২০. বার মাসের নফল এবাদত (বিংশ খণ্ড)

বিংশ খণ্ড –- বার মাসের নফল এবাদত

বার চান্দের ফযীলত ও ইবাদতের বিবরণ–

মহরম মাসের এবাদতের বিবরণ

হযরত মাওলানা শাহ্ সুফী বাহাউদ্দীন নকশাবন্দী (রহঃ) বলেছেন, মহররম মাসের চাঁদ দেখার রাতে দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করা যায়। তার প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পড়তে হয়। নামাযের পরে নিম্নের দোয়াটি ৩ বার পড়তে হবে।

দোয়াটি এই :

سبوح قدوس ربنا ورب

উচ্চারণ : সুব্বুহুন কুদ্দসুন্ রব্বনা–ওয়া রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ্।

.

মহররমের ১লা তারিখের নফল নামায

জাওয়াহিরে গায়বী ও রাহাতুল কুলুব কিতাবে বর্ণিত আছে, মহররমের ১লা তারিখ দিনের বেলা যে কোন সময় দু’ রাক’আত নফল নামায পড়া যায়। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাছ ৩ বার করে পড়তে হয়। আর নামাযের পরে হাত উঠিয়ে নিম্নের দোয়াটি ৩ বার পড়তে হয়। যে ব্যক্তি এ নামায পড়বে তার জন্য আল্লাহ তা’আলা দুজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেবেন, তারা নামাযী ব্যক্তির কাজে কর্মে সাহায্য করবে এবং শয়তান যাতে তাকে ধোকা দিতে না পারে সেজন্য তারা সাহায্য করবে।

দোয়াটি এই ঃ

اللهم أنت الله الأب القيم. هذه شئ جويدة أشك فيه العصمة من الشيطان الرجيم . والأمان من الشلطان الجابر–ومن كل ذي شرق من البلاء ولافات . واسئلك العون والعدل على هذه النفس الأمارة بالشوء والاشتغال بما يقويني اليك يا ر یا ر–يارحيم ياذا الجلال

والإكرام–

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আন্তাল্লা-হু আবাদুল কাদীমু; হা-যিহী সুন্নাতুন জাদীদাতুন আসয়ালুকা ফীহাল ইছমাতা মিনাশ শাইত্বোয়া-নির রাহীম; ওয়াল আমা-না মিনাস সুলত্বোয়া-নিল জা-বিরি; ওয়া মিন্ কুল্লি যী শাররিওঁ ওয়া মিনাল বালা-য়ি ওয়াল্ আ-ফা-তি; ওয়া আসয়ালুকাল আওনা ওয়াল আদলা আলা–হা-যিহিন নাফসিল আম্মা-রাতি বিচ্ছুয়ি ওয়াল ইশতিগা-লা বিমা–ইয়ুক্কাররিবুনী ইলাইকা ইয়া–বাররু ইয়া–রাউফু। ইয়া–রহীমু ইয়া–যাল জালালি ওয়াল্ ইকরা-ম।

.

আশুরার রাত্রি বেলার নফল নামায

হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে লোক মহররম মাসের প্রথম রাতে দু’ রাক’আত করে মোট আট রাক’আত নামায আদায় করবে এবং তার প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১০ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে; আল্লাহ তা’আলা তার মাল-আসবাব ও সন্তান সন্তুতিদেরকে সমস্ত বছর হেফাজত করবেন এবং নিজের সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত করবেন। আর নামাযী ব্যক্তির পূর্বের এক বৎসরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন।

আর এক বর্ণনায় আছে যে, মহররম মাসের প্রথম রাতে যদি কোন ব্যক্তি আট রাক’আত নামায এরূপে আদায় করে যে, তার প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১০ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে এবং দু দু রাক’আতের নিয়তে নামায পড়বে। যদি নামাযী ব্যক্তি ও তার পরিবার পরিজন শিরক বিদআ’তে শরীক না হয়ে থাকে, তবে তাকে ও তার পরিবার বর্গের জন্য রোজ কেয়ামতে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) অবশ্যই শাফায়াত করবেন।

.

আশুরার দিনের বেলার নফল এবাদত

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের জন্য জাহান্নামের আজাবকে হারাম করতে ইচ্ছা করে, সে যেন মহররম মাসে (নফল) রোযা রাখে।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মহররম মাসের প্রথম ১০ দিন রোযা রাখবে, সে ব্যক্তি যেন ১০ হাজার বৎসর যাবত দিনের বেলা রোজা রাখল এবং রাতে ইবাদতে কাটালে।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : মহররম মাসে ইবাদতকারী ব্যক্তি যেন ক্বদরের রাতের ইবাদতের ফযীলত লাভ করল।

হাদীস : হযরত ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন, তোমরা আল্লাহ তা’আলার পছন্দনীয় মাস মহররমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো। যে ব্যক্তি মহররম মাসের সম্মান করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের মধ্যে সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নামের আজাব হতে বাঁচিয়ে রাখবেন।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ রমযানের রোজার পরে মহররমের ১০ তারিখের রোযা অন্যান্য সমস্ত রোযা হতে উত্তম।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) ফরমায়েছেন : মহররমের ১০ তারিখে রোযা রাখা হযরত আদম (আঃ) ও অন্যান্য নবীদের উপর ফরয ছিল। এই দিনে ২০০০ নবী জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং ২০০০ নবীদের দোয়া কবুল করা হয়েছে।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যে ব্যক্তি আশুরার রোযা রাখল, সে যেন ৬০ বছর দিনে রোযা ও রাতে ইবাদত করার সওয়াব লাভ করল।

হাদীসঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (ছঃ) আশুরার দিনে রোজা রেখেছিলেন এবং তিনি অন্যান্য সাহাবীদেরকেও রোযা রাখতে বললেন। অতঃপর সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (ছঃ)! এ দিনে ইহুদীরা রোযা রেখে থাকে, তবে কি আমরা তাদের অনুকরণ করব:তৎশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন, আমি জীবিত থাকলে আগামী বছর আশুরার পূর্বের দিনও রোযা রাখব।

হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে নিজ পরিবার বর্গের খাওয়া পরার জন্য বেশি অর্থ খরচ করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সে বছরের রিযিক ও রোজগারে ততোধিক বরকত দান করবেন।

.

সফর মাসের এবাদতের বিবরণ

 ছফর মাসের ১লা তারিখে মাগরিবের পরে এশার নামাযের পূর্বে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট চার রাক’আত নামায কেউ আদায় করলে, যার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, এবং নামাযের পর নিম্নের দুটি দুরূদ শরীফ হতে যে কোন একটি দুরূদ শরীফ এক হাজার বার পাঠ করলে, আল্লাহ তা’আলা তাহার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং স্বপ্নের মাধ্যমে হযরত নবী করীম (ছঃ)-এর সে যেয়ারত তার নছীব হবে।

প্রথম দুরূদ শরীফ হল :

اللهم صل على محمدن النبی الامی و اله وسلم۔

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ-লিহী ওয়া সাল্লিম।

দ্বিতীয় দুরূদ শরীফ হল:

اللهم صل على محمد عبدك و حبيبك النبی الامی وسلم ..

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিন্ আবদিকা ওয়া হাবীবিকান নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া সাল্লিম।

বর্ণিত আছে, সফর মাসের প্রথম সপ্তাহ অত্যাধিক ফযীলতপূর্ণ ও বরকতময়। কেউ যদি প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমু’আর রাতে এশার নামাযের পরে চার রাক’আত নামায আদায় করে স্বীয় মকছুদ পূর্ণের জন্য দোয়া করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাহার প্রার্থনা কবুল করবেন ও নেক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবেন।

.

আখেরী চাহার শোম্বার ফযীলত

আখেরী চাহার শোম্বার অর্থ হচ্ছে শেষ বুধবার; অর্থাৎ সফর মাসের শেষ বুধবারকে বুঝানো হয়েছে। এ দিনটি মুসলিম জাহানে খুশীর দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এর কারণ হল, নবী করীম (ছঃ) দুনিয়া হতে বিদায় নেয়ার পূর্ববর্তী সফর মাসের শেষ সপ্তাহে ভীষণভাবে রোগে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন, অতঃপর তিনি এ মাসের শেষ বুধবার দিন সুস্থ হয়ে গোসল করতঃ কিছু খানা খেয়ে মসজিদে নববীতে হাযির হয়ে নামাযের ইমামতী করেছিলেন। এতে উপস্থিত সাহাবীরা অত্যাধিক আনন্দিত হয়েছিলেন। আর খুশীর কারণে অনেক দান খয়রাত করেছিলেন। বর্ণিত আছে, হযরত আবূ বকর (রাঃ) খুশীতে ৭ সহস্র দীনার এবং হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) ৫ সহস্র দীনার, হযরত ওসমান (রাঃ) ১০ সহস্র দীনার, হযরত আলী (রাঃ) ৩ সহস্র দীনার এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) ১০০ উট এবং ১০০ ঘোড়া আল্লাহর ওয়াস্তে দান করেছিলেন। তারপর হতে মুসলমানরা সাহাবীদের নীতি অনুকরণ ও অনুস্মরণের জন্য পৃথিবীময় এ আখেরী চাহার শোম্বা দিবসটি প্রতি বছর উদযাপন করে আসছে। হযরত নবী করীম (ছঃ)-এর এ দিনের গোসলই জীবনের শেষ গোসল ছিল। এর পর আর তিনি জীবিতকালে গোছল করেন নেই। তাই সকল মুসলমানের জন্য এ দিবসে ওযূ-গোসল করতঃ এবাদত বন্দেগী করা উচিৎ এবং নবী করীম (ছঃ)-এর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করতঃ সওয়াব রেছানী করা কর্তব্য। আর নিম্ন লিখিত নিয়মে নফল নামায পড়া উচিত। এতে অনেক সওয়াব লাভ হবে।

জাওয়াহেরে গায়েবী কেতাবে বর্ণিত আছে, ছফর মাসের শেষ বুধবারে চাশতের ওয়াক্তে দু’ রাক’আত নামায নিম্ন নিয়মে আদায় করলে, আল্লাহ তা’আলা নামাযী ব্যক্তির অন্তর কোশাদা করে দেবেন এবং রুজী রোজগার বাড়িয়ে দেবেন। নিয়ম হল, প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। আর নামাযের পরে সূরা আলামনাশরাহ, সূরা ওয়াত্বীনি, সূরা ইয়াজা ও সূরা ইখলাছ ৮০ বার করে পাঠ করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবে।

আর এক বর্ণনায় আছে যে, এ দিবসে প্রত্যেক ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরে নিম্নোক্ত সাত সালাম পড়ে শরীরে দম করতে হয় এবং এ সাত সালাম একটি পানের উপর লিখে তা পানি দ্বারা ধুয়ে সে পানি পান করলে, আল্লাহর রহমতে সে ব্যক্তি সর্ব প্রকার রোগ-ব্যধি হতে মুক্ত থাকবে, রোগ থাকলে আরগ্য হবে এবং তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।

সাত সালাম এই :

।–L 54 44 ০১ (*)—-১–15 21 (1)

• ১ (০)–৬১৪ ৬ • ১ (!)–> 04 > ()

الياسين–(6) سلام عليكم طبتم فادخلوها خلدين–(۷) سلام هی حتى مطلع الفجر۔

উচ্চারণ : (১) সালা-মুন্ কাওলাম মির রব্বির রাহীম। (২) সালা-মুন আলা নূহিন ফিল্ আলামীন, (৩) সালামুন আলা ইব্রাহীম, (৪) সালা-মুন আলা–মূসা–ওয়া হারুন, (৫) সালা-মুন আলা–ইলইয়া-সীন, (৬) সালা-মুন আলাইকুম ত্বিবতুম ফাদখুলূহা–খালিদ্বীন, (৭) সালা-মুন হিয়া হাত্তা–মাতৃলায়ি’ল ফাজর।

.

রবিউল আউয়াল মাসের এবাদতের বিবরণ

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে রহমাতুললি আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবীয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ (ছঃ) পৃথিবীর মাঝে তাশরীফ এসেছিলেন এবং ৬৩ বৎসর বয়সে এ মাসের এ তারিখেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ পাকের দরবারে গমন করেছিলেন। তাই এ বরকতময় দিবসটির গুরুত্ব অত্যাধিক।

সারা জাহানের মুসলমানদের নিকট এ দিনটি খুশীর দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। যেহেতু আল্লাহর প্রিয় হাবীবকে তিনি এই ধরায় রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছিলেন। এ দিনে পৃথিবীর মুসলিম সমাজ হযরতের জীবন চরিত আলোচনা করে থাকে, অনেকে দুরূদ শরীফ, মীলাদ শরীফ, কোরআন খতম, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি নফল ইবাদত করে রাসূলে করীমে প্রতি সওয়াব রেছানী করে থাকে। তবে এ মাসের প্রত্যেক দিবসেই উপরোক্ত এবাদতসমূহ করা যায় এবং তার কিছু কিছু নিয়ম এখানে উল্লেখ করলাম।

বর্ণিত আছে, এ মাসের ১২ তারিখে বুজুর্গ তাবেয়ীগণ রাসূলে করীম (ছঃ)-এর রূহের মাগফিরাতের জন্য ২০ রাক’আত নফল নামায পড়তেন। এই নামায দু’ দু’ রাক’আতের নিয়্যতে আদায় করতেন এবং প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পড়তেন। নামায শেষে আল্লাহর হাবীবের প্রতি সওয়াব রেছানী করতেন। তারা এর বরকতে খাবের মাধ্যমে হযরত রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-কে দর্শন লাভ করতেন এবং দোজাহানের খায়ের ও বরকত লাভ করতেন।

অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন মু’মিন ব্যক্তি নিম্নের দুরূদ শরীফ এ মাসের যে কোন তারিখে এশার নামাযের পরে ১১২৫ বার পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে সে ব্যক্তি নবী করীম (ছঃ)-কে স্বপ্নে দর্শন করবে।

দরূদ শরীফ এই :

اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على ابراهيم

وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্ কামা ছল্লাইতা আলা–ইব্রাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।

.

রবীউস-সানী মাসের এবাদতের বিবরণ

জাওয়াহেরে গায়েবী কেতাবে বর্ণিত আছে, রবিউস-সানী মাসের প্রথম তারিখ রাতে চার রাক’আত নফল নামায আদায় করতে হয়। তার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাছ পড়তে হয়। এ নামায আদায়কারীর আমল নামায় ৯০ হাজার বছরের সওয়াব লিখা হবে এবং ৯০ হাজার বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

আর এক বর্ণনায় আছে যে, এই মাসের শেষ রাতে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে চার রাক’আত নফল নামায পড়তে হয়। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পড়তে হয়। আল্লাহ তা’আলা ঐ নামাযীর কবর আজাব মাফ করে দেবেন এবং দুনিয়ার জিন্দেগীতে সুখ-শান্তি দান করবেন।

অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, কোন ব্যক্তি যদি এ মাসের প্রথম সপ্তাহে যে কোন দিন দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট চার রাক’আত নামায আদায় করে এবং এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা

ফাতিহার পরে ১১ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করে এবং নামাযের পরে নিম্নের দুরূদ শরীফ ১০০০ বার পাঠ করে, তবে আল্লাহ তা’আলা নামাযী ওই ব্যক্তির শত্রু থাকলে দমন করে দেবেন এবং তার ধনসম্পদ বাড়িয়ে তাকে সৌভাগ্য শালী করবেন।

 দুরূদ শরীফ এই :

اللهم صل على محميين النبي الأي الصادق الأمين وعلى اله

م

۔

واصحابه و بارك و

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিনি নাবিয়্যিল উম্মিয়্যিচ্ছোয়া-দিকিল আমীনি ওয়া আলা আ-লিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বা-রিক ওয়া সাল্লিম।

.

জমাদিউল আউয়াল মাসের এবাদতের বিবরণ

বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি এ মাসের প্রথম তারিখে দিনের বেলা দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট ৮ রাক’আত নামায আদায় করলে এবং তার প্রত্যেক রাকয়াতে ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করলে, আল্লাহ তা’আলা উক্ত নামাযীকে অসংখ্য সওয়াব দান করবেন এবং তাঁর দিলের নেক নিয়্যত পূর্ণ করে দেবেন।

আরও বর্ণিত আছে, রাসূলে করীম (ছঃ)-এর সাহাবীরা এ মাসের প্রথম তারিখে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট ২০ রাক’আত নামায আদায় করতেন এবং এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে একবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করতেন। নামাযের পরে নিম্নের দুরূদ শরীফ ১০০ বার পাঠ করতেন। এ নামাযীর আমল নামায় অসংখ্য নেকী লিখা হবে এবং তার সমস্ত নেক নিয়্যত পূর্ণ করা হবে। দুরূদ শরীফ এইঃ

اللهم صل على محمد وعلى آل محمير كما صليت على إبرهيم

12-12 J 24

 উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

.

জমাদিউচ্ছানী মাসের এবাদতের বিবরণ

 জমাদিউস-সানী মাসের নফল ইবাদত সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হল। বর্ণিত আছে, জমাদিউস-সানী মাসের পহেলা তারিখে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীরা দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট ১২ রাক’আত নামায আদায় করতেন। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পড়তেন। আবার কেউ কেউ সূরা ইখলাছের পরে ৩বার আয়াতুল কুরসী পাঠ করতেন। এ নামাযে অসংখ্য নেকী লাভ হয়।

অন্য এক বর্ণনায় বর্ণিত আছে, যদি কোন ব্যক্তির সংসার জীবনে অশান্তি ও বিশৃংখলা লেগে থাকে, শান্তির কোন আলামত না থাকে, তবে সে ব্যক্তি এ মাসে দৈনিক ফরয নামাযের ও মাগরিব নামাযের পরে নিন্মোক্ত তাসবীহ দু’টি ১০০ বার করে পাঠ করলে, আল্লাহর রহমতে তার সর্বপ্রকার অশান্তি ও বিশৃংখলা দূর হয়ে শান্তি বিরাজ করবে এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হতে থাকবে। তাসবীহ দুইটি এই :

 (হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম)—1

 (হুওয়াল গানিয়ুল মাতীন্)–১ (F)

আরও বর্ণিত আছে এ মাসের ১৩/১৪ ও ১৫ তারিখে রাতে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে চার রাক’আত নামায আদায় করলে এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাছ ১৫ বার করে পাঠ করবে। আল্লাহ তা’আলা তার আমলনামায় অশেষ ছওয়াব প্রদান করবেন।

.

রজব মাসের এবাদতের বিবরণ

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) যখন রজব মাসের চাঁদ দেখতেন, তখন তিনি হস্ত মোবারকদ্বয় তুলে এ দোয়া পড়তেন:

اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا إلى شهر رماان .

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বারিক লানা–ফী রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা–ইলা–শাহরি রমাদ্বোয়ান।

অর্থ :হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদেরকে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমযান মাস নছীব করুন।

খোলাছাতুল আখবার কিতাবে উল্লেখ আছে যে, রজব মাসের প্রথম, পনরই ও শেষ তারিখ যে ব্যক্তি প্রাপ্ত হবে এবং উক্ত দিবসে গোসল করবে, সে ব্যক্তি তার সকল গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে যাবে। সে ব্যক্তি ঐ দিবসের ন্যায় পবিত্র হয়ে যাবে, যেই দিবসে সে তার মায়ের উদর হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।

হযরত ওয়ায়েছ ক্বরনী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রজব মাসের দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ১৪ই, ১৫ই এবং ১৭ই তারিখে এবং ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখে রোযা রাখবে। এবং উক্ত দিনসমূহে রোজাবস্থায় চাশতের ওয়াক্তে গোসল করতঃ কারো সঙ্গে কথাবার্তা না বলে চার রাক’আতের নিয়াতে মোট ১২ রাক’আত নামায আদায় করবে। এ নামাযের প্রথম চার রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কদর তিনবার করে পাঠ করবে। নামায শেষে নিম্নোক্ত দোয়া ৭০ বার পাঠ করবে। দোয়াটি এই:

إله إلا الله الملك الحق المبين

উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল মালিকুল হাক্কুল মুবীন।

অতঃপর দ্বিতীয় চার রাকয়াতের নিয়্যত করে সূরা ফাতিহার পরে সূরা নসর তিনবার করে পাঠ করবে। নামায শেষে নিম্নোক্ত দোয়াটি ৭০ বার পাঠ করবে। দোয়াটি এই :

/ A + এ ৪ a & a:(a

انك قوى معين واحدی دليل بحق اياك نعبد واياك نستعين۔

উচ্চারণ : ইন্নাকা কাওয়্যিম মুঈনুওঁ ওয়াহিদিয়ুন দলীলুন বিহাক্কি ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাস্তায়ীন।

তারপর তৃতীয় চার রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। নামায শেষে বুকের উপর হাত রেখে সূরাআলাম্ নাহ্ লাকা ৭০ বার পাঠ করবে। অতঃপর হাত তুলে আল্লাহ্ পাকের দরবারে যা’ই প্রার্থনা করবে, তিনি তা কবূল করবেন ইনশা আল্লাহ্।

.

লাইলাতুর রাগায়িব-এর বিবরণ

 মশহুর মাশায়েখরা রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারের রাতকেলাইলাতুর রাগায়েব বলে অভিহিত করেছেন। এ রাতে মাগরিব নামাযের পরে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট ১২ রাক’আত নামায আদায় করবে। এ নামাযের প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা কদর তিনবার এবং সূরা ইখলাছ দশবার পড়বে। নামায শেষে নিম্নের দুরূদ শরীফ ৭০ বার পড়বে।

দুরূদ এই :

اللهم صلي على محمدن الليبي الأمي وعلى أله وم۔

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আ-লিহী ওয়া সাল্লিম।

অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাবে এবং নিম্নের দোয়া ৭০ বার পড়বে। দোয়াটি এই :

৪ / ০ ৪ ০ ০৭ তে:

والروح

سبوح قدوس ربنا ورب ال

উচ্চারণ : সুবুহুন কুদ্দসুন্ রব্বুনা–ওয়া রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ।

 তৎপর সিজদা হতে উঠে বসে নিম্নের দোয়া ৭০ বার পড়বে।

দোয়াটি এইঃ

رب اغفر وارحم وتجاوژعما تعلم انك أنت العلی العظیم۔

১–১০ মোমিন–৫০/১

উচ্চারণ : রব্বিগফি ওয়ারহাম্ ওয়া তাজা-ওয়াহ্ আম্মা–তালামু ফাইন্নাকা আন্তাল আলিয়ুল আযীম।

অতঃপর পুনরায় সিজদায় গিয়ে দ্বিতীয় দোয়াটি ৭০ বার পড়বে। সিজদা হতে উঠে বসে পুনঃ তৃতীয় দোয়াটি ৭০ বার পড়বে। এখন আল্লাহর দরবারে হাত তুলে যাই প্রার্থনা করবে, তিনি তাই কবুল করবেন।

.

শবে এসতেফতাহ্-এর বিবরণ

রজব মাসের ১৫ই তারিখের রাতকে আওলিয়া–মাশায়েখরাশবে এসতোহ্ বলে অভিহিত করেছেন। এ মহান রাতের নফল ইবাদতের কারণে অনেক মু’মিন বান্দার মনের আকাংখা পূর্ণ হয় এবং ভাগ্য খুলে যায় এ রাতের নফল ইবাদতের কতিপয় নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হল।

১। রজব মাসের ১৫ই রাতে ওযূ গোসল করতঃ পাক পবিত্র পোশাক পরিধান করে দু দু’ রাক’আতের নিয়্যাতে মোট আট রাক’আত নামায আদায় করবে। তার প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। এ নামাযী ব্যক্তি অসংখ্য সওয়াবের অধিকারী হবে এবং দুনিয়াবী জীবনে সৌভাগ্যশালী ও মান-সম্মানের অধিকারী হবে।

২। বর্ণিত আছে, এ রাতে তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের পরে দু’ দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট ৫০ রাক’আত নামায আদায় করবে। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে অথবা অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়বে। এ নামাযের বরকত ও ফজীলত অত্যাধিক, যথা : (১) এই নামাযী ব্যক্তি নামায শেষে আল্লাহর দরবারে যাই প্রার্থনা করবে তিনি তাই কবূল করবেন। (২) এ নামাযীর সকল গুনাহ্ আল্লাহ্ মাফ করে দেবেন। (৩) এ নামাযীর কবর অত্যাধিক উজ্জল হবে (৪) এ নামাযী ব্যক্তি রোজ কেয়ামতের ময়দানে মুত্তাকী, নেকবস্তৃত ও শহীদানের সঙ্গে শামিল হবে এবং আম্বিয়াদের সঙ্গে জান্নাতে দাখিল হবে।

৩। হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) ফরমায়েছেন : রজব মাসের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট সময় (তারিখ) রয়েছে। সে তারিখে নফল নামায পড়লে, তার তকদীরে ১০০ বৎসরের নফল নামাযের সওয়াব লাভ হবে। তবে বুজুর্গ ব্যক্তিরা ধারণা করেছেন যে, এ সৌভাগ্য রাত্রটি হচ্ছে ১৫ই রজবের রাত যাশবে এসূতেহ্ নামে আখ্যায়িত।

৪। বর্ণিত আছে, ১৫ই রজবের রাতে দু দু রাক’আতের নিয়্যাতে মোট ৭০ রাক’আত নফল নামায আদায় করবে। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। এ নামাযী ব্যক্তির আমল নামায দুনিয়ার বৃক্ষসমূহের সংখ্যানুযায়ী সওয়াব লিখা হবে।

.

শবে মি’রাজ এর বিবরণ

রজব মাসের সাতাশ তারিখের রাতটি শবে মি’রাজ নামে বিখ্যাত। এ রাতে হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) মর্তলোক হতে বোরাকে চড়ে উৰ্দ্ধলোকে গমন করতঃ আল্লাহ তা’আলার দীদার–লাভ করে সপ্ত আসমানসহ মহা শূন্যের বহু অলৌকিক ঘটনা ও বস্তুসমূহ দর্শন করে সর্বোত্তম ইবাদত নামাযকে উপঢৌকন হিসাবে লাভ করে পুনরায় পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে ছিলেন। এ রাতটি বহুত বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ রাত। এ রাত্রের নফল এবাদত ও নামায অত্যাধিক সওয়াবের বিষয়। এ সম্পর্কে নিম্নে কিছু আলোচনা করা হল।

জলীলুল কদর সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : রজব মাস প্রাপ্ত হলে তোমরা এ মাসে বেশী পরিমাণে নফল এবাদত করো। হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) নিম্নের দোয়াটি অনেকবার পাঠ করতেন।

দোয়াটি এইঃ

اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا إلى شهر رمضان–

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বারিক লানা–ফী রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা–ইলা শাহরি রমাদ্বোয়ান।

আর এক বর্ণনায় বর্ণিত আছে, শবে মি’রাজের রাতে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে চার রাক’আত নফল নামায আদায় করবে। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। এবং দু রাক’আতের পর ২০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে এবং হাত তুলে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করবে। এ নামাযী ব্যক্তি অসংখ্য সওয়াব লাভ করবে, তার ঈমান মুজবুত হবে এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকবে।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, শবে মি’রাজের রজনীতে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট চার রাক’আত নামায আদায় করবে। এ নামাযের প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা মিলিয়ে পাঠ করবে। নামায শেষ করে কালেমায়ে তামজীদ, দুরূদ শরীফ ও তওবায়ে ইস্তিগফার প্রত্যেকটি ১০০ বার করে পাঠ করবে। অতঃপর সিজদায় গিয়ে আল্লাহ তা’আলার দরবারে যেসব বিষয় নেক আকাংখা করবে, তিনি তা কবূল করবেন।

.

শাবান মাসের এবাদতের বিবরণ

বছরের বার মাসের মধ্যে অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসের মর্যাদা ও ফযীলত অত্যাধিক বেশি। এ মাসের মধ্যেশবে বরাত নামে একটি রাত আছে, যার ফযীলত সম্পর্কে কুরআন শরীফে ও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। এ রজনীভর জেগে থেকে নফল এবাদত বন্দেগী করিলে অসংখ্য সওয়াব লাভ হয়। এ এবাদত সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হল।

ফাজায়েলে শুহুর নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, এ মাসের পহেলা রজনীতে দু’ রাক’আতের নিয়্যতে মোট ১২ রাকয়াত নামায আদায় করবে। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১৫ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। এ নামাযীর আমলনামায় অশেষ পূণ্য লিপিবদ্ধ করা হবে।

আর এক রেওয়ায়েতে হযরত আবুল কাসেম সফফার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, এ রজনীতে এক নিয়্যতে ৮ রাক’আত নামায আদায় করবে। এ নামাযের প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। নামায শেষে এর সওয়াব হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ) এর রূহু মোবারকের প্রতি বখশিশ করবে। হযরত ফাতেমা (রাঃ) বলেছেন, এ নামাযী ব্যক্তির শাফায়াত না করে আমি বেহেশতে গমন করব না।

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন, শাবান মাসের যে কোন জুমু’আর দিবসে দু’ রাক’আতের নিয়্যাতে মোট চার রাক’আত নামায আদায় করবে। এ নামাযের প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ৩০ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। নামাযের পরে ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। এ নামাযী ব্যক্তি একটি হজ্জ ও একটি ওমরার সমান সওয়াব লাভ করবে।

হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যদি কোন ব্যক্তি শাবান মাসে খুলুছিয়াতের সাথে ৩০০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, তবে তার শাফায়াতের দায়িত্ব আমার উপর বর্তাবে। দুরূদ শরীফের মধ্যে এ দরূদ শরীফটি অন্যতম।

দরূদ শরীফঃ

اللهم صلي على سيدنا محمد وعلى الي يبينا محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد. اللهم بارك على سیدنا محمد وعلى أل سيدنا محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد۔

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা–মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লি সাইয়্যিদিনা–মুহাম্মাদিন কামা–ছল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আলা–সাইয়্যিদিনা–মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লি সাইয়্যিদিনা–মুহাম্মাদিন কামা–বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

.

শবে বরাতের মর্যাদা ও ফজীলত

শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেনঃ

طوبى لمن يعمل في ليلة البنصف من شعبان خيرا ۔

উচ্চারণ : তূবা লিমাইয়া’মালু ফী লাইলাতিন্ নিছফি মিন্ শাবানা–খাইরান।

অর্থ :যারা শাবান মাসের ১৫ই তারিখের রাতে এবাদত করবে, তাদের জন্যই সৌভাগ্য ও আনন্দ।

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেনঃ

من صام خامس عشر من شعبان لم تمسه الار ابدا–

উচ্চারণঃ মান ছমা খামিসা আ’শারা মিন্ শাবানা লাম্ তামাচ্ছাহুন না-রু আবাদা।

অর্থ :যেইব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ই তারিখে রোযা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন কখনও স্পর্শ করবে না।

আর এক হাদীসে হযরত রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন:

إن الله يرحم عصاة امتى في ليلة النصف من شعبان بعدد شعور

انعام بنی کلب وبني ربيع ومضر

উচ্চারণ : ইন্নাল্লা-হা ইয়ারহামু উ’ছোয়াতা উম্মাতী ফী লাইলাতিন্ নিছফি মিন শাবানা বিআদাদি শুউরি আনয়া’-মি বনী কিলাবিওঁ ওয়া বনী রবীআ ওয়া মুদ্বোয়ার।

অর্থ :নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে বনী কেলাব, বনী রবী’ ও বনী মুদ্বার কওমের ভেড়া ও বকরীর পশমের সংখ্যা পরিমাণ গুনাহগার উম্মতদেরকে ক্ষমা করে দেন।

আর এক রেওয়ায়েতে আছেঃ

عن أبي بكري الصيق رضى الله تعالى عنه قال قال رسول اللہ صلی الله عليه وسلم. قوموا ليلة التي من شعبان فإنها ليلة مبارك فان الله ينايرى فيها هل من مستغفر فاغفره

উচ্চারণ : আ’ন আবী বাকরিনিছ ছিদ্দীক্ব রাদ্বী আল্লাহু কলা, কলা রাসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা, কুমূ লাইলাতান্ নিছফি মিন্ শাবানা ফাইন্নাহা লাইলাতুম মুবারকাতুন ফাইন্নাল্লাহা ইয়ুনাদী ফীহা হাল মিম্ মুস্তাগফিরিন ফাগফিরহু।

অর্থ : হযরত অবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ তোমরা শাবান মাসের ১৫ই তারিখের রাতে জাগরিত থেকে এবাদতে মগ্ন হও। যেহেতু ঐ রাতটি বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ। ঐ রাতে আল্লাহ তা’আলা ডেকে বলেন : তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমা প্রার্থী আছে কি:আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।

অন্য এক হাদীছে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেনঃ বরাতের রাতে এবাদতের নিয়্যতে সন্ধ্যার পরে যে ব্যক্তি ভালভাবে গোসল করবে, তার গোসলের পানির প্রত্যেকটি ফোঁটার পরিবর্তে ৭০০ রাক’আত নামাযের সমান সওয়াব লাভ হবে।

.

শবে বরাত নামাযের নিয়্যত

نويت أن أتى الله تعالى ركعتى صلوة ليلة البراي الفل–

متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাক’আতাই ছলা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যতঃ আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু’ রাক’আত নফল নামায আদায়ের নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

শবে বরাতের রাতে দু’ দু’ রাক’আতের নিয়্যতে যত বেশি সম্ভব নামায আদায় করবে। এ নামাযের প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাছ তিন বার, ১০ বার, ২১ বার ২৭ বার, ৩৩ বার কিংবা ৫০ বার পর্যন্ত পড়া যায়। তবে কম সূরা পড়ে বেশি নামায আদায় করার চেষ্টা করবে। এ পবিত্র রজনীতে নামায ব্যতীত অন্যান্য এবাদত করলেও অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন : কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, তসবীহ্-তাহলীল, যিকির আযকার, দোয়া ও দূরূদ শরীফ, তওবায়ে ইস্তেগফার ইত্যাদি পাঠ করা। এছাড়া গরীবদেরকে দান খয়রাত করা, খাদ্য ও মিষ্টান্ন বিতরণ করায় বহুত সওয়াব পাওয়া যাবে। সমস্ত রাত ব্যাপি এবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে ফজরের নামায আদায় করতঃ নিদ্রা যাওয়া উচিৎ। আর নফল এবাদত করে যাতে ফজরের নামায ক্বাযা না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শবে বরাত উপলক্ষে বেদয়াতী রুসম-রেওয়াজ পরিহার করতে হবে। যেমন পটকা। ফুটানো, আঁতশবাজি করা, বেহুদা কবর স্থানে মোমবাতি জ্বালানো ইত্যাদি বর্জন করা কর্তব্য। এতে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। অবশ্যই এ সমস্ত বেদয়াতী কার্যাদী হতে দূরে থাকতে হবে।

.

রমযান মাসের এবাদতের বিবরণ

আল্লাহ তা’আলা পূরা রমযান মাসব্যাপী মুসলমানদের প্রতি রোযা রাখা ফরয করে দিয়েছেন। এ রোযা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেন।

ايها الزين أمنوا كتب عليكم اليريام كما كتب على البنين من

قبلكم لعلكم تتقون۔

উচ্চারণ : ইয়া–আইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ কুতিবা আলাইকুমুছ ছিয়া-মু কামা–কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন্ কবলিকুম লাআল্লাকুম তাত্তাকুন।

অর্থ : হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তা তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল। যাতে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।

এ রোযার মধ্যে দুটি ফরয আদায় হয়ে থাকে একটি আল্লাহর হুকুম ফরয রোযা রাখা এবং দ্বিতীয়টি রোযার নিয়্যাত করা। অতএব প্রত্যেক আকেন বালেগ সুস্থ মু’মিনবান্দাকে রোযা রাখার জন্য সচেতন থাকতে হবে।

রোযা সম্পর্কে হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) ফরমায়োছেন:

ها و

من صام رمضان إيمانا واحتسابا تخرج من ذنوبه كيوم ولدثة أمه وفي رواية من صام رمضان أوله إلى أخره خرج من ذنوبه كيوم ولدته

উচ্চারণ : মান্ ছমা রামাদ্বায়ানা ঈমানাওঁ ওয়া ইহতিসাবান্ খারাজা মিন্ যুনূবিহী কাইয়াওমিওঁ ওয়ালাদাতহু উন্মুহু। ওয়া ফী রিওয়াইয়াতিন্ মান্ ছমা রামাদ্বোয়ানা আউয়্যালাহু ই’লা আখিরিহী খারাজা মিন যুনূবিহী কাইয়ামিওঁ ওয়ালাদাতহু উন্মুহূ।

অর্থ : যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাংখায় রমযান মাসে রোযা রাখবে, সে ব্যক্তি গুনাহ হতে এমনিভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেমনিভাবে মাতৃউদর হতে জন্ম গ্রহণের পর নিষ্পাপ ছিল। আর এক রেওয়ায়েতে আছে যে, যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে পালন করবে, সে ব্যক্তি গুনাহ হতে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেমনিভাবে সে মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নিষ্পাপ ছিল।

আর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে :

إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجثو

وقت أبواب النار وهي

الشيطين–

উচ্চারণ : ইযা জায়া রমাদ্বানা ফুতিহাত্ আবওয়াবুল জান্নাতি ওয়া গুল্লিক্বাত আবওয়াবুন নারি ওয়া ছুফফাদ্বতিশ শাইয়াত্বীন।

অর্থ :যখন রমজান মাস আগমন করে থাকে, তখন জান্নাতের দরযা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়।

অন্য আরও এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে:

إن أبواب الجنة وأبواب السماء لفتح الأولي تيتر من شهر رمضان

ولاقلق إلا اخرليلة.

উচ্চারণ : ইন্না আবওয়াবাল জান্নাতি ওয়া আবওয়াবাস্ সামায়ি লাতুফতাহুল আউয়্যালি লাইলাতিম্ মিন্ শাহরি রমাদ্বানা ওয়া লা-তুগলাকু ইল্লা আখিরি লাইলাতিন্।

অর্থ :নিশ্চয়ই রমযান মাসের প্রথম রাতেই জান্নাত ও আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়ে থাকে, এবং তা মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা হবে না।

আর এক হাদীসে বর্ণিত আছেঃ

إذا دخل شهر رمضان مرحبا بشهر خير كله صيام نهاره وقيام

ليالي والنفقة في سبيل اللو۔

উচ্চারণ : ইযা দাখালা শাহরু রমাদ্বোয়ানা মারহাবান বিশাহরিন খাইরি কুল্লিহী সিয়ামা নাহারিহী ওয়া কিয়ামা লাইয়ালিহী ওয়ান নাফকাতা ফী সাবীলিল্লাহ্।

অর্থ :যখন রমযান মাস আগমন করে থাকে, তখন আনন্দ খুশী ও উফুল্লতাও আগমন করে থাকে। এ মাস সম্পূর্ণই পুন্যময়। রাতে নামায ও এবাদতে জাগরিত থাকা এবং দিনে রোযা রাখা আর পরিবারবর্গের জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করা; এর সবই আল্লাহর রাস্তায় দানের মর্যাদা লাভ করে থাকে।

আর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :

إذا كان من أول ليلة من شهر رمضان نظرالله إلى خلقه وإذا نظر

إلى عبډلم يعزبة أبدا ۔

উচ্চারণ : ইযা কানা মিন্ আউয়্যালি লাইলাতিম্ মিন্ শাহরি রমাদ্বোয়ানা নাযারাল্লাহু ইলা খালাক্বিহী ওয়া ইযা নাযারা ইলা আবদিন লাম্ ইয়ু’আজ্জিবহু আবাদা।

অর্থ :যখন রমযান মাসের প্রথম রাত উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করেন, আর আল্লাহ তা’আলার রহমতের দৃষ্টি যার উপর পতিত হয়, সে কোন সময় শাস্তি ভোগ করবে না।

অন্য এক হাদীসে আরও বর্ণিত আছেঃ

القوم يشق الصبر والصبر نص الإيمان–

উচ্চারণ : আস-সওমু নিসফুস্ সুবরি ওয়াছ সবুরু নিসফুল ঈমান।

অর্থঃ রোযা হচ্ছে ধৈর্য্যের অর্ধাংশ এবং ধৈৰ্য্য হচ্ছে ঈমানের অর্ধাংশ। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন।

الصوم لي وأنا أجزنی به۔

উচ্চারণ : আস-সওমু লী ওয়া আনা আজযী বিহী।

অর্থ : রোযা শুধুমাত্র আমারই সন্তুষ্টির জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান প্রদান করব।

.

রোযার উপকারিতা বা বৈশিষ্ট্য

১। রোযা মানুষকে গুনাহের কার্য হতে ফিরিয়ে রাখে।

২। রমযান মাসের খাওয়া ও পান করার হিসাব হবে না।

 ৩। রোযার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়।

৪। আল্লাহ তা’আলা রোযাদারের রিযিক বর্ধিত করে দেন।

 ৫। রোযাদারের ধন-সম্পদ বর্ধিত হয়ে থাকে।

৬। রোযাদারের কাজ-কর্ম ও পানাহার এবাদতের মধ্যে গণ্য হয়।

৭। রোযাদারের সৎ কাজ ও এবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়।

৮। রোযাদারের প্রতি আল্লাহর রহমত বৃদ্ধি পায়।

 ৯। আসমান ও যমীনের ফেরেশতাকুল রোযাদারের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকে।

১০। রমযানের এবাদতে অন্য মাস অপেক্ষা ৭০ গুণ পূণ্য নসীব হয়।

১১। রোযাদারের অন্তর নির্মল থাকে, তাই আল্লাহর যিকিরে সর্বদা ব্যস্ত থাকে।

 ১২। রোযাদারের শরীর পাপ পংকীলতা হতে পবিত্র থাকে।

১৩। রমযান মাসে শয়তান ও তার সঙ্গীদেরকে বন্দী করে রাখা হয়।

 ১৪। মানুষের কু-মন্ত্রণাকারী নফসের শক্তি দমন করা হয়।

১৫। জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

১৬। জাহান্নামের দ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়।

১৭। রোজাদারের জন্য দৈনিক বেহেশত সুসজ্জিত করা হয়।

১৮। রোযাদারের দোয়া-মুনাজাত কবুল করা হয়।

 ১৯। রমযানের প্রতি মুআর দিবসে ৩৯ লক্ষ জাহান্নামীকে মুক্তি দেয়া হয়।

২০। রোযাদারের গুনাহ্ তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে ক্ষমা করে দেয়া হয়।

.

রোযার প্রকারভেদ

রোযা চার প্রকার, যথা : (১) ফরয রোযা, (২) ওয়াজিব রোযা, (৩) নফল রোযা, (৪) মাকরূহ্ রোযা।

(১) ফরয রোযাঃ রমযান মাসের রোযা এবং উহার ক্বাযা ও কাফফারার রোযা। যে ব্যক্তি এ রোযাকে অস্বীকার করবে, সে কাফের হবে।

(২) ওয়াজিব রোযাঃ নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট মান্নত রোযা।

(৩) নফল রোযাঃ উপরোক্ত রোযা ব্যতীত অন্যান্য রোযা, যথা : শাওয়াল মাসের ৬ রোযা, আইয়্যাম বিজের রোযা। প্রতি মাসের ১৩/১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা, জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিনের রোযা, মহররম মাসের আশুরার রোযা। শবে বরাতের রোযা, প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবারের রোযা ইত্যাদি।

(৪) মাকরূহ রোযাঃ দু’ ঈদের দিনে রোযা রাখা এবং কুরবানী ঈদের পরের তিন দিন রোযা রাখা হারাম।

.

যে সমস্ত কারণে রোযা মাকরূহ হয়।

(১) কোন বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করলে বা চাটলে, তবে মহিলারা জরুরী মনে করলে শিশু সন্তানকে কোন বস্তু চিবিয়ে দিতে পারবে, (২) দুপুরের পূর্বে দাঁত মাজলে, মুখমণ্ডলে তৈল মালিশ করলে অথবা চক্ষুতে সুরমা ব্যবহার করলে, তবে দুপুরের পরে মাকরূহ হবে না, (৩) রোযাবস্থায় একেবারে চুপ থাকলে, (৪) রোযা রেখে পরস্পর দু’ দিন ইফতার না করলে, (৫) অপরের গীবত করলে, (৬) মিথ্যা কথা বললে, (৭) ফাহেশা কথা-বার্তা বললে, (৮) স্বেচ্ছায় সামান্য বমি করলে, (৯) কর্ণের মধ্যে পানি ঢুকলে, (১০) পুঃলিঙ্গে পানি প্রবেশ করালে, (১১) দাঁতের ভেতর হতে বুটের পরিমাণের কম বস্তু জিহ্বা দ্বারা বের করে গিলে ফেললে, (১২) অনিচ্ছায় বমি এসে পেটের মধ্যে গেলে, অথবা গরমের কারণে কুলি বা গড়গড়া করলে, (১৩) ভিজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখলে, (১৪) স্ত্রীকে চুম্বন করায় সহবাসের আকাংখা হলে, (১৫) মাজন দ্বারা দাঁত মাজলে।

.

বছরে পাঁচ দিন রোযা রাখা হারাম

ঈদুল ফিতরের দিন, কোরবানীর দিন ও তার পরের তিন দিন।

.

শাওয়াল মাসের এবাদতের বিবরণ

 হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেনঃ যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে নিজেকে গুনাহের কার্য হতে বিরত রাখতে সক্ষম হবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে বেহেশতের মধ্যে মনোরম বালাখানা দান করবেন।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসের প্রথম রাতে বা দিনে দু’ রাক’আতের নিয়তে চার রাক’আত নামায আদায় করবে এবং তার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর ২১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে; করুণাময় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জাহান্নামের ৭টি দরজা বন্ধ করে দেবেন এবং জান্নাতের ৮টি দরজা উন্মুক্ত করে দেবেন। আর মৃত্যুর পূর্বে সে তার বেহেশতের নির্দিষ্ট স্থান দর্শন করবে।

.

ছয় রোযা

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তির শৃংখল এবং কঠোর জিঞ্জিরের আবেষ্টনী হতে নাজাত দেবেন।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসের ৬টি রোযা রাখবে, তার আমলনামায় প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে সহস্র রোযার সওয়াব লিখা হবে।

অন্য আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করবে সে ব্যক্তি শহীদানের মর্যদায় ভূষিত হবে।

.

ঈদুল ফিতরের নামাযের বিবরণ

এক মাস ব্যাপী পবিত্র রোযা পালন করার পর পহেলা শাওয়াল বিশ্বব্যপী মুসলমানদের অন্তরে নেমে আসে এক অনাবিল আনন্দের মহাসমারোহঈদুল ফিতর। মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ আনন্দোৎসবের মহামিলনের দিন এই ঈদুল ফিতর। পবিত্র রমজান মাসের কঠোর সাধনা ও আত্মোৎসর্গের পরে এ দিবসে ধনী-গরীব, আমীর ও ফকীর নির্বিশেষে সকলের গৃহে দেখা যায় আনন্দের মেলা। এই দিন সকালে ঈদের নামাযের পূর্বে ধনী ব্যক্তিরা গরীবের মাঝে সকাতুল ফিতর বন্টন করে থাকেন বিধায় এ দিবসের নাম ঈদল ফিতর’ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে।

পহেলা শাওয়াল দুপুরের পূর্বে মুসলমানরা মসজিদে বা ময়দানে হাযির হয়ে জামাআতের সাথে ছয় তাকবীরের সাথে দু’ রাক’আত নামায আদায় করে থাকেন। এ নামায ওয়াজিব। নামাযের পরে ইমাম দুটি খুৎবা পাঠ করে মুসল্লীদেরকে নিয়ে আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আল্লাহ্ পাকের শুকুর গুজারী করতঃ মুসলিম জাহানের নাজাত ও উন্নতিকল্পে এবং গুনাহরাশি মার্জনার উদ্দেশ্যে দোয়া করে থাকেন। এ দিবসে রোযা রাখা হারাম। বরং এ দিবসের খানা পিনা ও দান খয়রাতের মধ্যে অশেষ রহমত বরকত রয়েছে।

ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ওযূ গোসল করতঃ পাক পবিত্র হয়ে নতুন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে নিজেরা মিষ্টান্ন এবং অপরকে খাওয়ায়ে অবসর হয়ে নিম্নের তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে করতে ঈদগাহে যাবে। অতঃপর নামায শেষে খুশীর মিলন ভাইয়ে ভাইয়ে বুকে বুক মিলিয়ে মোয়ানাকা করতঃ একে অপরকে ক্ষমা করে তাকবীর’ পাঠ করতে করতে অন্য পথ দিয়ে গৃহে গমন করবে। তাকবীর এই :

بده

، بت بنو، بام رو

م

به مه له م الله اكبر الله اكبر. لا إله إلا الله والله اكبر الله ا

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার, ওয়া লিল্লা-হিল হামদ।

.

ঈদুল ফিতরের নামাযের নিয়্যত

تويت أن أصى لله تعالى ركعتى صلوة العيد الفطر مع ستة تبرات واجب الله تعالى–اقتديت بهذا الإمام–متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা রাক’আতাই ছালাতিল্ ঈ’দিল ফিতরি, মা’আছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লা-হি তা’আলা ইক্বতাদাইতু বিহা-যাল ইমা-মি, মুতাকওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলা নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঈদুল ফিতরের দু’ রাক’আত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সাথে এই ইমামের পেছনে আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।

.

যিলক্বদ মাসের এবাদতের বিবরণ

 যিলক্বদ মাসের ইহতিরাম সম্পর্কে রাসূলল্লাহ (ছঃ) ফরমান :

أكرموازي الكعدة فانه اقل من شهر الحرام

উচ্চারণ : আকরিমূ যিল কা’দাতি ফাইন্নাহূ আউয়ালু মিন্ শুহুরিল হারাম।

অর্থ :তোমরা যিলক্বদ মাসকে সম্মান করবে, যেহেতু এ মাস মর্যাদাবান মাসসমূহের মধ্যে প্রথম মাস।

এ মাসের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, কাটাকাটি যুদ্ধ বিগ্রহ করা হারাম। আল্লাহ তা’আলার অপসন্দনীয় কার্যাদি বর্জন করে এ মাসে তার ইবাদত করাই প্রধান কাজ। এ মাসের এবাদতের বদলা অসংখ্য।

রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন:

من صام يوما في ذي القعدة كتب الله له بكل ساعة ثه ثواب الحج۔

উচ্চারণ : মাছ ছমা ইওমান্ ফী যিল্ ক্কা’দাতি কাতাবাল্লাহু লাহূ বিকুল্লি সাআতিম্ মিনূহু সাওয়াবুল হাজ্জি।

অর্থ :যে ব্যক্তি যিলক্বদ মাসের ভেতরে একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি ঘন্টার পরিবর্তে একটি হজ্জের সওয়াব তাকে দান করবেন।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যে ব্যক্তি এ মাসের যে কোন জুমু’আর দিবসে দু’ দু’ রাক’আতের নিয়্যতে চার রাক’আত নামায আদায় করবে, যার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১০ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে একটি হজ্জ ও একটি ওমরার সওয়াব দান করবেন।

আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যিলকদ মাসের প্রত্যেক রজনীতে দু’ রাক’আত করে নামায আদায় করবে এবং এর প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ তিনবার করে পাঠ করবে। আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির আমলনামায় একজন হাজী ও একজন শহীদের পূণ্যের সমান সওয়াব দান করবেন এবং রোজ কেয়ামতে সে ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে।

অতএব, হেলায় সময় অতিবাহিত না করে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে যিলকুদ মাসে বেশি বেশি। এবাদত করা এবং আল্লাহর রেজামন্দী হাসিল করা। আল্লাহ আমাদেরকে এ মাসে বেশি বেশি এবাদত করার তাওফিক দান করুন।

.

যিলহজ্জ মাসের এবাদতের বিবরণ

যিলহজ্জ মাসের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ বলেছেন।

سيد الشهور شهر رمضان–واعظمها كرمة ذي الحجة

উচ্চারণ : সায়্যিদুশ শুহূরে শাহুরু রমাদ্বানা, ওয়া আ’যমুহা কুরমাতুন যিল্ হাজ্জাহ্।

অর্থ :মাসসমূহের সর্দার হচ্ছে রমযান মাস এবং তার মধ্যে যিলহজ্জ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান সবচেয়ে বেশি।

যিলহজ্জ মাসের ফযীলত ও মর্যদা অন্যান্য মাস হতে অত্যাধিক বেশি। যেহেতু এ মাসে ইসলামের পঞ্চবেনার অন্যতম বেনা হজ্জ পর্ব আদায় হয়ে থাকে। এ মাসের মধ্যে তিনটি দিবস অত্যধিক মর্যাদাশালী ও ফযীলতপূর্ণ রয়েছে। যথা : (১) ইয়াওমে তারাবিয়াহু অর্থাৎ যে দিনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকট হতে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে কোরবানী করার আদেশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। (২) ইয়াওমুন নহর, অর্থাৎ কোরবানীর দিন এবং (৩) ইয়াওমে আরাফাহ্ অর্থাৎ হজ্জের দিন। এছাড়া আইয়্যামে তাশরীফের তিন দিন অর্থাৎ কোরবানীর পরের তিন দিনও অতি ফযীলতপূর্ণ ও মর্যদাশালী।

.

যিলহজ্জ মাসের নফল রোযা

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন : (১) যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন রোযা রাখবে, সে ব্যক্তি যেন বিরামহীনভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে দু সহস্র বছর যাবত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশ গ্রহণ করল। (২) আর যে ব্যক্তি এ মাসের তৃতীয় দিন রোযা রাখল, সে যেন বনী ইসরাঈল কাওমের তিন সহস্র গোলাম আজাদ করে দিল। (৩) আর যে ব্যক্তি এ মাসের চতুর্থ দিনে রোযা রাখল, সে যেন ৪০০ বছর আল্লাহর এবাদতের সওয়াব লাভ করল। (৪) আর যে ব্যক্তি এ মাসের পঞ্চম দিনে রোযা রাখল, সে যেন পাঁচ সহস্র বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করার সওয়াব লাভ করল। (৫) আর যে ব্যক্তি ষষ্ঠ দিবসে রোযা রাখল, সে যেন ৬সহস্র শহীদের সওয়াব লাভ করল। (৬) আর সপ্তম দিনের রোযাদার ব্যক্তির জন্য সাত জাহান্নামের দরজা হারাম হয়ে গেল। (৭) আর অষ্টম দিনের রোযাদারের জন্য আটটি জান্নাতের দরজা খুলে গেল।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন রোযা রাখবে, সে ব্যক্তি ৬৬ হাজার বার কোরআন খতমের সওয়াব লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে ৪টি রোযা রাখবে, সে ব্যক্তি তার সমস্ত গুনাহ হতে পাক হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে ৫টি রোযা রাখবে, তার আমলনামায় ৫০ বছরের এবাদতের সওয়াব লিখা হবে। আর যে ব্যক্তি ৬টি রোযা রাখবে, তার আমলনামায় ৬ হাজার আম্বিয়াদের সওয়াব লিখা হবে। আর যে ব্যক্তি ৭টি রোযা রাখবে, তার আমল নামায় ৭০ সহস্র ফেরেশতার সমান। সওয়াব লিখা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসের মধ্যে ১০ দিন দান-খয়রাত করবে, তাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের আজাব হতে নাজাত দেবেন।

.

যিলহজ্জ মাসের নফল নামায

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যদি কোন ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন হতে দশম দিন পর্যন্ত প্রত্যহ বিতের নামাযের পরে দু রাক’আত করে নফল নামায আদায় করবে এবং তার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা কাওছার ও সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে ইল্লিন’ নামক শান্তিময় বেহেশত দান করবেন। এবং তার আমলনামায় মস্তকের চুলের সংখ্যার সহস্র গুণ বেশি সওয়াব ও সমপরিমাণ দান-খয়রাতের সওয়াব লিখে দেবেন।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের জুমু’আর দিবসে দু’ দু’ রাক’আতের নিয়তে মোট ছয় রাক’আত নামায আদায় করবে এবং তার প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাছ ১৫ বার করে পাঠ করবে এবং নামাযের পরে নিম্নের দোয়াটি ১৫ বার পাঠ করে তৎপরবর্তী দুরূদ শরীফ ১০ বার পাঠ করে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে সর্বাগ্রে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন এবং আখেরাতে তার মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন।

দোয়াটি এই :–3-24।–3 Lild। ২।

উচ্চারণ : লা–ইলাহা ইল্লাল্লা-হু মালিকুল হাক্কুল মুবীন।

দুরুদ শরীফ এই:

اللهم صلي على سيرينا مقوي الليبي الأمي وعلى أله وأصحابه وبارك وسلم۔

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা–মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আ-লিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।

.

শবে তারাবিয়ার ফযীলত

 শবে তারাবিয়াহ ঐ রাতকে বলা হয়, যে রাতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নের মাধ্যমে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে কোরবানী করার হুকুম লাভ করেছিলেন। এ রাতটি ছিল যিলহজ্জ মাসের অষ্টম তারিখের রাত। এ রাতটির অত্যধিক ফযীলত ও মর্তবা রয়েছে। এই সম্পর্কে হযরত নবী করীম (ছঃ) এর কিছু হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল। : হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের তারাবিয়াহের দিবসে রোযা রাখবে এবং তা কারো কাছে প্রকাশ না করলে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য বেহেশতে প্রবেশ হওয়া ওয়াজিব করে দেবেন।

অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমায়েছেন : যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের তারাবিয়াহের রজনীতে এবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেবে, সে ব্যক্তি শবে ক্বদরের এবাদতের ফযীলত লাভ করবে এবং এ ব্যক্তি শহীদের সমসংখ্যক পূণ্য লাভ করবে আর তার জন্য বেহেশতের দরজা চিরদিনের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

অন্য আর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শবে তারাবিয়াহকে জীবিত রাখেবে (অর্থাৎ সারা রাত এবাদত করবে) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।

.

আরাফার দিবসের ফযীলত

 রাসূলে করীম (সঃ) ফরমায়েছেন ও আরাফার দিবসে যে কোন বান্দা আল্লাহ তা’আলার নিকট যাই প্রার্থনা করবে, তিনি তা কবুল করবেন এবং প্রার্থনাকারীর জন্য ৭০টি রহমতের দরজা খুলে দেবেন।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি আরাফার দিবসে সূর্যাস্তের সময় নিম্নের এ দোয়াটি পাঠ করবে, আল্লাহ পাক ফেরেশতাদেরকে হুকুম দেবেন, ঐ ব্যক্তিকে যেন আদর-যত্ন সহকারে বেহেশতে প্রবশ করানো হয়। দোয়াটি এই ও।

AJI affL। sixels 4 y ali

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি মা-শা-য়াল্লা-হু লা–হাওলা ওয়া লা-কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম।

.

আরাফার রাতের ফযীলত

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যে ব্যক্তি আ’রাফার রাতে ১০০ রাক’আত নামায আদায় করবে, যার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে তিনবার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, তবে তার সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেবেন এবং তার জন্য বেহেশতে লাল বর্ণের ইয়াকুত পাথরের একটি বালাখানা নির্মাণ করে দেবেন।

অন্য আর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি আরাফার রোিত দু’ রাক’আত নামায আদায় করবে, যার প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১০০ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে এবং দ্বিতীয় রাক’আতে ০ বার পাঠ করবে, তবে আল্লাহ তা’আলা এই নামাযীর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার পরিবারের ৭০ জন লোকের গুণাহ্ মাফ করে দেবেন।

.

শবে নাহারের ফজীলত

শবে নাহার কোরবানীর দিনের পূর্ব রাতকে বলা হয়। এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে নবী করীম (ছঃ)-এর কিছু হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল।

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যে ব্যক্তি শবে নাহারে দু’ দু’ রাক’আতের নিয়তে ১২ রাক’আত নামায আদায় করবে, যার প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর ১৫ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত গুনাহ্ মাফ করে দেবেন এবং তার আমল নামায় ৭০ বছরের এবাদতের পূণ্য লিখে দেবেন।

.

ইয়াওমে নাহার বা কোরবানীর দিনের ফযীলত

ইয়াওমে নাহার বলা হয় কোরবানীর দিনকে। এ দিনের ফযীলত অপরীসীম। এ দিনে দু’ রাক’আত ঈদের ওয়াজিব নামায ব্যতীত আরও অনেক নফল নামায রয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূলে করীম (ছঃ) এর কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল।

হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : যদি কোন ব্যক্তি কোরবানীর দু’ রাক’আত ওয়াজিব নামায আদায় করার পরে চার রাক’আত নামায আদায় করে, যার প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরাছাব্বিহিমা রব্বিকা এবং দ্বিতীয় রাক’আতে সূরাওয়াশশামছি এবং তৃতীয় রাক’আতে সূরাওয়াল্লাইলি এবং চতুর্থ রাক’আতে সূরাওয়াদ্দোহা পাঠ করবে, তবে তার আমল নামায় আল্লাহ তা’আলা সমস্ত আসমানী কেতাব তেলাওয়াতের সওয়াব প্রদান করবেন।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : ঈদুল আজহা নামাযের পরে মসজিদে অথবা গৃহে বসে যদি কেউ দু’ রাক’আত নামায আদায় করে যার প্রত্যেক রাক’আতে সূরাওয়াশ শামছি পাঁচ বার করে পাঠ করে, তবে তার আমল নামায় অসংখ্য হাজীদের সমতুল্য সওয়াব লিখা হবে এবং কুরবানীর পশুর পশমের সমপরিমাণ সওয়াবও লিখা হবে। একথা শোনে সাহাবীগণ আরজ করলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! যার কোরবানী করার সঙ্গতি নেই, তার কি হইবে:তখন হযরত (ছঃ) বললেন : সে ব্যক্তি ঈদের নামায আদায় করতঃ গৃহে প্রত্যাবর্তন করে দু’ রাক’আত নামায আদায় করবে, যার প্রতি রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করিয়া সূরাকাওছার পাঠ করবে। তবে আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য উট কোরবানী করার ছওয়াব তার আমলনামায় লিখে দেবেন।

আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনঃ যে লোক ঈদুল আজহার নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে নতুন পোষাক পরিধান করবে এবং পুরাতন পোশাক গরীবদেরকে দান করে দেবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কেয়ামতের দিবসে ৭০ প্রকার নূরের পোশাকে সজ্জিত করবেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ঝাণ্ডার নীচে তার স্থান হবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, যে ব্যক্তি কোরবানীর নামাযের পূর্বে গোসল করবে, সে যেন আল্লাহর রহমতের সমূদ্রে গোসল করল।

.

তাকবীরে তাশরীক পড়বার নিয়ম

যিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ অর্থাৎ হজ্জের দিন ফজরের নামাযের পর হতে ১৩ ই যিলহজ্জ আছর পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব। ঈদুল আজহার দিবসে জোরে জোরে শব্দ করে তাকবীরে তাশরীক পড়তে পড়তে এক পথ দিয়ে ঈদের ময়দানে যাবে এবং নামায শেষে অন্য পথে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। ঈদুল আজহার দিবসে নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া সুন্নাত। বরং কোরবানী করে তার গোশত দ্বারা খানা খাওয়া সুন্নাত। আর ঈদুল ফিতরের দিবসে নামাযের পূর্বে মিষ্টান্ন খাওয়া সুন্নাত।

তাকবীরে তাশরীক এই :

الله أكبر الله أكبر لا إله الا الله والله أكبر الله اكبر ولله الحمد.

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লা-হু আকবার, ওয়া লিল্লা-হিল হামদ্।

কোরবানীর দিন দেরী না করে সকাল সকাল ঈদুল আজহা নামায আদায় করা উচিৎ। যেহেতু নামাযের পরে কোরবানী দিয়ে তার গোশত গরীব মিসকীনদেরকে দান করতে হয় এবং আত্মীয়দেরকে হাদিয়া দিতে হয়। এবং নামাযের পূর্বে কিছু না খেয়ে কোরবানীর গোশত দ্বারা খাওয়া সুন্নাত। তাই কোরবানীর নামায যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করা উচিত।

.

ঈদুল আজহা নামাযের নিয়্যত

تويت أن أضى الله تعالى حتى صلوۃ عيد الأضحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى–اقتديت بهذا الإمام . متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাকআতাই ছলা-তি ঈ’দিল আজহা মায়া’ ছিত্তাতি তাকবীরা-তি ওয়াজিবুল্লা-হি তা’আ-লা ইক্বতাদাইতু বিহাযাল ইমা-মি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

নিয়ত বেঁধে সুবহানাকা পড়ার পর ইমাম সাহেব অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবেন, মুক্তাদীরাও ইমামের সাথে হস্তদ্বয় কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবীর বলবে। অতঃপর ইমাম সাহেব সূরা কেরাআত পড়ে যথারীতি রুকূ সিজদা করতঃ প্রথম রাক’আত শেষ করে দাঁড়িয়ে সূরা কেরাআত শেষ করতঃ পুনঃ তিনটি তাকবীর বলবেন, মুক্তাদীও সঙ্গে সঙ্গে হস্তদ্বয় তুলে তিন তাকবীর বলবে। ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলে রুকূতে যাবে। রুকূর পরে সিজদা করে বৈঠকে বসে, তাশাহুদ, দুরূদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামায শেষ করে দু’টি খুৎবা পাঠ করবেন। অতঃপর সমাগত মুসল্লীদেরকে নিয়ে মুনাজাত করবেন। তারপর মুসল্লিরা গৃহে প্রত্যাবর্তন করে নিজ নিজ কোরবানী করবেন।

تمت بالخير

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *