারে-ধারে গেছে, অন্যটা ছোটো রাস্তা পুবমুখী নীচে নেমে গেছে৷ ডানদিকেরটা বুনো রাস্তা, ওপথে গেলে জঙ্গল—জঙ্গলে ঘুরে মরবে৷ ওই পুবের ছোটো রাস্তা দিয়েই যেতে হবে, আর ওই দোবাট থেকে পাঁচ-ছয় মাইল এগিয়ে গেলেই গ্রাম পাবে৷

ডাকওয়ালারা দু-জনেই অযোধ্যার লোক৷ বুদ্ধির দোষেই হোক বা অন্য কারণেই হোক, তারা শেষ পর্যন্ত ডানদিকের রাস্তা দিয়েই চলে গেল৷ তিন-চার ঘণ্টা চলার পর হুঁশ হল— তবে না বলেছিল যে রাস্তাটা নীচে নেমে যাবে? আর দোবাট থেকে পাঁচ-ছয় মাইল পরেই গ্রাম পাবে? এ যে পাহাড়ের উপরে-উপরেই চলেছে, আর শেষই হচ্ছে না৷ তবে বা ওই ছোটো রাস্তাটাই ঠিক ছিল৷ ওঠ গাছে, দেখ কোনদিকে গ্রাম৷ একজন গাছে উঠে বলল, পুবদিকে, অনেক দূরে, পেছনে খেত দেখা যাচ্ছে৷ তখন গাছ থেকে নেমে ছুটোছুটি করে তারা সেই দোবাটে ফিরে চলল৷ কিন্তু কিছু দূর গিয়েই বুঝতে পারল যে দোবাটে পৌঁছবার বহু আগেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে৷ তখন তারা বাঘের কথা মনে করে তাড়াতাড়ি রাত কাটাবার জায়গা খুঁজতে লাগল৷ পাহাড়ের উপর শিকারিদের একটা বিশ্রামের জায়গা ছিল, সেখানে গাছের নীচেটা পরিষ্কার আর কাছেই একটা ছোটো নালায় জল আছে৷ তারা ভাবল এইখানেই রাত কাটিয়ে, ভোরে দোবাটে ফিরে গিয়ে, ছোটো রাস্তাটা ধরে গ্রামে যাবে৷

গাছতলায় জিনিসপত্র রেখে একজন কাঠ জড়ো করতে লাগল৷ রান্না করতে হবে, ধুনি জ্বালতে হবে, বলে দিয়েছে এ পাহাড়ে বড়ো জানোয়ারের ভয়৷ অন্য লোকটি বালতি নিয়ে জল আনতে গেল৷ অমনি— ‘হুঁ-উ-ম-ম’ বন-জঙ্গল কেঁপে উঠল, যেদিক থেকে তারা ফিরেছে সেই দিক থেকে বাঘ ডাকল৷ দু-জনেই হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে এসে গাছের গোড়ায় উপস্থিত হল৷ আবার ‘হুঁ-উ-ম-ম’— যেন একটু কাছে! আবার ‘হুঁ-উ-ম-ম’— আরও কাছে! বাঘটা এইদিকেই আসছে আর একটু পর-পর হুঙ্কার ছাড়ছে৷

হুটোপুটি করে দু-জনেই গাছে উঠল, আর বেশ উঁচুতে উঠে, ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে রইল৷ পাছে পড়ে যায়, এই ভয়ে পাগড়ি খুলে গাছের ডালের সঙ্গে নিজেদের বেশ করে বাঁধল৷

বাঘও ‘হুঁ-উ-ম-ম’ করতে করতে গাছে নীচে এসে হাজির হল৷ এসেই সোজা গিয়ে ওদের লোটা-কম্বল শুঁকতে আরম্ভ করল আর এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল৷ কোথাও কিছু না দেখতে পেয়ে আবার হুঙ্কার! আবার খোঁজ-খোঁজ, আবার হুঙ্কার! তারপর জলের ধারে চলে গেল৷ সেখানে তাদের বালতি দেখেই হোক, বা অন্য কোনো কারণেই হোক, আবার গর্জন৷ জল খেয়ে উপরে উঠে এসে এক-একবার জিনিসপত্র শুঁকে দেখে, আবার হুঙ্কার!

কতক্ষণ ধরে এই রকম করে, তারপর গাছতলায় বাঘ বসে রইল৷ কিছুক্ষণ বসে থাকে, আবার উঠে পায়চারি করে, লোটাকম্বল শোঁকে আর হঙ্কার দেয়৷ লোক দুটির অবস্থা বোঝাই যায়৷ বাঘের ভয়ে শীত কোথায় পালিয়ে গিয়েছে, তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গিয়েছে৷ সমস্ত রাত বাঘটা ওই রকম করল, তারপর ভোরের দিকে ডাকতে ডাকতে, যেদিক থেকে এসেছিল, সেইদিকেই আবার চলে গেল৷

ডাকওয়ালারা বেলা আটটা-নটা অবধি গাছের উপরেই বসে রইল, তারপর বাঘের আর কোনো সাড়াশব্দ নেই দেখে, নেমে এসে, জিনিসপত্র নিয়ে দে দৌড়! খাওয়া-দাওয়া চুলোয় গেল, একেবারে গ্রামে পৌঁছে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল! গ্রামের প্রধান সমস্ত শুনে তাদের খুব বকুনি দিল— এ পাহাড়ের বাঘ বড়ো দুষ্টু, মানুষখেকো৷ অত করে বলে দেওয়া সত্ত্বেও ও-রাস্তায় গেলে কেন?

আরেকটা পাহাড়ে এক সাহেবের তিনটে খচচর বাঘে খেয়েছিল৷ সাহেবের আগে আমিও ওই পাহাড়ে কাজ করেছিলাম৷ পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে এক মাইল দূরে একটা আড্ডা আছে, জঙ্গলের আড্ডা৷ নিতান্ত অপারগ না হলে কেউ ওই আড্ডায় থাকে না, আর ওখানে রাত কাটাবার দরকার হলে, অনেক লোক একসঙ্গে জুটে তবে ক্যাম্প করে৷

আমারও ইচ্ছা ছিল ওখানে ক্যাম্প করব, কিন্তু গ্রামের লোকেরা মানা করল, ‘ওখানে যেয়ো না, বড়ো বাঘের ভয়, আমরাও ওখানে কখনো রাত কাটাই না, একলা ও-পথে যাই না৷’ আমি ওই আড্ডায় না গিয়ে পাহাড়ের উত্তরে, প্রায় চার মাইল দূরে মুসোদের গ্রামে ছিলাম৷ বেজায় চড়াই আর বিশ্রী রাস্তা৷ সাহেবেরও ওই পাহাড়ে একটু কাজ ছিল৷ তিনি বললেন, ‘ওই চার মাইল চড়াই আমি উঠছি না৷ জঙ্গলের আড্ডাতেই থাকব৷’’

আমি অনেক করে মানা করলাম, গ্রামের লোকেরাও বলল, কিন্তু সাহেব কিছুতেই শুনলেন না৷ ওই জঙ্গলের আড্ডাতেই ক্যাম্প করলেন৷ বড়ো ধুনি জ্বালানো হল, সঙ্গের খচচরগুলোকে তার পাশেই বেঁধে রাখা হল৷ খাওয়া-দাওয়ার পর সকলে শুয়ে পড়ল৷ অনেক রাতে চ্যাঁচামেচিতে সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল৷ ‘কেয়া হুয়া?’ শুনলেন তিনটি খচচর বাঘে নিয়ে গেছে, আর বাঘও একটা নয়৷ ধুনি জ্বালানো হয়েছিল বটে কিন্তু পাহারা রাখা হয়নি৷ ধুনি নিভে গিয়েছিল৷

খচচরওয়ালা বেচারিরা তো একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল৷ সাহেবেরও বড্ড রাগ হল, ভোরে উঠেই খুঁজতে বেরোলেন৷ খাদের ভিতর সন্ধান মিলল৷ একটার অর্ধেক খেয়েছে, অন্য দুটো আস্তই রয়েছে৷ সাহেব হুকুম দিলেন, ‘গাছে মাচা বাঁধো, আমি বাঘ মারব৷ এখন কাজে যাচ্ছি, তিনটের সময় ফিরে চারটের সময় মাচায় বসব৷’

চিনা খচচরওয়ালা তো মহা খুশি৷ সকলে মিলে মাচা বেঁধে সব ঠিকঠাক করে রাখল৷ সাহেব কাজ থেকে ফিরে, চা খেয়েই, বন্দুক টোটা ইত্যাদি নিয়ে বাঘ মারতে চললেন, চারটেও বাজেনি তখনও৷ গিয়েই তো চক্ষুস্থির! সোজা তালগাছের মতো একটা গাছ, তার কুড়ি-পঁচিশ ফুট উপরে একটা ডাল বেরিয়েছে, সেইখানে মাচা৷

‘উঠব কী করে?’

খালাসিরা বলল, ‘হুজুর, ওই মোটা লতার মই তৈরি করেছি, তাই বেয়ে উঠতে হবে৷ আমরাও তাই করেছিলাম৷’

সাহেবের পায়ে জুতো, কাজেই অতি সন্তর্পণে উঠতে হবে৷ বন্দুকটা একটা খালাসির হাতে দিয়ে, তাকে তাঁর পিছনে-পিছনে উঠতে বলে, সাহেব তো গাছে চড়তে আরম্ভ করলেন৷ কতকটা চড়েছেন, আর অমনি একটু দূরেই ‘হুঁ-উ-ম-ম’— বাঘ ডেকে উঠল৷ বোধহয় পেট ভরে খেয়ে একটু আয়েস করছিল আর এরা গিয়ে বেচারার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে দিয়েছেন, কিংবা হয়তো কিঞ্চিৎ জলযোগের জন্য আসছিল, এদের দেখে বিরক্তি প্রকাশ করল৷ যাই হোক, সেই ‘হুঁ-উ-ম-ম’ শুনেই তো খালাসির হাত থেকে বন্দুক নীচে পড়ে গেল আর সেও লাফিয়ে পড়ে দে দৌড়! সাহেবও লাফিয়ে নেমে, বন্দুক ঘাড়ে করে একেবারে তাঁবুতে৷ বাঘ মারা আর হল না৷

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *