৫. দিনের আলোয়

. দিনের আলোয়

সকালবেলা ভয়ংকর এক চিৎকার শুনে হঠাৎ করে একসাথে টুশি আর তপু লাফিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল। কয়েক সেকেন্ড লাগল বুঝতে ব্যাপারটা কী–বসার ঘর থেকে কাবিল কোহকাফী চিৎকার করছে, একই সাথে ভয়ের এবং ক্রোধের একধরনের চিৎকার। টুশি এবং তপু একজন আরেকজনের দিকে তাকাল তারপর বিছানা থেকে নেমে একছুটে বসার ঘরে গিয়ে তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। টেলিভিশনে একটা মারামারির দৃশ্য দেখাচ্ছে এবং মাঝে মাঝে ভয়ংকর চেহারার একজন মানুষ অস্ত্র-হাতে লাফঝাঁপ করছে, কাবিল কোহকাফী তার সামনে তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং টেলিভিশনের সেই মানুষের সাথে যুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। কাবিল কোহকাফী লাফাচ্ছে এবং তরবারি নেড়ে তেড়ে যাচ্ছে, চিৎকার করে বলছে, “খুন করে ফেলব–একেবারে খুন করে ফেলব বেতমিজ! খামোশ! কাছে আসবি না আমার, খবরদার কাছে আসবি না। বেল্লিক-নালায়েক-বদমাইশ—“

টুশি আর তপু বুঝতে পারল কাবিল কোহকাফী টেলিভিশনের দৃশ্যটাকে সত্যি ভাবছে আর সেটা নিয়েই এই ঝামেলা। টুশি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে সোফার উপর থেকে রিমোট কন্ট্রোলটা হাতে নিয়ে টিভিটা অফ করে দেয়।

কাবিল কোহকাফী বন্ধ টিভিটার দিকে তাকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে তার চোখমুখ উত্তেজনায় লাল হয়ে আছে, দুই হাত দিয়ে তরবারিটা শক্ত করে ধরে রেখেছে, মনে হচ্ছে টেলিভিশন থেকে কেউ বের হয়ে এলেই এক কোপে তার গলা আলাদা করে ফেলবে। টুশি আর তপুর দিকে তাকিয়ে কাবিল কোহকাফী বলল, “সাবধান। খুব সাবধান–এই বাক্সের ভিতর থেকে খুন করতে আসছে।”

টুশি বলল, “এই বাক্সের ভিতর থেকে কেউ আসছে না। এটার নাম টেলিভিশন। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান হয়, মানুষ সেই অনুষ্ঠান দেখে।”

কাবিল কোহকাফী অবাক হয়ে টুশির দিকে তাকিয়ে রইল, মনে হল সে তার কথা ঠিক বুঝতে পারছে না। টুশি রিমোটটা দেখিয়ে বলল, “এই যে দ্যাখো, এটা দিয়ে টেলিভিশন অন করে।”

টুশি টেলিভিশনটা চালাতেই কাবিল কোহকাফী তরবারিটা ধরে লাফিয়ে উঠল। কিন্তু তখন সেখানে একটা সাবানের বিজ্ঞাপন হচ্ছে, সুন্দরী একটা মেয়ে নেচে নেচে গান গাইছে এবং সেটা দেখে কাবিল কোহকাফীর চোখ গোল গোল হয়ে উঠল। টুশি রিমোট টিপে আবার টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়ে বলল, “এই দ্যাখো এইটা টিপে আবার অফ করে দেয়া যায়।”

কাবিল হা হা করে বললে, “কই গেল? ঐ মেয়েটা কই গেল? একেবারে শাহজাদি দুনিয়ার মতো দেখতে!”

টুশি বলল, “এইটা সত্যিকারের মেয়ে না। এইটা টেলিভিশনের ছবি। তুমি নিশ্চয়ই ভুল করে এই রিমোটটা টিপে দিয়েছিলে!”

“হ্যাঁ।” কাবিল কোহকাফী মাথা নাড়ল, “টিপে দিতেই বাক্সের ভিতর থেকে একটা লোক আক্রমণ করল!”

টুশি হাসি গোপন করে বলল, “তোমার চিৎকার শুনে যা ভয় পেয়েছিলাম!”

কাবিল বলল, “আমিও ভয় পেয়েছিলাম। কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ বাক্সের ভিতর থেকে পাগলা মানুষ চাকু হাতে ছুটে আসছে! ওহ্!”

“তোমার রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়েছিল?”

“হ্যাঁ। এক হাজার বছর পর হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমালাম। কী আরাম! আহ্! শুধু এই দাড়ি আর চুল–কুট কুট কুট কুট করে। আজকে সব কেটে ফেলব।”

কথা শেষ করেই কাবিল একমুঠি দাড়ি ধরে টেনে তরবারি দিয়ে কাটার চেষ্টা। করতে লাগল। টুশি বলল, “আরে কী করছ। গাল কেটে যাবে তো?”

“দাড়ি কাটতে হলে একটু গাল কাটেই!”

টুশি মাথা নাড়ল, বলল, “না। তরবারি দিয়ে কেউ দাড়ি কাটে না। দাড়ি কাটার জন্যে কাঁচি আছে, রেজর আছে।”

“সেগুলো আবার কী? এই দুনিয়ায় দেখি একটার পর আরেকটা ম্যাজিক!”

কাজেই কাবিল কোহকাফীকে বাথরুমে নিয়ে কাঁচি, রেজর, শোভিং ক্রিম সাবান টুথপেস্ট টুথব্রাশ এইসব দেখিয়ে দিল। কাবিল কোহকাফী সবচেয়ে বেশি অবাক হল পানির ট্যাপ দেখে, ট্যাপ খুললেই পানি বের হয়ে সেটা সে সে বিশ্বাসই করতে পারে না। সে হাঁ হয়ে পানির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর পানিতে হাত দিয়ে আনন্দে হা-হা, করে হাসতে থাকে। চোখ বড় বড় করে টুশি আর তপুর দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি এক হাজার বছর গোসল করি নাই! এক হাজার বছর!”

টুশি নাক কুঁচকে কাবিল কোহকাফীর দিকে তাকাল, তার শরীর থেকে যে বোটকা গন্ধ বের হচ্ছে এক হাজার বছর গোসল না করলে এরকম গন্ধ হতেই পারে! সে মুখ শক্ত করে বলল, “খুব ভালো করে গোসল করো–এক হাজার বছর গোসল না করা ভালো ব্যাপার না!”

টুশি কাবিল কোহকাফীকে একটা শুকনো তোয়ালে, তপুর আব্দুর একটা ঢিলে পায়জামা আর পাঞ্জাবি দিয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিল।

কাবিন কোহকাফী অনেক হৈচৈ করে ভেতরে চুল দাড়ি কেটে গোসল করতে লাগল। একসময় সাবান চোখে যাওয়ায় সে ভেতর থেকে ভয়ংকর চিৎকার করতে শুরু করে। তখন টুশিকে বলতে হল ভয় পাওয়ার কিছু নেই, পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পরেই ভেতর থেকে কাবিল গলা ফাটিয়ে গান গাইতে লাগল। হঠাৎ করে গান থেমে গেল এবং হুটোপুটির শব্দ শোনা গেল। আবার হুটোপুটি থেমে গিয়ে গানের শব্দ বের হতে লাগল–মনে হতে লাগল ভেতরে কেউ গোসল করছে না, বুঝি কারো সাথে কুস্তি করছে।

শেষ পর্যন্ত বাথরুম থেকে যখন কাবিল কোহকাফী বের হয়ে এল তখন তাকে দেখে টুশি এবং তপু চমৎকৃত হয়ে যায়, দাড়িগোঁফ শেভ করা, মাথার চুল কেটে ছোট করা, একটা পায়জামা আর পাঞ্জাবি পরে আছে পরিষ্কার ভদ্রলোকের মতো চেহারা। লম্বা চুল, লম্বা দাড়ি, কানে দুল গলায় মালা, হাতে তরবারি জরিদার জাব্বাজোব্বা পরা যে ভয়ংকর জিনকে দেখে রাত্রে তারা ভয় পেয়েছিল সকালবেলার এই কাবিল কোহকাফীর মাঝে তার কোনো চিহ্নই নেই। তাকে দেখে কোনোভাবেই জিন মনে হয় না, সে পুরোপুরি একজন মানুষ এবং তাকে দেখে হঠাৎ টুশির এখন অন্যরকম একটা ভয় হতে লাগল, তার মনে হতে লাগল কাবিল কোহকাফী আসলে জিন না, লে একজন মানুষ, কীভাবে কীভাবে জানি বাসায় ঢুকে গেছে। সে তপুকে ফিসফিস করে বলল, “তপু!”

“কী-কী হয়েছে?”

“আমার কী মনে হচ্ছে জানিস?”

“কী?”

“কাবিল কোহকাফী আসলে জিন না, আসলে একজন মানুষ।”

তপু অবাক হয়ে বলল, “মা-মা-মানুষ হলে বো-বোতলের ভিতর ঢুকেছে কেমন করে?”

“বোতলের ভিতরে কখনও ঢুকে নাই। আমাদের মিথ্যে কথা বলছে। দেখছিস না একেবারে মানুষের মতো!”

রাত্রিবেলা কাবিল কোহকাফীকে দেখে তপু যেরকম ভয় পেয়েছিল এখন তাকে দেখে তার মোটেই সেরকম ভয় লাগছে না, টুশির কথা শুনে সে একেবারে সরাসরি কাবিলকে জিজ্ঞেস করে বসল, বলল, “তু-তুমি আসলে জিন না?”

কাবিল কোহকাফী ভুরু কুঁচকে বলল, “এ্যা! কী বললে?”

“বলেছি তু-তুমি জিন না। তু-তুমি মানুষ।”

কাবিল কোহকাফীকে দেখে মনে হল তপুর কথা শুনে সে খুব অপমানিত হয়েছে। মুখ চোখ লাল করে বলল, “ছি ছি ছি, তুমি কী বলছ? আমি মানুষ কেন হব? আমি জিন?”

এবারে টুশিও তপুর সাথে যোগ দিল, বলল, “আসলে তুমি জিন না, আসলে তুমি মানুষ। রাত্রিবেলা তুমি যখন ওরকম জামাকাপড় পরে ঢং করে লাফঝাঁপ দিয়েছ তখন আমরা ভয় পেয়ে ভেবেছিলাম তুমি জিন! এখন বুঝতে পারছি পুরোটা তোমার অ্যাকটিং। তুমি দাড়ি কেটে গোসল করে পায়জামা পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছ। তুমি একজন মানুষ।”

কাবিল পা কাঁপিয়ে বলল, “আমি জিন।”

টুশিও সমান জোরে পা কাঁপিয়ে বলল, “তুমি মানুষ! আমি আরব্য রজনীর গল্প পড়েছি। আমি জিন ভূতের কিচ্ছা পড়েছি। আমি পড়েছি জিনেরা এসেই সালাম দিয়ে বলে, আমি আপনার বান্দা, হুকুম করুন। তখন যেটাই হুকুম করা হয় সেটাই জিনেরা শোনে।” টুশি তপুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তাই না রে তপু?”

তপু মাথা নাড়ল, টুশি যে-কথাই বলে সে সবসময় সেটাতে মাথা নাড়ে। কিন্তু কাবিল কোহকাফী টুশির কথা মানল না, হাত নেড়ে বলল, “আরে ধুর! বাজে কথা, জিনেরা কখনও কারও হুকুম শোনে না।”

টুশি বলল, “একশবার শোনে।”

 “তা হলে সেই আগের যুগে শুনত। আজকাল শোনে না।”

 টুশি বলল, “তা হলে তোমাকে কোনো হুকুম করা যাবে না?”

“নাহ্।”

টুশি রেগে গিয়ে বলল, “আমার কী মনে হয় জান?”

 “কী?”

“তুমি আসলে জিন না–তুমি মানুষও না, তুমি হচ্ছ সন্ত্রাসী। তুমি এই বাসায় ডাকাতি করতে এসেছ। তোমার দলের আরও লোকজন আছে তারাও ডাকাতি করতে রেডি হচ্ছে। তোমার একটা অন্য নামও আছে, খচ্চর কাবিল কিংবা পিচ্চি মহিন্দর কিংবা ট্যারা কোহকাফী”

টুশির কথা শুনে কাবিল খুব রেগে গেল, চিৎকার করে বলল, “কক্ষনো না। আমার নাম খচ্চর কাবিল না। আমি জিন। হান্ড্রেড পার্সেন্ট খাঁটি জিন।”

টুশি বলল, “কী প্রমাণ আছ যে তুমি জিন দেখাও একটা প্রমাণ। দেখাও।”

“কী প্রমাণ চাও?”

 “এক ঘড়া সোনার মোহর নিয়ে এসো।”

“সোনার মোহর?” কাবিল কোহকাফী মুখ ভেংচে বলল, “আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই, এখন আমি তোমার জন্যে জঙ্গলে জঙ্গলে সোনা খুঁজে বেড়াই!”

তপু টুশির হাত ধরে বলল, “না টু-টুশি আপু। বলে একটা ক-ক কম্পিউটার।”

“হ্যাঁ। টুশি মাথা নাড়ল। ঠিক বলেছিস, একটা কম্পিউটার নিয়ে আসো।”

কাবিল কোহকাফী বুকে থাবা দিয়ে বলল, “আমি একটা জিন, আমি চোর না। তোমার জন্যে আমি চুরিচামারি করে জিনিস আনব? আমার আর কাজ নাই?”

“ঠিক আছে, ঠিক আছে, ঠিক আছে।” টুশি বিচিত্র সেই বোতলটা নিয়ে এসে বলল, “তুমি তা হলে আবার এই বোতলের ভিতর ঢোকো।”

কাবিল কোহকাফী হা হা করে হেসে বলল, “তুমি আমাকে বেকুব পেয়েছ? শাহজাদি দুনিয়া এই ট্রিক্স করে আমাকে বোতলের ভিতরে ঢুকিয়েছিল। জিনেরা এত বোকা না, তারা এক ভুল দুইবার করে না!”

 “তার মানে তুমি কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না যে তুমি জিন। জিনেরা কত রকম অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে, তুমি তার কিছুই করতে পার না। তুমি সত্যিকারের জিন হলে সেগুলি করতে পারতে।” কথা শেষ করে টুশি তপুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তাই না রে তপু?”।

তপু আবার বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ল। কাবিল কোহকাফী এবার হেঁটে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে সেটার উপর প্রচণ্ড থাবা দিয়ে বলল, “অবশ্যই আমি অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করতে পারি।”

টুশিও কাবিল কোহকাফীর পিছনে পিছনে গিয়ে টেবিলে সমান জোরে থাবা দিয়ে বলল, “কী করতে পার?”

“আমি বাতাসে উড়তে পারি। জাদু দিয়ে মানুষকে টিকটিকে বানাতে পারি। মন্ত্র পড়ে লোহাকে সোনা বানাতে পারি।”

 “ঠিক আছে, ঠিক আছে পরীক্ষা হয়ে যাক!” টুশি তপুর দিকে তাকিয়ে বললো, “তপু যা তো লোহার কিছু-একটা নিয়ে আয়।”

তপু প্রায় ছুটে গিয়ে তার আব্দুর টুল-বক্স থেকে বড় একটা হাতুড়ি নিয়ে এল। সেটাকে ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে বলল, “এ-এ-এটাকে সোনা বানাও।”

কাবিল কোহকাফী তার পাঞ্জাবির হাত গুটিয়ে খুব গম্ভীর মুখ করে এগিয়ে এল। হাতুড়িটার দিকে তাকিয়ে হাত-পা নেড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে শরীর দুলিয়ে সে মন্ত্র পড়তে শুরু করে,

“অজটং ভজটং লোহাটং সোনা
সোনাটং সোনাটং লোহাটং মোনা
টুকুল টুকুলি মুকুলি ঘাস
ঝুককুর মুককুর পেটাটুং ফাস”

 হঠাৎ মনে হল সে মন্ত্রটা ভুলে গেছে। কয়েকবার চেষ্টা করে মাথা চুলকে। বলল, “ফাসটুলি মাসটুলি এ্যা–ইয়ে মানে ভোম্বাটুলি লাশ।” তারপর চোখ বন্ধ করে হাতুড়িতে ফুঁ দিয়ে বলল, “হয়েছে?”

টুশি বলল, “না, হয় নাই।”

“হয় নাই?” কাবিল কোহকাফী খুব অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “কী আশ্চর্য!”

“এর মাঝে আশ্চর্যের কিছু নাই। তুমি একটা ভড়ং করেছ আর কিছু না।”

“আমি মোটেও ভড়ং করি না।”

 টুশি রেগে বলল, “তা হলে?”

“আসলে মন্ত্রের শেষ লাইনটা ভুলে গেছি। অনেকদিন প্র্যাকটিস করি নাই তো সেজন্যে মনে নাই। শেষ লাইনটা হবে মাসটুলি ফাঁসটুলি–”।

টুশি বাধা দিয়ে বলল, “থাক থাক । অনেক হয়েছে। তোমার আর মন্ত্র পড়তে হবে না। তার চাইতে আমি একটা কথা বলি তুমি সেটা মন দিয়ে শোনো।”

“কী কথা?”

“আমরা এখন হানড্রেড পার্সেন্ট শিওর যে তুমি একটা ফালতু মানুষ। চোর কিংবা ডাকাত, কোনো একটা বদ মতলব নিয়ে এসেছ। বাসার ভিতরে তুমি কীভাবে এসেছ সেটা আমরা এখনও বুঝতে পারি নাই–কিন্তু সেটা অন্য ব্যাপার। তাই আমি কী ঠিক করেছি জান?”

“কী ঠিক করেছ?”

“আমি এক্ষুনি দারোয়ানকে ডাকব। সে এসে তোমাকে বেঁধে নিয়ে যাবে। আর সেটা যদি না চাও তুমি নিজে নিজে বের হয়ে যাও।”

কাবিল কোহকাফী এত অবাক হল যে সেটা আর বলার মতো নয়। চোখ কপালে তুলে বলল, “তুমি এরকম একটা পুঁচকে মেয়ে আমাকে বের হয়ে যেতে বলছ?”

টুশি মাথা নাড়ল, বলল, “বলছি।” তারপর তপুর দিকে তাকিয়ে বলল,” তপু তুই দরজাটা খুলে দে তো।”

কাবিল কোহকাফী মাথা নেড়ে বলল, “আমাকে তুমি বের করে দিচ্ছ? আমি একজন সম্মানী জিন। তোমাদের একজন মেহমান।”

“যাদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনে তারা হচ্ছে মেহমান। তোমাকে এখানে কে দাওয়াত দিয়েছে?”

কাবিল কোহকাফী এবারে সত্যিই একটু কাহিল হয়ে গেল। মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, “তা হলে তুমি বিশ্বাস করছ না যে আমি জিন?”

“না।”

 “আমি যদি উড়ে দেখাই তা হলে বিশ্বাস করবে?”

 “আগে দেখাও।”

কাবিল কোহকাফী ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ওড়ার জন্যে প্রস্তুত হল। বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে দুই পাশে দুইটা হাত নিয়ে হঠাৎ করে পাখির মতো করে হাত ঝাঁপটাতে শুরু করল। হাত ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে সে ঘরের মাঝে দৌড়াতে থাকে, ঘরের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে সে টেবিল-ল্যাম্পের ওপর আছাড় খেয়ে পড়ল। সেখান থেকে উঠে হাত ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে সে শেলফে ধাক্কা খেল, শেলফ থেকে কয়েকটা বই নিচে পড়ে গেল, তার উপর দিয়ে কাবিল কোহকাফী দৌড়ে গেল, মুখে চিৎকার করতে লাগল, “আমি উড়ছি! আমি উড়ছি। এই দ্যাখো আমি উড়ছি।”

তপু মাথা নেড়ে বলল, “না। তু-তুমি ওড়ো নি।”

 টুশি কঠিন মুখে বলল, “মাটি থেকে তুমি এক ইঞ্চিও উপরে উঠ নি।”

কাবিল কোহকাফী হাত নেড়ে নেড়ে দৌড়ানো বন্ধ করে বলল, “উপরে উঠি নি? কী আশ্চর্য!”

 “হ্যাঁ। তুমিআবার একটা ভড়ং করছ।”

“আসলে অনেকদিন উড়ি নাই তো সেইজন্যে প্র্যাকটিস নাই। শাহজাদি দুনিয়াকে নিয়ে যখন বাগদাদ থেকে কোহকাফ নগরে উড়ে গেলাম”।

টুশি মুখ শক্ত করে দরজার দিকে আঙুল দিয়ে বলল, “আউট। এক্ষুনি আউট। যদি আউট না হও তা হলে আমি আর তপু ধাক্কা দিয়ে তোমাকে আউট করে দেব। তাই না রে তপু?”

তপু বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ল।

তবে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার দরকার হল না। কারণ ঠিক সেই সময় বাসার বেল বাজল। বাইরে তপুর আব্ব আর আম্মুর গলায় স্বর শোনা গেল।

টুশি কাবিল কোহকাফীর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচে বলল, “এখন হয়েছে তো? চাচা-চাচি এসেছেন। তাদের সামনে তোমার জিনগিরি দেখাও। আমি তো ভালো মানুষের মতো তোমাকে খালি বাসা থেকে বের করে দিচ্ছিলাম, তারা তোমাকে নিশ্চয়ই পুলিশে দেবেন!”

কাবিল কোহকাফী ভয়-পাওয়া মুখে কিছু-একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই টুশি দরজা খুলে দিয়েছে এবং সেই খোলা দরজা দিয়ে প্রথমে চাচা এবং তার পিছুপিছু চাচি এসে ঢুকলেন।

কাবিল কোহকাফী পাংশু মুখে দাঁড়িয়ে আছে, চাচা এবং চাচি সোজা তার দিকে এগিয়ে এলেন।