1 of 2

অপারেশন দাঁড়কাক

অপারেশান দাঁড়কাক

কথায় বলে কাক কাকের মাংস খায় না।

আমিও এতদিন তাই-ই জানতাম। কিন্তু একটা ০.৪৫৭ লুগার অটোমেটিক নিয়ে মহিন রায়ের আবির্ভাবের পর থেকে ওপরের প্রবাদ-বাক্যটা এই অধম ভুলতে বসেছে। লোকটা এমন এলোপাতাড়িভাবে ডাইনে-বাঁয়ে খুন করে যাচ্ছে যে, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। আমার ক্লায়েন্ট কমে যাওয়ায় আমি যত না আঘাত পেয়েছি, তার চেয়েও বেশি পেয়েছি ওই ‘খুন’ শব্দটাকে মহিন রায় যাচ্ছেতাইভাবে অপমান করছে বলে।

অর্থাৎ মোদ্দা কথা, এতদিনের পর সতীশ দেবনাথ—অথবা ‘শার্প’ দেবনাথ একজন উন্মাদ প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হয়েছে।

আমি সাধারণত এইসব মোক্ষলাভ করানোর (‘খুন’ শব্দটাকে আমি আবার ঠিক পছন্দ করি না) ব্যাপারে শিল্পীসুলভ মন নিয়ে কাজ করি। ডিটেলের দিকে দিই অখণ্ড গভীর মনোযোগ—যার জন্যে পুলিশ চিরকালই মুখোমুখি হয়েছে এক অদ্ভুত সমস্যার: সেটা হল, খুনের পদ্ধতি তারা কোনওদিনই খুঁজে পায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে প্রফেশনাল কিলার হিসেবে আমার নামডাক বেড়েছে বই কমেনি।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, একটা নিখুঁত খুনের পেছনে দরকার সময়, অধ্যবসায় ধৈর্য এবং সবার ওপরে বুদ্ধি। অন্য সবকিছুতে আমার চেয়ে ছোট হলেও একটা ব্যাপারে মহিন রায় আমাকে ভীষণভাবে হারিয়ে দিয়েছে।

সে জিনিসটা হল সময়।

একটা নিখুঁত খুনের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় সময়। মহিন সময়ের ধার ধারে না—যার ফলে ওর খুনগুলো ঠিক নিখুঁত নয়। যেমন কোনও পাঁচিলের আড়ালে বা ঝোপের ফাঁকে লুকিয়ে থেকে ভিকটিমকে গুলি করে স্রেফ চম্পট দেওয়া—এই টাইপের। না, মহিনকে প্রথম শ্রেণির খুনি বলতে আমি একেবারেই নারাজ। সুতরাং, এই অপরাধের জগতে একমেবাদ্বিতীয়ম নিখুঁত প্রফেশনাল কিলার সতীশ দেবনাথ যেমন চিরকাল দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে এসেছে, তেমনি আজও করবে। সেখানে মহিন রায়ের মতো একটা থার্ড গ্রেড কিলারের কোনও জায়গা নেই। কারণ সবকিছু সহ্য করলেও খুন-শিল্পের অপমান আমি কিছুতেই সহ্য করব না।

মহিনকে সরানোর প্ল্যান আমার তৈরিই ছিল। শুধু লাগসই জায়গা দেখতে-দেখতে কেটে গেল একটা মাস। মঞ্চ-সজ্জার কাজ নিখুঁতভাবে শেষ করে নাটকের প্রথম দৃশ্যের জন্যে তৈরি হলাম। কিন্তু তখনও জানি না মহিন রায় আমার বিরুদ্ধের কী চক্রান্ত করে চলেছে!

রোজ রাতের মতো চৌরঙ্গি এলাকার একটি বিশেষ ল্যাম্পপোস্টের নীচে অলসভাবে দাঁড়িয়ে ছিল মহিন রায়।

মাথার চুল পাট করে আঁচড়ানো। মেয়েদের মতো মাঝখান দিয়ে সিঁথি করা। চওড়া কপালের ডানদিকে একটা আঁকাবাঁকা নীলচে শিরার আভাস। ঘন ভুরুর নীচে ছোট-ছোট হায়েনা-চোখ। ভোঁতা নাকের নীচে গোঁফ। ক্ষুর দিয়ে চেরা কাটা দাগের মতো পাতলা ঠোঁট। গলায় রঙিন মাফলার। গায়ে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট। কোমরে চওড়া বেল্ট—তার গায়ে মনোগ্রাম করা ‘এম. আর।’ অর্থাৎ, মহিন রায়।

রায় তার লোমশ ফরসা হাত দুটো পকেটে ভরে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। চোখজোড়া বেজির মতো চঞ্চল। কিন্তু ওর চোখে পড়েনি, রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে একজন লম্বা, রোগা-সোগা চেহারার প্রৌঢ় ভদ্রলোক ওকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছে। হঠাৎ একটা সিগারেট ধরিয়ে লোকটা রাস্তা পার হতে লাগল। তার হাঁটার ভঙ্গিতে কেমন একটা অস্বস্তির ভাব মহিনের নজর এড়াল না। লোকটা চকিতে একবার হাতঘড়ির দিকে তাকাল, তারপর ধীরে-ধীরে মহিনের কাছে এগিয়ে এল। একটা নিওন সাইনকে তীক্ষ্ন মনোযোগে লক্ষ করতে-করতে ক’টা শব্দ ছুড়ে দিল, ‘এম. আর.? পি. কে.?’

মহিন জানে, এর অর্থ ‘মহিন রায়? প্রফেশনাল কিলার? তাই ও ছোট করে জবাব দিল, ‘এল ০.৪৫৭।’ ‘যার অর্থ, লুগার ০.৪৫৭।’

রায়ের সম্মতি পেয়ে ভদ্রলোক ওর মুখোমুখি ঘুরে দাঁড়ালেন ‘আমার নাম কাকু শর্মা। আপনার সঙ্গে কয়েকটা প্রাইভেট কথা আছে।’

শর্মা চট করে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলেন: ‘প্লিজ কাম উইথ মি।’ একটা চলন্ত ট্যাক্সিতে হাত দেখিয়ে দাঁড় করালেন শর্মা। তারপর মহিনের দিকে ফিরে বললেন, ‘লেটস গো।’

ট্যাক্সিতে উঠে শর্মা হঠাৎ উত্তেজিতভাবে বলে উঠলেন, ‘মিস্টার রায়, আপনাকে একটা লোককে—।’

‘শাট আপ, প্লিজ।’ ট্যাক্সি ড্রাইভারের দিকে ইশারা করে শর্মাকে থামতে বলল মহিন।

ভদ্রলোক বারকয়েক ঢোঁক গিলে চুপ করে গেলেন। তাকে দেখে ভীষণ চিন্তিত মনে হল। মুখময় দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল। অনিদ্রায় চোখজোড়া করমচার মতো লাল। চুল উসকোখুসকো—চোখ পর্যন্ত নেমে এসেছে। ডান গালে একটা ছোট্ট তিল। সারা মুখে কেমন একটা হিংস্র, রুক্ষ ভাব।

মহিনের ইশারা কাকু শর্মা বুঝতে পারলেন। তাই চুপচাপ বসে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলেন।

শর্মার নির্দেশে একসময় ট্যাক্সি এসে থামল পার্ক সার্কাসের একটা ফ্ল্যাটের সামনে। ভাড়া মিটিয়ে দুজনে পা বাড়ালেন অটোমেটিক এলিভেটরের দিকে।

চারতলায় পৌঁছে কাকু শর্মা পকেট থেকে চাবির গোছা বের করলেন। তাতে কম করেও প্রায় একডজন চাবি। মহিন পাশে দাঁড়িয়ে আড়চোখে সবই লক্ষ করতে লাগল। দরজা খুলে মহিনকে ভেতরে ডাকলেন শর্মা, ‘আসুন—ভেতরে আসুন।’

মহিন ঢুকতেই অতি সাবধানে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলেন রহস্যময় ভদ্রলোক। কিন্তু দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতেই এক চরম বিস্ময়ের মুখোমুখি হলেন। তার সর্বাঙ্গ থরথর করে কেঁপে উঠল। কোনওরকমে তোতলা স্বরে বলে উঠলেন, ‘মি—মিস্টার রায়! এ—এ কী?’

মহিন তখন দাঁত বের করে হিংস্রভাবে হাসছে। ওর ডানহাতের অভ্যস্ত মুঠোয় এক বিচিত্র ভারসাম্য নিয়ে কাঁপছে একটা ০.৪৫৭ লুগার অটোমেটিক। তার নলটা কাকুর চোখে যেন বড় বেশি কুৎসিত মনে হল।

শর্মার দিকে সন্তর্পণে এগিয়ে এল রায়। পেটে রিভলভার দিয়ে এক খোঁচা মারল: ‘চলুন—ওই চেয়ারটায় গিয়ে বসুন।’

শর্মা বিনা প্রতিবাদে মহিনের আদেশ পালন করলেন। মহিন অদ্ভুত ক্ষিপ্রতায় শর্মার জামাকাপড় সার্চ করতে শুরু করল। কিন্তু কিছু না পেয়ে একটু দূরে একটা চেয়ারে গিয়ে বসল, ‘মিস্টার শর্মা, প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। এসবই হল প্রফেশনাল ব্যাপার। যাকগে, এবার আপনার দরকারটা খুলে বলুন।’

নির্বিকার ভঙ্গিতে রিভলভারটা জামার খাপে চালান করে দিল রায়। কাকু শর্মাকে এবার অনেকটা সহজ মনে হল। তিনি কাষ্ঠহাসি হাসলেন। মুখের চিন্তার ভাবটা আরও গভীর হল। তিনি থেমে-থেমে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করলেন, ‘মিস্টার রায়, আমি একটা লোককে খুন করাতে চাই।’

‘দু-হাজার লাগবে।’ মহিন শান্তভাবে জবাব দিল।

‘জানি। আমার চেনা একজনের কাছ থেকে আমি আপনার সব খবর পেয়েছি। কিন্তু এই ব্যাপারটা একটু কমপ্লেক্স—।’

মহিনের কপালে ভাঁজ পড়ল। ভুরুজোড়া কুঁচকে উঠল: ‘তার মানে?’

‘মানে—এই খুনটায় আপনি রিভলভার ব্যবহারের চান্স পাবেন না। তাই আমার সাজেশান অনুযায়ী আপনাকে খুনটা করতে হবে।’

‘কারণ?’

‘কারণ আমার ভিকটিম বাড়ি ছেড়ে খুব একটা বেরোয় না। আর যখনই বেরোয় আর্মস নিয়ে বেরোয়।—অর্থাৎ সেও আপনারই মতো একজন প্রফেশনাল কিলার।’

‘কী বলছেন আপনি? প্রফেশনাল কিলার?’

‘হ্যাঁ—তার নাম সতীশ দেবনাথ। তবে শার্প ব্রেনের জন্যে সকলে তাকে শার্প দেবনাথ বলে ডাকে।’

মহিন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওর মুখে ফুটে উঠল আবেগহীন হাসি। শূন্য দৃষ্টিতে ও কিছুক্ষণ চেয়ে রইল দেওয়ালের দিকে। তারপর দাঁতে দাঁত ঘষে উচ্চারণ করল, ‘মিস্টার শর্মা, আমার উত্তর শুনলে আপনি হয়তো খুব অবাক হবেন—।’

শর্মা জিজ্ঞাসার চোখে মহিনের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।

‘এ-খুনটার জন্যে একটা পয়সাও আমি আপনার কাছ থেকে নেব না। কারণ, সতীশ দেবনাথ আমার একনম্বর রাইভাল।’

‘ডোন্ট গেট এক্সাইটেড, মিস্টার রায়।’ হাত তুলে মহিনকে বসতে অনুরোধ করলেন কাকু শর্মা: ‘পুরো ঘটনাটা আগে আপনার শোনা দরকার—।’

মহিন রায় ধীরে-ধীরে চেয়ারে বসে পড়ল। কিন্তু ওর ডান হাত বুকের কাছে লাগানো রিভলভারে খামচি মেরে রইল।

‘মিস্টার রায়, রিমা কাশ্যপকে আপনি চেনেন?’ হঠাৎই প্রশ্ন করলেন শর্মা।

‘উঁহু।’ মাথা নাড়ল মহিন।

‘রিমা কাশ্যপ ছিল একজন ক্যাবারে ড্যান্সার—”অশোক” বারে ও নাচত। ওর ক্যারেকটার খুব একটা ভালো ছিল না, কিন্তু তবুও আমি ওকে ভালোবাসতাম। হ্যাঁ, শুনে আপনার হয়তো অবাক লাগছে, মিস্টার রায়—বাট ইট ওয়াজ আ ফ্যাক্ট। বিয়ে-শাদি আমি করিনি। একা থাকি, দু-হাতে পয়সা খরচ করি। তাই জীবনের একমাত্র শখ হিসেবে পুষেছিলাম রিমাকে। কিন্তু তার বছরখানেক পরে, এই গত জুলাইয়ে, একটা ঘটনা ঘটল। এক ভদ্রলোক একটা ইন্টারন্যাশনাল র‌্যাকেটে রিমাকে জড়িয়ে ফেললেন। রিমা নিজে জানতেও পারল না, কখন ও এক ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যখন জানল, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

‘সেই সময়েই এক ক্লায়েন্টের কথায় সতীশ দেবনাথ ওকে খুন করে। সতীশ রিমার জুতোর তলায় দুটো ছোট-ছোট স্টিলের বল লাগিয়ে দেয়। তাতে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় পা পিছলে রিমা এক প্যাথেটিক অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। পুলিশ ঘটনাটাকে নিছক অ্যাক্সিডেন্ট হিসেবে দেখেছিল, কারণ, পরে রিমার জুতোর নীচে সেই স্টিলের বলদুটো আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

‘মিস্টার রায়, রিমা ছিল আমার সব। একজন তিনকুলে-একা পুরুষকে ও লোনলিনেস ভুলিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং সামবডি মাস্ট পে ফর রিমাজ অ্যাক্সিডেন্ট। এবং সেই সামবডি সতীশ দেবনাথ ছাড়া আর কেউ নয়। মানি ইজ নো প্রবলেম, মিস্টার রায়—তাই সতীশকে সরানোর দায়িত্ব আমি আপনাকেই দিতে চাই। এবং ইট মাস্ট লুক লাইক অ্যান অ্যাকসিডেন্ট—নট মারডার। যেমনটা হয়েছিল রিমার বেলায়।’

মহিন একমনে কাকু শর্মার কথা শুনছিল। শর্মা থামতেই ও নিচু গলায় বলে উঠল, ‘আমার ০.৪৫৭ ছাড়া আমি এক পা-ও চলি না—সেটাই আমার শেষ কথা।’

‘আমি তা জানি, মিস্টার রয়। আপনার মেশিন আপনি ইচ্ছে করলে সঙ্গে রাখতে পারেন, কিন্তু কিছুতেই সেটা ইউজ করতে পারবেন না। আশা করি সেরকম দরকারও হবে না। উহুঁ, ব্যস্ত হবেন না। আগে ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনুন। পয়েন্ট নাম্বার ওয়ান, সতীশ দেবনাথ বাড়িতে সবসময় রিভলভার সঙ্গে নিয়ে ঘোরে না। নাম্বার টু, আপনি যখন ওকে ধাক্কা দিয়ে চারতলার ওই বারান্দা থেকে নীচে ফেলে দেবেন, তখনও ওর কাছে আর্মস থাকবে না। সুতরাং আপনি নির্ভয়ে এ-কাজটা হাতে নিতে পারেন। রিমার মৃত্যুর বদলা নিতে যত টাকা লাগে, আমি খরচ করব। না, না—টাকা নিতে আপনার আপত্তি থাকলেও আমি শুনব না। কাজ শেষ হয়ে গেলে দু-হাজার টাকা আপনাকে আমি গিফট হিসেবে দিতে চাই।’

মহিন নীরব। একদৃষ্টে ও চেয়ে রইল শর্মার মুখের দিকে।

‘আপনার যদি এ-কাজে আপত্তি না থাকে তো বলুন—’ শর্মা বলে চললেন, ‘—কালই প্রিলিমিনারি ইনস্পেকশানটি সেরে ফেলি।’

‘প্রিলিমিনারি ইনস্পেকশান?’ ভীষণ অবাক হল রায়: ‘তার মানে?’

‘সেটা আপনাকে জানাব—যদি কাজটা আপনি হাতে নেন। তার আগে নয়।’

‘ভালো।’ বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে সম্মতি জানাল মহিন।

‘ধন্যবাদ।’ পকেট থেকে এক প্যাকেট ক্যাপস্টান আর দেশলাই বের করে মহিনের দিকে এগিয়ে দিলেন শর্মা। মহিন মাথা নেড়ে ‘না’ বলল। তখন নিজেই একটা ধরিয়ে প্যাকেট এবং দেশলাই আবার পকেটে চালান করলেন।

অলসভাবে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে তিনি বললেন, ‘মিস্টার রায়, আমার একটা আশ্চর্য গুণ আছে। তা হল, পৃথিবীর যে-কোনও তালাই আমি মিনিটদুয়েকের মধ্যে খুলে ফেলতে পারি।’

‘কিন্তু এর সঙ্গে খুনের কি সম্পর্ক তা তো বুঝতে পারছি না?’ শর্মাকে বাধা দিয়ে প্রশ্ন করল মহিন।

‘আছে, মিস্টার রায়, আছে। বহু কষ্টে আমি সতীশ দেবনাথের ফ্ল্যাটের ঠিকানা খুঁজে বের করেছি। কাল সতীশ যখন থাকবে না, তখন আপনাকে নিয়ে আমি একবার সতীশের ফ্ল্যাট ইনস্পেকশানে যেতে চাই। স্পটটা আগে থেকে দেখা থাকলে আপনার অনেক সুবিধে হবে, তাই না?’

‘হয়তো তাই।’ অন্যমনস্কভাবে জবাব দিল মহিন। ওর মন তখন চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

‘ঠিক আছে। তা হলে কাল সন্ধে সাতটায় আপনি আমার এখানে আসুন। তারপর এখান থেকে একসঙ্গেই বেরোনো যাবে। ইন দ্য মিন টাইম আমি ফোন করে জেনে নেব সতীশ কখন বাইরে বেরোবে। ব্যস, তারপর আর কোনও চিন্তা নেই।’ হিংস্র উল্লাস খেলা করল কাকু শর্মার মুখে। আনমনে তিনি বলে চললেন, ‘রিমার আত্মা এবার শান্তি পাবে—।’

‘তা হলে কাল সন্ধে সাতটা।’ মহিন চেয়ারে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ক্ষিপ্র পায়ে এগিয়ে চলল দরজার দিকে।

কাকু শর্মা তখন টেবিলের একটা ড্রয়ার খুলে ফেললেন। ড্রয়ারে থরে-থরে সাজানো নোটের বান্ডিল। আর তার পাশেই পড়ে রয়েছে একটা ০.৩৮ পুলিশ স্পেশাল। রিভলভারের গায়ে একটা হাত রাখলেন কাকু। দাঁতে দাঁত ঘষে উচ্চারণ করলেন, ‘মিস্টার দেবনাথ, এবার তোমার পালা।’

পরদিন রাত আটটায় কাকু শর্মা আর মহিন রায় এসে দাঁড়াল সতীশ দেবনাথের বাড়ির সামনে। অন্ধকার এলাকায় দাঁড়িয়ে বাড়িটার কোনও স্পষ্ট আদল পাওয়া গেল না। নীরবে দুজনে এগিয়ে চলল লিফটের দিকে।

লিফটে উঠে তিননম্বর বোতাম টিপলেন কাকু শর্মা। নিঃশব্দে উঠতে শুরু করলে লোহার খাঁচা। মহিনকে দেখে একটু উত্তেজিত মনে হল শর্মার। ওর হাত পোশাকের আড়ালে—বোধহয় রিভলভারের ওপরে। শর্মা ওর কাঁধে হাত রাখলেন ‘টেক ইট ইজি। আমি এখানে আসার আগেই ফোন করে জেনে নিয়েছি সতীশ দেবনাথ ওর ফ্ল্যাটে নেই। অতএব রিল্যাক্স।’

‘এটা জাস্ট প্রিকশন।’ বরফশীতল স্বরে জবাব দিল রায়।

মৃদু হেসে ঘাড় ঝাঁকালেন কাকু।

লিফট থামতেই সন্তর্পণে করিডরে পা দিলেন তিনি। মহিন রায়কে ইশারায় আহ্বান জানালেন। সামনেই একটা ফ্ল্যাটের দরজা। মহিন লক্ষ করল ফ্ল্যাটের নম্বর ১২। দরজার ডান পাশে একটা কলিংবেল। শর্মা বারকয়েক কলিংবেলে চাপ দিলেন। কোনও সাড়া পাওয়া গেল না ভেতর থেকে।

শর্মা ঘাড় ফিরিয়ে মহিনের দিকে একপলক তাকালেন। তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলেন চাবিভরতি রিংটা।

রায় চুপচাপ লক্ষ করে চলল শর্মার কার্যকলাপ।

মিনিটদুয়েক ধরে চাবির গোছা নিয়ে কীসব খুটখাট করলেন তিনি। তারপরই হাতল ঘুরিয়ে একটু-একটু করে খুলে ফেললেন ফ্ল্যাটের দরজা।

অভ্যাসবশে মহিন নিমেষের মধ্যে হোলস্টার থেকে বের করে নিল ওর লুগার অটোমেটিক। শর্মা কিন্তু ফিরেও তাকালেন না। আস্তে-আস্তে ঘরে ঢুকে পড়লেন। অতি সাবধানে তাকে অনুসরণ করল মহিন রায়।

শর্মা আলোর সুইচ অন করে অল্প পাওয়ারের একটা আলো জ্বেলে দিলেন।

একইসঙ্গে মহিনও ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল ফ্ল্যাটের দরজা।

‘মিস্টার রয়, এই হল সতীশের ঘর। ভালো করে দেখে রাখুন।’

মহিন পেশাদার চোখে ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র খুঁটিয়ে লক্ষ করতে লাগল।

দরজার ডান পাশে একটা ছোট টেবিল। তার ওপর অগোছালোভাবে পড়ে রয়েছে খানকতক ক্রিমিনোলজির বই। টেবিল থেকে, হাততিনেক দূরে একটা স্টিলের আলমারি। ডানদিনের দেওয়ালের ঝুলছে তিনটে ক্যালেন্ডার। ছবিগুলো নেহাতই ঠাকুর-দেবতার। দরজার মুখোমুখি একটা ছোট বারান্দা।

বারান্দার দু-দিকের দেওয়ালে দুটো জানলা। অত্যন্ত ছোট মাপের—গরাদ দেওয়া।

বাঁদিকের জানলার পাশে একটা বড় ওয়াল ক্লক। তার রেডিয়াম দেওয়া কাঁটা এই অল্প আলোতেও জ্বলজ্বল করছে। ঘড়ির দিকে নীচেই একটা টিপয়। তার ওপরে একটা টেলিফোন, সাদা রঙের।

ঘরের বাঁদিকে একটা লম্বা-চওড়া খাট। বিছানার সাদা চাদর বহু ব্যবহারে ময়লা হয়ে গেছে। একজোড়া বালিশ খাটের ও-মাথায় পড়ে রয়েছে। তার পাশে কিছু জামাকাপড়। আর এ-মাথায় পায়ের কাছে পড়ে আছে একটা ভাঁজ করা চাদর। খাটের নীচ থেকে উঁকি মারছে একটা সুটকেস, একটা ট্রাঙ্ক। দরজার বাঁদিকে একটা বড় কাঠের বাক্স তালাবন্ধ। তার পাশে একটা কুঁজো—কাচের গ্লাস দিয়ে ঢাকা দেওয়া। আর চোখে পড়ছে একটা ছোট দরজা। সম্ভবত বাথরুম।

প্রতিটি জিনিসের ওপরে চোখ বুলিয়ে মহিন রায়ের চোখ এসে স্থির হল কাকু শর্মার চোখে। কাকু বুঝতে পারলেন মহিনের নীরব প্রশ্ন। তাই জবাব দিলেন, ‘এই জিনিসগুলো ভালো করে দেখার ভীষণ দরকার আছে, মিস্টার রায়। এই ঘরের প্রতিটি ফার্নিচার এবং তাদের পজিশান আপনাকে এমনভাবে মনে রাখতে হবে, যাতে কেউ এ-বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করলে আপনি তার কারেক্ট আনসার দিতে পারেন।’

‘কিন্তু কেন?’ মহিন জিগ্যেস করল।

‘কারণ, অপারেশান সতীশ এক্সিকিউট করতে হবে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। সুতরাং ওই অন্ধকারে আপনার নিজের পজিশান সঠিক রাখার জন্যে অন্যান্য আসবাবপত্রের পজিশান আপনাকে মেমোরাইজ করতেই হবে।’

‘তারপর?’

‘এবার আমি খুনের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো আপনাকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিই।’

মহিন সোজা গিয়ে খাটের ওপর বসে পড়ল। রিভলভারটা আবার হোলস্টারে ঢুকিয়ে ফেলল। তারপর উৎসুক চোখ মেলে তাকাল কাকুর দিকে।

‘রাত ঠিক বারোটার সময় আমি আপনাকে এই ফ্ল্যাটের কাছে পৌঁছে দেব। আর সঙ্গে দিয়ে দেব এই ফ্ল্যাটের দরজার চাবি। তারপর, আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, আপনি এক থেকে একশো পর্যন্ত গুনবেন। কারণ ওই সময়ের মধ্যেই আমি রাস্তার ওপারে যে-ডাক্তারখানা আছে, সেখান থেকে সতীশকে ফোন করব। তখন আপনি ফোনের শব্দ শুনতে পাবেন। তারপর কথাবার্তায় যখনই বুঝবেন সতীশ রিসিভার টেবিলে রেখে বারান্দার কাছে যাচ্ছে, তখনই আপনি নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে ওর ঘরে ঢুকে পড়বেন।’

‘কিন্তু আপনি কী করে শিয়োর হচ্ছেন যে, মিস্টার দেবনাথ বারান্দার কাছে যাবেন?’

‘অধৈর্য হবেন না, মিস্টার রায়। বাইরের করিডর পুরো অন্ধকার থাকবে। অতএব সতীশ আপনাকে দেখতে পাবে না। আমার অনুমান যদি ভুল না হয়, তবে সতীশ রিসিভার তুলে কথা বলার পর নিশ্চয়ই বারান্দার কাছে যাবে। কারণ, আমি তাকে ফোনে বলব, একটা লোক পাইপ বেয়ে তার বারান্দায় ওঠার চেষ্টা করছে: সম্ভবত লোকটার মতলব ভালো নয়—।’

‘ও—। তা হলে দেবনাথ তখন বারান্দায় যাবেই। দেখতে চেষ্টা করবে, পাইপ বেয়ে সত্যিই কেউ ওঠার চেষ্টা করছে কি না। আর তখনই আমি…।’

‘ছুটে গিয়ে ওকে বাইরে পড়তে সাহায্য করবেন। ক্লিয়ার?’

‘অ্যাবসলিউটলি!’ দাঁতে দাঁত ঘষে জবাব দিল মহিন।

‘তা হলে নেক্সট উইকে, এই একই দিনে, আমরা এখানে আসব, আর সেটাই হবে সতীশ দেবনাথের শেষ রাত।’

কাকুর কথা শেষ হতে-না-হতেই একটা সামান্য শব্দে ওরা দুজনেই তড়িৎস্পৃষ্টের মতো লাফিয়ে উঠল। কাকু তিরবেগে ছুটে গেলেন আলোর সুইচের দিকে। আর একইসঙ্গে রিভলভারটা বের করে মহিন দৌড়ল আলমারি লক্ষ করে।

রায় আলমারির আড়ালে লুকিয়ে পড়ামাত্রই নিভে গেল ঘরের আলো। অন্ধকারে ও কাকুকে দেখতে পেল না।

এদিকে বাইরের পায়ের শব্দ এসে থেমেছে দরজার কাছে। তারপর শোনা গেল দরজায় চাবি ঘোরানোর শব্দ।

একটু পরেই সামান্য ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তুলে দরজার পাল্লা ফাঁক হতে শুরু করল।

বাইরের আলোর পটভূমি দেখা গেল দরজায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘকায় এক ছায়ামূর্তি।

হঠাৎ রায় অনুভব করল কার হাতের স্পর্শ। ও চমকে উঠতেই কানে এল কাকুর ফিসফিসে চাপা গলা, ‘সতীশ দেবনাথ!’

ছায়ামূর্তি ঘরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিল। তারপর এগিয়ে গেল আলোর সুইচের দিকে। আর সৌভাগ্যবশত ঠিক সেই মুহূর্তে ঝনঝন করে বেজে উঠল ঘরের টেলিফোন। ছায়ামূর্তি আলো না জ্বেলে ফোনের দিকে পা বাড়াতেই বিদ্যুৎঝলকের মতো দরজা লক্ষ করে ছুটে গেল মহিন আর কাকু। পলকের মধ্যে দরজা খুলে ওরা করিডরে পা দিল।

মহিন কাকুর আগে আগে ছুটছিল। ও দৌড়ে লিফটে উঠতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ভীষণভাবে নিজেকে সামলে নিল।

লিফটের জায়গায় লিফট নেই। অথচ কোলাপসিবল গেটটা হাট করে খোলা। উঁকি মেরে দেখল, লিফট দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই একতলায়।

তা হলে কোলাপসিবল গেটটা খুলল কী করে? কে-ইবা খুলল?

মুহূর্তের মধ্যে সিঁড়ি লক্ষ করে দৌড়তে শুরু করল মহিন। ওর পিছনে-পিছনে কাকু। তার পিছনে কি কারও পায়ের শব্দ ভেসে আসছে?

কীভাবে যে ওরা শেষ পর্যন্ত রাস্তায় এসে পৌঁছল, তা ওদের মনে নেই। সতীশের বাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে ওরা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগল। আজ খুব জোর বেঁচে গেছে!

চলে যাওয়ার আগে কাকু মহিনের কাঁধে টোকা মেরে মনে করিয়ে দিলেন, ‘আগামী শুক্রবার রাত এগারোটায় আমরা বেরোব। আপনি আমার বাড়িতে সময়মতো আসবেন, মিস্টার রায়। কারণ, পাংচুয়ালিটি আমি পছন্দ করি।’

ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে হনহন করে এগিয়ে চলল মহিন রায়। লুগার অটোমেটিক তখন ওর হোলস্টারে পরম নিশ্চিন্তে বিশ্রাম করছে। কিন্তু ওর কপালে জমে ওটা ঘামের ফোঁটা রাস্তার আলোয় চকচক করছিল।

শুক্রবার। রাত সাড়ে এগারোটা।

সতীশ দেবনাথের ফ্ল্যাট থেকে কিছুটা দূরে একটা লাইটপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাকু। তার পাশে মহিন। ওর পরনের পোশাকে কোনও পরিবর্তন হয়নি। বুকের বাঁ-পাশটা সামান্য উঁচু হয়ে রয়েছে। না, অটোমেটিক লুগারকে মহিন রায় কোনও অবস্থাতেই কাছ ছাড়া করতে রাজি নয়।

দুজনের নজরই চারতলার অন্ধকার জানলার দিকে।

‘এই নিন। সতীশের ফ্ল্যাটের চাবি।’

চুপচাপ কাকুর হাত থেকে চাবিটা নিয়ে ডান পকেটে ভরে ফেলল রায়। এই উৎকণ্ঠাময় অপেক্ষা ও একেবারেই সহ্য করতে পারছে না। শুধু ভাবছে, ঘড়ির কাঁটা কখন গিয়ে ঠেকবে বারোটার ঘরে।

‘মিস্টার রায়, বিরক্তিকর মনে হলেও ছোটখাটো ব্যাপারগুলো আরও একবার আপনাকে মনে করিয়ে দিই।’ কেশে গলা ঝাড়লেন কাকু: ‘ঠিক বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিটের সময় আমি আপনাকে সতীশের ফ্ল্যাটের দরজায় পৌঁছে দেব। করিডর অন্ধকার থাকবে। আশা করি আপনার চলাফেরায় কোনও অসুবিধে হবে না। আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আপনি এক থেকে একশো পযর্ন্ত মনে-মনে গুনবেন। তারপর চাবি নিয়ে ঘরে ঢোকার জন্যে তৈরি হবেন। ঠিক সেই সময়ে আপনি শুনতে পারেন টেলিফোনের শব্দ। টেলিফোনের কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর ঠিক তিন সেকেন্ড অপেক্ষা করে আপনি দরজা খুলবেন। আর আমার অঙ্কে যদি ভুল না হয় তবে দরজা খুলেই আপনি দেখবেন বারান্দায় দাঁড়ানো অসতর্ক সতীশকে। ব্যস, বাকি কাজটুকু এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যেই আপনাকে সারতে হবে। তারপর—’ পকেট থেকে দুটো দশ টাকার নোটের বান্ডিল বের করে মহিনের চোখের সামনে নাচালেন কাকু: ‘আপনি নিন বা না নিন, আমার ডিউটি আমি করব।’

‘ক’টা বাজে এখন?’ নিরুত্তাপ গলায় জানতে চাইল মহিন।

‘পৌঁনে বারোটা। আর মাত্র দশ মিনিট।’

ধীরে-ধীরে সময় গড়িয়ে চলল।

‘জিরো আওয়ার। চলুন যাওয়া যাক।’ কাকু শর্মা তাড়াতাড়ি এগিয়ে চললেন। মহিনের ডানহাতের পাঁচ আঙুল অনুভব করল লুগারের অস্তিত্ব। তারপর চুপচাপ ও কাকুকে অনুসরণ করল।

নিঝুম বাড়ি। সদর দরজার তালা খুলতে কাকুর লাগল মাত্র কয়েক সেকেন্ড।

ভেতরটা একেবারে অন্ধকার।

আন্দাজে ভর করে দুজনেই এগিয়ে চলল।

হাতড়ে-হাতড়ে লিফটের দরজা হাতে ঠেকল কাকুর।

‘এদিকে—’ চাপাস্বরে হতভম্ব মহিনকে আহ্বান জানালেন তিনি।

লিফটে ঢুকেই সুইচ অন করে অল্প পাওয়ারের আলোটা জ্বালিয়ে দিলেন কাকু। তারপর চারনম্বর বোতাম টিপলে।

ওপরের দিকে নিঃশব্দে ছুটে চলল লোহার খাঁচা।

লিফট থামতেই সুইচ অফ করে কাকু আলো নিভিয়ে দিলেন। তারপর খুব সাবধানে দরজা খুলে মহিনকে এগোতে ইশারা করলেন: ‘যান—দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এক থেকে একশো পর্যন্ত গুনবেন। তারপর—।’

‘আপনি আপনার কাজ করুন।’ মৃদু খসখস শব্দ করে অন্ধকার করিডরে পা রাখল মহিন।

কাকু লিফটের দরজা বন্ধ করে—গ্রাউন্ড ফ্লোরের বোতাম টিপলেন।

লিফট নামতে শুরু করল।

নিঃশদে সতীশের ফ্ল্যাটের কাছে গিয়ে দাঁড়াল মহিন। লুগার অটোমেটিক হোলস্টার থেকে বের করে দু-হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল ও। তারপর রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে লাগল। মনে-মনে গুনতে শুরু করল, এক—দুই—তিন—।

রাস্তায় লাইটপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে হাতঘড়ি দেখলেন কাকু। তাঁর হাতঘড়িতে কাঁটায়- কাঁটায় বারোটা বাজতেই এগিয়ে গেলেন কাছেই এক ডাক্তারখানার দিকে। তাঁর কঠিন মুখে সিদ্ধান্তের আভাস।

ডাক্তারখানায় ঢুকে কাউন্টারের ওপর একটা আধুলি ছুড়ে দিলেন তিনি। কোনও কথা না বলে এগিয়ে গেলেন কাউন্টারের বাঁ-পাশে রাখা টেলিফোনের দিকে।

রিসিভার তুলে নিয়ে ডায়াল করলেন। ডাক্তারখানার শীর্ণ চেহারার কর্মচারীটি জুলজুল করে কাকুকে দেখতে লাগল।

ঠিক বারোটা বাজতেই দরজার বাইরে দাঁড়ানো মহিনের কানে এল দেওয়ালঘড়ির স্পষ্ট গম্ভীর আওয়াজ। ঢং—ঢং—ঢং—।

রাত্রির নিটোল নিস্তব্ধতা চুরমার করে বারোবার বাজার পর থামল সেই দেওয়ালঘড়ির শব্দ।

তারপরই মহিনের কানে এল ভেতরে কারও নড়াচড়ার শব্দ। লুগার আঁকড়ে ধরে ওত পাতা জাগুয়ারের মতো সামনের দিকে একটু ঝুঁকে এল মহিন। অস্পষ্টভাবে ওর নজরে পড়ল কলিংবেলের সুইচ, রুম নম্বরের ঝাপসা সাদা অক্ষর দুটো: ১২। কিন্তু ওর কান সজাগ। শরীরের প্রতিটি মাংসপেশি টান-টান।

হঠাৎই টেলিফোনের কর্কশ বেসুরো ঝনঝন শব্দে মহিন ভীষণ ভাবে চমকে উঠল। দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে খুব সাবধানে পকেট থেকে বের করল সতীশের ফ্ল্যাটের চাবি। ঘরের ভেতর কেউ রিসিভার তুলে নিল।

‘হ্যালো—’

‘কে কথা বলছেন?’ এ-প্রান্তে দেবনাথের স্বর উত্তেজিত।

‘অসম্ভব। বাইরের পাইপ বেয়ে ওঠা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়!’

‘হতেই পারে না। ঠিক আছে, তবু একবার দেখছি। হ্যালো? হ্যালো? হ্যা—।’

রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ। মহিন একমনে দেওয়ালে কান পেতে সব শুনছিল। সতীশের দ্বিতীয় কথা শোনামাত্রই চাবি ঢুকিয়ে দিয়েছিল দরজার ফুটোয়।

সতীশ রিসিভার নামিয়ে রাখার সঙ্গে-সঙ্গে মহিনের পেশাদার হাতের নিখুঁত চাপে নিঃশব্দে দরজা খুলতে শুরু করল।

দরজা পুরোটা খুলতেই মহিন একপলক থমকাল। লুগারটা হোলস্টারে ঢুকিয়ে রাখল। দেখল…।

সামনের রাস্তায় অধৈর্যভাবে অপেক্ষা করছেন কাকু শর্মা। বারোটা পাঁচ বাজতেই তিনি সতীশের বাড়ির দিকে হেঁটে চললেন। পকেট থেকে বের করে নিলেন একটা পেনসিল টর্চ। তার আলোয় পথ দেখে তিনি খোলা সদর দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লেন। এগিয়ে গেলেন লিফটের দিকে। লিফটে উঠে চারনম্বর বোতাম টিপলেন। লিফট নিঃশব্দে উঠতে শুরু করল।

মহিনের প্রথম নজর গেল বারান্দায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি দীর্ঘকায় ছায়ামূর্তি। দেখা যাচ্ছে বাইরের খোলা আকাশ। তার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিকে আরও রহস্যময় মনে হচ্ছে। ঠিক জমাট পাথরের মতো সে দাঁড়িয়ে রয়েছে একই জায়গাতে। ঝুঁকে পড়ে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে।

বাঁ-পাশে চোখ সরাতেই নজরে পড়ল ছোট্ট জানলা। পাল্লা দুটো না দেখা গেলেও, গরাদের ফাঁক দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বাইরের কালো আকাশ। তার সামান্য পাশেই দেওয়ালে চকচক করছে দেওয়ালঘড়ির কাঁটা। ছোট কাঁটা আর বড় কাঁটা দেখে বোঝা যায় রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিটের কিছু বেশি। তার নীচেই আবছাভাবে চোখে পড়ছে টিপয়ের ওপরে বসানো টেলিফোন। ছোট জানলার সঙ্গে বারান্দার ডানদিকের জানলার তেমন কোনও তফাত নেই। ওটাও হাট করে খোলা। বাইরের সামান্য আলোয় খাট, বালিশ, বিছানাও মহিনের চোখ এড়াল না।

এইসব চোখ বুলিয়ে দেখতে মহিনের লাগল ঠিক ছ’সেকেন্ড। পরমুহূর্তেই ও জীবনপণ করে ছুটল ওর প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে। দুজনের মধ্যেকার দূরত্ব প্রতি মুহূর্তে বিদ্যুৎগতিতে কমতে লাগল।

হঠাৎই মহিন আবিষ্কার করল ও ঠিক সতীশের পিছনে দাঁড়িয়ে। সর্বশক্তি দিয়ে সামনে হাত বাড়িয়ে ও ঝুঁকে পড়া সতীশকে প্রচণ্ড এক ধাক্কা দিল। সঙ্গে-সঙ্গেই কী যেন হয়ে গেল। দুলে উঠল বারান্দা, জানলা, ঘড়ি—এমনকী গোটা দেওয়ালটা। মহিন হঠাৎ যেন অনুভব করল ও শূন্যে পা রেখে দাঁড়িয়ে আছে। মাথার ওপর আকাশ। চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস। জ্বলজ্বলে নক্ষত্ররা প্রতিফলিত হল মহিনের চোখের তারায়।

সমস্ত পৃথিবীটা মহিনের চোখের সামনে ঘুরপাক খেয়ে হঠাৎই উলটে গেল। দুটো ডিগবাজি খেয়ে ‘জ্যাক নাইফ’ ডাইভিং-এর মতো ও সোজা এসে পড়ল বাইরের বাঁধানো রাস্তায়। তখনও পুরো ব্যাপারটার অস্বাভাবিকতা, বিস্ময় ওর মনকে ছুঁয়ে রেখেছে।

মহিনের কালো পোশাক পরা চেহারাটা ঠিক মরা দাঁড়কাকের মতো হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রইল। ঘাড় মটকে মাথাটা এক বিচিত্র ভঙ্গিমায় পিছনদিকে চেয়ে রয়েছে। হাঁ করা মুখের ফাঁক দিয়ে জিভটা বেরিয়ে এসেছে। রক্তাক্ত মুখে নিষ্প্রাণ চোখজোড়ায় শুধুই বিস্ময়। মরে গিয়েও মহিন যেন এই অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

লিফট পাঁচতলায় এসে থামতেই কাকু শর্মা করিডরে পা দিলেন। পেনসিল টর্চের আলোয় পথ দেখে এগিয়ে গেলেন ফ্ল্যাটের খোলা দরজার দিকে। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন। তারপর পেনসিল টর্চ পকেটে রেখে দেশলাই বের করলেন। অন্ধকার হাতড়ে-হাতড়ে ঘরের এক কোনায় রাখা একটা হ্যারিকেন নিয়ে এলেন। বোঝা গেল, এ-ঘরের সঙ্গে তিনি ভীষণভাবে পরিচিত। হ্যারিকেনের আলো জ্বালতেই কতকগুলো জিনিস চোখে পড়ল।

খাট, বিছানা, বালিশ ও টিপয়ের ওপরে রাখা টেলিফোন ছাড়া পুরো ঘরটাই ফাঁকা। ঘরে আর কোনও আসবাবপত্র নেই। ঘরের সিলিং ঢালাই করা সিমেন্টের নয়—প্লাইউডের তৈরি বারান্দার দিকের দেওয়ালও দেওয়াল নয়—কালো রং করা প্লাইবোর্ড। বারান্দার জায়গাটা প্লাই কেটে তৈরি করায় বাইরের আকাশ চোখে পড়ছে। বারান্দার দু-পাশের জানালাও একইভাবে প্লাইউড কেটে গরাদের মতো করা। জানলায় কোনও পাল্লা নেই। দেওয়ালঘড়ির জায়গায় কালো প্লাইয়ের ওপরে লুমিনাস পেইন্ট দিয়ে মিনিটের কাঁটা আর ঘণ্টার কাঁটা আঁকা রয়েছে—এমনভাবে, যাতে অন্ধকারে বারোটা বেজে পাঁচ-সাত মিনিট বলে মনে হয়।

জিনিসগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে কাকু মুচকি হাসলেন। এগিয়ে গিয়ে বালিশের নীচ থেকে টাইম অ্যান্ড ক্লক ডিভাইস অটোমেটিক টেপ রেকর্ডার বের করলেন। রেকর্ডারের টেপ তখনও ঘুরে চলেছে। কাকু উলটোদিকে ঘুরিয়ে দিলেন টেপের গতি। তারপর একসময় সুইচ টিপে প্রথম থেকে চালাতেই—কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা।

হঠাৎ ‘ঢং—ঢং—ঢং—।’ দেওয়ালঘড়ির ঘণ্টায় শব্দ। ঠিক বারোবার বাজল। তারপর শোনা গেল কারও চলাফেরার শব্দ। তারও কিছু পরে টেলিফানের ‘ক্রিং—রিং—রিং—ক্রি—রিং—রিং’, এবং সবশেষে মহিনের শোনা কথাবার্তা আবার হুবহু শোনা গেল। এমনকী রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দও বাদ গেল না।

কাকুর তৈরি এই নাটুকে ঘরের একদিকে দরজা, তার দু-পাশে দেওয়াল, কিন্তু আর-একটা দিকে এখনও দেওয়াল গাঁথা হয়নি—যেদিক দিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েছে মহিন রায় এবং বারান্দায় দাঁড় করানো কার্ডবোর্ডের মূতিটা।

এবার ক্লান্তভাবে খাটের ওপরে বসলেন কাকু। বহুদিনের প্রতীক্ষার পর তার বুক ঠেলে বেরিয়ে এল স্বস্তির নিশ্বাস।

ঠিকই আন্দাজ করেছেন আপনারা। সতীশ দেবনাথ এবং কাকু শর্মা এক ও অভিন্ন। আগেই তো বলেছিলাম, এই ‘শার্প’ দেবনাথের সঙ্গে বুদ্ধির লড়াইয়ে কেউ পেরে ওঠেনি—পারবেও না।

মহিনের মোক্ষলাভের ব্যাপারে কতকগুলো ব্যাপারে হয়তো আপনাদের ধন্দ লাগছে। কিন্তু ভেবে দেখুন, একটা বড় সূত্র অনেক আগেই আপনাদের জানিয়ে দিয়েছিলাম। আজ যখন মহিনকে নিয়ে আমি লিফটে উঠলাম, তখন কত নম্বর বোতাম টিপেছি বলতে পারেন? চার নম্বর। অথচ প্রথমদিন ওকে যখন আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসি, তখন টিপেছিলাম তিননম্বর। তা হলে? ব্যাপারটা একটু গোমেলে ঠেকছে না আপনাদের কাছে?

তা হলে প্রথম থেকেই বলি।

আপনাদের হয়তো মনে আছে, মহিনকে সরানোর ব্যাপারে লোকেশান ঠিক করতে আমার সময় লেগেছিল একটি মাস। কারণ, তৈরি হচ্ছে এইরকম একটা ফ্ল্যাট-বাড়ি আমার প্রয়োজন ছিল। এবং প্ল্যানমতো পাঁচতলার একটা আধা-তৈরি ঘরের ঠিক নীচে, চারতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। আসবাবপত্রে সাজিয়ে ফেললাম ঘরটা। আর ওপরতলার মরণ-ফ্ল্যাটের ‘সেট’ তৈরির সরঞ্জাম জোগাড় করে ফেললাম।

প্রথমে পরদাটাকে কাঁচি দিয়ে এমনভাবে কাটলাম, যাতে অন্ধকারে টাঙিয়ে রাখলে মনে হয় একটা বারান্দার দুপাশে দুটো জানলা (ঠিক আমার ফ্ল্যাটের মতো)। ব্যস, প্রাথমিক কাজ শেষ হল।

সুতরাং, তারপরই আমি দেখা করলাম মহিনের সঙ্গে। ও এই ‘কিলিং বিজনেস’-এ নামার পর থেকেই মোটামুটি ওই একই জায়গায় ঘোরাফেরা করে। তাই ওকে চিনে নিতে অসুবিধে হল না। তারপর কায়দামতো সাজিয়ে গুজিয়ে একটা ভুয়ো গল্প ফেঁদে বসলাম। আর সেই ফাঁদেই মহিন পা দিল।

প্রথম দিন ওকে নিয়ে গেলাম সেই মরণ-ফ্ল্যাট পরিদর্শনে। এমনভাবে ঘরের প্রতিটি জিনিস ওর মনে গেঁথে দিলাম, যাতে অন্ধকারেও ওর কোনও অসুবিধে না হয়। আমি যে সতীশ নই, সেটা প্রমাণের জন্যে একজন পেশাদার অভিনেতাকে ওই সময়ে আমার ফ্ল্যাটে আসার জন্যে বলে রেখেছিলাম। তা ছাড়া কী-কী করতে হবে তাও বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। তাতে যে কীরকম কাজ হয়েছে তা তো আপনারা ভালোভাবেই জানেন। আজ অন্ধকারে মহিন যখন দেখল খাট, বিছানা, বালিশ, টেলিফোন, জানলা, বারান্দা, ঘড়ি—সবই ঠিক জায়গায় ঠিকমতোই রয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ওর অবচেতন মন ধরে নিল, সেই একই ঘরে ও এসেছে। যে-যে ফার্নিচার ঘরে নেই, সেগুলোও আছে বলে ওর মন কল্পনা করে নিল। একে বলে সাইকোলজিক্যাল ইলিউশান, অথবা, সাইকোলজিক্যাল ইমপ্লিকেশান।

ঠিক একইভাবে অন্ধকারে প্লাইয়ের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো একটা কার্ডবোর্ডের মূর্তিকে ও আসল মানুষ বলে ভুল করল। কারণ, আমার শোনানো সেই টেলিফোন করার গল্প। তার ওপর সাইকোলজিক্যাল কনভিকশানের জন্য সামান্য টেপরেকর্ডারের ব্যবস্থা। ব্যস। আমার বলে যাওয়া গল্প আর আপাতদৃষ্টিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা যোগ করে ও ধরে নিল, ও সেই একই ঘরে এসেছে, এবং সেই ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সত্যিই একটি জলজ্যান্ত মানুষ।

তারপর যা হওয়ার তাই হল। ছুটে গিয়ে ওই মূর্তিটাকে ধাক্কা দিতেই ও পলকা প্লাইয়ের বাঁধন ছাড়িয়ে শূন্যে পা দিল।

ও যদি অন্ধকার ঘরে একটু ঘুরে-ফিরে দেখত, তা হলে বুঝত—ওই খাট, টেলিফোন ছাড়া আর কোনও ফার্নিচারই ঘরে নেই। আর ঘড়ির কাঁটার জায়গায় রয়েছে লুমিনাস পেইন্ট দিয়ে আঁকা দুটো সরলরেখা। অন্ধকারে জ্বলজ্বল করায় রেডিয়াম দেওয়া ঘড়ি বলে ভুল হয়। কিন্তু টেপরেকর্ডারের বারোটা বাজার ঘণ্টা, আর দেওয়ালের বারোটা পাঁচের লুমিনাস পেইন্টের দাগ দেখে ও ধরে নিল ওটা সত্যিই একটা দেওয়াল-ঘড়ি।

সুতরাং আপনারাই বলুন, এইরকম একটা বুদ্ধিদীপ্ত সাইকোজিক্যাল মার্ডার আমি ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব?

তবে মহিনকে একটা সূত্র দিয়েছিলাম লিফটের বোতাম টেপার সময়। আমার ফ্ল্যাট যদি চারতলায় হয়, তবে আমাকে তিন নম্বর বোতাম টিপতে হবে। কিন্তু মহিন বোঝেনি, চার নম্বর বোতাম টেপার পর যে-তলায় গিয়ে লিফট থেমেছে, সেটা আমার ফ্ল্যাট নয়। সেটা পাঁচতলার সেই অসম্পূর্ণ মরণ-ফ্ল্যাট। কিন্তু সেই অসম্পূর্ণ দরজায় লাগিয়ে দিলাম প্লাস্টিকের ১২ নম্বর ও একটা কলিংবেলের ক্যাপ—কারণ, ডিটেলের প্রতি আমি গভীর মনোযোগ দিই।

অতএব মনে রাখবেন বন্ধুগণ, প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম ‘শার্প’ দেবনাথ। এই কিলিং মার্কেটে যিনি মনোপলি বিজনেস করে চলেছেন। সুতরাং তার সঙ্গে দুশমনির কথা ভুলেও মনে আনবেন না। তা হলে আপনাদেরও অবস্থা হবে ওই মহিন রায়ের মতো। কাউকে মোক্ষলাভ করানোর পর আমি মনে-মনে ভীষণ দুঃখ পাই, বিশ্বাস করুন। কিন্তু কী করব, আমি নিরুপায়। আফটার অল, আই অ্যাম দ্য কিং অফ প্রফেশনাল কিলার্স। দ্য গ্রেট ‘শার্প’। সুতরাং—।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *