উর্বশী
গুরু বৃহস্পতির আশ্রমে শিষ্যত্বে থাকাকালীন গুরুপত্নী তারার অপূর্ব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন সোম বা চন্দ্রদেব। গুরুর অনুপস্থিতিকালে অনিচ্ছুক তারাকে ধর্ষণ করেন। তারার গর্ভে একটি অসাধারণ রূপবান পুত্রের জন্ম হয়। চন্দ্র এবং বৃহস্পতি উভয়েই পুত্রটিকে নিজের মনে করতেন এবং অত্যন্ত ভালবাসতেন। একদিন তারার গর্ভজাত সেই সন্তানটির পিতৃত্ব নিয়ে বৃহস্পতি ও সোমের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। দু’জনেই পিতৃত্বের দাবি করতে থাকলে, তারা নিরুত্তর থাকেন। তখন সেই পুত্রটি অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে মাতার কাছে পিতার পরিচয় জানতে চান। তথাপি তারা নিরুত্তর থাকেন। তখন পিতামহ ব্রহ্মা এসে তারাকে সত্য স্বীকারের আদেশ দান করেন। তারা স্বীকার করেন পুত্রটি চন্দ্রের। চন্দ্র পুত্রটিকে বুকে তুলে নিয়ে মুখচুম্বন করেন এবং বলেন, ‘পুত্র, তোমার বাগ্মিতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তুমি পণ্ডিতদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ, তাই তোমার নাম হবে ‘বুধ’। বৃহস্পতি বলেন, “কিন্তু তুমি দুষ্ট গ্রহে জন্মেছ, তাই তুমি ‘পাপগ্রহ’ হবে। বৃহস্পতি পিতামহ ব্রহ্মাকে বললেন, ক্ষেত্রটি তাঁর। তাঁর ক্ষেত্রেই ‘বুধ’ জন্মগ্রহণ করেছেন। অতএব তিনি বৃহস্পতির কাছেই থাকবেন। ব্রহ্মা সম্মতি দিলেন। বুধকে নিয়ে স্বর্গে প্রথম মহাযুদ্ধ হয়। সোমের পক্ষে বৃহস্পতির চিরশত্রু শুক্রাচার্য দানবপক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেন, অপর পক্ষে ঋষি অঙ্গিরার নেতৃত্বে দেবতারা বৃহস্পতির পক্ষ অবলম্বন করেন। যুদ্ধ চলাকালীন বৃহস্পতির আদেশে তারা গর্ভপাত করতে বাধ্য হন। মঞ্জুঘাসের উপর অপূর্ব রূপকান্তিময় সেই মানবশিশু জন্মগ্রহণ করে। তার রূপ দেখেই চন্দ্র ও বৃহস্পতি তাকে দাবি করতে থাকেন। পিতামহের আদেশে বিবাদের নিষ্পত্তি হয়।
প্রাপ্তযৌবন বুধ ইলা নাম্নী নারীকে বিবাহ করেন। ইলার গর্ভে বুধের ঔরসে জন্ম হয় পুরুরবার। পুরুরবা অত্যন্ত দানশীল, বহু যজ্ঞকারী ও তেজস্বী ছিলেন। ইতিমধ্যে মিত্রাবরুণের অভিশাপে অভিশপ্তা উর্বশী মনুষ্যলোকে জন্মগ্রহণ করলেন। সত্যবাদী অতি রূপবান পুরুরবাকে দেখে উর্বশী মুগ্ধ হয়ে পড়লেন।
পুরুরবাকে দেখামাত্র উর্বশী সমস্ত সম্মান ও স্বর্গসুখের ইচ্ছা ত্যাগ করে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন। পুরুরবাও সেই স্ত্রীসৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে অতিশয় লাবণ্যযুক্তা, হাস্যময়ী উর্বশীর প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হলেন। পুরুরবা ও উর্বশী ‘জগৎসংসার’ ভুলে পরস্পরকে দেখতে লাগলেন। তখন রাজা সংকোচ না করে বললেন, “হে সুন্দর ভ্রূযুক্তা, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি, তুমিও আমার প্রতি অনুরক্ত হও।” রাজা এই কথা বললে উর্বশী লজ্জা ত্যাগ করে বললেন, “আমার প্রতিজ্ঞা যদি আপনি পালন করেন, তা হলে সেই রকমই হবে।” রাজা উর্বশীর প্রতিজ্ঞা বিষয়ে জানতে চাইলে উর্বশী পুনরায় বললেন, “আমার পুত্রের মতো এই মেষ দুটিকে আপনি। কখনওই আমার বিছানা থেকে দূরে রাখতে পারবেন না, আপনি আমার নিকট উলঙ্গ হবেন না এবং আমি কেবলমাত্র ঘি খাব— এই তিনটিই আমার প্রতিজ্ঞা।”
তখন রাজা বললেন, ‘আচ্ছা, তাই হবে।’ তারপর রাজা উর্বশীর সঙ্গে কখনও অলকায় চৈত্ররথ প্রভৃতি বনে কখনও বা অতি রমণীয় নির্মল পদ্মসমূহের গন্ধে আমোদিত ও শোভিত মানস প্রভৃতি সরোবরে খেলা করে প্রতিদিন নানারকমে আনন্দ বৃদ্ধি করে ষাট হাজার বছর কাটালেন। উর্বশীও রাজার সঙ্গে সুখ উপভোগ করে অনুরাগ বাড়তে থাকায় স্বর্গসুখের ইচ্ছা ত্যাগ করলেন।
ওদিকে উর্বশীবিহীন স্বর্গ দেবতা, গন্ধর্ব, কিন্নরদের ভাল লাগল না। অন্য অপ্সরারা তাঁদের সৌন্দর্য ও হাবভাব ছলাকলা দ্বারা আনন্দ দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। তখন প্রধানত গন্ধর্বেরা উর্বশীকে স্বর্গলোকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সচেষ্ট হল।
বিশ্বাবসু নামক গন্ধর্ব উর্বশীর প্রতিজ্ঞা বিষয়ে জানতেন। গন্ধর্বদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাত্রিবেলা উর্বশী ও পুরুরবার শয্যার কাছ থেকে একটি মেষ চুরি করলেন। মেষকে চুরি করে আকাশপথে নিয়ে যাবার সময় তাঁর চিৎকার শব্দ শুনে উর্বশী বললেন, ‘আমি অনাথা, কোনও ব্যক্তি আমার পুত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে? আমি কার শরণ নেব?’ এই কথা শুনে উলঙ্গ অবস্থায় থাকা রাজা নিজের উলঙ্গ অবস্থা পাছে উর্বশী দেখতে পান এই ভয়ে মেষকে উদ্ধার করতে গেলেন না। তারপর গন্ধর্বরা অপর মেষটিও চুরি করে নিয়ে পালাল। পুনরায় চুরি করে নিয়ে যাওয়া মেষের চিৎকার শুনে উর্বশী কাতর স্বরে বললেন, আমি অনাথা, স্বামীহীনা কুপুরুষাশ্রয়া কে আমার সন্তানকে রক্ষা করবে? তখন রাজা, এখন অন্ধকার, উর্বশী আমার উলঙ্গ অবস্থা দেখতে পাবেন না— এই ভেবে খড়্গ নিয়ে, “ওরে দুষ্ট, মরিলি”— এই কথা বলতে বলতে দৌড়লেন। সেই সময়ে গন্ধর্বরা অতিশয় উজ্জ্বল বিদ্যুৎ চমকালেন। সেই বিদ্যুতের আলোতে উর্বশী রাজাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেখতে পেলেন। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে এই ভেবে উর্বশী প্রস্থান করেন।
এদিকে গন্ধর্বরা মেষ ত্যাগ করে পালাল। রাজা মেষ দুটি উদ্ধার করে আনন্দিত মনে নিজের শয্যায় ফিরে এসে উর্বশীকে দেখতে পেলেন না। বস্ত্রহীন উলঙ্গ রাজা পাগলের মতো উর্বশীর অনুসন্ধান করতে লাগলেন।
তারপর একদিন কুরুক্ষেত্র পদ্মসরোবরে রাজা অন্যান্য চারজন অপ্সরীর সঙ্গে উর্বশীকে দেখতে পেলেন। দেখতে পেয়েই রাজা পাগলের মতো উর্বশীকে বললেন, ‘হে নিষ্ঠুর স্ত্রী আমার। আমার হৃদয়ে এসো।’ রাজা অনেকবার অনুরোধ করলে উর্বশী বললেন, ‘মহারাজ, বিবেকহীনের মতো কথায় লাভ নেই। আমি এখন গর্ভবতী। এক বছর পর আপনি এখানে ফিরে আসবেন, তখন আপনার একটি পুত্র হবে এবং একরাত্রি আপনার সঙ্গে বাস করব।’ এই কথা শুনে আনন্দিত রাজা নিজের নগরে ফিরে গেলেন। তখন উর্বশী অপর অপ্সরাদের বললেন, ‘ইনি সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ পুরুরবা। আমি এতকাল অত্যন্ত অনুরাগ সহকারে এঁর সঙ্গে বাস করেছি।’ এই কথা শুনে অপ্সরারা বললেন, ‘ইনি অত্যন্ত রূপবান। আমাদেরও এর সঙ্গে অভিরমণ করতে ইচ্ছা হয়।’
এরপর এক বছর পূর্ণ হলে রাজা পুনরায় সেখানে এলেন। তখন উর্বশী তাঁকে আয়ু নামে একটি পুত্র দান করলেন এবং একরাত্রি সহবাস করে পুনরায় পাঁচটি পুত্রের জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভধারণ করলেন। তারপর উর্বশী রাজাকে বললেন, ‘আমি সন্তুষ্ট হওয়ায় গন্ধর্বরা আপনাকে বর দিতে চান। আপনি বর প্রার্থনা করুন।’ রাজা বললেন, ‘আমার শত্রুরা পরাজিত। ইন্দ্রিয়সকল শক্তিশালী। সৈন্যসকল পরিমিত ও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোষ পরিপূর্ণই আছে। কেবলমাত্র উর্বশীর সহবাস থেকে বঞ্চিত আছি—এ কারণে উর্বশীর সঙ্গে কাল কাটাতে চাই।
রাজা এই বর প্রার্থনা করলে গন্ধর্বরা তাঁকে অগ্নিকুণ্ড দান করে বললেন, ‘দেবতাদের অনুসরণ করে উর্বশীর সহবাস প্রার্থনাপূর্বক প্রতিদিন এই অগ্নিকে তিন ভাগ করে পূজা করবেন, তা হলেই আপনি কাম্যবস্তু লাভ করবেন।’
এই কথা শুনে রাজা অগ্নিস্থালী নিয়ে নিজ নগরের দিকে চলতে চলতে বনের মধ্যে চিন্তা করলেন, আহা আমি কী বোকা, অগ্নিস্থালী আনলাম, কিন্তু উর্বশীকে নিয়ে এলাম না। এই চিন্তা করে রাজা বনের মধ্যে অগ্নিস্থালী ত্যাগ করে নিজের নগরে এলেন। তারপর অর্ধেক রাত কেটে গেলে নিদ্রাহীন রাজা চিন্তা করতে থাকলেন যে উর্বশীর সাহচর্য লাভের জন্য গন্ধর্বেরা আমাকে অগ্নিস্থালী দান করেছিলেন। আমি সেই অগ্নিস্থালী বনের মধ্যে ফেলে এসেছি। এখনই আমি অগ্নিস্থালী আনার জন্য যাব। এইরকম চিন্তা করে বনে যাত্রা করলেন। এখানেই আমি অগ্নিস্থালী ফেলেছিলাম। সেখানে কি করে শমীগর্ভস্থ অশত্থবৃক্ষে পরিণত হল? সেই স্থালী এই বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। অতএব আমি এই বৃক্ষকে গ্রহণ করে নিজের নগরে গিয়ে বৃক্ষের কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুনকে উপাসনা করব।
সেই বৃক্ষ থেকে রাজা জ্বালানির যোগ্য অরণি তৈরি করলেন। পরে সেই কাঠকে আঙুলপ্রমাণ করে গায়ত্রী পাঠ করলেন। তারপর গায়ত্রীর অক্ষরসংখ্যা অনুসারে অঙ্গুলি-প্রমাণ অরণি উৎপন্ন হল। তারপর রাজা সেই অরণি ঘষে তিনটি অগ্নি উৎপন্ন করে বেদ অনুসারে হোম করতে লাগলেন এবং ইহলোকে উর্বশীর সহবাসের ফল কামনা করলেন। তারপর সেই অগ্নির দ্বারা নানারকম যজ্ঞ করে তাঁর দয়ায় গন্ধর্বলোক প্রাপ্ত হলেন। তখন আর তাঁর উর্বশী বিয়োগ হল না। পূর্বে অগ্নি এক ছিল, কিন্তু এই মন্বন্তরে ইলাপুত্র পুরুষরা গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণ নামে তিন অগ্নির প্রবর্তন করলেন।
উর্বশী অপ্সরা শ্রেষ্ঠা। স্বৰ্গবেশ্যাদের তিনি প্রধান। চতুঃষষ্টিকলা নিপুণা। দেবরাজ এবং অন্য দেবতাদের অত্যন্ত প্রিয়পাত্রী। অর্জুনের জন্ম হলে সমস্ত স্বর্গ মর্ত্য, পাতালে আনন্দের লহরি বয়ে গেল। রাজর্ষি, ব্ৰহ্মর্ষি, দেবর্ষিরা কৃষ্ণানন্দন ও তৃণ হাতে নবজাতককে আশীর্বাদ করতে এলেন। স্বর্গের আটাশজন শ্রেষ্ঠ অপ্সরা শিশু অর্জুনকে ঘিরে নাচতে থাকলেন। দশজন শ্রেষ্ঠ সংগীত নিপুণা সহচরীকে নিয়ে উর্বশী গান গাইতে লাগলেন।
উর্বশী অবন্ধনে। রবীন্দ্রনাথ বিখ্যাত সংগীতে উর্বশীর পরিচয় দিয়েছিলেন, ‘নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ সুন্দরী নন্দনবাসিনী উর্বশী।’ সে চিরন্তনী প্রিয়া নারী। অর্জুনের জন্মের প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে অর্জুনের সঙ্গে উর্বশীর আবার সাক্ষাৎ হয়েছিল স্বর্গে। যুধিষ্ঠিরের আদেশে ‘প্রতিস্মতি’ মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে অর্জুন যান পিণাকপাণির কাছে অস্ত্র প্রার্থনা করতে। অর্জুনের বাসনা সফল হয়েছিল। এরপর দেবরাজ ইন্দ্রের চিরশত্রু কালকেয় ও নিবাত-কবচ দানবকে নিধন করে অর্জুন দেবরাজের অত্যন্ত সন্তুষ্টি সাধন করেন। দেবরাজ আপন সিংহাসনের অর্ধ-অংশে অর্জুনকে বসতে দেন। অর্জুনের মনোরঞ্জনের জন্য অপ্সরাশ্রেষ্ঠ উর্বশীকে আহ্বান করেন। উর্বশী তাঁর অসাধারণ নৃত্যগীতে দেবসভাকে উন্মুখ করে রাখেন। উর্বশী যতক্ষণ নাচছিলেন, অর্জুন অপলকে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। উর্বশীর রূপসৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন পুত্র অর্জুন— এই দেখে দেবরাজ ইন্দ্র অর্জুনের গন্ধর্বসখা চিত্রসেনকে উর্বশীর কাছে পাঠান সেদিন রাত্রে অর্জুনকে সম্ভোগ-তৃপ্ত করার জন্য। চিত্রসেনের কাছে বার্তা পেয়ে আনন্দিত উর্বশী উপযুক্ত শৃঙ্গার করে অর্জুনের বাসভূমিতে যাত্রা করেন।
উর্বশী অর্জুনের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে অর্জুন, আমি চিত্রসেন এবং আপনার পিতৃদেবের আদেশে আপনার সেবা করতে এসেছি।’ অর্জুন শুনে লজ্জায়, সংকোচে, কুণ্ঠায় গুটিয়ে গিয়ে দু’হাতে কান চাপা দিলেন। অর্জুন বললেন, ‘ভাগ্যবতী, আপনি আমাকে যে কথা বললেন তা শোনাই আমার পক্ষে অত্যন্ত পাপের। আমার কাছে মাতা কুন্তী যেমন, মহাভাগা শচী যেমন, আপনিও তেমনই শ্রদ্ধেয়া। অবশ্যই আমি সুরসভায় মুগ্ধ দৃষ্টিতে আপনার নৃত্য দেখছিলাম। তাঁর সত্য কারণ এই যে, “ইনিই পুরুবংশের সর্বজনবিদিত জননী। তাই আমি মুগ্ধ হয়ে আপনাকে দেখছিলাম।’ অর্জুনের কথা শুনে উর্বশী অসন্তুষ্ট হলেন। বললেন, “দেবরাজনলন, আমরা সকলেই অনিয়ন্ত্রিত। তোমার পূর্বে পুরুবংশের যত পুরুষ এখানে এসেছেন, কেউই আমার সঙ্গে রমণে কোনও অসুবিধা বোধ করেননি। আমি কামপীড়িতা, কামমুগ্ধ অবস্থায় তোমার কাছে এসেছি। আমার কাম পরিতৃপ্ত করো।”
অর্জুন বললেন, ‘আমার কাছে কুন্তী, মাদ্রী, শচী যেমন জননী, আপনিও তেমনই আমার জননী। আমি আপনার চরণে মস্তক রেখে বলছি, আপনি চলে যান।’
কামতাপিতা উর্বশী অর্জনের এই প্রত্যাখ্যানে ক্রোধে ব্যর্থতার জ্বালায় কাঁপতে থাকলেন। এ অভিজ্ঞতা তাঁর কখনও হয়নি। কামার্ত অবস্থায় ব্যর্থ হয়ে তাঁকে কখনও ফিরে যেতে হয়নি। উর্বশী অর্জুনকে অভিসম্পাত করলেন, ‘তোমার পিতা অনুমতি দিয়েছেন, আমি নিজেও তৃষিতা ও কামতপ্তা তোমার ঘরে এসেছি। তা সত্ত্বেও তুমি নপুংসকের মতো আমাকে গ্রহণ করলে না। আমার অভিশাপে তুমি নর্তকরূপে সম্মানহীন ও পুরুষত্বহীন হয়ে স্ত্রীলোকের মধ্যেই বাস করবে ও সমস্ত পৃথিবীতে নপুংসকরূপে পরিচিত হবে।’
উর্বশী এই শাপ দিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতে ফেলতে অর্জুনের গৃহ ত্যাগ করলেন। পরদিন অর্জুন পিতা ইন্দ্রকে সকল ঘটনা জানালে ইন্দ্র তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, “তুমি ধৈর্যদ্বারা ঋষিগণকে জয় করেছ। উর্বশীর অভিসম্পাতে তুমি চিন্তিত হোয়ো না। বনবাসের ত্রয়োদশ বর্ষে অজ্ঞাতবাসে এই অভিশাপ তোমার উপকারে লাগবে।”
বনবাসের ত্রয়োদশ বৎসর অর্জুন বৃহন্নলা রূপে উত্তরার নৃত্যশিক্ষক রূপে বিরাট রাজ্যে অতিবাহিত করেছিলেন।
উর্বশীর সঙ্গে পুরুরবার মিলনের হাজার বছর পরে অর্জুনের সঙ্গে উর্বশীর সাক্ষাৎ ঘটেছিল।