২. সদর দরজায় খানসামা

সদর দরজায় খানসামা দাঁড়িয়ে। বেতের একটি চেয়ারে সমুদ্রের দিকে মুখ করে বসে আছে রিয়া। তার মুখোমুখি বসে আছেন এক বৃদ্ধ। অনুমানে বুঝলাম ইনিই মিঃ ম্যানরুক্স।

মিঃ ম্যানরুক্স?

আমিই।

মিস ম্যানরুক্সের খোঁজে আমাদের আসতে হল।

হঠাৎ তার খোঁজে আপনাদের কি দরকার পড়লো।

দরকার আছে মিঃ ম্যানরুক্স। কাল শেষরাতে এক বৃদ্ধ গাড়ির ধাক্কায় ভীষণভাবে জখম হয়েছিল। একটু আগে লোন বে-তে পুলিশ মিস ম্যানরুক্সের গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। গাড়ির বাঁ দিকের দরজাটা ভাঙা।

মাথা নাড়লেন। না আমার মেয়ে যদি কাউকে ধাক্কা মারতো, সে পালিয়ে যেত না, তাছাড়া ও পালিয়ে যায়নি। হয়তো কোন বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গেছে। আজকালকার ছেলেমেয়ে বাবা মাকে জানিয়ে কিছু করেনা।

কবে ফিরবেন তিনি? প্রশ্ন করলো রেনি।

জানিনা, শুনুন কারুর ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানো আমি পছন্দ করিনা। মেয়ে ফিরলে আমি বরং আপনাদের খবর দেব।

গাড়ি বারান্দার দিকে হাঁটতে হাঁটতে গজগজ করতে লাগল–আমাদের কথাটা মোটে গ্রাহ্যের মধ্যে আনলো না। চেপে গেল।

চেপে যাওয়ার ব্যাপারটা নাও ঠিক হতে পারে। হয়তো মেয়ে গুণ্ডাদের হাতে পড়েনি।

 মিস ম্যানরুক্স যে বিপদে পড়েছেন, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই আমার।

মিভোজ-এর হেডকোয়ার্টারের কামরায় আবার বৈঠক বসল। না, এখন আমাদের করণীয় কিছুই নেই। কিছু করতে গিয়ে মেয়েটার কিছু হলে মিঃ ম্যানরুক্স কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না। আলোচনা শেষ হলো। বাড়ির পথ ধরলাম। ঢাকা বারান্দায় নিনা বসে ফুলদানিতে রঙ করছিল। হাতের কাজ ফেলে ছুটে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।

গাল টিপে নিনাকে আদর করলাম। রেনিকের সঙ্গে ম্যানরুক্সের ব্যাপারটা সবটাই নিনাকে বললাম নিজের অংশটুকু ছাড়া।

রাতের খাবার খেয়ে আবার বেরোলাম। ফোন বুথ থেকে ওদেতকে ফোন করলাম। হ্যারি বলছি, শোনো কাল রাত এগারোটার প্লেনে তুমি রওনা হচ্ছ। আমি থাকবো, কেবিনে যাবো। তুমি থাকবে, আমি থাকব না।

তুমি বলছে, সব ঠিক ঠিক হবে।

 আলবৎ।

হেডকোয়ার্টার্সে ফোন করলাম। রেনিক নেই, বাড়ি গেছে। তার মানে কোনো খবর নেই।

পরদিন সকাল নটার পর গেলাম অফিসে। শুরু হল আবার কর্মজীবন।

এগারোটার সময় রেনিক এল–কি, কাজকর্ম কেমন লাগছে?

 ভালো। নতুন খবর আছে নাকি?

না, লোন বে-তে পুলিশ মোতায়েন আছে।

ম্যানরুক্স যদি সত্যি সত্যি অতোগুলো টাকা গুণ্ডার হাতে তুলে দেন, আমরা তো কিছু জানতেও পারবো না।

তার টাকা তিনি দেবেন, ভয় ওঁর মেয়েকে নিয়ে। হয়তো টাকার বিনিময়ে তিনি তার মেয়েকে জীবিত ফিরে পাবেন না।

রেনিক চলে যেতে একটি সিগারেট ধরালাম।, কাল সকালেই আসছে পঞ্চাশ হাজার ডলার।

ফাইলপত্র রেখে বেরোবো, এমন সময় রেনিক ঢুকলো। তার মুখে-চোখে চাপা উত্তেজনা। কিছু ঘটেছে বুঝলাম।

বুঝলে হ্যারি একেই বলে কপাল।

পাইরেট্‌স কেবিনের কাছাকাছি পাহারাদার কনস্টেবল এক রিপোর্ট দিয়েছে একটি লোককে নাকি কেবিনর উল্টোদিকের গাড়ি রাখার জায়গায় অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে।

গলা শুকিয়ে কাঠ। তারপর?

তারপর আর কি? লোকটাকে নাকি একটি মেয়ের পেছন পেছন বেরোতে দেখেছে। মেয়েটি আর কেউ নয়, স্বয়ং ওদেত ম্যানরুক্স।

সে চিনতো তাকে?

বাঃ ওকে কে না চেনে? কাগজে ছবি বেরোচ্ছে।

 সেই মাতালটি?

মাথার জখম নিয়ে সে হাসপাতালে। গেলাম দরোয়ানের কাছে। মিস ম্যানরুক্সের ছবি দেখে দরোয়ান বলল, হ্যাঁ স্যর, এরই পেছন পেছন সেই লোকটা বেরিয়েছিলো।

মিস ম্যানরুক্স কখন ঢুকেছিলেন কেবিনে?

ধরুন,…নটা নাগাদ?

তারপর কি হলো!

মিনিট দশেক পর একজন খবর দিলো একটা লোক নাকি মুখ থুবড়ে আছে।

মিস ম্যানরুক্স কারোর খোঁজে কেবিনে ঢুকেছিল?

সেরকমই তো মনে হয়?

 পরণে কি ছিলো তার।

 নির্ভুল বর্ণনা দিলো সে।

উঠে দাঁড়ালো রেনিক হাসপাতালের সেই লোকটার সঙ্গে একবার দেখা করে এলে মন্দ হয় না। কি যেন, নাম তার?

ওয়াস্টার কার্বি।

 চলো হ্যারি, কাজটা সেরে আসি।

বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আছে ওয়াস্টার। আমাদের দেখে ব্যস্তসমস্ত ভাবে উঠে বসলো সে।

সেদিন স্যর, একটু বোধহয় বেসামাল হয়ে পড়েছিলাম। মেয়েটাকে দেখে ঠিক থাকতে পারিনি। ধাঁ করে আমার মাথায় কে এসে ঘা দিল। আমি, জ্ঞান হারালাম।

কেমন দেখতে সে?

বুকটা ধক করে উঠলো আমার।

 লম্বা চওড়া জোয়ান চেহারা, কিন্তু …

আবার দেখলে চিনতে পারবে?

না, না স্যর, চেনা সম্ভব নয়।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বিড়বিড় করল রেনিক, বান্ধবীর সাথে দেখা করার কথা রাত নটায়, উলটে হাজির হল কেবিনে, কেন?

হয়তো বাড়ি থেকে বেরোবার আগে কোন ফোন পেয়ে থাকবে।

হ্যাঁ, যুক্তি হিসেবে এটাই একমাত্র সম্ভব। ও’রিলেকে বলতে হবে। সে হয়তো কিছু বলতে পারে। ফেরার পথ চুপচাপ কাটলো। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঘরে ঢুকলো রেনিক, ও’রিলেকে ফোন করলাম। বলল, মিস ম্যানরুক্স বেরোবার মিনিট পাঁচ আগে একটা ফোন আসে। রাত পৌনে নটায়। জেরী উইলিয়ামস-এর ফোন। জেরী মিস ওদেতের বন্ধু। ওকে ভাবলাম জিজ্ঞাসাবাদ করবো। কিন্তু মিতোজ নিষেধ করলো।

কেশে গলা পরিষ্কার করে বললাম। তা আমার কি এখন আর থাকার দরকার আছে?

কাছাকাছি থাকলে কাজের সুবিধে–এই আর কি।

আসলে একটা পার্টিতে যাবার কথা।

 একথা আগে বলবে তো, কোথায় পার্টিটা।

আগে থেকেই চিন্তা করে রেখেছিলাম। বললাম- ক্যাসিনো রেস্তোরাঁয়। রাতভর পার্টি।

রেনিক চলে যেতে ফোন তুলে বাড়ির নম্বর ঘোরালাম।

নিনা আজ আমার ফিরতে একটু রাত হবে। এক্ষুণি বেরোতে হবে, রাত দুটোর পর আমি বাড়ি ফিরবো। ছাড়ছি।

অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা গেলাম কেবিনে। একটা বাজতে মাত্র দশ মিনিট বাকি।

রাতের শহর ঘুমোচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে যাত্রী বাস আসতে এখনও মিনিট পনেরো দেরি।

অফিসে সার্জেন্ট হারল্ড জানালেন, একটু আগে রেনিক বাড়ি চেলে গেছে। নিশ্চিন্ত মনে ওদেতের বাড়িতে ফোন করলাম।

টাকা যোগাড় হয়েছে?

হ্যাঁ?

বেশ, ঠিক দুটোর সময় আপনি বাড়ি থেকে বেরোবেন। নিজের রোলস নিজেই চালাবেন। রাস্তার কোনো এক জায়গায় তিনবার টর্চের আলোর সঙ্কেত দেখতে পাবেন। দেখামাত্র টাকার ব্যাগ জানালা গলিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে দেবেন। আপনার মেয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে লোন বে-তে পৌঁছে যাবেন। তিনটে নাগাদ তাকে দেখতে পাবেন। যদি সেখানে না পান, মেয়ে বাড়িতেই যাবে।

হু, তারপর?

তারপর আর কি? মেয়ে ভালো আছে। স্ত্রী হিসেবে যেমনই হোক রিয়া, স্বামীর ওপর তার যে আধিপত্য আছে তা বোঝা গেল।

নিজের দিক থেকেও নিশ্চিন্ত হলাম। ব্যাঙ্কের লকারে রাখা সেই দুখানি টেপ মা মেয়েকে ফাসাবার পক্ষে যথেষ্ট। অবশ্য কাজ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে টেপের দরকার হবেনা, টেপ যেখানে আছে, থাকবে। একটা বেজে পাঁচ-পঁচিশটা বাস ক্ৰমে থামল। একে একে সকলে নামলো।

দূর থেকে একচমক দেখেই চিনলাম ওদেতকে। পরনে সেই নীলের ওপর সাদা স্কার্ট। আমাকেই খুঁজছে।

হাত নেড়ে ইশারা করলাম।

চলো, গাড়ির দিকে পা বাড়ালাম আমি। পেছন থেকে একটা ভারি হাত এসে পড়লো আমার কাঁধে।

নিমেষে যেন এই বিরাট পৃথিবী দুলে উঠল। শক্ত বলিষ্ঠ চেহারা, হ্যারি তুই না সেদিন জেলে গেলি?

 ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো আমার।

টিম কাইলি। হেরাল্ডের একজন জাঁদরেল সাংবাদিক। একে চেনেনা, সংবাদপত্র জগতে এমন কোন লোক নেই।

বাপরে বাপ, এমন ঘাবড়ে দিয়েছিল। …ওদেত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

কেমন আছিস, বল?

ভালো তোমার খবর কি?

এই চলছে একরকম।

ইনি কে?

আমার স্ত্রী নিনার বান্ধবী।

ওদেত তাড়াতাড়ি চলে গেল। এ কিরে হ্যারি, ও অমন তড়িঘড়ি ছুটলো। ব্যাপার কি?

আসলে বড় লাজুক।

হয়ত তাই, ভয়ে যেন একেবারে সিঁটিয়ে গেছে। তোর গাড়ি আছে তো, আমাকে প্লাজা হোটেলে নামিয়ে দিয়ে যা না।

দুঃখিত, আমরা উলটো দিকে যাবো।

চাকরি বাকরি কিছু করছিস নাকি?

হ্যাঁ, পুলিশে।

সময় সুযোগ পেলে একদিন বউকে নিয়ে লস-এঞ্জেলসে যাস।

 যাবো, গুড নাইট।

.

গাড়িতে খুব বকলাম ওদেতকে, তোমার কোনো বুদ্ধি নেই, চলে যেতে পারলে না, দাঁড়িয়ে রইলে কেন?

বাঃ, ও বুঝি আগে থেকে দেখেনি?

 যাকগে, যা হবার হবে।

আমি ভেবে পাচ্ছি না, পুলিশের কথা বললে তুমি কালবাবা, বাবা কিছু … 

নাঃ, তোমার বাবা এখনও মুখ খোলেন নি। গাড়ির ধাক্কা থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের ফোন, মিতভাজের ধারণা সবই বললাম।

লোন বে-তে অমন একটা কাণ্ড ঘটলো। তুমি তো সেদিন আমায় কিছু বললে না।

যা যা শিখিয়েছিলাম, মনে আছে তো?

 মনে আছে।

 দুটো বাজতে কুড়ি মিনিটের সময় কেবিনের সামনে গাড়ি রাখলাম।

যাও পোশাক পাল্টে, হাত পা ধুয়ে সুস্থ হয়ে নাও।

গাড়ি থেকে নেমে অবার পিছিয়ে এসে ওদেত বলল, আমাকে আদর করলে না।

একটু ইতস্ততঃ করলাম। তারপর দুহাতে গলা জড়িয়ে তার কবোষ্ণ ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। কিছুক্ষণ পর আলিঙ্গন মুক্ত হলাম।

বিয়ের আগে তোমার সাথে কেন দেখা হল না, হ্যারি?

ভাগ্য। বলে গাড়ি ছাড়লাম।

গাড়ি পিছিয়ে ঝোঁপের আড়ালে রাখলাম। কিন্তু ম্যানরুক্স যদি আমাকে ধোঁকা দেয়। যদি সঙ্গে করে ও’রিলেকে নিয়ে আসে!দূরে হেডলাইটের জোরালো আলো দেখা যাচ্ছে। সে আসছে।

রোলস রয়েজ। হ্যাঁ, ম্যামরুক্স একাই এসেছে। আর মাত্র পঁচিশ গজ দূরে গাড়িখানা টর্চটা মাটির সঙ্গে মিলিয়ে তিনবার সুইচ টিপলাম। এক সেকেন্ড,… দু সেকেন্ড…কালো একটা অ্যাটাচি জানলা গলে রাস্তায় আছড়ে পড়লো। গাড়ির গতি না কমিয়ে চলে গেল।

আমার সামনে হাত পাঁচেক দূরে আছে অ্যাটাচি। একমিনিট অপেক্ষা করলাম। তারপর এক ঝটকায় অ্যাটাচি নিয়ে নিলাম।

কেবিনের পাশে গাড়ি রাখলাম। ঘড়িতে তখন তিনটে বাজতে পঁচিশ মিনিট বাকি। রিয়ার তো এতক্ষণে পৌঁছে যাবার কথা। কেবিন অন্ধকার। আলো জ্বালেনি ওদেত। আলো জ্বালার বিপদও অনেক। সিঁড়ি ভেঙে উঠলাম বারান্দায়।

না বারান্দায় ওদেত নেই।

আশ্চর্য গেলো কোথায় সে? বৈঠকখানায়… ওদেত। দরজা খোলো।

কোনো সাড়া নেই।

আশ্চর্য হলোটা কি!

দরজায় ধাক্কা দিতে গিয়ে আর এক বিস্ময়! দরজা খোলা। নির্ঘাত ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা চিন্তা ভাবনা ঘুমোবেই তো। আলো জ্বালোম, না ওদেতের চিহ্নমাত্র নেই। অ্যাটাচি টেবিলে রেখে শোবার ঘরের দরজায় টোকা দিলাম।

দরজা খুলে দেখলাম ওদেত ঐ পোশাকেই শুয়ে আছে বিছানায়।

ওদেত, এই ওদেত চাপা স্বরে ডাকতে ডাকতে এগোলাম।

ঠেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শের মত সরিয়ে আনলাম হাত, মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো।

ওদেত…ওদেতের গা ঠাণ্ডা। ঝুঁকে পড়লাম। তার মুখের ওপর। ছিটকে সরে এলাম।নাইলনের একটা মোজা শক্ত পাক খেয়ে জড়ানো রয়েছে গলায়–ওদেত মারা গেছে।

স্বপ্ন নয়, বাস্তব। খুন-হা ওদেত ম্যানরুক্স খুনই হয়েছে। আমার সমস্ত চেতনা পঙ্গু, টলতে টলতে কোনোমতে দেয়াল আলমারিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্কচের একটা বোতল তুলে নিলাম মুঠোয়, ছিপি খুললাম তারপর বোতল উপুড় করলাম গলায়।

রিয়াকে ফোনে খবর দেবার জন্য তৈরি হলাম। খানসামা ফোন তুললো। হয়ত এতোক্ষণ ঘুমায়নি সে, হয়তো ম্যানরুক্সের ফিরে আসার জন্যই অপেক্ষা করবে।

কে বলছেন? কাকে চাই?

মিঃ হ্যামন্ড..। মিসেস ম্যানরুক্সকে একবার লাইনটা দিন। নাম বললেই উনি বুঝতে পারবেন।

 উনি ঘুমোচ্ছন মিঃ হ্যামন্ড।

 খুব জরুরী দরকার।

 দুঃখিত, মিসেস ম্যানরুক্স অসুস্থ। বলেছেন ঘুমের মধ্যে যেন ওঁকে বিরক্ত না করা হয়।

ও আচ্ছা, ঠিক আছে।

তাহলে কি সত্যি সত্যিই রিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লো। কিছুই ঠিক ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কোথায় একটা খটকা লাগছে। ম্যানরুক্সও হয়তো এতোক্ষণে লোন বে-তে পৌঁছে গেছেন। পুলিশ যদি একবার পেছনে লাগে, তাহলে খুনের অপরাধ আমার ঘাড়ে চাপাতে তারা ইতস্ততঃ করবে না। ওদেতের মৃতদেহ কোনমতেই এখানে পড়ে থাকতে দেওয়া চলবে না। সব ছেড়ে গেলে হয়তো আজ আমি বাঁচবো।কিন্তু কাল, পরশু?বিল হোল্ডেন তো দেখেছে। পুলিশে খবর দেবে সে, পুলিশ আসবে।হ্যাঁ, এক্ষেত্রে রিয়াই পারে আমাকে বাঁচাতে। আগাগোড়াব্যাপারটি নিয়ে ওর সঙ্গে একদফা আলোচনা করতে হবে। ওদেতের মৃতদেহের আপাতত একটা সঙ্গতি করা দরকার। এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে রাখতে হবে যেখানে সচরাচর কেউ যায় না। রিয়ার সঙ্গে আগে কথাবার্তা বলি, কি তার মতামত–জেনে নিই। তারপর নয় সেরকম বুঝলে পুলিশে খবর দেবো।

বিছানার চাদর মুড়ে মৃতদেহ নিয়ে এলাম বাইরে। ডালা খুলে গাড়ির ট্রাঙ্কে শুইয়ে দিলাম, ডালা নামিয়ে চাবি বন্ধ করে ফিরে এলাম শোবার ঘরে।

বোতলের বাকি পানীয়টুকু গলায় ঢেলে মন অনেকটা চাঙ্গা হল।

আলো নিভিয়ে বেরোতে যাব, চোখ পড়লো অ্যাটচিটার ওপর। বাঁ হাতে অ্যাটাচি তুলে বাইরে এলাম। তালা লাগিয়ে উঠে বসলাম গাড়িতে। এখন তিনটে বেজে দশ। গাড়ির গতিবেগ কখনো চল্লিশের ওপর তুলবো না।

বড় রাস্তায় উঠে গাড়ির গতিবেগ একটু বাড়িয়ে দিলাম।

তেমাথার মোড়ে এক ট্রাফিক সিগন্যাল। গিয়ার বদলে ডাইনে মোড় নেব। সবুজ আলোর সঙ্কেতটা মুহূর্তে রক্তচক্ষু মেলে আমার দিকে কটমট করে তাকালো।

ব্রেক কষলাম। সবুজ। প্রাণপণ চেষ্টায় নিজেকে স্বাভাবিক রেখে গিয়ার বদলে অ্যাকসিলারেটরে চাপ দিলাম। হঠাৎ এক প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো।

আমার মনের অবস্থা সঙ্গীন এখন। গাড়ি অচল, অনঢ়।

ততক্ষণে সিগন্যালের আলো সবুজ থেকে লালে পালটেছে। আড়চোখে তাকালাম পুলিশটার দিকে। হেলতে হেলতে সে এগিয়ে আসছে পায়ে পায়ে।

আলোর সঙ্কেত লাল থেকে আবার সবুজ।

 কি মশায়? রাতভর এখানেই থাকার মতলব?

না, মানে গিয়ারটা বোধ হয় গেছে।

তা এভাবে পথে দাঁড়িয়ে থাকলে, চলবে?

গ্যারেজ-ট্যারেজ খোলা পাব?

দেখি, লাইসেন্স দেখি।

পুলিশের প্রেসকার্ডখানাও দেখালাম। দেখো কাণ্ড, একথা তো আগে বলতে হয়।

পুরনো হলেও গাড়ি কিন্তু বেশ মজবুত।

 কয়েক মুহূর্ত নীরবতা।

আছে গ্যারেজ মাইলখানেক দূর।

 ফোন করে দেখুন।

 নম্বরটা?

আছে ডায়ারিতে লেখা আছে। দাঁড়ান।নম্বর লিখে সেবলল, এক্ষুনি যেন ওরা ক্রেন পাঠিয়ে দেয়। আমার নাম শুনলে ওরা আর আপত্তি করবে না।

উল্টোদিকে ফোন বুথ থেকে ফোন করলাম। সবে বলে নিজের জায়গায় এলাম। কি, রাজি হয়েছে?

হা হয়েছে।

একের পর এক চিন্তা এসে ভিড় করলো।

 গাড়ি তো নিয়ে যাচ্ছি বাড়িতে?নিনা যদি হঠাৎ দেখে ফেলে মৃতদেহ!যা কিছু করবো রাত্তিরে।

মিনিট পনের পর গ্যারেজ থেকে ব্রেকডাউন ভ্যান এসে হাজির। মেকানিক ছোরাটা নামলো। পরীক্ষা করে বললো। গিয়ারটা গেছে। সারাতে দুসপ্তাহ লাগবে।

সারানো টারানো নয়, গাড়িখানা আগে বাপু তুমি আমার বাড়ি অবধি পৌঁছে দাও। পরে সারানোর কথা ভাবা যাবে।

তার মানে? চমৎকার, গাড়ি সারাবে আর একজন, আর আমি পৌঁছে দেব, মাঝরাত্তিরে ডেকে আমার সঙ্গে রসিকতা? এসব ফালতু কাজ আমার দ্বারা হবে না।

বেশ হবে না যখন যাও। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের কোন অফিসারকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার বিপদ অনেক, মনে রেখো।

এতেই কাজ হল। তেমাথার থেকে বাড়ি মোট চার মাইল। চুপচাপ গাড়িটা ভ্যানের সঙ্গে বসে এলাম।

আমি দরজা তালাবন্ধ করে পকেট থেকে, ম্যানিব্যাগ বের করলাম।

কত?

পনেরো ডলার।

না আছে মাত্র এগারো ডলার।

নিলো সে। ততক্ষণে ভোর হতে শুরু করেছে। ঘরের আলো নিভিয়ে বাথরুমে ঢুকে ঝাঁঝরি খুলে দিলাম।

পাজামার দড়িটা সবে বেঁধেছি, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।

রিসিভার তুললাম- হ্যালো?

হ্যারি। রেনিকের গলা ভেসে এলো। একটু আগে ম্যানরুক্স ফোন করেছিলেন। এবার আর লুকোচুরি নয়–পরিষ্কার বললেন–মেয়ে তার গুণ্ডাদলের হাতে পড়েছে। তুমি এক্ষুনি হেড কোয়ার্টার্সে চলে এসো।

ঘামে ভিজে উঠলো শরীর।

দশ মিনিটের মধ্যে আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। তুমি তৈরি হয়ে নাও।

 ঘাড় ঘোরাতেই চোখাচোখি হল নিনার সঙ্গে।

কে…কে হ্যারি?

জনের ফোন। এক্ষুণি হেডকোয়ার্টার্সে যেতে হচ্ছে।

একটু কফি করি তোমার জন্য?

থাক।

কেন, থাকবে কেন?

পোশাক পাল্টে টাইয়ের নট বাঁধছি, বাইরে জীপ এসে থামলো।

 নিনাকে ছোট্ট করে চুমু খেয়ে উঠে বসলাম গাড়িতে।

অফিসে অপারেশন রুমের টেবিলে একখানি ম্যাপের ওপর হুমড়ি খেয়ে রয়েছে তারা তিনজন রেনিক একগাল হেসে বলল–ম্যানরুক্স যেহেতু মেয়েকে পাননি, তাই আমাদের শরণাপন্ন হয়েছেন।

আমি নিশ্চুপ। ম্যানরুক্স সবই বলেছেন। কোথাও মেয়েটি নেই।

আমি যাচ্ছি আর হ্যারিকে নিয়ে ম্যানরুল্পের সাথে একবার দেখা করে আসি।

বান্টি বলল- কেন জানিনা, মনে হচ্ছে মেয়েটিকে জীবিত পাব না। এরজন্য দায়ী তার বাবা, তিনি প্রথম থেকে আমাদের বললে, এতদূর গড়াতো না।

না, বাবা ভুল করেননি। এই কুকীর্তির নায়ক এ শহরেরই লোক।

আমিও তাই মনে করি।

 এরকম ধারণার কারণ? আমি বললাম।

কারণ একটা নয়। অজস্র। জেরী উইলিয়ামসের ফোনের কথাটাই ধরা যাক। বেচারা প্রায় পনের দিন যাবৎ বিছানায়, শয্যাশায়ী। তিনি বললেন জেরীর তাদের বাড়ি যাওয়া বা তার মেয়েকে ফোনটোন করা বন্ধ হয়েছে। তার মানে গুণ্ডারা জানে ওদেতের সাথে ঘনিষ্ঠতার কথা জেরীর। পাইরেটস্ কেবিনের নামও এ শহরের লোক ছাড়া কেউ জানে না।

আমরা ম্যানরুক্সের বাড়ি গিয়ে পৌঁছলাম। আমাদের দেখে ক্লান্ত চোখ দুটো তুলে তাকালেন ম্যানরুক্স, কি মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শোনাতে এলেন নাকি?

মেয়ে আপনার জীবিতই আছে। মেয়েকে আপনি শেষ কখন দেখেছিলেন।

শনিবার কুড়ি মিনিট আগে বান্ধবীটি জানালো ওদেত সিনেমায় যায়নি। অবাক হলাম। তারপর গুণ্ডাদলের একটি লোক ফোন করলো। সোমবার সকালে ওদেতের একটি চিঠি পেলাম। এই সেই চিঠি। হাতের লেখা আপনার মেয়েরই তো?

হ্যাঁ। গিয়ে দেখি ওদেত নেই। এখানে এসে দেখি, সে নেই। অগত্যা আপনাদেরশরণাপন্ন হলাম।

আচ্ছা যে লোকটা আলোর সঙ্কেত দেখাচ্ছিলো, তাকে আপনি দেখেন নি?

না আলোটুকুই দেখেছি, লোকটাকে দেখিনি।

জায়গাটা একবার পরীক্ষা করে দেখলে হতো। আপনি যদি সঙ্গে…।

দুঃখিত লেফটেন্যান্ট। আমি অসুস্থ।

আমি জানতাম, এ প্রশ্ন আপনারা করবেন।

আমি সেই জায়গাটার একটানশাকরে রেখেছি টেবিলের ড্রয়ার খুলে একখানা কাগজ দিলেন।

বান্টির হাতে কাগজখানি দিলো রেনিক। ফ্রেড, ব্যারিকে নিয়ে এক্ষুনি তুমি ইস্ট বীচ রোডে চলে যাও। গাড়িটা বরং পাঠিয়ে দিও আমি আর ওখানে যাবোনা সোজা হেড কোয়ার্টার্সে ফিরবো।

কলের পুতুলের মতো বান্টির পেছন পেছন গিয়ে উঠলাম গাড়িতে।

ইস্ট রোডের সেই ঝোঁপ। নকশা মিলিয়ে সঠিক জায়গাতে পৌঁছতে বান্টির মত ঝানু পুলিশ অফিসারদের এতটুকু অসুবিধে হলো না।

শুরু হল তদন্ত।

বিড়বিড় করলো বান্টি, বুঝলেন মিঃ, লোকটা যে এখানেই লুকিয়েছেন সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। এই দেখুন তার জুতোর ছাপ। আপনি চটপট দুজন ফোরেনসিক অফিসার পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। মাথা হেলিয়ে দেরি করলাম না। গাড়ি ছাড়লো। নিজস্ব বলতে আর কিছু নেই। ফটকের বাইরেই রেনিকের দেখা পেলাম।

রেনিকের হাতে একটা অ্যাটাচি।

বুঝলে হ্যারি, এটারও একটা ছবি ছাপতে হবে। ম্যানরুক্স কিনেছিলেন একজোড়া অ্যাটাচি। একটিতে রেখেছিলেন টাকা, আর একটা রেখে দিয়েছেন নিজের কাছে।

বান্টি ওখানে গিয়ে কিছু পেল?

সব ঘটনাই তাকে বললাম।

দু আঙুলের ফাঁকে ধরা জ্বলন্ত সিগার, চোখের দৃষ্টি খোলা ফাইলের পাতায় স্থির নিবদ্ধ।

চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসলাম আমরা। ওদেত ও অ্যাটাচির ছবি কাগজে ছাপাবার কথা রেনিক বলল।

ঘাড় নাড়লেন মিতোজ। ততক্ষণে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভোলা ওদেতের গাড়ির একরাশ

ছবি তৈরী করে ফেলেছে রেইগার।

পরের তিনঘণ্টা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছি না। কাগজের অজস্র প্রতিনিধির প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিতে আসার অনুমতি প্রার্থনা করে ফোন। কাকে বাদ দিয়ে কাকে অনুমতি দেবো–এটাই এক সমস্যা। এককালের সাংবাদিক আমি মোটামুটি সবাই আমার পরিচিত। ততক্ষণে রিপোর্ট আমার তৈরি।

ফোন বাজলো-হ্যালো?

নিনার স্বর–হ্যারি, গাড়ির চাবিটা তখন থেকে খুঁজছি–পাচ্ছি না। তুমি, তুমি নিয়েছে নাকি!

আর বল কেন! তাড়াহুড়োর মধ্যে গাড়ির কথা তোমাকে বলা হয়নি। কাল রাতের দুরবস্থার কথা সবটাই বললাম।

ইস, আমি তাহলে কি করি। একগাদা পুতুল, ফুলদানি জমেছে, দোকানে আজই পৌঁছে দেবার কথা…গ্যারেজে একটা খবর

না, তুমি বুঝতে পারছেনা নিনাগিয়ারের গোলমাল সারাতে গেলে এখন একরাশ টাকার দরকার। তুমি বরং একটা ট্যাক্সি দেখে নাও। বাড়ি ফিরে যা করার করবো। ছাড়ছি।

দরজায় টোকা পড়লো।

কে?

আসতে পারি, হুজুর? দরজা ঠেলে টিম কাইলি ঢুকলো। ঢোক গিলোম আমি।

এসে কোনো লাভ নেই টিম, আমার কাছে কোনো খবর নেই।

সত্যি করে বল, মেয়েটা মারা গেছে, তাই না? আমাদের অনুমান, সে আর বেঁচে নেই।

 তা তোদের ম্যানরুক্স কি বলেন?

 কি আর বলবেন। সহজ ভাবেই পুরো ব্যাপারটা মেনে নিয়েছেন।

আর তার যুবতী স্ত্রী–তার কি খবর?

তিনি শয্যা নিয়েছেন।

বলিস কি? সত্যি?

বাঃ মিথ্যে বলে আমার লাভ!

ওঃ, কত ভড়ংই যে জানে মাগী!

কেন?

 ম্যানরুক্স তো ফরাসী,…আইনটা তুই পড়িসনি?

না মানে…।

কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হিসেব মত বউ মেয়ের আধাআধি পাবার কথা। তো মেয়ে যদি সত্যি মরে গিয়ে থাকে তাহলে ভাগীদার বলতে রইল ঐ হারামজাদী, দুহাতে সব টাকা ভোগ করবে।

এবার আগাগোড়া ব্যাপারটা আমার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠল।

ওদেত মারা গেছে রিয়ার চক্রান্তে। টিম বলে উঠল কিরে, গুম মেরে গেলি কেন?

না মানে…কথা শেষ করার আগেই টেলিফোনের আওয়াজ হল। মিতোজের ভরাট গলা এল। এক্ষুনি একবার আমার ঘরে এসো বাকর।

টিম, চলিরে বলে চলে গেল। আমিও মিভোজের ঘরে গেলাম। বিশেষ পরিস্থিতির জন্য এক প্রেস-বিজ্ঞপ্তি লেখার জন্য বললেন আমাকে, লিখলাম।

ওদেত সংক্রান্ত সব লিখলাম। ওদেতের জীবনহানি আশঙ্কার সম্পর্কেও লিখলাম।

এমন সময় রেনিক ঢুকলো।

বুঝলেন স্যর, মনে হচ্ছে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। কার্বি বলল, সেই লোকটা নাকি প্রায় ছ ফুট বলিষ্ঠ গড়নের। এও জানলাম সে লাকি-স্টাইক সিগারেটের ভক্ত, যে গাড়িতে চড়ে এসেছিল সে, তার তেলের ট্যাঙ্ক ফুটো এবং সর্বোপরি ওজন তার একশো আশি পাউন্ড।

তুমি জানলে কিভাবে?

জুতোর ছাপ দেখে।

বাঃ চমৎকার। বাজিমাত হতে আর দেরি নেই। এবার দরজা ঠেলে রেগলার ঢুকলো।

এদিকে একটা দারুণ, কাণ্ড হয়ে গেছে স্যর? রীচ রোডের হাবার্ট ক্যারী একটু আগে তার গাড়ির অ্যাক্সিডেন্টের ব্যাপারে থানায় ডায়রী করতে এসেছিলেন।

কেন?

 যে গাড়ির সঙ্গে তাঁর গাড়ির ধাক্কা লেগেছিল সেটা ছিল ওদেত ম্যালরুক্সের স্পোর্টস কার?

বলো কি?

আসল রহস্যটা তো ওখানেই। গর্বের হাসি হাসলো রেইগার।

গাড়ির ড্রাইভার কে চালক, না চালিকা?

 চালক স্যর।

চেয়ার ছেড়ে উঠে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

তুমি তাকে এখুনি এখানে নিয়ে এসো।

সে ব্যবস্থাও করে এসেছি। জ্যামন্ডও এক্ষুনি এসে পড়বে।

এখন আর আমার থাকা সমীচীন নয়। ফিরলাম, জন, ডেসকে একরাশ কাজ…

 কাজ! বসো, বসো, কাজ-টাজ নিয়ে পরে যাহোক ভাবা যাবে।

অগত্যা বসতেই হলো।

সামরিক বাহিনীর লোকেরা ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি তল্লাশী শুরু করে দিয়েছে।

দরজায় টোকা পড়লো।

 সস্ত্রীক হার্বার্ট ক্যারিকে নিয়ে ঢুকলো এক পুলিশ-অফিসার।

ঘরে পা দিয়েই শুরু হল মিসেস ক্যারির গজগজানি।

 হ্যাঁ যে কথা বলছিলাম শুরু করলেন ভদ্রমহিলা।

মিভোজ বলে উঠলেন, গাড়ির চালকের চেহারার বর্ণনা দিতে পারবেন?

আজ্ঞে হ্যাঁ স্যর, হাবার্ট ক্যারি বললেন।

কি রকম দেখতে সে?

 মানে, একে অন্ধকার তবে লম্বা বেশ, চেহারাও মজবুত।

মিসেস ক্যারি ঘাড় নাড়লেন, নানা। বড়জোর লম্বায় এঁনার মতো। বলে হাত তুলে মিভোজ– কে দেখালেন।

মিভোজ বললেন, মিসেস ক্যারি কথা আমরা আপনার স্বামীর সঙ্গেই বলছি।

মানে সীটে বসেছিল যতদূর আন্দাজ, বলে আমার দিকে তাকালেন, তাকিয়েই রইলেন।

কি, এর মতো? বাৰ্কর তুমি একটু দাঁড়াও তো, লোকটা কি এরই মতো লম্বা?

 হ্যাঁ, যতদূর মনে হচ্ছে, দেখতেও সে অনেকটা এনারই মতো।

বেশ এবার বলুন।

সে এক অদ্ভুত কাণ্ড স্যর। দোষটা স্যর আমারই।

 মিসেস ক্যারি বলে উঠলেন, না দোষ তোমার নয়, আকস্মিক একটা ধাক্কা মেরে লম্বা নেব…তারপর পগার পার।

মিসেস ক্যারি দয়া করে এবার একটু চুপ করুন। গলার স্বর, বয়স আন্দাজ করতে পারেন?

বয়েস কমপক্ষে তিরিশ।

পোশাকটা?

অন্ধকারে যতদূর মনে পড়ছে তার পরনে ছিলো বাদামী রংয়ের ব্লেজার।

তার মাথায় টুপি ছিল?

না।

ফর্সা না কালো?

ঠিক বলতে পারব না।

 তার গলার স্বর শুনলে তাকে চিনতে পারবেন?

 না, চেনা সম্ভব নয়।

কটা নাগাদ হয়েছিল অ্যাক্সিডেন্ট?

 দশটা দশ।

গাড়িটা কোন দিকে এগোলো?

এয়ারপোর্টের দিকে।

আচ্ছা রেনিক, এয়ারপোর্টে খোঁজখবর নেবার ব্যবস্থা হয়েছে?

না, আপনি যদি বলেন।

 তদন্তের জন্য কোনো জায়গাই বাদ দিলে চলবে না।

ধন্যবাদ মিঃ ক্যারি, দরকার হলে ভবিষ্যতে এরকম সাহায্যের জন্য আসতে হতে পারে।

হ্যাঁ, হ্যাঁ।

এবার চলল, আদিখ্যেতা দেখাতে হবেনা, বলে গজগজ করতে করতে স্ত্রী দরজার দিকে এগোলেন।

যেতে গিয়ে ক্যারি আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন। যদি কিছু মনে না করেন মিঃ মিভেজ…উনি কে? বলে আমাকে দেখালেন।

হ্যারি বাকর, প্রেস-অফিসার। কিন্তু কেন?

এমনিই, বলে বড় বড় পা ফেলে দরজার দিকে এগোলেন।

তাহলে লোকটা লম্বায় ছ ফুট, ওজন একশো আশি পাউন্ড… আচ্ছা হ্যারী, তোমার দিকে তাকালো সে তোমার ওজন কত?

আমার?…একশো নব্বই। কিন্তু আমার ওজন জেনে তোমার লাভ কিসের?

লাভ, লাভ…ভাবছি তোমার মুখের অংশটুকু ঢেকে তোমারই একখানাছবিকাগজে ছেপে দিই– এরকম চেহারার কোনো লোককে যদি,শনিবার রাত নটার পর লোনবে অথবা পাইরেটস কেবিনের আশপাশে দেখে থাকেন, তিনি আমাদের দপ্তরে এসে যোগাযোগ করুন। স্যর, আপনি কি বলেন?

খুব ভাল আইডিয়া। তাহলে শুধু বাকি রইল এখন এয়ারপোর্ট। তুমি বরং রেগলারকে নিয়ে এক্ষুনি এয়ারপোর্ট চলে যাও। আর বাকর, যেমন যেমন শুনলে চটপট এক রিপোর্ট তৈরি করে ফেলো।