০৩. হ্যাঁ, আমি নন্দিন

হ্যাঁ, আমি নন্দিন

লেদু একটা ট্যাক্সি এনেছিল। এক বস্ত্রে চিন্ময়ী আর হিরণ বেরিয়ে পড়ল। যে গামছাটা দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিচ্ছিল চিনু, সেটা সেই থেকে ওর কাঁধেই থেকে গেছে। কী না ভেবে যে লেদু সেটা শক্ত করে কোমরে বেঁধে নেয়!

২৭ এপ্রিল। রাত এখন ১টা হবে। তার মানে মার্সেদে এখন, আজই, বেলা ১টা কি দেড়টা। ওরা কমবেশি ১২ ঘণ্টা পিছিয়ে। উত্তরায়ণ-দক্ষিণায়নের জন্যে আধঘণ্টা এদিক-ওদিক হয়। মার্সেদের সময়ের হাড়হদ্দ হিরণের জানা। নন্দিনকে শেষ ফোন করল এই তো সেদিন, ১২ এপ্রিল। ভবানীপুরে চিনুর দাদার বাড়িতে গিয়ে সন্ধেবেলা কল বুক করে টোকেন নম্বর হাতে বসে থাকা। সময় দেওয়া হয়েছিল এখানকার রাত ৯টা। উপলব্ধিতে পাওয়া মুশকিল, তবু ওখানে তখন, সেদিনই কমবেশি সকাল ৯টা হতে বাধ্য।

এ-বছর ফেব্রুয়ারির গোড়ায়, সুমিতা ফিরে গেল। এয়ারপোর্টের মাইক্রোফোন-সিস্টেমে ফ্লাইট নং থ্রি-ও-থ্রির প্যাসেঞ্জারদের ডাকছে এমন সময় ভ্রাতবধর হ্যান্ডব্যাগে, আর সবাইকেলকিয়ে, টুক করে একটা ছোট্ট বাক্স ফেলে দিয়েছিল হিরণ।

আংটি একটা। অপরাধীর হাসি হেসে বলেছিল, জন্মদিনে নন্দিনকে দিও।

প্যাসেঞ্জার্স অফ ফ্লাইট নাম্বার থ্রি-ও-থ্রি আর বিয়িং রিকোয়েস্টেড টু রিপোর্ট ফর চেকিং ইমিডিয়েটলি এই মাইক্রোফোন-ঘোষণার নিচে আন্ডারলাইন টানার মতো ঘোষণাটির সঙ্গে সঙ্গে ট্রলি ঠেলে এগিয়ে যেতে যেতে সুমিতা বলে যায়, “বাবা, আর কত কী দেবেন মেয়েকে। বিয়ের তত্ত্ব পাঠাচ্ছেন যে… বলে সেট্রলির ওপর ঢাউস স্কাইব্যাগ দুটির দিকে সহাস্য ইঙ্গিত করে, যার মধ্যে সত্যিই প্রায় সবই নন্দিনের জিনিস। জামাকাপড়ের কথা বাদ দিলেও, আমসত্ত্ব থেকে সন্দেশ, মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে ভাজামৌরি থেকে বই-রেকর্ড-ক্যাসেট—কী যে নেই ওতে। শুধু একটা ক্যাসেটের কথাই ধরা যাক। সুচিত্রা মিত্রের বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি। সে আর নন্দিন দুজনে গত বইমেলায় দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোনে গানটি শুনেছিল। না ক্যাসেট, না রেকর্ড—কোথাও গানটি পাওয়া গেল না। অথচ, শুনেছে। বইমেলায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে গানটি আগাগোড়া শুনেছিল নন্দিন। দাঁড় করিয়ে রেখেছিল হিরণকেও। গান শেষ হলে একটি কথা না বলে, কী অপূর্ব, না বাবা?— চোখে তাকিয়ে ছিল হিরণের দিকে। তাই, খোঁজ, খোঁজ। নন্দিনের জন্য সুমিতার হাতে পাঠাতে হবে ক্যাসেটটা। একটা পুরো দিন লেগেছিল একলা চল রে নামে আসোর্টেড ক্যাসেটে গানটি আছে এই তথ্য সংগ্রহ করতে ও ক্যাসেটটি কিনতে। খুব ছোটবেলায়, বছর-দেড়েকের তখন নন্দিন। নন্দিন তো নয়, তখন শুধু নিনি। তখনও নামকরণ হয়নি। বেবি ফুডের খুব ক্রাইসিস চলছে, অথচ বাড়িতে আছে আর কচামচ– আজকের দিনটা কোনওমতে চলবে। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে, আর যার হাতেই দেখেছে ফুডের টিন— দাদা, কোথায় পেলেন?জানতে চেয়ে দোকানের নাম শুনেই সেখানে ছুটে গেছে তা সে বাগরি হোক, রাধাবাজার হোক, বড়বাজার হোক— লিটারালি ছুটতে ছুটতেই গেছে, এবং কোথাও পায়নি। শেষ সংবাদসূত্র ধরে মনোহর কাটরার পানবাজার বলে একটি বাড়ির বিশাল ছাদে সিঁড়ি-উপসিঁড়ি ধরে শেষ পর্যন্ত অকুস্থলে পৌঁছে তা বেশ কয়েকশো পানের ঝুড়ির একপ্রান্তে একটি টেবিল-চেয়ার ও পাশে গুনে দেখে ঠিক পঞ্চাশটা ল্যাকটোজেন–কৌটো (তখনও বিল কাটা শুরু হয়নি), সে শেষ থেকে লাইনের লোকগণনা শুরু করে ও সাতচল্লিশ পেয়েই দৌড়ে লাইন দিতে যেতে-যেতেই আরও তিনজন দাঁড়িয়ে যায়। ওঃ, ক্যাসেট-জোগাড়ের মতো সে এমনি আর একটা সারাদিন নন্দিনের, না-না, নিনির জন্যে কেটেছিল বটে।

সেদিন বেহালায় গিয়ে বন্ধু সত্যেনের বৌ-এর কাছ থেকে একদিনের মতো ফুড ধার করে বহুরাত্রে বাড়ি ফিরেছিল। এবার তো তবু দিনের শেষে পেয়ে গিয়েছিল ক্যাসেটটা।

শ্যালক কল্যাণের বাড়িতে, নন্দিনের প্রথম বিদেশি জন্মদিনে রাত সাড়ে নটায় কানেকশন পাওয়া গেল। হ্যালো, টোকেন এস-এক্স টেন, উই আর ট্রায়িং দ্য ইউ, এস. এ. লাইন, প্লিজ, হোল্ড অন… পিপ-পিপ-পিপ-পিপ… হ্যালো নদা… পিপ-পিপ-পিপ-পিপ তারপর বোধহয় তো অ্যাটল্যান্টিকেরই হাওয়া ঢুকে পড়ল লাইনে। শুধু সাঁই সাঁই শব্দ।  

হ্যালো, নদা, হ্যাঁ, এখন এখানে সকাল ৯টা নন্দিন একটু আগে উঠেছে। চা করছে। হ্যাপি বার্থ ডে ফ্রম ড্যাড বলে প্রথমেই আপনার আংটিটা দিয়েছি। হ্যাল্লো…হা শুনতে পাচ্ছেন… খুব পছন্দ! তবে রিং ফিঙ্গারে হয়নি। একটু ছোট হয়েছে। মোটা হয়ে গেছে তো বেশ। আচ্ছা, পাথরটা কি চুনী? কৌটোর ডালা খুলে একদম কেঁদেই দিল। কিছু শুনতে পাচ্ছেন?

না, কী শুনব?

এটা একটা কার্ড। মাউথ-পিসের কাছে ধরে আছি। খুললেই হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ-এর সুর বাজে। শুনতে পাচ্ছেন না? ওর এক কালো বন্ধু, নাম ক্লারা, দিয়েছে। ষোলটা কার্ড পেয়েছে। ওর কলেজের বন্ধুরা এখুনি এসে পড়বে। সারাদিনের জন্যে নিয়ে যাবে। মারিপোজে বলে একটা সুন্দর শহরে ওরা যাবে। লাঞ্চ করবে। আমরা সন্ধেবেলা ওকে নিয়ে বেরোব। নিন, মেয়ের সঙ্গে কথা বলুন…

নন্দিন ডালা খুলে কেন কেঁদে ফেলেছিল তা শুধহিরণেরই জানারকথা। ডালার লাল ভেলভেটের ওপর একটা ছোট সাদা কাগজ পিন দিয়ে আটকে দিয়েছিল সে, যাতে মেয়ের নাম নেই, শুধু লেখা: সোনার চেয়ে দামিকে। অন্য ডালায় আংটির সোনা! পড়েই ও কেঁদেছে নিশ্চয়। ভাষা কাঁদিয়েছে। কেঁদেছে, কাঁদুক। কাঁদাবার জন্যই তো লেখা। কাঁদা ভাল রে নন্দিন। অস্তিত্বের স্নান হয়।

মিনিটে ৩০ টাকা। শ্যালক কল্যাণ তিন আঙুল দেখিয়েছে। মানে তিন মিনিট হয়ে গেল। সবাই কথা বলবে।

হিরণ, কীরে কেমন আছিস? জানতে চাওয়া মাত্র অতলান্তিকের ওপার থেকে অস্তিত্বের স্নানশব্দ! সে নে মায়ের সঙ্গে কথা বল বলে তাড়াতাড়ি রিসিভারটা চিনুর হাতে তুলে দেয়। চিন হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফোনের ওপর। কীরে নন্দিন, কেমন আছিস, নন্দিন…নন্দিন…কীরে কাঁদছিস কেন এ ছাড়া সে কিছু বলতেই পারছেনা দেখে, একরকম কেড়ে নিয়েই সে রিসিভারটা শ্যালকের হাতে তুলে দেয়।

 

বেকার রোড দিয়ে তোড় বৃষ্টির মধ্যে ট্যাক্সি চলেছে পা টিপে। ওয়াইপার কাজ করছে না। কোমরের গামছা খুলে ফেলে লেদু মাঝে মাঝে কাচ মুছে দিচ্ছে।

তাহলে লেদু, এত বলে ভবানীভবন থেকে ন্যাশনাল লাইব্রেরি পর্যন্ত আর কিছু না বলে, তারপর হিরণ জানতে চাইল, তাহলে লেদু তুই আমাকে যা বলেছিস সেটাই কী সব?

নিস্তব্ধতা। লেদু নিরুত্তর।

জু পেরিয়ে ট্যাক্সি পোলে ওঠার জন্যে গিয়ার বদলাচ্ছে। হিরণ বেশ স্পষ্ট ভাষায় এতক্ষণ পরে শেষ করল বাক্যটি, নাকি, তোর আরও কিছু বলার আছে?

এ যাবৎ বাড়িতে হিরণকে একান্তে ডেকে লেদু যা জানিয়েছে এবং যে বিষয়ে জ্ঞাত হওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করার সাহস চিনুর এখনও হয়নি, তা হল, একটা কার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। রঞ্জন ও সুমিতা, প্রথমে সে বলেছিল হাসপাতালে, পরে স্বীকার করেছে, মারা গেছে। সানফ্রান্সিসকো থেকে ভাইস কনসাল ফোন করে শুধু এটুকু জানিয়েছেন। আর কোনও খবর নেই। ওরা আবার ফোন করবে বলেছে।

কিন্তু, গাড়িতে আর কেউ ছিল কি? ওদের ছেলে দুটো জীয়ন আর অঞ্জন, বা, বা, নন্দিন? হিরণ এখন সেই দিকে ইঙ্গিত করছে।

বললাম তো তোমাকে, ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে পিছন ফিরে, প্রথমে চোখ নামিয়ে, তারপর উইন্ডস্ক্রিনের ভেতর দিয়ে ভিক্টোরিয়ার আবছা গম্বুজের দিকে ঘাড় শক্ত করে থেকে লেদু বলল, আমি এর বেশি কিছু জানি না।

সল্টলেকে পৌঁছে লেদুদের বাড়ি থেকে প্রথমেই মার্সেদে একটা আর্জেন্ট কল বুক করল হিরণ। রিসিভার রাখতে না রাখতে সঙ্গে সঙ্গে ফোন বেজে উঠল। এত তাড়াতাড়ি! না, তা নয়।

হ্যালো, থ্রি সেভেন টু সিক্স ডাবল ওয়ান?

ইয়েস। ইয়েস।

আ পি পি কল ফ্রম ইউ. এস. এ. ফর মিঃ হিরণ চ্যাটার্জি।

স্পিকিং প্লিজ।

প্লিজ, হোল্ড অন।

সেই পি-পি-পি-পি। অতলান্তিকের হু-হু হাওয়া। হাহাকার জটিল স্থান ও কালের দুস্তর ব্যবধানের।

ম্পিক হিয়ার প্লিজ।

হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো…

উত্তর নেই।

স্পিক হিয়ার প্লিজ। ইউ আর অন দ্য লাইন।

হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো

সাড়া নেই।

শুধু হাওয়ার হাহাকার। আছাড়।

প্লিজ হোল্ড অন। আই অ্যাম ট্রায়িং টু কানেক্ট।

হ্যালো…হ্যালো… পি-পি-পি-পি।

হঠাৎ, সময়ের সোঁ-সোঁ সাঁতরে, পৃথিবীর তিনভাগ জলের ওপার থেকে ভেসে এল নন্দিনের তীক্ষ্ণ চিৎকার, এবং, তাও মাত্র একটিবার।

হ্যালো, বাবা? পি-পি-পি-পি।

হ্যালো, কে নন্দিন? কথা বল!

উত্তর নেই।

হ্যাঁ। যা ভাবতে পারে না বলে ভাবতে চায়নি হিরণ, তবে তাই। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার হওয়ার সময় বেশ প্রাঞ্জলভাবেই তো বলেছিল লেদু, যখন হিরণ জানতে চেয়েছিল, রঞ্জন-সুমিতার মৃত্যু ছাড়া তার আরও কিছু বলার আছে কি না, যে, ওই তো বললাম তোমাকে। অর্থাৎ, যথেষ্ট বলেছি, আর কী বলব? এখন যা বোঝার বুঝে নাও হে ভ্রংশবৃদ্ধি, শেষ পর্যন্ত তোমার সর্বনাশ হলই, তমি আর ঠেকাতে পারলে না! ঘাড় শক্ত রেখে সে তাকিয়ে ছিল সামনের দিকে, যখন সে ওইনা-বলা কথাগুলো বলে। উইন্ডস্ক্রিনের ওপারে আদিম বৃষ্টিধারায় গা ধুয়ে তখন ঘোর অন্ধকারে ভেসে উঠছিল ভিক্টোরিয়ার সাদা গম্বুজ।

অ্যাক্সিডেন্টে মরলে মানুষ নাকি প্রেত হয়? হ্যাঁ, নিঃসন্দেহেনন্দিনের প্রেতাত্মাই ও-ভাবে কে বাবা? বলে চিৎকার করে উঠেছে, যা প্রকৃত প্রস্তাবে ছিল স্থান ও সময়ের শতশৃঙ্খল ভেঙে পড়ার খান খান শব্দ। আহা, একবারের বেশি সে পারেনি।

 

তার, নন্দিনের, প্রেতকণ্ঠ আরও কিছু বলবে কিনা শোনার জন্যে সে রিসিভারটা কানে চেপে রাখে। ভূমিকম্পের সময় যেমন মানুষ বুঝতে পারে না যে সে কাঁপছে না মাটি তাকে কাঁপাচ্ছে, সে-ভাবে, এখন তার সর্বাঙ্গ ঠকঠক করে কাঁপছে, বাহ্যত মেঝের ওপর সে অবশবর্তী হাই ফ্রিকোয়েন্সি অণু-লাফে লাফিয়েই চলেছে একটানা—এমনাবস্থাতে সে রিসিভারটি আঁকড়ে আছে অথবা রিসিভারটিই তাকে, তা নির্ণয় করা অসম্ভব।

ওই, অনেক স্তব্ধতা ভেঙে আবার ভেসে আসছে সময়ের সোঁ-সোঁ পেরিয়ে সেই সঙ্কেত-শব্দ পি-পি-পি-পি।

নিঃসন্দেহেনন্দিনের প্রেতকণ্ঠ আরও কিছু বলতে চায়। বাঁ-কান থেকে দ্রুত তুলে ডান কানে সে রিসিভারটি চেপে ধরে থাকে। তার হাতের কাঁপুনি সে যত থামাতে চেষ্টা করে তত বেড়ে যায়।

হ্যালো, বাবা।

কে, নন্দিন?

পি-পি-পি-পি…

হ্যালো, কে নন্দিন। কথা বল কথা বল রে।

হ্যাঁ, আমি নন্দিন।

তুই বেঁচে আছিস?

বাবা, তুমি শুনতে পাচ্ছ?”

খুব ভাল শুনতে পাচ্ছি। তুই কথা বল। বলে যা। কী হয়েছে?

শোনো বাবা। সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার হয়েছে। ছোট কাকা, কাকিমা আর জীয়ন স্পট ডেড। কার অ্যাক্সিডেন্ট। কাল রাত ১০টার সময়। এখান থেকে ৩০ মাইল দূরে। মডেরা শহরের মুখে। বাবা, শুনতে পাচ্ছ?

ওঃ। ইউ ফুল, হিরণ চিৎকার করে উঠল, তুই বলে যা। অঞ্জন কোথায়?

আমরা ওদের সঙ্গে যাইনি। বাড়িতে ছিলাম। ওরা এল-এ থেকে ফিরছিল। পিছন থেকে একটা পিক-আপ ভ্যান ধাক্কা মারে। ড্রাইভার ড্রাঙ্ক ছিল।

অঞ্জনকে ডাক।

ও ঘুমচ্ছে।

ওকে ডাক! হিরণ এবার সেই ভাবে চিৎকার করে ওঠে যা ফোন-বিনাই অতলান্তিক পেরিয়ে পৌঁছতে চায় নন্দিনের কাছে।

হিরণ জানতে চায়, বেঁচে আছে কিনা অঞ্জন। প্রমাণ চায়।

অঞ্জন এসে বোবা গলায় আঁ-আঁ-আঁ করল কয়েকবার। তারপর কোনওমতে জেঠু, প্লিজ, কাম হিয়ার, অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল বলে নন্দিনের হাতে ফোন তুলে দিল।

বাবা, তুমি আমাদের অবস্থা বুঝতে পারছ?

হ্যালো, ক্যালকাটা, ডু ইউ ওয়ান্ট টু কন্টিনিউ?

ইয়েস প্লিজ। আই ডু। প্লিজ, ডোন্ট ডিসকানেক্ট…

তুমি আমাদের অবস্থা বুঝতে পারছ বাবা! আমি ঠকঠক করে কাঁপছি। এরপর ওদের বডি আসবে। এখানে আমরা শুধু দুজন। আমরা কী করব বাবা? বাবা, আমরা কী করব?

লাইন কেটে গেল।

তোরা সাবধানে থাক। ভালভাবে থাক। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি যাচ্ছি। সম্ভব হলে নেকস্ট ফ্লাইটেই। তোরা, ততক্ষণ, বেঁচে থাক।

হিরণ তখনও বলে যাচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *