উপসংহার
ওহ! সাংসদগণ, ভারত মাতার ভাস্করগণ,
আমাদেরকে আলোর দিকে চালিত করো, আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করো।
মাদের সৎ পরিশ্রম আমাদের আলোকবর্তিকা হোক,
যদি তোমরা কঠিন পরিশ্রম করো, তবে আমরা সবাই সমৃদ্ধির মুখ দেখবো
.
২০০৭ এ আমি অফিস ছেড়ে আসার আগে সাংসদদের সামনে আমি একটা ভাষণ প্রদান করেছিলাম। আমি বলেছিলাম আমার অনুভব অতি প্রাসঙ্গিক যা আমি আগেও বলেছি, কয়েকটা পয়েন্টও উল্লেখ করেছিলাম সেগুলো মনে রাখা প্রয়োজন। ভারতের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা স্বাধীন দেশ হিসাবে বিশ্বাসের বলে বলিয়ান। ১৯৫১ এ এই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধানের বিধিবিধানে জাতীয় ঐক্য, জাতীয় নিরাপত্তা, সমৃদ্ধির কথা ব্যক্ত করা হয়। একটা জাতি হিসাবে, আমরা যে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছি বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। আমাদেরকে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের জনগণের উন্নতির জন্য উন্নয়নের রূপকার হিসাবে নেতাদেরকে লড়াই করার জন্য একটা নতুন ভিশনকে সামনে রেখে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। উজ্জীবনী শক্তিতে উদ্দীপ্ত হয়ে আমরা পৃথিবীর উন্নয়নের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব
পার্লামেন্ট নিঃসন্দেহে ভারতের সর্বপ্রধান প্রতিষ্ঠান, প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের প্রতীক। জাতীয় রাজনীতিতে সংসদীয় গণতন্ত্রই হচ্ছে সরকার পরিচালনার বিশেষ পদ্ধতি, যার মধ্যে ভারতীয় সমাজের ঐতিহাসিক ধারার অনুষঙ্গ সুষ্ঠুভাবে প্রতিভাত। এই স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে টেকসই করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক অংশীদারিত্বকে বিস্তারিত করার সুযোগ আছে। যা হোক, আমার মনে হয়, একুশ শতাব্দীর উষালগ্নে আমাদের মহান প্রতিষ্ঠান পার্লামেন্ট অধিকতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যা ১৯৫১ এ এই প্রতিষ্ঠানটি জন্ম নেবার পর কখনো ঘটে নি।
আমরা যা পরিষ্কারভাবে দেখছি সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব লক্ষ্যণীয়। এই কারণেই যে চ্যালেঞ্জগুলো জাতির সামনে উপস্থিত সেগুলোকে মোকাবিলা করে আমি দেশকে ২০২০ এর মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আপনাদের সাথে শেয়ার করা জরুরি বলে মনে করি।
এখানে একটা বড় ধরনের আবেগ আর উপলব্ধি মনে জাগে যে ভারতের সরকার পরিচালনার অন্তর্মুখী আর বহির্মুখী পরিবেশ অতি দ্রুত আর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অখণ্ডনীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বিশেষ করে গত দুই দশকে। চ্যালেঞ্জগুলো জাতীয় সার্বভৌমত্ব, সংহতি আর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বর্তমান সময়কালে জটিলতা বৃদ্ধি পাবার ফলে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবক্ষয়ের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। সামাজিক আস্থার ক্ষেত্রে ভারতের শাসন পদ্ধতির উপর এক ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে।
সরকার ও পার্লামেন্টে যোগ্যতাসম্পন্ন ক্ষমতাবান, ও আশাবাদী নেতাদের উপস্থিতির জন্য ভারত সৌভাগের অধিকারী। স্বাধীনতার পর থেকে অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের বহুমুখী অর্জনের জন্য গর্ব করতে হয়। অনেকেই আশা করেন ২০৫০ এর মধ্যে ভারত বিশ্বের মধ্যে অর্থনীতিতে উচ্চ শিখরে উঠার ক্ষমতা অর্জন করবে। কিন্তু গণতন্ত্র কিংবা অর্থনৈতিক পুনরুত্থান ছাড়া তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অবিরত নজরদারী হচ্ছে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়। এটা সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু কার্যপদ্ধতির উপরই। আমরা অতীতের অর্জনগুলোকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে পারি না, আবার সাম্প্রতিক উন্নতিকেও ঠেলে ফেলে দিতে পারি না। সাম্প্রতিক উন্নতিই জানান দিচ্ছে এই পথেই আমরা আমাদের সমাজ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। স্বাধীনতা লাভের পর সরকারি এবং পাবলিক সেক্টরের বাইরেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। আমাদের পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্জীবন দানের মাধ্যমেই একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করাই এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকারি এবং পাবলিক সেক্টরের সর্বস্তরের আউটপুট সেভিং ও পাবলিক সেভিংয়েই শুধুমাত্র আমাদের উন্নতি যাচাই করলেই হবে না, গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক সার্ভিস যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রেরও অগ্রগতি যাচাই করতে হবে। বহু সংখ্যক প্রখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তিও পার্লামেন্টের কার্যবিধির উপর পড়াশোনা করে থাকেন। ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট কোন কোন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করে থাকে তা তারা পর্যালোচনা করে থাকেন। আমি যত্ন সহকারে ওইগুলোর উপর রিভিউ চালিয়ে দেখেছি যে তাদের বেশ কয়েকজনের মতামতের গুরুত্ব আছে।
জাতির উন্নয়নের জন্য পার্লামেন্টের কার্যকারিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পার্লামেন্ট হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই তার গ্রহণযোগ্যতা ও দায়দায়িত্ব আছে। সরকারি কাজকর্মের জন্য পার্লামেন্টকে অনেক সহযোগী ক্রিয়াকর্ম করতে হয়। উদাহরণ হিসাবে মোশনস অন দি ফ্লোর, ওভার সাইটিং পাওয়ার এবং কমিটি সিস্টেমের কথা বলা যায়। এই সহযোগী ক্রিয়াকর্মকে আরো জোরদার করা প্রয়োজন। আসল সত্যটা হলো ভারতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে গ্লোবালাইজিং করা একান্ত প্রয়োজন। ঋদ্ধ জাতি হিসাবে দুটো ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের ক্ষমতাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর তদারকির কারণে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে ভারতীয় পার্লামেন্ট অন্যতম একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
অনেক রাষ্ট্রের মতো ভারতরাষ্ট্রও রেগুলেটোরি নেটওয়ার্ক ইলেকটেড ইস্টিটিউটস এর সাথে ক্ষমতা আদান-প্রদানের লক্ষ্যে পুনর্নির্মাণ করেছে। কয়েক বছর ধরেই এই বিধান বলবত আছে। ফলশ্রুতিতে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পার্লামেন্টারি সিকিউরিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্লামেন্টের কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সাংসদদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বিশেষ করে নতুন ও তরুণ সাংসদদের ক্ষেত্রে। সাংসদদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রথম লোকসভায় পাঁচটা রাজনৈতিক দল ছিল, আর চৌদ্দতম লোকসভায় রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসভায় রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় একটা সুবিধাও আছে। এ থেকে পার্লামেন্টে এবং নিজ নিজ পার্টিতে তাদের কাজের পরিধিকে বিস্তৃত করা সম্ভব হয়। সমষ্টিগত কাজের ফলে বাধা দূর হয়।
সাংসদরা পৃথক পৃথকভাবে পার্লামেন্টে ভালো কাজের দ্বারা সচেতনভাবেই পরিচিতি লাভ করেন এবং তাদের কস্টিন্সেসিতে রাজনৈতিকভাবে পুরস্কৃত হন, তা সেটা রাজনৈতিক দলই হোক বা কোয়ালিশনের ক্ষেত্রেই হোক। এতে তাদের মধ্যে ভালো কাজ দেখানোর উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতা লাভের পরের প্রথম দিকের দিনগুলোতে উত্তম পার্লামেন্টারি পারফরমেন্স দেখানোর নজির আছে। পার্লামেন্টকে আবারও সক্রিয় সরব হতে হবে এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অর্থনীতি, সামাজিক পলিসিকে সমন্বিত প্রয়াসের দ্বারা গ্লোবাল ইকোনমিকে জোরদার করতে হবে। পার্লামেন্টের কন্ঠস্বরকে জোড়ালো করার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত কোন উপাদান নাই। ইতিবাচক উৎসাহ, ভিশনারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করবে সাংসদদেরকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জিং এর জবাব দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সাংসদদের এগিয়ে আসার মাধ্যমেই।। প্রখ্যাত ব্যক্তিরা মতামত ব্যক্ত করেছিলেন কয়েক বছর পার্লামেন্টকে নিবিড়, পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কেউ কেউ বলেছিলেন প্রস্তাব বাস্তবায়নের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
১. রাজনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে
এ . ছোট পার্টির দ্বারা কোয়ালিশন সরকার অস্থিতিশীলের ভয় প্রতিরোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তার সাথে সাথে কোন পার্টি থেকে এক বা তার বেশি সদস্য দলত্যাগ করা রোধ করতে হবে। (ছোট পার্টির ক্ষেত্রে লোকসভায় ১০ কিংবা ১৫ সদস্য থাকতে হবে।) একবার কোয়ালিশনে যোগ দিয়ে তা প্রত্যাহার করে নিয়ে অন্য দলে যোগদান করা রোহিত করতে হবে আইন করে।)
বি. যখন সমস্ত পার্টি মিলে কোয়ালিশন গঠিত হবে তখন তার পার্লামেন্টারি কার্যবিধি পরিচালনার জন্য একটা সিঙ্গেল পার্লামেন্টারি পার্টি থাকতে হবে।
সি. মিনিস্টারিগুলোর বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা থাকতে হবে। মিনিস্টারদেরকে ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
ডি. সাংবিধানিক সংশোধনী মেজরিটি পার্টির সম্মতিতে করতে হবে।
ই. নির্বাচনের জন্য পাবলিক ফান্ডিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
এফ. হাউস ছাড়া লেজিসলেশন করা যাবে না।
জি. ‘ভয়েস ভোট’ অনুমোদন করা যাবে না।
এইচ. স্পিকার / চেয়ারম্যানকে ম্যান্ডেটের দ্বারা হাউসে বারবার বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে সাসপেন্ড কিংবা বহিষ্কার করতে পারবে।
২. প্রশাসনিক ক্ষেত্রে
এ. কেন্দ্রিয়করণ : অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য স্টেট থেকে কেন্দ্রে পাওয়ার ট্রান্সফার করতে হবে।
বি. বিকেন্দ্রিয়করণ : কেন্দ্র থেকে রাজ্যে ফাইন্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামগুলোকে ট্রান্সফার পাওয়ার এন্ড রেসপসিবিলিটি দিতে হবে।
সি. একটা কেন্দ্রীয় কমিশন স্থাপন করতে হবে সমস্ত রকমের কেন্দ্রীয় সাহায্য সম্পর্কিত কোন সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য।
ডি. ইউপিএসসি এর মতো বিশেষায়িত বডি গঠন করতে হবে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, রেগুলেটরি বোডি এবং পাবলিক এন্টারপ্রাইজ, ব্যাংক, আর্থিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কালচারাল ইনস্টিটিউট এ।
ই. সরকারের আওতাধীনে প্রাইভেট সেক্টরে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে।
এফ. জরুরি ভিত্তিতে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বাৎসরিক ফিজিকাল সার্ভিসে
জি. প্লানিং কমিশনকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
এইচ. মিনিস্টার লেভেলে দুর্নীতি রোধের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
আই. পরিশেষে, জুডিশিয়াল ক্ষেত্রে লিগ্যাল সিস্টেম সংস্কার সাধনের জন্য কোন ক্রমেই কালক্ষেপন করা যাবে না।
পার্লামেন্টের থাকতে হবে নতুন রূপকল্প ও নেতৃত্ব শুধুমাত্র আমাদের জাতিকে আলোকিত, ঐক্যবদ্ধ, একসূত্রে গাঁথা আর সুখ ও সমৃদ্ধি নয়। একটা জাতি হিসাবে দারিদ্রসীমা অতিক্রম করে সাফল্যের দ্বার প্রান্তে যখনই ভারত পৌঁছাতে পারবে তখনই ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশন সার্থক হবে। যদি পার্লামেন্ট আজকে এই মিশনকে সফল করার জন্য কাজ করে তবেই ২০২০ সালে ভারত উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে শক্তিশালী হবে এবং তাহলেই ভারত সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত হতে পারবে। ইন্ডিয়া ২০২০ মিশনের চ্যলেঞ্জগুলোকে উপলব্ধি করে গভার্ন্যান্স ও লেজিসলেটিভ ক্রিয়াকলাপ যথাযথভাবে পরিচালিত হওয়া একুশ শতাব্দীর জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। টেকনোলজিকাল রেভুলেশন, ন্যাশনাল ও গ্লোবাল কানেকটিভিটিকে কার্যকরীভাবে গ্রহণ করা একান্তই প্রয়োজন। পার্লামেন্টের সদস্যবৃন্দ অবশ্যই এই সববিষয়ে যুক্তিতর্কের সাহায্যে সৌহার্দপূর্ণ নেতৃত্বের দ্বারা জাতির জন্য এই ভিশনটাকে বাস্তবায়িত করতে পারেন, এই উদ্দেশ্য সাধনের কথাই সংবিধানে উল্লিখিত আছে ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশনে ভারতের জন্য একুশ শতাব্দীর পার্লামেন্টারি ভিশনটা হচ্ছে গ্লোবাল ধ্যানধারণার ভিত্তিতে তৈরি করা কলাকৌশল, সমন্বিত কাঠামো আর কাজের পরিকল্পনা। ভারত যদি ২০২০ এর মধ্যে ন্যাশনাল প্রোসপারিটি অর্জন করতে পারে তবে ২০৩০ এর আগেই ভারত উন্নত রাষ্ট্রের পর্যায়ে উন্নিত হবে।। এটাই হচ্ছে পার্লামেন্টারি ভিশন। এর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কোটি কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। আমাদের পার্লামেন্টারিয়ানদেরকে আজ সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন। আপনারা আমার সাথে এই বিষয়ে একমত হবেন যে এটা হচ্ছে আমাদের পার্লামেন্টারিয়ানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশন।
.
দুর্নীতি, গভার্ন্যান্স এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে পার্লামেন্টকে সদা জাগরুক থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্য সম্পাদন করতে হবে।
অতঃপর
আচার্য মহাপ্রাজ্ঞ সাক্ষাতের আগ পর্যন্ত সদাসর্বদাই আমার মনে অনুভূত হয়েছিল যে নিউক্লিয়ার ওয়েপন তৈরি করে মহান মানব জাতির বিরুদ্ধে কী যে কাজ করেছি! আচার্য মহাপ্রাজ্ঞ জ্ঞানের বিশাল আধার। যে তার সাক্ষাৎ লাভ করেছে তার আত্মাই পরিশুদ্ধ হয়েছে। ১৯৯৯ এর অক্টোবর মাসের এক মাঝরাত, আচার্য তার শিষ্যদের সাথে জাতি ও মানুষের কল্যাণে প্রার্থনা রত ছিলেন। প্রার্থনা শেষে তিনি আমার দিকে ফিরে আমাকে যা বললেন তাতে আমার মন প্রসন্ন হয়ে উঠলো। তিনি বললেন, ‘কালাম, তুমি তোমার সঙ্গীসাথীদের নিয়ে যা করেছ তার জন্য ঈশ্বর তোমাকে মঙ্গল করবেন। সর্বশক্তিমান তোমাকে দিয়ে বিশাল কাজ করাবেন। তুমি কেন আজ এখানে এসেছো? আমি জানি আজ আমাদের দেশ নিউক্লিয়ার নেশন হিসাবে গড়ে উঠেছে, আর তুমি যা করেছো তা অন্য কোন মানুষ কখনো করতে পারে নি। বিশ্বে নিউক্লিয়ারিং ওয়েপনের আজ জয়জয়কার। আমার অনুরোধ তুমি ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে বিশ্বশান্তির জন্য নিবেদিত হও যাতে নিউক্লিয়ারিং ওয়েপন অকার্যকর, গুরুত্বহীন আর রাজনৈতিকভাবে অনুপোযোগী হয়ে উঠে।’
আচার্য তার বক্তব্য শেষ করার পর হলঘরটাতে নীরবতা নেমে এলো। আমি আমার জীবনে এই প্রথম এই অনুরোধ শুনলাম, যা থেকে আমার মনে যেন এক ধরনের অনুরণনের সৃষ্টি হলো। তারপর থেকে আচার্যের সেই বার্তা আমার জীবন চলার পথের আলোকবর্তিকা হিসাবে দেখা দিল। এটা ছিল একটা বাস্তব চ্যালেঞ্জ, যা আমার জীবনে নতুন দিশা দেখালো।
.
আমি প্রথম অধ্যায়ে একজন তরুণী মেয়ের কথা বলেছি, যা থেকে আমি বিস্ময়াবিভূত হই। মেয়েটিকে দুরাবস্থা থেকে বাঁচাতে পেরে আমি খুশি হয়েছিলাম। আমি যাকে তাদের সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছিলাম তিনি ছিলেন একজন ব্যাংকার। তিনি মেয়েটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের অর্থনেতিক সমস্যা দূর করতে সচেষ্ট হন। পরবর্তীজীবনে মেয়েটির ভালো বিয়ে হওয়ায় সে ঘরসংসার করে সুখী হতে সক্ষম হয়। তার দু’একটা স্বপ্ন সার্থকতার মুখ দেখতে পাওয়ার খবরে আমরা খুশি হই।
পরিশিষ্ট – ১ – সাক্ষাৎকার
২০০৬ এ কয়েকটি রাজ্য সফর শেষ করে মিজোরামে পৌঁছালে এনইটিভি এর মনোরঞ্জন সিং আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। আমি কয়েকটি ইস্যু, বিষয় এবং কাজকর্মের উপর সাক্ষাৎকার দেই।
১. এই রাজ্যে আপনার উন্নয়ন মিশন অনুযায়ী যে কাজ চলছে তার উপর কি মনিটরিং করা হচ্ছে? ফলপ্রসূ মনিটরিং এর ব্যবস্থা কি আছে?
অভিজ্ঞতার আলোকে আমি রোডম্যাপ করে দিয়েছি। প্লানিং কমিশন, রাজ্য সরকার, সেন্ট্রাল মিনিস্টারির স্বাধীন মূল্যায়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ চলছে। আমার টিম বিনিদ্র রজনীযাপন করে উপস্থাপনা প্রস্তুত করেছে। আমি গুরুত্ব সহকারে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। অংশগ্রহণকারী সদস্যদেরকে আমার মিশনের উপর আলোচনার সুযোগ দান করেছি। আমার উপস্থাপনার পরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাজ্য অ্যাসেম্বলি আমার প্রস্তাবিত মিশন বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি রাজ্য সফর কালে বিশ্ববিদ্যালয়, চেম্বার অব কমার্স, অন্যান্য ব্যবসায়ী মহল এবং চাকুরীজীবী সম্প্রদায়ের কাছে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমি সর্বদাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মিশনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের কথা ব্যক্ত করেছি। উদাহরণ হিসাবে, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, বিহার মিশনের উপর ভিত্তি করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলেছে। কেরালাতে মিডিয়া এ সম্বন্ধে সরকার, বুদ্ধিজীবী এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়েছে। মিশন বাস্তবায়নের জন্য তারা অ্যাকশন প্লান গ্রহণ করেছে। এই সূত্রে মিডিয়াও সরকারের অন্যতম অংশীদার হয়েছে। আমি উত্তরপূর্ব ভারতের সিকিম, মিজোরাম,অরুণাচল প্রদেশ এবং মেঘালয়েও মিশনের কার্যক্রম চালু করার ব্যবস্থা করেছি। এই রাজ্যগুলো বিশেষভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃষির ক্ষতিরোধ কল্পেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২. বাৎসরিক ও পঞ্চবার্ষিক প্রকল্পের বাইরেও কি আপনি রোডম্যাপ দিয়েছেন? এই দুই প্রকল্পের মাঝে কি বিরোধ আছে?
আমরা যখন রোড ম্যাপ তৈরি করেছিলাম তখন সমস্ত মন্ত্রণালয়, রাজ্য সরকার এবং প্লানিং কমিশনের কাছ থেকে বিস্তারিতভাবে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছিলাম।। প্লানিং কমিশনের দ্বারা আটটা ক্রাইটেরিয়ার উপর একটা ডেভেলপমেন্ট রাডার প্রস্তুত করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ডেভেলপমেন্ট রাডার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন কম্পিটেন্সের লক্ষ্যে পৌঁছানো যাতে উন্নয়ন দ্রুততর করা যায়। আমাদের মিশনগুলোর ভিত্তি ছিল রাজ্যের কোর ও প্লানিং কমিশনের পঞ্চবার্ষিক প্রকল্পের সম্পূরক। আমাদের মিশনের প্রকল্পগুলো ছিল দীর্ঘ মেয়াদী। ২০১৫-এর আগে উন্নয়নের অগ্রগতি লক্ষ করা যাবে না। ২০২০-এর মধ্যেই রাজ্যগুলো উন্নয়নের গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
৩. রোড ম্যাপগুলো তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে আপনার বুদ্ধিদ্বীপ্ত জ্ঞান, আপনার ভিশন আর বিজ্ঞান ও টেকনোলজির বাস্তব জ্ঞান। আপনার সাফল্য কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নয়?
আমি ব্যক্তিগতভাবে যেকোন ভালো সিস্টেমের প্রতি আস্থাশীল। ভালো কিছু অবশ্যই টিকে থাকে। গত পাঁচ বছরে আমি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি প্ৰত্যক্ষ করেছি। আরো কয়েকটা সাফল্যও আমি প্রত্যক্ষ করেছি। আমি মনে করি, এর কারণ কয়েকটা স্টেট অ্যাসেম্বলি উন্নয়ন মিশন সম্পর্কে আমাকে আলোচনা করার সুযোগ দিয়েছিল। আমি যখন এক দুইটা অ্যাসেম্বলিতে এই আলোচনা শুরু করি, অন্য অ্যাসেম্বলি থেকেও ডাক আসে তাদের অ্যাসেম্বলিতে বক্তব্য পেশ করার জন্য। এ থেকে আমি দেখতে পাই যে ভারতীয় জনগণ ভারতীয় রাজনৈতিক সিস্টেমের প্রতি আস্থাশীল হতে শুরু করেছে। দেশের উন্নয়নের জন্য মিশন ভিত্তিক প্রোগ্রামগুলোর প্রতিও আস্থাশীল হতে শুরু করে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি, অ্যাসেম্বলিগুলোতে সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির অফিসের একটা প্রফেশনাল টিম থাকা প্রয়োজন। অবশ্যই এটাকে আপনারা বলতে পারেন রাষ্ট্রপতি অফিসের নতুন একটা উদ্যোগ। এটা নি:সন্দেহে একটা জাতীয় মিশনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা।
৪. সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং সরকারের দায়দায়িত্বের মধ্যে সুরক্ষার কথা বলা থাকলেও গত চার বছরে আপনি কি অনেক এলাকায় তা লঙ্ঘিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈরিতা লক্ষ্য করেন নি?
সিস্টেমটা খুবই ভালো। এর ফলে উভয়কে মিলেমিশে কাজ করার সুযোগ আছে। উভয়ের মধ্যে কোন প্রকার সমস্যার উদ্ভব যদি না থাকে কোন ব্যক্তির চেয়ে রাষ্ট্রকে বড় করে দেখা হয়।। দুটো গভার্নরের কনফারেন্স রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মাঝে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতে লক্ষ করা যায়।
৫. আপনার মধ্যে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল যখন আপনার সহি করার জন্য আপনার আপত্তিকৃত বিল আপনার কাছে ফিরে এসেছিল?
অফিস অব প্রফিট বিল সংক্রান্ত ইস্যুগুলো ছিল পরিষ্কার। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সংবিধানের বিধিবিধান অনুযায়ী। আপনি লক্ষ্য করবেন যে পার্লামেন্টের উভয় হাউসের দ্বারা জেপিসি গঠনের সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে পুনরায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। জনসাধারণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ মনোভাব ছিল আমাদের পক্ষে। জেপিসি গঠন করে পার্লামেন্টের সদস্যদের প্রফিট অব বিল এর সংগা প্রদান করার শর্তের গাইড লাইন পূরণ সাপেক্ষে আমি বিলে সহি করেছিলাম।
৬. আপনার প্রিয় ক্ষেত্র সায়েন্স ও টেকনোলজি। বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য আপনি তরুণদের মনকে জাগরিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থানে ক্যাম্পেন করেছেন, আপনার মতের সাথে মিলিয়ে সরকারের কি নতুন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
এ. সম্পূর্ণ প্রাথমিক আর সেকেন্ডারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিশুদেরকে সৃজনশীল করে গড়ে তোলার উপযোগী করে গড়তে হবে। অবশ্য রাজ্যের লেজিসলেটরদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পার্লামেন্ট শিক্ষা অধিকার বিল পাশ করেছে। বস্তুতপক্ষে, শিক্ষা অধিকার বিলে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষার বিধান রাখা হয়েছে।
বি. প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করা প্রয়োজন। সৃজনশীল সিলেবাস তৈরি করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষজ্ঞদলকে নিয়োগ করতে হবে। সৃজনশীল ক্লাস আর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগও করতে হবে।
সি. ইন্ডিয়া ২০২০-এর আলোকে সায়েন্স ও টেকনোলজিকে সামনে নিয়ে আসা উচিত হবে।
ডি. বিশ্ববিদ্য্যালয়ের কারিকুলাম রচিত হবে অবশ্যই গবেষণামূলক, তথ্যভিত্তিক, সৃজনশীল আর আবিষ্কারমুখী। তরুণদের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তি, শিল্প-বাণিজ্য উপযোগী এবং নৈতিক নেতৃত্বদানকারী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা ইন্ডিয়া ২০২০ এ তাদের অবদান রাখতে পারে।
ই. প্রতি বছর প্রায় ১,০০০ তরুণ ছাত্রছাত্রীদেরকে উৎসাহিত করতে হবে তাদের পেশাগত লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সায়েন্টিফিক রিচার্স কর্মে নিয়োজিত করার জন্য, আর তা হলেই তারা সায়েন্স ক্যাডার হিসাবে গড়ে উঠবে
৭. উদাহরণ হিসাবে বলতে হয় মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য প্রার্থী সংখ্যা বিপুল, অথচ বেসিক সায়েন্স কোর্সগুলো চলে ছাত্রছাত্রী ছাড়াই। ছাত্রছাত্রীদেরকে কি বেসিক সায়েন্স আর রিসার্চে উৎসাহিত করা উচিত নয়?
এ বিষয়ে আপনাকে অবগত করা যেতে পারে যে সরকার দুটো রাজ্যে ইনস্টিটিউশন অব সায়েন্স, রিচার্স এন্ড এডুকেশন কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা প্রয়োজন বোধ করছি গ্লোবাল হিউম্যান রিসোর্স ক্যাডার গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নেবার। তরুণদের জন্য সায়েন্স, টেকনোলজি এবং রিসার্চে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে ২০৫০ এর মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ভারতীয় তরুণেরা যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারে। আমি দেখতে পারছি ৩০ পার্সেন্ট ভারতীয় তরুণ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে। বর্তমানে ১০ পার্সেন্ট তরুণের এই যোগ্যতা আছে। শিল্প আর কৃষি সেক্টরে বাকী ৭০ পার্সেন্ট তরুণ উচ্চযোগ্যতা সম্পন্ন দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
৮. সরকারের ১০০ কোটি রুপি আইআইএসসি তে বিনিয়োগ করার প্রসংশনীয় উদ্যোগ সম্বন্ধে আপনার মতামত কি?
এটা সরকারের প্রসংশনীয় উদ্যোগ। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকার আরো অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি এইসব উদ্যোগের ফলে বিপুল সংখ্যক তরুণদের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ হবে।
৯. সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সায়েন্স ল্যাব থেকে দাবি করা হয় যে ন্যানোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, কার্বন কমপোজিট, মেটালরজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারতে বিশ্বমানের গবেষণা কর্ম চলছে। এ সত্বেও আমরা গত ষাট বছরে দেশে বড় কাজের সাফল্যের জন্য একটিও নোবেল পুরস্কার লাভ করা যায় নি। প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে সত্যি কি আমরা বিশ্বমানের গবেষণা চালাতে পারছি। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
মৌলিক গবেষণার সাফল্যের জন্য অধিকাংশ নোবেল প্রাইজই দেওয়া হয়। বর্তমানে মৌলিক গবেষণার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করা হয়। এখন আমাদের প্রয়োজন তরুণদের মধ্যে সৃজনশীল গবেষণা কর্ম পরিচালনা করার। বহুমুখী ক্ষেত্রে গবেষণা না চালিয়ে সুনির্দিষ্ট মৌলিক ক্ষেত্রে গবেষণা চালানো প্রয়োজন। আমি ন্যানোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির উপর কাজ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। ভারতে বড় ধরনের কাজের ক্ষেত্রও আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় ফান্ড সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। অধিক সংখ্যক রিচার্স স্টুডেন্টদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আবিষ্কারমূলক গবেষণার ফল পাওয়া যেতে পারে। কিছু কিছু গবেষণা কর্ম আছে যেগুলো থেকে পুরস্কার পাওয়া যেতে পারে। আমি এখানে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই গবেষণার পরিবেশের জন্য কেন সায়েন্টিফিক ম্যাগনানিমিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সায়েন্টিফিক ম্যাগনানিমিটি : নোবেল লরেটি প্রফেসর নোরম্যান ই বোরলাগ প্রখ্যাত কৃষি বৈজ্ঞানিক ও ভারতের প্রথম সবুজ বিপ্লবের একজন সহযোগী। ২০০৫ এর ১৫ মার্চ তিনি নতুন দিল্লির বিজ্ঞানভবনে এম.এস.স্বামীনাথন পুরস্কার গ্রহণ করতে এসে নব্বই বছর বয়সী প্রফেসর বোরলাগ সেখানে উপস্থিত প্রত্যেককে অভিনন্দিত করেন। তিনি তার বক্তৃতায় ভারতের কৃষি ভিত্তিক বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতির কথা তুলে ধরেন। তিনি গর্বের সাথে স্মরণ করেন যে পলিটিক্যাল ভিশনারী সি. সুব্রামনিয়াম ও ড. এম. এস. স্বামীনাথন ভারতের প্রথম সবুজ বিপ্লবের প্রধান স্থপতি। ড.ভারঘেস কুরিয়ে ভারতে শ্বেত বিপ্লবের ঘোষণা প্রদান করেন। তিনি শ্রোতাদের মধ্যে বসে ছিলেন। তিনি ড. রাজা রামকে গম বিশেষজ্ঞ, ড. এস. কে. বাসালকে ভূট্টা বিশেষজ্ঞ, ড. বি. আর. বারওয়ালকে বীজ বিশেষজ্ঞ হিসাবে চিনতেন ও জানতেন। তিনি বললেন এইসব বিশেষজ্ঞরা ভারত এবং এশিয়ার কৃষিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। ড. বোরলাগ তাদেরকে শ্রোতাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি আগে কখনো এমন দৃশ্য আমাদের দেশে দেখি নি। প্রফেসর নোরম্যান ই বোরলাগের এই কাজকে আমি সায়েন্টিফিক ম্যাগনিমিটি বলতে পারি।
১০. আপনি কি মনে করেন বন্ধু রাষ্ট্র সমূহে প্রেসিডেন্সিয়াল ভিজিটের মাধ্যমে কোন সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে নাকি সেগুলো শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ভিজিট ছিল?
প্রত্যেকটা সফরেরই ভিত্তি ছিল ভারত কী অর্জন করতে চায় সেটাই বলা। আমি চৌদ্দটা দেশ সফর করি এবং তাদের অ্যাসেম্বলি ও পার্লামেন্টে ভাষণ দেই। সফর গুলোর ফলে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় এবং সহযোগিতার দ্বার খুলে যায়। উদাহরণ হিসাবে আমি সাউথ আফ্রিকার প্যান আফ্রিকান পার্লামেন্টের ভাষণের কথা বলতে পারি। সেখানে আমি প্রাথমিকভাবে ৫০ মিলিয়ন ডলারের প্যান আফ্রিকান ই-নেটওয়ার্কের প্রস্তাব রাখি। সেই প্রস্তাব তারা গ্রহণ করে, আমি একে আমার সফরের প্রধান সাফল্য বলে মনে করি। আমার সুদান সফরের ফলে ওএনজিসি পাইপলাইন প্রোজেক্ট গৃহীত হয়। এর ফলে উভয় দেশই উপকৃত হয়েছে। আমার সফরের ফলশ্রুতিতেই ফিলিপাইন আমাদের দেশ থেকে জাত্রোফার চারা তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সেই চারা রোপন করে। এছাড়াও ফিলিপাইন ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির সাথে আমাদের একটা চুক্তি হয়। এর ফলে আমাদের জনগণ ক্রয়ক্ষম মূল্যে ওষুধ কিনতে পাচ্ছেন। আইটি, আইটিইএস আর বিপিও এর কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে এনএএসএসসিওএম ফিলিপাইনের সাথে কাজ শুরু করেছে। তানজিনিয়া সফরের ফলে আমরা বিপুল সংখ্যক হার্ট পেশেন্ট বিশেষ করে শিশুরা উপকৃত হয়েছে। আমি এটা জানিয়ে আমার খুশির কথা ব্যক্ত করতে পারি যে ওইসব শিশুদেরকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে আসা হয়। এর সাথে তানজিনিয়ার ডাক্তারও হৃদরোগের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ভারতে আসেন। সিংগাপুর ও সাউথ কোরিয়ায় আমার সফরে আমি একটি ওয়ার্ল্ড নলেজ প্লাটফরম গঠনের প্রস্তাব রাখি। এই দেশগুলো আমার প্রস্তাব বিবেচনা করতে রাজি হয়।
১১ আপনি আপনার টার্মে বেশ কয়েকটা প্রোজেক্ট বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। সেই সব প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন সম্পর্কে আপনি কি সন্তোষজনক মনোভাব পোষণ করেন? পিইউআরএ -এর মতো প্রোজেক্টের কথা বলতে পারি কি?
আমি বেশ কয়েকটি সন্দোষজনক প্রোজেক্টের কথা বলতে পারি।
গ্রাম উন্নয়ন : মিনিস্টিরি অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট ৩৩ পিইউআরএ ক্লাস্টার সারাদেশব্যাপী স্থাপন করেছে। গ্রাম উন্নয়নের জন্য পিইউআরএ বেশ কিছু প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংস্থায় কার্যক্রম চালু করেছে।।
এনার্জি : পাঁচটা রাজ্যে জাত্রোফা চাষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বায়োডিজেল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে।
নলেজ গ্রিড : ন্যাশনাল নলেজ কমিশন (এনকেসি) গঠন করা হয়েছে। সারাদেশব্যাপী কমপক্ষে ৫,০০০ একাডেমিক ইন্স্টিটিউশন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলোতে ১০০ এমবিপিএস নেটওয়ার্ক চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি : ১৫০ বছরের প্রাচীন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি চালু করা হয়েছে। আমি ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্বোধন করে ২০,০০০ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ভাষণ প্রদান করেছিলাম।
ভিলেজ নলেজ সেন্টার : গ্রামের নাগরিকদেরকে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসেস ডেলিভারির লক্ষ্যে ১০০,০০০ কমন সার্ভিস সেন্টার মিনিস্টারী অব কমুনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি(এমসিআইটি) সেবাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ই-গভর্ন্যান্স : জাতীয় পরিচয়পত্র চালু করা হয়েছে। জি২জি এবং জিংসি সেবার জন্য ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারত সরকার জিংসি ই- গভর্নেন্স সেবা এবং এসডবলুএএন (স্টেট ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক) স্থাপন করেছে।
১২ আপনি কি আপনার বিশাল মেধা, ধীশক্তি এবং আত্মত্যাগ মানুষের সেবায় নিবেদন করেছেন? গাইডিং সায়েন্স রিচার্স এন্ড টিচিং ডক্টোরাল কি স্টুডেন্টদের জন্য ব্যয় করতে চান? আপনি কি আপনার আগের শিক্ষকতায় আন্না ইউনিভার্সিটিতে ফিরে যাবেন?
আমি ২০২০ এর আগে ভারতকে উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি শিক্ষা আর রিচার্স এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবো। ছাত্রছাত্রী এবং তরুণদের সাথে আমি মতবিনিময় করেছি। আমি প্রত্যেক বছর সুযোগ পেলেই উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকাতে সময় কাটাই। এলাকার তরুণ সমাজের উন্নয়নের জন্য আমি কাজ করে যাব।
১৩. সুচারুরূপে আপনার কাজকর্ম চালাতে গিয়ে আপনি কখনো সবচেয়ে হতাশার মধ্যে পড়েন কিনা তা ব্যক্ত করবেন কি?
আমাদের দেশের ভবিষ্যত সম্বন্ধে আমি আশাবাদী। উন্নয়নই আমার ধ্যানজ্ঞান। যদি সব মানুষ একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের দেশের তরুণ সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যায় তবে ইন্ডিয়া ২০২০ এর লক্ষ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। আমাদের প্রত্যেককেই মানুষের চেয়ে দেশ বড় এই উদ্দীপনায় কাজ করে যেতে হবে। আমাদের দেশের ৫৪০ মিলিয়ন তরুণদের প্রতি আমার প্রগাঢ় আস্থা আছে।
১৪. আপনি উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো সফর করে তাদের উন্নয়নের জন্য রোডম্যাপের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় সব রাজ্যেই বহু বিদ্রোহী গ্রুপ সক্রিয় আছে, যারা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগের অভাবে তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশার জন্ম হচ্ছে। বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর এই তৎপরতার ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে উত্তর ভারতে ভোগান্তিতে পড়া মানুষদের জন্য আপনি কী আশার বাণী শোনাবেন?
উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো আমাদের জন্য অবদান আর চ্যালেঞ্জ দুটোই রেখে আসছে। আমি দেখতে পেয়েছি, জনগণ বুঝতে সক্ষম হচ্ছে যে বিদ্রোহীরা তরুণ সমাজের ভবিষ্যতকে বাধাগ্রস্ত করছে। উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর জন্য উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণ আত্মত্যাগ করার জন্য এবং উন্নয়নের বাধাকে অতিক্রমের উদ্দেশ্যে এক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে আমার মনে হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ম্যাসেজ পাঠাতে চাই রাজ্যের তরুণদের কাজ দেবার লক্ষ্যে উদ্যোগী প্রকল্প গ্রহণ করা হোক। বিদ্রোহী এবং সন্ত্রাসী ক্রিয়াকলাপকে নিমূল করার জন্য দক্ষ, জ্ঞানী তরুণ আর ব্যবসা- উদ্দ্যোক্তাদেরকে কাজের সংস্থান অবশ্যই করতে হবে।
১৫. উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সাথে পূর্ব ভারতের ব্যবসা, যোগাযোগ ও রেলপথ স্থাপন সম্বন্ধে আপনার মতামত কী? এগুলোর উন্নয়ন ঘটালে অর্থনীতি এবং চাকুরীর পথ সুগম হবে কি?
উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। পলিটিক্যাল সিস্টেম অতি তাড়াতাড়িই উত্তর ভারতের সাথে পূর্ব ভারতের ব্যবসা, যোগাযোগ আর রেলপথ স্থাপনের দ্বার খুলে দিতে পারে। আমি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃপক্ষের সাথে সীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পথ সুগম হলে তরুণদের চাকুরী প্রাপ্তি তরান্বিত হবে।
১৬. আপনি আপনার বক্তব্যে বলেছিলেন যে আমাদের এনার্জি সেক্টরকে প্রচলিত উৎস থেকে অপ্রচলিত উৎসে স্থানান্তর করা হবে রাষ্ট্রপতিভবন কি এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত রাখবে?
সবেমাত্র দেশ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সৌরশক্তি পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
রাষ্ট্রপতিভবন ৫এমডবলু সৌর প্লান্ট এর কথা বলেছে। মিনিস্টিরি অব পাওয়ার এবং মিনিস্টিরি অব নন কনভেনশনাল সোর্সেস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
১৭. এনার্জি সমস্যা মোকাবিলা কল্পে সারাদেশে সোলার এনার্জি, উইন্ড এনার্জি, টাইডাল এনার্জি ইত্যাদি উৎস থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যবস্থা নেবার পদক্ষেপ কি আপনি নিতে চাচ্ছেন?
আমার বক্তৃতায় আপনি লক্ষ্য করেছেন আমি পরামর্শ দিয়েছি সোলার এনার্জির উপর রিচার্স চালাতে যাতে সিএনটি (কার্বন ন্যানোটিউব) ভিত্তিক সোলার ফটোভোলটিক সেলস স্থাপন করে সোলার পাওয়ার প্লান্টের উন্নয়ন সাধন করা যায়। থোরিয়াম ব্যবহার করে নিউক্লিয়ার পাওয়ার এর ব্যবস্থা করার জন্যও আমি পরামর্শ দিয়েছি। যোগাযোগ সুবিধা আছে এমন এলাকাতে বায়ো-ডিজেল উৎপাদনের জন্য ব্যাপকভাবে জাত্রোফা গাছের চাষ করার পরামর্শও আমি দিয়েছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা এইসব ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করে চলেছেন।
তিনটি এনই রাজ্য সফরের ফলে আমার মধ্যে হর্টিকালচার, ফুড প্রসেসিং এবং গার্মেন্টস শিল্পের উপর বিশেষ আস্থা গড়ে উঠেছে। রাজ্যগুলো সফর করে ওই রাজ্যগুলোর তরুণদের সাফল্যের প্রত্যাশায় আমি বিশেষভাবে আশান্বিত হয়েছি। তরুণদের মধ্যে উন্নয়নের স্পৃহা জাগিয়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোর কথাও এসে যায়। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা বর্হিজগতের সাথে তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করতে পারে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে স্বাভাবিক নিয়মেই রাজ্যগুলোর উন্নতি ঘটবে।
পরিশিষ্ট-২ – মিশন মোড বাস্তবায়ন
আমার বক্তৃতায় অফিস অব প্রেসিডেন্ট স্থাপন সম্পর্কে আমি আগেই উল্লেখ করেছি। আমি পার্লামেন্টকে শক্তিশালী করার জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করলাম। আমি পরামর্শ দিলাম যে প্রত্যেকটা দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য/লক্ষ্য এবং চ্যালেঞ্জ সম্বন্ধে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে পার্লামেন্ট ও সরকারকে যৌথভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছি। প্রয়োজনীয় পাবলিক- প্রাইভেট পার্টনারসিপের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, প্রতিষ্ঠানের সীমা অতিক্রম না করে একটা সময়ের মধ্যে সম্পদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে ‘মিশন মোড’ বাস্তবায়নের জন্য ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে। আমি আশা করেছিলাম যে পার্লামেন্টের ধীমান সাংসদদের থেকে এইসব মিশনের কাঙ্খিত নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। এই পন্থায়, সমস্ত সাংসদরা পার্টি লাইন পেড়িয়ে কার্যকর গভার্ন্যান্স গড়ে তুলতে সমর্থ হবেন।
মিশন ব্যবস্থাপনার জন্য সাংগঠনিক কাঠামো
অগ্রবর্তী এলাকাগুলোয় মিশন ব্যবস্থাপনার জন্য মডেল গ্রহণ করা যেতে পারে। এ জন্য যা যা আমার কাছে দৃশ্যমান হলো-
* মনোনীত সাংসদরা মিশনগুলোর সমন্বয় সাধন করলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাবিনেট মিনিস্টার তার বিভাগের এখতিয়ার লঙ্ঘন না করে সরাসরি একই মিশনের জন্য নেতৃত্ব দান করবেন।
* ক্যাবিনেট মিনিস্টার মিনিস্টিরি / বিভাগীয় রিসোর্স এর প্রতিনিধিত্ব করবেন ‘মিশন মিনিস্টার’ হিসাবে। তিনিই পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন তার মিশনের বাৎসরিক কার্যক্রম ও আর্থিক বিষয়ে।
ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশনকে বোঝার জন্য ম্যাট্রিক্স স্ট্রাকচার অব মাল্টিপ্ল এর একটা ধারণামূলক স্কেচ নিম্নে দেওয়া হলো।
মিশন মোড ব্যবস্থাপনার জন্য একটা মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগের বাজেটের ১৫ থেকে ২৫ পার্সেন্ট প্রয়োজন, যা বিকেন্দ্রীয়করণ বা অভ্যন্তরীণ ব্যয় বরাদ্দের জন্য মিশনভিত্তিক হতে হবে। একটা নির্দিষ্ট মিশনের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের দায়দায়িত্ব থাকবে সেক্রেটারি / ডাইরেক্টর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার উপর। মিশন মিনিস্টার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসা কতিপয় জেএস / ডাইরেক্টরদের নিয়ে একটা টিম গঠন করে তাদেরকে মিশনের লক্ষ্য সুসম্পন্ন করার জন্য দায়িত্ব দিবেন। মিশন ব্যবস্থাপনা টিমের প্রত্যেক সদস্য প্রশাসনিকভাবে ক্যাবিনেট মিনিস্টারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, অন্যদিকে কার্যক্রমের জন্য দায়ী থাকবেন মিশন ম্যানেজারের কাছে।
এ থেকে সহজভাবেই দৃশ্যমান হবে যে সাংসদরা কার্যত মেট্রিক্স ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের থাকা প্রয়োজন হবে নিম্নোলিখিত প্রাতিষ্ঠানিক আদর্শ এবং দায়দায়িত্ব।
এ. রাজ্য কিংবা পার্লামেন্ট থেকে আসা মিনিস্টাররা মিশন মিনিস্টার হতে পারবেন।
বি. নির্দিষ্ট মিশন, প্রোগ্রাম এবং প্রোজেক্টের জন্য ক্যাবিনেট মিনিস্টারদের দ্বারা মিশন মিনিস্টাররা হবেন শীর্ষ ডেলিগেশন
সি. মিশন মিনিস্টারদের দ্বারা একটা নির্দিষ্ট মিশনের আনুভূমিক সমন্বয়ের সাথে ব্যবস্থাপনা টিমের মাধ্যমে বিভাগীয় সীমানা অতিক্রম করবে।
ডি. প্লানিং কমিশন ও প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/ বিভাগকে ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশন প্লানিং টিম গঠিত হবে।
ই. প্রত্যেক মন্ত্রণালয় এবং মিশন-প্লানিং টিম থেকে সচেতনভাবে কমপ্রিহেনসিভ ভিশন ২০২০ প্লান প্রস্তুত করতে হবে।
এফ. মিশনকে দেওয়া সম্পদগুলো আদ্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। মিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে পার্লামেন্ট ও সরকারের মেয়াদের ভিত্তিতে।
জি. ই-গভার্ন্যান্স নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হবে ব্যাপকভাবে।
এইচ. মিশন মিনিস্টাররা সরাসরি পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
আই. ক্যাবিনেট মিনিস্টাররা দায়বদ্ধ থাকবেন ক্যাবিনেটের কাছে, ক্যাবিনেট দায়বদ্ধ থাকবে পার্লামেন্টের কাছে।
জে. বিপুল সংখ্যক মিশন মিনিস্টার ইন্ডিয়া ২০২০ ভিশন মেট্রিক্স এর সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন। পার্লামেন্টের ভূমিকা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। সুনির্দিষ্ট মিশনগুলোর জন্য পাবলিক অফিসের সংখ্যাও বাড়বে।
.
গণতন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যা হোক, উন্নয়নের জন্য তাদের শুধুমাত্র যান্ত্রিক কলাকৌশল প্রদর্শন উচিত নয়। তাদের সফল ব্যবহার নির্ভর করে সামাজিক মূল্যবোধ এবং জনসাধারণের ফলপ্রসূ অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার কাঠামোর উপর দায়বদ্ধতার নিশ্চিতকরণের দ্বারা। তারপরই সময় আসে জাতীয় বিতর্কের জন্য পদ্ধতিগত পরিবর্তনের অনুঘটকরূপে।
—সমাপ্ত—