• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মহাভারতের নারী – ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য

লাইব্রেরি » ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য » মহাভারতের নারী – ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য
মহাভারতের নারী

মহাভারতের নারী – ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য

আমার পরলোকগত ভগ্নিপতি প্রভাশঙ্কর ভট্ট
এবং
 আমার বৈবাহিক শ্রীযুক্ত আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে
 এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করলাম।

.

ভূমিকা

অপার মঙ্গলময়ের, পরমেশ্বরের করুণায় “মহাভারতের নারী” গ্রন্থটির রচনা শেষ হল। গ্রন্থটির সূচনায় ঈষৎ ভীতি নিয়ে রচনারম্ভ হয়েছিল। কারণ যে-বিষয় নিয়ে লিখতে চাইছি, ব্যাসদেবের তালিকা অনুযায়ী তাঁর সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি, তালিকা অন্তর্ভুক্ত নয়, অথচ ব্যাসদেব মহাভারত গ্রন্থে অন্তত আরও দশটি চরিত্র আলোচনা করেছেন। এই ষাটটি নারী চরিত্র নিয়ে লেখা, এক অত্যন্ত কঠিন বিষয়। আবার রচনা শুরু করার পর কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিছুদিন কাটাবার পর অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে জীবনও অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ল। দিনে দু’তিন ঘণ্টার বেশি লেখার অনুমতিও পেলাম না। তাই পরিকল্পনা রূপায়ণে এক বৎসরের বেশি কাল লেগে গেল।

আদিপর্বে গ্রন্থ রচনার শুরুতে ব্যাসদেব “পাণ্ডবদের কুলপঞ্জিকা” দিয়েছেন। এই কুল পঞ্জিকায় ভগবান বিষ্ণু থেকে আরম্ভ করে পরীক্ষিৎ-পুত্র জন্মেঞ্জয় পর্যন্ত রাজা ও রানির নাম উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ বংশধারাটির রেখাচিত্র দিয়েছেন। আমার আলোচনার বিষয় পরিকল্পিত ছিল— এই নারীচরিত্রগুলির সম্পূর্ণ বিবরণ রচনা। অর্থাৎ একটি গ্রন্থে মহাভারতের সমস্ত নারীচরিত্রের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা এবং তা ব্যাসদেবের বিবরণ অনুযায়ী।

কুলপঞ্জিকাটি পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রথমেই বিস্মিত হলাম— এই কুলপঞ্জিকায় বিশিষ্ট কয়েকটি নারী চরিত্রের উল্লেখ না থাকায়। মহাভারতের নায়ক চরিত্র নিয়ে কল্পিত সংশয়। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রই শুরু করেছেন, আজও তা চলছে। যদিও সে চলার কোনও কারণ নেই, মহাভারতের নায়ক এক এবং একমাত্র যুধিষ্ঠির। কিন্তু মহাভারতের নায়িকা চরিত্র নিয়ে কোনও সংশয় কোথাও কেউ প্রকাশ করেননি। মহাভারতের নায়িকা যজ্ঞবেদী-উদ্ভূতা যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদী। অথচ ব্যাসদেব দ্রৌপদীর নাম উল্লেখ করেননি।

এইবার খুঁটিয়ে দেখলাম, ব্যাসদেব গঙ্গার নাম উল্লেখ করেননি, গান্ধারীর নাম উল্লেখ করেননি। মাদ্রীর নাম উল্লেখ করেননি, অম্বা এবং অম্বিকার নাম উল্লেখ করেননি। সুভদ্রা, উলূপী, চিত্রাঙ্গদার নাম উল্লেখ করেননি। রাক্ষসী জরা-হিড়িম্বার নাম উল্লেখ করেননি। তাৎপর্যও বোঝা গেল। কেবলমাত্র সেই নারীর নাম উচ্চারিত হয়েছে যাঁদের সন্তান সিংহাসনে বসেছিলেন, রাজচক্রবর্তী হয়েছিলেন।

কিন্তু মহাভারত যেমন ভগবান কৃষ্ণ থেকে বহু বিশিষ্ট পুরুষের আখ্যান, তেমনই কুলপঞ্জিকায় গৃহীত নয় এমন বহুনারীর জীবন সংগ্রামের কাহিনিও। এদের বাদ দিলে মহাভারতের কিছু থাকে না। এই নারীদের নিয়ে অসংখ্য উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক লেখা হয়েছে। এক দ্রৌপদীকে নিয়েই চন্দ্রভাগা দ্রৌপদী, নাথবৎ-অনাথবতী ইত্যাদি গ্রন্থ রচিত হয়েছে। গঙ্গাকে অম্বাকে নিয়ে নাট্য রচনা হয়েছে, কুন্তীকে নিয়ে সম্রাজ্ঞী কুন্তী থেকে আরম্ভ করে আধুনিক সমালোচকরা প্রবন্ধ রচনা করেছেন। আবার মহাভারত কাহিনি থেকে রাক্ষসী জরা, রাক্ষসী হিড়িম্বাকে বাদ দেওয়া কিছুতেই হয় না। এঁরা কেবলমাত্র প্রত্যক্ষভাবে মহাভারত কাহিনির সঙ্গে যুক্ত নন, এঁদের যোগফলেই মহাভারতের অন্য শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলি প্রভাবিত হয়েছে। হয় সার্থক, না হয় ব্যর্থ হয়েছে। যদুবংশধ্বংস মহাভারতের মূল কাহিনির সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং কৃষ্ণের সর্বসময়ের সঙ্গিনী সত্যভামার যথেষ্ট গুরুত্ব মহাভারতে আছে।

কাজেই আমার রচনার পরিধিরও বিস্তৃতি ঘটতে থাকল। মানবী, দেবী, রাক্ষসী, নাগকন্যা, অযোনিসম্ভূতা নারী সকলেই আমার আলোচ্যসূচিতে এসে গেল। অর্থাৎ, ব্যাসদেব এক লক্ষ শ্লোকের মহাভারতে যতগুলি বিশিষ্ট নারীর বর্ণনা দিয়েছেন, তা একটি মাত্র গ্রন্থে আমি ধরতে চাইলাম এবং ব্যাসদেবের বর্ণনা অনুযায়ীই। অর্থাৎ মহাভারতের কোনও নারীর সম্পর্কে জানতে গেলে যেন একটি গ্রন্থেই পাওয়া যায়— এ রচনা তারই প্রচেষ্টা।

এই গ্রন্থে সাবিত্রী, সীতা, দময়ন্তী, শৈব্যা ইত্যাদির বর্ণনা নেই। কারণ এঁরা মহাভারতের চরিত্র নন। যুধিষ্ঠির আপন ভার্যার বিপন্ন দশার তুলনা কোথাও ঘটেছে কি না জানতে চাইলে, মার্কণ্ডেয় মুনি সমান্তরাল কাহিনি হিসাবে সাবিত্রী-সত্যবানের উপাখ্যান বলেন। আপন বনবাসের তুলনা জানতে ঋষিকণ্ঠে রাম-বনবাসের কাহিনি শোনেন। আমি ভারতবর্ষের মুনি ঋষিদের প্রজ্ঞার কথা ভাবলে স্তম্ভিত হয়ে যাই। এঁরা প্রাতঃস্মরণীয় পঞ্চকন্যার মধ্যে সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী অথবা শৈবা— এদের ধরেননি। এঁরা ধরেছিলেন দুই মহাকাব্যের পাঁচটি নারীকে। যাঁদের পুরুষের অত্যাচার সইতে হয়েছিল কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত আপন স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল ছিলেন। সীতার সর্বংসহা নারীমূর্তি, সাবিত্রীর অসাধারণ বুদ্ধি ও বাগ্মিতা এঁদের সে-পরিমাণে আকৃষ্ট করেনি। তাই তাঁদের প্রাতঃস্মরণীয়া পঞ্চকন্যা দুই মহাকাব্যের মধ্যেই তাঁরা খুঁজেছেন। এই হল আমার গ্রন্থরচনার বহিরঙ্গের উৎস, এ ছাড়াও এর অন্তরঙ্গ দিকও আছে।

খ

বহু মহাভারত আলোচনাকার, পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা সংখ্যায় অধিকাংশই, পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয় পণ্ডিতবর্গের বড় এক অংশ মনে করেন, মহাভারত কোনও একজন কবির রচনা নয়, কোনও এক পর্যায়ে এটি রচিত হয়নি। এই মহাকাব্যটির মধ্যে অন্ততপক্ষে সাত-আটটি স্তর আছে— মহাভারতের বহু অংশই প্রক্ষিপ্ত। মূলে গ্রন্থটির শ্লোক সংখ্যা ছিল মাত্র চব্বিশ হাজার— কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটিই এর মূল অংশ। যদিও গ্রন্থের শেষে ব্যাসদেব ঘোষণা করেছেন— এটি একটি ইতিহাস গ্রন্থ, এই কাহিনির অনুলেখক হলেন সর্বসিদ্ধিদাতা গণেশ এবং সম্পূর্ণ গ্রন্থটি রচনা করতে সময় লেগেছে তিন বৎসর চার মাস কাল।

শ্রীহরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ প্রমুখ ভারতীয় পণ্ডিতগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন ৩৭ কল্যব্দের (৩০৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের) ২৪ বৎসর পরে অর্থাৎ ৬১ কল্যব্দে (৩০৪১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) বেদব্যাস মহাভারত রচনা করেন এবং তিন বৎসরে সে-রচনা সমাপ্ত করেন। মহাভারতের প্রস্তাবনাভাগে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও বৌদ্ধমতের উল্লেখ দেখে অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত মনে করেন যে, মহাভারতের ঘটনা অতিপ্রাচীন হলেও মহাভারতগ্রন্থ বা অন্তত তার প্রস্তাবনাভাগ বুদ্ধ শাক্যসিংহের ধর্মপ্রচারের পর রচিত হয়েছিল। কিন্তু, ওই প্রস্তাবনাভাগেই দেখা যায় যে, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরূপ তক্ষক কুণ্ডল হরণ করলে, উতঙ্ক পাতালে গিয়ে সেই কুণ্ডল এনে গুরুদক্ষিণা দেন এবং তক্ষকের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর প্রতিশোধ নেবার জন্য হস্তিনায় গিয়ে জন্মেঞ্জয় রাজাকে উত্তেজিত করেন। ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী রাজা জন্মেঞ্জয়ের সমসাময়িক ছিলেন। তখন বৌদ্ধ মঠও ছিল। শাক্যসিংহ জন্মেঞ্জয় থেকে প্রায় আড়াই হাজার বৎসর পরবর্তী ছিলেন। অতএব তাঁর প্রবর্তিত ধর্মমত কখনই জন্মেঞ্জয়ের সম-সাময়িক হতে পারে না (এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা গ্রন্থ রচিত হয়েছে, কিছুকাল পরেই প্রকাশিত হবে)। শাক্যসিংহের বহু পূর্বকাল থেকেই বৌদ্ধমত, বৌদ্ধধর্ম, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও বৌদ্ধমঠ এদেশে প্রচলিত ছিল। সংস্কৃতভাষায় লিখিত ললিতবিস্তরসূত্র, বুদ্ধচরিতকাব্য, লঙ্কাবতার সূত্র, অবদান কল্পলতা প্রভৃতি গ্রন্থে এবং পালিভাষায় রচিত জাতক প্রভৃতি গ্রন্থপাঠে দেখা যায়, ক্রকুচ্ছন্দ নাম বুদ্ধ শাক্যসিংহ থেকে ৩১০১ খ্রিস্টপূর্ব, কনকমুনি নামক বুদ্ধ খ্রিস্টপূর্ব ২০৯০ অব্দে, কাশ্যপনামক বুদ্ধ খ্রিস্টপূর্ব ১০১৪ অব্দে এবং শাক্যসিংহ গৌতম বুদ্ধ খ্রিস্টপূর্ব ৬৩৩ অব্দে জন্মেছিলেন। আবার এদের আগেও ১২০ জন বুদ্ধ জন্মেছিলেন, সুতরাং, মহাভারতে বা বেদান্ত দর্শনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা বৌদ্ধমত অন্বিত হওয়ায় তা শাক্যসিংহ গৌতম বুদ্ধের পরে রচিত হয়েছিল বলে অনুমান করা কখনও সংগত নয়।

পণ্ডিতদের সাল তারিখ নিয়ে বিবাদ আলোচনা রচনাকারের বর্তমান উদ্দেশ্য নয়, তা ভবিষ্যতে ঘটবে। মহাভারতের ঘনিষ্ঠ পাঠক হিসাবে এর তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্তমান লেখককে অত্যন্ত আকৃষ্ট করে এবং সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে মহাভারত একজন কবির রচনা এবং তিনবৎসর চারমাসের মধ্যে গ্রন্থটি রচিত হয়ে সমাপ্তি লাভ করে। প্রথমে এর সময়ের ব্যাপ্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান সুফল লাভে এখন একটি শিক্ষিত মানুষ প্রতিটি মিনিটে কতগুলি শব্দ উচ্চারণ করেন তাঁর হিসাব নেওয়া সম্ভব ও সহজ হয়েছে। মেশিনের সামনে বসে কথা বললেই দেখা যায় আমরা প্রায় এক মিনিটে একশোটি কথা বলি। অর্থাৎ ঘন্টায় আমরা ছ’ হাজার শব্দ বলতে পারি। যদি ব্যাসদেব দিনে চার ঘণ্টা করে, সকালে দু’ঘণ্টা ও বিকালে দু’ ঘণ্টা করেও লিখতে পারতেন, তা হলে ২৪০০০ শব্দ বলতে পারতেন এবং অনুলেখক শ্রীগণেশ তা লিখতেও পারতেন। মহাভারতের এক লক্ষ শ্লোক ভাল করে দেখলে দেখা যায় প্রতি শ্লোকে অন্তত দশটি করে শব্দ আছে। অর্থাৎ কমবেশি হিসাবে অন্তত দশ লক্ষ শব্দ আছে। পাঠক নিজেই হিসাব করে দেখবেন। তিন বৎসর চারমাসে দশ লক্ষ শব্দ বলা সম্ভব ছিল কি না। অবশ্যই সম্ভব ছিল। সমস্ত কর্তব্য সম্পাদন করার পরেও।

দ্বিতীয়ত, মহাভারতের ঘটনা সংস্থাপনা ও চরিত্র উপস্থাপনার মধ্যে এমন এক ঔচিত্যবোধ লক্ষ করা যায়, পারম্পর্য এতটাই নিখুঁত যে সুনিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করা যায় যে, এটি একজন মানুষের পরিকল্পনা। যাঁরা একনিষ্ঠ ভাবে মহাভারত পড়বেন তাঁরা এই পারম্পর্যটি লক্ষ করবেন। আদিপর্বে ঘোষণা করা হল যে চন্দ্রদেব মাত্র ষোলো বছরের জন্য আপন পুত্র বৰ্চাকে মর্ত্যভূমিতে প্রেরণ করবেন। অর্জুনের ঔরসে সুভদ্রার গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন বৰ্চা। সভাপর্বের শেষ দিকে অভিমন্যুর জন্ম হল। সমস্ত বনপর্বে অভিমন্যু দ্বারকায় কৃষ্ণ ও সাত্যকির কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছেন। সত্যভামা দ্রৌপদীকে অভিমন্যু ও দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্রের কুশল সংবাদ দিলেন। জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে হরণ করতে এসে ভীমসেনের হাতে চূড়ান্ত নিগৃহীত হলেন এবং উমাপতি শিবের তপস্যায় ব্রতী হলেন। মহাদেব বর দিলেন অর্জুন ভিন্ন অন্য পাণ্ডবদের একদিনের জন্য জয়দ্রথ যুদ্ধে পরাজিত করবেন। উদ্‌যোগপর্বে ভীষ্ম দুর্যোধনকে জানালেন যে, অভিমন্যু অতিরথ, পিতা অর্জুন এবং মাতুল কৃষ্ণের থেকেও তিনি বড় বীর। দ্রোণপর্বে যুধিষ্ঠিরকে ধরবার জন্য দুর্যোধন সেনাপতি দ্রোণকে অনুরোধ করলেন। দ্রোণ চক্রব্যূহ রচনা করে যুধিষ্ঠিরকে ধরতে এগোলেন। পিতৃদত্ত শিক্ষায় অভিমন্যু অনায়াসে ব্যূহে প্রবেশ করলেন। মহাদেবের আশীর্বাদে জয়দ্রথ অন্য পাণ্ডবদের আটকে দিলেন। সমস্ত দিনের যুদ্ধের পর সপ্তরথী বেষ্টিত অভিমন্যুর মৃত্যু হল। ইতোমধ্যে বনবাস পর্বের শেষে বিরাটপর্বে অভিমন্যু উত্তরার বিবাহ হল। অভিমন্যুর মৃত্যুর পরের দিন সূর্যাস্তের পূর্বেই অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করলেন। মহর্ষি পরিকল্পনা করেই কাহিনি রচনা করেছেন। এর একটি ঘটনাও প্রক্ষিপ্ত বলে চালাবার কোনও উপায় নেই।

উদাহরণ হিসাবে একটি নারীচরিত্র নেওয়া যেতে পারে। আদিপর্বে ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের বিবাহের জন্য ভীষ্ম কাশীনরেশের তিন কন্যাকে হরণ করলেন। সলজ্জ অম্বা জানালেন যে, তিনি পূর্বেই মহারাজ শাল্বকে মনে মনে বরণ করেছেন। ভীষ্ম ব্রাহ্মণদের সঙ্গে অম্বাকে শাল্বরাজের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। শাল্ব প্রত্যাখ্যান করলেন। অভিমানিনী অম্বা কঠিন তপস্যার জন্য তপোবনে প্রবেশ করলেন। এইখানে পরশুরামের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল। পরশুরাম স্বয়ং ভীষ্মকে অনুরোধ করলেন অম্বাকে গ্রহণ করার জন্য। ভীষ্ম অস্বীকার করলেন। গুরু-শিষ্যে তুমুল সংগ্রাম হল। পরশুরাম পরাজিত হলেন। মানুষের হাতে ভীষ্মের সংহার সম্ভব নয় বলে অম্বা মহাদেবের তপস্যায় ব্রতী হলেন। উমাপতি শিব আশীর্বাদ দিলেন— অম্বা পরবর্তী জন্মে দ্রুপদ রাজার ঘরে প্রথমে কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করবেন— পরে পুরুষদেহ পাবেন এবং পূর্ববর্তী জীবনের ঘটনা তাঁর মনে থাকবে। বনপর্বে অম্বার তপস্যার কাহিনি। উদ্‌যোগপর্বে ভীষ্ম দুর্যোধনকে জানালেন, তিনি শিখণ্ডীকে বধ করবেন না। বিরাট পর্বে অম্বা কুবেরের অনুচর স্থূণাকর্ণের কাছে নারীত্ব দিয়ে পৌরুষ পেলেন। ভীষ্মপর্বে শিখণ্ডীকে সামনে রেখে অর্জুন ভীষ্মকে বধ করলেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত শিখণ্ডী জীবিত ছিলেন। সৌপ্তিক পর্বে অশ্বথামা নিদ্রারত শিখণ্ডীকে বধ করলেন। স্থূণাকর্ণ তাঁর পৌরুষ ফিরে পেলেন।

এইভাবে মহাভারতের চরিত্রগুলির উপস্থাপনা দেখলেই বোঝা যায় যে, মহাভারত কোনও প্রক্ষিপ্ত ঘটনার সংযোজন নয়। একই কবির পরিকল্পনার ভিন্ন ভিন্ন ভাগ মাত্র। এইবার আসে গীতার কথা। গীতাকে প্রক্ষিপ্ত বলে চালানোর চেষ্টা বহু দিন ধরেই চলে আসছে। সমালোচকদের সব থেকে বড় বক্তব্য— উভয় পক্ষের যোদ্ধারা প্রস্তুত। সেই অবকাশে আঠারো অধ্যায়ের গীতা কথন অসম্ভব। সমালোচকেরা ভুলে যান দুই পক্ষে মুখোমুখি হলেই যুদ্ধ আরম্ভ হত না। যুদ্ধের নিয়ম রীতি প্রস্তুত করতে হত। সৈন্যাবাস নির্মাণ করতে হত, সাময়িক শল্য চিকিৎসালয় স্থাপন করতে হত। বেশ্যাদের আলাদা আবাস তৈরি করতে হত। জলের বিরাট ব্যবস্থা করতে হত, সুতরাং সময়ের অবশ্য প্রয়োজন হত।

বস্তুত গীতা কথনের মুহূর্তটি সর্বাপেক্ষা সুচিন্তিত পর্ব। দুই পক্ষের সৈন্যরা উপস্থিত। চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর অর্জুনের মধ্যে বৈকল্য দেখা দিল। চারপাশে তাকিয়ে তিনি দেখলেন, তাঁর প্রতিপক্ষদের। তাঁরা কেউ তাঁর পিতামহ, কেউ অস্ত্রগুরু, ভ্রাতা, বন্ধু— আবাল্যের সহচরেরা সকলেই তাঁর প্রতিযোদ্ধা— কাজেই অর্জুন গাণ্ডীব ত্যাগ করে বললেন— “আমি যুদ্ধ করব না।” তাঁকে সুস্থিত করতে, স্বস্থ করতে, ক্ষত্রিয়ধর্ম পালন স্মরণ করিয়ে দিতে, এই হল সর্বোত্তম সময়। কৃষ্ণের উপদেশে অর্জুন স্বাভাবিক হলেন, গাণ্ডীব হাতে তুলে নিলেন। ঋষি অরবিন্দ, বাল গঙ্গাধর তিলক ইত্যাদি মনীষীরা তাই স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন— গীতা প্রক্ষিপ্ত নয়, গীতা মহাভারতেরই অংশ। বর্তমান আলোচনাকারের এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, গোটা মহাভারত একজনের লেখা। এক বিরাট পরিকল্পনার ফসল। মহাভারতের পুরুষ ও নারীচরিত্রগুলি সেই সংহত চিন্তা বহন করে, একেবারে পরিণতি পর্যন্ত।

প্রায় প্রত্যেকটি চরিত্র আলোচনার সঙ্গে ব্যাসদেব প্রদত্ত একটি করে প্রয়োজনীয় শ্লোক দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটিই। পাঠক যাতে সর্বদাই স্মরণ রাখতে পারেন যে, তিনি ব্যাসদেবের মূল কাহিনিই পাঠ করছেন কোনও বিকৃত তথ্য এখানে নেই। ঘটনা ও তাঁর পরিণতির বিচার-বিবেচনা পাঠকের নিজস্ব। ভাল-মন্দ তিনি বিচার করবেন।

আমার পূর্বাপর রচনার মতোই, এই ক্ষেত্রে আমার আকরগ্রন্থ পিতামহ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশের গ্রন্থ। শুধু একটি মাত্র শ্লোকের উপস্থাপনায় আমি পিতামহের পিতামহ কাশীচন্দ্র বাচস্পতির গ্রন্থ অনুসরণ করেছি। শ্লোকটি পরিচিত এবং অত্যন্ত স্মরণীয়।

সূচিপত্রের স্থাপনে মহাভারত-পাঠক বিস্মিত বোধ করতে পারেন। ঘটনার পারম্পর্যের দিকে দৃষ্টি না রেখে চরিত্রটির পূর্ণ বিকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই সূচিপত্র করা হয়েছে। প্রত্যেকটি নারী চরিত্রকে পূর্ণাঙ্গ স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আঠারো পর্বের জীবনকে পরপর সাজানো হয়েছে। এতে গোটা চরিত্রটি এক জায়গায় পাওয়া যাবে। এই কারণে অম্বা চরিত্রটি পরে সাজানো হয়েছে। আদিপর্বে উল্লেখ হলেও অম্বার মূল কাহিনি উদযোগ পর্বে। ভীষ্ম বলেছেন দুর্যোধনকে, কেন তিনি শিখণ্ডীকে বধ করবেন না সেই প্রসঙ্গে। মহাভারতের বহু চরিত্র আগেই এসেছে, বিকশিত হয়েছে— মৃত্যু হয়তো পরে ঘটেছে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি চরিত্রের পূর্ণ বিবরণ আমি পর পর দিতে চেয়েছি। পাঠকের পক্ষে চরিত্রটি বোঝা এবং জানা সহজ হবে।

গ

মহাভারতের রচনারীতির অনন্যতার বহু আলোচনা হয়েছে। আমরা শুধু দু’-একটি শব্দ আলোচনা করব। প্রথমত মহাভারত পৃথিবীর আধুনিকতম রচনা। যদি পৃথিবীর বর্তমান মানুষের চিন্তা, নীতিবোধ, ভাবনা, প্রয়োগরীতি, লোভ-ব্যভিচার, উন্নততর প্রযুক্তির ব্যবহার, শিল্পের ক্রমাগত উন্নতি— আধুনিকতার সংজ্ঞা হয়, তা হলেও মহাভারত পৃথিবীর সবথেকে আধুনিক রচনা। পুরাতন কথা, পুরাণকালের চিরায়ত সাহিত্য— এ সমস্ত ছাপিয়েও মহাভারত আধুনিক। পরবর্তীকালের সেরা সাহিত্যিক, কবি গল্পকারেরা একে পরিবর্তিত করেছেন, কিছু পরিমাণে বিকৃত করেছেন— কিন্তু সনাতন প্রবৃত্তির যে রূপ মহাভারতে আছে, তাঁকে ছাপিয়ে যেতে আজও কেউ পারেননি। ভূমি এবং মানবীকে মানুষ তার চিরন্তনের ভোগ্যবস্তু করে ভেবেছে। আজও রাষ্ট্রনায়কেরা একই চিন্তায় প্রাগ্রসর। আমিই শ্রেষ্ঠ, আমি সর্বাপেক্ষা উন্নত এই বোধ আজও মানুষের মধ্যে সকল কর্মধারায় ছড়ানো— মহাভারতেই তাঁর পূর্ণাঙ্গ রূপ আছে। জলজ, উদ্ভিজ্জ, অণ্ডজ, জরায়ুজ— চার শ্রেণির প্রাণী সম্পর্কে মহাভারতের বাণী আজও সমান সত্য। পারস্পরিক যোগাযোগের ভাষাটাই শুধু হারিয়েছে। কিন্তু বোঝার অসুবিধা হচ্ছে না এবং বিনিময়ের ভাষাটাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিছু কালের মধ্যেই।।

কী নেই মহাভারতে? ভ্রূণ শিশু (clon. baby) থেকে আরম্ভ করে নলজাতক শিশু (tube-baby)। যোনি পরিবর্তন (change of sex), যোনি সঞ্চালন (transfer of sex) সবই মহাভারতের অন্তর্গত। পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের কেউ কেউ ভীমসেনের দুঃশাসনের রক্তপানে আদিমতম পৃথিবীর রূপ দর্শনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলেছেন— মহাভারতের এই অংশটি অত্যন্ত প্রাচীন। যদিও এই ঘটনায় কিছুই প্রমাণ হয় না। আধুনিক কালের বহু রাষ্ট্রনায়ক বালকের কচি হৃৎপিণ্ডের ঝোল না খেলে তৃপ্তি পান না। আর, মানুষ খায় না এমন কোনও প্রাণীই পৃথিবীতে নেই। মহাভারতের দুঃশাসনের রক্তপান ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভীমসেনের প্রতিজ্ঞার সঙ্গে জড়িত। বলরাম যতই ক্ষুব্ধ হোন, ঊরু ভঙ্গ দুর্যোধনের ললাটলিপিই ছিল। মৈত্রেয় মুনির অভিশাপ, রাক্ষসী কৃত্যার ঘোষণায় যে দুর্যোধনের দেহের উপরিভাগ মহাদেব রচিত, নীচের ভাগ পার্বতীর রচিত। এই কাহিনির মধ্যেই দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গের বীজ লুকানো আছে।

মহাভারতের প্রত্যেকটি প্রধান ঘটনাই অন্তত দু’বার করে এসেছে। যুধিষ্ঠিরের যুদ্ধের পূর্বে ভীষ্ম দ্রোণাদির কাছে যাওয়ার শিষ্টাচার নিয়ে বহু পণ্ডিত ব্যঙ্গ করেছেন, তাঁরা স্মরণ রাখেননি, এই একই শিষ্টাচার ভীষ্ম পরশুরামের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। আসলে বেদ রামায়ণ পুরাণকথা ব্যবহারের সুবিধা ছিল ব্যাসদেবের। তিনি প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করেছেন। তাই যে পাশা-খেলায় যুধিষ্ঠিরের এত অপরাধ, সেই পাশা খেলায় মত্ত দেখি হর-পার্বতীকে, নল দময়ন্তীকে নিয়ে ভ্রাতা পুষ্করের সঙ্গে পাশা খেলেছিলেন। দ্বাপর যুগে পাশা-খেলা সম্ভ্রান্ত ব্যসন ছিল। ব্যাসদেব সমান্তরাল কাহিনি এবং বিপরীতধর্মী কাহিনি বারবার উল্লেখ করেছিলেন। মহাভারতে প্রতিবাদী নারী চরিত্র অনেকগুলি আছে। যারা দৈব কিংবা ভাগ্য বলে কোনও কিছুকেই মানতে চায়নি। নারীত্বের দাবি নিয়েই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অম্বা, শকুন্তলা, কুন্তী, দ্রৌপদী, উলূপী— এদের সকলেরই দাবি ছিল নারীত্বের। আবার চিত্রাঙ্গদা, সুভদ্রা, হিড়িম্বা চিরন্তনী প্রেমময়ী নারী— সব বিচারেই মহাভারত অত্যন্ত আধুনিক সাহিত্য।

এই আধুনিকতার চরম ঔৎকর্ষ ঘটেছে ভগস্বান রাজার চরিত্রে। নিঃসন্তান রাজা পুত্র কামনায় ইন্দ্রের তপস্যা শুরু করলেন। সন্তুষ্ট ইন্দ্রের কাছে তিনি শতপুত্রের বর চাইলেন। বর প্রার্থনা পূর্ণ হল। আবার কিছুকাল পরে রাজা তপস্যা শুরু করলেন। ইন্দ্র প্রার্থনার বিষয় জানতে চাইলে রাজা পুরুষ থেকে নারী হতে চাইলেন। ইন্দ্র এ-প্রার্থনাও পূর্ণ করলেন। এইবার স্ত্রীরূপিণী রাজা শতপুত্রের আশীর্বাদ চাইলেন। ইন্দ্র তাই বর দিলেন। রানি শতপুত্রের জন্ম দিলেন। কিছুকাল পরে ইন্দ্র এসে যে-কোনও একশো পুত্র ত্যাগ করতে বললে রানি বললেন, পুরুষ অবস্থার শতপুত্র নিয়ে যান। বিস্ময়ে দেবরাজ বললেন, এগুলি তোমার বীর্যবাহী বংশধারক। রানি বললেন, “রমণীর মমতা অধিক, অতএব তার রমণীকালীন পুত্রেরা বাঁচুক।” এইবার ইন্দ্র ভগস্বান রাজাকে পূর্ব পুরুষ দেহ ফিরিয়ে দিতে চাইলেন। রানি অস্বীকার করলেন, মুক্তকণ্ঠে জানালেন— রমণকালে নারী অধিক সুখ পায়। অতএব তিনি নারী হয়েই থাকতে চান। কোন আধুনিক লেখক এর থেকে বেশি আধুনিকতা প্রত্যাশা করেন? মহাভারত তাই বিশ্বের আধুনিকতম রচনা।

মহাভারতে দু’বার আসার ঘটনার মধ্যে কীচক-উপকীচক বধ আর কৌরবদের শতভ্রাতা বিনাশের কাহিনি। কুরুবংশ ও যদুবংশ ধ্বংসের ঘটনা অবশ্যই লক্ষণীয়। গান্ধারীর প্রসূত লৌহপিণ্ড থেকে জন্ম নিল ধ্বংসকারী শত ভ্রাতা, আর শাম্বের প্রসূত লৌহপিণ্ড থেকে জন্ম নিল যদুবংশ ধ্বংসকারী ঈষিকা। দ্রৌপদীকে যে পুরুষ স্পর্শ করেছেন, ভীমসেন নির্বিচারে তাকে হত্যা করেছেন শুধু জয়দ্রথের ক্ষেত্রে জ্যৈষ্ঠভ্রাতা যুধিষ্ঠিরের নিষেধ স্মরণ করে ভগিনী দুঃশলা আর মাতা গান্ধারীর সম্পর্ককে ধারণ করে।

ঘ

সব লেখকেরই সৃষ্ট সাহিত্যের দুটি-একটি প্রিয় চরিত্র থাকে। মহাভারতের নারী চরিত্রের দুটি-একটি বর্তমানের লেখকের অত্যন্ত প্রিয় চরিত্র। প্রথম চরিত্রটি অম্বার। এতখানি প্রতিবাদী চরিত্র মহাভারতেও নেই। পুরুষের অবিমৃশ্যকারিতায় অম্বার নারী চরিত্র ব্যর্থ হল। কিন্তু তিনি দৈব সংঘটন হিসাবে তা মানতে পারলেন না। অবলা এক নারীর পক্ষে যতটা প্রতিবাদ সম্ভব তিনি করলেন। কিন্তু তিনি পুরুষকে, দৈবকে হারাতে পারলেন না। তিনি তাঁর প্রতিবাদ টেনে নিয়ে চললেন জন্মান্তরে। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হলেন। প্রতিবাদী নারী চরিত্র হিসাবে অম্বা আমার অত্যন্ত প্রিয়।

কুন্তীকে আমার বরাবরই বড় নিঃসঙ্গ মনস্বিনী নারী বলে মনে হয়েছে। অম্বাও নিঃসঙ্গ। কিন্তু সংসারের দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয়নি। কুন্তী জন্ম নিলেন এক রাজার ঘরে, কিন্তু জন্মের পরেই জন্মদাতা পিতা প্রতিশ্রুতি রাখার জন্য অন্য রাজার কাছে তাঁকে দান করলেন। সেখানে কুন্তী রাজ্যসুখ হয়তো পেয়েছিলেন, কিন্তু সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব কর্তব্য তাঁর উপরেই ন্যস্ত ছিল। চতুর্দশী কুন্তীর উপর দায়িত্ব পড়ল, ভয়ংকর তপস্বী দুর্বাসার আতিথ্য সকারের। পরীক্ষায় কুন্তী এতদূর সম্মানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন যে, দুর্বাসা তাঁকে দিলেন ‘অভিকর্ষণ মন্ত্র’। ধ্যানযোগে দুর্বাসা জেনেছিলেন মানবের সন্তানের জন্মদান তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ দৈবপুরুষকে আহ্বান জানাতে হবে কুন্তীকে এবং তাঁরা সবাই হবেন তাঁর জীবনে ক্ষণিকের অতিথি। কৌতূহলী কুন্তী বালিকার চাপল্যে সূর্যদেবকে ডেকে বসলেন। সূর্যের আবির্ভাব ব্যর্থ হল না। জন্ম হল কর্ণের। লোকলজ্জায়, পিতৃসম্ভ্রম রক্ষার জন্য জন্মদাতা পুরুষের আদেশেই প্রথম সন্তানকে জলে ভাসিয়ে দিতে হল কুন্তীকে। কিন্তু কালের প্রভাবে ভাসিয়ে দেওয়া এই পুত্রের জন্য যে গভীর ক্ষত তাঁর মনের মধ্যে সৃষ্টি হল, তা আর পূরণ হল না কোনওদিন।

কালপ্রবাহে বেড়ে ওঠা সেই শিশুই একদিন তাঁকে সংগ্রামে আহ্বান করল। কুন্তী চেষ্টা করেছিলেন, তাঁকে তাঁর যোগ্যস্থানে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু প্রথম সন্তানের মিলন সুখ তাঁর ললাটে ছিল না। জনসমক্ষে কুন্তী সেকথা জনিয়েওছিলেন। ততক্ষণে বড় বিলম্ব ঘটে গেছে। সে সন্তানের মৃত্যু ঘটেছে। কুন্তীর বিবাহ হল মহাপরাক্রমশালী পাণ্ডুর সঙ্গে। কিন্তু দাম্পত্যজীবন কুন্তীর ভাগ্যে ছিল না। মুনি-শাপে অভিশপ্ত হলেন পাণ্ডু। তাঁর জনন-শক্তি নষ্ট হয়ে গেল। চতুর্দশী কুন্তীর উপর রাজা কুন্তীভোজ চাপিয়েছিলেন দুর্বাসার বিষয়ে দায়িত্ব। পাণ্ডু চাপালেন পাণ্ডব বংশ ধরে রাখার দায়িত্ব। ক্ষণ মিলনের জন্য এলেন ধর্মদেব, পবনদেব, দেবরাজ ইন্দ্র— জন্ম হল যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুনের। স্বামীর অনুরোধে সপত্নী মাদ্রীকে অভিকর্ষণ মন্ত্র শেখানোর ফলে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের ঔরসে মাদ্রীর গর্ভে জন্ম হল নকুল সহদেবের।

তবু স্বামী পাণ্ডু জীবিত ছিলেন। কিন্তু মাদ্রীর সঙ্গে মিলনের চেষ্টায় পাণ্ডুর মৃত্যু ঘটল। মাদ্রী সহমরণে গেলেন। কুন্তীর উপর দায়িত্ব এসে পড়ল পঞ্চ পাণ্ডবের রক্ষণাবেক্ষণের। মুনিদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি পরলোকগত স্বামীর রাজ্যেই ফিরলেন। কিন্তু স্বামীর অগ্রজ ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা তাঁকে অথবা পঞ্চ-পাণ্ডবকে সহ্য করতে পারলেন না প্রথম দিন থেকেই। প্রতিদিন পুত্রদের গুপ্তহত্যার ভয়ে কণ্টকিত হয়ে থাকতে হত কুন্তীকে। ধৃতরাষ্ট্র পুত্রেরা জতুগৃহে তাঁকে এবং পুত্রদের দাহ করার চেষ্টা করল। কোনও প্রকারে বাঁচলেন। পঞ্চ-পুত্রের বিবাহ হল। ইন্দ্রপ্রস্থে তাঁদের রাজত্ব হল। কিন্তু কুন্তীর দুঃখের দিন শেষ হল না। চোখের সামনে দিয়ে কপট পাশা-খেলায় পরাজিত করে পুত্রদের বনবাসে পাঠাল ধার্তরাষ্ট্রেরা। দ্রৌপদীর চরম লাঞ্ছনা তিনি স্বচক্ষে দেখলেন। থাকতে হল বিদুরের অন্তঃপুরে। বনবাস অজ্ঞাতবাস শেষ হলেও পুত্রেরা রাজ্য ফিরে পেল না। সন্ধি-প্রস্তাবকারী কৃষ্ণকে তিনি শোনালেন বিদুলার কাহিনি, যুধিষ্ঠিরকে ক্ষত্রিয়ের আচরণ করার জন্য উপদেশ দিয়ে। যুদ্ধে পঞ্চপুত্র বিজয়ী হল। তারপর সকলকে বিস্মিত করে কুন্তী ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীর সঙ্গে বনবাস চললেন। এবার তাঁর কর্তব্য দুটি অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সেবা করার জন্য। এইখানে তপোবনে অগ্নিদাহে কুন্তীর মৃত্যু ঘটল। অগ্নিদেব এই চির মনস্বিনী নারীকে নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দিলেন। তাই কুন্তী চরিত্র অত্যন্ত প্রিয় নারী চরিত্র।

রাক্ষসী হিড়িম্বা এক অসাধারণ প্রেমময়ী একনিষ্ঠ নারীচরিত্র। যে সত্য সে কুন্তী এবং পাণ্ডবদের কাছে করেছিল, তাঁর থেকে জীবনে সে কখনও সরেনি। সে সমাজচ্যুতা হয়েছিল আত্মীয় স্বজন সকলে তাঁকে ত্যাগ করেছে, কিন্তু প্রবাসে দেখা স্বামীর প্রতি তাঁর অনুরাগ চিরকাল অটুট ছিল। সে পুত্রকে পিতার মতো গড়ে তুলতে চেয়েছিল। পৌত্রকে শিখিয়েছিল পঞ্চপাণ্ডব তাঁর একমাত্র সম্বল, সহায় এবং আত্মীয়। সে যেন অকাতরে তাঁদের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে পারে।

দ্রৌপদী মহাভারতের নায়িকা। পুরুষের সমাজ একটি নারীর উপর যত অত্যাচার করতে পারে— দ্রৌপদীর উপর প্রায় সবই ঘটেছিল। পৃথিবীর চার আদি মহাকাব্যে অন্য কোনও নারী দ্রৌপদীর মতো লাঞ্ছনা সহ্য করেননি। পুরুষের লোভ, লালসা, বাসনা পেনিলোপকেও সহ্য করতে হয়েছিল, কিন্তু স্বামী অডিসিয়াসের অনুপস্থিতিতে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সীতাকেও রাবণ হরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভুবনবিজয়ী স্বামীদের উপস্থিতিতে দ্রৌপদীকে সমস্ত লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে দ্রৌপদী নাথবৎ অনাথবতী কখনই ছিলেন না। স্বামীদের নিয়ে তাঁর প্রচণ্ড গর্ব ছিল। প্রত্যেকের স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য দ্রৌপদী জানতেন। সশ্রদ্ধ উল্লেখও করেছেন বারবার। কোনও কোনও সমালোচক মনে করেন, দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরকে অবহেলা করতেন। এ এক অমার্জনীয় ভ্রান্তদৃষ্টি। স্বামী যুধিষ্ঠির যে অত্যুচ্চ ধার্মিকতার উন্নত জগতের অধিবাসী তা দ্রৌপদী জানতেন, স্বামীকে তিনি গঞ্জনা দিয়েছেন। আপন দুরবস্থার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন— কিন্তু ঠিক ততদূর, যতদূর যুধিষ্ঠির তাঁকে যেতে দিয়েছেন। বনবাসকালে যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীর বাচালতায় তিরস্কার করেছেন, “দ্রৌপদী, তুমি নাস্তিকের মতো কথা বলছ।” দ্রৌপদী এক মুহূর্তে নিজেকে সংবরণ করেছেন। অজ্ঞাতবাসের ক্ষেত্রে কীচকের অত্যাচারে জর্জরিতা দ্রৌপদী রোদন শুরু করলে সভাসদেরা দ্রৌপদীর রূপের প্রশংসা করলে, যুধিষ্ঠির রূঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন— “নটীর মতো এখানে রোদন কোরো না।” দ্রৌপদীর আঘাত লেগেছিল, কিন্তু যুধিষ্ঠিরের আত্মসম্মানের কথা তিনি মুহূর্তের জন্য বিস্মৃত হয়েছিলেন। স্ত্রী যে তাঁর বিপণির বিক্রয়বস্তু নয়— অন্য পুরুষ তাঁর রূপ যাচাই করতে পারে না, যুধিষ্ঠির সেটাই দ্রৌপদীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। দ্রৌপদীর অশ্রুসিক্ত অভিযোগে ক্ষিপ্ত ভীম তৎক্ষণাৎ প্রতিকার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে দ্রৌপদী সংবিৎ ফিরে পেয়েছেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়লে ধর্মপরায়ণ যুধিষ্ঠির আবার বনবাস যাত্রা করবেন। স্বামী যে তাঁর যথার্থ ধর্মাত্মা মৃদু বদান্য লজ্জাশীল মানুষ, দ্রৌপদী তা খুব ভাল করেই জানতেন।

দ্রৌপদীর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ব্যাসদেব পরোক্ষ হলেও মহাভারতের নায়ক সমস্যার মীমাংসা করেছেন। দ্রৌপদীই সম্ভবত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্যকাহিনির একমাত্র নায়িকা— যিনি বিবাহের দিন থেকে একদিনও যুধিষ্ঠিরের সঙ্গচ্যুতা হননি। যুধিষ্ঠির দেবিকার বিবাহের দিনের কথা স্মরণ রেখেই একথা বলছি। দ্রৌপদী-যুধিষ্ঠির আটাত্তর বছর দাম্পত্য জীবন যাপন করেছেন। স্বামী হয়তো অন্যত্র রাত্রিবাস করেছেন কিন্তু তা দ্রৌপদীর অনুমোদন সাপেক্ষে। তিনি ছিলেন যুধিষ্ঠিরের যথার্থ ধর্মপত্নী। অন্য স্বামীদের সঙ্গে দ্রৌপদী বর্ষ যাপন করলেও, তাও যুধিষ্ঠিরের অনুমতিতে চোখের সামনেই ঘটেছে। দ্রৌপদী জানতেন যে সকল ঘটনার কেন্দ্রস্থ চরিত্র যুধিষ্ঠির। তিনিই সমসাময়িক ঘটনার নির্ণায়ক শক্তি, তিনিই নায়ক। তাই দ্রৌপদীর প্রতিটি উপহার যুধিষ্ঠিরের জন্য, জ্যেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে নয়, শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি নিয়ে। জীবনের আটাত্তর বছর মহাভারতের নায়িকা দ্রৌপদী, নায়ক যুধিষ্ঠিরের সঙ্গেই ছিলেন।

দ্রৌপদীর আলোচনায় কর্ণকে নিয়ে আসা আধুনিক সমালোচকদের একটি বিলাসে পরিণত হয়েছে। বুদ্ধদেব বসু থেকে আধুনিকতম সমালোচক পর্যন্ত দ্রৌপদী-কর্ণের মানসিকতা নিয়ে চূড়ান্ত বিলাসিতা করেছেন। কোনও এক সমালোচক প্রশ্ন করেছেন— “দ্রৌপদী কেমন করে জানলেন যে কর্ণ সূতপুত্র?” এই সমালোচক কি জানেন না যে দ্রৌপদীর অগ্রজ ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণাচার্যের পাঠশালায় ছাত্র ছিলেন? তিনি অস্ত্রপরীক্ষার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দ্রৌপদীর আর-এক ভ্রাতা শিখণ্ডীও দ্রোণাচার্যের শিষ্য ছিলেন। কাজেই কর্ণের লোকপরিচিত রূপ দ্রৌপদীর জানা ছিল এবং চারপাশে আগুন নিয়ে যজ্ঞদেবী থেকে উত্থিতা নারীর সূতপুত্রকে বিবাহ করা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে বিস্ময়ের কোনও অবকাশ নেই।

পৃথিবীর চার আদি মহাকাব্যের সর্বাপেক্ষা তেজস্বিনী নারী দ্রৌপদী। তিনি সর্বংসহা ছিলেন না, তিনি নিঃসঙ্গ ছিলেন না— কেবলমাত্র প্রতিবাদী চরিত্রের নারীও ছিলেন না। সপত্নী থাকা সত্ত্বেও পঞ্চস্বামীর সংসারে তিনিই ছিলেন সর্বময়ী কর্ত্রী। ভর্তারা তাঁর ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য সব সময়েই দিয়েছেন। সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান বিচক্ষণ বলে যুধিষ্ঠির বিবেচনার সময় নিয়েছেন, অন্যরা তৎক্ষণাৎ পালন করতে ছুটে গেছেন।

নারী চরিত্রগুলির বর্ণনায় আমি ব্যাসদেবের যথাযথ অনুসরণ করেছি পাঠকের ভাল লাগলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে।

গ্রন্থকার

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

এ গ্রন্থরচনার সময়ে আমি অনেকের কৃপালাভ করেছি। বিশেষভাবে আমার জ্যেষ্ঠভ্রাতা—সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দেবেশচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং আমার জ্যেষ্ঠা ভগিনী প্রেসিডেন্সি ব্ৰবোর্নের অধ্যাপক আরতি গুহর।

তিলজলা ব্রজনাথ বিদ্যাপীঠের সম্পাদক শ্রীস্বপন রায়চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদ, সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্রীরবীন্দ্রনাথ ভূঁইয়া, করণিক অনন্ত মণ্ডল আমাকে অত্যন্ত সাহায্য করেছেন। এঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

এইবার বিশেষভাবে কয়েকজনের উল্লেখ করতে হয়। আমার জ্যেষ্ঠ জামাতা ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও জ্যেষ্ঠকন্যা শ্রীমতী কাঁকন বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈবাহিক শ্রীআশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জ্যেষ্ঠ ভগিনীপতি শ্রীপ্রভাশঙ্কর ভট্ট, কনিষ্ঠা কন্যা শাওন রায় ও জামাতা কৃষ্ণেন্দু রচনার বিষয়ে যতটা সম্ভব আলোচনা করেছেন। আমার জ্যেষ্ঠতাত পুত্র শ্রীগিরিশ ভট্টাচার্য, শ্রীরজত ভট্টাচার্য প্রতিদিন উৎসাহ দিয়েছেন— এদের সকলের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

আমার ভ্রাতারা— শ্রীমান অমিতাভ, পার্থসারথি, অতীশ। এদের আমার আশীর্বাদ রইল।

যে আমারে দেখিবারে পায়
ভালো মন্দ সকলি মিলায়ে

পাঠক বুঝতেই পারছেন, আমি আমার স্ত্রী রেখা ভট্টাচার্যের কথা বলছি। তাঁকে দিতে পারি আমি অংশীদারিত্ব। সব ফল তাঁকেই বর্তাবে।

ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য
০৮.০২.০৯

Book Content

০১. ব্যাসদেব প্রদত্ত কুরু-পাণ্ডব বংশের কুলপঞ্জিকা
০২. অদিতি
০৩. উর্বশী
০৪. শর্মিষ্ঠা ও দেবযানী
০৫. শকুন্তলা
০৬. দেবনদী গঙ্গা
০৭. সত্যবতী
০৮. অম্বিকা-অম্বালিকা-অনামিকা মাতা
০৯. পতিব্রতা গান্ধারী
১০. রাক্ষসী জরা
১১. নিঃসঙ্গ মনস্বিনী কুন্তী
১২. মদ্রতনয়া মাদ্রী
১৩. পতিব্রতা-হিড়িম্বা— সাধারণ আলোচনা
১৪. মহাভারতের নায়িকা দ্রৌপদী
১৫. তিলোত্তমা সম্ভব
১৬. নাগকন্যা উলূপী
১৭. মণিপুর-দুহিতা চিত্রাঙ্গদা
১৮. কৃষ্ণ-ভগিনী সুভদ্রা
১৯. সূর্যকন্যা তপতী
২০. প্রতিবাদিনী অম্বা
২১. কৃষ্ণ-মহিষী সত্যভামা
২২. বিরাট-মহিষী সুদেষ্ণা
২৩. অভিমন্যু-পত্নী উত্তরা
লেখক: ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্যবইয়ের ধরন: ধর্ম ও দর্শন, প্রবন্ধ ও গবেষণা
মহাভারতের একশোটি দুর্লভ মুহূর্ত -  ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য

মহাভারতের একশোটি দুর্লভ মুহূর্ত –  ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.