তৃতীয় অধ্যায় – মানব দেবতার পতন

৩. মানব দেবতার পতন

সেনাবাহিনী জনগণের উপর গুলি চালাবে না। কিন্তু আপনি যদি তার উপর চাপের সৃষ্টি করেন, তাহলে সে আপনার এবং শাসকগোষ্ঠীর উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

– আবদুর রব

.

তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২ সাল। স্থান : ঢাকার পল্টন ময়দান। উদ্দেশ্য—শেখ মুজিবের শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ।

শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র আট মাস আগে। এরই মধ্যে জনপ্রিয়তার স্রোত তাঁর কাছ থেকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। আন্দোলনের মহান নেতা, সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কণ্ঠস্বর, প্রিয় বঙ্গবন্ধু ছিলেন সকল প্রশংসা দাবীদার। কিন্তু ততক্ষণে তিনি ক্রোধান্বিত জনতার সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে গেছেন।

লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ। আর একটি শক্তিশালী গণজাগরণের সম্ভাবনা। স্বাধীনতার পূর্বে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা আর বাঙ্গালী জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তিক্ত প্রতিবাদের ঝড় উঠলো। এ প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রনেতা, প্রাক্তন মুক্তিসেনা এবং শেখ মুজিবের এককালের সবচাইতে বিশ্বস্ত অনুগামীদের একজন আ.স.ম. আবদুর রব। জনতার উদ্দেশ্যে রব বলছেন, ‘দেশের স্বাধীনতার পর একটা লোককেও না খেয়ে মরতে দেয়া হবে না বলে শেখ মুজিব আশা দিয়েছিলেন। আজ খেতে না পেয়ে প্রচুর লোক মৃত্যুবরণ করছে?’ রোষান্বিত জনতার আবেগে অনুপ্রাণিত হয়ে রব তাদের অভিযাগের প্রতিধ্বনি তুলছিলো। ঐ অভিযোগমালার প্রধান প্রধান বিষয়বস্তু ছিল-খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে, চতুর্দিকে কেবল ঘাটতি, বাজার সুবিধাভোগীদের হাতে, স্বজনপ্রীতি, সরকারী কর্মচারীদের দুর্নীতি, বেকারত্বের পাহাড়, গুম, ধর-পাকড়, পুলিশের অত্যাচার, দায়িত্বহীন সরকার, সংবাদপত্রের মুখবন্ধ ইত্যাদি। রব ঘোষণা করলো, ‘আওয়ামী লীগাররা পাকিস্তানীদের চাইতে অনেক বেশী জঘন্য আর দুর্নীতিবাজ।’ মুজিবের উদ্দেশ্যে রব বলল, ‘আপনি আমাদের বেপরোয়া ধর-পাকড় করছেন আর উৎপীড়ন-এর সকল যন্ত্রপাতি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। আপনি আপনার বক্তৃতায় অস্ত্রের কথা বলছেন। আপনি কি কোনদিন কোন বন্দুক চালিয়ে দেখেছেন? আমরা জানি সত্যিকার অস্ত্র কিভাবে চালাতে হয়। তারপর দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীপরিষদ আর সরকারী কর্মচারীদের বাতিল করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। রব মুজিবের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে, ‘সেনাবাহিনী জনগণের উপর গুলি চালাবে না। কিন্তু আপনি যদি তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন, তাহলে তারা আপনার এবং আপনার শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’

বাস্তবতার চাকা যেন উল্টো দিকে ঘুরে গেলো। যে মুজিব আঠারো মাস আগে পাকিস্তান সরকারের শোষণ আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বাণ ছোড়েন, সে অভিযোগের বাণ আজ মুজিবের বিরুদ্ধে বুমেরং-এর মত ফিরে এলো। এবার জনতার হয়ে সেই সুর তুললো আবদুর রব।

শেখ মুজিবের জন্যে এ অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক। লন্ডনে ‘গল ব্লাডারে অপারেশন’- এর পর মুজিব আবার দেশে ফিরে এসেছেন। শারীরিক অবসাদ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। অথচ তার উপর পল্টনে প্রকাশ্যে ঐ মানবিক অশান্তির আয়োজন। সবমিলে তাঁর সত্তায় এক বিরাট ঝাঁকুনির সৃষ্টি করলো। কিন্তু মুজিবের মাঝে অনুশোচনার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। নিজের উপর থেকে সকল দোষ তাঁর সহচরদের উপর ঠেলে দিলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আমি জনগণের সঙ্গে আছি।’ প্রথমবারের মত পার্টির লোকদের উপর তিনি চড়াও হলেন। চোরাইকারবার, স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতির অভিযোগে ডিসমিস করলেন সংসদের ১৯ জন সদস্যকে।

শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের পরিশোধন প্রক্রিয়া জনগণের মনে আশার সঞ্চার করলো। মুজিব ঘোষণা দিলেন, ‘আমি কাউকে ছাড়বো না। যে কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ মুজিবের মাঝে এ পুরনো গতিশীলতা দেখে সকলেই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করলো যে, এ সুযোগে মুজিব জনগণের বিশ্বাস আবারও ফিরে পাবে। একজন বাঙ্গালী সাংবাদিক আমাকে বললো, ‘নেতা সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলবেন। এবার তাহলে তামাশাটা দেখো।’ এটা হবে তাঁর আর একটা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। পরবর্তী ঘটনাবলীই মুজিব পতনের নব অধ্যায়ের সূচনা করলো। শুরু হলো রাজনৈতিক চমৎকারিত্ব প্রদর্শনের পালা। তিনি একের পর এক জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করতে শুরু করলেন। সাংবিধানিক নিয়ম-কানুন, আইনের শাসন, বাক-স্বাধীনতা, মতামতের অধিকার, সুযোগের সমতা, ইত্যাদি সবই বিলুপ্ত হয়ে গেলো। কায়েম হলো দুঃশাসনের চরম পরাকাষ্ঠা।

স্বাধীনতার পর জাতিসংঘের ঢাকাস্থ রিলিফ অপারেশনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আনরড’-এর পরিচালিত দেশব্যাপী সাহায্য কর্মসূচী দেশটিকে বাঁচিয়ে রাখতে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেছিল। ‘আনরডের’ খাদ্য সরবরাহ আর বিতরণ ব্যবস্থায় সুসংগঠিত পরিকল্পনার কারণে বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরতে পারেনি।

১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকাল। শেখ মুজিবের সবকিছুই যেন উলটপালট হয়ে যাচ্ছিল। চাল-ডালের দাম হঠাৎ করে দ্বিগুণ হয়ে গেলো। শেখ মুজিব যুদ্ধের ফলশ্রুতি বলে পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দিতে চাইলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে তেল, নুন, সাবান থেকে শুরু করে সকল নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বুভুক্ষ মানুষের নাগালের বাইরের কথাতো আর এত সহজে চাপিয়ে রাখা যায় না। দেশটা দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে নিপতিত হলো। আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি জনমনে নিদারুণ বিভীষিকার ছায়াপাত করলো।

সশস্ত্র সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী দলের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড,হত্যা, লুটতরাজ ইত্যাদিতে চতুর্দিক থমথমে হয়ে উঠলো। মন্ত্রী পরিষদ আর সরকারী আমলাদের পরামর্শক্রমে প্রধানমন্ত্রী দশ দিনের মধ্যে বেআইনী অস্ত্রশস্ত্র সারেন্ডার করার নির্দেশ দিলেন। মানব দেবতার বৃষ্টি হবার নির্দেশ দানের মত এবারের বেআইনী অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশও দারুণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। সময়সীমা বাড়ানো হলো। টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ ও মুজিবের আনুগত্য স্বীকার করলো। শেষ পর্যন্ত মাত্র তিরিশ হাজার বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র জমা পড়লো। যদিও ধারণা করা হয়েছিল লক্ষাধিক অস্ত্রের। শেখ মুজিব এবং তার পরবর্তী খন্দকার মোশতাক আর জেনারেল জিয়াউর রহমান কেউই বাকী অস্ত্রের সন্ধান করতে পারেননি।

১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারী কোলাবরেটর আইন পাশ করা হলো। উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ চলাকালীন যারা তাদের সক্রিয় সহযোগিতার নামে দালালি করেছে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা। এ আইনও দেশে গোলযোগ আর গণমানুষের হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হলো। বহু সক্রিয় হানাদার বাহিনীর দালালও গুরুত্বপূর্ণ সরকারী দায়িত্ব পেল। অন্যদিকে বহু নির্দোষ ব্যক্তি ও ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তিগত রোষানলে পড়ে সর্বস্ব হারাতে হয়েছিল। এমনকি কোর্টে দালালির অভিযোগে রাজাকার, আল-বদর ইত্যাদিদের বিচার ও দণ্ডাদেশ প্রদান করা হতো, সে কোর্টের হাকিম নিয়োজিত হয়েছিলেন রাজাকার সর্দার।

সম্পূর্ণ বিষয়টি ন্যায় বিচারের অভিনয় বিশেষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকার শেষ পর্যন্ত এ অভিযানের সমাপ্তি টানলেন। কিন্তু ততক্ষণে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছে গেছে।

এবার এলো মজুতদার আর চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে অভিযান। ব্যবস্থা নেয়া হলো। বিভিন্ন ধরনের লোক-দেখানো গোছের। কাজ হলো না কিছুই। রুই-কাতলারা দিব্য রয়ে গেলেন। কিছু চুনোপুটি কেবল আটকা পড়লো অভিযানের জালে। অবশ্য ঐ রুই- কাতলারাও শাসকচক্র, আওয়ামী লীগেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো। দুর্নীতি কেবল বাংলাদেশেই বিরাজমান—কথাটি ঠিক নয় তবে যে হারে এবং গতিতে দেশের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছিল, তা সত্যিই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল। দেশটির সবকিছুই নতুনভাবে শুরু হচ্ছিল বলে দুর্নীতির সুযোগও ছিল অপরিসীম।

ঐ সকল দুর্নীতির উদাহরণ দিতে গেলে প্রচুর বইয়ের সৃষ্টি হয়ে যাবে। ছোটখাট দোকানী থেকে ‘বিজনেস ম্যাগনেট’ আর ছোট কর্মচারী থেকে সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি পর্যন্ত কেউ বাদ গেলো না। যে যেভাবে পারলো, লুটেপুটে রাতারাতি মহাসম্পদশালী হবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে গেলো। দুর্নীতি কেবল আওয়ামী লীগার, সরকারী আমলা আর কূটনীতিকদের মধ্যেই সীমিত রইল না, তারা সে জন্যে যার যার সুবিধেমতো নেটওয়ার্কও সৃষ্টি করে নিলো। কেউ তার আত্মীয়-স্বজনের নামে কার্যসিদ্ধি করছিলেন। কেউ বা আবার পরিষ্কার নিজের নামেই।

দেশটাকে শেখ মুজিব নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে মনে করতেন। সুতরাং টাকা বানানো তাঁর দরকার ছিল না। তার লোভ ছিল ক্ষমতার প্রতি। তাঁর ছেলে, শেখ কামাল আর তাঁর ছোট ভাই টাকার ব্যাপারে পিছিয়ে ছিলো না। বিনিয়োগবিহীন ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বে শেখ কামাল বেশ এগিয়ে ছিলো। মুজিবের ছোট ভাই বহু সংখ্যক বার্জ ও অন্যান্য নৌযান-এর মাধ্যমে প্রভৃত অর্থের অধিকারী হয়ে গেলো।

এদিকে একদল জুটে গেলো যারা কেবল পরিচয় বিক্রি করে ভাল রোজগারে বন্দোবস্ত করে নিয়েছিলো। তাদের কাজ ছিলো কোন একটা টুকিটাকি কাজ-কর্ম করিয়ে দেয়া কিংবা খদ্দেরকে শাসকচক্রের সঙ্গে বা চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। আমার এক বাঙ্গালী বন্ধু এখনও আমাকে বলে, ‘তুমি যদি উন্নতির সিঁড়ি পেতে চাও, তাহলে তোমাকে দান-খয়রাত করতে হবে।’

সরকারী দুর্নীতির মধ্যে দেশের খাদ্যদ্রব্য আর পাট ভারতে পাচারকরণ ভয়ানক আকার ধারণ করেছিলো। এ ব্যবস্থাটি দেশ স্বাধীন হবার পূর্ব থেকেই চলে আসছিলো। মুজিব হত্যার পরে সরকার নিজেই বলেছিলো যে, স্বাধীনতার গত সাড়ে তিন বছরে দেশের সীমান্ত দিয়ে কমপক্ষে ছয় হাজার কোটি টাকা মূল্যের দ্রব্যসামগ্রী ভারতে পাচার হয়ে গেছে। দেশের পাচারকৃত ঐ দ্রব্যসমাগ্রীর মধ্যে পাট, খাদ্যশস্য এবং বিদেশ থেকে আমদানী করা মালামাল রয়েছে।

চোরাচালানকৃত সরকারী হিসেবের ছয় হাজার কোটি টাকার সঙ্গে অবশ্যই বৈদেশিক মুদ্রায় কালো বাজারের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাওয়া বিরাট অংকের টাকা এবং চাল, চিনি, সিমেন্ট ও অন্যান্য দ্রব্যের বড় বড় কেনাকাটার ‘কমিশনের’ টাকাও যোগ দিতে হবে। এভাবে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে দুর্নীতির পমিন্ডলজ্ঞাতসারে সকল দেশের সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

একটি শিশু রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে জাতীয় সম্পদের বিনাশ সাধন দেশটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশেরও হয়েছিল ঠিক সেই মরণাপন্ন অবস্থা। দুইশত কোটি ডলার পরিমাণ আন্তর্জাতিক সাহায্য দেশে আসার পরও ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে দেশটি দেউলিয়া হয়ে গেলো। পরিতাপের বিষয় এই যে মুজিব হত্যার পরও কেউ এই রক্তক্ষরণরূপী সম্পদের বিনাশ সাধন রোধ করতে পারলো না।

শেখ মুজিবের নির্বোধ, ব্যক্তিত্বহীন চাটুকারের অভাব ছিল না। মুজিবের পরামর্শদাতা ও মন্ত্রীদের মধ্যেই জঘন্যতম চাটুকাররাও ছিলো। পরামর্শদাতাদের মধ্যে তোফায়েল আর শেখ ফজলুল হক মনি ছিল অগ্রগামী। মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতনামা ছিলো তাহেরউদ্দীন ঠাকুর। ঠাকুর ইনফরমেশন’ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো।

ঠাকুর কর্তৃক ঢাকা বিমান বন্দরে শেখ মুজিবের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ গ্রহণের দৃশ্য বাংলাদেশ টিভি দর্শকদের উপহার দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেদিন অবাক বিস্ময়ে জাতি মন্ত্রীদের ব্যক্তিত্ব আর গদি-লিপ্সার কান্ডকারখানা অবলোকন করছিলো। অবশ্য মুজিব তা খুব পছন্দ করতেন, গর্বিতও হতেন বৈকি!

তাজউদ্দিন আহমেদ আর জেনারেল ওসমানী এ সকল অকর্মণ্যতা আর অব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল ছিলো না। তাজউদ্দিন তো এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করেই ফেললেন। মন্ত্রীত্ব থেকে সরে পড়তে হলো তাকে। জেনারেল ওসমানীও সরে দাঁড়ালেন সরকারের মন্ত্রীত্ব থেকে। কিন্তু অন্যান্যরা শেখ মুজিবকে ছেড়ে গেলো না। অবশ্য পদোন্নতি আর গদির নেশা এর পেছনে কাজ করেছিলো।

মুজিব তাঁর পার্টি, আওয়ামী লীগের দ্বারাই কোণঠাসা হতে বাধ্য হলেন। ১৯৭২ সালে জানুয়ারীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তিনি সব জায়গায় তার দলীয় লোকদেরকে বসিয়ে দিলেন। উদ্দেশ্য ছিল-—তাদের মধ্যে দু’দিকের যোগাযোগই রক্ষা করা। কিন্তু তাদের অতিমাত্রায় মোসাহেবীতে যোগাযোগের একটি পন্থা অচল হয়ে গেলো। মুজিব চতুর্দিক থেকে কেবলই জনগণের দুর্দশার কথাই শুনছিলেন। জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর চাটুকারেরা বেমালুম অস্বীকার করে বলতো, ‘এ সবই দুষ্ট লোক আর রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপের অংশবিশেষ।’ এভাবে, পুরাকালের গ্রীক দেবতাদের মতো, ওরা তাকে পাগল বানিয়ে ধ্বংস করে দিলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *