অধ্যায় : সতের – জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি ১,৫০,০০০ টাকার চ্যালেঞ্জ

অধ্যায় : সতের – জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি ১,৫০,০০০ টাকার চ্যালেঞ্জ

চার ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি সহযোগী সংস্থায় সমন্বয়কারী হিসেবে এবং নিজের শাখা সংগঠনগুলোকে নিয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের মূল স্রোতে কাজ করছে। এই আন্দোলনেরই এক উল্লেখযোগ্য পর্যায় হল—’চ্যালেঞ্জ’। প্রচার ও বিজ্ঞাপনের দৌলতে যে গল্পের গরুগুলো গাছে চড়ে বসেছে, তাদের মাটিতে নামিয়ে এনে আবার ঘাস খাওয়ানোর জন্যেই এই ‘চ্যালেঞ্জ’। দোদুল্যমান, সুবিধাভোগী ও ঈর্ষাকাতরদের কাছে চ্যালেঞ্জ ‘অশোভন’ মনে হতেই পারে, কেন না, ‘চ্যালেঞ্জ’ বাস্তবসত্যকে বড় বেশি স্পষ্ট করে তোলে। সাধারণ মানুষের কাছে তাই আজকের জনপ্রিয় প্রশ্ন এটাই – যেখানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই দাবি প্রমাণ করা যায়, বাস্তব সত্যকে জানা যায়, সেখানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে দ্বিধা থাকবে কেন?

পৃথিবীর সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতাধর ও জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে সাধারণত মানুষকে এই উপলব্ধিতে নিয়ে যেতে চাই – অলৌকিকত্ব ও জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততার অস্তিত্ব আছে শুধুপত্র-পত্রিকায়, ধর্মগ্রন্থে, বইয়ের পাতায় এবং অতিরঞ্জিত গল্প বলিয়েদের গল্পে। তাই ঘোষণা করছি—

আমি প্রবীর ঘোষ, এই বইটির লেখক এবং ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ঘোষণা করছি বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও ব্যক্তি কৌশলের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা যদি আমার নির্দেশিত স্থানে ও পরিবেশে নিম্নলিখিত যে কোনও একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেখাতে সমর্থ হন, তাঁকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় টাকা দিতে বাধ্য থাকব। আমার এই চ্যালেঞ্জ আমার মৃত্যু পর্যন্ত অথবা প্রথম অলৌকিক ক্ষমতাবানকে খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

যে ঘটনাগুলোর যে কোনও একটি কৌশল ছাড়া অলৌকিক ক্ষমতার সাহায্যেই ঘটিয়ে দেখাতে হবে—

১. যোগবলে ১০ মিনিট হৃদস্পন্দন বন্ধ রাখা।

২. যোগবলে শূন্যে ভাসা।

৩. একই সঙ্গে একাধিক স্থানে হাজির হওয়া।

৪. টেলিপ্যাথির সাহায্যে অনের মনের খবর জেনে দেওয়া।

৫. জলের ওপর হাঁটা।

৬. এমন একটা বিদেহী আত্মাকে হাজির করা, যার ছবি তোলা যায়।

৭. বিদেহী আত্মা এনে তার সাহায্যে পকেট-বন্দি বা খাম-বন্দি নোটের নম্বর বলা। ৮. একটা নোট দেখাবো, সেই নোটের হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করতে হবে।

৯. অতীন্দ্রিয় ক্ষমতায় আমার বা আমার মনোনীত কোনও ব্যক্তির চলন্ত গাড়ি থামাতে হবে।

১০. মানসিক শক্তির সাহায্যে কঠিন কোনও বস্তুকে বাঁকাতে হবে বা সরাতে হবে। ১১. জলকে পেট্রলে বা ডিজেলে পরিণত করতে হবে।

১২. অলৌকিক ক্ষমতাবলে বা জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্যে আমার দেওয়া দশটি ছক বা হাতের ছাপ দেখে প্রত্যেক ছক বা হাতের ছাপের অধিকারীর অতীত সম্বন্ধে পাঁচটি করে প্রশ্নের মধ্যে অন্তত চারটি করে প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর দিতে হবে।

১৩. অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির সাহায্যে একটি খামে বা বাক্সে রাখা জিনিসের সঠিক বর্ণনা দিতে হবে।

চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীদের নিম্নলিখিত শর্তগুলো মানতে হবে—

১. আমার চ্যালেঞ্জের অর্থ গ্রহণ করুন বা না করুন, আমার চ্যালেঞ্জ যিনি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাঁকে আমার কাছে অথবা আমার মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জামানত হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তিনি জিতলে আমার চ্যালেঞ্জের টাকাসহ তাঁর জামানতের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

জামানতের ব্যবস্থা রাখার একটিমাত্র উদ্দেশ্য, আমার সময় ও অকারণ শ্রম বাঁচানো, সেই সঙ্গে যাঁরা শুধুমাত্র সস্তা প্রচারের মোহে অযথা আমাকে অস্বস্তিকর ব্যস্ততার মধ্যে ফেলার জন্যে এগুতে চান, তাঁদের প্রতিহত করা।

২. যাঁর নামে জামানতের অর্থ জমা হবে, একমাত্র তিনিই চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী হিসেবে গণ্য হবেন।

৩. চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী ছাড়া কারও সঙ্গেই চ্যালেঞ্জ বিষয়ে কোনও রকম আলোচনা চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেবলমাত্র চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী চ্যালেঞ্জ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনায় আমার সঙ্গে অথবা আমার মনোনীত ব্যক্তির সঙ্গে বসতে পারবেন বা যোগাযোগ করতে পারবেন।

৪. চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীকে আমার মনোনীত ব্যক্তির সামনে দাবির প্রাথমিক পরীক্ষা দিতে হবে।

৫. চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী দাবির প্রাথমিক পরীক্ষায় কোনও কারণে হাজির না হলে অথবা দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে, তাঁর জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে।

৬. চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী দাবির প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমি সর্বসমক্ষে চূড়ান্ত ও শেষ পরীক্ষা গ্রহণ করব।

পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী তাঁর ক্ষমতা প্রমাণ করতে পারলে আমি পরাজয় স্বীকার করে নেব। একই সঙ্গে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি তাদের সমস্ত রকম অলৌকিক ও জ্যোতিষ-বিরোধী প্রচার অভিযান ও কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবে।

আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, আমি সেইসব অলৌকিক ক্ষমতাগুলোই দেখাতে বলেছি যেগুলো নিয়ে বিভিন্ন অবতারদের বহু অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে বা কিংবদন্তির রূপ পেয়েছে।

একই সঙ্গে পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার নামধারী প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধে সচেষ্ট হোন। আপনাদের সব রকম সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সমিতি এবং আমি সব সময়ই থাকব, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ কোনও একটি বা গুটিকয়েক সংগঠন বা ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। এ-কাজ প্রতিটি সমাজ-সচেতন মানুষের কাজ। আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা ও সক্রিয় প্রতিরোধই পারে গোটা সমাজকে আন্দোলিত করতে। মানুষ বঞ্চিত হতে হতে আজ বারুদের স্তূপ হয়ে রয়েছে। আপনাদের সোচ্চার আন্দোলনই পারে সেই বারুদের স্তূপে আগুন লাগাতে, যে আগুনে বুজরুক ও তার পৃষ্ঠপোষকরা জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

রহস্যবাদ, কুসংস্কার ও অধ্যাত্মবাদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামই আসাম্যের সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সুসংস্কৃতির আগ্রাসন এবং অবশ্যই সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা গড়ার প্রথম ধাপ। এ’কথাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা গড়ের ওঠার আগে, গড়ে ওঠার সময় ও গড়ে ওঠার পরে, অর্থাৎ সব সময়ই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই। সাম্যের পদধ্বনি শুনলেই যারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানে ছুটি দিতে চায়, তাদের সেই সাম্যের কাঠের প্রাসাদে ঘুণ পোকা হয়ে আসে রহস্যবাদ ও অধ্যাত্মবাদই। ভোগবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতেই ওরা আসে।

যে নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আগুন আজ ভারতে জ্বলছে, তাকে ব্যাপ্ত ও প্রজ্জ্বলিত রাখার দায়িত্ব নিতে হবে সাম্যের সুন্দর সমাজ গড়তে চাওয়া এবং সেই সমাজকে পালন ও পুষ্ট করতে চাওয়া প্রতিটি মানুষকেই।

আসুন, সংঘর্ষ ও নির্মাণে স্বপ্নের সমাজ গড়ার লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *