খেলোয়াড় ও বাঙলা

খেলোয়াড় ও বাঙলা

আমাদের ক্রীড়াজগতটি বিস্ময়কররূপ ঔপনিবেশিক;- এর কারণ সম্ভবত ইংরেজি-খেলাধুলোয় আমাদের মাঠগুলো পরিপূর্ণ। যে-সব পত্রপত্রিকা পুস্তিকা প্রভৃতি বেরোয় ক্রীড়াজগত থেকে, তা সাধারণত মুদ্রিত হয় ইংরেজিতে; নিমন্ত্রণপত্রগুলো ছাপা হয় ইংরেজিতে; আর ক্রীড়াসংস্থাগুলোর নামগুলো তো ইংরেজির কোলাহলমুখরিত করতালি! কয়েকটি দলের নাম : “ভিকটোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, ব্রাদার্স, ফাইভ স্টার, বিডিআর, মোহামেডান, ওয়াপদা’; এগুলোর পাশে বাঙলা নাম পাওয়া যায় মাত্র একটি ‘আবাহনী’। সংস্থাগুলোর নাম ইংরেজিতে : ‘বাঙলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘অ্যামেচার রেসলিং ফেডারেশন’। খেলাধুলোর পরিভাষামাত্রই ইংরেজি : ‘শট, হেড, প্যানাল্টি, স্ট্রাইকার, হ্যান্ডবল, ড্র, হ্যাট্রিক, গোল, স্ম্যাশ, ফরোয়ার্ড, পাঞ্চ, ফ্রি কিক, স্টপার, বার’ প্রভৃতি। প্রতিযোগিতাগুলোর নাম ইংরেজিতে : ‘অ্যাপেক্স জুনিয়র ফুটবল টুরনামেন্ট’, ‘ফেডারেশন কাপ’, ‘পাইওনিয়ার লিগ’, ‘সুপার লিগ’, ‘মেট্রোপলিশ টেবিল টেনিস’ প্রভৃতি। বিভিন্ন রকম সাফল্যের নামও ইংরেজিতে : ‘চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ’; ব্যবহার সংক্রান্ত নামও ইংরেজিতে : “ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন কমিটি’, ‘গ্রাউণ্ড কমিটি’ প্রভৃতি। এ-রকম ইংরেজি- আগ্রাসনে আমাদের মাঠঘাঠস্টেডিয়ামগুলো পর্যুদস্ত। এ-এলাকায় ইংরেজির আগ্রাসন দিন দিন প্রবল হচ্ছে; আগে অনেক বাঙলা পরিভাষা প্রচলিত ছিলো বাঙলার গ্রামের মাঠগুলোতে, এখন সেগুলো ইংরেজিয়ায়িত হয়ে যাচ্ছে শহরের স্টেডিয়ামে এসে। ভলিবলে এক সময় ‘চাপ’ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো, এখন ওটির স্থান দখল করেছে ‘স্ম্যাশ’ শব্দটি। বাঙলার মাঠের অনেক খেলা— হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, ডাংগুটি— স্টেডিয়ামের দিকে আসছে; ভয় হয় এগুলোর নাম আর পরিভাষাও এক দশকেই হয়তো ইংরেজিয়ায়িত হয়ে উঠবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *