০২. কালেমাসমূহ (দ্বিতীয় খণ্ড)

দ্বিতীয় খণ্ড কালেমাসমূহ

কোরআনের আলোকে কালেমা তাইয়্যেবার ফযীলত

 আল্লাহ রাব্বল আ’লামীন  এরশাদ করেন :

ترب الله مثلا كلمة طيبة كشجرة طيبة أصلها ثابت

ألم تر كيف وفرعها في الشماء ط تؤتي أكلها كل حين باذن ربها طويضرب الله الأمثال للاس لعلهم يترون–

অর্থ : আপনি কি জানেন না, আল্লাহ পাক কি সুন্দর দৃষ্টান্ত প্রদান করেছেন? কালেমা তাইয়্যেবা যেমন এক পবিত্র সুন্দর বৃক্ষ, যার মূল যমীনের মধ্যে এবং শাখা-প্রশাখা আকাশের উপর উঠে গেছে। তা আপন প্রভুর আদেশে প্রতি মুহূর্তে ফল দান করে এবং আল্লাহ্ পাক এ জন্যই দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, যেন মানুষ ভাল করে বুঝে নেয়।–(সূরা ইবরাহীম-রুকূঃ ৪)

আল্লাহ্ পাক আরো বলেন :

فمن يكفر بالطاغوت ويؤمن بالله فقد اشتمسك بالعروة الوثقى د.

انفصام لها۔

অর্থ : যে তাগূতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করল, সে মজবুত রজ্জু আঁকড়ে ধরল, যা কিছুতেই ছিন্ন হবার নয়।–(সূরা আলবাক্বারা–রুকূ ৩৪)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মজবুত রজ্জু ধরল, অর্থাৎ, লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্ বলল।

 আল্লাহ্ পাক আরো বলেন :

فأثرن الله سكينته على رسوله وعلى المؤمنين والمهم كلمة

التقوى ط وكانوا أحق بها واهلها.

অর্থ : অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর খাস রহমত অবতীর্ণ করেন এবং তাকওয়ার কালেমার উপর তাদেরকে সুদৃঢ় করে দেন আর তাঁরা এ কালেমার উপযুক্তও ছিল বটে।–(সূরা ফাতহ–রুকূঃ ৩)

এখানে তাকওয়ার কালেমার অর্থ কালেমা তাইয়্যেবা লা–ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্।

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :

قل ياهل الكتب تعالوا إلى كلمة سواء بيننا وبينهم ألا نعبد إلا الله وثشرك به شيئا ولا يتخذ بعضنا بعضا آژبابا من دون الله ط فان تولوا فقؤوا أشهدوا بأنها مسلمون۔

 অর্থ : হে মুহাম্মদ (ছঃ)! আপনি বলে দিন, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন এক কালেমার দিকে আস, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সমভাবে সমর্থিত, তা হচ্ছে, আমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো এবাদত করব না এবং তার সাথে কাউকে শরীকও করব না; এরপরও যদি তারা আপনার কথা প্রত্যাখ্যান করে তবে তাদেরকে বলে দিন, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলমান।

উল্লিখিত আয়াতে কালেমার অর্থ কালেমা তাওহীদ।

আল্লাহ্ পাক আরো বলেন :

يثبت الله الذين أمنوا بالقول الثابت في الحيوة الدنيا وفي الآخرة ط

الله الظمين ويفعل الله ما يشاء

অর্থ : আল্লাহ পাক মুমিনদেরকে দুনিয়া এবং আখেরাতে দৃঢ় কালেমার সাহায্যে মজবুত রাখেন এবং কাফেরদেরকে উভয় জাহানেই বিপথগামী করেন আর আল্লাহ তা’আলা স্বীয় হেকমত দ্বারা যা ইচ্ছা তা করেন।–(সূরা ইবরাহীম–রুকূ-৪)

হাদীস : হযরত বারা (রাঃ) বলেন, হুযুর পাক (সঃ) এরশাদ করেছেন–কবরে যখন প্রশ্ন করা হয় তখন মুসলমান লা–ইলাহা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করে। আয়াত শরীফে উদ্ধৃত দৃঢ় কথার এটাই অর্থ।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আয়াতের অর্থ কবরের সওয়াল জওয়াব।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মুসলমানের মৃত্যুর সময় ফেরেশতা আগমন করে তাকে সালাম করে ও বেহেশতের সুসংবাদ দান করে। মৃত্যুর পর ফেরেশতারা তার জানাযায় শরীক হয়। দাফন করা হলে তাকে উঠিয়ে বসায় ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমার কি সাক্ষী আছে? উত্তরে সে বলে, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়া, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লা-হ। আয়াতে কথিত দৃঢ় কথায় এটা-ই অর্থ।

হযরত কাতাদা এবং তাউস (রহঃ) বলেন, দৃঢ় কথা হলো দুনিয়াতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর পরকালে তার অর্থ কবরের সওয়াল জওয়াব।

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন :

من كان يريد العزة فلله العزة جميقا ط اليه يصعد الكلم الطيب و

العمل الصالح يوفقط

অর্থ : যে ব্যক্তি ইজ্জত হাসিল করতে চায় (সে যেন আল্লাহর নিকট হতে ইজ্জত হাসিল করে), যেহেতু সমস্ত সম্মান ইজ্জত একমাত্র আল্লাহরই জন্য; পবিত্র কালেমা এবং নেক আমল তাঁর দরবার পর্যন্ত পৌঁছায়।–(সূরা ফাতির–রুকূ-২)

উল্লেখ্য, অধিকাংশ মুফাসসেরীনের মতে পবিত্র কালেমা অর্থ লা–ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্। কারো কারো মতে পবিত্র কালেমার অর্থ তসবীহের কালেমাসমূহ।

আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন  আরো এরশাদ করেন :

وتمت كلمة ربك صدقا وعدلا

অর্থ : তোমার প্রতিপালকের কালেমা সততা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ।

হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হুযুর (ছঃ) হতে বর্ণনা করেন, প্রতিপালকের কালেমার অর্থ লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্।

 আল্লাহ্ তা’আলা আরো এরশাদ করেন :

له قوة القط والذين يدعون من دونه لايستجيبون لهم بشی ؟ كباسط كيو الى الماء ليبلغ اه ط وما هو ببالغه ط وما دعاء الكفرين الا

في ضلل

অর্থ : প্রকৃত ডাকা তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট; যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকে, তারা নিজেদের আহবান তদপেক্ষা বেশি মঞ্জুর করাতে পারে না, সে ব্যক্তির দরখাস্তের ন্যায়–যে পানির দিকে আপন হস্তদ্বয় প্রসারিত করে দেয়, যেন পানি তার মুখ পর্যন্ত এসে পৌঁছে, অথচ তা কিছুতেই তার মুখ পর্যন্ত পৌঁছবে না; বস্তুত কাফেরদের ডাকাই হল নিরর্থক।

হাদীসঃ হযরত আলী, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-সহ অনেকের মতে দাওয়াতুল হক অর্থ লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্।

আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন  এরশাদ করেন :

ومن أكثر قوة من دعا إلى الله وعمل المماط وقال إن من المسلمين.

অর্থ : উত্তম বাক্য হিসাবে তার চেয়ে ভাল কথা আর কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নিজেও সকাজ করে আর বলে, আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।

হাদীসঃ হযরত হাসান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর দিকে ডাকার অর্থ লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্। হযরত আসেম ইবনে হুবাইরা (রাঃ) বলেন, যখন তুমি আযান শেষ করবে তখন বলবে, লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন।

.

হাদীসের আলোকে কালেমা তাইয়্যেবার ফযীলত

হাদীস : যখন কোন ব্যক্তি অন্তর থেকে বলে, তার জন্য আসমানের দরজা খুলে যায়, এমন কি আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বড় বড় গুনাহ হতে বিরত থাকে।–(তিরমিযী শরীফ)।

হাদীস : যদি সাত তবক আসমান ও যমীন এক সাথে করে এক পাল্লায় এবং অপর পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে এই পাল্লা ঐ সমস্ত পাল্লা থেকে ভারী হবে।–(ইবনে হাব্বান)।

হাদীসঃ এর যিকির কোন গুনাহ বাকী থাকতে দেয় না এবং কোন আমলও তার সমান নেই।–(তিরমিযী শরীফ)।

হাদীসঃ যে ব্যক্তি অন্তর থেকে বলবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদিও সে যেনা ও চুরি করে।–(মুসলিম শরীফ)।

হাদীস : রাসূলুল্লা-হ (ছঃ) বলেন, তোমরা নিজেদের ঈমান তাজা করতে থাক। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ঈমান কিভাবে তাজা করব। হুযুর (ছঃ) বললেন, পড়তে থাক।–(তিরমিযী শরীফ),

হাদীসঃ রাসূলুল্লা-হ (ছঃ) বলেন, আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছতে কোন জিনিস বাধা দেয় না।–(তিরমিযী শরীফ)

 .

পাঁচ কালেমার বিবরণ

কালেমা তাইয়্যেবা

لا إله إلا الله محمد رسول الله–

উচ্চারণ : লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ।

অর্থ : আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ছঃ) আল্লাহর রাসূল।

.

কালেমা শাহাদাত

ه ه, ۸ می

د و /

م ا و

و ا ، واشهد ان محمدا عبده

ده لاش

C• ১

اشهد

ورسوله

উচ্চারণ : আশহাদু আল লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা–শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোন অংশী বা শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) তাঁর বান্দা ও প্রেরিত রাসূল।

.

বোখারী শরীফে বর্ণিত, কালেমা শাহাদাত

اشهد ان لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله

উচ্চারণ : আশহাদু আল লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লা-হ।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) আল্লাহর রাসূল।–(বোখারী শরীফ)।

হাদীস : রাসূল (ছঃ) বলবেন, যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (ছঃ) আল্লাহর রাসূল আল্লাহ্ তা’আলা তার উপর দোযখের আগুন হারাম করে দেবেন। হযরত মাআয বিন জাবাল (রাঃ) এ হাদীস শুনে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি মানুষদেরকে এ হাদীস সম্পর্কে খবর দেব যেন মানুষ খুশী হয়ে যায়। হুযুর (ছঃ) বললেন, তাহলে মানুষ এর উপর ভরসা করে নেবে। সুতরাং হযরত মাআয (রাঃ) শুধু গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করেন।–(বুখারী)

.

কালেমা তাওহীদ

لا إله إلا أنت واحدا لا ثاني لك محمد رسول الله إمام المتقين شول

رب العلمين۔

উচ্চারণ : লা–ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহিদাল লা–সানিয়া লাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হি ইমামুল মুত্তাকীনা রাসূলু রব্বিল আ’লামীন ।

 অর্থ : হে খোদা! তুমি ছাড়া অন্য কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। তুমি এক অদ্বিতীয়, কেউই তোমার সমকক্ষ নয়। মুহাম্মদ (ছঃ) আল্লাহর রাসূল, মুত্তাকীদের ইমাম ও আল্লাহ রব্বুল আলামীনের রাসূল।

.

মুসনাদে আহমদে বর্ণিত কালেমা তাওহীদ

لا إله إلا الله وحده لاشريك له له الملك وله الحمد يحيي ويميت وهو

على كل شئ قدير.

উচ্চারণ : লা–ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা–শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজ্য তাঁরই প্রশংসা, তিনি জীবিত করেন, তিনিই মৃত্যু দান করেন, তিনি সব বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান–(মুসনাদে আহমদ)

.

কালেমা তামজীদ

بل

م و

م

ا و ھ ، ه ه

و بقا

بام

باء محمد رس

نوره من يش

نت نور يهدي الله لا

المرسلين خاتم البين۔

উচ্চারণ : লা–ইলা-হা ইল্লা আনতা নূরাই ইয়াহদিই আল্লা-হু লিনূরিহী মাই ইয়াশা-উ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হি ইমামুল মুরসালীনা খা-তামু ন্নাবিয়্যীন।

অর্থ : আল্লাহ্! আপনি ছাড়া কেউ এবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ্ জ্যোতির্ময়, যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতি দ্বারা পথ প্রদর্শন করেন। মুহাম্মদ (ছঃ) প্রেরিত পুরুষদের নেতা ও আখেরী নবী।

.

কোরআনের অনুসরণ করা

আল্লাহ্ পাকের নাযিলকৃত কোরআন শরীফের অনুসরণ করা মানুষের জন্য ফরয। অনুসরণের অর্থ হচ্ছে কোরআন শরীফের মধ্যে যে সকল হুকুম আহকাম, বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে, তার প্রতি নিঃসংকোচে বিশ্বাস স্থাপন করতঃ জীবনভর পালন করে যাওয়া। জীবনে তার বিপরীত কোন কার্যাদি না করা এবং তার বিরুদ্ধাচরণ না করা। মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার জন্য কোরআনের অনুসরণ করতেই হবে। এ বিষয় আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ঠভাবে সূরা বাকারার শুরুতে ঘোষণা করেন

ذلك الكتاب لاریب فیوج هالمتقين لا

উচ্চারণ : যা-লিকাল কিতা-বু লা-রাইবা ফী-হি; হুদাললিল মুত্তাক্বীন।

অর্থ : এ সেই কিতাব, যার মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটা মুত্তাক্বীদের (পরহেজগারদের) জন্য সঠিক পথের সন্ধান (হেদায়াত)।

এই বিষয়ে আল্লাহ পাক সূরা মায়েদাহ্-এর ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে আরও ঘোষণা করেন-ياهل الكتب قد جاء کم رسولنا يبين لكم كثيرا مقام څقون من الكتاب ويعفوا عن كثير. قد جائكم من اللون وكتاب مبين. يهدى به الله من اتبع رضوانه سبل السلم ومحرجهم من الظلم الى الور

امي الله

من امهات

উচ্চারণ : ইয়া-আহলাল্ কিতা-বি ক্বাদ জা– য়াকুম্ রাসূলুনা-ইয়ুবাইয়্যিনু লাকুম কাছী-রাম্ মিম্মা-কুনতুম্ তুখফুনা মিনাল কিতা-বি ওয়া ইআ’ফু-আ’ন কাছী-র; ক্বাদ জা-য়াকুম্ মিনাল্লা-হি নুরুওঁ ওয়া কিতা-বুম মুবীন। ইয়াহদী বিহিল্লা-হু মানিত্তাবা’আ রিদ্বওয়া-নাহু সুবুলাস্ সালা-মি ওয়া ইয়ুখরিজুহুম্ মিনাহ্ যুলুমাতি ইলান্নু-রি বিইযনিহী ওয়া ইয়াহদীহিম্ ইলা-ছিরা-ত্বিম্ মুসতাক্বীম।

অর্থ : হে কিতাবধারীরা! শোন, তোমাদের নিকট তা আমার রাসূল এসেছেন। তিনিই তো তোমাদেরকে বিস্তারিতভাবে বহু বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তোমরা কিতাবের মধ্য হতে যা কিছু গোপন করেছিলে। তিনি তো তোমাদের অনেক দোষ-ত্রুটি প্রায়ই ক্ষমা করে থাকেন। নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে আলো (নূর) আর সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। যা দ্বারা তিনি তোমাদেরকে মুক্তির পথ দেখান, যারা তাঁর মর্জি অনুসরণ করে। তিনি নিজেরই হুকুম মোতাবেক তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোর পথে নিয়া আসেন। তাদেরকে তিনি সরল সহজ পথের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যান।

আল্লাহ তা’আলা সূরা আন্‌আমের ১৫৫ তম আয়াতে আরও বলেন–

تقوا لعلكم ترحمون

উচ্চারণ : ওয়া হা-যা-কিতাবুন আনযালনা-হু মুবা-রাকুন ফাত্তাবিউহু ওয়াত্তাকূ লাআল্লাকুম্ তুরহামূন্।

অর্থ : এই এক খানা কিতাব (কোরআন) তাকে আমিই নাযিল করেছি। তা অতি বরকতময়, তোমরা তার অনুসরণ কর। তার অনুসরণ করতঃ মুত্তাক্বি হও। এতে তোমাদের উপর তাঁর রহমত বর্ষিত হতে পারে।

হযরত ওছমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লা-হ (ছঃ) ফরমায়েছেন। তোমাদের ভেতরে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম। যে কোরআন শিখেছে এবং অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে।–(আবু দাউদ)

.

মহানবী (ছঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করা

রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) এর অনুসরণের বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমরানের ৩১ তম আয়াতে এরশাদ করেন

قل ان کنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم

رلكم ذنوبك

د الله ويعا

عونی یحببکا

کنتم تحبون

ط والله فور رحیم۔

উচ্চারণ : কূল ইন্ কুনতুম্ তুহিববূনাল্লা-হা ফাত্তাবিউনী ইয়ুহবিব কুমুল্লা-হু ওয়া ইয়াগফিরলাকুম্ যুনূবাকুম; ওয়াল্লা-হু গাফুরুর রহীম।

অর্থ : [হে মুহাম্মদ (ছঃ)!] আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহর সাথে মহব্বত করতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর; তবেই তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলা মহব্বত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল।

মহান প্রভু আল্লাহ তা’আলার পবিত্র কিতাব কোরআন শরীফ যেরূপ অনুসরণ করা মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক, দ্রুপ রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) এর সুন্নাতের অর্থাৎ তার আদেশ, নিষেধ, উপদেশ ও রীতি-নীতিসমূহের অনুসরণ করাও অবশ্য কর্তব্য।

আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লা-হ (ছঃ)-এর অনুসরণ সম্পর্কে সূরা আল-ইমরানের ৩২ তম আয়াতে আরও এরশাদ করেন–

قل أطيعوا الله والروج فان تولوافان الله يحب الكافرين–

উচ্চারণ : কুল্ আত্বী উল্লা-হা ওয়াররাসূল; ফাইন্ তাওয়াল্লাও ফাইন্নাল্লা–হা লা-ইয়ুহিব্বুল কা-ফিরীন।

অর্থ : [হে রাসূল!] আপনি মানুষদেরকে বলে দিন যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের অনুসরণ কর; যদি তোমরা অবাধ্য হও তবে জেনে রাখ, আল্লাহ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না।

আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন  সূরা নিসা এর ৮০তম আয়াতে বলেন–

من يطع الرسول فقد أطاع الله ج ومن توی ما ارشلئك عليهم

উচ্চারণ : মাহঁয়্যুত্বিই’র রাসূলা ফাক্বদ আত্বোয়ো-‘আল্লাহ; ওয়া মান্ তাওয়াল্লা-ফামা-আরসালনা-কা আলাইহিম হাফীযোয়া-।

অর্থ : যে ব্যক্তি রাসূলের অনুগত হয়েছে, সে আল্লাহরই তাবেদারী করল, যদি কেউ অবাধ্য হয়ে যায়, তবে আপনাকে তো আর তাদের জন্য রক্ষক হিসাবে পাঠানো হয় নি।

হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লা-হ (ছঃ) ফরমায়েছেন–

আমার সমস্ত উম্মাৎ বেহেশতে দাখিল হবে কিন্তু যে ব্যক্তি আমাকে অস্বীকার করেছে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, কে আপনাকে অস্বীকার করল? তিনি ফরমালেন, যে আমাকে অনুসরণ করেছে, সে বেহেশতে দাখিল হবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করেছে, সে ব্যক্তি আমাকে অস্বীকার করেছে।–(বোখারী শরীফ)

অতএব, পবিত্র কোরআনের আয়াত ও রাসূল (ছঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করলেই আল্লাহর তাবেদারী করা হবে। অর্থাৎ রাসূল (ছঃ) এর সুন্নাত আমল করিলেই আল্লাহর হুকুম পালন করা হবে।

.

ঈমান ও কুফরীর বিবরণ

বোখারী ও মুসলিম শরীফ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, হযরত নবী করীম (ছঃ) ফরমায়েছেন–যে ব্যক্তি সর্বান্তকরণে কালেমা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু স্বীকার করে নিয়েছে, তার বেহেশতে গমণ করা সুনিশ্চিত এবং তার জন্য দোযখের শাস্তি হারাম করে দেয়া হয়েছে।

হাদীসে বর্ণিত আছে, কোন এক ব্যক্তি হযরত রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-এর খেদমতে আরজ করল, ঈমান কি? উত্তরে রাসূলুল্লা-হ (ছঃ) ফরমালেন–কোন লোক যদি সৎ কাজ করে আনন্দ পায় আর পাপ কাজ করে অনুতপ্ত হয় (তওবা করে) তবে সে ব্যক্তিই মুমিন।–(আহমদ)

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিন ব্যক্তি ঈমানের পূর্ণ স্বাদ পেয়ে থাকে–(ক) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যার এত অধিক মহব্বত থাকে যে, সেই মহব্বতের তুলনা অন্য কিছুর সঙ্গে করা সম্ভব নয়। (খ) কেউ কাউকে যদি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই মহব্বত করে, এবং (গ) সেই ব্যক্তি, যে ঈমান গ্রহণ করার পর কুফরীকে এমনি খারাপ মনে করে যেরূপ কোন ব্যক্তি অগ্নিকুণ্ডলিতে প্রবেশ করতে অপছন্দ করে থাকে।

ঈমান সম্পর্কে কোন বিষয়েই সন্দেহের অবকাশ নেই, সন্দেহ করা ঈমানের বিপরীত, সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান থাকবে না; অতএব, সন্দেহকারী বে-ঈমান বা কাফের। ঈমান সার্বক্ষণিক ও স্থায়ী, জীবনভর দৃঢ়তার সঙ্গে ঈমানকে রক্ষা করতে হবে। ক্ষণিকের জন্যও ঈমান না থাকা বা শিথিলতা সম্ভবপর নয়। যদি কারো ঈমান মূহুর্তের জন্যও শিথিল হয়ে যায় বা ঈমান হারা হয়ে যায় তবে তার পূর্ববর্তী নেক কার্যাদি বাতিল হয়ে যাবে এবং তার বিবাহ ছিন্ন হয়ে যাবে। পুনরায় ঈমান গ্রহণ করতঃ বিবাহ না দোহরান পর্যন্ত স্ত্রী হালাল হবে না।

পরিপূর্ণভাবে ঈমানকে রক্ষা করতে হবে, যেমন–একরার বিল্ লিসান অর্থাৎ মুখে স্বীকার করতে হবে, তাছদিক বিল্ জিনান অর্থাৎ অন্তরে দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করতে হবে এবং আমল বিল্ আরকান অর্থাৎ ইসলামের বিধি-বিধানসমূহ আমলের দ্বারা কার্যকরী করা। একেই কামেল ঈমান বলা হয়। যারা এই প্রকারে ঈমানকে মজবুত রাখবে তারাই খাঁটি ঈমানদার হবে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কালামে এরশাদ করেন–

تجري من تحتها الا

إن البنين أمنوا وعملوا الصلح فلهم ج

نهار خالدين فيها أبدا–

উচ্চারণ : ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া আমিলুছছোয়া-লিহা-তি ফালাহুম জান্নাতুন্ তাজরী মিন্ তাহতিহাল আনহা-রু খা-লিদী-না ফীহা-আবাদা-।

অর্থ : নিশ্চয়ই যাহারা ঈমান এনেছে এবং নেক কার্যাদি সম্পাদন করেছে তাদের জন্য রয়েছে বেহেশত, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, তথায় তারা চিরদিন অবস্থান করবে।

যে ব্যক্তি মুখে স্বীকার করেছে এবং অন্তরের সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে কিন্তু ইসলামের বিধি-বিধানসমূহ পালন করে না অর্থাৎ আমল করে না সেই লোক কামিল ঈমানদার হতে পারে না বরং সে ফাছেক ঈমানদার। এই ফাছেক মুমিনকে রোজ কেয়ামতে আল্লাহ তা’আলা মাফ করে দিতেও পারেন অথবা পাপের পরিমাণ শাস্তি প্রদান পূর্বক বেহেশত দান করতে পারেন।

যে ব্যক্তি অন্তরে ঈমান পোষণ না করে শুধু লোক দেখানোর জন্য মুখে ঈমান প্রকাশ করে থাকে, সে মুনাফিক। যদিও মুনাফিক ব্যক্তি প্রকাশ্যভাবে নিজেকে মুসলমান বা মুমিন বলে প্রচার করে থাকে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর নিকট কাফের হতেও নিকৃষ্ট। রোজ কেয়ামতে মুনাফিকদের স্থান হবে দোযখে। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন—-নিশ্চয়ই দোযখের নিম্নস্তরে মুনাফিকদের ঠিকানা হবে।

যে ব্যক্তি মুখের দ্বারা ঈমানের স্বীকৃতি না দিয়ে শুধু অন্তরে বিশ্বাস করেছে কিন্তু ইসলামী শরীয়াতের বিধান মতে আমল করেনি, সে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ঈমানদার হবে না, আর সেই ব্যক্তি আসলে ঈমানদার হবে কিনা তা আলেমুল গাইব আল্লাহ তা’আলাই ভাল জানেন। তার পরকাল সম্পর্কেও তিনি অধিক জ্ঞাত।

আল্লাহ তা’আলা, তাঁর নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব, ফেরেশতামণ্ডলী, তাক্বদীর, মৃত্যু, পুনরুত্থান, হাশর-নশর এবং বেহেশত ও দোযখ ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী বান্দাকে ঈমানদার বলা হয়। আর ঈমানের বিপরীত হচ্ছে কুফরী; যারা উপরোক্ত বিষয়সমূহের প্রতি সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করবে তারা বে-ঈমান বা কাফের। রোজ কেয়ামতে কাফেরের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।

আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের সম্পর্কে সূরা আল-ইমরানের ১১৬ তম আয়াতে ঘোষণা করেন–

إن الذين گروال تفنى عثهم أموالهم ولا أولادهم من الله شيئا ط

وأولئك أصحب الارج هم فيها خلدون۔

উচ্চারণ : ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ লান তুগনিয়া আনহুম্ আমওয়া-লুহুম ওয়া লা-আওলা-দুহুম মিনাল্লা-হি শাইয়ান, ওয়া উলা-য়িকা আছহা-বুন্না-রি; হুম্ ফীহা–খালিদূন।

অর্থ : নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে, তাদের ধন-বল ও বংশ বল কোনটিই আল্লাহর আজাব হতে রক্ষা পওয়ার জন্য কোন কাজে আসবে না। তাহারা দোযখবাসী হইবে এবং তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের সম্পর্কে সূরা বাকারার ১৬১ ও ১৬২ তম আয়াতে আরও ঘোষণা করেন–

إن الذين كفروا وماتوا وهم كفار أولئك عليهم لعنة الله والملكة والناس أجمعين لا خلدين فيها ج لايقه عنهم العذاب وهم ينظرون–

উচ্চারণ : ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ ওয়া মা-তূওয়া হুম্ কুফ্ফারুন উলা-য়িকা আলাইহিম লাআনাতুল্লা-হি ওয়াল মালা-য়িকাতি ওয়ান্না-সি আজমাঈন। খালিদী-না ফীহা-; লা-ইয়ুখাফ্ফাফু আনহুমুল আযা-বা ওয়া লা-হুম ইয়ুনযারূন।

অর্থ : নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের প্রতি আল্লাহর ও তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর এবং সমস্ত মানব জাতাদবীর অভিশাপ বর্ষিত হয়ে থাকে। তারা চিরকাল দোযখে থাকবে; তাদের শাস্তি কখনো লাঘব করা হবে না এবং শাস্তিতে অবকাশও দেয়া হবে না।

.

শিরকের বিবরণ

আল্লাহ পাকের জাত ও ছিফাতের যে কোন একটির সাথে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে শরীক মনে করা, তুলনা করা সমকক্ষ মনে করাকে শেরেকী গুনাহ বলা হয়, আর যে এটা করবে তাকে মুশরিক বলা হয়। মুশরিকদেরকে আল্লাহ তা’আলা কখনো ক্ষমা করবেন না, এটা কুফরীর ন্যায় অমার্জনীয় অপরাধ; এটা ক্ষমার অযোগ্য। আল্লাহ পাক মুশরিকদের সম্পর্কে কোরআন মজীদের সূরা নিসা এর ৪৮ তম আয়াতে ঘোষণা করেন–

ج ومن

إن الله لا يغفر أن يشرك به ويغفر مادون ذلك لمن ي

يشرك بالله فقافترى إثما عظيما۔

উচ্চারণ : ইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াগফিরু আইয়ুশরাকা বিহী ওয়া ইয়াগফিরু মা-দূ-না যালিকা লিমাইয়াশা-উ; ওয়া মাইয়ুশরিক বিল্লা-হি ফাক্বাদি ফতারা-ইছমান আযীমা-।

অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শেরেকী গুনাহ্ ক্ষমা করবেন না; এটা ব্যতীত অন্য সমস্ত গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে অতি কঠিন গুনাহে লিপ্ত হল।

আল্লাহ পাক মুশরিকদের সম্পর্কে সূরা তওবা এর ১৭তম আয়াতে বলেন–

ماكان المشركين أن يعمروا مسجد الله شهدين على أنفسهم بالكفرد

أولئك حبطت أعمالهم ج وفي الثار هم خون۔

উচ্চারণ : মা-কা-না লিলমুশরিকীনা আইয়্যাঅমুরূ-মাসা-জিদাল্লা-হি শাহিদী-না আলা-আনফুসিহিম্ বিলকুফরি; উলা-য়িকা হাবিত্বোয়াত্ আমা-লুহুম; ওয়া ফিন্না-রি হুম্ খালিদূন।

অর্থ : এ কাজ তো মুশরিকদের জন্য শোভা পায় না যে, তারা আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ করবে; অথচ তারা কুফরী সম্পর্কে নিজেরাই সাক্ষ্য দিচ্ছে; এদের সমস্ত কর্ম বিফল হল। আর তারা দোযখেই চিরকাল বাস করবে।

আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের সম্পর্কে সূরা তওবার ১১৩ তম আয়াতে ঘোষণা করেন–

ما كان للبي والذين أمنوا أن يستغفروا المشركين ولو كانوا أولى

قربى من بعد ماتبين لهم انهم اصحب الجحيم.

উচ্চারণ : মা-কা-না লিন্নাবিয়্য ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ আইয়্যাতাগফিরূলি মুশরিকীনা ওয়া লাও কা-নূ ঊলী কুরবা–মিম্বাদি মা-বাইয়্যানা লাহুম্ আন্নাহুম্ আছ্হা-বুল জাহী-ম্।

অর্থ : মুশরিকরা যে জাহান্নামী এটা জানার পরে কোন নবীর পক্ষে বা কোন ঈমানদারের পক্ষে মুশরিকদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা সঙ্গত নয়; যদিও তারা (মুশরিকরা) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হয়ে থাকে।

আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের সম্পর্কে সূরা মায়েদাহ্-এর ৭২ তম আয়াতে আরও ঘোষণা করেন–

إنه من يشرك بالله فقد حرم الله عليه الجنة وماوه الا ط وما

الظلمين من أنصار–

উচ্চারণ : ইন্নাহু–মাইয়ুশরিক বিল্লা-হি ফাক্বদ হাররামাল্লা-হু আলাইহিল জান্নাত ওয়া মাওয়া-হুন্না-র। ওয়া মা-লিযযোয়া-লিমীনা মিন্ আনছোয়া-র।

অর্থ : নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করেছে, তাহার জন্য তিনি বেহেশত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা দোযখ এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।

.

শেরেকী গুনাহের কিছু নমুনা

১। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা ও সাহায্য প্রার্থনা করা।

২। কা’বা ঘর তওয়াফের ন্যায় কোন কবর বা মাজারের চতুর্দিকে তওয়াফ করা, মাজারের বুজুর্গের নিকট কোন সাহায্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে নামায পড়া কিংবা রোযা রাখা, আল্লাহ তা’আলার ন্যায় অন্য কারো নামে তাসবীহ বা অজিফা পাঠ করা।

৩। কোন মুরীদ যদি তার পীরের প্রতি এরূপ ধারণা করে যে, সে গায়েব জানেন। অথবা পীর আওলিয়াদের কারামাত প্রত্যক্ষ করে যদি ধারণা করে যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় খোদায়িত্বের কিছু অংশ তাকে প্রদান করেছেন কিংবা তাঁর জাতের সাথে ফানা করে দিয়েছেন।

৪। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বা বস্তুকে সিজদা করা শিরেকী গুণাহ্। আল্লাহ্ তা’আলা কোরআন শরীফে সূরা হা-মীম-সিজদা এর ৩৭তম আয়াতে বলেন–

ومن أيته اليل والنهار والشمس والقمر ط لا تسجدوا للشمس ولا

القمر–واسجدوا الوالي خلقه إن كنتم إياه تعبدون

উচ্চারণ : ওয়া মিন্ আ-ইয়াতিহি ল্লাইলু ওয়ান্নাহা-রু ওয়াশ শামসু ওয়াল্ ক্বামারু; লা-তাসজুদূ লিশশামসি ওয়ালা-লিলক্বামারি; ওয়াসজুদূ লিল্লা–হিনল্লাযী–খলাক্বাহুন্না ইন কুনতুম ইয়্যা-হু তাবুদূ-ন।

অর্থ : রাত, দিন এবং চন্দ্র, সূর্য তাঁরই নিদর্শনের মধ্য হতে; তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদাহ্ করোও না বরং তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর যিনি এ সমস্ত সৃষ্টি করেছেন যদি তোমরা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই এবাদতকারী হও।

অনেক জ্ঞানহীন লোক তাদের পীর-মুরশিদকে সিজদা করে থাকে এটা সর্বাবস্থায় হারাম ও শেরেকী গুনাহ্। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাকেও সিজদা করলে সে কাফের হয়ে যাবে।

রিযিক বৃদ্ধি, উদ্দেশ্য লাভ করা, রোগ-ব্যধি হতে মুক্তি লাভ করার নিয়তে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা, মান্নত করা বা জপ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও শেরেকী গুনাহ্। যে কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পীর-অলীদের নিকট প্রার্থনা করা শেরেকী গুনাহ্। তবে তাদের উছিলায় আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা যায়েয হবে। গণককে হাত দেখিয়ে তার কথায় ভাগ্যের ভাল-মন্দ বিশ্বাস করা শেরেকী গুনাহ্।

শেরেকী গুনাহের ভেতরে কোন কোন শেরেক স্পষ্ট বা প্রকাশ্য রয়েছে, যেমন–চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি ও দেব-দেবীর মূর্তি পূজা করা। এ ধরনের শেরেককে শিরকে জলী বলা হয়ে থাকে। আবার অনেক শেরেকী গুনাহ্ এমনি অস্পষ্ট যে, তা সাধারণ লোকেরা জ্ঞানের অভাবে বুঝিতে সক্ষম হয় না বলে শেরেকী গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাকে। যেমন, ঔষধ সেবন করতঃ আরগ্য লাভ করে ধারণা করা যে, ঔষধই নিরাময়কারী। যদি কোন মানুষকে বলে যে, উপরে আল্লাহ নীচে আপনি ব্যতীত আমার আর কেউ সাহায্যকারী নেই। অথবা এইরূপ কথা বলা যে, অমুকে আমাকে বাঁচিয়েছে কিংবা অমুকে আমার সর্বনাশ করেছে। ইত্যাদি ধারনা করা বা বলা শেরেকী গুনাহ হবে। একে শিরকে খফী বলা হয়ে থাকে।

.

বিদ’আতের বিবরণ

যে সকল ধর্মীয় কার্যাদি হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) পালন করেননি এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরামদের জামানায় অথবা মুস্তাহিদ ইমামদের সময় ইসলাম ধর্মে পালিত হতো না, পরবর্তীতে সেরূপ কোন কার্যাদি ছাওয়াবের নিয়তে ইসলাম ধর্মে প্রবর্তন বা প্রচলনকে বিদ’আত বলা হয়। বিদ’আত দু প্রকার, যথা–(১) বিদ’আতে হাসানাহ্ ও (২) বিদ’আতে ছাইয়্যিয়াহ্।

বিদ’আতে হাসানা : যে সমস্ত নতুন প্রবর্তিত ও প্রতিষ্ঠিত কার্যাদি ইসলামের দৃষ্টিতে শরীয়ত বিরোধী নয় বরং তা মুসলমান ও ইসলাম ধর্মের সহায়ক ও উপকারী, তাকেই বিদআতে হাসানা বলা হয়। যেমন–মাদ্রাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করা।

বিদআতে হাসানা সম্পর্কে মুসলিম শরীফে হাদীস বর্ণিত হয়েছে–

من سن في الإسلام سنة فله أجرها وأجر من عمل بها من عدم

غير أن ينقص من أجروهم شئ

হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) ফরমায়েছেন–যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের মধ্যে উত্তম (নেক) রীতি-নীতি প্রবর্তন করবে, তার উত্তম কাজের ছাওয়াব তো সে পাবেই তদুপরি তাহার প্রবর্তিত উত্তম নীতি পালন করে যারা পরবর্তীতে নেকী লাভ করবে এদের সকলের নেকীর পরিমানও তাকে অতিরিক্ত প্রদান করা হবে। আর তাকে এ আমলকারীদের তুল্য নেকী দেয়া হলেও কিন্তু আমলকারীদের নেকী একটুও কম করা হবে না।

বিদ’আতে ছাইয়্যিয়াহ–যে সমস্ত রীতি-নীতি ও কার্যাদীসমূহ রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) ও সাহাবায়ে কেরামদের জমানায় ছিল না তা পরবর্তীতে প্রবর্তিত হয়েছে কিন্তু ইসলামী শরীয়াত তাকে সমর্থন করে না বা ইসলাম ও মুসলমানদের উপকারের পরিবর্তে অপকারই বেশি হয়ে থাকে, একে বিদ’আতে ছাইয়্যিায়াহ্ বলা হয়। পীর অলীদের মাজারে ও কবরস্থানে মোমবাতি এবং আগরবাতি জ্বালান, মাজারের নিকট গান-বাজনাসহ উরুস ও মেলা মিলান। তথায় নারীদের গমনাগমন করা, মাজারের উপর চাদর বিছিয়ে দেয়া, কবরের উপরে (ছাদ) পাকা করা, কবরকে চুমা দেয়া, কবরের মাটি বরকত হিসাবে শরীর মর্দন করা, মহররম মাসে তাজিয়া বের করা, বুক চাপড়িয়ে শোক প্রকাশ করা, বিবাহ ও মুসলমানীর (খাতনার) অনুষ্ঠানে গেল বাজিয়ে ও গান-বাজনা করে আমোদ ফূর্তি করা ইত্যাদি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *