১৩. সুন্দরী মেরিয়ান

১৩. সুন্দরী মেরিয়ান

মাঝে মাঝেই মন খারাপ হয়ে যায় রবিনের।

দলবল নিয়ে রোমাঞ্চ আর আনন্দের মাঝে বেশ আছে সে শেরউড জঙ্গলে, কারো তোয়াক্কা রাখতে হয় না, কাউকে পরোয়া করতে হয় না; যা খুশি করছে, যেমন খুশি চলছে; কিন্তু তবু কি যেন অপূর্ণ রয়ে গেছে তার জীবনে, মনে হয় কী হলে যেন আরও ভাল হতো। মনটা ছেয়ে যায় বিষাদে।

এই রকম দুর্বল মুহূর্তে একজনের মুখের ছবি বার বার ভেসে ওঠে ওর মনের পর্দায়। একটি মেয়ে। সেই ছেলেবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে ওরা। পাশের বাড়ির একজন সৎ লোকের একমাত্র মেয়ে, সুন্দরী মেরিয়ান। গভীর বন্ধুত্ব ছিল ওদের দু’জনে সেই শৈশব থেকে কৈশোর ছাড়িয়ে তারুণ্য পর্যন্ত। একসাথে খেলেছে, পাখির বাসা খুঁজেছে, ছিপ ফেলেছে ঝর্ণার জলে, গাছে উঠেছে, দৌড়ের পাল্লা ধরেছে বড় বড় ঘাসে ছাওয়া বিস্তীর্ণ ময়দানে। বিশেষ করে মনে পড়ে ওর তারুণ্যের সেই সব দিনের কথা, যখন হঠাৎ ছোঁয়াছুঁয়ি হয়ে গেলে কেমন যেন লাল হয়ে উঠেছে দু’জনের মুখ।

তারপর তো জঙ্গল রক্ষীদের চক্রান্তে দস্যু হয়ে গেল রবিন হুড। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল দু’জনের। সেই থেকে আর দেখা হয়নি ওদের। একজন দস্যু হিসেবে মেরিয়ানের বা তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবার সাহস হয়নি ওর কোনদিন। বার বার শয়নে স্বপনে ওর মনের পর্দায় ভেসে উঠেছে মেরিয়ানের অপূর্ব সুন্দর মুখটা, মাথা ঝাঁকিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে সে ভাবনাটা। নাহ্, সে-সুখ নেই ওর কপালে।

এদিকে রবিনের চলে যাওয়ার পর একে একে অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে মেরিয়ানের জীবনেও। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে অবস্থার। বাবা-মা মারা গেছেন, আত্মীয়স্বজনের নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিপদে, এসেছে যৌবন, সেই সাথে পাড়া- প্রতিবেশীদের সুযোগ গ্রহণের অপচেষ্টা। বার বার মনে পড়ে ওর রবিনের কথা, সেই দুর্দান্ত সাহসী ছেলেটা, যার হাতে প্রাণ-মন সঁপে দিয়েছিল সে কৈশোরে, ও থাকলে আজ কিছুতেই চুপ করে থাকতে পারতো না, ওর এই দুরবস্থা দেখে কিছু একটা ব্যবস্থা করতোই। কিন্তু হঠাৎ একদিন কোথায় যে হারিয়ে গেল মানুষটা। সেই যে গেল, আর কোন খবরই পাওয়া গেল না রবিনের।

ইদানীং কিছুদিন ধরে দস্যু রবিন হুডের কথা শোনা যাচ্ছে লোকের মুখে মুখে। ওর বীরত্ব ও কীর্তি-কাহিনীর কথা গান বেঁধে গাইছে চারণেরা, সন্ধ্যায় উনুনের ধারে বসে আলাপ করছে মানুষ। রবিন হুডের মহত্ত্ব আর দুঃসাহসের গল্প শুনে পরিষ্কার বুঝতে পারলো মেরিয়ান যে এ লোক আর কেউ নয়, ওর শৈশবের বন্ধু—সেই রবিন। মনে মনে স্থির করে ফেললো, এই নির্বান্ধব, দুঃসহ পরিবেশ ত্যাগ করে শৈরউডে গিয়ে খুঁজে বের করবে সে রবিনকে, দেখবে এখনও ওকে মনে রেখেছে কিনা সে। কিন্তু কাজটা একজন মহিলার, বিশেষ করে যুবতীর জন্যে অত্যন্ত বিপজ্জনক, তাই অনেক ভেবেচিন্তে ছদ্মবেশ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিল সে। একদিন বালক-ভূত্যের উর্দি পরে তীর-ধনুক আর ঢাল-তলোয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে রবিনের খোঁজে। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে গেল, তবু থামলো না।

শেরউডে পৌঁছে বিশাল ওকের ছায়ায়, ছায়ায় হাঁটছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে মেরিয়ান, কাউকে দেখলেই জিজ্ঞেস করবে কোনদিকে রবিন হুডের আস্তানা।

এদিকে সেদিনই সকালে আস্তানা ছেড়ে ছদ্মবেশে বেরিয়েছে রবিন হুড খবর সংগ্রহের জন্যে। শোনা যাচ্ছে হেরিফোর্ডের বিশপ নাকি নটিংহামে পৌছে কড়া শাসানী দিয়েছেন শেরিফকে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশু উন্নতি করতে না পারলে স্বয়ং রাজার কানে তুলবেন তিনি রবিন হুডের বাড়াবাড়ি এবং শেরিফের অক্ষমতার কথা। এ ব্যাপারে শেরিফ কি করতে যাচ্ছেন সেটা আগেভাগেই ওর জানা দরকার, তাই এক চোখে একটা ঠুলি বেঁধে নিয়ে অসংখ্য তালি দেয়া ভিখারীর পোশাক গায়ে চাপিয়ে নিয়েছে সে, মাথায় পরেছে বড়সড় একখানা তোবড়ানো টুপি— সামনের দিকে টেনে নামিয়ে দিয়েছে টুপিটা, যাতে সহজে চেনা না যায়।

ঘন্টাখানেক চলার পর ছিমছাম, সুন্দর চেহারার এক বালক-ভৃত্যকে দেখতে পেল সে; জঙ্গল-পথ ধরে সোজা হেঁটে আসছে ওর দিকে। একলাফে রাস্তা থেকে সরে একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো রবিন। কে ছেলেটা, কোত্থেকে আসছে, কোথায় যাচ্ছে জানা দরকার। কিন্তু তার আগে জানা দরকার ছোকরা একা কিনা। এতদিনে বহু লোকের শত্রুতা অর্জন করেছে সে, এটা তাদেরই কারো ফাঁদ হওয়া বিচিত্র নয়। আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখলো সে ছেলেটার ওপর। নির্ভীক পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে ছেলেটা। বোঝা যাচ্ছে সাথে আর কোন লোক নেই। কাছাকাছি আসতেই এক লাফে রাস্তার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো রবিন, কর্কশ কণ্ঠে হুকুম করলো থামার জন্যে।

থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ছেলেটা। জিজ্ঞেস করলো রবিন, ‘কে তুমি? কি চাও তুমি শেরউডে?’

ছেলেটা আসলে ছদ্মবেশী মেরিয়ান। দারুণ ভয় পেয়েছে সে ভিতরে ভিতরে ডাকাতের মত লোকটাকে দেখে, কিন্তু মুখের ভাবে সেটা প্রকাশ পেতে দিল না। লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেল সে খানিকটা, ডান হাতটা চলে এসেছে ওর তরবারীর বাঁটে। পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে সে, এ লোক রবিনের দলের কেউ হতেই পারে না, এখন দৃঢ় মনোভাব না দেখালে নাস্তানাবুদ হতে হবে এর হাতে। মুখে বললো, ‘খবরদার, ভাল হবে না বলে দিচ্ছি! সরে দাঁড়াও, নইলে বাধ্য হবো তলোয়ার বের করতে। কে আমি, কি চাই সেটা তোমার না জানলেও চলবে।’

‘চলবে না,’ এপাশ ওপাশ মাথা দোলালো রবিন। ‘হয় আমাকে বলবে কোথায় কেন চলেছো, নয়তো এখান থেকেই ফিরে যেতে হবে তোমাকে যে-পথে এসেছো সেই পথে।’

‘ফিরে যেতে হবে?’ ভুরু কুঁচকে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করার চেষ্টা করলো মেরিয়ান। ‘ফেরাও দেখি কতবড় সাধ্য তোমার!’

‘বাহ্! দারুণ বীর মনে হচ্ছে, ছোকরা!’ হাসলো রবিন। ‘ওই খেলনা তলোয়ার দেখিয়ে কাকে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছো তুমি? আমি কি এখনো তোমার মত দুধের বাচ্চা রয়েছি নাকি হে?’

‘এই খেলনার ধারই সহ্য করা মুশকিল হয়ে যাবে তোমার পক্ষে,’ বলেই সড়াৎ করে টান দিয়ে বের করে আনলো মেরিয়ান তলোয়ারটা। ‘পথ ছাড়ো, নইলে কপালে খারাবি আছে আজ তোমার!’

‘কোথায় যাচ্ছো বলবে না?’

‘না। যেমন করে পারি জঙ্গলের মাঝখানে পৌঁছতেই হবে আমার।’

সন্দেহ আরও বেড়ে গেল রবিনের। স্পাই নয় তো? আমার আস্তানার খবর নিতে পাঠিয়েছে হয়তো একে শেরিফ। সিদ্ধান্ত নিল, কিছুতেই একে আর এক পা সামনে বাড়তে দেয়া উচিত হবে না। বললো, ‘আমি বারণ করছি তোমাকে। ভালো চাও তো মানে মানে ফিরে যাও, নইলে আমিও বাধ্য হবো তলোয়ার বের করতে।’

‘বের করো না,’ বললো মেরিয়ান। ‘কিছু দিয়েই ঠেকাতে পারবে না আমাকে।’

মস্ত একখানা তলোয়ার বের করলেই ছোকরা ঘাবড়ে যাবে, এই ভেবে এক টানে বের করলো রবিন ওর বিশাল ক্ষুরধার তরবারী, তারপর ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে লাফ দিয়ে এগিয়ে এলো সামনে। কিন্তু বিন্দুমাত্র ঘাবড়ালো না ছেলেটা, ঝনাৎ করে ঠেকিয়ে দিল প্রথম আক্রমণ। অবাক হলো রবিন পরিচারকের পারদর্শিতা দেখে। সমানে সমান লড়ে চলেছে সে সাহসের সাথে।

ঝন ঝন আওয়াজ হচ্ছে তরবারীর ঠোকাঠুকিতে। নিজের পুরো শক্তি বা কৌশল প্রয়োগ করছে না রবিন, একটা কচি ছেলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাতে মন সায় দিচ্ছে না। ফলে অনেকক্ষণ ধরে চললো লড়াই। একবার অরক্ষিত অবস্থায় বেকায়দায় পড়ে গেল রবিন, সামান্য একটু কেটে গেল ওর গাল। মনে মনে প্রশংসা করলো সে ছেলেটার সাহস ও নৈপুণ্যের, শান্তিপূর্ণ একটা মীমাংসায় আসার জন্যে একটা হাত তুলে থামতে বললো ওকে।

‘দাঁড়াও। নিজের পরিচয় দেবে না তুমি, ফিরেও যাবে না, কেন কোথায় চলেছো তাও বলবে না-বুঝলাম, এবার অন্য একটা প্রশ্নের জবাব দাও দেখি : আমি তোমার সাথে গেলে কোন আপত্তি আছে?’

‘নেই, যদি তুমি আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারো রবিন হুডের আস্তানায়, ‘ জবাব দিল ছেলেটা।

‘রবিন হুডের আস্তানায়!’ অবাক হয়ে গেল রবিন। ‘রবিন হুডের কাছে চলেছো তুমি?’

‘হ্যাঁ। পারবে তুমি আমাকে ওর কাছে নিয়ে যেতে?’ আকুল আবেদন ফুটে উঠলো ছেলেটার কণ্ঠে।

‘পারবো,’ বললো রবিন, ‘কিন্তু ওর কোন ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না। তোমার উদ্দেশ্য জানতে না পারলে কি করে তোমাকে নিয়ে যাই তার কাছে, বলো?’

তুমি রবিন হুডের লোক?’ জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা।

‘খুবই প্রিয় লোক,’ জবাব দিল রবিন। আমি তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’

‘ওহ্! তাই নাকি?’ দুঃখ প্রকাশ পেল ছেলেটির কণ্ঠে। ‘তাহলে তো ভারি অন্যায় হয়ে গেছে! আগেই পরিচয় দাওনি কেন? তোমার গাল কেটে যাওয়ায় আমি সত্যিই দুঃখিত।’

‘ও কিছু না,’ বললো রবিন। ‘কিন্তু এখনও তুমি বলোনি কেন দেখা করতে চলেছো রবিন হুডের সাথে।’

ধীরে ধীরে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো মেরিয়ানের গাল দুটো। চোখের দৃষ্টি নেমে গেল মাটির দিকে। মৃদুকণ্ঠে বললো, ‘আমি ওকে ভালবাসি।’

‘তুমি ওকে ভালবাসো!’ কপালের মাঝামাঝি জায়গায় উঠে গেল রবিনের ভুরুজোড়া, ছানাবড়া হয়ে গেছে দুই চোখ। ‘তুমি…’

‘ছেলের ছদ্মবেশে আছি,’ বললো মেরিয়ান। ‘আসলে আমি মেয়ে। সেই ছোটবেলা থেকে ভালবাসি আমি ওকে। একসাথে খেলেছি, একসাথে বড় হয়েছি আমরা। তোমার কাছে আমার অনুরোধ থাকলো, আমার গোপন কথাটা ওকে বলে দিয়ো না। আমি দেখতে এসেছি এখনও আমাকে ওর মনে আছে কিনা, এখনও ও আমাকে ভালবাসে কিনা। যদি দেখি ও আমাকে ভুলে গেছে, তাহলে চুপচাপ সরে পড়বো আমি, পুরনো কথা মনে পড়িয়ে দিয়ে ওর ঘাড়ে বোঝা হয়ে চাপবো না। আমাকে নিয়ে যাবে তুমি ওর কাছে?’

বিস্ময়ে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ চেয়ে রাইলো রবিন মেরিয়ানের মুখের দিকে চিনতে পারলো অবশেষে। দুকূল ছাপিয়ে বন্যার মত ভিড় করে আসতে চাইছে ওর মনের মধ্যে অসংখ্য স্মৃতি। কিন্তু সামলে নিল সে নিজেকে। মৃদু হেসে বললো, ‘বেশ, তোমার গোপন কথাটা ওকে বলে দেব না। চলো রওনা হয়ে যাই

হাঁটতে হাঁটতে একটা ঝর্ণার পাশে পৌঁছে থেমে দাঁড়ালো রবিন। বললো, ‘এসো, এখানে বসে একটু জিরিয়ে নেয়া যাক।’

বসলো ওরা। ঝর্ণার কুলকুল, পাখির গান, রোদ আর এলোমেলো হাওয়া আজ অদ্ভুত ভাল লাগছে রবিনের; বিশাল ওকের গুঁড়ি, ঝোপ-ঝাড়, ঘাস, পাতা যা চোখে পড়ছে সবই মনে হচ্ছে অপূর্ব সুন্দর। ঘুরেফিরে মেরিয়ানের অনিন্দ্যসুন্দর মুখের ওপর স্থির হতে চাইছে ওর দৃষ্টিটা বার বার। খুক খুক করে একটু কেশে নিয়ে বললো, ‘তুমি যখন তোমার মনের কথা আমাকে বললে, আমারটাও তোমাকে বলা উচিত। আমিও একটা মেয়েকে ভালবাসি। সেই ছোটবেলা থেকে। ওকে ছাড়া দুনিয়ার আর কিছুই ভাল লাগে না আমার। একসাথে খেলেছি, পাখির বাসা পেড়েছি, ঝর্ণার ধারে মাছ ধরেছি, মস্ত মাঠে দৌড়ে উধাও হয়ে গিয়েছি দু’জন হাত ধরাধরি করে। আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল ওদের বাড়ি। ওর বাবা ছিলেন এক মস্ত ধার্মিক, মহৎ মানুষ। ফুলের মত কোমল ছিল মেয়েটির মন, গোলাপের মত ছিল ওর মুখটা। এত সৌন্দর্য আর কোথাও খুঁজে পাইনি আমি। আজও চোখ বুজলেই দেখতে পাই আমি ওকে পরিষ্কার।

‘মিলন হয়নি?’ জানতে চাইলো মেরিয়ান। ‘ওকে বিয়ে করোনি কেন?’

‘ওকে যে ভালবাসি একথা জানাবার আগেই তো হঠাৎ করে দস্যু হয়ে যেতে হলো আমাকে। যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয়, এই ভয়ে আর আমি যেতে পারিনি ওর কাছে।’

‘কিন্তু যাওয়া উচিত ছিল,’ বললো মেরিয়ান। হয়তো মেয়েটা এখনও অপেক্ষা করছে তোমার জন্যে, আমি যেমন অপেক্ষা করেছি রবিনের জন্যে। মেয়েটার জন্যে বড় দুঃখ হচ্ছে আমার।

‘ঠিক আছে, তুমি যখন ভরসা দিচ্ছো, যাব আমি। কিন্তু তোমার কাছে অনুরোধ থাকলো, ওকে আবার বলে দিয়ো না। আজও ওকে ছাড়া আর কাউকে ভাল লাগে না আমার, কত বিনিদ্র রাত যে আমার কেটেছে ওর কথা ভেবে। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। ভেবেছি, ওকে পেলে জীবনটা পরিপূর্ণ হয়ে যেতো আমার।’

‘হিংসে লাগছে মেয়েটার কপাল দেখে। কি নাম ওর?’

‘ওর নাম মেরিয়ান।’

‘আশ্চর্য! আমার নামও তো মেরিয়ান!’

‘আর আমার নাম রবিন হুড।’

এবার কপালে চোখ ওঠার পালা মেরিয়ানের। চোখের ঠুলি খুলে ফেললো রবিন, টুপিটা নামালো মাথা থেকে।

পরিষ্কার চিনতে পারলো এবার ওকে মেরিয়ান। উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর বুকে।

‘রবিন! আমার রবিন!’

‘আমার মেরিয়ান!’ হাসলো রবিন, ‘কথা দিচ্ছি, তোমার গোপন কথা জানিয়ে দেব ‘না রবিনকে।’

‘পাজি কোথাকার!’ কিল দিল মেরিয়ান রবিনের পিঠে। ‘তোমার কথাও আমি জানি!’

সুখ-দুঃখের অনেক কথা হলো দুই বন্ধুতে। তারপর উঠে দাঁড়ালো রবিন। ‘চলো, তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিই সবার সাথে।’

আস্তানায় ফিরে অ্যালান-এ-ডেলের স্ত্রী এলেনের হাতে ছেড়ে দিল রবিন মেরিয়ানকে। দু’হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে এলেন। সন্ধের সময় সবাই যখন ফিরলো ডেরায়, এলেনের পোশাক পরা মেরিয়ানকে নিয়ে গেল রবিন দলের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। পরিচয় পর্ব শেষ হতেই বিশাল ভুঁড়ি নিয়ে হেলে-দুলে সামনে এসে দাঁড়ালো সন্ন্যাসী টাক। তৈরি হয়ে নাও, বৎস! শুভস্য শীঘ্রম!’

‘তার মানে?’ অবাক হলো রবিন।

‘মানে আর কিছুই নয়, তোমাদের বিয়েটা আজই পড়িয়ে দিতে চাই। কতদিন আর বাঁচবো বলো? দেখছো না, কত শুকিয়ে গেছি! ভোজের সংখ্যা যেমন দিন দিন কমে আসছে, না খেয়েই মারা যাবে এই সন্ন্যাসী বেচারা। বিয়ের ছুতোয় একটা যদি ভোজ- টোজ…’

লিটল জন আর উইল স্কারলেট ছুটলো হরিণ মেরে আনতে, জনা দশেক অনুচর লেগে গেল মস্ত এক ভোজের আয়োজনে, হৈ-চৈ পড়ে গেল গোটা দলের মধ্যে, এক বাক্যে সায় দিল সবাই সন্ন্যাসী টাকের প্রস্তাবে।

মহা ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়ে গেল রবিনের সাথে মেরিয়ানের। আমোদ-ফূর্তি, গান-বাজনা, গল্প-হাসি-তামাশা, হরিণের মাংস দিয়ে ভুরিভোজন চললো অনেক রাত পর্যন্ত; সেই সাথে চললো গ্লাসের পর গ্লাস অকটোবর এল। মস্ত চাঁদটা পশ্চিম আকাশে হেলে না পড়া পর্যন্ত ঘুমাতে গেল না কেউ।

এইভাবে বরণ করে নিল ওরা সুন্দরী মেরিয়ানকে শেরউডের রানী হিসেবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *