অধ্যায়-৪ ইউসুফ-জুলেখার কাহিনীর জানা-অজানা অধ্যায়

অধ্যায়-৪ ইউসুফ-জুলেখার কাহিনীর জানা-অজানা অধ্যায়

রাজকুমারী রাঈলের ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে গেল মাঝরাতে। ঘুম ভাঙার কারণটা স্পষ্ট মনে পড়ছে। এক পরম সুদর্শন পুরুষ দেখা দিয়েছিল তার স্বপ্নে। প্রতি রাতেই সে একই স্বপ্ন দেখছে। এ লোকটির সাথে নাকি তার বিয়ে হবে!

রাজকুমারীর নাম রাঈল হলেও লোকে তাকে জুলেখা বা জুলাইখা বলেই ডাকে। তার বাবা তাইমুর আবার রাজা রাআ’বীল নামেও খ্যাত, মিসরের ওপরের দিকের এক আরব ভূমির রাজ্যের রাজা তিনি। তার একমাত্র কন্যা রাঈল তথা জুলাইখার নামডাক চারিদিকে অসম্ভব সুন্দরী হিসেবে।

প্রতি রাত্রের সুখস্বপ্ন ভেঙে যেতে লাগলো স্বপ্নপুরুষকে দেখে দেখে, সেখানেই তার প্রেমে পড়ে যায় জুলাইখা। জিজ্ঞেস করে বসে এক রাতে, “আপনি কে?” উত্তর এলো যে, তিনি মিসরের উজির। এরপরই আবার ঘুম ভেঙে যায়।

রাজকন্যার জন্য একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, সব প্রস্তাব সে প্রত্যাখ্যান করে দেয়। স্পষ্ট বলে দেয়, মিসরের উজির ছাড়া সে কাউকে বিয়ে করবে না। একগুঁয়ে মেয়ের কথা শুনলেন রাজা। প্রস্তাব পাঠাবার পর সেটি গ্রহণও করলেন মিসরের উজির। না দেখেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেল জুলাইখা। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বরের কক্ষে গিয়ে চমকে ওঠে সে। এ তো সেই লোক না, এ তো বয়স্ক একজন! এ কী করলো জুলাইখা? কেন আগে পরখ করে দেখেনি? এখন তার একগুঁয়ে বিয়ে তো সে নিজে ভেঙে দিতে পারে না।

এতক্ষণে বুঝে যাবার কথা, কোন কাহিনী বলছি। তবে অচেনা শুরু দেখে থমকে যাবার কিছু নেই। হযরত ইউসুফ (আ:) এর কাহিনীর পাঠকদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন ছিল, জুলাইখার ভাগ্যে কী হয়েছিল? জুলাইখার আসল পরিচয়ই বা কী? সেজন্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদীদের প্রধান গ্রন্থগুলো। দেখেছি পবিত্র কুরআন ও বাইবেল ছাড়াও অন্য কোথাও জুলাইখার কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় কি না। এবং ইউসুফ-জুলাইখার বিস্তারিত কাহিনীটা কেমন? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কুরআন এবং বাইবেলে জুলাইখা নিয়ে খুব কমই বর্ণনা আছে। এমনকি তার নামটিও উল্লেখ নেই। দুই জায়গাতেই তাকে আজিজ মিসরির স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। জুলাইখা নামটা আসলে মুসলিম ও ইহুদীদের সহায়ক ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নামহীনা এ নারীকে নিয়ে হয়তো এতটা আগ্রহ মানুষের থাকতো না, যদি না পারস্যের কবি নুরুদ্দিন জামি (১৪১৪-১৪৯২)-র কবিতা বিখ্যাত না হতো। তিনি তার হাফত আওরাং (সাত সিংহাসন) গ্রন্থে এ গল্প বলেন। এরপর থেকে মুসলিম বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা হয়ে যায় আকাশচুম্বী। আরবি, ফারসি, তুর্কি, উর্দু, হিন্দি, এমনকি বাংলাতেও অনুবাদ হয় সেটি। যেমন- পঞ্চদশ শতকে শাহ মুহাম্মাদ সগির বাংলায় ইউসুফ-জুলেখা রচনা করেন। তিনি ছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজকবি। সুলতানের অনুরোধেই তিনি এটা লিখেছিলেন। অবশ্য তিনি কবিতার শেষে গিয়ে অদ্ভুত কিছু সংযোজন করে দিয়েছিলেন। এরপর আব্দুল হাকিব, শাহ গরিবুল্লাহ, গোলাম সাফাতুল্লাহ, সাদেক আলী ও ফকির মোহাম্মদও একই বিষয়ে লিখে যান।

কিন্তু লোকসমাজে এটি প্রেমকাহিনী নামে পরিচিতি পেলেও, আসলে এটি একপক্ষীয় রোমান্সের একটি উদাহরণ। এ কাহিনীর যে অংশ পাঠকেরা এখানে পড়লেন এটিও আসলে লোককাহিনী, যার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। তবে মূল কাহিনী যা কুরআন ও বাইবেলে রয়েছে তার আগে, পরে ও মাঝের কাহিনী বর্ণনার জন্য আবির্ভাব হয় আরব দেশীয় ও ইসরাইলী লোককাহিনীর, যা ‘কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। তবে কুরআন ও বাইবেল থেকে মূল বর্ণনা করবার সময় আমরা উল্লেখ করে নেব। আর, অধিকতর নির্ভরযোগ্যতার জন্য আমরা কুরআনের আয়াতও উল্লেখ করব। এছাড়াও সাহায্য নেয়া হবে তাফসিরে ইবনে কাসিরের। এ কাহিনীর শেষাংশে আরেকটি অবিশ্বাস্য কাহিনীও আমরা বলব যেটির সূত্র যথাসময়ে উল্লেখ করা হবে।

তবে অনেকেই ভাবতে পারেন, ইসলামি একটি কাহিনীর আগে-পরে লোককাহিনী কেন জুড়ে দিচ্ছি আমরা? এর কারণ হাজারো পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের জানার আগ্রহ মেটানো। অতিরিক্ত অংশ নিয়ে এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, বরং এ বিষয়ে পৃথিবীতে কী কী বর্ণনা রয়েছে সেটা জানাই মুখ্য। তবে আর দেরি কেন? চলুন ফিরে যাওয়া যাক গল্পটির মাঝে।

কেন জুলেখা আগে পরখ করে দেখেনি? এখন তার একগুঁয়ে বিয়ে তো সে নিজে ভেঙে দিতে পারে না। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো বাসররাতেই জুলেখা বুঝে গেল তার স্বামী প্রজননে অক্ষম। তিনি সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের চেষ্টাই করলেন না। অথচ, স্ত্রী তার সারা মিসরে এমনকি সারা ভুবনে বিখ্যাত সুন্দরী।

নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরে এখানেই সংসার করতে লাগল জুলাইখা। নিজেদের সন্তান হবে না দেখে এক মেয়ে শিশুকে দত্তক নিলো তারা। নাম তার আসেনাথ।

সারা বাড়িতে অনেক চাকরবাকর, মোটামুটি চাকরদের পরিবারই প্রায় চল্লিশখানা। একেকজনের কাজ একেকরকম। আগেকার প্রাসাদসম বাড়িতে যেমনটা হত আর কী। তার উপর স্বামী বিশাল বড় পদে, মিসরের উজির। অবশ্য বাইবেল বা তাওরাতের আদিপুস্তক বলছে, তিনি ছিলেন প্রাসাদরক্ষীদের প্রধান, বা মিসরীয় সেনাবাহিনীরও প্রধান। কোথাও আবার বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ, তিনি যে উচ্চপদস্থ ছিলেন এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই। বাইবেলে তার নাম পতিফার, তাফসিরে কিতফির। ‘পতিফেরা’ নামের সংক্ষিপ্ত হিব্রু সংস্করণ পতিফার। পতিফেরা অর্থ ‘সূর্যদেবতা রা-এর উপহার’। এ থেকেই বোঝা যায় যে, তখন মিসরে দেব-দেবীর পূজো চলত পুরোদমে একেশ্বরবাদ তখনো সেখানে পৌঁছেনি।

এরকম একসময়, উজির একদিন বাজার থেকে ফিরে এলেন সাথে একজন দাসকে নিয়ে, মিসরের বাজারে তাকে বিক্রি হতে দেখেছিলেন তিনি। আরব ইসমাইলি বণিকদের থেকে তিনি তাকে কিনে নেন। ১৮ বছর বয়স তার। কুরআন অনুযায়ী, উজির জুলাইখাকে বলেছিলেন, একে সম্মান দিয়ে রাখতে। তাকে পালিত পুত্র হিসেবেও তিনি রাখতে চেয়েছিলেন।

লোককথা বলছে, বাড়িতে তাকে নিয়ে আসার পর জুলাইখা যখন তাকে প্রথম দেখল, তার চোখ আটকে গেল, ছানাবড়া হয়ে গেল। এ কী মানুষ না ফেরেশতা? এত সুন্দর কোনো পুরুষ হতে পারে? কিন্তু বিস্ময়ের আসল কারণ এটা ছিল না, কারণটা ছিল- এ যে তার স্বপ্নে দেখা সেই মানুষটাই! উজির ভেবে উজিরের দাসকে দেখেছিল জুলাইখা?

জানা গেল, দাস ব্যবসায়ীরা এক কুয়া থেকে তুলে এই হিব্রু কিশোরকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে। নাম তার ইউসুফ।

এমনিতেই জুলাইখার কামনা পূরণ হয়নি। তার উপর তার স্বপ্নপুরুষ তারই সামনে সারাদিন কাজ করে। তার বাসনা বাড়তেই লাগল। ইউসুফ (আ) এর পদ ছিল উজিরের স্ত্রীর প্রধান সেবক। ধীরে ধীরে বাড়ির প্রধান পরিচারক হয়ে উঠলেন ইউসুফ (আ), বাইবেল তা-ই বলছে। জুলাইখা আর সইতে পারল না।

কুরআনে তাকে ‘সেই মহিলা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এরপর যা হলো, কুরআনের ভাষায়, “আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সেই মহিলা বলল, “শোনো! তোমাকে বলছি, এদিকে আস।” সে বলল, “আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না।” (কুরআন, ১২:২৩ )

একই ঘটনা বাইবেল বলছে এভাবে, “তাই পতিফার তার বাড়ির সব কিছুর ভারই ইউসুফের হাতে দিয়ে দিলেন, কেবল নিজের খাবারটা ছাড়া আর কিছুর জন্যই তিনি চিন্তিত ছিলেন না। ইউসুফ ছিলেন অত্যন্ত রূপবান ও সুদর্শন পুরুষ। কিছু সময় পরে ইউসুফের মনিবের স্ত্রীও তাকে পছন্দ করতে শুরু করল। একদিন সে তাকে বলল, “আমার সঙ্গে শোও।” কিন্তু ইউসুফ প্রত্যাখ্যান করে বলল, “আমার মনিব জানেন তার বাড়ীর প্রতিটি বিষয়ের প্রতি আমি বিশ্বস্ত। তিনি এখানকার সব কিছুর দায় দায়িত্বই আমাকে দিয়েছেন। আমার মনিব আমাকে এই বাড়ীতে প্রায় তার সমান স্থানেই রেখেছেন। আমি কখনোই তার স্ত্রীর সঙ্গে শুতে পারি না। এটা মারাত্মক ভুল কাজ! ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ কাজ।” স্ত্রীলোকটি রোজই ইউসুফকে এ কথা বলত, কিন্তু ইউসুফ রাজী হতেন না।

ইউসুফ (আ) হাজার হলেও মানুষ, একজন পরমা সুন্দরী তাকে প্রতিদিন এরকম প্রস্তাব দিলে মন গলবারই কথা। কিন্তু তিনি ছিলেন অটল। তবে হ্যাঁ, তার মন গলা অসম্ভব ছিল না বলে জানায় কুরআন- “নিশ্চয়ই মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সে-ও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করত। এমনই হয়েছে, আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও নির্লজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয়ই সে আমার মনোনীত বান্দাদের একজন।

লোককাহিনী জানায়, ক’দিন বাদে বাইরের কাজ সেরে যখন ইউসুফ (আ) বাসায় এলেন, তখন জুলাইখা তাকে অন্দরমহলে ডাকলো। আশেপাশে ছিল নানা চিত্রকর্ম। সেখানে দেখা যাচ্ছিল, কপোত-কপোতীরা যৌনক্রিয়ায় রত।

কক্ষে ইউসুফ (আ) ঢোকার পর জুলাইখা আনুবিসের মূর্তিতে চোখের ওপর রুমাল দিয়ে দিল। জোসেফ জিজ্ঞেস করল, “কী করছেন?”

জুলাইখার উত্তর ছিল, “আমি চাই না দেবতা আনুবিস দেখুক, আমরা কী করতে যাচ্ছি…”

ইউসুফ (আ) একটু পিছিয়ে গেলেন।

জুলাইখা বলল, “দেখ এ ছবিগুলো, এরা করতে পারলে, আমরা কেন পারব না? এসো…” বলে বিছানায় শুয়ে পড়ল জুলাইখা।

কিন্তু, ইউসুফ (আ) উল্টো দরজা খুলে দৌড় দিলেন। ইউসুফ (আ) এর প্রত্যাখ্যান জুলাইখাকে আরও উত্তেজিত করে তুলল, সে-ও তাকে ধরবার জন্য দৌড় দিল। একপর্যায়ে তাকে প্রায় ধরেই ফেলল।

ইউসুফ (আ) এর জামার পেছনের অংশ ছিঁড়ে জুলাইখার হাতে চলে এল। ঠিক একই মুহূর্তে দরজায় পৌঁছাল তারা। আর সাথে সাথে দরজা খুলে গেল ওপাশ থেকে।

জুলাইখার স্বামী দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। (কোনো কোনো বর্ণনায় স্বামীর সাথে এক আত্মীয়ের কথাও বলা হয়) এবং তখনই জুলাইখা স্বর পরিবর্তন করে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করে বসল।

কুরআনের ভাষ্যে, “তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা ইউসুফের জামা পেছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বলল: “যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোনো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কী শাস্তি হতে পারে?” ইউসুফ (আ) বললেন, “সে-ই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে।”

লোককাহিনী মতে, সেই আত্মীয় তখন বলল, যদি ইউসুফ (আ) এর জামার সামনের দিক ছেঁড়া থাকে, তবে ইউসুফ (আ) দোষী, আর তার পেছনের দিক ছেঁড়া হলে, জুলাইখা দোষী। কুরআনের ভাষ্যে, “মহিলার পরিবারে জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা সত্যবাদিনী এবং সে মিথ্যাবাদী। এবং যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী।”

উপকথায় এমনটাও বলা আছে যে, এই কথাটা অলৌকিকভাবে দত্তক কন্যা শিশু আসেনাথ বলেছিল। এমনকি ইবনে কাসিরের তাফসিরেও বলা আছে যে, ইবনে আব্বাস (রা) এর হাদিসে, রাসুল (সা) বলেছেন, চারজন শিশু অবস্থায় কথা বলেছিল, যার মাঝে একজন ইউসুফ (আ) এর সাক্ষী।

দেখা গেল, আসলে দোষী জুলাইখা। তাই জুলাইখাকে উজির বললেন মাফ চাইতে ইউসুফ (আ) এর কাছে।

কুরআন বলছে, “অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক থেকে ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয়ই এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক। ইউসুফ, এ প্রসঙ্গ বাদ দাও! আর হে নারী, এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে তুমিই পাপাচারিণী।” (কুরআন, ১২:২৮-২৯)

কিন্তু এরকম একটা ঘটনা চাপা থাকে না। ঘটনাচক্রে, পাঁচজন চাকরের স্ত্রী বাইরে গিয়ে এ ব্যাপারটা মানুষকে বলে দিল, তারা নিজেরাও ঈর্ষান্বিত ছিল ইউসুফের সঙ্গ না পেয়ে। লোককাহিনীতে এমনটাই বলা। শহরে এ গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, উজিরের স্ত্রী এক হিব্রু দাসের প্রেমে পড়েছে।

কুরআনের ভাষায়, “নগরে মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, আজিজের স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য ফুসলায়। সে তার প্রেমে উন্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি।” (কুরআন, ১২:৩০)

এরকম সময় জুলাইখা সেই নারীদের আমন্ত্রণ করল। ভোজসভায় সবাইকে ছুরি দিয়ে যখন সে বলল ফল কাটতে, তখনই ইউসুফ (আ)-কে হাজির করল সকলের সামনে। এরপর আর কী, সকলের হাত কেটে গেল এ সুপুরুষকে দেখতে গিয়ে।

কুরআনের ভাষায়, “যখন সে তাদের চক্রান্ত শুনল, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠাল এবং তাদের জন্যে একটি ভোজ সভার আয়োজন করল। সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বলল: “ইউসুফ, এদের সামনে চলে এস।” যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বলল: “কখনই নয়, এ ব্যক্তি মানুষ নয়। এ তো কোনো মহান দেবদূত।” মহিলা বলল: “এ ঐ ব্যক্তি, যার জন্যে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করছিলে। আমি ওরই মন জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর আমি যা আদেশ দেই, সে যদি তা না করে, তবে অবশ্যই সে কারাগারে প্রেরিত হবে এবং লাঞ্চিত হবে।” ইউসুফ বলল: “হে পালনকর্তা! তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” অতঃপর তার পালনকর্তা তার দোয়া কবুল করে নিলেন। এরপর তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। অতঃপর এসব নিদর্শন দেখার পর তারা তাকে কিছুদিন কারাগারে রাখা সমীচীন মনে করল।” (কুরআন, ১২:৩১-৩৫)

জুলাইখার অনুরোধে উজির ইউসুফ (আ)-কে দোষী সাব্যস্ত করে জেলে প্রেরণ করতে বাধ্য হলেন। কিন্তু তিনি জানতেন যে, ইউসুফ (আ) নির্দোষ।

জুলাইখার সংসার আর স্বাভাবিক থাকল না। তবে সে ঠিকই তার স্বপ্নপুরুষের খবর রাখতে লাগল।

একসময় সে জানল, ইউসুফ (আ) এর সাহায্যে মিসররাজ স্বপ্নের অর্থ পেয়েছেন। তিনি মনে করেন, ইউসুফ (আ) নির্দোষ। জুলাইখার তলব পড়ল। সে সব দোষ স্বীকার করে নিল।

কুরআনের ভাষায় ঘটনা এরকম- “বাদশাহ বলল: “তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো।” যখন দূত ইউসুফের কাছে হাজির হলো তখন সে বলল, “ফিরে যাও তোমাদের প্রভুর কাছে এবং জিজ্ঞেস কর তাকে ঐ মহিলার স্বরূপ কী, যারা স্বীয় হস্ত কর্তন করেছিল! আমার পালনকর্তা তো তাদের ছলনা সবই জানেন।” বাদশাহ মহিলাদেরকে বললেন: “তোমাদের হাল-হাকিকত কি, যখন তোমরা ইউসুফকে আত্মসংবরণ থেকে ফুসলিয়েছিলে?” তারা বলল: “আল্লাহ মহান, আমরা তার সম্পর্কে মন্দ কিছু জানি না।” আজিজ-পত্নী বলল: “এখন সত্য কথা প্রকাশ হয়ে গেছে। আমিই তাকে আত্মসংবরণ থেকে ফুসলিয়েছিলাম এবং সে সত্যবাদী।” ইউসুফ বললেন: “এটা এজন্য, যাতে আযীয জেনে নেয় যে, আমি গোপনে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আরও এই যে, আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণাকে এগোতে দেন না। আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ, কিন্তু সে নয়- আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (কুরআন, ১২:৫০-৫৩ )

এ পর্যায়ে উপকথার কোনো কোনো সংস্করণ বলে, জুলাইখাকে কিছু করা হয়নি। কোথাও বা বলে, তাকে কয়েক বছরের জেল দেয়া হয়। আর উজির মারা যান। উল্লেখ্য, বাইবেল বা কুরআন কোথাও জুলাইখার ভাগ্যে এরপর কী হয়েছিল সেই কথা বলা নেই। তাই আমরা এখন ফিরে যাব অন্য উৎসের দিকে। আর সেটি হলো বাইবেলের অ্যাপোক্রাইফা। ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ সালের মাঝে যেসব ধর্মীয় লেখনি লেখা হয়েছিল এবং কিছু কিছু খ্রিস্টীয় সেক্টের বাইবেলে জায়গা পেয়েছিলো, কিন্তু মূল ধারার বাইবেলে জায়গা পায়নি বরং প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, সেগুলোকে বলা হয় অ্যাপোক্রাইফা (গ্রিক anókpupos)। ব্রিটিশ লাইব্রেরির ১৭২০২ নং পাণ্ডুলিপি হলো সিরিয়াক ভাষায় লিখিত ‘জোসেফ (ইউসুফ) ও আসেনাথ’। ষষ্ঠ শতকে এটি লেখা হয়েছিল। মূল গ্রিক ভাষার আদি এক কপির অনুবাদ সেটা। ৫৫০ সালের দিকে সিরিয়াক লেখক মোজেস অফ ইঙ্গিলা এ অনুবাদ কাজটি করেছিলেন। পরে ৫৭০ সালের দিকে সবগুলো পাণ্ডুলিপির একত্রীকরণ করা হয়। উল্লেখ্য, সেই বছরই জন্ম হয় হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর।

তবে বাইবেলের এ অ্যাপোক্রাইফা পাণ্ডুলিপির ক্ষেত্রে আমরা নামটা জোসেফই বলব, যতক্ষণ এ কাহিনী চলবে।

সেই শিশু কন্যা আসেনাথের কথায় আসা যাক। জুলাইখা আর উজিরের সেই দত্তক কন্যা, মনে আছে? কোনো কোনো উপকথা মতে, সংসার ভেঙে যাবার পর আসেনাথকে পাঠিয়ে দেয়া হয় দূরের এক সম্ভ্রান্ত লোকের পরিবারে। (হতে পারে তার নিজেরই পরিবার, শখের বশে তাদের কাছ থেকে কন্যা নিয়েছিলেন উজির) বলা যায়, এক জমিদার পরিবার। প্রাচীন মিসরের হেলিওপলিস নগরীর রা দেবতার মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন তিনি, নাম তার পতিফেরা। (একই নাম ছিল জুলাইখার স্বামীরও)

ধীরে ধীরে আসেনাথ বড় হলো, সুন্দরী এক তরুণী। তবে তার মধ্যে পুরুষ বিদ্বেষ কাজ করত। ততদিনে জোসেফ হয়ে গেছেন উজির, মিসরীয় ভাষায় তার নাম দেয়া হলো সাফন- পানেহ (Zaphnath – Paaneah )।

কোনো এক কাজে জোসেফ এই জমিদারের বাড়িতে একদিন বেড়াতে এলেন। জমিদার চাইতেন আসেনাথের সাথে তার বিয়ে দিতে। কিন্তু আসেনাথ পুরুষদের ঘৃণা করে। বিয়ের প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু সুপুরুষ জোসেফকে প্রথম যেদিন দেখল সে, সেদিনই কোনো এক জাদুবলে তার পুরুষবিদ্বেষ উধাও! বিয়ে করতে আগ্রহী সে।

সেদিন রাত্রে এক দেবদূত এলেন তার কক্ষে। এসে তাকে দেবদেবীদের থেকে দূরে থাকতে বললেন যদি জোসেফকে বিয়ে করতে চায়, সে রাজি হয়ে গেল। দেবদূত তার সামনে স্বর্গীয় এক মৌচাক রাখলেন, সেখান থেকে মৌমাছি এসে আসেনাথের ঠোঁটে দংশন করে গেল। কিছু সময় পর আবার সেটা ঠিক হয়ে গেল।

এরপর ধুমধাম করে জোসেফের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু মিসররাজের ছেলে আসেনাথকে ভালবাসত। তাই তাকে বিয়ে করতে না পারায় জোসেফের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।

ততদিনে মিসরে আস্তানা গেড়েছে জোসেফের ভাইয়েরাও। এরপরের কাহিনী সংক্ষেপে এমন, এক রাতে জোসেফের দুজন বিশ্বাসঘাতক ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে যুবরাজ জোসেফকে খুন করতে গেল। ওদিকে আসেনাথ গুপ্তচরের সাহায্যে জেনে গেল সেটা। সাইমন আর লেভি নামের দুজন ভাইয়ের সহায়তায় জোসেফকে রক্ষা করা হল। তারা তাকে বহুদিন আগে কুয়ায় ফেলার প্রায়শ্চিত্ত করল। পরে ছোট ভাই বিনইয়ামিন হত্যা করল সেই রাজপুত্রকে।

ভাগ্যের চাকা ঘুরে জুলাইখার পরিবারের আসেনাথ জুলাইখারই ভালোবাসা ইউসুফ (আ) এর স্ত্রী।

এরপর বাকি গল্পটা বলতে আশ্রয় নিতে হবে লোককাহিনীর।

সবই শুনত জুলাইখা, এখন জেল থেকে বেরিয়ে সে ভিখারিনী। শুনল আসেনাথের দুই পুত্র হয়েছে।

একদিন পথের ধারে বসে আছে জুলাইখা, তখন হঠাৎ জটলা বেধে গেল সামনে। জানা গেল, উজির ইউসুফ (আ) আসছেন। কী মনে করে জুলাইখা এগিয়ে গেল তার দিকে, যদিও বেশি দূর যেতে পারল না। তাফসির বলছে, জুলাইখা বলে উঠল, “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তার প্রতি আনুগত্যের কারণে দাসদের বাদশাহী আসনে বসিয়েছেন আর নাফরমানির কারণে বাদশাহদের দাসে পরিণত করেছেন।”

ইউসুফ (আ) খেয়াল করলেন, বয়স্কা এক মহিলা তার দিকে আসতে চাচ্ছে। তিনি নিজেই তার কাছে গেলেন, “কে আপনি? কী বলতে চান?”

“আমি জুলাইখা। আমি আজও তোমাকে ছাড়া কাউকে চাইনি…”

নবী ইউসুফ (আ) বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। পরে, উপকথা মতে, ইউসুফ (আ) তাঁর হাত রাখলেন জুলাইখার কপালে। হাত সরাতেই দেখা গেল, জুলাইখার বয়সের ছাপ চলে গিয়েছে। সেই আগের সুন্দরী জুলাইখা দাঁড়িয়ে আছে ওখানে।

কোনো কোনো মতে, এরপর ইউসুফ (আ) এর দ্বিতীয় স্ত্রী হন জুলাইখা। সেদিনই জুলাইখা বুঝতে পারেন, বহু আগে দেখা সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। সুদর্শন সেই স্বপ্নপুরুষ আসলেই মিসরের উজির। আর সত্যি আজ সে তাঁর স্ত্রী।

স্ত্রী আসেনাথের গর্ভে ইউসুফের (আ) দুই পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছিল, তাদের নাম ছিল আফ্রাসীম বা এফ্রায়িম (1:২8) ও মিশা বা মানাসেহ (২)। তবে কোনো কোনো বর্ণনা এটাও দাবি করে যে, এ সন্তান দুজন আসলে রাঈল বা জুলাইখার গর্ভে জন্মেছিল। এদের মাঝে প্রথমজনের ঔরসে জন্ম নিয়েছিলেন নূন নামের এক ব্যক্তি। নূনের পুত্র ইউশা (আ) হযরত মূসা (আ) এর মৃত্যুর পর নবী হয়েছিলেন এবং বনী ইসরাইলকে পবিত্র ভূমিতে নিয়ে যান।

কিছু প্রশ্ন, যেগুলো মাথায় আসতেই পারে –

প্রশ্ন-১: তাওরাত ও যাবুর এ দুই আসমানি কিতাব কোন নবীর উপর নাজিল হয়েছিল?

উত্তর: প্রথমেই বুঝতে হবে, বর্তমান বাইবেল বলতে আসলে কী বোঝায়। বাইবেল আসলে গ্রিক বিরিয়া (BiBaia) থেকে এসেছে, যার মানে ‘বইসমূহ’ (books)। বাইবেলের দুটো ভাগ রয়েছে- একটি হলো ওল্ড টেস্টামেন্ট (Old Testament), আর আরেকটি নিউ টেস্টামেন্ট (New Testament)। ওল্ড টেস্টামেন্ট মূলত ৪৬টি বইয়ের সংকলন, আর নিউ টেস্টামেন্ট হচ্ছে ২৭টির। ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রথম পাঁচটি বই মৌখিকভাবে তাওরাত নামে পরিচিত।

এগুলো হলো Book of Genesis, Book of Exodus, Book of Leviticus, Book of Numbers এবং Book of Deuteronomy। মূসা (আ) এর আগপর্যন্ত কাহিনী নিয়ে জেনেসিস বা আদিপুস্তক রচিত। তাওরাত মূসা (আ) এর উপর নাজিল হয়। তবে নাজিল হওয়া কিতাব বলতে যা বুঝে থাকেন মুসলিমরা, বাইবেলের প্রথম পাঁচ পুস্তকের ‘তাওরাত’ আসলে তেমন নয়। বিভিন্ন গ্রন্থ- লিপিবদ্ধকার নানা সময়ে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন এ বইগুলোতে তাওরাতের বাণীর পাশাপাশি। যেমন- মূসা (আ) এর মৃত্যুর ঘটনাও এখানে লিখিত আছে।

আর যাবুর নাজিল হয় হযরত দাউদ (আ) এর উপর, খ্রিস্টানরা যাকে ডেভিড নামে চেনেন। এটি মূলত তাওরাতের মতো আইন বিষয়ক গ্রন্থ নয়, বরং কাব্যিক ছন্দওয়ালা আবৃত্তি করবার গ্রন্থ। বর্তমানে যাবুর বলতে যেটি প্রচলিত সেটি হলো Book of Psalms, যা কি না আসলে ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি পুস্তক এবং অনেকগুলো শ্লোকের সমগ্র। এছাড়াও আরো নানা নবীর নানা পুস্তিকা রয়েছে, এগুলো সব মিলিয়েই ওল্ড টেস্টামেন্ট। কিন্তু নিউ টেস্টামেন্ট হলো যীশু বা হযরত ঈসা (আ) এর সময়কাল থেকে শুরু করে তার সাহাবী ও অনুসারী কর্তৃক করা নানা কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ করা এক সংকলন, আর সেই সাথে আছে অনেক শহরের কাছে প্রেরণ করা নানা চিঠি। সংক্ষেপে, এগুলো সব মিলিয়েই বাইবেল।

প্রশ্ন-২: টিভি সিরিয়ালে Yozarsif নামের উল্লেখ দেখা যায়। এর ব্যাখ্যা কী?

উত্তর: শব্দটির অর্থ আসলে ‘উচ্চ ঈমানওয়ালা’। নবী ইউসুফ (আ) এর প্রাচীন মিসরে ডাকা নামগুলোর একটি Yozarsif বলে ধারণা করা হয়।

প্রশ্ন-৩: ইউসুফ (আ) এর সময়কাল কবে ছিল? এর কত সময় পর মূসা (আ) আসেন?

উত্তর: ইউসুফ (আ) ১১০ বছর বয়সে মারা যান যখন, সেই সালটিকে ইহুদী পণ্ডিতেরা খ্রিস্টপূর্ব ১৪৪৪ বা ১৪৪৫ সাল বলে নির্ধারণ করেন। ইহুদী হিসাবে মূসা (আ) এর জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ১৩৯১ সালে।

প্রশ্ন-৪: কুয়াতে ফেলবার সময় বলা হলো ইউসুফ (আ) ছিলেন একজন বালক। আবার জুলাইখার বাসায় তিনি অষ্টাদশী তরুণ। এটা কীভাবে হলো?

উত্তর: ইউসুফ (আ) এর বয়স ছিল ১৬ বছর যখন তাকে ভাইয়েরা নিয়ে কুয়াতে ফেলে দিয়েছিলো। সেখান থেকে উদ্ধার করে দাসবণিকেরা যখন তাকে মিসরে নিয়ে যায়, বিক্রি করে এবং শেষমেশ মিসরের আজিজের ঘরে স্থান পায়, ততদিনে বেশ সময় অতিবাহিত হয়েছে। দাস বালকেরা তো আর সাথে সাথে বিক্রি হত না, একেকবার একেক বাজারে নিয়ে যাওয়া হত। তার বিক্রি হতেও অনেকদিন লেগে যেতে পারে, এবং সবশেষে আজিজের নজরে এসে থাকতে পারেন। এভাবে তার বয়স আঠারো হয়ে যাওয়াটা তেমন অবাক করা ব্যাপার না। তাছাড়া কোনো বালকের ওপর এতজন প্রাপ্তবয়স্কা নারী অনুরক্ত হয়ে পড়বেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সুতরাং ততদিনে ইউসুফ (আ) নিশ্চয়ই শৈশব পেরিয়ে এসেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *