২০. রবিনের শেষ তীর
রাজা রিচার্ডের সাহচর্যে কিছুদিন পরমানন্দে কাটলো রবিনের। তারপর আবার দেশের বাইরে গেলেন রাজা। রাজ্য শাসনের ভার পড়লো রাজার ছোট ভাই যুবরাজ জনের ওপর। এই লোকটাকে মোটেই পছন্দ করতে পারলো না রবিন হুত। ফলে রাজ-দরবার আর ভাল লাগে না ওর, কেমন অস্বস্তি আর ফাঁপর লাগে। নীচমনা, ভীরু, নিষ্ঠুর শাসকের আনুগত্য স্বীকার করে নেয়া সবার পক্ষে সহজ হয় না।
শাসনভার হাতে পেয়েই সিংহাসনটা দখল করে নেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে পড়লেন যুবরাজ জন। রবিন হুডের কাছে দূত পাঠালেন ওকে বাজিয়ে দেখার জন্যে, রাজা রিচার্ডকে সিংহাসনচ্যুত করার ব্যাপারে দলবল সহ রবিন হুড তাঁকে সাহায্য করবে কিনা জানতে চাইলেন। বলাই বাহুল্য, রবিন হুডের প্রত্যাখ্যান চটিয়ে দিল জনকে, ভয়ানক তিক্ততার সৃষ্টি হলো দুজনের সম্পর্কে।
একদিন অপূর্ব সুন্দর এক মে সকালে লণ্ডনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে প্রিয় শেরউডের কথা মনে পড়তেই খচ্ করে কাঁটা বিধলো রবিনের বুকে। কী জীবন ছিল সেটা! দীর্ঘশ্বাস ফেললো রবিন, ভাবলো, আর কি জীবন এই ইট পাথরের লণ্ডনে! ফিনসবারি ময়দানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে দাঁড়ালো সে। কয়েকজন যুবক শূটিং প্র্যাকটিস করছে। অনেকদিন পর ধনুকের টঙ্কার শুনে বুকের ভেতরটা টন টন করে উঠলো অব্যক্ত বেদনায়। কতদিন শোনেনি সে এই মিষ্টি আওয়াজ! ঠিক করলো, কিছুদিনের জন্যে হলেও শেরউডে যেতে হবে ওকে। যেমন করে হোক।
বাড়ি ফিরে এসে কথাটা বলতেই আনন্দে নেচে উঠলো মেরিয়ান। লিটল জন আর উইল স্কারলেটকে ডেকে নিজের ইচ্ছের কথা জানালো রবিন। দুই কানে গিয়ে ঠেকলো ঢ্যাঙা দৈত্যের হাসি, উইল স্কারলেটও এক পায়ে খাড়া। পরদিনই খুব ভোরে লণ্ডন ছেড়ে চুপিচুপি রওনা হয়ে গেল ওরা চারজন কাউকে কিচ্ছু না বলে। কারণ, যুবরাজ জনের কানে গেলে বাধা দেবেন তিনি। রাজার অনুপস্থিতিতে সীমাহীন ক্ষমতা তাঁর হাতে।
জঙ্গলে পৌছে ওদের আনন্দ আর ধরে না। বুনো পথ ধরে ছুটে চলে যাচ্ছে হরিণের দল, গাছের ডালে বসে মনের সুখে গাইছে পাখি মুক্ত, স্বাধীন গান; সূর্যটাও যেন জ্বল- জ্বল করছে এখানে দ্বিগুণ তেজে। সেই গ্রীনউড গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো ওরা। কী শান্তি!
কয়েকটা দিন যেন হাওয়ায় ভেসে কেটে গেল, মনের সুখে শিকার করছে ওরা তিনজন, রান্না করে তাজা হরিণের মাংস খাওয়াচ্ছে ওদের মেরিয়ান। শেরউড ছেড়ে আবার লণ্ডনে ফিরে যাবার কথা ভাবলেই খিঁচড়ে উঠছে ওদের মন। এমনি সময় হঠাৎ একদিন দেখলো ওরা কে যেন দৌড়ে আসছে ওদের আস্তানার দিকে। কাছে আসতেই চেনা গেল লোকটাকে মাচ।
‘দুঃসংবাদ, ওস্তাদ!’ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাচ। ‘সাবধান! রাজা রিচার্ড মারা গেছেন ফ্রান্সে। রাজা হয়েছে কাপুরুষ জন।’
‘এহ্-হে!’ এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়লো রবিন, ‘দেশটা উচ্ছন্নে যাবে এবার! বিশেষ করে আমার জন্যে এটা সত্যিই ভয়ানক দুঃসংবাদ।’
‘ঠিক বলেছো,’ বললো মাচ। আমি খবর নিয়ে এসেছি, রাজা হওয়ার পর জনের প্রথম আদেশ হচ্ছে, যেখান থেকে পারো, ধরে নিয়ে এসো রবিন হুডকে।
‘হুম!’ ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো রবিন, তারপর হাসলো। আবার আমি শেরউডের দস্যু হয়ে গেলাম। আবার আমি দস্যু রবিন হুড! আবার আমি মুক্ত, স্বাধীন–জঙ্গলের রাজা! তোমাদের যার খুশি যোগ দিতে পারো আমার সঙ্গে।’
খুশিতে লাফিয়ে উঠে তাক-ধিনাধিন নাচ শুরু করে দিল লিটল জন। উইল স্কারলেট আর মার্চের অবস্থাও তথৈবচ। বেশিদিন লাগলো না, খবর পেয়ে একে একে সব চেনা মুখ ফিরে এলো রবিন হুডের কাছে। আবার জমজমাট হয়ে উঠলো শেরউড আগের মত।
কিন্তু আগের সেই শান্তি ফিরে এলো না আর। একের পর এক সৈন্যদল পাঠাতে শুরু করলেন রাজা জন, জেদ চেপে গেছে তাঁর, রবিন হুডকে শায়েস্তা করা তাঁর চাই- ই। প্রচণ্ড যুদ্ধ চললো বছরের পর বছর। কখনও জিতছে রবিনের দল, কখনও রাজার সেনাবাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে বাধ্য হচ্ছে পিছু হটতে, রাজার অসংখ্য সৈন্য মারা পড়লো, প্রাণ দিল রবিনের অনেক বিশ্বস্ত অনুচর; কিন্তু পরাজয় মানলো না ওরা কিছুতেই। বীরের মত লড়াই করে চললো ওরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অবশেষে একদিন খবর এলো, মারা গেছেন রাজা জন। গোটা ইংল্যাণ্ড খুশি হয়ে উঠলো নিষ্ঠুর, অত্যাচারী রাজার মৃত্যুতে, সবচেয়ে বেশি খুশি হলো শেরউডের দস্যুরা। কিছুটা শান্তি আসবে এবার ওদের জীবনে। কিন্তু কই, সেই আনন্দ তো আর ফিরে আসছে না!
কেমন যেন বদলে গেছে রবিন। হাসি নেই ওর মুখে। অনেক ঘনিষ্ঠ সহচর এখন চির বিশ্রাম নিচ্ছে মাটির নিচে, ওর সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়ার জন্যে নেই মেরিয়ানও- রজার নামের এক গুপ্তঘাতক লেস, ফিতে আর আংটি বিক্রি করতে এসে ছুরি মেরে খুন করেছে ওকে। প্রতিশোধ অবশ্য নিয়েছে সে, কিন্তু মনটা ভেঙে গেছে রবিনের। কোনো কাজে আর মন বসে না ওর। কিছুই ভাল লাগে না। শেষে একদিন দল ভেঙে দিল সে। এদিক-ওদিক কাজ জুটিয়ে নিয়ে একে একে চলে গেল সবাই। কিন্তু রবিনকে ছেড়ে কিছুতেই কোথাও গেল না লিটল জন। জঙ্গল থেকে হরিণ মেরে আনে সে, রান্না করে নিজে খায়, জোর-জুলুম করে রবিনকে খাওয়ায়। কিছু খাওয়ার রুচিও নষ্ট হয়ে গেছে রবিনের।
শরীর ভেঙে গেল রবিনের। বুঝতে পারলো সে, আগের সেই জোর আর নেই গায়ে, বিশাল ধনুকটা টেনে বাঁকা করতে রীতিমত কষ্ট হয় আজকাল, আগে যতদূর যেত ততদূরে যায় না তাঁর। মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলো রবিন। পরিষ্কার বুঝতে পারছে সে, লিটল জনও বার বার করে বলছে, রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে, চিকিৎসা দরকার। মনে পড়লো, শেরউডের কাছেই কার্কলির মঠে থাকে ওর এক দূর সম্পর্কের বোন, চিকিৎসা-বিদ্যার অনেক কলা-কৌশল জানা আছে তার। লিটল জনকে ডেকে একদিন বললো রবিন, ঠিক আছে, জন, তুমি যখন এত করে বলছো, চিকিৎসা করাবো আমি। কাল ভোরে উঠে চলে যাব কার্কলির মঠে।
পরদিন রওনা হয়ে গেল রবিন। অনেকটা পথ গিয়ে পা আর চলতে চায় না। এতটা দুর্বল হয়ে গেছে শরীর, টের পায়নি ও আগে। একবার ভাবলো শিঙায় ফুঁ দিয়ে ডাকবে লিটল জনকে, কিন্তু খানিক বিশ্রাম নিয়ে যখন কিছুটা শক্তি ফিরে পেলো, তখন একাই রওনা দিল আবার। বহুকষ্টে পৌঁছলো সে কার্কলির মঠে।
কতবড় শত্রুর হাতে নিজের চিকিৎসার ভার সঁপে দিতে এসেছে সে, জানে না রবিন। খুবই আদর-যত্নের ভান করলো ওর বোন, মঠের দোতলায় একটা ঘর ছেড়ে দিল ওর জন্যে। আশ্বাস দিল-কোন চিন্তা নেই, শরীর থেকে খানিকটা দূষিত রক্ত বের করে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বিকেলের দিকে যখন শিরা কাটবার জন্যে ছুরি নিয়ে হাজির হলো ওর বোন, সরল বিশ্বাসে হাত বাড়িয়ে দিল রবিন। রবিনের ওপর তার কিসের রাগ, কেন এই চরম শত্রুতা করতে গেল মহিলা, কি কারণে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছিল সে, কেউ জানে না-ঘ্যাঁচ করে কেটে দিল সে রবিনের হাতের শিরা। রক্ত ঝরতে শুরু করলো দরদর করে। নিষ্ঠুর এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে, দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে, যাবার সময় দরজাটা আটকে দিতে ভুললো না। রক্ত ঝরছে তো ঝরছেই, ভয়ানক দুর্বল হয়ে পড়লো রবিন। হঠাৎ তার মনে হলো, এতক্ষণ ধরে গেছে, এখনও ফিরে আসছে না কেন তার বোন? ডাকাডাকি করে সাড়া পাওয়া গেল না কারও। অবশেষে দুর্বল পায়ে টলতে টলতে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করেই বুঝতে পারলো সে সব। বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়া হয়েছে দরজায়। অনেক ধাক্কাধাক্কি করলো সে দরজার গায়ে, অনেক ডাকাডাকি করলো, কিন্তু কেউ এলো না। নির্জন ঘরে অসহায় অবস্থায় ওকে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে সরে পড়েছে ওর বোন।
আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না রবিন। শুয়ে পড়লো মেঝেতে। শরীরের রক্ত নিঃশেষ হয়ে এসেছে প্রায়, মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছে কিছুক্ষণের জন্যে। অনেক কষ্টে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে জানালার কাছে গিয়ে পৌঁছলো, জানালাটা খুললোও, কিন্তু লাফিয়ে নিচে নামার শক্তি নেই। তবে একটা জিনিস আছে এখনও ওর কাছে-বিপদের বন্ধু সেই শিঙাটা। কতবার কত বিপদে এই শিঙার ডাক শুনে ছুটে এসে পাশে দাঁড়িয়েছে ওর বিশ্বস্ত সহচরেরা। কাছাকাছিই জঙ্গলে ওর জন্যে অপেক্ষা করছে লিটল জন, জানে রবিন। শিঙাটা মুখে তুলে তিনটে ফুঁ দিল তাতে। অত্যন্ত দুর্বল ভাবে বাজলো শিঙা, ফুঁ দেয়ার শক্তিও ফুরিয়ে এসেছে ওর।
কিন্তু সজাগ ছিল লিটল জন, রবিনের শিঙার দুর্বল আওয়াজ পৌঁছলো তার কানে। ব্যাপার কি! এত আস্তে আওয়াজ কেন!’ বলেই প্রাণপণে দৌড় দিল সে মঠের উদ্দেশে।
মঠে পৌছে হলঘরের দরজায় দমাদম ঘুসি মারলো লিটল জন। ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে লাথি মারলো, কিন্তু কেউ কোন সাড়া দিল না। কিছুক্ষণ দরজা পিটিয়েই বুঝে ফেললো সে, কেউ খুলবে না দরজা, কিছু একটা চক্রান্ত রয়েছে এর পেছনে। কিভাবে ভেতরে ঢোকা যায় দেখার জন্যে একটু সরে এলো পিছনে। জানালা দিয়ে ঢোকা যাবে না; একে ছোট, তার ওপর লোহার শিক দিয়ে দুর্ভেদ্য করা হয়েছে ওগুলোকে। উঠানে মস্ত একটা ওক গাছের গুঁড়ি দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। দু’জন লোকের পক্ষে যেটা উঁচু করা কষ্টকর, হ্যাঁচকা টানে তুলে নিল সেটা লিটল জন। প্রচণ্ড এক গুঁতো দিল ওটা দিয়ে দরজার গায়ে। দড়াম করে খুলে গেল বিশাল দরজা, কব্জা থেকে খুলে ছিটকে পড়লো হলঘরের মাঝখানে। ‘রবিন! রবিন!’ হাঁক ছাড়লো সে, ‘কোথায় তুমি, ওস্তাদ?’
উত্তর শুনতে পাবার আশায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে কিছুক্ষণ, কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। আবার আরও জোরে ডাকলো সে। এবার মনে হলো দোতলা থেকে যেন ক্ষীণ একটা উত্তর ভেসে এলো। কয়েক লাফে সিঁড়ি ডিঙিয়ে দোতলায় উঠে এলো লিটল জন, আবার শুনতে পেল রবিনের ক্ষীণ কণ্ঠ। ছুটে গিয়ে দড়াম করে লাথি দিয়ে খুলে ফেললো সে তালা মারা দরজাটা।
ঘরের ভেতর একনজর চেয়েই চক্ষুস্থির হয়ে গেল লিটল জনের। রক্তের গঙ্গা বইছে মেঝেতে। ‘কি ব্যাপার, রবিন? এত রক্ত কেন? কিসের চিকিৎসা-তোমাকে খুন করছে এরা!’
দুর্বল ভাবে মাথা ঝাঁকালো রবিন হুড। ‘হ্যাঁ, লিটল জন। মেরে ফেললো— সময় ঘনিয়ে এসেছে …আমি চলে যাচ্ছি।’
হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো লিটল জন তার প্রভুর পাশে। কাঁপা গলায় বললো, ‘চলে যাচ্ছো? তাহলে যাবার আগে শুধু একটা কাজের অনুমতি দিয়ে যাও আমাকে, ওস্তাদ!’
‘কিসের অনুমতি, লিটল জন?’
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাই আমি এই মঠ, নিজ হাতে খুন করতে চাই পিশাচিনীটাকে!
দুর্বল ভাবে মাথা নাড়লো রবিন। এ অনুমতি আমি দিতে পারি না, জন। মনে নেই আমাদের শপথের কথা? স্ত্রীলোকের কোনো ক্ষতি করবো না আমরা।’ ম্লান হাসলো সে, ‘আমার ধনুকটা একটু দেবে আমার হাতে, লক্ষ্মী জন?’
কোন প্রশ্ন না করে রবিনকে উঁচু করে তুলে ধনুকটা ধরিয়ে দিল লিটল জন ওর হাতে।
‘একটা তীর!’ হাত বাড়ালো রবিন।
নিজের তূণ থেকে বের করে একটা তাঁর দিল লিটল জন রবিনের হাতে।
‘জানালার কাছে নিয়ে চলো আমাকে।’ ধরে ধরে জানালার কাছে নিয়ে এলো লিটল জন রবিনকে। রবিন বললো, ‘ওই দেখো, জন, আমাদের শেরউড জঙ্গল দেখা যায়। শেষ একটা তীর ছুঁড়ব আমি। তীরটা যেখানে পড়বে, ঠিক ওইখানে কবর দিয়ো আমাকে।’
দু’চোখ ভরে শেষ দেখা দেখে নিচ্ছে রবিন শেরউডকে। দুলছে বিশাল ওকের শাখা, যেন হাতছানিতে ডাকছে ওকে আয়, রবিন, আয়। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে
ওকে-আয়, শেষ তীরটা ছুঁড়লো রবিন। ছিলার টংকার শুনে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো ওর ঠোঁটে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে শেরউডের দিকে। অনেক, অনেকক্ষণ পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘কী সুন্দর ছিল আমাদের জীবনটা; তাই না, জন? কত মজা করেছি আমরা একসাথে! শোনো, গভীর করে খুঁড়ো কিন্তু কবরটা, ঠিক যেখানে তীরটা গিয়ে বিধবে, সেইখানে। সবুজ একটা ঘাসের চাপড়া দিয়ো আমার মাথার নিচে, আর…আর আমার এই ধনুকটা শুইয়ে দিয়ো পাশে। একটি কথাও বলতে পারলো না লিটল জন, মাথা ঝাঁকালো কেবল। ফোঁপাচ্ছে ও চেষ্টা করেও থামাতে পারছে না চোখের পানি।
বুকের ভেতর কেমন একটা ঘড় ঘড় শব্দ হচ্ছে রবিনের, কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে। ক্ষীণ কণ্ঠে বললো, ‘শেষ একটা কথা : কেঁদো না, লক্ষ্মী জন… তোমাকে… তোমাকে আমি ভালবাসি। তোমার অকৃত্রিম বন্ধুত্ব পেয়েছিলাম আমি-সেজন্যে আমি কৃতজ্ঞ।’
প্রাণাধিক বন্ধুর বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো রবিন হত।