৬. নটিংহামের শূটিং ম্যাচ

৬. নটিংহামের শূটিং ম্যাচ

রেগে আগুন হয়ে গেছেন নটিংহামের শেরিফ।

পর পর কয়েকবার সশস্ত্র বাহিনী পাঠিয়েছেন তিনি শেরউডে রবিন হুডকে ধরে আনার জন্যে। ধরে আনা তো দূরের কথা, রবিন হুড ও তার দলবলের কাছে প্রতিবারই চরম নাজেহাল হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। প্রথম বার পালিয়ে গিয়েছিল ওরা শেরউড ছেড়ে, কিন্ত এখন এতই শক্তিশালী ও সুশৃংখল দল গঠন করে নিয়েছে রবিন যে ওদের আস্তানার ধারে-কাছেও ভিড়তে পারেনি শেরিফের বাহিনী। বিচিত্র সব কৌশলে প্রতিহত করে দেয়া হয়েছে ওদের সমস্ত প্রচেষ্টা। অনেক টাকা পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে গুপ্তঘাতক পাঠিয়েছেন শেরিফ শেরউডে, হয় ধরে আনবে, নয়তো মেরে রেখে আসবে রবিনকে; কিন্তু নিজেরাই গায়েব হয়ে গেছে তারা। রাজার সীলমোহর দেয়া গ্রেফতারী পরোয়ানা হাতে পাঠিয়েছিলেন একজন টিংকার (ঝালাইকার)-কে। সেই লোক ফিরে তো আসেইনি, শোনা যাচ্ছে রবিন হুডের দলে যোগ দিয়েছে সে শেরউডে গিয়ে।

এইসব বিফল প্রচেষ্টার ফলে শুধু যে তিনি জনসাধারণের সম্মান হারিয়েছেন তা নয়, লোকে হাসাহাসি কানাকানি করছে তাঁকে নিয়ে, টিটকারির পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি সবার কাছে। শেরিফের গাত্রদাহের এটাই প্রধান কারণ। হাসি তামাশার খোরাক হতে কে-ই বা পছন্দ করে?

লোক-লস্কর নিয়ে রওনা হলেন তিনি রাজার কাছে নালিশ জানাতে। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো তাতে। রাজা হেনরী তাঁর বক্তব্য শুনে উল্টে ধমক মারলেন তাঁকেই।

‘লজ্জা করে না তোমার এই সামান্য ব্যাপারে আমার কাছে নালিশ নিয়ে আসতে? তোমাকে রাখা হয়েছে কি করতে? সাধারণ এক ডাকাত ধরতে পারো না, ছুটে এসেছো আমার কাছে নালিশ জানাতে ছি, ছি, তোমার যোগ্যতা সম্পর্কেই সন্দেহ হচ্ছে এখন আমার। তোমার অধীনে যে বিরাট বাহিনী রয়েছে, তারা কি করছে-বসে বসে সরকারী বেতন নিচ্ছে, আর ঘাস কাটছে? যাও, তোমার কোন কথা আর শুনতে চাই না আমি, যেভাবে পারো গ্রেফতার করো ওকে; তা না পারলে নিজেই বরখাস্ত হয়ে যাবে তুমি অযোগ্যতার দায়ে।‘

বকা খেয়ে বিমর্ষ বদনে ফিরে চললেন শেরিফ নিজের কাউন্টির দিকে। রাজার কাছে নালিশ করতে গিয়ে ভাল বিপদেই পড়া গেছে। নিজের চাকরি নিয়েই টানাটানি এখন। ফেরার পথে কারো সাথে একটি কথা বললেন না তিনি। মাথা নিচু করে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইলেন। বেশ অনেকটা পথ আসার পর হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তাঁর মুখ। ‘পেয়েছি!’ উরুর উপর জোরে এক চাপড় মারলেন তিনি। ‘জলদি চলো! দারুণ এক বুদ্ধি এসেছে মাথায়। দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি শয়তান রবিন হুডকে হাজতে না পুরতে পারি, তাহলে আমার নাম নেই।’

কি পেলেন শেরিফ যে এতো খুশি হয়ে উঠলেন?

চলতে চলতে একের পর এক নানান ধরনের ফন্দিফিকির আসছিল তাঁর মাথায়। কিন্তু পছন্দ হচ্ছিল না, কোনটাই। কোন না কোন ত্রুটি থেকে যাচ্ছে প্রতিটি পরিকল্পনায়। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো তাঁর। তিনি খবর পেয়েছেন, প্রায়ই নটিংহাম শহরে আসে দুঃসাহসী রবিন হুড। যদি কোনভাবে ওকে আবার শহরের চার দেয়ালের মধ্যে আনার ব্যবস্থা করা যায়, সতর্ক থাকলে মোটেই কঠিন হবে না ধরা। কিভাবে আনা যায় ওকে? চট্ করে মনে পড়লো শূটিং প্রতিযোগিতার কথা। শেরউডের দস্যুরা নিজেদের মস্ত তীরন্দাজ বলে মনে করে। যদি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে একটা দারুণ লোভনীয় পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা যায়, তাহলে ঠিক ফাঁদে এসে ধরা দেবে দুঃসাহসী রবিন হুড। ঠিক, একটা বড়সড় শূটিং ম্যাচের আয়োজন করতে হবে নটিংহামে ফিরেই।

শহরে ফিরেই উত্তর-দক্ষিণ-পুব-পশ্চিমে লোক পাঠালেন শেরিফ, ঘোষণায় বলা হলো বিরাট এক শূটিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে নটিংহাম শহরে, বিজয়ীকে পুরস্কার দেয়া হবে একটা সোনার তীর আর একটা পেনি ভর্তি রূপোর শিঙা।

লিংকন শহরে কাজে গিয়েছিল রবিন, সেখানেই সংবাদ পেল সে প্রতিযোগিতার। খবর শুনে দ্রুত ফিরে এলো সে শেরউড জঙ্গলে। সবাইকে ডেকে জানালো খবরটা। তারপর বললো, ‘সারা দেশের যত বড় বড় তীরন্দাজ আছে, সবাই আসবে এই প্রতিযোগিতায়। আমাদের হাতের টিপ যাচাই করে নেয়ার এই এক মস্ত সুযোগ। আমি ঠিক করেছি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেব। তোমরা কি বলো??

লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ডংকাস্টারের ডেভিড। ‘আগে আমার বক্তব্য শুনে নাও, তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো,’ বললো সে সবার উদ্দেশে। ‘এইমাত্র ব্লু বোর থেকে সংবাদ শুনে এলাম আমি। কেবল শূটিং ম্যাচের সংবাদই নয়, ঈডমের কাছ থেকে আরো কিছু জানতে পেরেছি আমি। ও জেনেছে শেরিফের খুবই ঘনিষ্ঠ এক লোক র‍্যালফের কাছ থেকে। শেরিফের ধারণা, এই বিরাট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লোভ সামলাতে পারবে না রবিন হুড। গোটা আয়োজনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে রবিন হুডকে নটিংহামের প্রাচীরের ভেতর আকর্ষণ করে নিয়ে গ্রেফতার করা। আমরা আমাদের প্রিয় নেতাকে হারাতে চাই না। কাজেই আমি মনে করি এতে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া মোটেই উচিত হবে না।’

কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে মাথা ঝাঁকালো রবিন, তারপর হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে। পিঠ চাপড়ে দিল ডেভিডের। মুখে বললো, ‘ধন্যবাদ, ডেভিড। চোখ-কান খোলা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ, এটা আমাদের অস্তিত্বের জন্যেও জরুরী। তুমি যে খবর এনেছো তা যদি সত্যি হয় এবং আমার বিশ্বাস কথাটা পুরোপুরি সত্যি, তবুও আমি মনে করি আমার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা একান্ত দরকার। লোকে বলবে, শেরিফের ভয়ে রবিন হুড আর তার সাত কুড়ি দুঃসাহসী অনুচর প্রতিযোগিতা বর্জন করে গর্তে সেঁধিয়েছিল, সাহসে কুলায়নি তাদের নটিংহামে আসতে-সেটা কেমন লাগবে তোমাদের শুনতে? ডেভিডের কথা শুনে আরও জেদ চেপে যাচ্ছে আমারঃ যেমন করে হোক ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হবে ওই পুরস্কার। কিন্তু বোকার মত কিছু করে বসা ঠিক হবে না। কৌশল দিয়ে মোকাবিলা করবো আমরা কৌশলের। ছদ্মবেশ নিয়ে যাব আমি। তোমরাও, কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ পুরোহিত, কেউ ভিখারীর ছদ্মবেশে কাছে পিঠেই থাকবে আমার। সবাই সাথে করে লুকিয়ে নিয়ে যাবে তলোয়ার, তীর- ধনুক। যদি প্রয়োজন পড়ে, যুদ্ধ করে আত্মরক্ষা করবো আমরা। আর যদি তার প্রয়োজন না পড়ে; তাহলে জিতে নিয়ে আসবো সোনার তীর আর রূপোর বিউগল। তীরটা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখব আমরা এই গাছের ডালে। তোমরা সবাই কি বলো?’

সবাই একবাক্যে সায় দিল রবিনের কথায়।

প্রতিযোগিতার দিন উৎসবের সাজে সাজানো হলো নটিংহাম শহর। প্রাচীরের কাছাকাছিই একটা মস্ত সবুজ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে প্রতিযোগিতার। প্রাচীরের ধারে সারি সারি বেঞ্চ পাতা হয়েছে নাইট, জমিদার এবং শহরের সম্ভ্রান্ত ধনী লোক ও তাদের স্ত্রীদের বসার জন্যে। টার্গেটের কাছাকাছিই একটা মঞ্চ সাজানো হয়েছে রঙিন সিল্কের রিবন আর ফুলের মালা দিয়ে-শেরিফ আর তাঁর স্ত্রী বসবেন এখানে। প্রায় দেড়শো গজ দূরে মস্ত এক ডোরা কাটা তাঁবু ফেলা হয়েছে প্রতিযোগীদের জন্যে। তাঁবুর একটা খুঁটিতে টাঙানো হয়েছে নানান রঙের পতাকা। হরেক রকম নক্সা করা রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে তাঁবু। তাঁবুর ভেতর রাখা হয়েছে মস্ত এক মদের পিপে, প্রতিযোগীদের যার যত খুশি পান করবে বিনা মূল্যে।

সম্ভ্রান্ত অতিথিবৃন্দের জন্যে যেখানে বেঞ্চ পাতা হয়েছে তার উল্টো দিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে সাধারণ গরীব দর্শকদের জন্যে জায়গা। বসার কোন ব্যবস্থা নেই, শুধু রেলিং দেয়া হয়েছে যাতে আগ্রহের আতিশয্যে মাঠের ভেতর ঢুকে পড়তে না পারে কেউ। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই আসতে শুরু করলো দর্শকবৃন্দ। কেউ ঘোড়ায় চেপে, কেউ গাড়িতে চড়ে আসছেন ভদ্রলোকেরা। দলে দলে পায়ে হেঁটে আসছে সাধারণ দর্শকেরা, রেলিঙের ওপারে বসে পড়ছে, শুয়েও পড়ছে কেউ কেউ।

একজন দু’জন করে মস্ত তাঁবুতে এসে জড়ো হচ্ছে প্রতিযোগীরা। কেউ কেউ উঁচু গলায় নিজেদের বাহাদুরির গল্প শোনাচ্ছে অন্যদের, কেউ ছিলা টেনে টেনে পরীক্ষা করে দেখছে ধনুকে কোনও দোষ পাওয়া যায় কিনা, কেউ আবার এক চোখ বুজে আরেক চোখের সামনে তুলে ধরে পরীক্ষা করে দেখছে তীরগুলো

দেশের নানান জায়গা থেকে এসেছে মস্ত সব নামজাদা তীরন্দাজ। লোভনীয় পুরস্কার ডেকে এনেছে তাদের অনেক দূর দূরান্ত থেকে। শেরিফের রক্ষী-বাহিনীর সেরা তীরন্দাজ রেড ক্যাপের গিল তো আছেই, লিংকন শহর থেকে এসেছে ক্রুইকশ্যাংক, ট্যামওয়ার্থ থেকে এসেছে প্রবীণ অ্যাডাম-উডস্টকের সেই বিখ্যাত প্রতিযোগিতায় সেকালের সেরা ধনুর্বিদ ক্রিমকে হারিয়ে যে বিজয়ীর শিরোপা কেড়ে নিয়েছিল, এছাড়াও রয়েছে লেসলির উইলিয়াম এবং আরো অনেকে।

পদমর্যাদা অনুযায়ী সবাই যে যার জায়গায় বসে যাওয়ার পর দুধ-সাদা ঘোড়ায় চেপে এলেন শেরিফ, পাশে আরেকটা ঘোড়ায় তাঁর স্ত্রী। বেগুনী সিল্কের পোশাক পরেছেন শেরিফ, মাথায় বেগুনী মখমলের টুপি, পায়ে কালো মখমলের জুতো। শেরিফের স্ত্রী পরেছেন রাজহাঁসের পালক দিয়ে কারুকাজ করা নীল মখমলের পোশাক, আর মহামূল্যবান সোনার অলংকার। নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসলেন তাঁরা, শোভা বর্ধনের জন্যে দু’পাশে দাঁড়িয়ে গেল বর্শা হাতে উর্দি পরা প্রহরী।

নিজ আসনে বসে রাজকীয় ভঙ্গিতে এদিক-ওদিক চাইলেন শেরিফ, তারপর ইঙ্গিত করলেন ঘোষকের প্রতি। ইঙ্গিত পেয়েই রূপোর শিঙা মুখে তুলে নিয়ে পরপর তিনবার ফুঁ দিল ঘোষক। সংকেত পেয়ে তাঁবু ছেড়ে লাইনের উপর এসে দাঁড়ালো সব তীরন্দাজ। সোল্লাসে চিৎকার করে উঠলো জনতা। যার যার প্রিয় তীরন্দাজের নাম ধরে হাঁক ছাড়ছে অনেকে।

হাত তুলে সবাইকে চুপ করার নির্দেশ দিল ঘোষক। সবাই চুপ করতেই শুরু করলো প্রতিযোগিতার নিয়ম বর্ণনা। একটা করে তীর ছুঁড়বে তোমরা সবাই দেড়শো গজ দূরের এই টার্গেট লক্ষ্য করে। তোমাদের মধ্যে থেকে সেরা দশজনকে বাছাই করে বের করে নিয়ে তাদের প্রত্যেককে দুটো করে তীর ছুঁড়তে বলা হবে। এরপর এই দশজনের মধ্যে থেকে বেছে বের করা হবে সেরা তিনজনকে। তিনটে করে তীর ছুঁড়বে এই শেষের তিনজন। এদের মধ্যে যে সর্বশ্রেষ্ঠ, তাকেই দেয়া হবে পুরস্কার।’

খানিকটা সামনে ঝুঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রতিযোগীদের মধ্যে রবিন হুডকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন শেরিফ। সবার উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে একটু যেন দমে গেলেন তিনি। কই, সবুজ কাপড় পরা কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। মনে মনে ভাবলেন, ‘এত ভিড়ে চেনা যাবেও না। যদি এসে থাকে, দশজনের একজন সে হবেই; তখন ওকে চিনে নেয়া মোটেই কঠিন হবে না।’

শুরু হলো প্রতিযোগিতা। সবাই ছুঁড়লো একটা করে তীর। এতজনের মধ্যে কেবল ছয়টা তীর লাগলো গিয়ে টার্গেটে তার মধ্যে চারটে বিধেছে কালো জায়গায়, বাকি দুটো মাঝখানের গোল চক্কোরের ধার ঘেঁষে। কাজেই শেষ তীরটা যখন একেবারে মাঝখানে গিয়ে বিধলো, তখন বিপুল হর্ষধ্বনি উঠলো দর্শকদের মধ্যে থেকে।

দশজন রইলো, ছাঁটাই হয়ে গেল বাকি সবাই। এই দশজনের মধ্যে ছয়জন সারা ইংল্যাণ্ডে সুপরিচিত, বেশির ভাগ দর্শকই চেনে তাদের। এরা হচ্ছে, রেড ক্যাপের গিলবার্ট, ট্যামওয়ার্থের অ্যাডাম, ডিকন ক্রুইকশ্যাংক, লেসলির উইলিয়াম, ক্লাউডের হিউবার্ট, এবং হার্টফোর্ডের সুইদিন। এরা ছাড়াও দু’জন আছে ইয়র্কশায়ার থেকে আসা তীরন্দাজ, এছাড়া আছে লম্বা এক নীল পোশাক পরা তীরন্দাজ, এসেছে খোদ লণ্ডন শহর থেকে। কিন্তু সব শেষে যে লোকটা একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে লাগিয়েছিল তীর, কেউ চেনে না তাকে, পরনে জীর্ণ মলিন একটা শতচ্ছিন্ন লাল জামা, একটা চোখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা কানা।

কাছেই বর্শা হাতে দাঁড়ানো এক লোককে ডাকলেন শেরিফ হাতের ইশারায়। লোকটা ঝুঁকে আসতেই কানে কানে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দেখতে পাচ্ছো? এই দশজনের মধ্যে চিনতে পারছো শয়তান রবিন হুডকে?’

‘না, হুজুর,’ বললো লোকটা। এদের মধ্যে ছয়জনকে ভাল করেই চিনি আমি। আর ইয়র্কশায়ার থেকে যে দু’জন এসেছে তাদের একজন রবিন হুডের চেয়ে বেশ অনেকটা লম্বা, অপরজন বেশ অনেকটা খাটো। কাজেই ওদেরকেও বাদ দেয়া যায়। আর ওই যে ছেঁড়া লাল জামা পরা ভিখারিটা ওকেও বাদ দিতে পারেন অনায়াসে, কারণ রবিনের দাড়ির রঙ সোনালী, কিন্তু এর দাড়ি দেখা যাচ্ছে খয়েরি রঙের, তাছাড়া দেখাই যাচ্ছে লোকটার একটা চোখ কানা। বাকি রইলো নীল পোশাক পরা লোকটা আমার ধারণা এর কাঁধের চেয়ে অন্ততঃ তিন ইঞ্চি বেশি চওড়া রবিনের কাঁধ।’

‘তাহলে সত্যিই এলো না শয়তানটা!’ ভুরু কুঁচকে উঠলো শেরিফের। ‘ওকে সাহসী বলেই জানতাম, কিন্তু আজ বোঝা গেল কতটা ভীরু আর কাপুরুষ! গলার স্বর শুনে বোঝা গেল খুবই হতাশ হয়েছেন শেরিফ। মনে মনে খুবই আশা করেছিলেন তিনি যে এত বড় একটা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের লোভ সংবরণ করতে পারবে না রবিন হুড।

কিছুক্ষণ বিরতির পর বাছাই করা দশজন তীরন্দাজ আবার এসে দাঁড়ালো দাগের ওপর। দুটো করে তীর ছুঁড়লো প্রত্যেকে। অখণ্ড মেথমে নীরবতা বিরাজ করছে সারা ময়দানে। শ্বাস ফেলতেও যেন ভুলে গেছে সবাই। কিন্তু শেষের সেই ভিখারীটা তীর ছুঁড়তেই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো সবাই একসাথে, শূন্যে ছুঁড়ে দিল মাথার টুপি।

আশ্চর্য! আশ্চর্য! সত্যিই আশ্চর্য!’ চেঁচিয়ে উঠলেন অশীতিপর বৃদ্ধ স্যার অ্যামিয়াস। শেরিফের কাছাকাছিই একটা আসনে বসে ছিলেন তিনি। ‘এমন শূটিং জীবনে দেখিনি আমি। গত ষাট বছর ধরে কত হাজার হাজার প্রতিযোগিতা যে দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। এমন ধনুর্বিদ চোখে পড়েনি আর আমার।’

শেষ-মেষ টিকলো তিনজন : রেড ক্যাপের গিল, কানা ভিখারী, আর ট্যাম ওয়ার্থ শহরের অ্যাডাম।

‘এইবার, গিলবার্ট,’ চেঁচিয়ে বললেন শেরিফ। মান রাখা চাই। যদি জিততে পারো, পুরস্কার তো পাবেই, আরো একশোটা সিলভার পেনি দেব আমি তোমাকে নিজের পকেট থেকে।

‘চেষ্টার ত্রুটি করবো না, হুজুর,’ উত্তর দিল গিলবার্ট।

ভাল দেখে একটা তীর বেছে নিয়ে সতর্কতার সাথে ছুঁড়লো গিলবার্ট। সোজা উড়ে গিয়ে কেন্দ্রবিন্দুর এক আঙুল ডাইনে লাগলো তীরটা। গিলবার্ট গিলবার্ট!’ চিৎকার উঠলো দর্শকদের মধ্যে থেকে। হাততালি দিয়ে উঠলেন শেরিফ, ‘বাহ, চমৎকার।’

এবার ধনুকে তীর যোজনা করলো ছেঁড়া পোশাক পরা ভিখারী। তীর ছোড়ার পূর্ব মুহূর্তে কনুই উঁচু করতেই তার বগল তলায় মস্ত এক হলুদ তালি দেখতে পেল দর্শকরা। হাসির রোল উঠলো সবার মধ্যে। কিন্তু চোখের নিমেষে তীর ছুঁড়ে হাতটা নামিয়ে নিল ভিখারী। স্তব্ধ হয়ে গেল সবার মুখের হাসি। গিলবার্টের চেয়ে দুটো শরষের দানা পরিমাণ ভেতরে বিঁধেছে ভিখারীর তীর, কেন্দ্রবিন্দুর কাছে। নিজের অজান্তেই প্রশংসা বেরিয়ে এলো শেরিফের মুখ থেকে, ‘দারুণ, দারুণ!

অতি সাবধানে তীর ছুঁড়লো এবার অ্যাডাম। গিলবার্ট ও ভিখারীর মাঝখানে গিয়ে বিধলো তার তীর। প্রথম দফায় প্রথম হলো ভিখারী, দ্বিতীয় অ্যাডাম, তৃতীয় গিলবার্ট।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও বিরতির পর আবার তিনটে তীর ছুঁড়লো তিনজন। কিন্তু এবার অ্যাডামের তীরটা গিয়ে বিধলো কেন্দ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে। তার চেয়ে ভাল করলো গিলবার্ট, এবং তার চেয়েও ভাল করলো ছিন্নবস্ত্র ভিখারী। এবারেও প্রথম হলো সে। আবার কিছুক্ষণ বিরতির পর শেষ তীর ছোঁড়ার জন্যে দাগের ওপর এসে দাঁড়ালো তিনজন অতুলনীয় তীরন্দাজ। খুবই সতর্কতার সাথে বেশ অনেকক্ষণ লক্ষ্যস্থির করবার পর আশ্চর্য নৈপুণ্যের সাথে তীর ছুঁড়লো গিলবার্ট। দর্শকরা এতই জোরে হর্ষধ্বনি করে উঠলো যে ভয় পেয়ে উড়ে পালালো বুরুজের উপর বসে থাকা দাঁড়কাকগুলো। কেন্দ্রবিন্দু থেকে সামান্য এক সুতা ডাইনে গিয়ে বিধেছে ওর তীর

‘বেড়ে দেখিয়েছো, গিলবার্ট!’ আনন্দের আতিশয্যে আসন ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন শেরিফ। ‘কোন সন্দেহ নেই, তোমারই কপালে ঝুলছে পুরস্কার। কারো সাধ্য নেই এর চেয়ে ভাল কিছু করে। ছেঁড়া জামা পরা ভিখারীর দিকে ফিরলেন তিনি, ‘কি হে, আরও তীর ছোঁড়ার খায়েশ আছে, নাকি এখানেই হার মেনে ছেড়ে দেবে তীর- ধনুক?’

কোন জবাব না দিয়ে দাগের ওপর গিয়ে দাঁড়ালো কানা ভিখারী। চুপ হয়ে গেল সবাই, সবার মনে কি হয় কি হয় একটা ভাব, দম আটকে রেখে চেয়ে রয়েছে ভিখারীর দিকে। ধনুকে তীর যোজনা করে কয়েক সেকেণ্ড পাথরের মূর্তির মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো লোকটা, তারপর একটানে ছিলাটা কানের কাছে নিয়ে এসেই ছেড়ে দিল তীর। সোজা উড়ে গেল তীরটা, গিলবার্টের তীরের একটা পালক কেটে গাঁথলো গিয়ে তার পাশে…আশ্চর্য!…কেন্দ্রবিন্দুর ঠিক মাঝখানে। হর্ষধ্বনি করতেও ভুলে গেছে দর্শকবৃন্দ এই অবিশ্বাস্য পারদর্শিতা দেখে, বিস্ফারিত চোখে নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে সবাই।

‘নাহ্!’ লম্বা করে শ্বাস টেনে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো ট্যামওয়ার্থের অ্যাডাম। দুই কুড়ি বছর ধরে তীর-ধনুক নিয়ে কারবার করছি আমি, বেশির ভাগ প্রতিযোগিতায় ছিনিয়ে নিয়েছি জয়ের মালা, কিন্তু আজ আর না- এতদিনের অভিজ্ঞতায় অন্ততঃ কখন হার মেনে নিতে হয় সেটুকু শিক্ষা হয়েছে আমার। কে লোকটা জানি না, কিন্তু আজ বিনা দ্বিধায় মেনে নিচ্ছি আমি ওর তুলনা হয় না।’ এই বলে হাতের তীর ঢুকিয়ে রাখলো সে তূণে, ধনুক থেকে ছিলাটা খুলে সরে গেল দাগের ওপর থেকে।

পুরস্কার বিতরণ করলেন শেরিফ নিজ হাতে। বিপুল হর্ষধ্বনি আর করতালির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে এসে সবিনয়ে পুরস্কার গ্রহণ করলো কানা ভিখারী। ‘তুলনাহীন দক্ষতা দেখিয়ে জিতে নিয়েছো, ভিখারী, তুমি আজকের এই পুরস্কার। নামটা কি তোমার? বাড়ি কোথায়?’

‘লোকে আমাকে টেভিয়োডেলের জক বলে ডাকে,’ বললো লোকটা। ‘ওখানেই বাড়ি।’

‘বেশ, বেশ,’ বললেন শেরিফ। এর আগে এত ভাল তীর ছুঁড়তে দেখিনি আমি কাউকে। ভাল বেতন দেব, আমার বাহিনীতে যোগ দেবে তুমি? ভাগ্যিশ কাপুরুষ রবিন হুড আসেনি এই প্রতিযোগিতায়, এলে তাকেও হার মানতে হতো আজ তোমার কাছে। বলো, যোগ দেবে তুমি আমার রক্ষী বাহিনীতে?’

‘না,’ কর্কশ কণ্ঠে বললো ভিখারী। আমার মনিব আমি নিজে। কারো অধীনে চাকরি করি না আমি।’

‘তবে দূর হও!’ মুহূর্তে রেগে উঠলেন শেরিফ। ‘তোমার এই বেআদবির জন্যে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারতাম, কিন্তু মাফ করে দিচ্ছি। যাও, দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে!’

‘যাচ্ছি,’ বললো ভিখারী, কিন্তু মনে রাখবেন, কারো মাফেরও তোয়াক্কা রাখি না আমি।’ বলেই পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করলো সে।

ছিন্নবস্ত্র এক ভিখারীর মুখে এতবড় কথা শুনতে হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি শেরিফ। হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি কয়েক মুহূর্তের জন্যে। যখন সংবিৎ ফিরে পেলেন, তখন গরীব দর্শকদের রেলিঙের কাছে পৌঁছে গেছে ভিখারী। ‘ধরো, ধরে আনো ওকে! হাঁক ছাড়লেন তিনি। ধরে নিয়ে এসো হারামজাদাকে!’

একবার পিছন ফিরে চাইলো ভিখারী, আরো কয়েক পা এগিয়ে রক্ষীদের পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। সাত আটজন সশস্ত্র প্রহরী ছুটে আসছে তার দিকে। বিদ্যুৎবেগে একটা তীর বের করে আনলো সে তূণ থেকে, সেটা ধনুকে পরিয়ে একটানে নিয়ে এলো ছিলাটা কানের পাশে। হাঁ হয়ে গেছে সবার মুখ। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে সবাই ভিখারীর তীরের লক্ষ্য স্বয়ং শেরিফ।

‘খবরদার, শেরিফ! ফিরিয়ে নিন আপনার লেলিয়ে দেয়া কুত্তাগুলোকে!’ বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে প্রচণ্ড এক ধমক দিল ভিখারী। নইলে দুই চোখের ঠিক মাঝখানে ঢুকিয়ে দেব তীরটা।’

দাঁড়িয়ে পড়লো রক্ষীরা, পিছন ফিরে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে শেরিফের পরবর্তী নির্দেশের। রাগে লাল হয়ে গেছে শেরিফের চোখ-মুখ। কিন্তু তাই বলে নিজের বিপদটা বুঝে নিতে কিছুমাত্র ভুল হলো না তাঁর। এখন গোয়ার্তুমি করতে গেলে ভিখারীর অব্যর্থ তাঁর বিধবে এসে ঠিক দুই চোখের মাঝখানে। ফলাফল, নির্ঘাৎ মৃত্যু।

‘ফিরে এসো!’ চিৎকার করে উঠলেন তিনি। যেতে দাও হারামজাদাকে। ফিরে এসো।

আর এগুলো না বটে, কিন্তু ফিরেও গেল না রক্ষীরা। অপেক্ষা করছে, শেরিফ বিপদমুক্ত হলেই তাড়া করে ঘিরে ধরবে দুর্বিনীত ভিখারীকে।

রেলিং টপকে ওপারে চলে গেল ভিখারী। কিছুদূর ভিড় ঠেলে এগিয়ে হঠাৎ শিঙাটা মাথার উপর তুলে শূন্যে ছুঁড়ে দিল সে ভিতরের মুদ্রাগুলো। চেঁচিয়ে বললো, ‘কুড়িয়ে নাও, ভাই। যে যা পারো কুড়িয়ে নাও।

হুলস্থুল পড়ে গেল গরীব দর্শকদের মধ্যে। এই হুটোপুটি ডিঙিয়ে ইচ্ছে করলেও রক্ষীরা সহজে ধরতে পারবে না ওকে। নিশ্চিন্ত মনে পা বাড়ালো সে নগর-তোরণের দিকে। কোথা থেকে কে জানে, একদল মুখ্যুসুখ্যু গরীব দুঃখী ঘিরে ধরলো ভিখারীকে চারপাশ থেকে। সবাই মিলে বেরিয়ে গেল ওরা শহর থেকে।

সেইদিন শেরউডের সেই বিখ্যাত গ্রীনউড গাছের নিচে জমায়েত হলো বিচিত্র পোশাক পরা একদল লোক। কেউ পরেছে ভিক্ষুকের পোশাক, কেউ সেজেছে মঠের সন্ন্যাসী, কেউ ঝালাইকার, কেউ নিরীহ নির্বোধ চাষী। তাদের মাঝখানে বসে আছে শতচ্ছিন্ন লাল পোশাক পরা সেই ভিখারী, তার এক হাতে একটা সোনার তীর, অপর হাতে রূপোর শিঙা। হাসাহাসি হৈ-চৈ-এর মধ্যে চোখের উপর থেকে কালো পট্টি খুলে ফেললো ভিখারী, দেখা গেল আসলে কানা নয় সে, খুশিতে হাসছে দুই চোখ। এবার শতচ্ছিন্ন পোশাকটা খুললো সে, দেখা গেল ছেঁড়া পোশাকের নিচে রয়েছে লিংকন গ্রীনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক। তারপর দাড়িতে হাত বুলালো ভিখারী। বললো, ‘কিন্তু এটা? আমার এত সাধের সোনালী দাড়ি থেকে ওয়ালনাটের কষের দাগ তুলবো কি করে?’

কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো সবাই। উঠে দাঁড়ালো রবিন হুড। পুরস্কার পাওয়া সোনার তীরটা ঝুলিয়ে দিল একটা ডালের সাথে। বললো, ‘এবার ভোজের ব্যবস্থা হওয়া দরকার। কি বলো তোমরা?’

ভোজের পর শুরু হলো নাচ-গান গল্প-গুজব। এত ফুর্তির মধ্যেও রবিনকে একটু অন্যমনস্ক দেখে জানতে চাইলো লিটল জন, ‘কি হয়েছে তোমার, ওস্তাদ? কেমন যেন মনমরা মনে হচ্ছে?’

‘ঠিকই ধরেছো,’ বললো রবিন হুড। খারাপ লাগছে এই ভেবে যে শেরিফ জানলো না কিছুই। তার ধারণা কাপুরুষ রবিন হুড সাহসই পায়নি আজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে।’

‘ও, এই কথা?’ একগাল হাসলো লিটল জন। এ আর এমন কি সমস্যা?’ উইল স্টিউটলির দিকে ফিরলো সে, ‘উইল, একটা পদ্য বানিয়ে ফেলো তো চটপট, লিখে ফেলো একটা কাগজে।

‘কি করবে পদ্য দিয়ে?’ জানতে চাইলো রবিন।

‘দেখোই না কি করি!’ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো লিটল জন। ‘হজমের বারোটা বাজিয়ে দেব আজ শেরিফের!’

এদিকে নটিংহাম শহরে নিজ বাড়িতে বিশিষ্ট অতিথিবর্গের সাথে নৈশ ভোজে বসেছেন শেরিফ। খেতে খেতে মনের খেদ প্রকাশ করে ফেললেন শেরিফ। আমি ভেবেছিলাম রবিন হুড আজ আসবেই আসবে। ও যে এতবড় কাপুরুষ তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। বোধহয় কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে ফাঁদ পেতে ধরা হবে আজ তাকে। ভয়ে ইঁদুরের গর্তে সেঁধিয়েছে গিয়ে। কিন্তু, ভাবছি ওই বেয়াড়া ভিখারীটার কথা কে ও?’

কথা শেষ হবার আগেই ঘ্যাঁচ করে একটা তীর এসে বিঁধলো খাবার টেবিলে, শেরিফের ঠিক সামনে।

‘ব্যাপার কি! কি হলো? তীর এলো কোত্থেকে? খোলা ওই জানালা দিয়ে না?’

‘একটা কাগজ জড়ানো রয়েছে ওটার গায়ে,’ বললো একজন।

‘দেখি, দেখি কিসের কাগজ?’ হাত বাড়ালেন শেরিফ।

ভাঁজ খুলতেই দেখা গেল ছোট্ট একটা পদ্য লেখা রয়েছে কাগজের মাঝখানে।

“ভেবেছিলে ধরবে তাকে
পড়বে ফাঁদে রবিন হুড।
পুরস্কারটা কে নিল আজ?
হাসছে তামাম শেরউড!”

পরিষ্কার বুঝতে পারলেন শেরিফ, কানা ভিখারীর ছদ্মবেশে আজ পুরস্কার জিতে নিয়ে গেছে স্বয়ং দস্যু রবিন হুড।

রাগে-দুঃখে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলো শেরিফের চেহারা। খাবার ফেলেই এক লাফে উঠে দাঁড়ালেন তিনি, গটমট করে বেরিয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *