০৮. সপ্তাহের নফল নামাযসমূহের বিবরণ (অষ্টম খণ্ড)

অষ্টম খণ্ড সপ্তাহের নফল নামাযসমূহের বিবরণ

শুক্রবার রাতের নফল নামায

 সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে মাগরিব ও এশার ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময় ১২ রাক’আত নফল নামায আদায় করতে হয়। এ নামায সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়া যায়। যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ তা’আলা বেহেশতের ভেতরে একটি উঁচু বালাখানা তৈয়ার করবেন। সে যেন সমস্ত মুসলমানের পক্ষে সদকা দিল। আল্লাহ পাক তাকে মাফ করে দেবেন।

.

শুক্রবার দিবসের নফল নামায

হযরত মুজাহিদ (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, জুময়ার দিনে যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময় দু’ রাক’আত নফল নামায প্রড়া যায়। তার প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর একবার আয়াতুল কুরসী ও ২৫ বার সূরা ফালাকু এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে একবার সূরা ইখলাছ ও ২০ বার সূরা ফালাক্ক পড়তে হয়। নামায শেষে নিম্নের দোয়াটি ৫০ বার পড়তে হয়। যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করবে সে আল্লাহকে স্বপ্নে না দেখে এবং বেহেশতে স্বীয় স্থান না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না। দোয়াটি এই :

لاحول ولا قوة الا بالله العلي العظيم

উচ্চারণ : লা-হাওলা ওয়া লা-কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম।

.

শনিবার রাতের নফল নামায

হযরত আনাস্ ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন এ রাতে যে কোন সময় ২০ রাক’আত নামায পড়া যায়। এর প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ৫০ বার সূরা ইখলাছ এবং একবার করে সূরা ফালাক্ক ও নাস পড়তে হয়। নামাযের পর ১০০ বার করে ইস্তিগফার ও দুরূদ শরীফ পড়তে হয়। অতঃপর নিম্নের দোয়াটি ১০০ বার পড়ে তৎপর তার পরের দোয়াটিও ১০০ বার পড়তে হয়।

প্রথম দোয়াটি হল :

لاحول ولاقوة الابالله العلى العظيم

উচ্চারণ : লা-হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম।

দ্বিতীয় দোয়াটি হল :

و الله وفطرته وابراهم

لا اله الا الله واشهد ان

خليل الله عز وجل–وموسی کلیم الله تعالی–ویشیو الله

وجل۔

شبكائه. ومحمد حبيب الله

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা–ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না আ-দামু সফীউল্লা-হি ওয়া ফিতুরাহুহ; ওয়া ইব্রাহীমু খলীলুল্লা-হি আযযা ওয়া জাল্লা; ওয়া মূসা–কালীমুল্লা-হি তাআ-লা–ওয়া ঈসা রুহুল্লা-হি সুবহা-নুহূ; ওয়া মুহাম্মাদু হাবীবুল্লা-হি আযযা ওয়া জাল্লা।

.

শনিবার দিবসের নফল নামায

হযরত সাঈদ (রাঃ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, শনিবার দিবসের ভেতরে যে কোন সময় চার রাক’আত নামায পড়া যায়। এ নামায এক সালামে পড়তে হয়। এর প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ৩ বার সূরা কাফিরূন মিলিয়ে পড়তে হয়। নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়তে হবে। এ নামাযী ব্যক্তি এক বছর রোযা রাখার তুল্য ছাওয়াব লাভ করবে এবং একটি হজ্জ ও ওমরার সমান সওয়াব পাবে আর কেয়ামতের দিন আরশের ছায়ায়। নবী ও শহীদদের সঙ্গে স্থান লাভ করবে। নামায শেষে নিজের ও পিতা-মাতার গুনাহ মার্জনার জন্য দোয়া করতে হবে।

.

রবিবার রাতের নফল নামায

হযরত আমস (রাঃ) হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, রবিবার রাতের মধ্যে যে কোন সময় এক নিয়্যতে চার রাক’আত নামায পড়তে হবে। এ নামাযের ১ম রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১০ বার সূরা ইখলাছ দ্বিতীয় রাক’আতে ২০ বার, তৃতীয় রাক’আতে ৩০ বার এবং চতুর্থ রাক’আতে ৪০ বার পড়তে হবে। নামাযের পরে সূরা ইখলাছ ৭৫ বার’ ইস্তিগফার ৭৫ বার এবং দুরূদ শরীফ ৭৫ বার পড়তে হবে। নামাযের পরে আল্লাহর নিকট গুনাহ মার্জনার জন্য প্রার্থনা করতে হবে। তিনি তার দিলের বাসনা পূর্ণ করে দেবেন।

.

রবিবার দিবসের নফল নামায

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রবিবার দিবসে যে কোন সময় এক নিয়্যতে চার রাক’আত নামায আদায় করা যায়। এর প্রতি রা’আতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা বাকারারআমানার রাসূলু হইতে আলাল কাওমিল কাফিরীন পর্যন্ত পড়তে হয়। এ নামাযীর আমল নামায় খৃষ্টানদের সংখ্যার তুল্য সওয়াব লিখা হবে এবং নবীর তুল্য ছাওয়াবও লিখা হবে আর একটি হজ্জ এবং একটি ওমরার তুল্য ছাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। এটা ব্যতীত প্রতি রাক’আতের বদলে এক হাজার রাক’আতের তুল্য ছাওয়াব লিখা হবে এবং বেহেশতের ভিতরে এর প্রত্যেকটি অক্ষরের বদলে মেশকের শহর লাভ করবে। নামাযের পরে নিজের ও পিতা-মাতার গুনাহ্ মার্জনার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করবে।

.

সোমবার রাতের বেলার নফল

নামায বর্ণিত আছে, এ রাতে যে কোন সময় ১২ রাক’আত নামায পড়া যায়। এর প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ৫ বার করে সূরা নসর’ (ইযাজায়া) পড়তে হবে। এ নামায আদায়কারীকে আল্লাহ তা’আলা বেহেশতের মধ্যে পৃথিবীর সমান ৭টি মহল দান করবেন।

.

সোমবার দিবসের নফল নামায

হযরত আবু জোবায়ের (রাঃ) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, এ দিবসে চাশতের ওয়াক্তে দু’ রাক’আত নামায পড়া যায়। তার প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে একবার করে আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ক ও সূরা নাস মিলিয়ে পড়তে হয়। নামাযের পরে ১০ বার ইস্তিগফার ও ১০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হয়। আল্লাহ পাক এ ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন ইনশা-আল্লাহ্।

.

মঙ্গলবার রাতের নফল নামায

বর্ণিত আছে, মঙ্গলবার রাতে যে কোন সময় ২ রাক’আত নামায পড়া যায়। এই নামাযের প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর ১০ বার সূরা ফালাক্ব এবং দ্বিতীয় রাক’আতে ১০ বার সূরা নাস পাঠ করতে হয়। এ ব্যক্তির জন্য ৭০ সহস্র ফেরেশতা দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়ে কেয়ামত পর্যন্ত তার আমলনামায় সওয়াব লিখতে থাকবে।

.

মঙ্গলবার দিবসের নফল নামায

হযরত ইয়াজীদ রুফায়ী (রাঃ) হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, এ দিবসে চাশতের ওয়াক্তে ১০ রাক’আত নামায আদায় করা যায়। এ নামাযের প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে একবার আয়াতুল কুরসী এবং তিনবার সূরা ইখলাছ পড়তে হয়। এ ব্যক্তির। আমল নামায় সত্তর দিবস পর্যন্ত কোন গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হবে না। আর ঐ ব্যক্তি এ দিবসে মুত্যুবরণ করলে তাকে আল্লাহ তা’আলা শহীদী দরজা প্রদান করবেন এবং তাহার ৭০ বৎসরের। পাপ মোচন করে দেবেন।

.

বুধবার রাতের নফল নামায

হযরত আবু সালেহ (রাঃ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, এ রাতে মাগরিব ও এশার ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময় দু’ রাক’আত নামায পড়া যায়। এ নামাযের প্রত্যেক রাক’আতে সুরা ফাতিহার পর ৫ বার করে আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়তে হবে। ১৫ বার ইস্তিগফার পড়ে এর সওয়াব মাতা-পিতার রূহের প্রতি বখশিশ করে দেবে। এর দ্বারা মাতা-পিতার হক আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা এ ব্যক্তিকে সিদ্দীকীন ও শহীদানের তুল্য ছাওয়াব প্রদান করবেন ইনশা-আল্লাহ্।

.

বুধবার দিবসের নফল নামায

 হযরত আবু ইদ্রিস খাত্তালানী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, এ দিবসে চাশতের ওয়াক্তে ১২ রাক’আত নফল নামায আদায় করা যায়। এর প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর একবার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার করে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ক, ও সূরা নাস পড়তে হয়। আসমানের ফেরেশতারা এ নামাযীকে ডেকে বলে, আপনি নতুনভাবে ইবাদত আরম্ভ করুন। আপনার পূর্ববর্তী গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক তার কবর আজাব ও সংকীর্ণতা এবং অন্ধকার দূর করে দেবেন। তার অমলনামা নবীদের আমলনামার ন্যায় দেখা যাবে। আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন তার আজাব মাফ করে দেবেন।

.

বৃহস্পতিবার রাতের নফল নামায

 হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, এ রাতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময় ১২ রাক’আত নফল নামায পড়া যায়। এর প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে ১০ বার করে সূরা ইখলাছ মিলিয়ে পড়তে হয়। এ নামাযী ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা’আলা ১২ বছরের রোযার তুল্য এবং ১২ বছরের রাত ইবাদতের তুল্য ছাওয়াব দান করবেন।

.

বৃহস্পতিবার দিবসের নফল নামায

বৃহস্পতিবার যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময় দু রাক’আত নফল নামায আদায় করা যায়। এ নামাযের প্রথম রাক’আতে ১০০ বার আয়াতুল কুরসী এবং দ্বিতীয় রাক’আতে ১০০ বার সূরা ইখলাছ পড়তে হয়। নামাযের পরে ১০০ বার দুরূদ শরীফ পড়তে হয়। এ ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা রজব, শাবান ও রমজান মাসের রোজার সমপরিমান ছওয়াব দান করবেন এবং কা’বা শরীফ তওয়াফকারী হাজীদের তুল্য সওয়াব প্রদান করবেন। তাছাড়াও সমস্ত মুমীন মান্দাদের সংখ্যাতুল্য ছাওয়াব দান করবেন।

হে আল্লাহ! আমাদিগকে উক্ত নফল ইবাদতসমূহ যথাযথভাবে আদায় করবার তওফীক প্রদান করুন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *