চতুষ্পাঠী – ১১

এগার

বাড়ির সামনে লোকজনের জটলা। একটা অমঙ্গল আশঙ্কা করলেন অনঙ্গমোহন। একটু থমকে দাঁড়ালেন। জেলেপাড়ার বস্তিবাসিনী এক রমণী পার্শ্ববর্তিনীকে জানাল—এই যে, এই এর ছাত্রীর সঙ্গে শিখার বাপ নষ্ট। সমবেত মানুষের দিকে অস্থির দিকে অস্থির দৃষ্টির জিজ্ঞাসা অনঙ্গমোহনের। তেলেভাজাওলা খগেন বলল—সুইসাইড কেস। ‘সুইসাইড’ কথাটা শোনা। আগেও শুনেছেন। মৃত্যুর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত এই সুইসাইড শব্দ। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যান অনঙ্গমোহন। ঘরের মধ্যে অঞ্জলিকে দেখতে পেয়ে একটি স্বস্তিশ্বাস ছাড়লেন।

অনঙ্গমোহন কী প্রশ্ন করবেন ঠিক করতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলেন।

অঞ্জলি বলল, বাবা!

এই শব্দটা উচ্চারণ করে অঞ্জলিও দাঁড়িয়ে রইল। বোধ হয় বলতে চাইছে, আপনি দুর্গাপূজা না করে চলে এলেন কেন?

অঞ্জলি বলল, আপনি ঐ সুমিতাকে আর পড়াবেন না।

ও।

শিখার মা গায়ে আগুন দিয়েছে।

অ্যাঁ?

আর জি কর-এ নিয়ে গেছে।

ও।

রাত বারোটায়।

জীবিত?

এখনও বেঁচে আছে।

আরও কিছু জানবার ছিল অনঙ্গমোহনের কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে সাহস হল না। স্বপ্নার দিকে তাকাল অনঙ্গমোহন। স্বপ্না মাথা নিচু করে ঘর থেকে চলে গেল।

অনঙ্গমোহন আবার নিঃশব্দ হলেন। অনেক প্রশ্ন তোলপাড়। দোষারোপটা সুমিতার ওপর কেন? স্বপ্না, তার নিজের পৌত্রী, কেন কোনো কথা না বলে চলে যায়? কেন এই অগ্নিদাহের ঘটনায় অনঙ্গমোহনের নিজেকে শঙ্কিত এবং কুঞ্চিত লাগে? অঞ্জলি চাল ধুতে যায়। চালের কণাগুলির দিকে তাকাতে পারেন না অনঙ্গমোহন। চালের প্রতিটি কণার দিকে তাকাতেও তাঁর লজ্জা। চালের দাম বাড়ছে। দিনে দিনে বাড়ছে। এই অন্ন ধ্বংস ছাড়া তাঁর কোনো অবদান নেই। ঘাড়টা সামান্য বেঁকিয়ে অঞ্জলি জিজ্ঞাসা করল, পুজোয় আবার যাচ্ছেন তো? চাল নিইনি কিন্তু।

অনঙ্গমোহন এবার ঘর থেকে বের হলেন। অজিতবাবুদের ঘরের সামনের পর্দাটা ঝুলছে। ফাঁক দিয়ে চেয়ে দেখলেন, শিখা উপুড় হয়ে কাঁদছে। পাশে বসে আছে স্বপ্না। পিঠে হাত বুলোচ্ছে।

রাস্তায় নেমেই ভাবলেন, কোথায় যাবেন? এক্ষেত্রে ‘যাওয়া’ শব্দের ‘অর্থ-ব্যঞ্জনা’ হল পালানো। কোথায় পালাবেন। খালের জলরে খালের জল তুই যাস কৈ? খালের রুগ্ণ স্রোতে হা-হুতাশ। এই খাল একদিন বিদ্যাধরী নদীতে গঙ্গার জল বয়ে নিয়ে যেত।

অনঙ্গমোহন কোথায় যাবেন? খালপাড় দিয়ে হেঁটে, ধীরে হেঁটে, গঙ্গার ধারে যান। সুমিতা যদি কুলটাই হয় অনঙ্গমোহনের কী কর্তব্য? কুলটা কি সুছাত্রী হয় না? বারাঙ্গনাগণও শিক্ষাগুরুর কাছে বিদ্যাভ্যাস করতো। অনঙ্গমোহন পায়ে পায়ে গঙ্গার দিকে যান। মোটা লাল নলের ভিতর দিয়ে মাটি যাচ্ছে লবণহ্রদে। ছোট প্যান্ট পরা ফিরিঙ্গি পুরুষরা কাজ করছে। গঙ্গার ধারে আসেন। আহ্নিকটা সেরে নেন তারপর জলমহিমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। জাহ্নবী-গঙ্গে। নরক নিবারণী জাহ্নবী গঙ্গে, কলুষ বিনাশিনী মহিমোত্তুঙ্গে। তুমি নরক নিবারণ কর। কত তোমার মহিমা, হে জাহ্নবী। আচার্য শঙ্করাচার্য বলেছেন—তুমিই নরক নিবারণী। পাপনাশিনী। পাপনাশন এতটাই সহজ প্রক্রিয়া হে শঙ্করাচার্য। তুমি না অদ্বৈতবাদী? তবে আমি যাই কই? জীবন হইতে পলাইয়া ধর্মে যাই, আবার ধর্ম হইতে পলাইয়া জীবনে আসি। তবে আমি কী তা করতাম, কী তা করতাম রে? গঙ্গার পাশ দিয়ে রেললাইন চলে গেছে। রেললাইন রেললাইন, তুই যাস কই? রোগা রেললাইনে এখন হা-হুতাশ। খিদিরপুরের বন্দর থেকে চিৎপুর ইয়ার্ডের দিকে চলে যে সম্ভার বোঝাই সালঙ্কারা মালগাড়ি। বন্দর শ্রীহীন এখন। লাইনের ফাঁকে দূর্বাঘাস। অনঙ্গ কোন দিকে যাবেন ঠিক করতে পারেন না।

সুমিতার কাছেই কি যাওয়া কর্তব্য এখন, না কি হাসপাতালে, নাকি এখনি দ্রুত ধাবমান হওয়া উচিত মতিলাল কলোনির সেই দুর্গামণ্ডপে যেখানে অসুর আয়ুব খাঁ-র মতো মুখ নিয়ে কৃপা ভিক্ষা করছে, অনঙ্গমোহনও বলছেন, মা মাগো, আমি ধর্মহীন, ক্ষমা কর। তারপর নাটকের প্রম্পটারের মতো পুরোহিত দর্পণ হাতে নিয়ে ঘড়ি-পরা মানিককে বলবেন—এইবার ফট্ মন্ত্রে ভূত্যপসারণ কর, এই মন্ত্রে দশ দিক বন্ধ কর। এই মন্ত্রে দেবীকে মোদক পিষ্টকাদি নিবেদন কর। তারপর রজত মূল্যং তাম্রং দক্ষিণামহং দদে।

ইহাই ধর্ম?

কিন্তু অনঙ্গমোহন নাস্তিক নন। ঈশ্বর আছেন। ঈশ্বরের স্বরূপ কী অনঙ্গমোহন জানেন না। অনঙ্গমোহন হিন্দু। অনঙ্গমোহন ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণাচার অনঙ্গমোহন পালন করেন কিন্তু ব্রাহ্মণাচারের সবটা ধর্মের সঙ্গে মেলাতে পারেন কই? আবার ধর্মেরও সবটা মেলে না জীবনের সঙ্গে।

রেললাইন যেখানে বেঁকে গেছে চিৎপুর ইয়ার্ডের দিকে। ঐখানে পোড়া কয়লার পাহাড়। বহুদিন ধরে ডাঁই হয়ে আছে। ঐ পোড়া পাহাড়ের সানুদেশে বিক্ষিপ্ত গর্ত। অভাবী মানুষেরা শাবল দিয়ে তৈরি করেছে এই গুহাকন্দর। পোড়া কয়লার ভিতর থেকে বেছে বেছে বার করেছে অপ্রজ্বলিত আর অর্ধপ্রজ্বলিত কয়লা। কয়লাই অগ্নি। অগ্নি সর্বভুক, ক্ষুধাও অগ্নি। ক্ষুধা সর্বভুক। তবে অনঙ্গমোহন, তুমিও তোমার ক্ষুধার নিমিত্তে ধর্ম খাও, তত্ত্ব খাও, যুক্তি খাও। পার না?

পোড়া কয়লার পাহাড়ের সানুদেশে একটা গুহা কন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে যান অনঙ্গমোহন। আদি ঋষিরা পর্বতগুহায় ধ্যানমগ্ন হতেন। গুহার ভিতর থেকে দৈববাণীর মতো ভেসে এল একটা কণ্ঠস্বর। আর পুঁটকী মেরো না গো ভগবান। গুহার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল এক অমৃতের পুত্র। কৃষ্ণ অঙ্গার চূর্ণ মণ্ডিত দেহ। হাতে দুটি মাত্র কয়লার টুকরো। ঈশ্বরের কাছে তার আবেদন। সে তো ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে, ঈশ্বরকে মঙ্গলময় জেনেই তার কাছে এই আর্তি জানাচ্ছে। সেই অমৃতের পুত্র বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যায়। কয়লাচোর লোকটাকে প্রকৃত ধার্মিক মনে হয় অনঙ্গমোহনের। তবে অনঙ্গমোহনও ধার্মিক। ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেই তিনি এ যজমানি কর্ম থেকে বিরত আছেন। ঐ ক্ষুধাপীড়িত লোকটির বাক্যের সংস্কৃত ব্যঞ্জনার্থ পেয়ে যায় বৃহস্পতির স্মৃতিতে। ‘যুক্তিহীন বিচারেন ধর্মহানি প্রজায়তে।’ যুক্তি হীন নিয়মানুসার হলেও ধর্মহানি হয়। সুতরাং দেবী পূজা থেকে পালিয়ে আসাতে ধর্মহানি হয়নি। এই সিদ্ধান্তে এসে তাঁর মন শান্ত ও স্থির হয় এবং তখনই প্রকৃতপক্ষে অজিতবাবুর স্ত্রীর জন্য উদ্বিগ্ন হন। দ্রুত হাসপাতালের দিকে যেতে থাকেন।

আর জি কর হাসপাতালের সামনেই অজিতবাবু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলেন। অনঙ্গমোহন জিজ্ঞাসা করলেন—কেমন আছে জয়া?

খুব একটা পোড়েনি। গায়ে তাপ লাগতেই কাপড় খুলে ফেলেছিল ভয়ে।

এমন একটা করল কেন?

কথায় বলে না, স্ত্রী বুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী, সামান্য ব্যাপার। কিছু না— সুমিতা…

কথা কেড়ে নিয়ে অনঙ্গমোহন বলে উঠলেন, আপনি ঐ কন্যাটিকে চাকরির প্রলোভন দেখাইয়া ভোগ করার চেষ্টা করবেন না। বলেই পিছন ঘুরলেন।

দ্রুত পৌঁছে গেলেন সুমিতার বাড়িতে। প্রায় অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন— বারান্দা দিয়ে কোণার ঘরে চলে গেলেন, ডাকলেন, সুমিতা, যেন কণ্ঠ নয়, নাভিমূল থেকে বেরিয়ে এল ঐ শব্দ।

পণ্ডিতমশাই? আপনি? বড় আন্তরিক কণ্ঠস্বর সুমিতার। আসুন। ভিতরে আসুন। অনঙ্গমোহন ঘরে ঢুকে দেখলেন, মেঝেতে মাদুর পাতা রয়েছে। খাতা খোলা। ছড়ানো কয়েকটি সংস্কৃত বই। বিদ্যাসাগরের ব্যাকরণ কৌমুদী, তার পাশে ডক্টর কৃষ্ণগোপাল শাস্ত্রী, এম এ পি আর এস, পি এইচ ডি, এফ আর এ এস (লন্ডন) স্মৃতি মীমাংসাতীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি কর্তৃক বিরচিত নবরূপে ব্যাকরণ কৌমুদী, শ্রীগুরুপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাকরণ তীর্থ বিদ্যারত্ন প্রণীত পাণিনি সূত্রম্ এবং একটা খোলা পাতা।

অনঙ্গমোহন যেন উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। দাবদগ্ধ অনঙ্গমোহন যেন দেখতে পেলেন, শীতল সরোবর। বললেন, ল্যাখাপড়া করতাছিলা? বাঃ।

অনঙ্গমোহন মাদুরের ওপর বসেন।

খাতাটা দেখেন।

দিবা শব্দ (স্ত্রী লিঙ্গ)।

দ্যৌঃ দিবৌ দিবঃ
দিবম, দ্যাম দিবৌ দিবঃ
দিবা দ্যুভ্যাম দ্যুভিঃ…

পাতা উল্টে দেন অনঙ্গমোহন। অনুশীলনী—পাঁচ।

অনুবাদ কর। দশরথ ধর্মপথে স্বর্গে গিয়াছেন। মহান ব্যক্তিরা বিপদে অধীর নয়। বিদ্বান সর্বত্র সম্মান পায়, ঘৃত দ্বারা আগুন বাড়ে।

এই সব কী সুমিতা?

সুমিতা তাড়াতাড়ি বইখাতা বন্ধ করে দিল, এই একটা বাজে ব্যাপার। একটা ব্যাকরণ বই লিখছি।

তুমি লিখছ ব্যাকরণ বই?

আমি লিখছি মানে—আমার নাম থাকবে না। এক পণ্ডিত গোস্বামী এম এ ব্যাকরণতীর্থ তাঁর একটা নাম থাকবে। কয়েকটি বই নিয়ে, এই বই থেকে এটা, ঐ বই থেকে ওটা মিলিয়ে লিখে দিচ্ছি। পাবলিশার এরকমই বলেছে। অনঙ্গমোহন খাতাটা উল্টে দিলেন

‘সরল ব্যাকরণ কৌমুদী।’

কিছু টাকা দিচ্ছে পাবলিশার। যা পাওয়া যায়।

গর্ভস্রাব।

এই শব্দটি অত্যন্ত তীব্র গালাগালি—সুমিতা জানে।

সুমিতা চুপ করে যায়। এই গালাগালির লক্ষ্যবস্তুটি কে? সুমিতা না পাবলিশার? কত টাকা দক্ষিণা দিবে ঐ গর্ভস্রাব?

একশো মতো দেবে বলেছে।

একশো? একশো টাকা অর্থ এই বাজারে দুই মণ চাল। একশো টাকা অর্থ আড়াই মণ ডাল। একশো টাকা অর্থ দুই মাসের জীবনধারণ। ব্যাকরণ তো অনঙ্গমোহনও লিখতে পারেন। ঐ বন্ধ করা খাতার দিকে তাকিয়ে রইলেন অনঙ্গমোহন। ঐ দৃষ্টিতে কাতরতা ছিল। ঐ দৃষ্টির গভীরে নিহিত অর্থ কী সুমিতা বুঝতে পারল? সুমিতা বলল, আপনি হলে আরও ভাল লিখতে পারতেন…

অনঙ্গমোহন বলেই ফেললেন, ঐ প্রকাশকের সঙ্গে দেখা করা যায় না?

সুমিতা ফুল্লকুসুমের মতো উদ্ভাসিত হয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে—আপনিই করুন না এটা।

—না, এটা তোমার। তুমিই কর এটা, একবার আমাকে দেখাইয়া নিও।

অনঙ্গমোহন ভাবলেন কথাটা পাড়বেন। আসল কথাটা। যে কারণে আসা। গতকাল কী করছিলা তুমি? কী করছিলা কথাটির কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই। তবে কী বলবেন? গতকাল অজিতবাবুর সঙ্গে তুমি কী করছিলা কথাটা কি এরকমভাবে বলবেন, নাকি—সত্য বল, সত্য বল সুমিতা, অজিতবাবুর কাছে তুমি কী চাও? অনঙ্গমোহন বললেন—সুমিতা? রঘুবংশম শেষ করছ তো? সুমিতা বলল, প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ঊনবিংশ সর্গটি ছাড়া।

পঞ্চদশ সর্গে রামচন্দ্রের শম্ভুক শূদ্র বধটা ঠিক কেমন যেন লাগল। শূদ্র হয়ে তপস্যা করছিল বলে রামচন্দ্র তাকে মেরে ফেললেন। এর কি অন্য ব্যাখ্যা আছে?

অনঙ্গমোহন বললেন, জানি না।

সুমিতা বল। সত্য কথা বল, তুমি অজিতবাবুর কাছে কেন যাও? শুধুই কি একটি চাকরির প্রত্যাশা? নাকি তুমি কামতাড়িতা? বল, সত্য বল।

কিন্তু অনঙ্গমোহন বললেন, সুমিতা, রঘুবংশের উপমা বিষয়ে বিশদ পড়বা। উপমাগুলি রত্নবিশেষ। তুলনাহীন। বিশেষত ঊনবিংশ সর্গ। ঊনবিংশ সর্গ পড়াননি অনঙ্গমোহন।

ঊনবিংশ সর্গে সম্ভোগ বিলাস। কুমুদবন যেমন সারারাত চন্দ্রকিরণে প্রস্ফুটিত থাকে, তেমনি সমস্ত রজনী রমণীসংসর্গে রত থাকতেন রাজা। রমণীসকলের সারা দেহে বসন্তের পুষ্পসজ্জার মতোই সজ্জিত থাকত সম্ভোগচিহ্ন। জলকেলিরত পীনস্তনী রমণীরা এখন উচ্ছল। সেইহেতু ছোট ছোট ঘূর্ণির সৃষ্টি হচ্ছে জলে। জলের এই ঘূর্ণি রমণীদের নাভি সৌন্দর্যের উপমান। অঙ্গনাদের নিতম্বের সিক্ত বসন এখন সংলগ্ন হয়ে আছে। রাজার রোমশ বক্ষ দর্শন করে অঙ্গনারা অনঙ্গতাড়িতা হলেন।

সুমিতা, হায়রে সুমিতা, অনূঢ়া বাঙালি-বালা তুমি বল, বল—কী কারণে…

অনঙ্গমোহন স্থির দৃষ্টিতে সুমিতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তন্বী, শ্যাম, শিখর দশনা, শ্রমভারে ঈষৎ ন্যুব্জা…

অনঙ্গমোহন অকস্মাৎ বললেন—সুমিতা, তোর বিবাহ দিব। বিবাহ দেব। বিবাহ দিমু আমি।

সুমিতা সলাজ হেসে বলল, যাঃ।

এই যাঃ শব্দটি বিলাপধ্বনির মতো মনে হল অনঙ্গমোহনের। একটি সূক্ষ্ম আর্তনাদ। বয়ো গতে কিং বনিতা বিলাপং…

তারপর বললেন—সুমিতা, পাপিষ্ঠা, তুই আর যাস না। ঐ বাড়ি যাইস নারে মাইয়া, কাম নাই। আমি তোর কাছে আইস্যা—আইস্যা…

উঠে দাঁড়ালেন অনঙ্গমোহন। ঘুরে দাঁড়ালেন। নিভন্ত চিতায় শেষ জল দিয়ে আর পিছন তাকায় না যেমন, তেমনই অনঙ্গমোহন বললেন, কাল শিখার মা আগুন দিছে গায়ে। শুধু তোর জন্য…পাপিষ্ঠা…

এই কথাটি বলেই অনঙ্গমোহন নেমে আসেন, পেছনে তাকান না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *