চতুর্থ অধ্যায় – মুজিবের মিলিটারী ভীতি

৪. মুজিবের মিলিটারী ভীতি

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো আমরা একটা দানবের সৃষ্টি করতে চাই না।

—শেখ মুজিবুর রহমান

.

১৯৭৩ সাল। মুজিব শাসনের দ্বিতীয় বছর। শেখ মুজিবের জন্যে বেশ কিছু অশুভ লক্ষণ নিয়ে বছরটির যাত্রা শুরু। তাঁর শাসনের প্রথম বছরটি একটি মাত্র সোনালী সাফল্যের দাবীদার। আর তা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম ‘সংবিধান’। বাংলাদেশের জনগণের আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে, শেখ মুজিবের চিন্তার ফসল এ মহত্তম জাতীয় দলিল জাতীয় সংসদে পাস হয়ে গেলো। সুনিপুণ হস্তলিখিত ‘সংবিধানে’ শেখ মুজিব সই করলেন ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। অনেক অশুভের মাঝে এ ছিল এক শুভ অবদান- গর্ব করার মতো এক জাতীয় দলিল।

নিজ হাতে সম্পন্ন এ মহৎ কর্মের জন্যে শেখ মুজিব অবশ্যই গর্বিত। পরবর্তী সাংবিধানিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ তারিখে নির্বাচনের দিন ধার্য করলেন। এটা বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্যেই সুসময় হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন নববর্ষের শুভ দিনে ঢাকার রাজপথে এক অবিশ্বাস্য হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত হলো। খুলনা আর বন্দরনগরী চট্টলাতেও উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র-জনতা একই ঘটনা ঘটালো। ছাত্র-জনতা মিলে ঐ তিনটি প্রধান শহরে মুজিব শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়লো।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রক্তক্ষয়ী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। ঢাকার ছাত্ররা সেদিন হ্যানয় শহরে যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবাজির বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের ইনফরমেশন সেন্টার ও লাইব্রেরীর বাইরে এক বিরাট জনতার সমাবেশ। জনতা ক্রোধান্বিত হলেও শান্তিভঙ্গের কোন লক্ষণ পরিদৃষ্ট হয়নি। সকলেই ভাবছিলো, ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদ জ্ঞাপন শেষে সরে পড়বে। হঠাৎ করে কারও উস্কানিতে ছাত্ররা ঐ বিল্ডিংটি আক্রমণ করে আর মুহূর্তের মধ্যে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দু’জন ছাত্র আর ছয়জন হয় আহত।

ঐ ঘটনাটি শেখ মুজিবের জন্যে বিপর্যয়ের বার্তা বয়ে আনে। ঐ তো সেদিন শেখ মুজিব নিজেও ছাত্রনেতা হিসেবে জনগণের মনের কথা নিজ কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত করে পাকিস্তানী মিলিটারী সরকারের তত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। পরিশেষে, ঐ সামরিক সরকারের হিংস্র থাবার নাগপাশ থেকে পরিপূর্ণ মুক্তি এলো তাঁরই পিঠে ভর দিয়ে। অথচ কি আশ্চর্য, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক বছর যেতে না যেতেই ঢাকায় শেখ মুজিবের পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিতে হলো ছাত্রদের।

ঘটনাটি তাৎপর্য আর গুরুত্বে ভরে উঠে। স্বাধীনতার পর এ ধরনের রক্তক্ষয়ী ঘটনা আর এদেশে ঘটেনি। অবশ্য, বামপন্থী ছাত্রনেতা আবদুর রব মাত্র চার মাস আগে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছিলো। মুজিব সে অভিযোগ রাজনৈতিক চমক বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বিদ্রোহ, রক্তপাত, রাজপথে গুলি-এসব ঘটনা তিনি কিভাবে উড়িয়ে দেবেন? বামপন্থী ছাত্রদল দেশব্যাপী হরতালের আহবান জানালো।

শেখ মুজিব হরতালের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। একদিকে, বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ঐ রক্তপাতজনিত সমালোচনার পথ বন্ধ করলেন। অন্যদিকে, পরিষ্কার ভাষায় ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের চর’ নামে আখ্যায়িত করে তাঁর দলীয় জনগণকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দিলেন। ফল হলো বেশ চমৎকার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাঁশের খুঁটি আর কাস্তে হাতে লক্ষাধিক গ্রামবাসী আওয়ামী লীগারদের সাথে জড়ো হয়ে প্রথমে ছাত্রাবাস থেকে এবং পরে রাজপথ থেকে বামপন্থীদেরকে ছিন্নভিন্ন করে দিলো হরতালের আয়োজন এমনভাবে বানচাল করে দেয়া হলো যে, শেষ নাগাদ বর্ষীয়ান জননেতা, মওলানা ভাসানী তাঁর আহুত প্রতিবাদ সভায় ভঙ্গ দিয়ে নিজ গ্রামের বাড়ীতে নিরাপদে পালিয়ে বাঁচেন।

দিনটির ঘটনাবলীর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দিক পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে। প্রথমটি — মুজিবের প্রতিপক্ষের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, সম্মুখ সমরে তাকে পরাভূত করা কখনও সম্ভব নয়। এ ধরনের ধারণা অবশ্য শেখ মুজিবের জন্যে মারাত্মক ফলশ্রুতির ইঙ্গিতবহ ছিল। শেষ মুজিবকে গদিচ্যুত না করে হত্যা করা হলো কেন? প্রশ্ন করা হলে মেজর রশিদ বললো, ‘অন্য কোন পন্থা খোলা ছিল না। তিনি ছিলেন অঘটন-ঘটন পটীয়সী’। সুযোগ দেয়া হলেই বিপদের ঘনঘটা আমাদের উপরই নিপতিত হতো।’

দ্বিতীয়টি ছিল শেখ মুজিবের জন্যে অত্যন্ত সুখকর। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শক্তি পরীক্ষায় সফলকাম হয়ে তিন মাস পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিরাট বিজয় লাভ করেন। তার আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের ৩১৫টি আসনের মধ্যে ৩০৭টি আসন লাভ করে। অবশ্য নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারী দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও হয়েছে অনেক। সুবিধেবাদী, চতুর রাজনীতিবিদ, মওলানা ভাসানী প্রথমে শেখ মুজিবের বিরোধিতা করলেও নির্বাচনের পর চুপিসারে সরকারের পিছু নেন এবং নির্বাচনের ফলাফলের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশে অবিমিশ্র সমাজতন্ত্র কায়েমের ইঙ্গিতবহ।’

সম্ভবতঃ শেখ মুজিব নির্বাচনের ফলাফলকে তাঁর নিজের বিজয় এবং তাঁর নীতির প্রতি জনগণের সমর্থন বলে মনে করলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে মুজিব বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে যে, আমি আমার জনগণকে যতটা ভালবাসি, তারাও আমাকে ততটাই ভালবাসে।’ সুতরাং দেশ পুনর্গঠনের প্রশ্নে আর আওয়ামী লীগারদের মনে কাঁটা হয়ে রইলো না। বরং শেখ মুজিব আর তাঁর আওয়ামী লীগারগণ নির্বাচনে বিজয়ের মাঝে যেন তারা তাদের পূর্বকর্মে ফিরে যাবার ‘লাইসেন্স’ পেলেন। শুরু হলো পূর্ব নৃত্যের তালে তালে ভুখা-নাংগা মানুষের শ্রুতিকটু নূপুরের ঝংকার।

নির্বাচনের অনেকগুলো দিকের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সেনাবাহিনীর ভোটদানের নমুনা জরিপ। অবশ্য তা প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু শেখ মুজিব আর তাঁর উপদেষ্টাগণ সযত্নে তা লক্ষ্য করেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রত করে তোলে। এ কারণে যে, মিলিটারী ক্যান্টনমেন্টগুলোতে রক্ষিত হিসেবে দেখা যায়, মুজিবের আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া আর ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর আমাকে বলেছিলেন যে, সৈন্যেরা নির্বাচনে ৮০% এরও কিছু বেশী ভোট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রদান করেছিলো।

ঐ সকল সৈনিকদের অধিকাংশই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সারির বীর সেনা। সে সময় মুজিব ছিলেন দেশ ও জাতির জনক—আর তাদের অনুপ্রেরণার উৎস। মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে তারা আজ মুজিবের বিরুদ্ধে বৃহত্তম একক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। পরে আমি এ বিদ্রোহের কারণগুলো মেজর ফারুক, মেজর রশিদ, ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর, জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং আরও কিছু অফিসার ও জোয়ান-এর কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম। শেখ মুজিবের হত্যার পর ১১ই ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল জিয়া আমাকে বলেছিলেন, ‘আমরা সত্যিকার অর্থে কোন সেনাবাহিনী ছিলাম না।’ কাগজে-পত্রে আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিলো না। সেনাবাহিনীর জন্যে আইনগত কোন ভিত্তি ছিলো না। ‘টেব্‌ল অব অর্গানাইজেশন এন্ড এস্টাব্লিশমেন্ট’ বলে কোন জিনিস ছিল না। সবই ছিলো ‘এডহক’। সেনাবাহিনী বেতন পেত। কারণ, শেখ মুজিব তা দিতে বলেছিলেন। মুজিবের মুখের কথার উপর আমাদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল ছিলো। আমাদের ছেলেরা নরকের যাতনায় ভুগছিলো, কিন্তু মুখ ফুটে কোন অভিযোগ করেনি। কারণ, এরা দেশের সেবায় নিয়োজিত ছিল। এবং এরা প্রয়োজনে যে কোন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত ছিলো।

একই দিনে ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর, জিয়ার চীফ অব জেনারেল স্টাফ আমাকে বলেছিল, ‘এ দেশের সেনাবাহিনী একটা স্বেচ্ছাসেবক দলের মতো। আমাদের অফিসার এবং জোয়ানেরা সৈনিক হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চায় বলে তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই কাজ করতে হচ্ছে। বিনিময়ে তারা কি পেয়েছে? প্রত্যেকেই এরা হতভাগ্য, এদের খাবার নেই, তাদের কোন প্রশাসন নেই, অস্ত্রশস্ত্র নেই। তুমি অবাক হবে, তাদের জার্সী নেই, গায়ের কোট নেই, পায়ে দেয়ার বুট পর্যন্ত নেই। শীতের রাতে তাদেরকে কম্বল গায়ে দিয়ে পাহারা দিতে হয়। আমাদের অনেক সিপাহী এখনো লুঙ্গি পরে কাজ করছে। তাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই। তদুপরি, তাদের উপর হয়রানি। মঞ্জুর দুঃখ করে বললো, ‘পুলিশ আমাদের লোকদেরকে পিটাতো। পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত সরকারী আমলারা সেনাবাহিনীকে ঘৃণার চোখে দেখতো। একবার আমাদের কিছু ছেলেকে মেরে ফেলা হলো। আমরা মুজিবের কাছে গেলাম। মুজিব কথা দিলেন, তিনি ব্যাপারটি দেখবেন! পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, আমাদের ছেলেরা ‘কোলাবরেটর’ ছিল বলে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে।

মঞ্জুরের মতে, সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে মুজিব সকল পন্থাই ব্যবহার করেছিলেন। তিনি কাউকে তার জীবনের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন সন্দেহ হলেই সেখানে ভাঙ্গন ধরিয়ে দিতেন। একমাত্র মুজিবই সেনাবাহিনীতে ভাঙ্গন ধরিয়ে একে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিলেন।

জেনারেল জিয়া, মঞ্জুর এবং আরো অনেক অফিসারের সঙ্গে আলাপ করে আমার ধারণা জন্মালো যে, শেখ মুজিব তার দ্বিতীয় ছেলে, জামালকে সেনাবাহিনীর উচ্চপদের জন্যে তৈরী করছিলেন। মঞ্জুর জানালেন যে, মুজিব জামালকে আর্মিতে ঢুকিয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্যে ইয়োগোশ্লাভ মিলিটারী একাডেমীতে পাঠিয়ে দেন। জামাল ওখানকার পড়াশুনায় সম্ভবতঃ কুলিয়ে উঠতে না পেরে মুজিবকে দারুণভাবে হতাশ করে ঢাকায় ফিরে আসে। এরপর, মুজিব তাকে বিলেতের স্যান্ডহার্স্ট মিলিটারী একাডেমীতে পাঠাতে চাইলেন। তিনি তখন সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল শফিউল্লাহকে টেলিফোনে বললেন, তিনি যেন জামালকে স্যান্ডহার্স্ট-এ ক্যাডেট হিসেবে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এতে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রথম কারণ, স্যান্ডহার্স্টের ক্যাডেটদের বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিয়ম-কানুন পালন সাপেক্ষে বাছাই করা হয়। আর সেখানে জামালের চাইতে অনেক মেধাবী ও অধিকতর যোগ্য প্রার্থীও ছিল। ফলে এটা ধারণা করা হয়েছিল যে, বৃটেনের প্রিমিয়ার মিলিটারী একাডেমী জামালকে যোগ্য বলে বিবেচনা করবে না। কিন্তু একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ বিবেচনা করে তারা ৬,০০০ পাউন্ড প্রশিক্ষণ ফীসহ বিশেষ ব্যবস্থায় জামালকে গ্রহণ করতে রাজী হলো। মঞ্জুর মতে ঐ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অজ্ঞাতে বিশেষ আর্মি চ্যানেলে গোপনীয়ভাবে স্যান্ডহার্স্টে পাঠানো হয়েছিলো।

জামাল ছিল একজন সম্ভ্রমশীল ভদ্র ও সুশীল তরুণ। তার ব্যক্তিত্ব ছিল পছন্দ করার মতো। মাত্র কিছুদিন হলো সে স্যান্ডহার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরেছে। এরই মধ্যে বিয়েটাও সম্পন্ন হয়ে গেছে। বিয়ের মাত্র এক মাসের মধ্যে শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে জামালও মেজরদের বন্দুকের শিকার হলো।

মিলিটারীর সব কিছুতেই শেখ মুজিবের দারুণ ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল। তিনি দুই মিলিটারী একনায়ক কর্তৃক চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। তারা হচ্ছেন–ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ও জেনারেল ইয়াহিয়া খান। আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর ক্ষমতা দখল করেন এবং ঐ একই দিনে শেখ মুজিবকেও গ্রেফতার করেন। আইয়ুবের পরবর্তী সাড়ে দশ বছরব্যাপী একনায়কতন্ত্রের পুরো সময়টা মুজিব জেলের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটিয়ে দিলেন। পরে ১৯৬৮ সালে রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্যে পুনরায় মুজিবকে ‘ডিটেনশন’ দেয়া হয় এবং ঢাকায় কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে প্রধান আসামীর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগ ছিল মৃত্যুদণ্ডের অভিযোগ। কিন্তু আইয়ুবের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানের প্রচন্ড চাপের কারণে মুজিব ঐ যাত্রায় ফাঁসি থেকে রেহাই পেলেন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বাধ্য হলেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থগিত রাখতে। মুজিবকে ডেকে নিলেন কনফারেন্স টেবিলে।

১৯৭১ সাল। ভয়ঙ্কর মুক্তির লড়াই শুরু হয়ে গেছে। ইয়াহিয়া খান মুজিবকে বন্দী করে নিয়ে গেলো তার দেশে। মুজিব প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চললেন। একটি বিশেষ সামরিক আদালতে তাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে। মুজিবের ‘প্রিজন সেল’ এর পাশেই একটা কবর খনন করা হলো। মুজিব কবর দেখে দেখে জীবনের শেষ মুহূর্তটির প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন।

পরম সৌভাগ্যের খবর। ঐ রাতেই যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলো। মুজিবের প্রতি জেলার- এর মায়া হলো। জেলার জানতে পারলো যে, ইয়াহিয়া খানের পদত্যাগ অত্যাসন্ন। দেরী না করে চুপিচুপি মুজিবকে তার ব্যক্তিগত কোয়ার্টারে নিয়ে গেলো। মুজিবকে সেই মায়াময় জেলার তার নিজ ঘরে দু’দিন লুকিয়ে রাখলো। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের স্থলাভিষিক্ত হলেন। ভুট্টোকে শেখ মুজিবের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে অনুরোধ করা হলে, তিনি তা অস্বীকার করলেন। দু’সপ্তাহ পরেই মুজিব মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে এলেন। যে তাকে জীবনে বাঁচিয়েছিলো সে জেলারকে মুজিব কখনও ভুলেননি। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে ভুট্টো ঢাকায় এলে মুজিব ঐ লোকটিকে তাঁর ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে দাওয়াত করেছিলেন।

মুজিব সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা নিয়েই কবরে গেলেন। শেখ মুজিবের মন্ত্রীবর্গ ও অন্যান্য সিনিয়র আওয়ামী লীগাররাও সেনাবাহিনীর প্রতি একই ধারণা পোষণ করতো। এই সেনাবাহিনীর লোকেরা নিজের জীবন বিপন্ন করে যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যস্ত, তখন আওয়ামী লীগাররা নিরাপদে কলকাতায় বসে দিন কাটাচ্ছিলো। মুজিবের বুঝা উচিত ছিল যে, এই সেনাবাহিনীই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এই নূতন দেশ জন্মের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় ক্ষমতা চায়নি। মুজিবের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্যও তারা দেখিয়ে আসছিল।

মুজিব আর তার মন্ত্রীবর্গ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে পড়েন। দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার নেয়ার পর একমাস যেতে না যেতেই তিনি ভারতের সঙ্গে পঁচিশ বছর মেয়াদী এক মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্যে ভারতের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছিল। সুতরাং ঐ চুক্তির মাধ্যমে দেশের জন্যে একটা কার্যকরী সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই ধরা হলো। সেনাবাহিনীকে কমিয়ে ফেলা হলো এবং প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রশিক্ষণ সংক্ষিপ্ত করা হলো। সেনাবাহিনী কেবল রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার বাহন হিসেবে পরিগণিত হলো।

১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শেখ মুজিব নিজেই আমাকে বলেছিলেন যে, ‘তিনি একটা শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের বিরুদ্ধে। আমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মত একটা দানব সৃষ্টি করতে চাই না।

শেখ মুজিব চেয়েছিলেন সেনাবাহিনীকে নিঃশেষ করে দিতে—কিন্তু ঘটনাচক্রে তা আর হয়ে উঠলো না।

একটা ঘটনার কথা বলি।

১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাস। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ চলছে। আরবদের পক্ষে সমর্থনের নিদর্শন স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কিছু একটা দেখানোর জন্যে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো সিদ্ধান্ত হলো, মিশরে চা পাঠানো হবে। যুদ্ধের সময় অর্থ ও অস্ত্রের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশী হলেও বাংলাদেশের পক্ষে তা উপহার দেয়া সম্ভব নয় বিধায় মুজিব বিমান-ভর্তি উৎকৃষ্টমানের বাংলাদেশী চা মিশরে পাঠিয়ে দিলেন। মিশর এ উপহার অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করলো।

কেবল শেখ মুজিবই নন, অন্য কেউই চিন্তাও করতে পারেনি যে, এই উপহার প্রদানের ঘটনাটি পরোক্ষভাবে তার জীবনে বিয়োগান্ত নাটকের অবতারণা করবে।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত বাংলাদেশের আন্তরিক উপহার-এর কথা ভুলেননি। এর পরিবর্তে তিনিও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে একটা চমৎকার উপহার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি জানতেন, বাংলাদেশের তেমন উল্লেখযোগ্য অস্ত্রশস্ত্র নেই। ঐ সময় কায়রোর কাছাকাছি মরুভূমিতে বহুসংখ্যক টি-৫৪ ট্যাংক বহর সাজানো ছিল। প্রেসিডেন্ট সাদাত তা থেকে তিরিশটি ট্যাংক বাংলাদেশে উপহার পাঠাবেন বলে স্থির করলেন। ১৯৭৪ সালের বসন্তকালে ঐ প্রস্তাব শেখ মুজিবকে জানানো হলো। এই প্রস্তাব তাঁর মনে ভীতির সঞ্চার করলো। তিনি ট্যাংক বহর উপহার হিসেবে গ্রহণ করতে উৎসাহ দেখাতে পারলেন না। সেনাবাহিনীর ব্যাপারে তাঁর চিন্তা-ভাবনায় এ উপহারকে এক কটাক্ষ বলে মুজিব মনে করলেন। অবশেষে পররাষ্ট্র দপ্তর ও তাঁর মন্ত্রীবর্গ তাকে বুঝাতে সক্ষম হলেন যে, আনোয়ার সাদাত-এর এই শুভেচ্ছা উপহার কোন বিবেচনাতেই তিনি ফিরিয়ে দিতে পারেন না।

১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে তিরিশটি টি-৫৪ ট্যাংক এবং ৪০০ রাউন্ড ট্যাংক-এর গোলা বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার্স–বাংলাদেশের একমাত্র সাঁজোয়া রেজিমেন্ট। ঐ রেজিমেন্টের মেজর ফারুক রহমান ট্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে। মেজর ফারুক তখন সরকারীভাবে রেজিমেন্ট-এর উপ-অধিনায়ক। কিন্তু অস্ত্রশস্ত্রের ব্যাপারে তার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ অন্য কোন অফিসার ঐ রেজিমেন্টে ছিল না। সুতরাং ট্যাংকগুলো কার্যকরীভাবে তার নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে এলো। এক বছর পর ফারুক এই ট্যাংকই মুজিবের বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে—পাল্টে দেয় বাংলাদেশের গতিধারা।

কিন্তু তার আগে শেখ মুজিব সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে ‘জাতীয় রক্ষীবাহিনী’ নামে একটা ‘প্যারা-মিলিটারী বাহিনী’ গঠন করলেন। ঐ বাহিনীর সকল সদস্যই মুজিবের ব্যক্তিগত আনুগত্য স্বীকার করে শপথ গ্রহণ করতো। এই বাহিনীর নামটা খুব শ্রুতিমধুর হলেও, আসলে এই বাহিনী ছিল এক ধরনের প্রাইভেট আর্মির মত এবং হিটলারের নাৎসী বাহিনীর সঙ্গে খুব একটা তফাত ছিল না এদের। প্রাথমিকভাবে রক্ষীবাহিনীকে পুলিশের সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে গঠন করা হয়। মুক্তিবাহিনীর পুরনো সদস্যদের মধ্য থেকে বাছাই করা ৮,০০০ লোক নিয়ে রক্ষীবাহিনীর ভিত্তি স্থাপিত হয়। মুজিবের বিরোধিতা দিন দিন বাড়তে থাকলে, তিনি সেনাবাহিনীর সঠিক বিকল্প হিসেবে রক্ষীবাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫,০০০ সদস্যে উন্নীত করেন। তাদেরকে মিলিটারী ট্রেনিং, আর্মি স্টাইলে পোশাক স্টীল হেলমেট এবং আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হয়। এর অফিসারবৃন্দের প্রায় সকলেই ছিল রাজনৈতিকভাবে একই মতাদর্শের সমর্থক। এই বাহিনীকে খোলাখুলিভাবে মুজিব আর আওয়ামী লীগের শত্রু এমনকি সমালোচকদের নিধনকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এক সময়ে রক্ষীবাহিনী জনসাধারণের মনে প্রকম্পিত সন্ত্রাসের সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

রক্ষীবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যা, খুন আর নির্যাতনের বহু প্রমাণ রয়েছে। ১৯৭৪ সালের মে মাসে ১৭ বছরের এক দামাল ছেলের উপর রক্ষীবাহিনী চরম নির্যাতন চালায়। চারদিন নির্যাতনের পর ছেলেটি ‘লাপাত্তা’ হয়ে যায়। ‘আইনের আওতা বহির্ভূত’ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্ট ‘রক্ষীবাহিনী’কে দোষী বলে চরম তিরস্কার করে। সুপ্রীম কোর্ট দেখতে পায় যে, রক্ষীবাহিনী কোন আইন-কানুন, নিয়ম-পদ্ধতি ইত্যাদি কিছুই মেনে চলতো না। এমনকি গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের কোন রেজিস্টারও তাদের ছিলো না। কোর্টের তিরস্কারের জবাবে মুজিব এদের ‘ঐ সকল কাজে’ হস্তক্ষেপ না করার জন্যে সুপ্রীম কোর্ট-এর ক্ষমতা খর্ব করলেন।

১৯৭৩ সাল। স্বাধীনতার দ্বিতীয় বছর। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, কালোবাজারী, চোরাচালান আর রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষ, রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো। মুজিব তাঁর রক্ষীবাহিনী আর সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের দিয়ে তা প্রতিহত করছিলেন। পক্ষে-বিপক্ষে চতুর্দিকে কেবল অস্ত্র আর অস্ত্রের ঝন্-ঝনানি। সাধারণ মানুষের মাঝে করুণ নিরাপত্তাহীনতা। ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর তখন যশোহর ব্রিগেড কমান্ডার। তার মতে, সে প্রায় ৩৩,০০০ অস্ত্র এবং প্রায় ৩৮ লাখ গোলা তার অধীনস্থ ৬টি জেলা থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলো। ১৯৭৩ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে কেবল রাজনৈতিক হত্যার সংখ্যা ২,০০০ অতিক্রম করে।

শেখ মুজিবের বড় ছেলে শেখ কামাল ছিল অত্যন্ত বদ মেজাজী। বাবার মতো সেও বাংলাদেশকে তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করতো। তার পরিবার বা দলের সমালোচনা বা বিরুদ্ধাচরণকে কামাল রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে মনে করতো। শেখ মুজিব হয়তো তার ছেলের কিছুকিছু কাণ্ডকীর্তি পছন্দ করতেন না—-কিন্তু তবুও তিনি তাকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে বাংলার আকাশে যথেচ্ছা ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন। ‘মাও’ পন্থী সর্বহারা পার্টির নেতা, সিরাজ শিকদার ছিলো কামালের জন্যে এক বিষধর সাপ। উল্লেখযোগ্য যে, এই সিরাজ শিকদার তার দলবল নিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করেছে ১৯৭১ সালে। কিন্তু স্বাধীন দেশে নীতির প্রশ্নে সিরাজ শিকদার হয়ে গেলো শেখ মুজিবের ঘোরতর শত্রু। ১৯৭২ সালে সিরাজ শিকদার আর তার অনুসারীরা মিলে মুজিব বিরোধী পোস্টার দিয়ে ঢাকা শহরকে ছেয়ে ফেলে। এ বছর স্বাধীনতা দিবসেও তা করা হবে বলে গোয়েন্দা বিভাগ খবর দিলো। কামাল তা প্রতিহত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।

১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭২ সাল। রাত গভীর হয়ে আসছে। শেখ কামাল তার সঙ্গী- সামন্ত নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে সিরাজ শিকদারের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে। হাতে তাদের স্টেনগান আর রাইফেল। ঢাকা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ পুলিশ সুপার মাহবুবের অধীনে একই কাজের জন্যে উপর থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছিলো। কামালেরা তা জানতো না। শিকার খোঁজের পালায় পথিমধ্যে দু’দল সামনা-সামনি হয়ে গেলো। ঐ পুলিশের স্কোয়াডটি সার্জেন্ট কিবরিয়ার নেতৃত্বে একটা টয়োটা গাড়ীতে সিরাজ শিকদারের তল্লাশী চালাচ্ছিলো। মাইক্রোবাসে অস্ত্রধারী দল দেখতে পেয়ে পুলিশ কারটি তাদের অনুসরণ করতে লাগলো। কিবরিয়া ভাবলো সে শিকদার গ্যাং-এর সন্ধান পেয়েছে। অন্যদিকে মাইক্রোবাসের কামাল ভাবলো শিকদারের লোকেরা ঐ টয়োটাতে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এসে একদল অন্যদলের উপর চড়াও হলো। গুলি বিনিময়ের পালায় শেখ কামালের গলায় গুলি বিদ্ধ হলো। সামান্যের জন্যে তার শ্বাসনালী রক্ষা পেলো। গলার ক্ষতস্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলে কামাল মাইক্রোবাস থেকে লাফিয়ে পড়ে চিৎকার করে বলতে থাকলো, আর গুলি ছুঁড়োনা। আমি কামাল! আমি কামাল! তাদের ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ কামালকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে গেলো। আতঙ্কিত সার্জেন্ট কিবরিয়া এরই মধ্যে ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, আবুল হায়াতের বাসায় চলে এসেছে। সে ডেপুটি কমিশনারকে বললো, ‘আমরা এক মারাত্মক ভুল করে ফেলেছি। স্বর্গকে আামদের মাথার উপর এনে দাঁড় করিয়েছি।’

হায়াত অত্যন্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অফিসার। অবস্থাদৃষ্টে সে আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না ঘটিয়ে সোজা বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধুর নিকট চলে গেলো। অবশ্য এর আগে সে নিশ্চিত হয়ে নিলো যে, কামাল তখনও বেঁচে আছে। ঘটনায় মুজিবের প্রতিক্রিয়া শুনে ডেপুটি কমিশনার আশ্চর্য হলো। পরিষ্কার প্রতীয়মান হচ্ছিল যে, আবারও নিজ হাতে আইন তুলে নেয়ার জন্যে কামালের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বললেন, ‘তাকে মরতে দাও।’ পুলিশদের ব্যাপারে কি করা উচিত জিজ্ঞেস করলে মুজিব তাকে তাদের কাজে ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন। তিনি আরও বললেন, ‘তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।’ আর যাই ঘটুক, অন্ততঃ সেই ঘটনায় তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন। ডেপুটি কমিশনার থেকে প্রাপ্ত খবরের সূত্র ধরে আমার বন্ধু জাকারিয়া চৌধুরী আমাকে জানিয়েছিলেন যে, শেখ মুজিব তারপরও দু’দিন পর্যন্ত তাঁর ছেলে, কামালকে হাসপাতালে দেখতে যাননি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই মেজাজী যুবক—মেজর ফারুক আর মেজর রশিদ। তারা তাদের নিজেদের পেশাগত দক্ষতার জন্যে একটু দাম্ভিকও ছিলো বটে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি মুজিবের অনীহার কারণে, তাদের ভবিষ্যৎ শিকেয় উঠার ধারণা তাদের মনে বাসা বেঁধে ফেলেছিলো। ফারুক ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার্স-এর উপ-অধিনায়ক। বেঙ্গল ল্যান্সার্স দেশের একমাত্র ট্যাংক রেজিমেন্ট। ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি নাগাদ এই রেজিমেন্টের সাঁজোয়া বহরে মাত্র তিনটি সেকেলে ধরনের ট্যাংক ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর মেজর রশিদ ঢাকায় অবস্থানরত দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারীর অধিনায়ক।

ফারুক এবং রশিদ উভয়েই ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করে। ওরা দু’জন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ভায়রাভাই। দু’জন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি এস, এইচ খানের দুই কন্যাকে বিয়ে করে (এস, এইচ খানের বড় ভাই এ, কে খান পাকিস্তান সরকারের আমলে শিল্পমন্ত্রী ছিলেন)। ওরা থাকতো ঢাকা সেনানিবাসের দুই পাশাপাশি বাংলোয়। বিকেলে একত্রে সকলে বসে সময় কাটানোর জন্যে গাল-গল্প করতো। বন্ধুত্ব আর পারিবারিক ঐ রকম বন্ধনের জন্যেই ওরা তাদের বিদ্রোহের ব্যাপারে একজন আর একজনকে এমনভাবে বিশ্বাস করতো। অথচ ব্যক্তিত্বের দিক থেকে দুই মেজর দুই মেরুতে অবস্থান করতো। পারিবারিক ঐতিহ্যও দু’জনের দু’রকম।

ফারুকের পুরো নাম দেওয়ান ইশরাতুল্লাহ সৈয়দ ফারুক রহমান। বাঙ্গালী সমাজের উচ্চস্তরের পরিবার। তার পূর্বসুরিও সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলো। রাজশাহীর বিশিষ্ট পীর বংশে তার জন্ম। ফারুক তার বাপের দিক থেকে আরব সৈয়দ বংশের এবং মায়ের দিক থেকে ময়মনসিংহের জামালপুর অঞ্চলের এক জমিদার বংশের বলে দাবী করে।

ডঃ এ, আর মল্লিক (তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (মুজিব জেলে থাকাকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট), সৈয়দ আতাউর রহমান খান (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের চীফ মিনিস্টার এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) এবং মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক বিদ্যমান।

ফারুকের পিতা, মেজর সৈয়দ আতাউর রহমান, সেনাবাহিনীর ডাক্তার ছিলেন। ফারুক তার বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। বিমান চালনায় তার আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড। মাত্র ১৭ বৎসর বয়সে সে ফ্লাইং ক্লাবের বিমান চালনার লাইসেন্স পায়। কিন্তু পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করতে ব্যর্থ হয়ে সে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়। কিন্তু ১৯৬৬ সালে বিলেতে যাত্রার আগে, ১৯৬৫ সালের বসন্তকালে কচ্ছের রান এলাকা নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের শত্রুতা শুরু হয়ে যায়। পরিণামে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। সেই সময় সে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যাগ দেয়। রিসালপুরস্থ পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীতে যোগ দেয়ার পূর্বে তার মায়ের দিক থেকে অসম্মতি থাকলেও পরে পিতার সম্মতিক্রমে যে যোগ দেয় সেনাবাহিনীতে। রিসালপুর মিলিটারী একাডেমী থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফারুক ৩০০ ক্যাডেটের মধ্যে ৪র্থ স্থান লাভ করে স্নাতক হন। ঐ সময় পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীর প্রশিক্ষক ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর খালেদ মোশাররফ। তাঁদের উভয়ে তাকে বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিতে বললেও সে শেষ পর্যন্ত ল্যান্সার্স রেজিমেন্টে যোগদান করে।

পরবর্তীতে ফারুক শিয়ালকোটে অবস্থানরত ৩১তম ক্যাভালরিতে বদলি হয়ে আসে। ১৯৭০ সালে ফারুক ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হয়। তার বযস তখন ২৪ বছর।

ঐ সময়ে কৌশলগত সাঁজোয়া কোর্সে ফারুক বি+ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। এতে তার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার-এ গুরুত্বপূর্ণ উন্নতির পথ খুলে যায়।

১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে ক্যাপ্টেন ফারুক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে তেলে সমৃদ্ধ দেশ, আবুধাবীতে সেকেন্ডমেন্টে যায় এবং তথায় আর্মড রেজিমেন্টে স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে যোগ দেয়। আবুধাবীর সশস্ত্রবাহিনী প্রশিক্ষণের কাজে পাকিস্তান চুক্তিবদ্ধ ছিল।

যুবক ট্যাংক কমান্ডার-এর জন্যে এই সময়টা ছিল অত্যন্ত আনন্দের। সরকারী কাজের পরে তার হাতে প্রচুর সময় থেকে যেতো। ঐ সময়টা সে স্টেরিওতে গান শুনে আর মরুভূমির ফাঁকা রাস্তায় নিজের কেনা গাড়ী চালিয়ে কাটিয়ে দিতো।

১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি। ফারুক ব্রিটিশ অফিসার্স মেসে অবস্থান করছে। ব্রিটিশ খবরের কাগজের একটা বান্ডিল তার হাতের কাছে পেয়ে গেলো। এর মধ্যে সানডে টাইমস পত্রিকাটিও ছিলো। ঐ পত্রিকাটিতে বাংলাদেশে সংঘটিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার উপর আমার লেখা একটা পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। এটাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলো।

তার চাচা, নূরুল কাদেরের কাছ থেকে পাকিস্তান বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিবরণ সম্বলিত চিঠিটি পেয়ে সে বাংলাদেশের চরম দুর্যোগময় পরিস্থিতির সত্যতা উপলব্ধি করলো। ফারুক জাতীয়তাবাদী চেতনায় এক নিষ্ঠাবান যুবক। পরিস্থিতির উপর গভীরভাবে চিন্তা- ভাবনা করে ফারুক সিদ্ধান্ত নিলো সে আর এক মুহূর্তও পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকুরী করবে না।

১৯৭১ সালের ১২ই নভেম্বর। একটা মাত্র ব্যাগে তার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র ঢুকিয়ে তার নিজ গাড়ীতে চড়ে সোজা একেবারে দুবাই বিমান বন্দরে চলে এলো। নিজের শখ করে কেনা গাড়ীটা ছেড়ে সে বৈরুতের পথে প্রথম ফ্লাইট ধরে বসলো। তারপর লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে।

চট্টগ্রামের কাপ্তাই হ্রদ (লেক)। মনোরম দৃশ্যের লীলাভূমি এই কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে সবুজের সমারোহে বনভোজনের আনন্দে মেতে আছে একটি দম্পতি মেজর রশিদ আর তার স্ত্রী, টিঙ্কু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে এক ডানাকাটা পরী, দম্পতিটির আনন্দরসকে আরো গাঢ় করে তুলছিলো। সেই অসম সুন্দরী তরুণী উর্মির নাম ফরিদা— রশিদের শ্যালিকা। এই প্রথম ফরিদা ফারুকের নজরে পড়লো। ফরিদার সৌন্দর্য, শিষ্টাচার আর নীরব মোহিনী শক্তিতে ফারুক মোহিত ও অভিভূত হয়ে পড়লো। ফারুক নিজস্ব ভঙ্গিতে রশিদকে জানালো, আমি ফরিদাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে অবশ্যই এর ব্যবস্থা করতে হবে। রশিদ তাই করলো। ১৯৭২ সালের ১২ই আগস্ট ফারুক-ফরিদার বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের পরে ফারুক আর রশিদের সম্পর্ক যেন আরও নিবিড় হয়ে উঠলো। একজন যেন আর একজনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়ালো।

দুই মেজরের পরিচয় রিসালপুরের পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীতে। ফারুক ছিলো এক ব্যাচ সিনিয়র। তবু দু’জনে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে প্রচুর গাল-গল্পে মেতে থাকতো। কারণ, প্রচুর পাঞ্জাবী আর পাঠান অফিসার ক্যাডেট-এর মাঝে এরা ছিলো বাঙ্গালী। রশিদ খুব বেশী কথা বলতো আর ফারুক ছিলো একজন ভাল শ্রোতা।

কুমিল্লা-দাউদকান্দি সড়কের মাঝামাঝি অবস্থিত ছোট একটি গ্রাম—ছয়ফরিয়ায় রশিদের জন্ম। তার পিতা ছিলেন একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক।

রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ বেঁধে যায়। দেশাত্মবোধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে সে যোগদান করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীর ট্রেনিং শেষে রশিদ বেঙ্গল রেজিমেন্টে পোস্টিং চাইলে তাকে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারীতে কমিশন দেয়া হয়। ঐ রেজিমেন্ট তখন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বানুতে অবস্থানরত ছিল।

১৯৬৮ সালে রশিদ ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হয়ে স্বল্পকালীন ছুটি নিয়ে ঢাকায় বেড়াতে আসে। সেই সময়ে তার এক চাচার সহযোগিতায় চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি এস, এইচ খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা জোবায়দাকে (টিঙ্কু) বিয়ে করে। বিয়ের পর রশিদ তার স্ত্রীকে নিয়ে বানুতে চলে যায় এবং সেখানেই তার দুই কন্যার প্রথমটি জন্মগ্রহণ করে।

১৯৭০ সালে অল্পদিনের জন্যে রশিদ খুলনায় অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেসল-এ বদলি হয়ে আসে। ঐ সময় এক লক্ষ টাকাসহ একজন সিপাইকে (পাঞ্জাবী) চোরাচালানীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের সন্দেহে গ্রেফতার এবং অন্য এক চোরাচালানীকে হাতেনাতে ধরে ফেলার পরপরই তাকে আবারও তার ঐ আর্টিলারী ইউনিটে ফেরত পাঠানো হয়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে রশিদের আর্টিলারী ইউনিট কাশ্মীরের হাজিরায় অবস্থান করছিলো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত রেডিওর খবরে পূর্ব পাকিস্তানের ভয়াবহ চিত্র তার মনে সাংঘাতিক রেখাপাত করে। রশিদ সিদ্ধান্ত নিলো, সে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে চলে যাবে।

রশিদ পিতামাতার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১০ দিনের ছুটি চেয়ে এক দরখাস্ত পেশ করে। অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে ২রা অক্টোবর, ১৯৭১ সালে তার ছুটি মঞ্জুর হয়। স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে সে ঢাকায় চলে আসে। স্ত্রী, কন্যাকে চট্টগ্রামে শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে সে ২৯শে অক্টোবর ভারতের আগরতলায় চলে যায়।

জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সের সঙ্গে সংযুক্ত একটি মুক্তিবাহিনী দলের সঙ্গে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে পুনরায় সে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ঐ দলটির নাম দেয়া হয়েছিলো মুক্তিবাহিনী হাউইটজার ব্যাটারী। স্বাধীনতার পর এই ব্যাটারীকেই দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্ট হিসেবে উন্নীত করা হয়। আর মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ হলো তার কমান্ডিং অফিসার।

ফারুক আর রশিদ অন্যান্য বাঙ্গালী অফিসারদের মতো স্বাধীন দেশের উপর অনেক উচ্চাশা পোষণ করতো। ওরা চরম জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলো এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার গর্ববোধ করতো। কিন্তু স্বাধীনতার প্রথম কয়েক বছরে তাদের কার্যকলাপে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে, তাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। অথচ শেখ মুজিব তা ঐভাবে দেখলেন না। পাকিস্তানী জেলের তিক্ত অভিজ্ঞতায় তার মনে সেনাবাহিনীর প্রতি সন্দেহ আর ভীতির বীজ উপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো একটা দানব যেন পুনঃ সৃষ্টি না হতে পারে তার সকল ব্যবস্থাই তিনি করছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত সেই ভীতিই তাঁর ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করেছিলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *