অধ্যায় ৫৭
অন্য কোনো মেয়ে হলে এতোক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো। শিয়া এখনও সচেতন আছে, আহত অঙ্গগুলোও এখনও অনুভূতিদের ঠিকমতো পাঠিয়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কে। ভাইয়ার খুনি অবশেষে কাজের কথায় এসেছে। একটি মেয়েকে চরমভাবে অসম্মান করার পর তার কাছে এই প্রশ্নগুলো চেপে যাওয়ার আর কোনো কারণ থাকতে পারতো না। বাঙালি মেয়েদের জন্য যেটুকুই ‘সব’, তা চলে যাওয়ার পর এসব আর এমন কি কঠিন প্রশ্ন!
শামসের মার্ডারের ব্যাপারে সে কতোটুকু জানে?
ফাহাদ হিল্লোলকে কি একাই খুন করেছে নাকি আর কেউ সঙ্গে ছিল?
শামস মার্ডারের সাথে ফাহাদ হিল্লোলের সম্পর্কটা সে কিভাবে খুঁজে পেয়েছে?
তাকে কে তথ্য দিচ্ছে?
শামস মার্ডারের রাতে একজন সাক্ষী ছিল, সে কে?
কার সাক্ষ্য থেকে ফোনকলগুলোয় সে ওই রাতের উক্তিগুলো নিখুঁতভাবে বলতে পেরেছে?
কে? কে? কিভাবে?
শিয়া সাধারণ বাঙালি মেয়ে নয়। অপরদিকে রেদোয়ান স্রেফ একজন ছাত্রনেতা। কারও ওপর অত্যাচার করা যে শিল্প হতে পারে তা সে জানে না। ব্যথা দেওয়ার জন্য সে যে পথ বেছে নিচ্ছে তাতে করে বন্দির মরে যাওয়ার কথা দ্রুত। মৃত মানুষ কথা বলতে পারে না। এই লাইনে ছাত্রনেতাটি প্রফেশনাল হলে শিয়ার কপালে দুর্ভোগ ছিল ঢের।
জায়গাটা মাটির নিচে, রেদোয়ানের কথা থেকে এটুকু বুঝতে পেরেছে সে। সম্ভবত পরিত্যক্ত কোনো গ্যারেজ। বেজমেন্ট ওয়ান। এখান থেকে চিৎকার করে গলা ভেঙে ফেললেও বাইরের কেউ শুনতে পাবে না। নিজের গলা ভেঙে কথাটার সত্যতা প্রমাণ করেছে শিয়া। বাইরের আলো-বাতাস এখানে পৌঁছাচ্ছে না, কাজেই কতোগুলো ঘণ্টা এখানে আটকে আছে তা জানার উপায় নেই। শিয়ার ধারণা, বাইরে রাত নেমে এসেছে।
বাম স্তনের ওপর কারও হাত এসে চেপে বসতে চোখ মেললো ও। এখনও অক্লান্তভাবে আলো দিয়ে যাচ্ছে এনার্জি বাল্বটা। ত্বক জ্বলে উঠলো স্পর্শে। ধর্ষণের পর তার গলাটা আবারও বেল্টে বেঁধে দেওয়ার দরকার মনে করেনি রেদোয়ান। মাথাটা তুলতেই বেশ পরিশ্রম করতে হলো শিয়াকে। নিজের নগ্ন দেহটা আরও একবার দেখলো, দুর্বল চিত্তের কেউ এই দৃশ্য দেখলে আগামি কয়েকমাস ঘুমাতে পারবে না নিঃসন্দেহে। গলার নিচ থেকে উরুসন্ধি পর্যন্ত এখানে ওখানে সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ, কাটা ক্ষতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচে। এর মধ্যে বাম স্তনবৃন্তের নিচ বরাবর ক্ষতটা বেশ গভির। এই মুহূর্তে ওখান থেকে রক্ত আর আনুসঙ্গিক তরল বেরিয়ে এসে রেদোয়ানের হাত মাখামাখি হয়ে গেলো। সবখানে বমির শুকিয়ে যাওয়া দাগ।
“তুই বুঝতে পারতেছিস না।” ওর মুখের কাছাকাছি মুখ এনে হিসহিস করে বলল প্রভাবশালী ছাত্রনেতা, “তোকে আমি মেরে ফেলতেছি। ভাইয়ের লগে খুব শিগগিরিই দেখা হইয়া যাবে তোর। জাত গোঁয়ার ফ্যামিলি মাইরি। বংশেই সমস্যা দেখা যায়।”
স্তনটা আরও জোরে চেপে ধরলো রেদোয়ান। ঝটকা দিয়ে বাম হাতটা আরও একবার ছুঁড়ে দিলো শিয়া। বেল্টের সঙ্গে অনবরত সংঘর্ষে ওখানে চামড়া ছড়ে গেছে। বিন্দু বিন্দু রক্ত বেরিয়ে বেল্টের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। জ্বলুনীটা শিয়া টের পাচ্ছে না এমন নয়, তবে শরীরের সবগুলোর মধ্যে একমাত্র ওই অংশের যন্ত্রণাই তাকে স্বস্তি দিচ্ছে। আরও একবার গায়ের জোরে দু-হাত ঝাঁকালো শিয়া
“তোর ভাইকে আমরা মারতে চাই নাই।” শুকনো হাতটা দিয়ে আরেকটা সিগারেট বের করে পকেটে প্যাকেটটা রেখে দিলো। তারপর আরেক পকেট থেকে একই হাত ব্যবহার করে লাইটার বের করে আগুন ধরালো। প্রতি বিশ মিনিটেই একবার করে সিগারেট ধরাচ্ছে সে, নেভাচ্ছে শিয়ার বুকে বা পেটে। ‘ওইদিন রাতে যখন আমরা ওরে ডাইকা নিলাম, আমাদের প্ল্যানের কোথাও তারে মাইরা ফালানো ছিল না। এভিডেন্স ফেরত পামু, সবকিছু ভুইলা যামু। কেস ডিসমিস। এসবের জন্য খুনখারাপীর দরকার পড়ে না। রফা করলেই হইয়া যায়।”
“ডান হাতটা শিয়ার বুক থেকে সরালো রেদোয়ান। রক্তে ভিজে জব জব করছে তালু। বন্দিনির তলপেটে হাতটা মুছে নিলো সে। ঘরের একমাত্র টেবিলের ওপর বসে আয়েশ করে সিগারেটে টান দিলো।
“গোয়ার্তুমি শুরু করলো খানকির পোলায়।” ধারাবিবরণী দেওয়ার ঢঙে বলে চললো রেদোয়ান, “বন্ধুদের না নিয়া সে যাবে না। আমরা যতোই কইলাম তাদের আমরা ছাইড়া দেবো, চুদলোও না আমাদের কথা। শেষে চেইতা গেলো তোমার বোকাচোদা ভাই। বলে কি না তার কাছে আরও অনেক অনেক কপি আছে। বন্ধুদের কিছু হইলে নাকি সে সবগুলা ব্যবহার করবে। খানকির পোলার সাহস দেখো।”
এখানে জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটা কথাও বলেনি শিয়া। যথারীতি চুপ করে থাকলো এবারও।
“সে ওইখানে গ্যাঞ্জাম না কইরা চুপচাপ কার্ডটা দিয়া চইলা যাইতে পারতো। তা না কইরা ফাঁপড় চোদালো সে। চোদানোই লাগলো তাকে! এইসব কি তোদের জেনেটিক নাকি? খানকির–” টেবিল থেকে ছুটে এসে গায়ের জোরে শিয়ার নাকে ঘুষি মারলো বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতা।”পুরা ফ্যামিলিটাই ঝামেলা কইরা গেলি। দরকার ছিল না কোনো। কোনোই দরকার ছিল না।”
শিয়ার নাকের হাড় ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে খুব সম্ভব। নিমেষেই রক্ত আর হাড়ের ভাঙা অংশ নিঃশ্বাস নেওয়ার উপায় রাখলো না আর। একবার কেশে উঠতেই বুক আর পেটে ছিটকে পড়লো রক্ত। এদিক ওদিক গড়িয়ে গেলো তারা।
রেদোয়ান ভ্রুক্ষেপও করলো না। টেবিলে ফিরে গেছে সে, যেন কিছুই ঘটেনি এভাবে সিগারেট টেনে যাচ্ছে।
“আমি এনজয় করি নাই এমন না। ভালোই লাগছে সেদিন। তোর ভাই হইলো দুই নাম্বার। এর আগে জবাই দিছিলাম শোয়েব পাটোয়ারিকে। গলা বেশি বড় হইয়া গেলে কাইটা ছোটো করে দিতে হয়। তোর ভাইরে জবাই দিয়া অবশ্য ওরকম মজা পাই নাই। শোয়েব পাটোয়ারি ছিল বিশাল লোক। শামসের মতো চিকনাচোদারে আসলে…”
কথা শেষ না করে উঠে দাঁড়ালো রেদোয়ান। সিগারেটটা হাতে ধরে খুব কাছ থেকে দেখলো শিয়ার নগ্ন দেহ। সবখানেই কম বেশি রক্তাক্ত দেহটা। এর মধ্যেও গভির নাভিটা বেশ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। সরাসরি সেখানে সিগারটটা চেপে ধরলো রেদোয়ান। হিসহিসে একটা শব্দ করে নিভে গেলো সিগারেট। ঘরটায় আগে থেকেই চামড়া পোড়ার উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে আছে। এই সিগারেট নেভানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে মাংসপোড়া গন্ধে ভরে গেলো পরিবেশ। তাতে করে রেদোয়ানের বিশেষ কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলো না। সিদ্ধ মুরগির মতো ছটফট করতে থাকা মেয়েটা তার অভিব্যক্তিতে পরিবর্তন আনতে পারছে না।
টেবিলের কাছে গিয়ে প্যান্টটা খুলতে শুরু করলো আবারও। এই নিয়ে শিয়াকে সে তিনবার ধর্ষণ করেছে। শুধুমাত্র এই কারণে উরুসন্ধিতে তেমন কোনো ভারি আঘাত করেনি জানোয়ারটা। এটা একটা কারণ, এখনও অত্যাচারের মাত্রা একজন অনুশীলন সমিতির সদস্যের জন্য সহ্যক্ষমতার মধ্যেই আছে। এরকম একটা ভয়ানক মার খাওয়ার পর আর যে কেউ কথা বলতে পারবে না, তবে ও চাইলে এখনও কৌতুক ছুঁড়তে পারবে।
প্রথমবারের মতো রেদোয়ানের পুরুষাঙ্গটিকে নিজের পায়ুতে অনুভব করলো শিয়া, আর প্রথমবারের মতোই মুখ খুললো সে।
“আমার ব্যাগের ভেতর একটা পেন্সিল ছিল। ওটা কোথায়?” কণ্ঠে যন্ত্রণার কোনো চিহ্ন নেই। নিরুত্তাপ ভঙ্গি। যেন তাকে কেউ কুরিয়ার রিসিভিং পেপারের নিচে সাইন করতে বলেছে আর সে একটা পেন্সিল চাইছে।
রেদোয়ান তখন পুরোপুরি বন্দিনির ভেতর ঢুকে পড়েছে। বিভ্রান্ত হয়ে গেলো সে।
“মুখে বল। লিখে দেওয়ার কোনো দরকার দেখতেছি না।” শিয়ার দুই উরু শক্ত করে চেপে ধরতে রেদোয়ানের রক্তমাখা হাত ঘিনঘিনে একটা অনুভূতিয় ফেলে দিলো ওকে।
ঐটা দিয়ে আমাকে রেপ করতে বলতাম। তোরটা থেকে অনেক মোটা হবে আমার পেন্সিল।” শান্ত মুখেই কথাটা শেষ করলো শিয়া।
রেদোয়ানের মুখটা বেগুনি হয়ে গেলো নিমেষেই। মেয়েটাকে সে প্রায় মেরে ফেলেছে, এখন তার উচিত ছিল রেদোয়ানের উরুসন্ধিতে আছড়ে পড়ে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। সেখানে মাগি তার পৌরুষ নিয়ে খোঁটা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে কি করে?
বলে যাচ্ছে শিয়া, “আমার বুক থেকে পিনটা খুলে নিয়েও ঢুকাতে পারিস, তাও মনে হয় খানিকটা আরাম পাবো। এতো চিন্ত্র নিয়ে বাঁইচা আছিস কি করে? তোর তো লজ্জাতেই মরে যাওয়া উচিত।
বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো এবার রেদোয়ান, বন্দিনীর গলা টিপে ধরতে চাইলো। চাইলো প্রবল চাপে মেয়েটার কণ্ঠার হাড় ভেঙে দিতে। বাতাসের অভাবে চোখ উল্টে যাওয়া দেখতে, গালের শ্যামভাব কেটে গিয়ে কালো হয়ে ওঠা অনুভব করতে, চোখের তারা থেকে জীবনের শেষ চিহ্নটাও নিভে যাওয়া প্রত্যক্ষ করতে। কিন্তু আজকের দিনে এই প্রথমবার কোনো কিছুই রেদোয়ানের পরিকল্পনা মতো হলো না।
শত্রুকে হাতের নাগালে পাওয়া মাত্রই এক ঝটকা দিয়ে বাম হাতটা বেল্ট থেকে রিভেট খসিয়ে বের করে আনলো শিয়া, তখনও দু-হাত বাড়িয়ে তার গলার দিয়ে এগিয়ে আসছে রেদোয়ানের ভারি শরীর। বেষ্টমুক্ত হাতটা প্রথমেই একটা পিস্টনের মতো আঘাত হানলো রেদোয়ানের নাকের ঠিক মাঝ বরাবর। হড়বড় করে রক্ত বেরিয়ে এলো দুই ফুটো থেকেই, ঘুষির প্রচণ্ডতায় সামনে আর না ঝুঁকে শিয়ার পেটের ওপর স্থির হয়ে গেলে। শরীরটা, এক মুহূর্তের জন্য।
ওই এক মুহূর্তই যথেষ্ট ছিল শিয়ার জন্য।
বাম হাতের মুঠো ঘুষিটা আছড়ে ফেলেই পেছনে চলে এসেছে, মুঠোটা পুরোপুরি খোলার দরকার পড়লো না–ডান স্তনের ভোর থেকে এক টানে বের করে আনলো ছয় ইঞ্চি লম্বা পিনটা। মেয়েটার যন্ত্রণা। ড়ানোর জন্য নয়, বরং নরোম স্তনে পিন ঢোকাতে ভালো লাগে বলেই রেদোয়ান এটার ব্যবস্থা করেছিলো। কুখ্যাত ছাত্রনেতা কি জানতো একদিন বিকৃত রুচিই তার মৃত্যুর কারণ হবে?
পিন খুলে ফেলার কারণে স্তনের ক্ষতটা থেকে ছিটকে রক্ত বেরিয়ে আসছে, পাত্তাও দিলো না শিয়া। পিনের এক কোণ মুঠোর মধ্যে ধরে ছোট্ট একটা ছুরির মতোই চার ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিলো ভাতৃহন্তারকের গলায়।
ট্রেনিং ভুলতে বসেছে যেন সে, প্রথম ক্ষতটা রেদোয়ানের কণ্ঠার হাড় বরাবর ঢুকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিনটা বের করে আনলো শিয়া। বন্দিনির গলা বরাবর ঝাঁপ দেওয়ার পর তখনও এক সেকেন্ড পার হয়নি। প্রতাপশালী ছাত্রনেতা যখন বুঝতে পারলো কি ঘটেছে, তখন তার ঘাড়ের ভেতর দিয়ে পিনটা ঢুকে গলার চামড়া ফুটো করে সামনে থেকে বেরিয়ে এসেছে। সামনের আঘাতের প্রচণ্ডতায় পেছনে হেলে পড়ে শত্রুকে বাঁ হাতের নাগালের বাইরে যেতে দিতে নারাজ শিয়া। বাকি তিন হাত পা বাঁধা তার, এই মুহূর্তে শত্রু একবার প্রাণ নিয়ে নাগালের বাইরে চলে গেলে সব শেষ। রেদোয়ান টের পেলো পেছনের ধাক্কাটা তাকে আরও একবার বন্দিনির ওপর নিয়ে ফেলছে। এর মধ্যেই দুই বার রূপালি ঝিলিক লক্ষ্য করলো সে, তারপর আরও একবার।
তৃতীয়বারের মাথায় রেদোয়ানের এক্সটার্নাল জাগ্যুলার ভেইনের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের সংযোগ করে দিতে পারলো শিয়া। নিমেষে পিচকিরির মতো বাইরে ছিটকে এলো রক্ত। রেদোয়ান ততোক্ষণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে শিয়ার মুক্ত বাম হাতটার দিকে।
শত্রুর প্রতিরক্ষা পড়ে নিতে মুহূর্তও লাগলো না ওর। হাতটা চেপে ধরে নিজেকে আবারও রক্ষা করতে চাইছে নরকের কীটটা। অনুশীলন সমিতির গর্বিত সদস্যা এবার পিনটা পুরোপুরি ঢুকিয়ে দিলো রেদোয়ানের ডান হাতের তালুর ভেতর। তীব্র এক চিৎকার ছাড়লো দশাশই ছাত্রনেতা। বাম হাতটা ভারমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তর্জনী আর মধ্যমা তুলে ধরলো শিয়া। তারপর একই সঙ্গে তাদের ঢুকিয়ে দিলো রেদোয়ানের দুই চোখের মধ্যে। নরোম আর চটচটে কিছুর ভেতর দিয়ে ওর ধারালো নখগুলো পিছলে ঢুকে গেলো। অনুভূতিটা শিয়ার কাছে অপরিচিত নয়, খোসা ছাড়াতে গিয়ে ভুলবশত: হাতের মধ্যে লিচু গলে গেলে এমন লাগে।
গগণবিদারী চিৎকারটা বোধহয় মাটি ভেদ করে বাইরে চলে যাচ্ছে। শির কানে তখন ওই চিৎকার তোলার চেয়েও বড় কাজ ছিল। চোখ থেকে আঙুল বের করে ছটফট করতে থাকা ছাত্রনেতার ডান হাতের তালু থেকে পিনটা খুলে নিলো সে। এবার আর গলার ভেতর পিন না ঢুকিয়ে আড়াআড়ি টানলো ওটাকে। রেদোয়ানের তীব্র চিৎকারের মধ্যেও চড় চড় জাতীয় বিচ্ছিরি এক শব্দ শোনা গেলো। সেই সঙ্গে চর্বি আর মাংসসহ ফাঁক হয়ে গেলো ছাত্রনেতার ঘাড়ে-গর্দানে গলাটা।
গল্পকারদের ভাষায় এরকম সময় নাকি মৃত ভাইয়ের অসহায় মুখটা ভেসে ওঠে প্রতিশোধগ্রহণকারীর মনের পর্দার। নাটুকে কোনো উক্তিও তারা ঝেড়ে দেয় তখন-অনেক বইয়ে এমনটা পড়েছে শিয়া। তবে তার ক্ষেত্রে এসব কিছুই হলো না।
তার চোখের সামনে তখন ছিল উষ্ণ রক্তের ফোয়ারা। রেদোয়ানের গলা থেকে বেরিয়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো ওর মুখ, গলা, বুক। শিয়া তখন প্রাণভরে সেই দৃশ্যটাই দেখে যাচ্ছিলো।
*
জাহিদের ওখানে আসরটা আজ জমেছিলো বেশ। নিয়মিতরা প্রত্যেকেই উপস্থিত ছিল, শামীম আর মুহিবকে দেখে তাদের কেউ অবাক হলো না। এমন একটা ঘটনার পর তারা অবশ্যই এমন এক আসরে এসে বসার ইচ্ছে করতে পারে। মুহিবকে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি। মদ বিতরণের সময় একটা প্লাস্টিকের গ্লাস তার জন্যও বরাদ্দে জুটলো। ওরা প্লাস্টিকের গ্লাসগুলো তুলে ধরে বলল, “লিটুর জন্য!”
গাঁজার পালা এলে মুহিব নিজের আগ্রহেই হাত বাড়িয়ে নিলো। নতুন একটা ধরণ তার পছন্দ হলো বেশ। ‘নিমাই’ করার পর দ্বিতীয় ধাপেই শামীমের উইকেট পড়ে গেলো। ছাদে বসে নাক ডাকাতে শুরু করলো সে।
রাত তিনটায় আসর ভাঙলো। এটাকে অবশ্য ঠিক আসর ভাঙা বলে না। তিনজন বমি করে নেশা কাটিয়ে ফেললো, সাতজন পড়লো ঘুমিয়ে। মুহিব আর জাহিদ আচমকাই লক্ষ্য করলো, তাদের দুইজন বাদে আর সবার ‘উইকেট’ পড়ে গেছে। অগত্যা জাহিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে এলো মুহিব।
পেটে কিছুটা মদ পড়ার পর থেকেই লিটুকে সমানে গালি দিয়ে গেছে ওরা সবাই। এই সময় ওর এভাবে চলে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। আজকে মদ আর গাঁজার পেছনে দৌড়ানোর কারণটা কি? নিজেকে প্রশ্ন করে সন্তোষজনক কোনো উত্তর পেলো না মুহিব। সম্ভবত জগৎসংসারের প্রতি ক্রোধ, কিংবা সৃষ্টিকর্তার ওপর। লাথি মেরে রাস্তা থেকে একটা ইট সরিয়ে দিলো সে।
ভিসির বাসার সামনে এসে মুহিবের ইচ্ছে করছিলো থ্রি ইডিয়টসের মতো গেটের ওপর ছড়ছড় করে ভারমুক্ত হতে। জীবন তো আর চলচ্চিত্র নয়, একটু এগিয়ে গিয়ে মাঠের অপরপ্রান্তে এসে জিপার খুললো সে। গাছের গোড়ায় জলত্যাগ করতে করতে বিড়বিড় করে গালি দিলো গাছটাকে। এই গাছ তার জীবনে কম ঝামেলা আনেনি।
সেদিনও এখানটায় নির্জন ছিল বলে সে দুঃখবিলাস করতে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে শুতে এসেছিলো। আজও জায়গাটা নির্জন, মূত্রবিসর্জনের জন্য চমৎকার। এতো ঝামেলা হওয়ার কথা ছিল না তার জীবনে। সে একজন অতিসাধারণ ছাত্র, কলেজ জীবনে যার কিছু বেপরোয়া বন্ধু ছিল। সে বিশেষ কিছু নয়। তারপরও একটা বড় ধরণের ঝামেলার যবনিকা টাকার সিদ্ধান্ত কেন তাকেই নিতে হবে?
শামসের লাশটা যেখানে পড়েছিলো ঠিক ওখানেই দাঁড়ালো মুহিব। হাতে সিগারেট। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শুয়ে পড়লো লম্বা হয়ে। মাটিতে রক্তের গন্ধ খুঁজলো শুয়ে শুয়ে। নেই। এতো মাস পর থাকার কথাও নয়। বরং কেমন যেন শুকনো গোবর আর মাটির সোঁদা গন্ধের এক মিশ্রণ আছে সেখানে। স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রচুর গবাদি পশু চড়ে বেড়ায়। এসব বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেও লাভ হয়নি কোনো।
টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো মুহিব। বাকিদের মতো তার ‘উইকেট না পড়লেও’ সোজাসুজি হাঁটতে পারছে না এখন। সেই চেষ্টাও করে দেখলো সে। একটা সরলরেখায় হাঁটার চেষ্টা করলো। হলো না। একবার ডানে আরেকবার বামে চলে যাচ্ছে অজান্তেই।
ডান বাম করতে করতে কয়েকটা সিঁড়ি ভাঙলো অবিচল। শেষের দিকে প্রায়ই পা বেঁধে যাচ্ছিলো সিঁড়িগুলোয়। একবার মনে হলো এই ঝক্কির দরকার নেই। বার বার হোঁচট খেয়ে ওপরে না উঠলেই বা কি? আবার মনে হচ্ছে এর প্রয়োজন আছে। ওপরে ওকে উঠতে হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ বাকি থেকে গেছে। একমাত্র ওপরে গেলেই সেটা করা সম্ভব। কিন্তু কাজটা কি তা আর মনে করতে পারলো না মুহিব।
খয়েরি দরজাটায় ব্যস্ত হাতে নক করার সময়ও চিন্তাগুলোকে একত্রীভূত করতে পারেনি সে। ভেতর থেকে কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। রাত চারটায় তাকে দেখে একটুও বিরক্ত হলো না-একটু সরে ভেতরে ঢোকার জায়গা করে দিলো বরং।
টলতে টলতেই জাকির টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মুহিব।
“গিভ মি দ্য গান।” পরিস্কার ইংরেজিতে বলল সে, “আই নিড টু শুট সামওয়ান রাইট নাউ।”