অধ্যায়-৩৮ ঐশীবাণীর পূর্বে যুবক জীবন
মানুষটি একা একা থাকতেন মক্কার দিকে মুখ করে থাকা পাহাড়ে। প্রায়ই হেরা গুহার সামনে বসে তাকিয়ে দেখতেন মক্কাকে। গোপনে যেতেনও সেখানে। কিন্তু ধরা পড়বার পর অত্যাচারিত হয়ে ফিরে আসেন। মক্কাতে যে তাঁর অবস্থান নিষিদ্ধ! হেরা নামের এক গুহায় একা একা বসে থাকতেন প্রায়ই। কে তিনি?
কেউ তাঁর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতো না। কিশোর বালক মুহাম্মাদ (সা) তাঁকে খুব পছন্দ করতেন। কেন মানুষটিকে বের করে দেয়া হয়েছিল মক্কা থেকে? চলুন, কৈশোর থেকে তারুণ্যের দিনগুলোতে প্রবেশ করতে থাকা মুহাম্মাদ (সা) এর জীবনের কিছু ঘটনা জেনে ফেলা যাক!
লিহব/লাহব বংশের এক লোক ভবিষ্যৎ বলত। যখনই সেই লোক মক্কায় আসত, তখনই কুরাইশরা তাদের বাচ্চাদের তার কাছে নিয়ে যেত ভবিষ্যৎ জানার জন্য। আবু তালিবও সেখানে নিয়ে যান মুহাম্মাদ (সা)-কে। তাঁকে দেখেই পাগল হয়ে যায় লোকটি। ভয় পেয়ে আবু তালিব সেখান থেকে চলে আসেন। সে চিৎকার করছিল, “দেখতে দাও আমাকে ছেলেটাকে! তাঁর সামনে মহান ভবিষ্যৎ!”
ব্যবসার জন্য সিরিয়া যাওয়াটা কুরাইশদের নিয়ম ছিল। তাই বরাবরের মতো এবারও আবু তালিব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এবার মুহাম্মাদ (স) কাছে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। আবু তালিবের এত মায়া লাগল যে, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে নিয়ে যাবেন মসজিদে নববী, মদিনা এবার। নিলেনও তা-ই। মুহাম্মাদের (সা) সম্ভাব্য বয়স তখন মাত্র ১২ বছর ২ মাস ১০ দিন।
কাফেলা চলছে তো চলছেই। একসময় পৌঁছাল বসরার তায়মা নামের এক জায়গায়। এখানে খ্রিস্টান বেশি। মেলা চলছে। বিক্রি ভালই হবে কুরাইশ কাফেলার। কাছেই ছিল Nestorian খ্রিস্টান সাধু বুহাইরা/বাহিরা নামের একজনের আশ্রম/গির্জা। বাহিরা অর্থ সিরিয়াক ভাষায় ‘পরীক্ষিত (স্রষ্টার দ্বারা) এবং অনুমোদিত’; পশ্চিমা সাহিত্যে বাহিরা পরিচিত Sergius the Monk নামে। কথিত আছে, তিনি বাইবেল ছাড়াও অন্যান্য অপ্রসিদ্ধ নস্টিক লেখাগুলোও সাথে রেখেছিলেন।
বুহাইরা কাফেলাটা খেয়াল করছিলেন। তার দৃষ্টি আটকে গেল বাচ্চা ছেলেটার উপর। কে এই ছেলেটা? তিনি খেয়াল করলেন আকাশের মেঘ নড়ছে না সেখান থেকে। [ইবনে হিশাম)
বুহাইরা একটা কৌশল করলেন, তিনি কাফেলার সবাইকে দাওয়াত দিলেন, সবাই যেন আসে। সবাই অবাক হলেও, দাওয়াত কবুল করল। যথাসময়ে সবাই দাওয়াত খেতে গেল। কিন্তু মুহাম্মাদ (স)-কে রেখে গেল পাহারা দিতে, এক গাছের নিচে। যার জন্য এত আয়োজন তিনিই নেই।
তিনি বললেন, “হে কুরাইশি
অতিথিগণ! আপনাদের কেউ যেন
আমার খাবার গ্রহণ থেকে বাদ না পড়ে!”
তারা বলল, “বুহাইরা! যারা এখানে আসার মতো, তারা সবাই এসে গেছেন। শুধু একটি বালক কাফেলার বহরে রয়ে গেছে, সবচেয়ে কম বয়স তাঁর।”
বুহাইরা বললেন, “না, তাঁকে বাদ রাখবেন না। তাকেও ডাকুন। সে-ও আপনাদের সাথে আহার করুক।”
তখন এক কুরাইশি বললেন, “লাত উজ্জার কসম! আব্দুল মুত্তালিবের নাতি আমাদের সাথে থাকবে অথচ খাবে না, এটা হতেই পারে না।” তিনি নিজে কোলে করে নিয়ে আসলেন মুহাম্মাদ (সা)-কে। সবার সাথে খাবারের মজলিশে তাঁকে বসিয়ে দেয়া হলো।
তখন বুহাইরা আগের কিতাবের সাথে সব মিলিয়ে পরখ করতে লাগলেন।
সবাই খেয়ে বেরিয়ে যাবার পর বুহাইরা রাসুল (সা) এর কাছে এসে বললেন, “বাছা! কিছু প্রশ্ন করব। লাত উজ্জার কসম, ঠিক উত্তর দেবে।”
কুরাইশরা কথাতে কথাতে লাত উজ্জা করত। তাই মুহাম্মাদের (স) সাথে কথা বলতে গিয়ে লাত উজ্জা দেবীর নাম আনল। কিন্তু মুহাম্মাদ (স) বললেন, “লাত উজ্জার কসম নিবেন না! আমি ওদের ঘৃণা করি!”
“আচ্ছা, আল্লাহর কসম।”
“বলুন, কী জানতে চান। আমি যতদূর জানি ঠিক বলব।”
বুহাইরা সব জিজ্ঞেস করলেন আর অবাক হয়ে দেখলেন সব মিলে যাচ্ছে আগের পাক কিতাবের কথার সাথে!
নিশ্চিত হতে আবু তালিবকে ডাকলেন, বললেন, “এ ছেলে কী হয় আপনার?”
আবু তালিব মিথ্যে বললেন, “আমার ছেলে।”
“আপনার ছেলে! (হিসাব মিলছে না…) না… তার বাবা বেঁচে থাকার কথা না।” [যাবুর কিতাব অনুযায়ী বাবা-মা মারা যাবার কথা প্রতিশ্রুত শেষ নবীর। কাব্যিক ভবিষদ্বাণীগুলোর এরকম করেই অর্থ বের করা হত আগের কিতাব থেকে। Psalms ২৯:৫০]
“আচ্ছা, আপনার কথা ঠিক। ও আমার ভাতিজা।”
“আপনার ভাই?”
“মারা গেছে, তখন এ ছেলের মা অন্তঃসত্ত্বা।” (তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী)
“এমনটাই হবার কথা।”
বলে বুহাইরা চুপ হয়ে গেলেন। এরপর বললেন, “দেখুন, আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি, আপনি ওকে নিয়ে চলে যান যদি বাঁচাতে চান। ইহুদী থেকে তাঁকে সাবধান রাখবেন। আল্লাহর কসম, তারা যদি এ বালককে দেখতে পায় এবং আমি যে নিদর্শনগুলো দেখে চিনেছি, তা যদি চিনতে পারে, তাহলে তারা তাঁর ক্ষতি না করে ছাড়বে না। আপনার এই ভাতিজা ভবিষ্যতে এক মহামর্যাদাবান হিসেবে আবির্ভূত হবেন।”
আবু তালিব শীঘ্রই সফরের ইতি টেনে মক্কা চলে এলেন। তারা জানতেও পারলেন না যে, যুরায়র, তাম্মাম ও দারীস নামের আরো তিন ব্যক্তি একই নিদর্শনগুলো খেয়াল করেছিল। তারা তাঁকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু বুহাইরার সাথে তাদের দেখা হবার পর, বুহাইরা তাদের ব্যাখ্যা করেন যে, তাদের নিদর্শন ভুল বোঝা হয়েছে। এই বলে তিনি তাদের হতাশ করে ফেরত পাঠিয়ে দেন। নাহলে মুহাম্মাদ (সা)-কে হত্যার জন্য তারা ছুটে পড়ত। [ইবনে হিশাম)
ইবনে কাসিরের গ্রন্থ অনুযায়ী, আবু তালিবের সাথে কথোপকথনের আগে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। সাতজন রোমান সেনা সেখানে হাজির হয়, বুহাইরা তাদের জিজ্ঞেস করলেন আগমনের কারণ। তারা জানালো, তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছিল যে, সিরিয়ার কোনো রাস্তা দিয়ে নাকি পরবর্তী নবী যিনি হবেন তিনি যাবেন এরকম সময়ে। এজন্য সব রুটেও আমরা লোক পাঠাচ্ছি।” বুহাইরা তাদের ভুল বুঝিয়ে অন্য একটি কক্ষে রাখেন। এরপর বুহাইরা মুহাম্মাদ (সা) এর সাথে কথা বলেন খাওয়া শেষে।
মক্কায় ফিরে মুহাম্মাদ (সা) বড় হতে লাগলেন। সকল রকমের পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতেন তিনি। নগ্নতা বা অশ্লীলতার প্রাচুর্য আরবে থাকলেও তা স্পর্শ করেনি তাঁকে। মেষ চড়াতেন তিনি, অর্থও কামাতেন এ কাজ করেই। কেউ কোনো দিন কোনো বিষয়ে তাকে অভিযুক্ত করতে পারেনি। সবার কাছে পরিচিত ছিলেন ‘আল-আমিন’ নামে, যার অর্থ বিশ্বস্ত। কৈশোর পেরিয়ে পা দিলেন যৌবনে।
এক নারী কাবায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। তখন কাবা আবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। ইবনে কাসিরের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, যখন কাবা আবার বানানো হচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সা) পাথর বয়ে আনতেন। তাঁর চাচা আব্বাস রাসুল (সা)-কে বলেছিলেন, “তোমার জামা খুলে কাঁধের উপর চড়াও, পাথর রাখতে পারবে।” তিনি সেটা করলেন, কিন্তু এরপরই পড়ে গেলেন মাটিতে, মুখখানা উপরের দিকে দিয়ে। এরপর আবার উঠে দাঁড়ালেন, “আমার জামার জন্য হয়েছে।” এরপর তিনি জামাটা পরে ফেললেন আবার। আরেকটি বর্ণনায় আছে, মুহাম্মাদ (সা) এটাও বলেছিলেন যে, “আমাকে বলা হয়েছে যেন উদোম গায়ে না চলি।” ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, “আমি এটা জানতাম, কিন্তু কাউকে কিছু বলিনি, পাছে কেউ তাঁকে পাগল ডাকে।
বায়হাকির বরাতে ইবনে কাসির (র) আরো জানান, আলি (রা) মুহাম্মাদ (সা) এর কাছ থেকে শুনেছেন, মুহাম্মাদ (সা) বলেন, “জাহিলিয়ার যুগে লোকে নারীদের সাথে যে কুকর্মগুলো করত ওগুলো করবার ইচ্ছে আমার কখনো জাগেনি, কেবল দুই রাত ছাড়া। দু’রাতই আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছিলেন সেই কাজ থেকে। এক সন্ধ্যায় আমি আর আমার বন্ধু (মক্কার আরেক যুবক) মেষ পাহাড়া দিচ্ছিলাম অন্য লোকের। তখন আমি বললাম, “শোন, তুমি কি আমার হয়ে চোখ রাখবে একটু মেষগুলোর উপর, যেন আমি মক্কায় গিয়ে অন্য ছেলেদের মতো সময় কাটাতে পারি?” বন্ধু বলল, “অবশ্যই।” তো তখন আমি বেরিয়ে পড়লাম শহরের দিকে, প্রথম যে বাড়িতে থামলাম, সেখান থেকে বাজনার আওয়াজ ভেসে আসছিল, তবলা-বাঁশি সব। আমি থেমে জিজ্ঞেস করলাম, কী হচ্ছে এখানে? আমাকে বলা হলো, বিয়ে হচ্ছে এক যুগলের। আমি বসে পড়লাম সেখানে। (উৎসবের পরেই নারী-পুরুষ অনৈতিক কাজগুলো শুরু হত)। তারপর কী যেন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে, পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙল সূর্যের আলো মুখে পড়বার পর। আমি আমার বন্ধুর কাছে ফেরত গেলাম। সে জিজ্ঞেস করলো, “কী করলে?” আমি বললাম, “আমি কিচ্ছু করিনি!” জানালাম কী কী দেখেছি। আরো একরাত একই রকম ঘটনা ঘটল। এরপর নবুয়ত পাবার আগপর্যন্ত আর কিছুই হয়নি।”
যায়দ (রা) বলেন, “ইসাফ আর নাইলা নামের মূর্তি ছিল যেটা তাওয়াফের সময় লোকে স্পর্শ করত। মহানবী (সা) সেটা ধরতে মানা করতেন। একবার আমি ধরে দেখেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে মানা করা হয়নি?” মূর্তিপূজার ধারে-কাছেও কখনো যাননি মুহাম্মাদ (সা)।
আরাফাতের পাহাড়ের কাছে মুজদালিফাতে একটি পৌত্তলিক অনুষ্ঠান হতো। সেখানে কুরাইশের সদস্য হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকতেন উটের পিঠে, কিন্তু অৰ্চনায় একদমই অংশ নিতেন না। কিন্তু তিনিই কি একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন মক্কার যিনি এমন বিরত থাকতেন? না। সেই প্রসঙ্গে একটু পরে আসা হচ্ছে।
প্রচণ্ড সাম্প্রদায়িকতা ছিল আরবদের মধ্যে। এক গোত্রের সামান্য ভুলের জন্য অন্য গোত্র আক্রমণ করে বসতো! আর যুদ্ধ একবার লাগলে চলত মাসের পর মাস।
তবে তাদের কাছে চারটা মাস ছিল যুদ্ধের জন্য নিষিদ্ধ- রজব, জিলকদ, জিলহজ আর মুহাররাম মাস। আর যুদ্ধ না থাকলে মানুষ গিয়ে পড়ে থাকত বিভিন্ন মেলায়। অনেক জায়গায় অনেক রকম মেলা বসত। সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল উকাজ নামের এক জায়গার মেলা। জায়গার নামেই নাম তার উকাজ মেলা।
এ মেলাতে ব্যবসায় লাভ পেতে প্রতিবারই প্রচুর পণ্য পাঠাত নুমান ইবনে মুঞ্জির নামের এক ব্যবসায়ী। তাঁকে আশ্রয় দেন উরওয়া নামের একজন, যিনি হাওয়াজিন বংশের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বনু কিনানার বাররায ইবনে কায়েস নামের একজন তাঁকে বললেন, “তোমার এত বড় স্পর্ধা যে তুমি বনু কিনানাকে ডিঙিয়ে তাঁকে আশ্রয় দিতে গেলে?” উরওয়া আর বাররাযের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে, এরপর একসময় তায়মা নামের এক জায়গায় উরওয়া খুন হলো বারবাযের হাতে। শুরু হয়ে গেল গোত্রীয় যুদ্ধ। উরওয়ার বংশ হাওয়াজিন আক্রমণ করল বাররাযের গোত্র কিনানাকে। কিনানার পক্ষে গেল কুরাইশ আর অন্যান্য মিত্র বংশ বা গোত্রগুলো। আর হাওয়াজিন বংশের সাথে গেল কায়স আর তাদের মিত্র গোত্রগুলো। নিষিদ্ধ মাসে শুরু হলো এ যুদ্ধ (হারব)। নিষিদ্ধ বিধায় একে অন্যায় (ফিজার) যুদ্ধ বলা হত। আসলে, এরকম যুদ্ধ আগেও তিনবার হয়েছিল। তাই এটার নাম হয় চতুর্থ ফিজার যুদ্ধ।
এ যুদ্ধে প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে নামেন মুহাম্মাদ (স) বনু হাশিম গোত্রের পক্ষে। তাদের পতাকা ছিল জুবায়ের ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের হাতে। বিশ বছর বয়সী মুহাম্মাদ (স) এর কাজ ছিল কেবল শত্রুপক্ষের ছোড়া তীর ও বর্শা কুড়িয়ে আনা। এর বেশি কিছু না।
আব্দুল্লাহ ইবনে জুদান নামের এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে হয়। ইসলামের আগের যুগে এক বীর যোদ্ধা ছিলেন তিনি। আবু বকর (রা) এর বাবার ভাতিজা ছিলেন। শুরুতে বেশ গরিব ছিলেন, খারাপ কাজ করতেন বেশ। সবাই তাকে ঘৃণা করত।
একদিন তিনি মক্কা থেকে বেরিয়ে একটু দূরে গেলেন। সেখানে পাহাড়ে একটি ফাঁকা জায়গা দেখে সেখানে ঢুকে পড়লেন। তার মনে হচ্ছিল, এই ঘৃণিত জীবন রেখে লাভ নেই, এখানেই যদি মারা যান, তো গেলেনই। কাছে এগোতেই এক সাপ তাঁর দিকে ধেয়ে আসলো। তিনি সরে গেলেন। তিনি গুহায় ঢুকলেন, দেখলেন, সেখানে জুরহুম রাজাদের কবর। সেখানে সোনার পাতে তাদের শাসনামল উল্লেখ করা। আশপাশে অনেক ধনরত্ন, সোনা-রূপা। তিনি গুহা চিহ্নিত করে যথেষ্ট ধনসম্পদ নিয়ে মক্কা ফিরলেন। তিনি সেখান থেকে মানুষকে দান করতে লাগলেন, আর মানুষ তাকে ভালোবাসতে শুরু করল। তিনি বিশাল এক পানিপানের জায়গা করেন মূসাফিরদের পানি পানের জন্য। মহানবী (সা) বলেন, “আমি মধ্য দুপুরের গরম থেকে বাঁচতে আব্দুল্লাহ ইবনে জুদানের পানিপানের জায়গার ছায়াতে বসে থাকতাম।”
একবার ইবনে জুদান জনগণের জন্য বিনে পয়সায় ভোজের আয়োজন করেন। সেখানে ভিড়ের মাঝে চাচা আবু জাহলের সাথে প্রতিযোগিতা করছিলেন মুহাম্মাদ (সা)। তাঁর ধাক্কায় আবু জাহল পড়ে গিয়েছিলেন, হাঁটুতে আঘাত পান। সেই আঘাত রয়ে গিয়েছিল বহুদিন। এই আঘাত দেখেই তাঁর মৃতদেহ চিহ্নিত করা হয়।
সিরিয়া থেকে ২,০০০ উট বোঝাই করে তিনি যব, মধু আর মাখন আনেন। এরপর প্রতি রাত্রে ইবনে জুদান কাবার ছাদ থেকে ঘোষণা করাতেন, সবার দাওয়াত তাঁর বাসায়। এর আগপর্যন্ত তিনি বার্লি আর দুধ খাওয়াতেন। মধু মাখন আনার সিদ্ধান্ত তিনি নেন যখন এক কবি কবিতা লেখেন যে, ইবনে জুদান তাদের মধু খাওয়ান না!
ফিজার যুদ্ধের পর আব্দুল্লাহ ইবনে জুদানের বাসায় কুরাইশরা একটি সম্মতিতে আসেন। সূচিত হয় হিলফুল ফুজুল। মহানবী (সা) বলেন, হিলফুল ফুজুল যদি ইসলামের আবির্ভাবের পরেও হতো, আমি তাতে সম্মতি দিতাম। যুবাইর ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এর আহবায়ক ছিলেন। মুহাম্মাদ (সা) এর একজন সদস্য ছিলেন মাত্র, প্রতিষ্ঠাতা নন- যেমনটা সম্ভবত ধর্ম বইতে লেখা হত।
একবার মক্কায় ওমরা করতে আসেন খাসআম নামের এক লোক নিজের সুন্দরী মেয়ে কাতুলকে নিয়ে। তখন নাবিহ নামের এক বদ লোক মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। লোকজনের পরামর্শে খাসআম কাবার সামনে দাঁড়িয়ে “হিলফুল ফুজুল” বলে ডাক দিলেন। সাথে সাথে চারদিক থেকে সদস্যরা হাজির।
“কী বিপদ বলুন?”
তিনি সব খুলে বললেন।
সেসব শুনে তারা ছুটে গেলেন নাবিহ এর দরজায়। নাবিহ পুরো অবাক। আরবে “জোর যার মুল্লুক তার” প্রথামাফিক সে একটা মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়েছে ভোগের জন্য, এতে এত হইচই কেন? তা-ও, এত মানুষের সামনে এ কথাটা বলার সাহস পেল না নাবিহ। কেবল বলল, “একটা রাত ভোগ করি?” উত্তর পেল, “একদম না। কোনো সঙ্গমের তো প্রশ্নই আসে না।” এরপর যা হবার তা-ই হলো। ঘটনার শেষ কথা হলো, মেয়েটা অক্ষত ফিরল বাবার কাছে।
আরবদের নৈতিকভাবে অন্যায় কাজের ফিরিস্তি এখানেই শেষ ছিল না। কোনো এক বংশের নেতা ছিলেন কায়স ইবনে আসিম। তার একটি ঘটনা পাওয়া যায়। ইসলাম গ্রহণের পর বুড়ো বয়সে এসে তিনি নবীজী (সা) এর কাছে এসে জাহিলিয়ার সময় করা খারাপ কাজগুলোর জন্য অনুতাপ করেছিলেন। তার মুখ থেকে,
“অজ্ঞানতার যুগে অনেক বাবাই তাদের মেয়েশিশুকে দাফন করে ফেলত জীবিত। আমিও করেছি। পরপর ১২টা (কিংবা, আট) কন্যা শিশু আমি নিজ হাতে মাটিতে পুঁতে এসেছিলাম। যখন আমার স্ত্রী ১৩তম কন্যা সন্তান জন্ম দেয়, তখন আমাকে জানতে দেয়নি পাছে মেরে ফেলি। (মৃত সন্তান হয়েছে বলেছিল) আমার অজানাতেই আমার মেয়েটিকে সে আত্মীয়ের কাছে বড় করে।
বহু বছর পর একদিন ঘরে ফিরে দেখি এক ছোট মেয়ে আমার ঘরে, সে নাকি তার মাকে খুঁজছে। দেখতে আমার অন্য বাচ্চাদের মতোই, আমি তো অবাক। পরে জানতে পারলাম সে আমারই মেয়ে।
আমার স্ত্রী ভাবলো আমি মেনে নিয়েছি, কিন্তু আসলে না। একদিন আমার স্ত্রী যখন নেই তখন মেয়েটিকে আমি নিয়ে গেলাম দূরের এক জায়গায়, মেয়ের কান্না যেন আমাকে ছুঁতে না পারে, সেরকম কঠিন রাখলাম আমার হৃদয়। বুঝতে পারবার পর মেয়েটি বলছিল, সে নাকি মামার বাড়ি চলে যাবে, কখনো আর ফিরবে না, তা-ও যেন তাকে না মারি।
কিন্তু আমি তার কোনো কথা শুনলাম না। তাকে জীবিতই মাটিতে পুঁতে ফেললাম।”
এ ঘটনা শুনবার সময় নবী (সা) এর চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। অন্য বর্ণনায় আমরা পাই, ছোট্ট মেয়েটি বুক পর্যন্ত মাটি ভরাট হয়ে গেলেও দাফনকারী বাবার দাঁড়িতে লেগে থাকা ধুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছিল। কারণ সে তখনও বুঝতে পারছিল না যে, তাঁকে আসলে কী করা হচ্ছে। বুঝতে পারার পর শতচেষ্টাতেও বাবার হাত থেকে মুক্তি পায়নি সে। উল্লেখ্য, সকল বংশ অবশ্য নারী শিশু নিধন প্রথা পালন করত না এটা নিশ্চিত। খাদিজার (রা) মতো স্বনির্ভর নারীই তার প্ৰমাণ।
ইসলাম আবির্ভাবের আগে আরবে বিয়ের প্রথা নিয়ে কথা বলা যাক। বুখারি শরিফের বিশুদ্ধ হাদিস থেকে আমরা চার রকমের বিয়ের কথা জানতে পারি আয়িশা (রা) এর মুখ থেকে, সেগুলো ছিল-
১) আজকের মতোই স্বাভাবিক বিয়ে। ছেলে প্রস্তাব পাঠায় মেয়ের অভিভাবককে। এরপর মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে হতো।
২) আল-ইস্তিব্দা বিবাহ। এ বিয়েতে স্বামী তার স্ত্রীকে মাসিক শেষে বলত যে, তুমি অমুক ব্যক্তির সাথে সহবাস করো। এখানে তৃতীয় ব্যক্তি বড় বংশের। স্বামী তখন চলে যেত, এবং স্ত্রী সেই ব্যক্তির সাথে সহবাস করত, অন্তঃসত্ত্বা হবার আগপর্যন্ত। অন্তঃসত্ত্বা দৃশ্যমান হলে স্বামী ফেরত আসত, এবং এবার স্বামী-স্ত্রী পুনরায় স্বাভাবিক সহবাসে ফিরে যেত। সন্তান যেন উঁচু বংশের রক্ত পায় সেজন্য এই প্ৰথা।
৩) দশজনের কম পুরুষ পালা করে একজন নারীর কাছে যেত সহবাসের জন্য। মেয়েটি গর্ভবতী হলে এবং সন্তান জন্ম দিলে পরে সে সবাইকে ডাকবে, কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে না। সে তখন যাকে বাবা হিসেবে ঘোষণা করবে, তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে স্বামী হবার।
৪) পতিতারা তাদের বাড়ির উপর চিহ্ন টানিয়ে রাখত, এখানে যে কেউ সহবাস করতে আসতে পারবে। পরে মেয়েটি গর্ভবতী হলে, সে সকলকে ডেকে আনবে যাদের সাথে তাঁর দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল। একজন কাইফ (যে চেহারা দেখে পরিবার পরিচয় বলতে পারত, অর্থাৎ বাবা কে সেটা) এসে ঘোষণা করত বাবা আসলে কে। যাকে বাবা ঘোষণা করা হতো সে দায়িত্বের দায় এড়িয়ে যেতে পারতো না।
এই ছিল আইয়ামে জাহিলিয়ার চার রকমের বিবাহপ্রথা। তবে উঁচু বংশে মূলত প্রথম প্রকারের বিয়েই প্রচলিত ছিল। আর কুরাইশ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে উঁচু বংশ ছিল।
বিবাহযোগ্য বয়সে আসবার পর মুহাম্মাদ (সা) ২৪ বছর বয়সে চাচা আবু তালিবের কাছে যান বলে ইবনে সাদের তাবাকাতে বর্ণিত আছে, ধর্মান্তরিত মুসলিম মার্টিন লিংসের সিরাত গ্রন্থেও তা-ই আছে। তিনি আবু তালিবের কন্যা অর্থাৎ চাচাতো বোন ফাখিতা বা উম্মে হানিকে বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করেন, কিন্তু আবু তালিব সেটা মেনে নেননি। বরং, মাখজুম গোত্রের পৌত্তলিক কবি হুবায়রার সাথে নিজ মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। মুহাম্মদ (সা) জিজ্ঞেস করলেন, “চাচা, আমার সাথে বিয়ে না দিয়ে কেন হুবায়রার সাথে দিলেন?” বলেন, “ভাতিজা, মাখজুম গোত্রের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্ক, একজন মর্যাদাবান লোকের বিনিময়ে আরেকজন মর্যাদাবান লোক লাগে।” যার মানে, কোনো একটা পূর্ববর্তী সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে মেয়েকে সেখানে বিয়ে দিতে হবে। তবে এই অদ্ভুত উত্তরের পর মুহাম্মাদ (সা) আর কিছু বলেননি। হয়তো আবু তালিব মুহাম্মাদ (সা) এর অর্থাভাবের কারণে বিয়ে দিতে চাননি। এই বিয়ের ব্যাপারটা ইবনে ইসহাক বা হিশামে নেই।
ইবনে সা’দ তাবাকাতে আরো বলেন, ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, উম্মে হানি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন পৌত্তলিক স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন মুহাম্মাদ (সা) তাকে প্রস্তাব দেন। উত্তরে উম্মে হানি বলেন, “জাহিলিয়ার সময় আমি আপনাকে ভালোবেসেছিলাম, তাহলে ইসলামে কতটা বাসি! কিন্তু আমার এখন সন্তান আছে। আমার অপছন্দ যে তারা আপনাকে কষ্ট দেবে।” এ ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কি না সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। তবে পরে উম্মে হানি নিজেই তাঁকে বিয়ে করতে এসেছিলেন, কিন্তু কুরআনের ৩৩:৫০ আয়াতের কারণে নবী (সা) আর বিবাহ করতে পারতেন না। এরকম একটা ঘটনার উল্লেখ আগের গ্রন্থগুলোতে আছে বিধায় এখানে বর্ণিত হলো।
২৪ বছর বয়সে প্রায় অর্থহীন মুহাম্মাদ (সা) নিজেই নেমে পড়েন স্বাধীনভাবে ব্যবসার কাজে। এক বছরের মাঝেই নাম কুড়িয়ে ফেলেন। এর আগে ২১ বছর বয়সেই ‘সাদিক’ উপাধি তো পেয়েছিলেনই। ব্যবসায় সুনাম ছড়িয়ে পড়বার সাথে সাথে নজরে পড়েন খাদিজা নামের ধনী নারী ব্যবসায়ীর, যিনি ছিলেন বিধবা এবং ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের আত্মীয়। তাঁর সাথে মুহাম্মাদ (সা) এর বিয়ের কাহিনী আমরা জানব পরের বইয়ে ইনশাআল্লাহ। তবে এই বইটি শেষ করবার আগে একজন মহান ব্যক্তির কথা না বললেই নয়, তাঁর নাম জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল।
তিনি ছিলেন গুটিকয়েক হানিফ ব্যক্তির একজন। ইবনে কাসিরে তাঁর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি সেই যুগেই মূর্তিপূজা ত্যাগ করেছিলেন। তিনি আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য নামে উৎসর্গ করা কোনো মাংস খেতেন না। আবু বকর (রা) এর কন্যা আসমা (রা) বলেন, আমি জায়েদকে দেখেছিলাম কাবার গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়াতে এবং বলতে, “হে কুরাইশ! যার হাতে জায়েদের প্রাণ সেই সত্ত্বার কসম, আমি ছাড়া তোমাদের মাঝে কেউ নবী ইব্রাহিমের ধর্মে নেই। “ তিনি আরো বলতেন, “আল্লাহ, আমি যদি জানতাম তুমি কীভাবে চাও আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি তবে সেভাবেই করতাম, কিন্তু আমি যে জানি না!”
জায়েদ কাবার দিকে ফিরে প্রার্থনা করতেন। বলতেন, আমার ধর্ম ইব্রাহিমের ধর্ম। কেউ যদি নিজের মেয়েকে হত্যা করতে চাইতো তবে তাঁকে গিয়ে বলতেন, ওকে মেরো না। আমাকে দিয়ে দাও। আমি তাকে বড় করে তুলব। এরপর তুমি চাইলে তাকে ফেরত নিতে পারো বা ত্যাগও করতে পারো।”
যখন জায়েদ প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে, তখন তাঁকে তাড়িয়ে দিল কুরাইশরা। উমার (রা) এর পিতা খাত্তাব তাকে খুবই অত্যাচার করে। তাঁর পেছনে বাচ্চাদের লেলিয়ে দেয়া হতো। গোপনে তিনি মক্কায় আসতেন। লোকে জানবার পর আরো অত্যাচার করে তাঁকে। তিনি পরকালের ভয় দেখাতেন মানুষকে।
৩২৬ ইহুদী জাতির ইতিহাস
তিনি আরাফাত পাহাড়ে নিজে ‘লাব্বায়েক! আপনার খিদমতে আমি হাজির!’ এই ঘোষণা দিতেন হজের সময়।
কিশোর মুহাম্মাদ (সা) তাঁর সান্নিধ্যে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। একদিনের ঘটনা, বুখারির হাদিসে আছে, বালদাহ এলাকায় তারা দুজন একসাথে বসে আছেন। তখন পৌত্তলিক উপাসনায় উৎসর্গ করা খাবার তাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো। মহানবী (সা) খেলেন না। জায়েদও খেলেন না, বললেন, “যাতে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কিছুর নাম উচ্চারিত হয়েছে তা থেকে আমি খাব না।” জায়েদ এ কাজের খুব সমালোচনা করতেন।
তিনি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে পাহাড়ে থাকতেন। হেরা গুহায় বসে ধ্যান করতেন, যেখান থেকে মক্কা শহর দেখা যেত।
প্রকৃত হানিফ ধর্মের সন্ধানে তিনি বেরিয়ে পড়তেন। যখনই বেরিয়ে পড়ার পাঁয়তারা করতেন, তখনই তার স্ত্রী সাফিয়া খাত্তাবকে বলে দিতেন।
সিরিয়া ঘুরে তার সত্য ধর্ম অনুসন্ধানের কাহিনী বেশ বড়। তিনি ইহুদী, খ্রিস্টান সব ধর্মই জানলেন, হানিফ ধর্ম নিয়েও জানলেন, আর তাকে এক খ্রিস্টান সাধু জানালেন যে, এক নবী শীঘ্রই আসবেন। কিন্তু তিনি তাঁর দেখা পাবেন কি না নিশ্চিত ছিলেন না। সিরিয়া থেকে মক্কা ফিরবার পথে, মক্কার কাছাকাছি এসে রহস্যজনকভাবে তিনি খুন হন।
মহানবী (সা) বলেন, যায়েদকে ঈসা (আ) ও আমার মাঝে আলাদা এক উম্মত হিসেবে একা হাশরের ময়দানে পুনরুত্থিত করা হবে। যায়েদ এই দোয়া করে গিয়েছিলেন যে, তিনি শেষ নবীর দেখা না পেলেও, তাঁর ছেলে যেন পায়।
ইসলামের দেখা কি পেয়েছিলেন তাঁর ছেলে?
পেয়েছিলেন। ইসলামের একদম প্রথম দিককার সদস্য ছিলেন সাইদ ইবনে জায়েদ (রা)। তাঁর স্ত্রী ছিলেন ফাতিমা (রা), উমার (রা) এর বোন। এই সাইদের কুরআন পড়বার শব্দ শুনেই রাগান্বিত উমার (রা) বোনের ঘরে ঢুকে আঘাত করে বসেন আর অচিরেই উমার (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন। তিরমিজির (৩৭৪৭) যে হাদিসে দশজন নিশ্চিত বেহেশতবাসীর নাম রাসুল (সা) বলেছিলেন তাঁর মাঝে একজন ছিলেন জায়েদের ছেলে সাইদ (রা)। (অবশ্য, তার ইসলাম গ্রহণের আরেকটি ঘটনাও পাওয়া যায়।)
যা-ই হোক, যে ঘটনাগুলো খাদিজা (রা) এর সাথে মুহাম্মাদ (সা) এর বিয়েকে ত্বরান্বিত করে, সেই বিয়েতে কী কী হয়েছিল সেগুলো আমরা শুরু করব ভিন্ন এক বইয়ে, যেখানে প্রথম ওহী নাজিলের আগের কিছু স্বল্প জানা বিষয় নিয়েও জানব! সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, ওহী নাজিলের যে ঘটনাটা আমরা জানি, তার সাথেও ঘটেছিল আরও চমকপ্রদ কিছু ব্যাপার, যা খুব কমই তুলে ধরা হয় বেশিরভাগ বইতে! তবে সে বই বের হবার উদ্যোগ নির্ভর করবে পাঠকের চাওয়ার ওপর।