অধ্যায় ১৪: সেপ্টেম্বর – অক্টোবর

অধ্যায় ১৪: সেপ্টেম্বর – অক্টোবর

সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ মুক্তিসংগ্রামের রণনৈতিক নীতির আন্তর্জাতিক দিক অত্যন্ত আশাব্যঞ্জকভাবে সংগঠিত হয়ে উঠলেও এই নীতির জাতীয় দিক, তথা, মুক্তিযোদ্ধা এবং নিয়মিত বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতার মাধ্যমে দখলদার সৈন্যদের দুর্বল ও পরিশ্রান্ত করার লক্ষ্য তখনও অনায়ত্ত। সীমান্তে বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনী তখনও বিশেষ সক্রিয় নয়। আর জুলাইয়ের শেষ থেকে দেশের ভিতরে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতার যে অধোগতি শুরু হয়, তা রোধ করার মত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থাদি গৃহীত হয়নি। দেশের ভিতরে রাজনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণ, গেরিলা যুদ্ধের বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী গ্রহণ, কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের কমান্ডকাঠামো গঠন এবং নিয়মিত সরবরাহ ও যোগাযোগ সুনিশ্চিতকরণ ব্যতীত পরিস্থিতির উন্নতিসাধন যে অত্যন্ত দুরূহ, আগস্ট থেকেই তা সবিশেষ স্পষ্ট। অথচ মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ক্রমাগত বৃদ্ধির মাধ্যমে দখলদার সেনাদের ক্ষতিগ্রস্ত ও যুদ্ধ-পরিশ্রান্ত করে তোলা না গেলে কেবলমাত্র ভারতীয় বাহিনীর নিয়োগ বাংলাদেশের দ্রুত ও চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য যথেষ্ট হত না।

দখলদার সৈন্যদের পরাভূত করার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা কতখানি গুরুত্বের ছিল তা ভারতের সামরিক পরিকল্পনার বিবর্তন থেকেও অনুধাবন করা সম্ভব। যে কোন কল্পিত বা সম্ভাব্য বহির্বিপদ মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সব দেশের সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। পরিবর্তনমান আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে কল্পিত বিপদের হ্রাস বৃদ্ধি সঠিকভাবে পরিমাপ করা এবং তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সম্পদ সদ্ব্যবহারের চিন্তাই সামরিক পরিকল্পনার মুখ্য বিষয়। পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিকল্পনারও সময়োচিত পরিবর্তন করতে হয় বলে সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়ন একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। মার্চের শেষে আক্রান্ত মানুষের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করার পর বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ভারতে প্রবেশ শুরু করলে এর অন্তর্নিহিত সামরিক ঝুঁকি বিবেচনা করে মে মাস থেকেই ভারতের সামরিক কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা শুরু করেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইন্দিরা গান্ধী তাজউদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তার প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপনের পর সঙ্গতভাবেই অনুমান করা যায় যে এই লক্ষ্য অর্জনও নির্মীয়মাণ ভারতীয় পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হয়।

‘পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত’-এ রকম একটা সামরিক যুক্তি পাকিস্তানী শাসকেরা বরাবর প্রায়ই প্রচার করতেন। সম্ভবত এই কারণে ১৯৬৯ সালের আগে পূর্বাঞ্চলে মোতয়েন তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল অনুর্ধ এক ডিভিশন। এমনকি ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ১৯৬৮-৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী গণআন্দোলনের তীব্রতা দুষ্টে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্ন যখন হঠাৎ বড় হয়ে ওঠে, একমাত্র তখনই ঢাকার স্বতন্ত্র ‘কোর কমান্ড’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবশ্য কার্যক্ষেত্রে নবগঠিত ইস্টার্ন কমান্ডের জন্য ১৯৭১ সালের জানুয়ারী অবধি চার ব্রিগেডের মত সৈন্য (Division plus) মোতায়েন রাখা হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কোন আক্রমণের আশঙ্কা না থাকায় ভারতও বরাবরই এই এলাকায় প্রায় সমসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন রাখত। এর কিছু মোতায়েন থাকত কোলকাতার নিরাপত্তার জন্য এবং ১৯৬২ সালের পর থেকে, বেশীরভাগই থাকত ঠাকুরগাঁও ও সিকিম-পশ্চিম ভুটানের মাঝখানের সঙ্কীর্ণ ভূখণ্ড প্রতিরক্ষার জন্য। ‘Siliguri Corridor’ নামে পরিচিত এই ভূখণ্ডের কাছে চীন খুব তাড়াতাড়ি সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে সক্ষম। মাত্র ৩০ কিলোমিটার প্রশস্ত এই সঙ্কীর্ণ এলাকা পতনের ফলে আসামসহ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের প্রধান ভূখণ্ডের যোগাযোগ ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান থাকায় এর সামরিক গুরুত্ব বরাবরই বেশী। অবশ্য ১৯৭১ সালের মার্চে নক্সালপন্থী আন্দোলন দমন এবং সাধারণ নির্বাচনকালীন আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে পশ্চিমবঙ্গে তিন ডিভিশন সৈন্য সর্বত্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিস্তৃত করে রাখা হয়েছিল।

পাকিস্তানের সামরিক আক্রমণের মুখে কেবল এপ্রিল ও মে এই দু’মাসেই যখন ৪৩ লক্ষ লোক ভারতে প্রবেশ করে, তখন মে-জুন মাসে দিল্লীর সামরিক সদর দফতরে Director of Military Operations লে. জেনারেল কে. কে. সিং-এর তত্ত্বাবধানে সামরিক পরিকল্পনা তৈরী শুরু হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী উপদ্রুত অঞ্চলে পাকিস্তানের তিন/চার ডিভিশন সৈন্যের বিরুদ্ধে ভারতের অন্যূন ছয়/সাত ডিভিশন সৈন্যের প্রয়োজন স্বীকৃত হয়, যদিও প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত একজন সৈন্যের বিরুদ্ধে আক্রমণকারী সৈন্য সংখ্যা তিন হওয়া উচিত। স্পষ্টতই বাংলাদেশের বিদ্রোহজনিত পরিস্থিতি এবং বিদ্রোহী বাহিনীর সমর্থন বাবদ কিছু সুবিধা ভারতের অনুকূলে হিসাব করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতের পক্ষে বাংলাদেশ সীমান্তে এই ছয়/সাত ডিভিশন সৈন্য জড়ো করার জন্য ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে কোন সৈন্য সরিয়ে আনার কোন উপায় ছিল না। সম্ভাব্য যুদ্ধে পাকিস্তান পশ্চিমাঞ্চলকেই যে প্রধান রণাঙ্গনে পরিণত করবে ভারতের এমন আশঙ্কা যুক্তিসঙ্গত ছিল। উত্তর সীমান্তে চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন ভারতের আটনিয় ডিভিশন সৈন্য থেকে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সৈন্যের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব ছিল একমাত্র শীতকালে, যখন তুষারপাতে উত্তরের অধিকাংশ গিরিপথ বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই পরবর্তী শীতকালের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্য সংগ্রহ সম্ভব নয়, এই অনুমানের ভিত্তিতেই ভারতের সামরিক পরিকল্পনা গড়ে ওঠে। জুলাইয়ের প্রথমদিকে অর্থাৎ সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষরিত হবার প্রায় এক মাস আগে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পন্ন হয় বলে জানা যায়।

সংক্ষেপে এই ভারতীয় রণপরিকল্পনার মূল কাঠামো ছিল: (ক) দক্ষিণে দুই প্রধান সমুদ্রবন্দরের প্রবেশ পথে নৌঅবরোধ সৃষ্টি করে পাকিস্তানের সমস্ত সরবরাহ বন্ধ করা এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের পশ্চাদপসারণের পথ বন্ধ করে তাদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আতঙ্ক সৃষ্টি করা; (খ) বিমানবন্দর, বড় বড় সেতু, ফেরী সংযোগ পথ ইত্যাদি দখল/বিনষ্ট করে বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যদের একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা; (গ) বিভিন্ন যোগাযোগ কেন্দ্র দখল করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ যোগাযোগবিহীন করে আরও টুকরো টুকরো এবং নিষ্ক্রিয় করে ফেলা; এবং (ঘ) এই পন্থায় পাকিস্তানের অধিকাংশ সৈন্য পরাভূত করার পর ঢাকার উদ্দেশে দ্রুত অভিযান শুরু করা। ঢাকার দিকে দ্রুত অভিযান শুরুই ভারতীয় বাহিনীর মূল লক্ষ্য বলে বর্ণনা করা হলেও এই পরিকল্পনায় পরিষ্কারভাবে স্বীকার করা হয় যে, বরাদ্দকৃত তিন সপ্তাহের মধ্যে (অর্থাৎ বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা কার্যকর হওয়ার পূর্বেই) ঢাকাকে মুক্ত করা ভারতীয় ছয়/সাত ডিভিশন সৈন্যের পক্ষে সম্ভব নয়। কে, কে, সিং-এর অভিমত ছিল, যেহেতু এই সৈন্যবল ও সময়-সীমার মাঝে ঢাকা দখল ভারতীয় বাহিনীর সাধ্যের বাইরে, সেহেতু গোটা বাংলাদেশের পরিবর্তে এর বড় কিছু অংশ মুক্ত করার লক্ষ্যেই বরং তাদের সামরিক শক্তি পরিচালিত হওয়া উচিত।

কে. কে. সিং-এর এই অভিমত অনুযায়ী ভারতের সৈন্য সমাবেশ ক্ষমতা এবং বাংলাদেশের বিজয় সুনিশ্চিত করার মধ্যে যে ব্যবধান (gap) ছিল, তা পূরণ করা সম্ভব হয় একমাত্র মুক্তিবাহিনীর সাহায্যেই। দেশের ভিতরে ও সীমান্তে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যদি দখলদার বাহিনীকে নানা উপায়ে বিঘ্নিত, ক্ষতিগ্রস্ত, এবং অবশেষে যুদ্ধপরিশ্রান্ত করে তোলা যায়, তবেই একমাত্র ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে দ্রুত ও সর্বাত্মক বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। পাকিস্তানী অবস্থানকে দুর্বল করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধিই ছিল তাই মুক্তিযুদ্ধের রণনৈতিক আয়োজনের জাতীয় দিক। বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র রণনৈতিক আয়োজনের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উভয় উপাদানই ছিল প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং একে অপরের পরিপূরক।

সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়া এবং প্রশিক্ষণ ব্যাপকতর হওয়ার ফলে মুক্তিযুদ্ধকে দ্রুত সম্প্রসারিত করার এক অসামান্য সুযোগ ঘটে। কিন্তু পূর্বে বর্ণিত উপদলীয় বিরোধ ও সংঘাতের ফলে সমগ্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে যে, দেশের ভিতরে মুক্তিসংগ্রামের রাজনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কমান্ডকাঠামো গঠনে সামান্য অগ্রগতিই সম্ভব হয়। মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটের ব্যাপারে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ও পেশাদারী মাপকাঠি গ্রহণের আবশ্যকতা উত্তরোত্তর স্বীকৃতি লাভ করলেও বাস্তবক্ষেত্রে অবস্থা প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। কাজেই কোন কমান্ডব্যবস্থা ছাড়াই ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ, সক্ষম-অক্ষম সব মিলিয়েই তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের আয়তন দ্রুত স্ফীত হতে শুরু করে। এর ফলে এদের মধ্যে সামাজিক পুনর্গঠন এবং সামাজিক অরাজকতা উভয় ধরনের শক্তিরই পাশাপাশি বিকাশ ঘটতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগের (induction) ব্যাপারে নিয়মিত বাহিনীর সেক্টর অধিনায়কদের দায়িত্ব ছিল মূলত আনুষ্ঠানিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশে প্রবেশের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সেক্টর সংগঠনের যোগাযোগ হত ছিন্ন। অনেক ক্ষেত্রে অসংগঠিত ও প্রতিকূল অবস্থার মুখে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর চেষ্টা করত।

জুন-জুলাই-আগস্টে অর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের পক্ষে এই উপলব্ধিতে আসা সম্ভব হয় যে, রাজনৈতিক অবকাঠামো, কমান্ডব্যবস্থা এবং তৎপরতার সুপরিকল্পিত কর্মসূচী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য অংশকে, বড় জোর এক পঞ্চমাংশকে, আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে। সশস্ত্র তৎপরতার পক্ষে অনুপযোগী এই চার-পঞ্চমাংশের ক্ষতিকর প্রভাব যথাসম্ভব হ্রাস করার জন্য স্ক্রীনিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার পক্ষে অভিমত জোরদার হতে থাকে। কিন্তু সম্ভবত নিয়মিত বাহিনীর সম্প্রসারণ প্রভৃতি বিষয়ে ব্যস্ততার দরুন, বাংলাদেশের উর্ধতন সামরিক নেতৃত্বকে এই সব সমস্যার সমাধানে বিশেষ উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যে চিন্তাভাবনা ও উদ্যোগ ছিল, তাও আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ বিরোধের ফলে সামান্যই কার্যকর হয়। ফলে সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি মাসে কুড়ি হাজার করে নতুন মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ নেতৃত্ব উৎসাহ প্রকাশ করলেও কার্যক্ষেত্রে এদেরকে সদ্ব্যবহার করার আয়োজন অসংগঠিত থাকে।

অথচ অন্যদিকে ভারত যখন উত্তরোত্তর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ ভিন্ন শরণার্থী সমস্যার কোন সত্যিকারের সমাধান নেই, তখন ভারতের পরিবর্তনমান সমর পরিকল্পনার প্রয়োজন অনুসারে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। তদনুসারে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে তাদের পূর্বেকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর হয়, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারদের মাধ্যমে নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের দেশে পাঠানো শুরু হয়। দেশের ভিতরে মুক্তিযুদ্ধের উপযোগী কোন রাজনৈতিক সংগঠন থাকুক অথবা না-ই থাকুক, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করার মত কোন কমান্ডব্যবস্থা তৈরী হোক বা না-ই হোক, সে সবের প্রতি দৃকপাত না করে কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাবৃদ্ধির উপরেই জোর দেওয়া হয়। এর ফলাফল সর্বত্র শুভ হয়নি।

শক্তিক্ষয় ও দখলদার সৈন্যদের যুদ্ধ-পরিশ্রান্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রয়োজন নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু যথোপযুক্ত রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং, পরিকল্পনা ও কমান্ডব্যবস্থার অধীনে অল্প

সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল, বাস্তব ক্ষেত্রে একই ফল সঞ্চারের জন্য তার চাইতে অনেক বেশী মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগ করতে হয়; কেননা রিক্রুটমেন্ট থেকে কমান্ড গঠন পর্যন্ত সর্ববিষয়েই অসন্তোষজনক অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাবৃদ্ধির মাধ্যমে পাক সৈন্যদের দুর্বল ও পরিশ্রান্ত করে চূড়ান্ত বিজয়ের পথ প্রশস্ত করা হয় বটে, কিন্তু এর ফলে প্রত্যাশিত স্বাধীনতার পর সামাজিক অস্থিরতার শক্তিও প্রবল হয়ে ওঠে। অতিশয় সীমিত সময়ের মধ্যে ফলোৎপাদনে বাধ্য কোন পেশাদার সামরিক নেতৃত্বের পক্ষে সামাজিক ভারসাম্যের এইসব সূক্ষ্ম যুক্তির প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার মত কোন অবকাশ ছিল না।

একই সময়ে শত্রুকে শ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীকেও সীমান্তসংঘর্ষে সক্রিয় করে তোলার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। জুন-জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, দেশের ভিতরে সশস্ত্র তৎপরতার পাশাপাশি সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু করার প্রচেষ্টা চলে, যাতে (১) ভিতরে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা হয়; এবং (২) পাকিস্তানী বাহিনী দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর বিস্তৃত হয়ে পড়ার ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। আসন্ন শীতকালে বৃহত্তর অভিযানের চিন্তা সম্মুখে রেখে, পাকিস্তানকে এমনি খণ্ড খণ্ডভাবে সীমান্ত বরাবর বিস্তৃত করার জন্য সীমান্ত সংঘর্ষকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু পূর্ব আলোচিত কারণে বাংলাদেশে সেক্টর অধিনায়কদের তৎপরতার মান প্রধান সেনাপতি ওসমানীরও গভীর নৈরাশ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সেক্টর অধিনায়কদের মধ্যে যারা সীমান্তে পাকিস্তানী অবস্থানের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালানোর পক্ষে উদ্যোগী ছিলেন, তারাও এমন কিছু মৌলিক সমস্যার সম্মুখীন হন যেগুলির কোন সমাধান তাদের জানা ছিল না। যেমন, নিয়মিত বাহিনীকে প্রায় শেষ অবধি ভারতের ভূখণ্ড থেকেই তৎপরতা চালাতে হয়; তা ছাড়া, নিয়মিত বাহিনীর নিজস্ব কোন সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থা (Logistics) না থাকায় এবং আক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময় গোলন্দাজ সহায়তা অত্যাবশ্যক বিবেচিত হওয়ায়, সীমান্ত তৎপরতার জন্য অনেক সময়েই তাদেরকে ভারতের সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হত। এ ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতার যে অভাব ঘটত তা নয়, কিন্তু তা পাওয়া যেত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডের নিরাপত্তা, তাদের জনপদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের উপর পাকিস্তানী গোলন্দাজ প্রতি-আক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনা করার পর। এতেও হয়ত অসুবিধা হত না, যদি কোন নির্দিষ্ট স্থানে তৎপরতা চালাবার প্রয়োজন এবং প্রতি-আক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশ সেক্টর ইউনিট ও ভারতীয় ফরমেশনের পর্যায়ে মিলিত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসার কোন নিয়মিত ব্যবস্থা থাকত।

বস্তুত আগস্ট অবধি বিডিএফ (Bangladesh Forces) সদর দফতর সীমান্ত তৎপরতার বিষয়ে সেক্টর বাহিনীকে সাধারণত কোন নির্দিষ্ট নির্দেশ দিতেন না। সীমান্ত তৎপরতা কার্যত সেক্টর অধিনায়কদের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ঐ সময় অবধি সেক্টর তৎপরতা ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় দাঁড়ায়। জুলাইয়ের শেষ দিকে ভারতের ‘ইস্টার্ন কমান্ড’-এর ডিরেক্টর’অপারেশনস-এর দায়িত্ব নেওয়ার পর মেজর জেনারেল বি. এন. সরকার বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করার জন্য বিশেষভাবে নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন পরিকল্পনায় বিরাজমান শূন্যতা দুষ্টে তিনি আগস্টের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রত্যেক মাসের জন্য তৎপরতা-টার্গেটের তালিকা তৈরী করতেন এবং প্রস্তাবাকারে তার এক কপি পাঠাতেন ওসমানীর মাধ্যমে সেক্টর অধিনায়কদের কাছে এবং অন্য কপি ভারতের সংশ্লিষ্ট ফরমেশন কমান্ডারদের কাছে। উদ্দেশ্য ছিল এগুলি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সেক্টরকে আগ্রহী করে তোলা এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য ভারতীয় ফরমেশন কমান্ডারদের অবহিত রাখা। আগস্ট থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতি মাসের টার্গেট পরিকল্পনার কাজ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। প্রস্তাবিত এই সব তৎপরতার টার্গেটকে যথাযথ আক্রমণ পরিকল্পনায় পরিণত করার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ সেক্টর নেতৃত্বের এবং অনুমান করা হত এ ব্যাপারে ভারতীয় ফরমেশন নেতৃত্বের সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে, বিশেষত সেপ্টেম্বরে, ভারতীয় সহযোগিতার ভিত্তিতে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়নের পক্ষে সেক্টর অধিনায়কদের প্রতি না-ছিল বাংলাদেশ হেডকোয়ার্টারের কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ, না-ছিল অনুকূল আবহাওয়া।

প্রায় আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের কৃচ্ছতা এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানে গড়িমসির ফলে ভারতের প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অনেকের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস ভালভাবেই দানা বেঁধেছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অধীনস্থ থাকার কালে ভারত সম্পর্কে যে মতবাদ বদ্ধমূল হয়ে তোলা হয়েছিল (indoctrination), অনেকের মধ্যে তাও পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে, ভারতীয় ফরমেশনের অপেক্ষাকৃত পদস্থ অফিসারদের মধ্যে কারো কারো পদমর্যাদা-সচেতন পেশাদারী আচরণ, বিদ্রোহী তরুণ অফিসারদের আবেগপূর্ণ মানসিকতা উপলব্ধিতে অক্ষমতা, উর্দু ভাষার উপর বীতশ্রদ্ধ বাংলাদেশ সৈন্যদের সঙ্গে যথেচ্ছ হিন্দী ভাষা ব্যবহার ইত্যাকার আচরণ এবং অক্ষমতায় সম্পর্কের আবহাওয়াকে আরও খারাপ করে তোলে। এইরূপ আবহাওয়ার মাঝে এবং বিডিএফ সদর দফতরের সুস্পষ্ট নির্দেশের অনুপস্থিতিতে সেক্টর-নেতৃত্ব ভারতীয় ফরমেশনের সঙ্গে যথোপযুক্ত আলোচনা না করেই কিছু কিছু আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকে। ফলে সেপ্টেম্বরে বিশেষত পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত বাহিনী যেখানে সক্রিয় ছিল, সেখান থেকে তাদের তৎপরতা সম্পর্কে সাফল্য অপেক্ষা ক্ষয়ক্ষতি বিপর্যয়ের সংবাদই বেশী আসতে থাকে।

৮ থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বরে এই সব অঞ্চল সফর করার পর বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য সচিব ড. টি. হোসেন এ সম্পর্কে যে সংক্ষিপ্ত অথচ বাস্তবধর্মী রিপোর্ট মন্ত্রিসভার কাছে পেশ করেন এ প্রসঙ্গে তা উদ্ধৃতির যোগ্য:

“I have witnessed two operations, one at Baranpunji and one at Balat. The complains are the same. Our boys were not given adequate artillery cover. Indian artillery is inferior (if the range of Pak artillery is 5 miles, Indian artillery goes upto 3 miles). I do not know how far this is true but the complains were uniform everywhere. The Indian sides were found unprepared both at Baranpunji, where Pak army actually entered Indian territory and encircled our boys 3 miles inside, and at balas. Indian response was late by 24 hours.

“At Melaghar our casualty is enormous and mostly due to inadequate supply of ammunition.

“The borders are effectively sealed by Pak army. A few miles of liberated areas are being recaptured particularly along Balas to Bassara borders.

“I ventured to enquire from the Indian side. They said our boys entered without planning and information to their counterpart, so they were not ready for the offensive.

“Any way these problems are to be sorted out at local levels to make them consistent with higher level agreement before any optimism is indulged in our reliance on our host.”

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দেশরক্ষা মন্ত্রী তাজউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতার রাজনৈতিক দিক নিয়ে মেজর জেনারেল সরকারের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে আমাকে নিযুক্ত করতেন। এই সুবাদে সেই সময় নিয়মিত বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সংবাদ আসার পর এগুলির পুনরাবৃত্তি রোধ করার উপায় উদ্ভাবনের যে চিন্তাভাবনা ও আলোচনা চলতে থাকে, সে সম্পর্কে মোটামুটিভাবে অবহিত থাকতাম। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এবং অক্টোবরের প্রথম দিকে এই চিন্তাভাবনা ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা থেকে দুটো উপলব্ধি মুখ্য হয়ে ওঠে। প্রথমত, নিয়মিত বাহিনী যদিও বাংলাদেশ কমান্ডের অধীন, তবু যে সব অঞ্চল থেকে সশস্ত্র তৎপরতা চালানো হত সেই সব অঞ্চল ভারতীয় ভূখণ্ড বিধায় পাকিস্তানী পাল্টা আক্রমণের ঝুঁকি ছিল মুখ্যত ভারতেরই। তা ছাড়া এই সব তৎপরতার সফল পরিচালনার জন্য ভারতের অন্যবিধ সহযোগিতারও প্রয়োজন ছিল। কাজেই তৎপরতার স্থান নির্বাচন ছাড়াও এর সাফল্যের জন্য উভয় পক্ষের স্থানীয় ইউনিটের মিলিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক ছিল। কিন্তু অক্টোবরে এই যুগ্ম-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অবস্থার কিছু উন্নতি ঘটার পরেও যখন কয়েকটি তৎপরতা ব্যর্থ হয়, তখন এই ব্যর্থতার জন্য পরস্পরের প্রতি দোষারোপের চেষ্টা ক্রমান্বয়ে তিক্ত আকার ধারণ করে। এর ফলে দ্বিতীয় উপলব্ধিও ক্রমশ অত্যন্ত জোরাল হয়ে ওঠে: কোন তৎপরতায় যেখানে একাধিক স্বতন্ত্র বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হয়, সেখানে দ্বৈত কমান্ডের উপস্থিতি ব্যর্থতার পথকেই কেবল প্রশস্ত করে। সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট ও অবিভাজ্য। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই প্রথম মহাযুদ্ধকালে মিত্র দেশগুলির মধ্যে সম্মিলিত কমান্ডব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল। খুব সীমিত পরিসরে হলেও সীমান্ত তৎপরতা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেক্টর ও ভারতীয় ফরমেশনের যুগ্ম-কমান্ড গঠনের আবশ্যকতা অত্যন্ত জরুরী হয়ে ওঠে।

কিন্তু এই প্রশ্নে ওসমানীকে সম্মত করাতে তাজউদ্দিনকে অত্যন্ত বেগ পেতে হয়। ওসমানীর তীব্র বিরোধিতাকে অতিক্রম করে অক্টোবরের শেষ দিকে সীমান্ত যুদ্ধের জন্য অবশেষে যখন যুগ্ম-কমান্ড গঠিত হয়, তখন রণক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ ধারণ করে এবং ফলে যুগ্ম কমান্ড গঠনের মূল উদ্দেশ্যও অনেকাংশে অর্থহীন হয়ে পড়ে। প্রথমত, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন প্রথম ব্রিগেড কার্যকরভাবে ব্যবহৃত না হওয়ায় এবং নিকট ভবিষ্যতে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা না-থাকায় প্রধান সেনাপতি ওসমানী তাঁর নতুন ‘Ops plan’ অনুযায়ী সিলেটের চা বাগানে এই ব্রিগেডকে কোম্পানী/ পেটুন গ্রুপে ভাগ করে গেরিলা তৎপরতা চালাবার জন্য নিয়োগ করেন। ফলে তিনটি পুরাতন ব্যাটালিয়ানের বড় অংশই সীমান্ত যুদ্ধ থেকে বাদ পড়ে। দ্বিতীয়ত, সেপ্টেম্বরের শেষে ইন্দিরা গান্ধীর সাফল্যজনক মস্কো সফরের পর ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ড’কে যখন জানান হয় যে অতঃপর ভারতীয় বাহিনীকে কেবলমাত্র অবস্থান-অঞ্চল’ গঠনের লক্ষ্যে আবদ্ধ রাখার প্রয়োজন নেই, তখন বৃহত্তর ভূমিকার প্রস্তুতি হিসাবে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় বাহিনী নিজেরাই পাকিস্তানী অবস্থানের বিরুদ্ধে সীমান্ত সংঘর্ষে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে শুরু করে প্রথমে ব্যাটালিয়ান পর্যায়ে, পরে ব্রিগেড পর্যায়ে। ফলে তাদের কাছে বাংলাদেশের সেক্টর ইউনিটের গুরুত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে।

পাশাপাশি, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বেড়ে ওঠায়, মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা দ্রুত বৃদ্ধি করে পাকিস্তানী বাহিনীকে যুদ্ধ-পরিশ্রান্ত করে তোলার জন্য ভারতীয় পক্ষের আগ্রহ অক্টোবর নাগাদ গভীরতর হয়। ওসমানী তাঁর পরিবর্তিত ‘Ops plan’ অনুযায়ী নিয়মিত বাহিনীর একাংশকে ‘গেরিলা যুদ্ধে’ দেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করার ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বৃদ্ধির ব্যাপারে ভারতীয় আগ্রহ সাহায্যপ্রাপ্ত হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *