০৩. পরপর দুটো ক্লাস

৷৷ ৩৷৷

সকালে পরপর দুটো ক্লাস। সেগুলো পড়িয়ে ফিরে অফিসে বসতে না বসতে যে ফোনটা এল, সেটা আমি মোটেই এক্সপেক্ট করিনি। নাদিয়া। গলার স্বরটা ভাঙা ভাঙা।

“আপনার নম্বরটা ডেভের কাছ থেকে পেলাম। আপনার কাজ শেষ হলে ইউ মাস্ট কাম।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম,”কী ব্যাপার?”

“আই ডোন্ট নো। একজন আমাকে ফোন করে বলল, এজের আসতে দেরি হবে। ও। দুবাইয়ে একটা কাজে আটকা পড়েছে। দু’-একদিনের মধ্যে ফোন করবে। কী কাজ কিছু বলল না, নিজের পরিচয়ও দিল না, লাইনটা হঠাৎ কেটে দিল। আমার মনে হচ্ছে এই চিঠির সঙ্গে ব্যাপারটার কিছু একটা আছে। এছাড়া, এছাড়া…”

“এছাড়া কী?”

“আপনি আসুন, তারপর আমি বলব। আমি এখানে আর কাউকে কিছু বলতে ভরসা পাচ্ছি না। প্লিজ ডু কাম। ইউ মাস্ট ফিগার আউট দ্য কনটেন্ট অফ দ্য লেটার।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ প্রায় না দিয়েই ফোনটা রেখে দিল।

হঠাৎ একটা অজানা আশঙ্কা আমাকে গ্রাস করল। এমন কী কথা যে নাদিয়া আর কাউকে কিছু বলতে পারবে না, শুধু আমাকেই বলতে পারবে। শি হার্ডলি নোজ মি! এবার আমার মাথাটা পরিষ্কার হতে শুরু হল, ইজ ইট এ ট্র্যাপ? রাশিয়ান ব্রাইড বস্তুটির যে দুর্নাম আছে –তার ফাঁদে আমি পড়ছি না তো। নাদিয়া চাইছে আমি একা একা ওর কাছে যাই। কী ওর মাথায় ঘুরছে? চিঠিটা কি একটা টোপ ছিল? কিন্তু আমি ধনী নই, একজন সাধারণ প্রফেসর। আমার কাছে ও কী পেতে পারে?

দু’-মিনিটও যায়নি, আবার ফোন। আবার কি নাদিয়া! না, বাঁচা গেল! এবার একেনবাবু।

“কী খবর, কাল আসছেন তো?” স্বস্তি পেয়ে আমার গলার স্বরে উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই প্রকাশ পেল।

“সেকি স্যার, মেসেজ রেখেছি, পাননি?”

“না, চেক করিনি।”

“আমি তো বাড়ি থেকে বলছি, একটু আগেই এসে পৌঁছেছি।”

“ এসে গেছেন! কেমন হল আপনার মিটিং?”।

“আই ওপনার স্যার। টেররিস্টরা এখন যা শুরু করেছে না! আপনার নাম-ধাম চুরি করে টেররিজম করে অদৃশ্য হবে। পুলিশ আপনাকে এসে ধরবে, অথচ আপনি সাতে পাঁচে ছিলেন না! ভাবুন অবস্থাটা!”

“কী সর্বনাশ! আগে তো আইডেন্টিটি থেফট করে শুধু ক্রেডিট কার্ড- টার্ডগুলো ফ্রড করা হতো!”

“এখন সবকিছু অন্য লেভেলে স্যার! সেকথা থাক, আপনার কোনো প্ল্যান নেই তো সন্ধ্যায়? একসঙ্গে খেতে যাব।”

“কোনো প্ল্যান নেই, ইন ফ্যাক্ট, আপনি এসে আমাকে বাঁচিয়েছেন।”

“কেন স্যার?”

“এখানে বোধহয় একটা ভয়াবহ ব্যাপার ঘটতে চলেছে।”

“তার মানে?” একেনবাবু উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলেন।

“অত সিরিয়াসলি নেবেন না,” বলে সংক্ষেপে নাদিয়া আর চিঠিটার কথা একেনবাবুকে বললাম।

“কবে এসেছিল স্যার চিঠিটা?”

“গতকাল।”

“ কী তারিখ ছিল স্যার গতকাল?”

“পয়লা এপ্রিল। ও মাই গড! আপনি মনে করেন এপ্রিল ফুল?”

“একটা পসিবিলিটি স্যার।”

“আই হোপ সো। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় নাদিয়া ওর ওখানে যেতে বলেছে। আমি বুঝছি কেন?”

“ গেলেই জানতে পারবেন স্যার। তা আপনি ওঁর কাছ থেকে ঘুরে আসুন না, আমরা হয় একটু পরেই ডিনার খাব।”

“খেপেছেন নাকি! আপনাকে রেখে আমি একলা যাব? আপনিও আসবেন, আমাকে পাহারা দিতে হবে না!”