১. কিভাবে রবিন দস্যু হলো
গভীর গহীন এক বিশাল জঙ্গল। নাম শেরউড ফরেস্ট। সেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা আঁকাবাঁকা সরু পথ ধরে দ্রুত, দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে এক যুবক। পরনে সবুজ পোশাক, মাথায় নীল রঙের হুড, কাঁধে প্রকাণ্ড এক ধনুক, পিঠের তূণে বিশ-পঁচিশটা তীর। চলার ছন্দে দুলছে কোমরে ঝুলানো খাপে পোরা ছোট্ট ছোরাটা।
পথের দুপাশে দাঁড়ানো প্রকাণ্ড উঁচু ওক গাছের ফাঁক দিয়ে জঙ্গলের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো যুবক। একদল হরিণ ছুটে চলে যাচ্ছে। চট্ করে একটা হাত চলে গেল ওর ধনুকের কাছে। অপর হাতে তূণ থেকে একটা তীর তুলে নিতে গিয়েও সামলে নিল সে নিজেকে। না। এটা রাজার সংরক্ষিত জঙ্গল, ওগুলো রাজার হরিণ। ওগুলোর একটা মারলে চোখ উপড়ে নেয়া হবে, কান কেটে দেয়া হবে, এবং আরও এমন সব ভয়ঙ্কর শাস্তি দেয়া হবে যার চেয়ে মৃত্যুও অনেক ভাল। বেআইনী কিছু করে বসা ঠিক হবে না।
আবার হাঁটতে শুরু করলো যুবক। কিছুদূর এগিয়ে রাস্তা ছেড়ে ঢুকে পড়লো জঙ্গলে। ওর জানা আছে, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কিছুটা এগোলে অনেকখানি ঘুরপথ এড়ানো যাবে। তাছাড়া জঙ্গল ওর ভাল লাগে। ভাল লাগে জংলী পাখির কল-কাকলি। এদিকটায় এখানে-ওখানে হলি আর হেজেলউডের ঝোপঝাড়। পাশ কাটিয়ে এগোচ্ছে, হঠাৎ কর্কশ একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
‘অ্যাই! দাঁড়াও! রাজার জঙ্গল মাড়াচ্ছো যে? কে তুমি? কোথায় যাওয়া হচ্ছে অমন বীরদর্পে?’
ঘুরে দাঁড়ালো যুবক। দেখলো পাঁচ-ছয়জন লোক বসে আছে একটা মস্ত ওক গাছের নিচে, পান-ভোজনে ব্যস্ত। ওদের মধ্যে একজন উঠে দাঁড়িয়েছে ওকে দেখে! এক নজরেই চিনতে পারলো যুবক এদের। জঙ্গল-রক্ষী। সসম্ভ্রমে সালাম করলো সে।
‘আমার নাম,’ মৃদু হেসে বললো যুবক, রবার্ট ফিযুথ। ‘যদিও বেশির ভাগ লোক আমাকে ডাকে রবিন হুড বলে। যাচ্ছি নটিংহাম শহরে।’
‘কেন? কি কাজ তোমার নটিংহামে?’
‘ওখানকার শেরিফ একটা শূটিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক বড় বড় তীরন্দাজ আসছেন। আমিও চলেছি আমার তীর-ধনুক নিয়ে।’
হো হো করে হেসে উঠলো লোকটা। ‘বলে কি পুঁচকে ছোঁড়া! বড়দের একটা ধনুক কাঁধে নিয়ে বেড়ালেই কি তীরন্দাজ হওয়া যায়?’ আবার হাসলো একপেট। ও ধনুকে ছিলা পরাবার ক্ষমতা আছে নাকি তোমার? লক্ষ্যভেদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।
‘আরে দূর!’ বলে উঠলো ভোজনরত একজন গার্ড। ‘দুধের বাচ্চা, ধনুকটা একটু বাঁকা করেই দেখাক না খোকন!’
টিটকারি শুনে রাগে লাল হয়ে গেল রবিনের মুখটা। জ্বলে উঠলো দুই চোখ। ‘বেশ তো!’ বললো সে, ‘তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল তীরন্দাজ, এসো না, বাজি হয়ে যাক। দেড়শো গজের মধ্যে যে-কোন লক্ষ্য ভেদ করে দেব আমি।’
‘কি বাজি ধরবে? কত আছে তোমার কাছে, ছোকরা?’ সকৌতুকে জানতে চাইলো দাঁড়ানো লোকটা। হাতে ধরা রূপোর পাত্র থেকে মদ খেল এক ঢোক। রবিন বুঝলো, এই লোকটাই রক্ষীদের দলনেতা।
‘বিশ মার্ক,’ জবাব দিল সে।
‘বেশ!’ ভুরু কুঁচকে উঠলো দলনেতার। বোঝা গেল রেগে গেছে সে এই অল্পবয়েসী যুবকের ঔদ্ধত্য দেখে। হঠাৎ একটা আঙুল তুললো সে বহুদূরের একটা ঝোপের দিকে। ‘ঐ যে তোমার টার্গেট। লাগাও দেখি?’
রবিন চেয়ে দেখলো কোত্থেকে দৌড়ে এসে ঝোপটার পাশে থমকে দাঁড়িয়েছে একদল হরিণ। টের পেয়েছে কাছে-পিঠে মানুষের উপস্থিতি। সবার আগে রয়েছে একটা বিশাল শিং-অলা পুরুষ হরিণ। নাক ওপরে তুলে গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করছে, অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে সামনের একটা পা ঠুকছে মাটিতে।
কোন কথা না বলে ধনুকটা নামাল রবিন কাঁধ থেকে, বাঁকা করে ছিলা পরালো তাতে, তারপর তূণ থেকে বেছে বের করলো পছন্দসই একটা তীর। ওর সহজ স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি দেখে টের পেয়ে গেল সবাই, যে-সে লোক নয় এই যুবক, অল্পবয়সী হলে কি হবে, প্রচণ্ড শক্তি রয়েছে ওর গায়ে, আর রয়েছে তীর-ধনুকের ব্যাপারে অসাধারণ দক্ষতা। বাঁকা হয়ে গেল বিশাল ধনুকটা। ডান হাতটা চলে এসেছে কানের পাশে।- পরমুহূর্তে মৃদু ঝংকার উঠলো ছিলায়। বাতাসে শিস কেটে ছুটলো তীর। সবাই দেখল, লাফিয়ে শূন্যে উঠলো বড় হরিণটা, তারপর ধড়াশ করে পড়লো মাটিতে। ঠিক হৃৎপিণ্ডে গেঁথে রয়েছে তীরটা।
কয়েক মুহূর্ত বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে রইলো বনরক্ষীর দল, তারপর প্রশংসার মৃদু গুঞ্জন উঠলো ওদের মধ্যে। হাসিমুখে রক্ষী-প্রধানের দিকে ফিরলো রবিন। হাত বাড়ালো।
‘দিন’। বিশ মার্ক পাওনা হয়েছি আমি।’
বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো লোকটার মুখে। বললো, ‘দিচ্ছি। তবে বিশ মার্ক নয়। তোমার আসল পাওনা কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে দেব আমি।’ কুৎসিত চাতুরীর একটা ভাব খেলা করছে ওর চোখেমুখে। ‘তোমার কি পাওনা হয়েছে জানো? আইন ভঙ্গের উপযুক্ত সাজা। রাজার হরিণ মেরেছো, নিশ্চয়ই জানা আছে তোমার এই অপরাধের শাস্তি কি? সেটাই দেয়া হবে তোমাকে।’ নিজের লোকদের ইঙ্গিত করলো সে, ‘ধরো, ধরো ব্যাটাকে!’
মুহূর্তে বুঝে নিল রবিন ওদের কথায় রেগেমেগে বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে কি ভয়ঙ্কর বিপদে জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে। ছুটে পালাবার জন্যে পা বাড়ালো, কিন্তু তখন দেরি হয়ে গেছে। ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর ওপর দু’জন জঙ্গল-রক্ষী, তাদের সাহায্যের জন্যে এগিয়ে এলো আরো দু’জন। মাটিতে পেড়ে ফেলে ঠেসে ধরা হলো ওকে, বেঁধে ফেলা হলো হাত-পা।
‘যাক, হাতে নাতে ধরা গেল এক হারামজাদাকে!’ বললো রক্ষী-প্রধান। ‘হরিণ চুরি যাচ্ছে, অথচ বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও চোর ধরতে পারছি না খেপেই উঠছিল শেরিফ। আজ শান্ত করা যাবে তাকে।’
কথা শুনে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো রবিনের। নিজের কর্মতৎপরতার প্রমাণ দেখাবার জন্যেই ওকে হরিণ মারার ফাঁদে ফেলেছে লোকটা। এখন ওকে নটিংহামে নিয়ে গিয়ে চালান দিয়ে দেবে হরিণ-চোর হিসেবে। নর্মান শেরিফের কাছে কাকুতি মিনতি করে যে কোন লাভ হবে না, ভাল করেই জানা আছে ওর। ওর কথা কানেই তুলবে না সে। ও চোর হোক বা না হোক, কিছু এসে যায় না অত্যাচারী নিষ্ঠুর শেরিফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার সুযোগ সে কোনমতেই হাতছাড়া করবে না, যাতে ওর ভয়াবহ পরিণাম দেখে সাবধান হয়ে যায় অন্য সব স্যাক্সন প্রজা।
রক্ষী-প্রধানের কথা শুনে হৈ হৈ করে উঠলো সব ক’জন রক্ষী। প্রস্তাবটা খুবই পছন্দ হয়েছে তাদের। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করলো হরিণটার চামড়া ছাড়িয়ে সেই চামড়া দিয়ে মুড়ে নিয়ে যাওয়া হবে ছোকরাকে শহরে। ব্যাস, লেগে গেল ওরা কাজে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রবিনকে হরিণের উত্তপ্ত পিচ্ছিল চামড়ার খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে বেঁধে ফেলা হলো বাইরে থেকে। মাথাটা শুধু বেরিয়ে আছে ঠিক যেখানে হরিণের মাথা ছিল সেই জায়গা দিয়ে।
রাগে দুঃখে জ্বলছে রবিনের কলজেটা। এইসব নীচ বিশ্বাসঘাতকদের কাছে সে প্রমাণ করতে গিয়েছিল ধনুর্বিদ্যার দক্ষতা! চোখের সামনে ভেসে উঠছে নটিংহামের বাজারটা। নিজের চোখে দেখেছে সে ওখানে এক হরিণ-চোরের শাস্তি। বেচারা ক্ষুধার জ্বালায় মেরেছিল হরিণটা। লোকটার যন্ত্রণাকাতর চেহারা, গোঙানি আর নিরুপায় ছটফটানি মনে আছে স্পষ্ট। সেই একই ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে ওর নিজের কপালে, ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠছে সে বারবার। বাকি জীবনটা অন্ধ আর পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করা যায় না। বারবার শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে হাত-পায়ের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু বৃথা চেষ্টা, বাঁধন আলগা তো হলোই না, বরং এঁটে বসলো আরও।
‘এখন এ ব্যাটাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার কি ব্যবস্থা?’ জানতে চাইল একজন গার্ড। মাথা চুলকালো রক্ষী-প্রধান, তারপর বললো, ‘আধ মাইল দূরে জনা তিনেক স্যাক্সন কাঠুরেকে কাঠ কাটতে দেখেছিলাম না? তুমি এক কাজ করো, ডিকন। দৌড়ে গিয়ে ডেকে নিয়ে এসো ওদের। টানা গাড়িটাও সাথে করে আনতে বলবে, যাও।’
ছুটে চলে গেল ডিকন। খানিক বাদেই ফিরে এলো টানাগাড়ি সহ কাঠুরেদের নিয়ে।
‘তোলো এই ব্যাটাকে গাড়িতে,’ হুকুম করলো রক্ষী-প্রধান কাঠুরেদের উদ্দেশে। ‘তারপর টেনে নিয়ে চলো শহরে।’
তিনজন কাঠুরের মধ্যে দুজন দ্রুত এগিয়ে এলো হুকুম পালন করতে, তৃতীয়জন এগোলো অনেকটা যেন ইচ্ছের বিরুদ্ধে। পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছে অত্যন্ত নিম্নবিত্ত লোক এরা। প্রথম দুজন বৃদ্ধ, কিন্তু তৃতীয়জন বছর তিরিশেক বয়সের শক্ত সমর্থ এক যুবক। কেউ কোন কথা বললো না, তিনজন মিলে রবিনকে টানা গাড়িতে তুলে নিয়ে চললো শহরের দিকে।
আধ মাইলের মত গিয়ে একটা এবড়োখেবড়ো রাস্তায় পড়লো গাড়ি। জোরে ঝাঁকুনি খেতে খেতে এগোচ্ছে, কাত হয়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক, রবিনের বস্তাবন্দী শরীরটা অসহায় ভঙ্গিতে গড়িয়ে গিয়ে একবার ধাক্কা খাচ্ছে গাড়ির এদিকে, একবার ওদিকে। আর তাই দেখে হাসিতে ফেটে পড়ছে জঙ্গল-রক্ষীরা।
গাড়ির পিছন পিছন হাসাহাসি করতে করতে হাঁটছে ওরা, হঠাৎ একলাফে সামনে এগিয়ে গেল রক্ষী-প্রধান। ধনুকটা মাথার ওপর তুলে প্রচণ্ড জোরে মারলো কম বয়েসী কাঠুরের কাঁধের ওপর।
‘অ্যাই, হারামজাদা!’ চেঁচিয়ে উঠলো রক্ষী-প্রধান, ‘ঠিক মত টানছিস না কেন? স্যাক্সনী বেয়াড়াপনা দেখানো হচ্ছে, না?’ এই বলে দমাদম আরো কয়েকটা কিল ঘুসি বসিয়ে দিল লোকটার ঘাড়ে মাথায়।
রাগে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যুবক কাঠুরে, চট্ করে ডান হাতটা চলে গিয়েছিল ওর কোমরে গোঁজা ছোরাটার বাঁটের ওপর, কিন্তু বৃদ্ধ একজনের সাবধানবাণী কানে যেতেই সরিয়ে নিল হাতটা।
‘উইল, মাথাটা ঠাণ্ডা রাখো, বাপ!’ কাঁপা গলায় বলে উঠলো বৃদ্ধ, ‘শান্ত হও। জঙ্গল-রক্ষীদের রাগানো ঠিক না।’
‘ঠিকই বলেছে বুড়ো হাবড়া, কর্কশ কণ্ঠে হেসে উঠলো রক্ষী-প্রধান। ‘আমাদের রাগিয়ে দিলে প্রচুর ক্ষতির আশঙ্কা আছে। হয়েছে এবার। জান-প্রাণ দিয়ে টানো তো এখন, স্যাক্সন কুত্তার বাচ্চারা।’ আবার এক পশলা কিল ঘুসি বর্ষণ করলো লোকটা তরুণ কাঠুরের ঘাড়ে মাথায়। বাধা দিল না তরুণ, পিঠ বাঁকা করে ঘ গুজে সহ্য করে নিল নির্যাতন, একান্ত বাধ্য ভৃত্যের ভঙ্গিতে আবা টানতে শুরু করলো গাড়ি। কিন্তু রবিন লক্ষ্য করলো, ধক্ ধক্ করে জ্বলছে যুবকের চোখ।
বেশ অনেকদূর এগোবার পর একটা বাঁক ঘুরতেই দেখা গেল ছোট্ট একটা গ্রাম। একটা বাড়ির দরজার দু’পাশে লতা-ঝোপ দিয়ে সাজানো।
‘সরাইখানা!’ খুশি হয়ে বললো একজন রক্ষী। ‘এখানে থেমে দু’ঢোক মদ খেয়ে নিলে কেমন হয়? উহ্, পিপাসায় একেবারে শুকিয়ে গেছে বুকটা।’
একবাক্যে রাজি হয়ে গেল বাকি সবাই। ছোট্ট সরাইখানার সামনে থামানো হলো টানা গাড়ি। নিজেদের জন্যে মদের অর্ডার দিল রক্ষীরা।
সরাইখানার সামনে মদের পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছিল রক্ষীরা, এমনি সময় ওদের একজন চেঁচিয়ে উঠলো, ‘ঐ দেখো কারা আসে!’
দেখা গেল, আরো পাঁচজন জঙ্গল-রক্ষী আসছে এই দিকেই, তাদের সামনে হাঁটছে দু’জন হাত বাঁধা লোক।
‘বাহ্ বাহ্!’ খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলো রক্ষী-প্রধান। ‘জমেছে ভাল। ওরাও দুটো ডাকাত ধরেছে দেখা যাচ্ছে! মোট হলো তিনটে…খুশিতে নাচবে আজ শেরিফ! ওহে, কিভাবে ধরলে ওগুলোকে?’
ওরা জানে এই জঙ্গলেরই কোথাও কয়েকজন দুর্ধর্ষ দস্যু থাকে, রাজার হরিণ মেরে খায়, পথিকদের সর্বস্ব লুট করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওদের কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কিভাবে ধরা পড়লো জানার আগ্রহে সবাই এগিয়ে গেল অগ্রসরমান দলটির দিকে। শক্ত বাঁধন কেটে যে রবিন হুড পালাতে পারবে না, সে ব্যাপারে ওরা সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত; আর অনুমতি ছাড়া স্যাক্সন কাঠুরেরা যে এক পা নড়তে সাহস পাবে না, এটাও জানা কথা; কাজেই এদিকে লক্ষ্য রাখার কোন প্রয়োজন বোধ করলো না।
কিন্তু ওরা কয়েক পা এগোতেই এদিক-ওদিক চেয়ে নিয়ে ছুট লাগালো বুড়ো কাঠুরে, যে সাবধান করেছিল তরুণকে। দুটো বাড়ির মাঝখানের সরু রাস্তা ধরে পাখির মত উড়ে যাচ্ছে সে। দ্বিতীয় বৃদ্ধ হাঁ করে চেয়ে ছিল রক্ষীদের দিকে, টেরও পেল না কিছু, বোকার মত হাসাহাসি দেখছে ওদের, নিজেও হাসছে।
যুবক উইল ওর বাপের পিছন পিছন ছুটতে গিয়েও থমকে দাঁড়িয়ে চাইলো রবিনের দিকে। কথা বললো না রবিন, পাছে শুনে ফেলে রক্ষীরা, কিন্তু মিনতি ফুটে উঠলো ওর চোখের দৃষ্টিতে। এক হাঁটু ভাঁজ করে ঠেলাগাড়ির পাশে বসে পড়লো উইল, কোমর থেকে ছোরাটা বের করে ঘ্যাঁচ ঘাঁচ করে কেটে দিল সমস্ত বাঁধন।
মুক্ত হলো রবিন। ওর ধনুক আর তীরভরা তূণ রাখা ছিল গাড়িরই একপাশে, নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অপরাধের প্রমাণ হিসেবে শেরিফকে দেখানোর জন্যে। চট করে সেগুলো হাতে তুলে নিয়েই ছুটলো সে উইলের পিছন পিছন। উইল ততক্ষণে বেশ অনেকটা এগিয়ে গেছে, প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে সরু রাস্তাটা ধরে।
‘হব্! হ!’ দৌড়াতে দৌড়াতেই চেঁচিয়ে উঠলো উইল। ‘দৌড়াও! পালাও শিগগির!’
ডাকটা কানে যেতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও যেন এদিকে ফিরলো বৃদ্ধ কাঠুরে, সঙ্গী-সাথী সব হাওয়া হয়ে গেছে দেখে হাঁ হয়ে গেল ওর মুখ, চোখ তুলেই দেখতে পেল দৌড়াচ্ছে উইল। দুর্ভাগ্যবশতঃ উইলের ডাকটা রক্ষীদের কানেও পৌছালো। পাঁই করে ঘুরে দাঁড়ালো রক্ষী-প্রধ মুহূর্তে ব্যাপারটা বুঝে নিয়েই ক্রুদ্ধ হুঙ্কার ছাড়লো একটা।
‘পালাচ্ছে! পালাচ্ছে হারামীরা!’ চেঁচিয়ে উঠলো সে, ‘বাঁধন খুলে দিয়েছে বন্দীর। ছোটো, ছোটো সবাই! ধরে নিয়ে এসো ওদের, জীবিত বা মৃত।’
কথা বলতে বলতেই একটা তীর লাগিয়ে ফেলেছে সে তার ধনুকে, কান পর্যন্ত নে এনেছে ছিলাটা। এতক্ষণে হুঁশ ফিরে পেয়ে দৌড়াতে শুরু করেছে হব, বুঝতে পেরেছে জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যাওয়াই এখন সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু বুড়ো মানুষ, ধীর গতি, আড়ালে সরে যাওয়ার আগেই প্রচণ্ড বেগে ছুটে এলো তীর, ঘ্যাঁচ করে বিধলো এসে পিঠে। হুড়মুড় করে মুখ থুবড়ে পড়লো সে মাটিতে, আর নড়লো না। থির থির করে কাঁপছে শুধু পিঠে বেঁধা তাঁরটা।
ছোট্ট একটা আঙিনায় এসে পৌঁছলো রবিন। ওপাশের কাঠের দেয়ালটা টপকাচ্ছে উইল। বৃদ্ধ কাঠুরেকে দেখা যাচ্ছে না। দৌড়ে গিয়ে দেয়াল টপকালো সে-ও। সামনে বেশ কিছুদূর খোলা মাঠ, তারপর জঙ্গল। দেখা গেল, দুর্বল পায়ে জঙ্গলের দিকে ছুটছে বুড়ো, তার কিছুটা পিছনে উইল।
প্রাণপণে ছুটলো রবিন। জঙ্গলের কাছাকাছি এসেই চিৎকার শুনে তাকাল পিছন ফিরে। পাঁচ ছ’টা মাথা দেখা যাচ্ছে কাঠের দেয়ালের ওপাশে। দেয়াল টপকাচ্ছে ওরা। এক দৌড়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়লো সে। দেখলো কিছুদূর এগিয়ে অপেক্ষা করছে ওর জন্যে উইল।
‘এদিকে! এদিকে!’ হাঁক ছাড়লো উইল, ছুটলো আবার। কিছুদূর এগিয়েই ছুটন্ত বৃদ্ধকে দেখতে পেল রবিন। মিনিট দশেক দৌড়ে একটা জলা মত জায়গায় এসে পৌঁছলো ওরা। জলাটা বিপজ্জনক চোরা কাদায় ভর্তি। সাবধানে পা ফেলে ফেলে বৃদ্ধের পিছন পিছন ওপারে গিয়ে শক্ত জমিতে উঠলো ওরা দুজন। আরো কিছুদূর এগিয়ে একটা বিশাল ওক গাছের নিচে বসে পড়লো বৃদ্ধ, বিশ্রাম না নিয়ে আর এক পা- ও এগোনো সম্ভব নয় তার পক্ষে।
‘হবু কোথায়?’ হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো বৃদ্ধ।
‘মারা গেছে,’ বললো উইল। ‘দেরি করে ফেলেছিল। দেখলাম, একটা তীর এসে বিধলো ওর পিঠে।
‘হ্যাঁ, রক্ষীদের নেতার ছোঁড়া তীর, আমি দেখেছি,’ বললো রবিন।
এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো বৃদ্ধ। ‘ওদের সামনে পড়লে আমাদেরও ঐ একই অবস্থা হবে। উইলের হাত যখন ছোঁরার বাঁটে চলে গিয়েছিল, আমি তো ভেবেছিলাম তখনই খুন করবে লোকটা ওকে। করতো, যদি সেই সময়ে গাড়ি টানার জন্যে ওর প্রয়োজন না থাকতো। বড় নিষ্ঠুর লোক!’
‘অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছিলাম আমি তখন,’ বললো উইল। ‘ওরকম অন্যায় মার হজম করা কঠিন।’
‘হুঁ!’ চিন্তামগ্ন কণ্ঠে বললো বৃদ্ধ, ‘এক সময় আমরাই ছিলাম জমির মালিক। নর্মানরা অন্যায়ভাবে দখল করে নিল সব। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, আমরা যেন কুকুরের চেয়েও অধম। যাই হোক, যা ঘটে গেল, এখন আর আমাদের গ্রামে ফেরা সম্ভব নয়। লুকিয়ে থাকতে হবে আমাদের জঙ্গলের মধ্যে। নইলে ধরে নিয়ে গিয়ে ঝুলিয়ে দেবে ফাঁসীকাঠে।’
‘আমাকে হয়তো ফাঁসীকাঠে ঝোলাতো না,’ বললো রবিন। ‘কিন্তু তার চেয়েও খারাপ অবস্থা করে ছাড়তো ওরা নটিংহামে নিয়ে গিয়ে। আমার হাত-পায়ের বাঁধন কেটে দিয়ে তুমি মস্ত বড় বন্ধুর কাজ করেছ, উইল। উইলের একটা হাত ধরলো রবিন, ‘তোমাকে ধন্যবাদ। অসংখ্য, অসংখ্য ধন্যবাদ।
‘ও কিছু না!’ বললো উইল। দু’চারটে পোঁচ দিয়েছি ছোরার, এর বেশি তো কিছু নয়। কিন্তু তুমি, ভাই, কি করে ধরা পড়লে ওদের হাতে? কি দোষ করেছিলে?’
সব খুলে বললো রবিন। শুনে ভুরু কুঁচকে গেল কাঠুরেদের। উইল বললো, ‘কী নিষ্ঠুর, আর ভয়ঙ্কর! ওদের নীচ কৌশল একের পর এক ফাঁদে ফেলে চলেছে আমাদের সবাইকে।’
উঠে দাঁড়ালো বুড়ো। যাক, ওদের নাগালের বাইরে আমরা এখন। যতদিন পারা যায়, আমাদের চেষ্টা করতে হবে ওদের আওতার বাইরে থাকার। এসো আমার সাথে, চলো, আরও নিরাপদ জায়গায় সরে যাই।’
কিন্তু নড়লো না রবিন।
‘বাকি দু’জন বন্দীর জন্যে খারাপ লাগছে,’ বললো সে। ‘নটিংহামে একবার নিয়ে গেলে ওদের কপালে যে কি ঘটবে বোঝাই যায়।’
‘পরিষ্কার,’ বললো উইল। ‘একেবারে পানির মত। অথচ এরাও কিন্তু আমাদেরই মতু স্যাক্সন। নর্মানদের নির্যাতনে অস্থির হয়ে শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছে দস্যুবৃত্তি। জমিজমা ….
‘সব হারিয়েছে,’ কথার মাঝখানেই বলে উঠলো বুড়ো। ‘অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বাধ্য হয়েছে ওরা জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিতে। কী জীবন! জঙ্গল-রক্ষীদের তাড়া খেয়ে বনে বাদাড়ে পালিয়ে বেড়ানো… ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি!’
‘ওরা যে-পথে নটিংহামে যাবে, ওদের আগেই সেই পথের কোথাও পৌঁছানো সম্ভব?’ উইলের দিকে ফিরে জানতে চাইলো রবিন।
‘তা সম্ভব,’ বললো উইল। ‘কিন্তু লাভ কি তাতে? একদল জঙ্গল-রক্ষীর বিরুদ্ধে কি করতে পারবে তুমি একা?’
‘ঠিক কি করতে চাই তা আমি নিজেও জানি না এখনও,’ বললো রবিন। তবে ওদের সাহায্য করার জন্যে ভেতরটা ছটফট করছে। তীর-ধনুকে আমার হাত ভাল। যাই তো আগে, তারপর একটা না একটা উপায় বেরিয়ে যাবেই। তাছাড়া চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি?’
‘ঠিক বলেছো, বন্ধু,’ বললো উইল। ‘চলো, আমি তোমাকে পথ দেখাবো। আব্বা, তুমি চলে যাও আমাদের সেই জায়গায়। সেই বুড়ো ওক গাছের নিচে দেখা হবে।’
জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল বুড়ো, রবিন রওনা হলো উইলের পিছন পিছন অন্য এক পথে।
মিনিট বিশেকের মধ্যেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কোনাকুনি এগিয়ে সেই ছোট্ট গ্রামটার কাছে এসে পৌছলো ওরা অন্যদিক থেকে। রাস্তার ধারের একটা ঘন ঝোপের আড়াল থেকে উঁকি দিতেই দেখা গেল, ঠিক সময় মতোই পৌঁছেছে ওরা, বন্দী দু’জনকে সাথে নিয়ে মাত্র রওনা দিয়েছে রক্ষী-বাহিনী। টানাগাড়িটা পড়ে আছে যেখানে ছিল সেখানেই। ওর থেকে সামান্য কিছুটা দূরে রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে হবের মৃতদেহ, যেমন ছিল তেমনি। লাশটার সৎকারের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায়নি ওরা, যেন ওটা কুকুরের লাশ।
মাথায় রক্ত চড়ে গেল রবিনের। চাপা গলায় শুধু বললো, ‘প্রতিশোধ!’
রবিনের মুখের দিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকালো উইল, কিন্তু কিভাবে সেটা নেয়া সম্ভব মাথায় ঢুকলো না ওর।
ভুরু কুঁচকে কি যেন চিন্তা করলো রবিন, তারপর বললো, ‘এই রাস্তা কোথায় কিভাবে বাঁক নিয়ে কি ধরনের এলাকা দিয়ে শহরে পৌঁছেছে বর্ণনা করতে পারবে?’
শুরু করলো উইল স্টিউটলি, কিন্তু একটু পরেই হাত তুলে থামিয়ে দিল ওকে রবিন। ‘ব্যাস, ব্যাস। পেয়ে গেছি আমার পছন্দসই জায়গা। সমতল খোলা জায়গা বললে না? ওইখানে নিয়ে চলো আমাকে। মনে রেখো, পৌঁছতে হবে ওদের আগেই।’
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দ্রুতপায়ে এগোলো ওরা। যখন পৌছলো তখন খোলা জায়গাটার ঠিক মাঝখানে পৌঁছে গেছে রক্ষী দল। জঙ্গলের মধ্যে উইলকে অপেক্ষা করতে বলে পরিষ্কার খোলা জায়গায় বেরিয়ে এলো রবিন।
‘খবরদার!’ হাঁক ছাড়লো সে, ‘বন্দীদের ছেড়ে দাও, নইলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে!’
প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলো না রক্ষী-প্রধান। দুঃসাহস আর কাকে বলে! খোলা জায়গায় একা দাঁড়িয়ে এতগুলো লোককে ধমক দিচ্ছে এক পুঁচকে ছোঁড়া! কোন জবাব দিলো না সে। ওর একমাত্র চিন্তা, জঙ্গলের আড়ালে আবার পালিয়ে যাওয়ার আগেই করতে হবে যা করার। পিঠ থেকে ধনুকটা নামালো সে, একটা তীর লাগিয়ে গায়ের সব জোর দিয়ে টানলো ছিলা, তারপর ছাড়লো। কিন্তু দূরত্বটা এতই বেশি যে রবিনের কাছে পৌঁছলো না তীর, গজ বিশেক বাকি থাকতেই বিধলো মাটির বুকে।
বিশাল ধনুকটা চলে এসেছে রবিনের হাতে। তূণ থেকে একটা তীর বের করে পরালো ছিলায়। পরমুহূর্তে ভ্রমরের গুঞ্জন তুলে ছুটলো তীর। ভয়ানক এক আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো রক্ষী-প্রধান, দুই হাতে টেনে বের করার চেষ্টা করছে গলা দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে আধ হাত বেরিয়ে যাওয়া তীরটা।
দাঁড়িয়ে পড়েছে রক্ষীরা, তাজ্জব হয়ে দেখছে অবিশ্বাস্য ঘটনাটা, ছানাবড়া হয়ে গেছে চোখ। এমনি সময় আবার ভেসে এলো রবিনের উদাত্ত কণ্ঠ, ‘ছেড়ে দাও বন্দীদের! নইলে একে একে মারা পড়বে সবাই!’
কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে দ্বিতীয় তীর ছুঁড়লো রবিন। দু’জন রক্ষী একজন বন্দীকে ধরে রেখেছিল দু’পাশ থেকে, তীরটা সোজা এসে বিঁধলো ওদের একজনের কাঁধে। পরমুহূর্তে উড়ে এলো তৃতীয় তীর, বিধলো দ্বিতীয় রক্ষীর কাঁধে। বসে পড়লো দু’জন মাটিতে-চিৎকার করছে গলা ফাটিয়ে। সবাই বুঝে নিল, বন্দীদের ধরে রাখার চেষ্টা করলে কারো রক্ষা নেই আজ।
অকুতোভয় যুবকটির অব্যর্থ লক্ষ্য আতঙ্কের সৃষ্টি করলো রক্ষীদের মধ্যে। যে দু’জন দ্বিতীয় বন্দীকে ধরে রেখেছিল এক লাফে সরে গেল তারা দু’জন দু’পাশে। ওদের এই আতঙ্ক সংক্রামিত হলো আরো দু’তিনজনের মধ্যে দৌড় দিল তারা। তাই দেখে গোটা দলের মধ্যে সঞ্চারিত হলো তীব্র প্রাণভীতি, যে যেদিকে পারলো, ছুটলো ওরা তীরবেগে। এছাড়া অবশ্য উপায়ও ছিল না ওদের, আওতার বাইরে দাঁড়িয়ে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করছে দুঃসাহসী যুবক, অথচ ওরা জানে, ওদের তীর পৌঁছবে না অতদূর।
‘পালাচ্ছে! পালাচ্ছে!’ ঝোপের আড়াল থেকে একলাফে বেরিয়ে এলো উইল স্টিউটলি। ‘আশ্চর্য, রবিন হুড! দারুণ তোমার হাত! এবার আমার কাজ সেরে ফেলি আমি।’ কোমর থেকে ছোরাটা টান দিয়ে বের করে নিয়ে ছুটলো সে বন্দীদের দিকে। অল্পক্ষণেই দৌড়ে ফিরে এলো সদ্য-মুক্ত বন্দীদের সাথে নিয়ে।
মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত দুই দস্যু হাজার বার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো রবিনের কাছে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে খুশি আর ধরে রাখতে পারছে না কিছুতেই। কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবে, খুঁজে পাচ্ছে না ভাষা, আরো কিছু বলা দরকার মনে করে পাগলের মত বকে চলেছে। চুমো খাচ্ছে ওর হাতে।
‘এবার? এবার কি করবো আমরা?’ জানতে চাইলো উইল। ‘জঙ্গল-রক্ষীরা আরো দলবল জুটিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজবে আমাদের। ওদের হাতে ধরা পড়লে…’
‘ঠিক বলেছো,’ বলে উঠলো একজন দস্যু। ‘আমাদের সরে পড়া উচিত।’
মাথা ঝাঁকালো রবিন। পা বাড়ালো সামনে। পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো উইল। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে একটা বিশাল ওক গাছের নিচে দেখা পেল ওরা বুড়ো স্টিউটলির। সব ঘটনা শুনে বৃদ্ধ বললো, ‘এই অঞ্চলে আর থাকা যাবে না। জঙ্গলের শেষে ওই ওদিকে আমার মেয়ের বাড়ি, ওখানেই লুকাবো আমি। তুমি কি ভাবছো, উইল?’
‘আমি জঙ্গলেই থেকে যাব,’ বলল উইল। ‘আজ থেকে দস্যু হয়ে গেল রবিন হুড। আমি তার অনুচর।’
বিশাল ধনুকের ওপর ভর দিয়ে কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল রবিন চুপচাপ। দস্যু! দস্যু রবিন হুড! কথাটা চমকে দিল ওকে। ধক করে উঠলো বুকের ভেতরটা। পরমুহূর্তে কথাটার সত্যতা উপলব্ধি করলো সে। সত্যিই তো, আজ সে যা করছে তার ফলে তাকে দস্যু বলে ঘোষণা করবে শেরিফ। ওর মাথার দাম ধরা হবে কয়েকশো পাউণ্ড। জঙ্গল-রক্ষী খুন করেছে সে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই আর। এখন থেকে জঙ্গলে জঙ্গলে দস্যুর জীবন কাটাতে হবে ওর। চারপাশে চাইলো রবিন। বিশাল সব গাছের শাখা দুলছে মৃদু বাতাসে, রোদ লেগে চিকচিক করছে পাতাগুলো, এখানে ওখানে ঝোপ-ঝাড়-লতা, কোথাও ঘন, কোথাও হালকা- অপূর্ব সুন্দর লাগলো ওর সবকিছু। প্রজাপতির বিচিত্র রঙ, পাখির মিষ্টি শিস আশ্চর্য এক আনন্দের জোয়ার আনলো ওর মনে-মুক্তির আনন্দ। ‘বাহুবল আর বুদ্ধির জোরে রক্ষা করবো নিজেকে,’ মনে মনে বললো রবিন। ‘মুক্ত স্বাধীন প্রাণ-চঞ্চল জীবন। নটিংহামের কারাগার বা ফাঁসীকাঠের চেয়ে অনেক অনেক ভাল।’ মনটা হালকা হয়ে গেল ওর। আবার তাকালো চারপাশে কেমন হবে জীবনটা ওর এখানে?
‘আমার নাম মাচ,’ বললো দস্যুদের একজন। ‘চলো না, রবিন, আজ থেকে তুমি আমাদের একজন হবে?’
ক্ষতি কি? একটা দলের সাথে থাকতে পারলে তো ভালই। রাজি হয়ে গেল রবিন রওনা হলো ওরা। ঘন্টা দুয়েক একটানা হাঁটার পর বিরাট এক ওক গাছের নিচে খানিকটা পরিষ্কার জায়গা দেখা গেল। দাঁড়িয়ে পড়লো মাচ। কোমরে ঝুলানো একটা শিঙা মুখে তুলে ফুঁ দিল তাতে। সাথে সাথেই উত্তর এলো কাছাকাছি কোথাও থেকে, কিন্তু দেখা গেল না কাউকে। আরো তিনশো গজ এগিয়ে গেল মাচ তার সঙ্গীদের নিয়ে। দেখা গেল, একটা পাথুরে দেয়ালের পাশে বেশ অনেকটা জায়গা ঝোপ-ঝাড় কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে। দেয়ালের কাছাকাছি পৌঁছতেই থেমে দাঁড়াবার হুকুম দেয়া হলো, আড়াল থেকে জানতে চাওয়া হলো ওদের পরিচয়। জবাব দিল মাচ। মাচের গলার আওয়াজ পেয়েই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো একজন দীর্ঘদেহী লোক, তার পিছনে তাগড়া জোয়ান ছয়জন দস্যু। সবার হাতে তীর-ধনুক।
মাচ আর তার সঙ্গীকে দেখতে পেয়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সবাই। ওদের বন্দী হওয়ার খবর ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে ওদের কানে।
‘ফিরে এসেছে!’ চিৎকার করে উঠলো একজন। মার্চ আর ওয়াট ফিরে এসেছে!’
‘কিভাবে?’ চেঁচিয়ে উঠলো আরেকজন। ‘কিভাবে ছুটলে ওদের হাত থেকে?’
‘দাঁড়াও, দাঁড়াও, সব বলছি,’ দুই হাত তুলে সবাইকে থামতে বললো মাচ। ‘এই যুবক উদ্ধার করেছে আমাদের। এতবড় দুঃসাহসী বীর, আর এত নিপুণ তীরন্দাজ জীবনে দেখিনি আমি।’ এই বলে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো সে সবাইকে। রবিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলো প্রত্যেকে, বার বার করে ধন্যবাদ জানাল ওদের প্রিয় সঙ্গীদের উদ্ধার করার জন্যে।
সেদিনই সন্ধ্যার পর আগুনের ধারে গোল হয়ে বসে সবাই হরিণের মাংস আর এল (এক ধরনের মদ) দিয়ে নৈশ ভোজন করছিল, গল্পগুজব আর হাসি তামাশা চলছিল এন্তার, এমন সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করলো মাচ। ‘তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গতকালই আমাদের মধ্যে একজন নেতা নির্বাচনের কথা উঠেছিল। আমরা সবাই একমত হয়েছিলাম যে নেতা ছাড়া কোন দলেরই নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না।’
‘ঠিক, ঠিক,’ বললো একজন স্বাস্থ্যবান দস্যু। ‘তোমার ব্যাপারেই আমরা মোটামুটি একমত হয়েছিলাম, মাচ। তোমাকেই আমাদের নেতৃত্ব…’
‘উঁহু,’ এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো মাচ। ‘এখন আর সেটা হয় না। মাচ আজ তার প্রভুর দেখা পেয়েছে। আমি আমার বদলে আমাদের নতুন সদস্য রবিন হুডের নাম প্রস্তাব করছি।’
‘আমি এ প্রস্তাব সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করছি,’ বলে উঠলো ওয়াট। বলেই তার ছয় ফুট লম্বা লাঠিটা পাঁই পাঁই কয়েক পাক ঘোরালো মাথার ওপর। কারো যদি আপত্তি থাকে, এসো, হয়ে যাক এক হাত।’
সবাই প্রায় রাজি হয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় লম্বা চওড়া গম্ভীর এক দস্যু মাথা নাড়লো। আমার যতদূর মনে আছে, গতকাল আমরা মোটামুটি ঠিক করেছিলাম যে আমাদের মধ্যে যে সেরা তীরন্দাজ সে-ই নেতা হওয়ার যোগ্য।’
‘সেরকম একটা কথা উঠেছিল বটে,’ বললো মাচ। ‘খুব সম্ভব তুমিই তুলেছিলে প্রস্তাবটা। তবে সে-ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। যাই হোক, সেদিক থেকেও আমার মনোনীত প্রার্থীর জুড়ি নেই। সারা ইংল্যাণ্ডের সেরা তীরন্দাজ রবিন হুড।’
‘শুনলাম, সেরা, গম্ভীর মুখে বললো লোকটা। কিন্তু জানছি কিভাবে?’
তর্কটা খারাপ দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে দেখে মুখ খুললো রবিন। একটা হাত তুলে থামতে বললো সবাইকে।
‘শোনো, মাচ, নেতৃত্ব জিনিসটা অর্জন করে নিতে হয়, ওটা কারো ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোন অর্থ নেই। এখানে কেন, কোথাও আমি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ না করে কিছুই প্রত্যাশা করি না। শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদকে তোমাদের নেতা বানাবে, এরকম কথা কি সত্যিই হয়েছিল?’
‘এই রকম একটা কথা সত্যিই উঠেছিল,’ বললো মাচ।
‘বেশ। তাহলে এই কথাই থাক,’ বললো রবিন হুড। ‘কাল সকালে আমরা একজন একজন করে প্রত্যেকে তীর ছুঁড়বো। যে জিতবে তাকেই মেনে নেব নেতা হিসেবে, রাজি?’
সবাই একবাক্যে সায় দিল, ‘রাজি! রাজি!’
খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মত শুয়ে পড়লো অগ্নিকুণ্ডের চারপাশে। সকালে উঠেই একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে জড়ো হলো সবাই। যে দূরত্বে ওরা তীর ছুঁড়তে অভ্যস্ত ততটা দুরে একটা টার্গেট তৈরি করে রবিন হুডকে বললো ওরা, দেখাও তোমার দক্ষতা। ঠিক মাঝখানে লাগাও দেখি একটা তীর।’
‘এটা কোন পরীক্ষাই হলো না,’ মাথা নাড়লো রবিন’। ‘যে-কেউ ভেদ করতে পারে এই লক্ষ্য। দেখা যাবে আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই লক্ষ্যভেদ করেছে। তার চেয়ে এমন একটা লক্ষ্য স্থির করো, যাতে একবারেই চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যায়।
লম্বা-চওড়া গম্ভীর লোকটার নাম জন ফোর্ড। রবিনের প্রস্তাবে খুশিই হলো সে। বললো, ‘ঠিক আছে, টার্গেটটা কি হবে, কতদূরে হবে সেটা তুমিই নাহয় ঠিক করো, রবিন হুড।’
‘করতে পারি, যদি সবাই রাজি থাকে,’ বললো রবিন।
‘রাজি, রাজি। তুমিই ঠিক করো।’
লতা-পাতা আর জংলী ফুল দিয়ে গোল একটা মালা তৈরি করলো রবিন সেটা উইল স্টিউটলির হাতে দিয়ে একেবারে শেষ মাথার একটা ওক গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে আসতে বললো। ছুটে গিয়ে ঝুলিয়ে দিল উইল মালাটা।
‘এবার এসো,’ বললো রবিন। ‘দেখা যাক পাতা বা ফুল স্পর্শ না করে কে ওই মালার মধ্যে তীর গাঁথতে পারে। যে পারবে তাকেই মেনে নেব আমরা আমাদের দলনেতা হিসেবে।’
এ ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে দস্যু সবাই। অবাক হয়ে গেছে ওরা। ‘তীর লাগাবো কি, ভাল মত দেখতেই তো পাচ্ছি না মালাটা!’ বলে উঠলো একজন। ‘অতদূরে লক্ষস্থির করতে হলে ঈগলের চোখ চাই।’
ওরেব্বাপ!’ দীর্ঘশ্বাস টানলো একজন। ‘ওখানে তীর পাঠাতে হলে ঘোড়ার মত গায়ে জোর চাই।’
‘আমি বাদ!’ চেঁচিয়ে উঠলো আরেকজন, আমার ধনুক টেনে ভেঙে ফেললেও অতদূরে যাবে না তীর।’
শেষ পর্যন্ত টিকলো শুধু জন ফোর্ড। অতদূরে তীর পৌঁছবে কিনা সে-ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তার, কিন্তু রণে ভঙ্গ দিল না সে, ধনুকে নতুন একটা ছিলা পরিয়ে সোজা দেখে তিনটে তীর বাছাইয়ে মন দিল। কে আগে তীর ছুঁড়বে তাই নিয়ে টস্ করা হলো। প্রথমে ছোঁড়ার সুযোগ পেল জন ফোর্ড।
প্রথম তীরটা গজ দশেক আগেই মাটিতে গাঁথলো। বিরক্ত হলো জন ফোর্ড, খানিক গজ গজ করে আরো জোরে আরো উঁচু দিয়ে মারলো দ্বিতীয় তীর, কিন্তু এটাও পৌঁছলো না লক্ষ্যস্থলে। তৃতীয়বারে কোন মতে পৗঁছলো বটে, তবে মালা থেকে বেশ কিছুটা নিচে গিয়ে বিধলো তাঁর।
‘আমার যতটা সাধ্য আমি করেছি,’ বললো সে। ‘আমার বিশ্বাস কোন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে ভাল কিছু করা সম্ভব নয়
‘এবার তুমি, এবার তুমি, রবিন হুড!’ চেঁচিয়ে উঠলো মাচ। ‘তিনটে তীর ছুঁড়তে দেখেছি আমি কাল তোমাকে। তিনটে অব্যর্থ তীর। দেখা যাক আজও হাতটা ঠিক আছে কিনা।’ গলার স্বরে বোঝা গেল, এত কঠিন পরীক্ষায় নেমেছে রবিন হুড যে দ্বিধায় পড়ে গেছে সে, খুব একটা ভরসা পাচ্ছে না মাচ আজ।
বুক ফুলিয়ে দাঁড়ালো রবিন হুড। মস্ত ধনুকটা উঁচু করে ধরতেই চুপ হয়ে গেল সবাই। কিছুটা সামনে ঝুঁকে টান দিয়ে কানের পাশে নিয়ে এলো সে ছিলাটা। দম বন্ধ করে চেয়ে আছে সবাই ওর দিকে। মৃদু ঝংকার উঠলো ছিলায়। ছুটলো তীর। সোজা গিয়ে বিধলো ওক গাছের গুঁড়িতে একেবারে মালার ঠিক মাঝখানে। বিস্মিত উল্লাস ধ্বনি বেরিয়ে এলো সবার মুখ থেকে। এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড জীবনে কখনো দেখেনি ওরা।
‘আবার মেরে দেখাও! আবার মেরে দেখাও!’ চেঁচিয়ে উঠলো জন ফোর্ড। ‘এটা হঠাৎ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তিনটে তীর ছোঁড়ার কথা ছিল তোমার। দেখা যাক আরগুলো কোথায় লাগে।’
‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই,’ বললো রবিন হুড। হাসতে হাসতে আরেকটা তীর পরালো সে ছিলায়। ছুঁড়লো। তারপর আরেকটা। প্রত্যেকটা তীর গিয়ে ঢুকেছে মালার মধ্যে, অথচ ফুল বা পাতা স্পর্শ করেনি একটাও।
হৈ-হৈ করে উঠলো সবাই। প্রত্যেকেই ওরা দক্ষ তীরন্দাজ, কাজেই কতবড় অবিশ্বাস্য, অসম্ভব কাণ্ড ঘটিয়েছে রবিন হুড মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে সবাই, পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে এমন নৈপুণ্য অর্জন করা তাদের ক্ষমতার বাইরে। এ লোক ধনুকের জাদুকর।
‘রবিন হুড, জিন্দাবাদ!’ ধ্বনি তুললো সবাই।
‘এবার কি বলো তোমরা?’ জানতে চাইলো মাচ, ‘আমাদের নেতা হওয়ার যোগ্যতা আছে এই লোকের?’
‘একশো বার! একশো বার!’ ঘোষণা করলো সবাই। সবার চেয়ে বেশি জোরে শোনা গেল জন ফোর্ডের কণ্ঠ। ‘রবিন হুডের নেতৃত্ব মেনে নিলাম আমরা। এখন থেকে ওর কথায় বাঁচবো, ওর কথায় মরবো!’
এবার শপথ অনুষ্ঠানের পালা। একে একে শপথ গ্রহণ করলো সবাই। প্রথমে মাচ, তারপর ওয়াট, তারপর জন ফোর্ড, তারপর উইল, তারপর আরো সবাই।
‘শোনো, বন্ধুরা,’ হাঁক ছাড়লো রবিন হুড। এই দলের নেতা হিসেবে আমি আমাদের নীতিমালা ঘোষণা করছি। তিনটে নীতি আজ থেকে মনে-প্রাণে মেনে চলবো আমরা। প্রথম, আজ থেকে আমরা অত্যাচারী নর্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। আমাদের খেটে-খাওয়া স্যাক্সন ভাইদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে ভিটে মাটি থেকে উৎখাত করেছে যারা, ছলে বলে কৌশলে তাদের ধন-সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিজেদের আরো ধনী করে তুলছে যারা, তারা আমাদের জন্ম-শত্রু। দ্বিতীয়, আজ থেকে আমরা গরীব বা অভাবী কোন মানুষের কোন ক্ষতি করবো না। বরং নর্মান শেরিফ, ব্যারন, ব্যবসায়ী, আর নির্লজ্জ ধনী ধর্মযাজকদের কাছ থেকে সম্পদ কেড়ে নিয়ে এদের মধ্যে বিতরণ করবো, সবদিক থেকে সব রকমের সাহায্য করবো বিপদগ্রস্তকে। তৃতীয়, কোন নারী, ধনী হোক বা দরিদ্র, নর্মান হোক বা স্যাক্সন, যেন আমাদের দ্বারা কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’ সবার দিকে চাইলো রবিন, ‘তোমরা এই আইন মেনে চলতে রাজি আছো?’
দুই হাত তুলে সমর্থন জানালো সবাই। রাজি আছি। অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো তোমার নির্দেশ।
‘ধন্যবাদ।’
অপূর্ব মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো রবিন হুডের মুখে।