কুকুরদল – ৫৩

অধ্যায় ৫৩

বাসার পরিবেশ আজকে আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। অনেকদিন পর বাবার মুখে হাসি দেখতে পেয়েছে শিয়া। মা অনেকটাই রিকভার করেছেন গত কয়েক সপ্তাহে। গতকাল রাতে অনেকদিন পর প্রথমবারের মতো তিনি মনে করতে পেরেছেন তার একজন বড় ছেলে ছিল। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মহিলা। বাবার সঙ্গে মিলে তাকে সামলাতে হয়েছে শিয়ার। শামসের ছবিগুলো দেওয়াল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, গতকাল রাতে মায়ের অনুরোধে তাদের আবারও তুলে দেওয়া হয়েছে আগের জায়গায়।

প্রাথমিক একটা ভয় ছিল ঘুম থেকে ওঠার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে আসার। তবে তেমনটা ঘটেনি। আজকে সকালেও স্বাভাবিক আচরণ করেছেন মা। তিনি ধাক্কাটা সামলে ফেলেছেন। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটাই একটা ভালো খবর, অবশ্যই কিছুটা খারাপ না নিয়ে এটা আসেনি। পরিবারটি দ্বিতীয়বারের মতো একজন সদস্য হারানোর অনুভূতি ফিরে পেয়েছে। মায়ের কাছে ক্ষতটা এখনও টাটকা, তার কারণে বাকিদেরও একই রকম অনুভূতি ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা যেসব ভয়ঙ্কর আশঙ্কা করেছিলেন তাদের কোনোটা মায়ের সাথে ঘটে যায়নি বলেই আপাতত সন্তুষ্ট রয়েছে শিয়া।

ভার্সিটি যাওয়ার জন্য ব্যাগটা ঠিকমতো গুছিয়ে নিলো সে। অনেক অনেক দিন পর ফ্রেশ একটা মাথা নিয়ে ক্লাস করতে পারবে আজ। পড়াশোনার ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো কতোদিন হবে? নয় মাস হতে চললো প্রায়। ভাইয়া মারা যাওয়ার পর থেকে এসবই তার কাছে অর্থহীন মনে হতো। খুনিদের বিচারের আওতায় আনার আগ পর্যন্ত পড়াশোনার মূল্য কি? সব আলোচনার শেষ লাইন ওটাই ছিল।

মুহিবের সঙ্গে শেষবার দেখা হওয়ার পর থেকে একটা চিন্তা সরে গেছে। আগামি দুই মাস সে ভাইয়ার খুনিদের নিয়ে ভাববে না। এর মধ্যে কোনো অগ্রগতির খবর না পেলে আর অপেক্ষা করবে না সে। যাদের এ পর্যন্ত ভাইয়ার খুনিদের মধ্যে সনাক্ত করা গেছে, রিভলভারটা নিয়ে বেরিয়ে সবাইকে গুলি করে মারবে। চুপচাপ আরেকজনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মতো মেয়ে ও কখনোই ছিল না। কিন্তু এখন তাকে মুহিবের কথামতো চলতে হচ্ছে।

ফাহাদ হিল্লোলের কেসটা অনেক বড় একটা কাজ ছিল। ওটা ওভাবে নামানো উচিত হয়নি। শিয়ার উচিত ছিল কাজটা একটা দুর্ঘটনার আদলে সাজানো। ‘এতো আলো এসে পড়তো না ঘটনাটার ওপর। খোলা পিস্তল নিয়ে গোলাগুলি শুরু করে দেওয়া কখনোই খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত ছিল না। টু মাচ হিট! অথচ অনুশীলন সমিতি তাদের মূলতঃ ওটার ওপরই দক্ষ করে তুলেছে। দুর্ঘটনার আদলে হিল্লোলকে সরাতে গেলে সময় লাগতো অনেক। তাছাড়া ওধরণের কাজগুলোর ব্যর্থতার হার বেশি। একবার ব্যর্থ হলে হিল্লোল গভির পানিতে ডুব দিতো। ওধরণের কোনো ঝুঁকি শিয়া নিতে পারতো না।

ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একবার আয়নার সামনে নিজেকে দেখে নিলো সে। হলুদ ফতুয়া আর কালো টাইট জিন্সে তাকে চমৎকার দেখাচ্ছে। চুলগুলো যথারীতি এলোমেলো, একটা চোখ ঢেকে রেখেছে। ডান কাঁধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। ইদানিংকালের মধ্যে পাওয়া ভালো খবরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হতে পারে সুভাষের প্রত্যাবর্তন। আগের মিশনটা সফলভাবে শেষ করে এসেছে সে, তারপর মাসখানেক উধাও হয়ে ছিল। গতকাল রাতের অন্ধকারে শহরে আবারও ফিরে এসেছে সুভাষ আজ বিকেলে ওদের দেখা করার পরিকল্পনাও হয়ে গেছে। আগামিকাল সকালে একসাথে ট্রেনিং সেন্টারে যেতে পারবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শিয়ার ঠোঁটের কোণে আলতো এক হাসি ঝুলে থাকে।

গ্যারেজে পৌছানো মাত্র শিয়ার মুচকি হাসিটা পাল্টে গেছিলো যন্ত্রণাকাতর এক অভিব্যক্তিতে। প্রথমে মেয়েদের একটা কাঁধব্যাগ, তারপর অনুশীলন সমিতির মূল্যবান একজন অ্যাসেট আছড়ে পড়লো মাটিতে। খালি সিরিঞ্জটার মুখ প্লাস্টিকের ক্যাপ দিয়ে আটকে পেছনের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো রেদোয়ান। একই কায়দায় দারোয়ান ব্যাটাকেও অজ্ঞান করে তার খুপড়িতে ঢুকিয়ে রেখেছে সে। এবার অনায়াসে শিয়ার পাতলা দেহটাকে কাঁধে তুলে নিলো, পার্ক করে রাখা লক্করঝক্কর রেন্ট-এ-কারের গাড়িটার পেছনের সিটে শুইয়ে দিলো মেয়েটাকে।

আগামি চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে এর জ্ঞান ফেরার সম্ভাবনা নেই। অনর্থক বাঁধাবাঁধির ঝামেলায় গেলো না আর। গ্যারেজের বড় দরজাটা নিজেই খুলে ফেললো, তারপর ঐ ফোকড় দিয়ে গাড়ি বের করে এনে একটু দূরে পার্ক করতে হলো আবার। হা হয়ে খুলে থাকা গ্যারেজের দরজা খুব দ্রুত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা দারোয়ান আবিষ্কৃত হয়ে গেলে রেদোয়ানের পরিকল্পনায় সামান্য সমস্যা হবে। গাড়ি থেকে নেমে দরজাটা আবার লাগিয়ে দিলো সে। তারপর যেন কিছুই ঘটেনি এমন একটা যেভঙ্গিতে গাড়িতে ফিরে এলো, গন্তব্যস্থল সে আগেই ঠিক করে ফেলেছে।

পুরোনো গাড়িটা সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চললো সেদিকে।

*

মুহিবের ঘরে এসে দরজাটা ভিড়িয়ে দিলো ইলোরা। একে অন্যের দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থাকলো ওরা।

“সন্ধ্যাবেলা দৌড়ে এসেছিস কেন? কি হয়েছে?”

জবাবে বেশ জোরে ওর পেটে একটা ঘুষি মারলো ইলোরা। মৃদু গুঙ্গিয়ে বাঁকা হয়ে গেলো মুহিব। অতর্কিত এই আক্রমণ আশা করেনি। বড় করে শ্বাস নিতে নিতে সোজা হওয়ার চেষ্টা করছে, পরিস্কার দেখতে পেলো ইলোরা আগ্রহের সাথে তার যন্ত্রণাকাতর মুখটা দেখছে। সোজা হওয়ার সাথে সাথেই আরেকবার মারলো মেয়েটা, এবার সোলার প্লেক্সাসে। মুহিবের দম পুরোপুরি বেরিয়ে যায় এবার। এক হাতে ইলোরার ডানহাতটা ধরে ফেললো প্রথম সুযোগেই, “কি শুরু করেছিস?”

“তোর জন্য,” হিসিয়ে উঠলো ইলোরা, “তোর জন্য আজকে আমার এই অবস্থা। মাদারচোত তোফায়েল আজকেও আমাকে হল থেকে বের করে নিয়ে গেছে। কোথায় নিয়ে গেছে বল তো?”

এখনও দম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে মুহিব, “কোথায়?”

“চরের মাঝখানে। প্রেম উথলে উঠছে হারামজাদার।” বাম হাতে মুহিবের শার্টের কলার চেপে ধরলো মেয়েটা, “ওখানে নিয়ে আমাকে কি করেছে জানতে চাইবি না?”

ভয় পেলেও প্রকাশ করলো না মুহিব। ইলোরা ক্ষেপে গেলে সর্বনাশ। অবশ্য এখন যা চলছে তাতে করে সর্বনাশের আর কিছু বাকি নেই। তোফায়েলের মার খেয়ে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছে, এখন তার গার্লফ্রেন্ডের ধোলাই খেয়ে বেঁচে ফিরতে পারলে হয়।

“কি করেছে?” জানতে চাইতেই হলো মুহিবকে।

প্রশ্নটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো ইলোরা। বেমক্কা আরেক ঘুষি মারলো এবার সে, বাম হাত দিয়েই। চোয়ালের ওপর ইলোরার হাতটা মোটেও কোমল নারীহস্ত ছিল না। শক্ত মুঠোর আঘাতে মুহিবের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো রীতিমতো।

“কামড়ে আমার ঠোঁট কেটে দিয়েছে হারামজাদা। বুকে মনে হয় দাগ পড়ে গেছে। জানোয়ার একটা।”

মাথা ঝাঁকিয়ে ঘুষির প্রচণ্ডতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করলো মুহিব, “তোর হাতে তো ভয়ানক জোর। এই মারগুলো ঐ জানোয়ারকে মারলেও পারতি। আমাকে পেটাচ্ছিস কেন?”

“আমাকে লুকালি কেন এতোগুলো মাস?” এবার দু-হাতে ওর কলার চেপে ধরে ঝাঁকালো ইলোরা, “তুই সেই রাত থেকেই জানিস শামসভাইকে খুন করেছিলো তোফায়েল। অথচ আমাকে এতোগুলো মাস পর এসে সেটা বলেছিস। তোর জন্য আজকে আমাকে এসব ফেস করতে হচ্ছে।”

“আগে জানলে কি করতি?” ঝাঁকুনি থেকে নিজেকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করলো না মুহিব।

“জানোয়ারটাকে কাছে আসতেও দিতাম না।” দাঁত কিড়মিড় করে বলল ইলোরা, “এখন আমি সব জানি। সব। কিন্তু তারপরও তার সাথে আমাকে কেন লেগে থাকতে হবে? কেন, বল তো?”

কিছু বলল না মুহিব। এই প্রশ্নটা করলে আরও কিছু ঘুষি এসে আছড়ে পড়তে পারে।

“কারণ, এটা তোর সুবিশাল মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। তোর পরবর্তি নির্দেশ না পেলে আমি ব্রেকআপ করতেও পারবো না। বাহ!” দেওয়ালের সাথে ওকে চেপে ধরলো ইলোরা, রাগে চোখ জ্বল জ্বল করছে তার, “তোর জন্য আমাকে এসব সহ্য করতে হচ্ছে। তোকে আমি জীবনেও ক্ষমা করবো না।”

ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো মুহিব, “এতো সহজ ছিল না সবকিছু। হলে তো ওভাবেই কাজ করতাম। তোকে এতোগুলো মাস না বলার কারণে আমাকেও মূল্য চুকাতে হয়েছে। চাকু খেয়ে হাসপাতালে পড়ে থেকেছি, ওসবের দরকার কি ছিল আমার? পুরো বিষয়টাই কি ভীষণ সেনসিটিভ তা হয়তো তুই এখনও বুঝতে পারছিস না। ইচ্ছে করে তোকে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলিনি আমি, বরং এসব শুরু হওয়ার আগ থেকেই তোরা একসাথে ঘোরাঘুরি শুরু করেছিলি। তোকে আমি এরকম একটা জিনিসের মাঝখানে কোনোদিনও ইচ্ছে করে জড়াতাম না।”

কলার ছেড়ে ঘাড়ের পেছনে দু-হাত জড়িয়ে শক্ত করে তাকে আলিঙ্গন করলো ইলোরা, ফোঁপাচ্ছে এখন, “আমি জানি। আমার পাগল পাগল লাগতিছে। এরকম আর কয়দিন চালাবো আমি, বল তো? হারামজাদা যখন তখন আমাকে ডেকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবে আর তা চুপচাপ সহ্য করতে হবে আমাকে, কেন? তোর মাস্টারপ্ল্যানের জন্য? আমি মনে হয় আর পারবো না।”

চুপচাপ বান্ধবির চুলে হাত বুলিয়ে দিলো মুহিব। ইলোরা এখন মচকে গেলে হবে না, তাকে গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব দেওয়ার ইচ্ছে ছিল ওর। ধীরে ধীরে একটা হাত মেয়েটার কোমরে জড়ালো মুহিব। তারপর টিশার্ট সামান্য তুলে ত্বকে হাত রাখলো। মেরুদণ্ডের ঠিক ওপর, উষ্ণ কোমলতায় মেখে গেলো মুহিবের হাত। খুব ধীরগতিতে এবার একটা একটা শিরদাঁড়া বেয়ে বেয়ে ওপরের দিকে উঠিয়ে আনতে শুরু করলো আঙুলগুলো। কব্জির সঙ্গে বেঁধে গিয়ে টিশার্টটাও উঠে আসছে হাতের সঙ্গে, তবে ওরা দু’জনই সচেতনভাবে সেটা খেয়াল না করার ভান করলো।

মুহিবের কাঁধ থেকে মুখ সরিয়েছে ইলোরা, দীর্ঘ একটা মুহূর্ত একে অন্যের চোখের তারায় তাকিয়ে রইলো ওরা। তখনও উঠে চলেছে মুহিবের হাত। খানিক বাদেই থমকে গেলো ব্রায়ের হুকের সাথে বেঁধে গিয়ে। ধাক্কা দিয়ে মুহিবকে আরও একবার দেওয়ালে আছড়ে ফেললো ইলোরা, তারপর দুই গাল চেপে ধরে আক্রমণ করলো ঠোঁটে। পিঠ জড়িয়ে রেখেই মেয়েটার মুখের ভেতর নিজের জিহ্বা পুরে দিলো মুহিব, ইলোরার মিষ্টি জিহ্বা আর শক্ত দাঁতের গোড়াগুলোয় ঘুরিয়ে আনলো ওটাকে। মেয়েটার নিচের ঠোঁটে জিহ্বা এসে থামতে পরিস্কার অনুভব করলো ভেতরের দিকের কামড়ের গভির ক্ষতটা। ফুলে উঠেছে অনেকটাই, তোফায়েল হাতের কাছে তাকে পেয়ে কোনো দয়া দেখায়নি। দপ করে মুহিবের মাথার ভেতর কিছু একটা জ্বলে উঠলো।

ইলোরাকে একরকম টেনে সরাতে হলো নিজের ঠোঁট থেকে। ওর চোখের দিকে তাকালো মুহিব, “তোর সাথে তোফায়েল এমন ব্যবহার কবে থেকে করছে?”

অন্যদিকে তাকালো ইলোরা, “মাঝে মাঝেই করে। আজকের মতো ক্ষ্যাপাটে হতে আগে দেখি নাই অবশ্য। আমার মনে হয় শুয়োরটা এটা আরও বাড়াবে।”

“আমি দেখছি ব্যাপারটা। তুই ভাবিস না। আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না আমাদের। আমার ওপর আর কয়েকটা দিন ভরসা করতে পারবি?”

উত্তরটা এড়িয়ে গিয়ে আবারও কাছে এলো ইলোরা, নরোম কিছু চুমু খেয়ে ভিজিয়ে দিলো মুহিবের ঠোঁট। আগের উন্মত্ততা কমে এসেছে, শান্তভঙ্গিতে পিছিয়ে এসে টিশার্টটা পুরোপুরি খুলে ফেললো সে। ভেতরে গোলাপী বক্ষাবরণী, দু’হাত পেছনে নিয়ে একটু নাড়তেই ওটা খুলে মেঝেতে পড়ে গেলো।

“দ্যাখ।” নিচু গলায় বলল মেয়েটা।

মুহিব দেখতে পাচ্ছে পরিস্কার। ইলোরা অনেক ফর্সা, বাঙালিদের মধ্যে

যেমনটা সচরাচর চোখে পড়ে না। গলার নিচে ত্বক আরও উজ্জ্বল তার, রোদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার কারণে। মুহিবের ঘরের অল্প আলোও চকচকে বুক আর পেট প্রতিফলন ঘটাচ্ছে যেন। নিয়মিত শরীরচর্চার কারণে ইলোরার শরীরটা সুগঠিত। পেটে বাড়তি একরত্তি মেদ নেই, ভরাট স্তনজোড়া টানটান হয়ে আছে উদ্ধত ভঙ্গিতে। তবে বান্ধবির দেহসৌষ্ঠব নয়, মুহিবের চোখ গেলো গাঢ় কালো একটা কালশিটের ওপর। ডান স্তনবৃত্তের চারপাশে বিচ্ছিরি একটা দাগ ফেলে দিয়েছে ওটা, পুরুষালী কোনো হাত এর পেছনে আছে। তোফায়েলের ওপর ঘৃণাটা নিমেষে পাল্টে গেলো ক্ষ্যাপাটে ক্রোধে।

“আমি আর চালিয়ে যেতে পারছি না এসব, মুহিব।” করুণ কণ্ঠে বলল ইলোরা।

এক পা এগিয়ে এসে ওকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরলো মুহিব। খুব সাবধানে বুকে বুক মেশালো। চুপচাপ ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল ওরা অনেকক্ষণ। ইলোরার শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। শামীমের মতোই, বাড়তি কোনো সান্ত্বনা দিলো না তাকে। বাচ্চাদের মতো শুধু চেপে ধরে রাখলো নিজের সাথে। বৃথায় আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা। ওর দু’জনই জানতো, চাইলেও মুহিব ওকে তোফায়েলের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

“জানোয়ারটা তোর সাথে যা করেছে,” চিবিয়ে চিবিয়ে বলল মুহিব, “আমার সাথে, আর শামসভাইয়ের সাথে… সব হিসেব তাকে চুকাতে হবে। কথা দিলাম।”

মুহিবের শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলে দিলো ও, হাত বুলিয়ে খুঁজে নিলো পিঠের ক্ষতচিহ্নটা। অন্য হাত দিয়ে সন্তর্পণে স্পর্শ করলো মুহিবের কানের নিচের কাটাদাগ, গাল পর্যন্ত নেমে এসেছে। এটা প্ৰায় আয়রনিক ওদের দু’জনকে একত্র করতে আজকে বিশেষ সহযোগিতা করছে তোফায়েল নামক একজন নিষ্ঠুর ছাত্রনেতার রেখে যাওয়া ক্ষত। ত্বকের ওপর, হৃদয়ের গভিরে। নিশ্চুপ, অনেকটা কারফিউয়ের মতোই ওরা আরও একবার ডুবে গেলো একে অন্যের ঠোঁটে।

দশ মিনিট পর একবার শামীম এসে ওদের ডেকে গিয়েছিলো, কিন্তু কেউ দরজা খোলার মতো অবস্থাতে ছিল না সেদিন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *