দেওয়ালের লিখন

দেওয়ালের লিখন

ফেসবুক কেমন? ফেসবুকে প্রাপ্ত বাস্তবতা? এই যে আন্তর্জাল নির্ভর নতুন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আমাদের জীবনে কীভাবে প্রবেশ করেছে তা আসলে কী? ফেসবু্কে সময় কাটাই আমি, কিসে কেটে যায় সেই সময়? ফেসবুকের জনসমাজকে দেখি আমি, সে কেমন জনসমাজ? স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট। এই সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাস করি আমি। কেমন সে বিশ্বাস? এ যেন ২৪০০ বছর আগে জন্মান গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর কথিত সেই অন্ধকার গুহার প্রতীক হয়ে উঠেছে দিনদিন। সমস্তটা নয় কিছুটা। শাদা আর কালোতেই তো সব কিছুর অস্তিত্ব।

এথেন্সের এই মহৎ দার্শনিক ছিলেন আর এক জ্ঞানী, দার্শনিক সক্রেটিসের শিষ্য। সক্রেটিস প্রশ্ন করতেন। প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতেন তর্ক বিতর্কে। লেখার চেয়ে তর্কে বিশ্বাস ছিল তাঁর বেশি। যা কিছু সত্য, তা তর্কে বিতর্কে অর্জন করতেন সক্রেটিস। সক্রেটিস লেখায় বিশ্বাস করতেন না। প্লেটো লিখেছিলেন সক্রেটিসের দর্শন ৩৬ খণ্ডে। কিন্তু প্লেটোর গুহার রূপক কাহিনি প্লেটোরই। প্লেটোর মনীষা সঞ্জাত। ফেসবুক কি ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে প্লেটো বর্ণিত সেই অন্ধকার গুহা? সেই গুহার অন্ধকারে বন্দীরা আজীবন রয়েছে সমুখের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে। তাদের পিছনে জনসমাজ। জনসমাজের পিছনে আগুন। আগুনের জন্য জনসমাজের ছায়া এসে পড়েছে গুহার দেওয়ালে। ছায়াকেই সত্য মনে করত শৃঙ্খলিত বন্দীরা। প্লেটো বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীকে আমরা যেমন মনে করি, সেটি আসলে সে রকম নয়। আপাত দৃষ্টিতে আমাদের সামনে আমরা যা দেখি তা আসলে মূল বাস্তবতা থেকে অন্তরে অন্তরে ভিন্ন। আমরা বেশীর ভাগ মানুষই এই চেহারাকেই বাস্তবতা হিসাবে মনে করি। আমরা মনে করি আমরা সব বুঝতে পারছি কিন্তু আমরা আসলে পারছি না। উল্টে মনে করছি এইটি সত্য। আসলে তা সত্য নয়। বন্দীদের সমুখের দেওয়ালে ছায়া পড়ত পিছনে সঞ্চরণশীল জনসমাজের। প্লেটো বর্ণিত সেই কাল্পনিক গুহায় যে মানুষেরা গুহার দেয়ালের দিকে মুখ করে শৃঙ্খলিত হয়ে আছে, তারা শুধু দেখতে পারছে কম্পমান ছায়াগুলো। ছায়াদের চলমানতার শব্দ। ছায়াদের পরস্পরের কথা। কম্পমান ছায়াদের অস্তিত্বে তারা বিশ্বাস করছে। সত্য ভাবছে ছায়াদের। তারা ভাবতেই পারে না ছায়ার অবাস্তবতা। ছায়াই বাস্তব, মূল বাস্তবতাকে তারা কল্পনাও করতে পারে না। এই মানুষগুলো তাদের সারাটা জীবন অতিবাহিত করে দেয়ালের উপর প্রক্ষেপিত ছায়াগুলোকে বাস্তব পৃথিবী হিসাবে ভেবে। তারপর তাদের মধ্যে কোনো একজন তার শৃঙ্খল ভেঙ্গে পেছনে যখন ঘুরে আগুনের দিকে তাকায়। তার দৃষ্টিতে সবকিছু প্রথমে ঝাপসা মনে হয়, তারপর সে দেখতে পারে আসলে সে কোথায় অবস্থান করছে। সে তখন হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে আসে এবং সূর্যের আলো দেখতে পায়। দেখতে পায় সত্যিকারের পৃথিবী। এই দেখার আনন্দময় অভিজ্ঞতা নিয়ে এরপর সে গুহায় আবার ফিরে আসে। গুহার বাইরের পৃথিবী সম্বন্ধে সে যা কিছু অন্যদের বলে তা কেউই বিশ্বাস করতে পারে না। যে মানুষটি তার শৃঙ্খলিত জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারে, সে-ই দার্শনিক। সাধারণ মানুষের খুব সামান্যই ধারণা আছে বাস্তবতা সম্বন্ধে, কারণ গভীরভাবে ভাবার বদলে তাদের সামনে যা আছে তা দেখেই তারা সন্তুষ্ট। ফেসবুক কি সেই অন্ধকার গুহা? ফেসবুক বাস্তবতার ছবি কিংবা ছবির বাস্তবতা, ফেসবুক আসলে কী? ফেসবুকে অভ্যাসের আয়ু দেখতে দেখতে বছর আট হয়ে গেল। আন্তর্জাল এবং ফেসবুক এই জীবনের নতুন বিস্ময়, তা সত্য। আবার বহু বিস্ময়ের সমাধিও যেন এখানে, তাও সত্য। সমাধি কেন, আন্তর্জাল যেন কল্পনার বিপ্রতীপ এক অবস্থান। কোন ছেলেবেলায় অন্নদাশংকর রায়ের পথে প্রবাসে থেকে একটি অংশ পেয়েছিলাম পাঠ্য তালিকায়। তার শিরোনাম ছিল বিলেত দেশটা মাটির। বালক নিজের কল্পনায় সেই দেশটিকে ভেবেছিল এক রকম। অন্নদাশংকর রায়ের লেখা পড়ে সে জেনেছিল যা তা যেমন জেনেছিল, তেমনি তার কল্পনার পৃথিবীও নতুন করে তৈরি করেছিল সে তার মনের ভিতর। আন্তর্জাল কল্পনাকে থামিয়ে দেয় আচমকা তা যেমন সত্য, আবার প্রশ্নের জন্মও দেয়, যদি আপনার প্রশ্ন করার অভ্যাস থাকে।

আন্তর্জাল আমার কাছে তথ্য এবং জ্ঞানের ভাণ্ডার উপুড় করে দিয়েছে সত্য, সহজ লভ্য হয়ে গেছে বহু পরিশ্রমে যে তথ্যকে সংগ্রহ করতে হতো একদিন। আবার এও সত্য সেই আহরিত তথ্য সঠিক কি না তা নিয়ে উদ্গত হয় সন্দেহ। কত তথ্য যে বিকৃত হয়ে আছে আন্তর্জালে। সেই নষ্ট তথ্য পরিকল্পিত। মনিষীদের ভাষ্যের কত নষ্ট চেহারা যে দেখতে পাই আচমকা। বিভ্রান্ত হয়ে ভেবেছি তিনি এই বলেছিলেন অমুক সালের অমুক ভাষণে? কোথায় আছে তা? নেই। ফেসবুক তৈরি করেছে তা। অসুন্দরকে সুন্দর করেছে, সুন্দরকে অসুন্দর, বিকৃত করেছে। ভুলকে সঠিক প্রতিপন্ন করতে এক সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সিনেমার ছবি নিবেদন করে বলেছে এই-ই বাস্তবতা। এই-ই সেই ছবি, দাঙ্গার সময় যা ঘটে থাকে। যা ঘটেনি তা ঘটেছে বলেছে। যা ঘটেছে তাকে মিথ্যে বলেছে। আমি তা সত্য ভেবেছি। কেন না আমার সমুখে গুহার দেওয়াল। আমি এর থেকে বেরতে চাই না। যা আমাকে নিরাপদ রাখে, আমার মুখ লুকিয়ে দিতে পারে, আমি তার দিকেই হেলে পড়ি। ব্যতিক্রম তো আছেই। কিন্তু ব্যতিক্রমও সত্যের মুখ দেখতে ভয় পায়। আমি যদি গুহার বাইরে এসে সূর্যালোকিত পৃথিবীর রূপ দেখে সেই রূপের স্মৃতি নিয়ে ফিরি, আমার বিবরণ আপনি বিশ্বাস করবেন না। আমিও শেষ অবধি দেওয়ালের ছায়ায় মনোনিবেশ করব। সমাজটা এমন। ফেসবুক সমাজেরই চেহারাই ধারণ করে। কিন্তু তা গুহাবাসী করেছে আমাদের। আমার উদ্বিগ্ন মুখের ছবি আপনার কাছ থেকে লুকিয়েছে।

ফেসবুক বহু মানুষের জীবনে এমন বাস্তবতা নিয়ে এসেছে, যে তার বাইরের পৃথিবীতে তার বড়ই অনীহা। আন্তর্জালের এই সামাজিক বাস্তবতাই তার বাস্তবতা। ব্যক্তিগত এক অনুভবের কথা বলি, যখন ফেসবুকে আসি, মনে হতো, ঐ যে আমার বন্ধুসকল, ওই যে রঙ্গিত, কিশোর কিংবা ঐশী, সঙ্গীতা, এদের বাস্তব অস্তিত্বই যেন নেই। নতুন আসা মাধ্যম। এখানে যারা কথা বলতে আসছে আমার সঙ্গে, তার বাস্তবের কেউ নয়। রঙ্গিতের সঙ্গে বইমেলায় আলাপ করাতে নিয়ে এল অলীক। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, সে না অন্য কেউ? রঙ্গিত নামের সেই যুবক কি বাস্তবে আছে? তুলিকা রায় এলেন বই কিনে, তাঁকে দেখে অবাক। আপনি? আমি চন্দ্রিমা দত্ত নামে আছি আপনার বন্ধু হয়ে, আসলে আমি তুলিকা রায়। ইস্কুলে বাংলা পড়াই। নিজের নামে নেই ফেসবুকে। কেন নেই? পথঘাটের মতো আন্তর্জালও কি অনিরাপদ? তিনি জবাব দেননি।

এ সব অনেক দিন আগের কথা। তখন ফেসবুক ছিল ভয়েরও। এক অধ্যাপক, নিজের প্রোফাইলে নোবেল বিজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভুত লেখকের ছবি লাগিয়ে বাংলা ভাষার লেখকদের ক্রমাগত অপমান করতেন। মনে হয় নিজেই গোটা চারেক আইডেন্টিটি নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন ফেসবুকে। একজনকে চার নামে বিদ্ধ করতেন। সেই ব্যক্তি কে তা পরে জেনেছি। তিনি লুক্কায়িত পরিচয় ত্যাগ করেছেন কি না জানি না, নিজ নামে প্রবেশ করেছেন এই জগতে। জগতটা কেমন? ফেসবুক এখন কিছু মানুষের কাছে সবচেয়ে বিশ্বাস্য জগত হয়ে উঠছে। কেমন বিশ্বাস্য? আমি যে অধ্যাপকের কথা বলেছিলাম, তিনি নিজেকে লুকিয়েছিলেন, প্রোফাইল ছবি এবং নামে। আমরা এখন নিজেরা স্বনামেই লুকোতে চাই না কি? আর আমরা শেষ অবধি সেই লুকোনো পরিচয়কেই বিশ্বাস করতে ভালবাসি। আপনি এক পেশাদার মানুষ। আপনি পেশার কারণেই কখনো উদ্বিগ্ন, কখনো প্রফুল্ল। আপনার যে সহাস্য মুখখানি আমি দেখছি বা আমার যে মুখখানি আপনি দেখছেন সব সময়, ফেসবুক খুললেই, তা থেকে আমার বাস্তবতা না দেখে আমার ছায়াই দেখছেন আপনি। ছায়া। হ্যাঁ, প্লেটোর কাল্পনিক সেই অন্ধকার গুহার দেওয়াল হলো ফেসবুকের টাইম লাইন যেখানে আপনার সমস্ত পরিচয় বিধৃত আছে। সেখানে আপনার পরিচয়ে আপনার মুখচ্ছবিতে কিংবা আপনার নিবেদন করা ছবিতে আপনার উদ্বেগ নেই। যা আছে আনন্দ। আমার সন্তান অসফল হলে তা আমি লিখি না। জনসমাজ জেনে যাবে। আমার সন্তানের সাফল্যকে বিস্তারিত করে আমিও বিস্তারিত হই। হতেই পারি, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে অপ্রাপ্তির ভার অনেক বেশি। সুখের চেয়ে দুঃখের ভার বেশি। সে এমন একটা জায়গা খোঁজে যেখানে সে নিজের মলিন মুখ দেখাবে না। আপনি আমার মতোই প্রফুল্লমুখে আছেন সেখানে। আমি আছি আপনার মতো হয়ে। শেষ অবধি আমার সঙ্গে আপনার কোনো তফাৎ নেই। গত শতকের ষাটের দশকের সুখ্যাত ব্রিটিশ রক-ব্যান্ড পিংক ফ্লয়েড গ্রুপের সেই গান, ইকোজ (প্রতিধ্বনি) এখন আন্তরজালের কল্যাণে শুনে বুঝি এই কথাই তো ছিল সেখানে, I am you, and what I see is me…। আমার মুখ আমি দেখি না, দেখি তোমার মুখ, আর আমি জানি আমি আমাকেই দেখি তোমার ভিতরে, তোমার মুখ আমারই মুখ। তোমার কোনো নিজস্ব মুখ নেই। আমারও নেই। আসলে আমরা ছায়া। আমাদের ছায়া গুহার দেওয়ালে দেখে আমরা মনে করি ছায়াই সত্য, তার বাইরে কিছু নেই।

নেইই তো। বাসে ট্রামে অ্যান্ড্রয়েড ফোন সার্ফিং চলছে সব সময়। বিরতিহীন যোগাযোগ চলছে। আত্মপ্রকাশ চলছে। পূর্ব গোলার্ধে যখন মানুষ জাগল, পশ্চিমে তখন মানুষ নিদ্রা গেল। পূর্ব গোলার্ধ জেগে উঠে দেখল পশ্চিম কী লিখে গেছে। কোন ছবি দিয়ে গেছে লেখায় রেখায়, গভীরে প্রবেশ করলে দেখতে পাচ্ছি আমিই রেখে গেছি সেই ছবি। রেখে নিদ্রা গেছি পশ্চিমে। জেগে উঠেছি পুবে। কিন্তু এর সমস্তটা সত্য নয় যেমন, অনেকটা সত্য। এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যা দেখা যায় এই চোখে, তার অনেকটাই ছলনাময়, আমরা যা দেখি তার অনেকটা অলীক, বাস্তবতা নয়। কিন্তু এই ছায়ার বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসি কী করে? প্রশ্ন করতে গিয়ে টের পাই, যাদের জিজ্ঞেস করছি তারা সকলেই তো ছায়াময়। কিন্তু তার ব্যতিক্রমও কি নেই? দাঙ্গার সময়ে যে সিনেমার ছবি বাস্তবতার ছবি বলে কেউ প্রচার করল, সেই মিথ্যায় দুই সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ আরো বাড়ল, রে রে করে তেড়ে গেল পরস্পরের দিকে, তার আসল সত্যও প্রকাশ হয়ে গেল দ্রুত। স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটে দ্রুত ছড়িয়ে যায় আপনার বিষাদ আপনার আনন্দ। বিষাদের কথা তেমন কেউ লেখে না। কিন্তু লেখেও তো। এই কদিন আগে একজন লিখলেন, এই জীবন সম্পর্কে সমস্ত বিস্ময়ই তাঁর শেষ হয়ে গেছে। জীবনকে এখন বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে ভারবাহীর মতো। এ জীবন তিনি রাখবেন না। তখন অন্ধকার গুহায় শৃঙ্খলিত মানুষ গুহার দেওয়াল থেকে চোখ সরিয়ে বেরিয়ে এল সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবীতে। জানিয়ে দিল পৃথিবীটা এখনো অনেক বিস্ময় ধারণ করে আছে তার জন্য। অনেক অপরূপ মুহূর্ত রয়েছে বাকি আমাদের এই জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য। তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে লাগল বন্ধুরা। সামাজিক সম্পর্কে জড়িত মানুষজন। ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এসে ফোন করতে লাগল। কেউ কেউ ছুটেও গেল তার কাছে। বিষাদ সিন্ধুতে ডুবেছিল যে তার মুখে হাসি ফুটল। যে বিষাদ সিন্ধুতে ডুবেছিল সে, সেই সিন্ধু থেকে উঠে এল মাটির পৃথিবীতে। রবীন্দ্রনাথ উচ্চারিত হলেন,

রূপ-নারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ ক’রে দিতে।

১৩-ই মে ১৯৪১, মৃত্যুর তিন মাস আগে কবি গভীর রাত্রে উচ্চারণ করলেন এই জীবন-সত্য। জীবন। জীবন। গুহার দেওয়াল থেকে চোখ সরিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এস জীবন। দেওয়ালের লিখন এই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *