ষোল
ঠোঙা বানাতে বানাতে অনঙ্গমোহন হঠাৎ পূর্ণচন্দ্র চতুষ্পাঠীর খাতাপত্রগুলি বার করলেন। অসীম চক্রবর্তী নামটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ঠিক করে উঠতে পারেন না, ‘উ’ লিখবেন, না ‘অ’ লিখবেন। ‘উ’ অর্থাৎ উপস্থিত, ‘অ’ অর্থাৎ অনুপস্থিত। সুমিতাকে উ লিখছেন। সুতরাং অসীমকেও উ রাখা যায়। সুমিতা হরি ঘোষ স্ট্রিটে আছে, আর অসীম অশোকনগরে। তফাত তো এই মাত্র। আছে। দুজনেই আছে এই অন্তরে। ঠোঙায় আঠা মারতে লাগেন আবার।
খেমকরণ প্যাটনের সমাধিভূমিতে আঠা লাগালেন। নাবালিকা ধর্ষণ-এ আঠা লাগালেন। পি বর্মণের অসাধারণ গোল কিপিং-এ। পি বর্মনের গায়ে আঠা মারলেন। হাওড়া পণ্ডিতসমাজ। রবিবার সন্ধ্যা ছয় ঘটিকায় সমাজভবনে মহাকবি কালিদাস স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হইবে। সভাপতিত্ব করিবেন পশ্চিমবঙ্গের মহা কারা পরিদর্শক ড. অবনীভূষণ রুদ্র আইএএস মহাশয়, প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করিবেন হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মাননীয় কৃষ্ণকুমার চট্টোপাধ্যায় এমএলসি…কাগজটা ভাঁজ করলেন। হায়রে, কতদিন এইসব সভায় যান না অনঙ্গমোহন। দরিদ্রের কাছে সভা বিষ। বিষং সভা দরিদ্রস্য।
সেদিন গিয়েছিলেন অনন্তনাথ জ্যোতিভূষণের পিতৃশ্রাদ্ধে। প্রথম পাতখুরিতে বসার জন্য আমন্ত্রণ পাননি অনঙ্গমোহন। তারাদাস গরম কাপড়ের ফতুয়ার উপরে সিল্কের চাদর জড়িয়ে এসেছিলেন। শুনলেন, বৌবাজারে এক সোনার দোকানে বসছেন। গ্রহাচার্য। তারাদাস, তুমি তো স্মৃতির পণ্ডিত, গ্রহের কী বুঝ? অনঙ্গমোহন রাগতস্বরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তারাদাস রহস্যের হাসি হেসেছিলেন। তারাদাসও প্রথম পাতখুরিতে। অনঙ্গমোহনের ছেঁড়া নামাবলী। ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া হরেকৃষ্ণ হরে রাম। এক মাড়োয়ারি, ব্রাহ্মণ প্রণাম করতে এসেছিলেন সেখানে। অনঙ্গমোহনের কাছেই আসেননি তিনি।
আজ খাওয়া আধাপেটা। রেশনে চাল নেই। অনঙ্গমোহন ঠোঙায় মন দেন।
অঞ্জলি আর স্বপ্নাও রয়েছে ঘরে। অঞ্জলি হাই তুলল। তারই মধ্যে স্বগতোক্তি করল—শিখার মা আইজ নিচে নামল। নিজে নিজে বাথরুমেও গেল।
অনঙ্গমোহন আঠা লাগাচ্ছেন। কে হোড়ের মহাভৃঙ্গরাজ তেল—চালের অভাবে হাহাকার। শুভমুক্তি আরজু। শ্রেঃ রাজেন্দ্রকুমার, সাধনা। ডা. এ কে চৌধুরীর কৃমিনাশিনী। কবিরাজ এন এন সেনের অসাধারণ কেশ তৈল— কেশরঞ্জন…
বুঝলি স্বপ্না, শিখার মা এখন বেশ ভাল। অঞ্জলি আবার বলল।
একটি পরিবারের সকলের একযোগে আত্মহত্যা। দেনার দায়ে জর্জরিত পরিবারের কর্তা পঁয়তাল্লিশ বৎসর বয়স্ক বীরেন দে স্ত্রী মণিমালা ও শিশু পুত্র-কন্যাসহ বিষপান করিয়াছেন। বীরেন দে লিখিয়া গিয়াছেন, অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া যেন বাড়িভাড়া মিটানো হয় এবং বাকিটা যেন প্রতিরক্ষা তহবিলে দান করা হয়।
অঞ্জলি আবার বলল—শিখার মা এখন বোধহয় নিজেই রান্না করতে পারবে।
যাত্রায় এই সংলাপটা এভাবে উচ্চারিত হলে একটা প্রচণ্ড ঝং শব্দ হত। এখন মুহূর্তের জন্য থেমে গেল অনঙ্গমোহনের আঠা মাখা আঙুল। স্বপ্না কিছুক্ষণ নৈঃশব্দ্যের পর বলল, ঐ কাজ আর করতে হবে না। থাক গিয়ে। আমরা ভাল করে ঠোঙা বানাব। অঞ্জলি বলল, বিলু যে এইটে পড়ে। নাইনে উঠলে সাইন্স লইয়া পড়তে হইব না? অঙ্কে ভাল নম্বর না হইলে কি সাইন্স দিব? একটা অঙ্কের মাস্টার দরকার। চাল আড়াই টাকা। আমি অন্য কাজ নিমু। অনঙ্গমোহন চুপ। মিন মিন করে কি একটা বলতে চেষ্টা করছিলেন কিন্তু বলতে পারলেন না।
সেদিন শিখার মা-কে ধরাধরি করে নিয়ে আসা হয়েছিল, অজিতবাবু স্টোভ জ্বালিয়ে দুধ বসালেন। শিখার মা বলেছিল, তুমি সর, আমি করে দিচ্ছি। অঞ্জলি ছিল সামনে। অঞ্জলি বলল—সে কী দিদি, তুমি একদম আগুনের ধারে আসবা না। আমি করি। রাত্রের ভাতও অঞ্জলি করে দিয়েছিল। শিখার বাবা পরদিন সকালে অনঙ্গমোহনকে বলেছিল—পণ্ডিতমশাই, আপনাকে আমি গার্জিয়ান মানি। আপনি যা বলেন, শুনি। আপনি গানের ইস্কুল তুলে দিতে বলেছিলেন, আমি তুলে দিয়েছি। এখন একটা কথা বলি, বলতে সংকোচ হচ্ছে। আমার সংসারে এখন রান্নার লোক দরকার, বাইরের লোক নিতে হলেও নিতুম। যদি বিলুর মা…যা লাগে, মানে টাকাকড়ির ব্যাপারে কোনো ইয়ে নেই…
অনঙ্গমোহন বলেছিলেন—না না, সে কী কইরা সম্ভব?
অঞ্জলি তখন এগিয়ে এসেছিল। বলেছিল—এ তো নিজেদের ঘরের ব্যাপার। আপনি কিচ্ছু ভাববেন না…
কোথায় অন্য কাজ নেবে মা?
নিমুই একখানে…
আমিও কাজ নিলে পারি। স্বপ্না বলল। স্বপ্না আজ শাড়ি পড়েছে। বেশ বড় বড় লাগছে স্বপ্নাকে।
এ সময় ন্যাড়া এল। স্বপ্না আঁচল টেনে নিল। ন্যাড়া এল এক বান্ডিল কাগজ নিয়ে। ন্যাড়ার চায়ের দোকানে রাখে। ন্যাড়ার গায়ের থেকে ঘামের গন্ধ বেরুচ্ছে। স্নান করেনি। এখন বেলা দেড়টা। ন্যাড়া বলল—জল খাব।
স্বপ্না জল নিয়ে আসে। গ্লাসের জলের রঙ ঈষৎ ঘোলাটে। অনঙ্গমোহন বুঝলেন, জলে লেবু দেওয়া হয়েছে। জলের গেলাসটি নেবার সময় আঙুলের সঙ্গে আঙুলের স্পর্শ, অনঙ্গমোহন দেখলেন। খবর কাগজগুলি বেশি দিনের পুরনো নয়। বহুদিন রেডিওতে ব্যাটারি নেই। খবর শোনা হয় না। খবরের কাগজগুলি দেখতে লাগলেন অনঙ্গমোহন।
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬।
বসিরহাটের ছাত্র-মিছিলে পুলিশের গুলি। শতাধিক আহত। শহরে ১৪৪ ধারা। অজয় মুখার্জির প্রতিবাদপত্র পেশ।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬।
স্বরূপনগরে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত।
রেশনে চাল আসে না। কালোবাজারে আড়াই টাকা কিলো। কেরোসিন নেই। ছাত্র-মিছিল দাবি তুলেছিল, ন্যায্য দরে কেরোসিন দাও। বিনিময়ে পেল গুলি। নিহত হল তেঁতুলিয়া স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নুরুল ইসলাম। আহত পঞ্চম শ্রেণির মনীন্দ্র বিশ্বাস আর দশম শ্রেণির কার্তিক। এই দিন লাঠি চলেছে বনগ্রামে, নৈহাট্টিতে, বসিরহাটে, চাঁদপাড়া, গোবরডাঙা, অশোকনগর…
অশোকনগরেও লাঠি? অসীমের ঐ শ্লোকটা কি মনে আছে? ন গণস্যতো গচ্ছেৎ। মিছিলের আগে যাইতে নাই।
বিলুও চলে এসেছে। ছাত্র ধর্মঘট। বইটা রেখে রান্নাঘরে গেল বিলু। থালা ও হাঁড়ির ঝনঝনাত শুনল। বিলু এসে বলল, কিছু নেই?
অঞ্জলি বলল—বুঝিস না? বড় হয়েছিস? পরিবার কর্তা অনঙ্গমোহন মাথা নিচু করেন। ঠোঙায় আঠা মারেন। গতকাল একটা মিছিল গিয়েছিল—খাদ্য চাই-খাদ্য দাও। নইলে গদি ছেড়ে দাও…
ন্যাড়া বলল—কী রে বিলু, এখন একটু হয়ে যাক—এই তো, তুই, আমি আর ও-স্বপ্না আছে। তিনজন। একটু টোলের কাজ হয়ে যাক।
অঞ্জলি বলল—তুমি স্নান-খাওয়া করবে না? বাড়ি যাও।
সে হবে খনে। ন্যাড়া বসে পড়ে।
অনঙ্গমোহন হঠাৎ শুরু করেন—খাইদ্যহীন উপবাসী দুই দরিদ্র ব্যক্তি রাজার নিকট আইস্যা কইল, দ্বন্দোহং। দ্বিগুরাপি চাহম। মদগৃহে নিত্যম ব্যয়ীবঃ। তৎপুরুষ কর্মধারয় যেনাহং স্যাম বহুপ্রীহিঃ। অর্থাৎ আমরা দুইজন। আমাদের দুটি গরু। আমাদের গৃহে সর্বদা অভাব। অতএব হে পুরুষ, এমন কাজ করুন য্যান আমার ঘরে বহুধন হয়।
দেখ তোমরা, এই বাক্যটার মধ্যে কেমন সুন্দর সবগুলি সমাসের নাম আছে। দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, অব্যয়ীভাব, তৎপুরুষ, কর্মধারয়, বহুব্রীহি। কেমন? ভারি মজা না? কপাল কুঁচকে ওঠে অঞ্জলির।
ন্যাড়া একটা কাগজ বের করল। বলল—আর একবার বলুন পণ্ডিতমশাই, খুব ভাল জিনিস। টুকে নিই। ঈশ, ইস্কুলে পড়ার সময় যদি এটা পেতাম? দ্বিগুণ উৎসাহে অনঙ্গমোহন বলতে থাকেন, এ কূটবাক্য। ন্যাড়া লিখে নেয়। ন্যাড়া বলে, পৃথিবীতে কত রকমের ভাল লোক যে আছে। তাই এই পৃথিবীটা চলছে। গোপীমোহন দত্ত লেনে একজন আছেন, বিনে পয়সায় ওরিগমি শেখান। ওরিগমি কী জানো স্বপ্না? কাগজ ভাঁজ করে জিনিস তৈরি করা যায়। দেখাব?
বাড়ির টবে বেগুন চাষ লেখা কাগজটা মুড়ে মুড়ে একটা খরগোশ বানাল ন্যাড়া। স্বপ্নাকে দিল। আঙুলে আঙুল। ঠিক সেই সময়ে একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। ন্যাড়া বলল—পেটো পড়ছে। ফটিকের দোকানের সামনে ধোঁয়া। গতকালই ফটিকের দোকানের সামনে একটা মিছিল এসে বলেছিল, মজুত করা চাল বিলি করে দাও। ফটিক বলেছিল, চাল নেই। বড়ই ঝামেলা শুরু হল। ন্যাড়া ওঠে। স্বপ্না বলে, বসুন। এই গণ্ডগোলে যেতে হবে না। ন্যাড়া বলল—খিদে পেয়েছে যে?
স্বপ্না কিছু বলতে পারে না তখন।
অনঙ্গমোহন ঠোঙায় ফিরে যান। এখন ঠোঙাই যেন আশ্রয়। বসন্তের টীকা নিন। উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশযাত্রা। সংস্কৃতজ্ঞা পাত্রী চাই। কাগজটা টেনে নিলেন অনঙ্গমোহন। পড়লেন। বার কয়েক পড়লেন। কাগজটা ভাঁজ করে তাঁর ছিটকাপড়ের থলেতে ভরলেন।
ফটিকের দোকানের সামনে কালো কালো দাগ। পুলিশ এসেছে। মানুষের জটলা। অনঙ্গমোহন পেরিয়ে গেলেন। বাগবাজার স্ট্রিটে লাল পতাকা। মিটিং। অনঙ্গমোহন পেরিয়ে গেলেন। একটা দমকল গাড়ি ছুটছে। পুলিশের কালো গাড়ি ছুটছে। অনঙ্গমোহন পৌঁছলেন বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিটে। ঠোঙাটা বার করলেন। পাত্র সম্ভ্রান্ত, মিত্রবংশীয়। ৪২। কলিকাতায় নিজস্ব বাটি। উচ্চ চাকুরিয়া। সুকণ্ঠী, সঙ্গীতজ্ঞা, সংস্কৃতজ্ঞা পাত্রী আবশ্যক। ঠিকানা ললিতমোহন মিত্র…
ললিত মিত্রের বাড়ি খুঁজে পেতে কোনোই অসুবিধা হল না। বেশ বনেদি বাড়ি। সামনে ছোটখাটো বাগান। বাগানে ফুল। জবা-টগর-করবী এ সকল নয়। অন্য ফুল। বিলাতি। দরজার সামনে ইংরাজিতে নাম লেখা। কড়া নাড়তেই একটি বামা কণ্ঠের আওয়াজ শুনলেন—বেলই তো রয়েছে।
এক ভদ্রলোক নেমে এলেন। শুভ্র কেশ। সৌম্যদর্শন। কোঁচানো ধুতি। —আপনিই কি ললিত মিত্র?
—হ্যাঁ, কী ব্যাপার।
—আমি একটি পাত্রীর সন্ধান নিয়া আসছিলাম।
—আসুন ঘটকমশাই। ভেতরে আসুন। একটা বেশ বড় ঘর। শ্বেতপাথরের টেবিল বড় বড় কৌচ।
— পাত্রী আমার ছাত্রী।
—ছাত্রী মানে?
—আমি অধ্যাপক। আমার একটি চতুষ্পাঠী আছে। আমার নাম অনঙ্গমোহন ভট্টাচার্য, কাব্য ব্যাকরণ তীর্থ। ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। নত হয়ে প্রণাম করলেন। সেই মুহূর্তে সহস্র পাখি কূজন করে উঠল, পুষ্পবৃষ্টি হল ফটিকের দোকান সমেত সমস্ত কলকাতায়, দেবতারা শঙ্খ নাদ করলেন। তুচ্ছ মনে হল আড়াই টাকা চালের কিলো।
সুমিতার বর্ণনা দিলেন। তাঁর উচ্ছ্বাস অপ্রকাশ থাকল না। এর পর পাত্রের বৃত্তান্ত চাইলেন অনঙ্গমোহন।
জানলেন, পাত্র ইঞ্জিনিয়ার। জাহাজের চাকরি। পৃথিবী ভ্রমণ করে। বছরে দু-একবার আসে। তখন দুই-তিন মাস থাকে।
অনঙ্গমোহন জিজ্ঞাসা করলেন—ছেলের বিবাহ দিতে এত দেরি করলেন কেন?
—আর বলবেন না, ছেলের আমার গোঁ—বোনেদের বিয়ে না হতে বিয়ে করবে না। তিন বোনের বিয়ে হল। তারপরও নানা অছিলা। শেষকালে বলে, অনেক বয়েস হয়ে গেছে আর বিয়ে করে কী হবে। বিয়াল্লিশ কি একটা বয়েস?
—আপনার কি একই পুত্র?
—ওঃ বলা হয়নি। বড় ছেলে অ্যাডভোকেট। এখানেই ছিল। এটা আমার পৈতৃক বাড়ি। ও এখন বালিগঞ্জে বাড়ি করেছে। প্রথম জামাতা বোম্বের ভাবা অ্যাটমিক সেন্টারে ইঞ্জিনিয়ার। দ্বিতীয়টি ইংরেজির অধ্যাপক। তৃতীয়টি আমেরিকা প্রবাসী।
—সংস্কৃতজ্ঞা পাত্রী পছন্দ কেন আপনার?
—আমি যদিও কায়স্থ সন্তান, তবু সংস্কৃতসেবী। বিদ্যাসাগর কলেজের সংস্কৃতের অধ্যাপক ছিলাম। তিন কন্যাকেই সংস্কৃত পড়িয়েছি। তিনটিই সংস্কৃতে এম এ। আমি সংস্কৃতে নাটক অভিনয় করি, পরিচালনা করি। আমার দলের নাম ‘প্রাচ্যসুধা’। রেডিওতে আমার পরিচালনায় সংস্কৃত নাটক অভিনয় হয়। এই যে বেতারজগতের ছবি। বার্তাগৃহম্ নাটকের অভিনয়। রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটকের সংস্কৃতানুবাদ। এই যে আমি। এই যে সুধার ভূমিকায় আমার কনিষ্ঠা কন্যা। এই যে দেখুন, দিল্লিতে অভিনয় — চাণক্যবিজয়ম্ নাটকের ছবি-দেয়ালে বাঁধানো। রাষ্ট্রপতি ড. রাধাকৃষ্ণন স্বয়ং দেখছেন। আর এই দেখুন আমার লেখা বই। সংস্কৃত ও ভারতীয় সংস্কৃতি। ললিতমোহন বলতে লাগলেন—কনিষ্ঠা কন্যার বিবাহের পর এই প্রাচ্যসুধা আর চালাতে পারি না। এদিকে পুত্র তো জাহাজি। ভাবলাম এমন পুত্রবধূ ঘরে আনব, যার সঙ্গে সংস্কৃত চর্চাটাও হয়, আর আমার প্রাচ্যসুধাও থাকে।
সব থাকবে আপনার। আপনার মনোভিলাষ পূর্ণ হবে। ঠিক এমন পাত্রীই আমার ছাত্রী।
আনন্দে প্রায় নাচতে নাচতে অনঙ্গমোহন চললেন হরি ঘোষ স্ট্রিটে।