2 of 3

অমৃতের সন্ধানে

অমৃতের সন্ধানে

দেহ নয় মন—এই সত্যটি যাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁদের পক্ষেই এই পৃথিবীতে কিছু করা সম্ভব হয়েছে। মন এমন এক পাখি, যা এই দেহখাঁচায় বসবাস করলেও, খাঁচার অধীন নয়। সুস্থ দেহেই সুস্থ মনের অধিষ্ঠান। আবার মন সুস্থ না হলে দেহ সুস্থ হতে পারে না।

মন হলো গৃহস্বামী। গৃহস্বামীর ওপর নির্ভর করে গৃহের অবস্থা। দেহটাকে মন্দির করে রাখব, না আঁস্তাকুড়, তা নির্ভর করছে মনের ওপর। আগে চাই মনের স্বাস্থ্য। মনের তো আর পেশি নেই। ডাম্বেল বারবেল ভাঁজলে মাসকুলার বডি হতে পারে। ওতে মনের কিছু হয় না। মনে একটা তামসিক অহঙ্কার আসে মাত্র। মানুষকে শরীর দেখাবার ইচ্ছা করে। নিজের শরীরের ওপর প্রচণ্ড একটা মোহ আসে। তখন নিজেকে নিয়েই মসগুল। নিজেকে নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত। সর্বক্ষণের দুর্ভাবনা। এই বুঝি বুক কোলাপ্স করল! হাতের গুলি নেমে গেল থাই ঝুলে গেল। এগজিবিশনের শরীর নিয়ে মহাসমস্যা। ওই শরীর দেশের দশের কোন কাজে লাগে না। ওকে বলে তোলা শরীর। ওই শরীর কারোর বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে না।

সুস্থ মনকে বহন করার জন্য যে সুস্থ শরীরের প্রয়োজন, তা এগজিবিশনের শরীর নয়। সেই শরীর হবে প্রভুভক্ত। বিশ্বস্ত, কর্মক্ষম, সুপটু ঘোড়ার মতো। মন সেই ঘোড়ায় আরোহণ করবে। বীর মন পরিচালনা করবে সেই অশ্বকে।

এইরকম একটি শরীর ও মনের জন্য প্রয়োজন যোগ। পশ্চিমী দুনিয়া, যাঁরা পেশীর ব্যায়ামে বিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা যোগের পথ ধরেছেন। দেহের ভিতর দেহের বিভিন্ন কল ও কব্জার কাছে পৌঁছাতে পারে একমাত্র যোগ। বারবেল, ডাম্বেল, নানা যন্ত্রপাতি সব বাইরেটা নিয়েই ব্যস্ত। মানুষের শরীরের পাঁচটা ডেলিকেট যন্ত্র হলো হার্ট, লাংস, কিডনি, লিভার ও জয়েন্টস। আরেকটি সাঙ্ঘাতিক জিনিস হলো, বিভিন্ন গ্ল্যান্ডস। তার চেয়েও সূক্ষ্ম হলো মন বা ‘সাইক’। আমার বিশাল শরীর, রিভস বা স্ট্যালোনের মতো, অথচ আমি পৃথিবীর চাপে পরিবারের চাপে ‘সিজোফ্রেনিক’। ‘প্যারানয়েড’। কি লাভ আমার অমন শরীরে!

যেকোন মুহূর্তে আমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আমার লাংস তার স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে আমাকে অ্যাজমেটিক করে তুলতে পারে। লিভার ক্রমশই কৃশ হতে হতে, আমাকে ইনডাইজেশনের শিকার করে তুলতে পারে। আমার অর্থের অভাব নেই, ভোগের অভাব নেই, কিন্তু আমি? আমার হজমশক্তি নির্বাপিত। আমার কিডনি বিকল। সারা শরীর টক্সিনে ভরে উঠেছে। আমার সুগার। আমার হাইপারটেনসান। আমার থাইরয়েড কাজ করছে না। সারা শরীর ফুলে উঠেছে কোলা ব্যাঙের মতো। আমি আমার মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি, টেনশন আমাকে শেষ করে দিচ্ছে! আমার অগোচরে বেড়ে যাচ্ছে আমার শরীরের সেল ডিভিশন। আমি জানি না, ক্যান্সার এসে আমার কোনখানটা ধরবে!

হঠযোগ, রাজযোগে ছিল সব সমাধান। দুর্ভাগ্য আমাদের, ফুসফুস আমার, আমি শ্বাস নিতে শিখিনি। গ্ল্যান্ডস আমার, তার থেকে আমি শিখিনি সঞ্জীবনী অমৃত নিঃসরণ করাতে। আমারই জয়েন্টস আমার কথা শোনে না। আরথ্রাইটিস, অস্টিয়োম্যালাইসিসে আমি পঙ্গু হয়ে আসছি।

যোগ বলছেন, সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত উঠেছিল, সেই সমুদ্র হলো তোমার দেহাভ্যন্তর, অমৃত হলো প্রাণশক্তি। সেই প্রাণ হলো, তোমার শ্বাস তোমার দেহগত নির্যাস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *