০৭. ছহু সেজদার মাসয়ালা (সপ্তম খণ্ড)

সপ্তম খণ্ড ছহু সেজদার মাসয়ালা

 ১। মাসয়ালা : নামাযের ভেতর যত ওয়াজিব রয়েছে তার যে কোন একটি বা একাধিক ভুলবশতঃ যদি ছুটে যায়, তবে তার জন্য ছহু সেজদা দেয়া ওয়াজিব। এতে নামায জায়েয হয়ে যাবে। যদি ছহু সেজদা না দেয়, তবে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।

২। মাসয়ালা : নামাযের কোন ফরয যদি ভুলে ছুটে যায় বা কোন ওয়াজিব ইচ্ছা ক্বতভাবে ছেড়ে দেয়, তবে তার ক্ষতিপূরণের কোন পন্থা নেই। অর্থাৎ এ অবস্থায় ছহু সেজদা দ্বারা নামায হবে না। তার পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।

৩। মাসয়ালা : ছহু সেজদার নিয়ম হল, শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নিয়মানুসারে দু’টি সেজদা দেবে, অতঃপর তাশাহহুদ, দুরূদ, দোয়া মাছুরা ইত্যাদি পাঠ করে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে।

৪। মাসয়ালা : কেউ যদি ভুলে ডানে সালাম না ফিরিয়ে শুধু তাশাহহুদ পাঠ করে এমন কি, দুরূদ ও দোয়া প্রভৃতি পাঠ করে, ছহু সেজদা দেয় তথাপি ছহু সেজদা আদায় হবে এবং নামাযও জায়েয হবে।

৫। মাসয়ালাঃ ভুলবশতঃ কেউ যদি দু’রুকূ দিয়ে ফেলে কিংবা তিন সেজদা দিয়ে ফেলে, তবে তার ওপর ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

৬। মাসয়ালা : ভুলবশতঃ কেউ যদি সূরা ফাতেহা পাঠ না করে কেবল অন্য সূরা পাঠ করে বা আগে অন্য সূরা পাঠ করে পরে সূরা ফাতেহা পাঠ করে, তাহলে ছহু সেজদা ওয়াজিব। হবে। ৭। মাসয়ালা ফরয নামাযের প্রথম দু’রাক’আতে যদি সূরা মিলিয়ে পড়তে ভুলে যায়, তবে শেষের দু’রাক’আতে সূরা মিলায়ে পড়বে এবং ছহু সেজদা করবে। যদি প্রথম দু’রাক’আতের কোন এক রাক’আতে সূরা মিলিয়ে পড়তে ভুলে যায়, তবে তৃতীয় বা চতুর্থ রাক’আতে সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং ছহু সেজদা করবে। যদি প্রথম দু’রাক’আতে সূরা মিলিয়ে। পড়তে ভুলে গিয়ে থাকে এবং শেষের দু’রাক’আতেও মনে না হয় তাশাহহুদ পড়ার সময় মনে হয়, তবে তাশাহহুদ পড়ে ছহু সেজদা করবে, তাতেই নামায জায়েয হবে।

৮। মাসয়ালাঃ বেতের, সুন্নত, নফল ইত্যাদি নামাযের সকল রাক’আতে সূরা মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব। কেউ যদি ভুলবশতঃ কোন রাক’আতে সূরা না মিলায়, তাহলে তার ছহু সেজদা। করতে হবে।

৯। মাসয়ালা : কোন লোক যদি সূরা ফাতেহা পাঠ করার পর চিন্তা করতে শুরু করে যে, এর পর কোন্ সূরা বা কোন আয়াত পাঠ করবে। এমন চিন্তা করতে করতে যদি তিন বার সুবহানাল্লাহ পড়ার পরিমাণ সময় বিনা পড়ায় পার হয়ে যায়, তবে তার ওপর ছহু সেজদা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

১০। মাসয়ালাঃ কোন লোক শেষ রাক’আতে তাশাহহুদ পড়ে সন্দেহবশতঃ চুপ থেকে চিন্তা করতে থাকে যে, এটা তার তৃতীয় না চতুর্থ রাক’আত? অল্পক্ষণ চিন্তা করে স্থীর করল যে, এটা তার চতুর্থ রাক’আত। তারপর সালাম ফিরাল বা তৃতীয় রাক’আত স্থির করে দাঁড়িয়ে আরো এক রাক’আত আদায় করে নিতে প্রস্তুত হল, কিন্তু এ চিন্তা করার জন্য সে এত পরিমাণ সময় চুপ ছিল যে, ততক্ষণে তিনবারসুবহানাল্লাহ্ পাঠ করা যেত, এ জন্য তার ছহু সেজদা করতে হবে।

১১। মাসয়ালা : কোন লোক যদি সূরা ফাতেহা পাঠ করে অন্য সূরা মিলিয়ে ভুলক্রমে কিছু চিন্তা করতে থাকে এবং সে ফাঁকে তিন বার সুবহানাল্লাহ পাঠ করা যায় অথবা কারো যদি রুকূতে গিয়ে মনে পড়ে যে, সূরা মিলিয়ে পড়তে ভুলে গেছে, তারপর রুকূ হতে ওঠে সূরা মিলায়, তবে তার আবার রুকূ করতে হবে এবং এ উভয় অবস্থায় ছহু সেজদা করা ওয়াজিব।

১২। মাসয়ালা : তদ্রপ যদি কেউ কোন সূরা পাঠ করতে করতে আটকে যায় এবং চুপ করে দাঁড়িয়ে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় চিন্তা করে বা দ্বিতীয় অথবা চতুর্থ রাক’আতে তাশাহহুদ পাঠ করতে বসে তা পাঠ না করে চিন্তা করে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় বিলম্ব করে, কিংবা রুকূ থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে এবং এজন্য তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় দেরী হয় অথবা প্রথম সেজদা থেকে ওঠে চিন্তা করতে থাকে এবং তজ্জন্য দ্বিতীয় সেজদায় যেতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে এ সব অবস্থায় ছহু সেজদা করা ওয়াজিব হবে। মোট কথা, ওয়াজিব ছুটে গেলে যেমন ছহু সেজদা ওয়াজিব হয়, অনুরূপ ভুলে বা চিন্তা করার কারণে কোন ফরয বা ওয়াজিব আদায় করতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, তাতেও ছহু সেজদা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

১৩। মাসয়ালা : তিন বা চার রাক’আত বিশিষ্ট ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাক’আতে তাশাহহুদ পাঠ করতে বসে কেউ যদি ভুলবশতঃ তাশাহহুদ দু’বার পাঠ করে ফেলে, অথবা আত্তাহিয়্যাতু শেষ করে L21:14-4 fil পর্যন্ত বা আরো বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করে ফেলে, অতঃপর মনে হওয়ার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়, তাতেও ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে। এর কম পাঠ করলে ওয়াজিব হবে না।

১৪। মাসয়ালাঃ সুন্নাত ও নফল নামাযে দ্বিতীয় রাক’আতে আত্তাহিয়াতুর পর দুরূদ শরীফ পাঠ করাও দুরস্ত আছে। কাজেই নফল নামাযে দুরূদ শরীফ পাঠ করলে ছহু সেজদা করতে হবে না। কিন্তু নফল নামাযে তাশাহহুদ দু’বার পাঠ করে ফেললে ছহু সেজদা করতে হবে এবং এটা ওয়াজিব।

১৫। মাসয়ালা : তাশাহহুদ পাঠ করতে বসে যদি ভুলবশতঃ অন্য কিছু পাঠ করে, তাতেও ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

১৬। মাসয়ালা : নামাযের নিয়্যত করে কেউ ভুলে পাঠের বদলে দোয়া কুনূত বা তাশাহহুদ পাঠ করলে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না। অনুরূপ যদি কেউ ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাক’আতে সূরা ফাতেহার স্থলে তাশাহহুদ বা সুবহানাকা অথবা যেমন (ফাতেহার পর সূরা) অন্য কিছু পাঠ করে, তাতেও ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না।

১৭। মাসয়ালা : তিন বা চার রাক’আত বিশিষ্ট ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাক’আতে বসা ওয়াজিব, কিন্তু যদি কেউ বসতে ভুলে গিয়ে তৃতীয় রাক’আতের জন্য দাঁড়াতে উদ্যত হয় এবং শরীরের নিম্নর্ধ সোজা হবার আগেই বসে যায়, তবে ছহু সেজদা করতে হবে না, কিন্তু যদি দেহের নিম্নর্ধ সোজা হয়ে যায়, তবে আর বসবে না, দাঁড়িয়ে তৃতীয় বা চতুর্থ রাক’আত আদায় করবে এবং শেষ বৈঠকে ছহু সেজদা করবে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর বসে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করলে গুনাহ্ হবে, কিন্তু নামায হয়ে যাবে এবং ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে।

১৮। মাসয়ালা : কোন লোক চতুর্থ রাক’আতের পর বসতে ভুলে গিয়ে দাঁড়াতে উদ্যত হয়, সে দেহের নিম্নর্ধ সোজা হওয়ার আগে মনে হলে বসে যাবে এবং তাশাহহুদ, দুরূদ পাঠ করে সালাম ফেরাবে, ছহু সেজদা করতে হবে না। আর যদি সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর মনে হয়, তথাপি বসে তাশাহহুদ পড়তে হবে, এমন কি সূরা ফাতেহার পর কিংবা রুকূ করার পরও যদি মনে হয়, তবুও বসে তাশাহহুদ পড়তে হবে এবং ছহু সেজদা করতে হবে, কিন্তু যদি সেজদা করার পর মনে পড়ে, তবে আর বসবে না, পঞ্চম রাক’আত পূর্ণ করবে এবং আরো এক রাক’আত আদায় করে ছয় রাক’আত পূর্ণ করে সালাম ফেরাবে, কিন্তু এ অবস্থায় ফরয পুনরায় আদায় করতে হবে, এ নামায নফল হয়ে যাবে, ছহু সেজদা করতে হবে না। আর যদি ষষ্ঠ রাক’আত না মিলিয়ে পঞ্চম রাক’আতে বসে সালাম ফিরায়, তাহলে এক রাক’আত বাতিল হবে। এবং অবশিষ্ট চার রাক’আত নফল হবে; ফরয আবার আদায় করতে হবে।

১৯। মাসয়ালা : যদি চতুর্থ রাক’আতে বসে তাশাহহুদ পড়ার পর ভুলে দাঁড়িয়ে যায় এবং পঞ্চম রাক’আতের সেজদা করার পূর্বে মনে হয়, তাহলে সাথে সাথে বসে তাশাহহুদ না পড়ে। ডানে সালাম ফিরিয়ে ছহু সেজদা করবে, এরপর তাশাহহুদ পাঠ করে নামায শেষ করবে। আর। যদি পঞ্চম রাক’আতের সেজদা করার পর স্মরণ হয়, তাহলে আরও এক রাক’আত আদায় করে ছয় রাক’আত পূর্ণ করবে; এতে চার রাক’আত ফরয এবং দু’রাক’আত নফল হবে এবং ছহু সেজদা করতে হবে। আর যদি পঞ্চম রাক’আতের সাথে ষষ্ঠ রাক’আত না মিলিয়ে পঞ্চম রাক’আতেই সালাম ফিরায় এবং ছহু সেজদা করে তাতেও নামায হয়ে যাবে, কিন্তু অন্যায় হবে। চার রাক’আত ফরয হবে এবং এক রাক’আত বাতিল হয়ে যাবে।

২০। মাসয়ালা : কেউ চার রাক’আত নফল বা সুন্নত নামায আদায় করতে গিয়ে দু’রাক’আতের সময় বসতে ভুলে গেলে যে পর্যন্ত তৃতীয় রাক’আতের সেজদা না করবে সে পর্যন্ত মনে আসা মাত্রই বসে যাবে। আর তৃতীয় রাক’আতের সেজদা করার পর মনে আসলে না বসে চার রাক’আত পূর্ণ করে বসবে। এ উভয় অবস্থায় নামায হয়ে যাবে, কিন্তু ছহু সেজদা করতে হবে।

২১। মাসয়ালা : যদি কোন লোকের নামাযের মধ্যে সন্দেহ হয় যে, চার রাক’আত কি তিন রাক’আত আদায় করেছে, তাহলে দেখতে হবে যে, যদি কদাচ এরূপ সন্দেহ হয়, তাহলে নতুন নিয়্যত করে নামায পুনরায় আদায় করবে। আর যদি প্রায়ই তার এ ধরনের সন্দেহ হয়, তাহলে তার চিন্তা করে দেখতে হবে যে, তার মন তিন বা চার এ দু’দিকের কোন দিকে বেশি ঝুঁকে কি না? যদি এক দিকে বেশি ঝুঁকে, তাহলে তিন রাক’আতের দিকে ঝুঁকলে তিন রাক’আত ধরে আরও এক রাক’আত নামায আদায় করে শেষ করবে। আর যদি চার রাক’আতের দিকে ঝুঁকে, তাহলে চার রাক’আত ধরে নামায শেষ করবে। এ ধরনের সন্দেহের কারণে ছহু সেজদা করতে হবে না। আর যদি দু দিকেই সমান হয়, কোন দিকে মন না যায় এবং তিন বা চার রাকাআত কোনটাই ঠিক করতে না পারে, তবে তিন রাকায়াত অর্থাৎ কমটাই ধরতে হবে, কিন্তু এ তৃতীয় রাক’আতেও বসে তাশাহহুদ পাঠ করতে হবে। (কারণ হয়ত তা চতুর্থ রাক’আত হতে পারে) এরপর চতুর্থ রাক’আতেও বসে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে ছহু সেজদা করতে হবে।

২২। মাসয়ালা : সন্দেহ যদি এরূপ হয় যে, প্রথম রাক’আত কি দ্বিতীয় রাক’আত? তার হুকুম এরূপ হবে যে, কদাচ যদি এধরনের সন্দেহ হয়, তাহলে নতুন নিয়্যত করে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে, অধিকাংশ সময়ে যদি এমন সন্দেহ হয়, তাহলে যে দিকে মন বেশী ঝুঁকবে, সেদিকটাকেই গ্রহণ করবে। যদি কোন দিকে মন না ঝুঁকে, উভয় দিকে সমান হয়, তাহলে এক রাক’আতই অর্থাৎ কমটাই ধর্তব্য। কিন্তু এ প্রথম রাক’আতে বসে তাশাহ্হুদ পড়বে, কারণ হয়তো এটা দ্বিতীয় রাক’আত হতে পারে এবং দ্বিতীয় রাক’আতের পরও বসে তাশাহ্হুদ পাঠ করবে এবং এ রাক’আতে সূরাও মিলিয়ে পড়বে, কারণ এটাকে দ্বিতীয় রাক’আত সাব্যস্ত করা হয়েছে। অতঃপর তৃতীয় রাক’আতেও বসে তাশাহহুদ পাঠ করবে, কারণ এটা হয়ত চতুর্থ রাক’আত হতে পারে। তারপর চতুর্থ রাক’আত আদায় করে বসবে এবং তাশাহ্হুদ পড়বে ও ছহু সেজদাও করবে।

২৩। মাসয়ালা : দ্বিতীয় কি তৃতীয় রাক’আত হওয়ার ভেতর যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তারও হুকুম এরূপ। যদি উভয় দিকের ধারণা সমান হয় তাহলে এ দ্বিতীয় রাক’আতেও বসবে; কেননা, হয়ত এটা চতুর্থ রাক’আত হতে পারে, তারপর চতুর্থ রাক’আত আদায় করে ছহু সেজদা করে নামায শেষ করবে।

২৪। মাসয়ালা : নামায শেষ করার পর যদি এমন সন্দেহ হয় যে, তিন রাক’আত হয়েছে কি চার রাক’আত? তাহলে এ সন্দেহের কোন মূল্য নেই, নামায হয়ে গিয়েছে। অবশ্য যদি নির্ভুলভাবে স্মরণ থাকে যে, তিন রাক’আতই হয়েছে। তাহলে সাথে সাথে ওঠে আরও এক রাক’আত আদায় করবে এবং ছহু সেজদা করবে। এরপর সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে, এতেই নামায হয়ে যাবে, কিন্তু সালাম ফিরানোর পর যদি কথা বলে থাকে বা এমন কাজ করে থাকে, যাতে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়, যেমন : ক্বেবলা হতে ঘুরে বসা, তাহলে নতুন নিয়্যত করে সম্পূর্ণ নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। তদ্রপ যদি শেষ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর সন্দেহ হয়, তাহলে তারও হুকুম হল, সঠিকভাবে স্মরণ না হলে সে সন্দেহের কোন মূল্য নেই। অবশ্য যদি সঠিকভাবে স্মরণ হয় যে, এক রাক’আত কম হয়েছে। তাহলে আর এক রাক’আত আদায় করে ছহু সেজদা করে নামায শেষ করবে। যে সব অবস্থায় সন্দেহের কোন মূল্য নেই বলা হয়েছে, সে সকল অবস্থায়ও যদি কেউ উক্ত নামায শেষ করে মনের সন্দেহ দূর করার জন্য নতুন নিয়্যত বেঁধে নামায পুনরায় আদায় করে, তবে তো অতি উত্তম।

২৫। মাসয়ালা : এক নামাযে একবার মাত্র ছহু সেজদা করতে হবে। দু’ কিংবা ততধিক ভুল হলেও একবার ছহু সেজদা করতে হবে। এক নামাযে দু’বার ছহু সেজদার দরকার হয় না।

২৬। মাসয়ালা? এমন কি ছহু সেজদা করার পরও যদি ভুল হয়, তবুও পুর্নবার ছহু সেজদা করতে হবে না, ওই সেজদাই যথেষ্ট হবে।

২৭। মাসয়ালা : কারোর হয়ত নামাযের মধ্যে এমন ভুল হয়েছিল, যার জন্য ছহু সেজদা ওয়াজিব হয়েছিল কিন্তু তা আদায় করতে ভুলে গিয়েছে, উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলেছে তবে যতক্ষণ সে কথা না বলবে বা বুক ক্বেবলা হতে না ঘুরাবে অথবা নামায ভঙ্গ হওয়ার অন্য কোন কারণ পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ ছহু সেজদা করতে পারবে, এমন কি ক্বেবলামুখী হয়ে জায়নামাযের ওপর বসে অনেক্ষণ পর্যন্ত অজিফা পড়তে থাকে, তারপর ছহু সেজদার কথা স্মরণে আসে, তাহলে সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলে দুটি সেজদা করে তাশাহহুদ, দুরূদ ও দোয়া পড়ে সালাম ফিরালে নামায হয়ে যাবে। এতে কোন দোষ হবে না। আর যদি নামায বিরুদ্ধ কোন কাজ বা কথার পর স্মরণ হয়, তাহলে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

২৮। মাসয়ালা : ছহু সেজদা ওয়াজিব হওয়ার পর যদি ইচ্ছা করে উভয় দিকে সালাম ফিরায়ে এ নিয়্যত করল যে, ছহু সেজদা করব না, তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত নামায বিরুদ্ধ কোন কর্ম না পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ছহু সেজদা করার এখতিয়ার থাকবে।

২৯। মাসয়ালা : চার রাক’আত বা তিন রাক’আত বিশিষ্ট নামাযে যদি কেউ দু’রাক’আত আদায় করেই ভুলবশতঃ সালাম ফিরায়, তবে মনে হওয়া মাত্রই দাঁড়িয়ে নামায পূর্ণ করতে পারবে এবং ছহু সেজদা করবে, অবশ্য যদি সালাম ফেরানোর পর নামায বিরুদ্ধ কোন কাজ হওয়ার কথা মনে হয়, তবে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

৩০। মাসয়ালাঃ বেতের নামাযের প্রথম বা দ্বিতীয় রাক’আতে কেউ ভুলে দোয়া কুনুত পাঠ করলে, এ পাঠের কোন মূল্য নেই, তৃতীয় রাক’আতে পুনরায় পাঠ করতে হবে এবং ছহু সেজদা করতে হবে।

৩১। মাসয়ালাঃ বেতের নামাযে কোন ব্যক্তির যদি এমন সন্দেহ হয় যে, এটা কি দ্বিতীয় : তৃতীয় রাক’আত, আবার মনও কোন একদিকে বেশী ঝুঁকে না, উভয় দিকে সমান থাকে, তাহলে দু’রাক’আতই ধরতে হবে কিন্তু ওই দ্বিতীয় রাক’আতেও দোয়া কুনুত পড়তে হবে, বসে তাশাহহুদ পাঠ করবে এবং এরপর যে আরও এক রাক’আত আদায় করবে, সে রাক’আতেও দোয়া কুনুত পাঠ করবে এবং শেষে ছহু সেজদা করবে।

৩২। মাসয়ালাঃ বেতের নামাযে কেউ ভুলে দোয়া কুনুতের পরিবর্তে সুবাহানাকা পড়ল, অতঃপর মনে আসার পর পুনরায় দোয়া কুনূত পাঠ করল, তাহলে তাতে ছহু সেজদা করতে হবে না।

৩৩। মাসয়ালাঃ বেতের নামাযে যদি কেউ ভুলে দোয়া কুনূত পড়ে সূরা পড়ে রুকূতে চলে যায়, তাহলে রুকূ থেকে ওঠে দাঁড়ায়ে আর দোয়া কুনুত পড়তে হবে না। রুকূ সেজদা করে নামায শেষ করার পূর্বে ছহু সেজদা করবে।

৩৪। মাসয়ালা নফল নামাযে সূরা ফাতেহার পর দু’ বা দুয়ের অধিক সূরা পড়ায় কোন দোষ নেই। কিন্তু ফরয নামাযে সূরা ফাতেহার পর দু’ বা তার অধিক সূরা পড়া ভাল নয়, কিন্তু যদি কেউ পড়েই ফেলে, তাহলে ছহু সেজদা করা ওয়াজিব হবে না। অথবা কেউ যদি পাঠ। করতে করতে আটকিয়ে যায় এবং মুক্তাদীর লোকমা নিয়ে সমানে পড়ে যায় বা চলতে না পারায় অন্য সূরা পড়ে, তাহলেও ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না।

৩৫। মাসয়ালা : ফরয নামাযের শেষার্ধে অর্থাৎ তৃতীয় বা চতুর্থ রাক’আতে সূরা মিলিয়ে পড়ার বিধান নেই, কিন্তু কেউ যদি মিলায়ে, তাতে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না, ছহু সেজদাও ওয়াজিব হবে না।

৩৬। মাসয়ালাঃ নামাযের প্রারম্ভে ছানা পাঠ করা রুকূতে ]। La পাঠ করা, রুকূ থেকে ওঠার সময়। .’বা। এi L৭, বলা, সেজদায় গিয়ে–।–১২: পাঠ করা, নিয়্যত বাঁধার সময় হাত ওঠানো এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ইত্যাদি সুন্নাত, এগুলো ওয়াজিব নয়, সুতরাং ভুল বশতঃ যদি এসব ছুটে যায়, তবে তাতে ছহু সেজদা করা ওয়াজিব হবে না। অর্থাৎ ছহু সেজদা করতে হবে না।

৩৭। মাসয়ালা : ফরয নামাযের শেষার্ধে অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ রাক’আতে সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব নয়, সুন্নাত। কাজেই কেউ যদি ভুলবশতঃ সূরা ফাতেহা পাঠ না করে কিছু সময় চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে রুকূ সেজদা দিয়ে নামায শেষ করে, তাহলে তাতে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না।

৩৮। মাসয়ালা : ভুলবশতঃ ওয়াজিব ছুটে গেলে ছহু সেজদা ওয়াজিব হয়। যদি কেহ ইচ্ছাপূর্বক এরূপ করে, তবে তাতে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না, যদি ছহু সেজদা করে, তবুও নামায হবে না, নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। যে সকল কাজ নামাযের মধ্যে ফরয বা ওয়াজিব নয়, তা ভুলক্রমে তরক করলে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না এবং নামায পুনরায় আদায় করার আবশ্যকতা নেই। এভাবে ভুলে কোন ফরয ছুট গেলে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না, বরং নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

৩৯। মাসয়ালা : যে সব নামাযে কুেরাআত মনে মনে পড়া ওয়াজিব, যেমন : যুহর, আসর ও দিনের নফল ও সুন্নাত ইত্যাদি নামাযে কেউ যদি ভুলক্রমে উচ্চৈঃস্বরে কেরায়াত পাঠ করে, তবে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে। কিছু দু’এক শব্দ যদি কিছুটা উচ্চৈঃস্বরে বের হয়ে যায়, তাতে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না। এভাবে যে সব নামাযে ইমামের উচ্চৈঃস্বরে কেরাআত পড়া ওয়াজিব, যেমন : ফজর, মাগরীব ও এশার প্রভৃতি নামাযে যদি ভুলবশতঃ মনে মনে কেরাআত পাঠ করে তাহলে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে, কিন্তু দু’এক শব্দ যদি অনুচ্ছ কণ্ঠে পাঠ করে বা একাকী নামাযী যদি সমস্ত নামাযেই কেরআত আস্তে আস্তে পাঠ করে, তাতে ছহু সেজদা ওয়াজিব হবে না।

.।

তেলাওয়াতে সেজদার মাসয়ালা

১। মাসয়ালা : পবিত্র কোরআনে মোট চৌদ্দটি তেলাওয়াতের সেজদা রয়েছে। কোরআন কারীমের হাশিয়ার ওপর যে স্থানে saw (সেজদা) লেখা আছে, সে সে স্থানে তেলাওআত করলে বা তেলাওয়াত শুনলে সেজদা করা ওয়াজিব হয়। একেইতেলাওয়াতের সেজদা বলা হয়।

২-৩। মাসয়ালাঃ তেলাওয়াতের সেজদা আদায় করার নিয়ম হল, দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় গিয়ে একটি সেজদা করবে এবং তিন বার সেজদার তাসবীহ পাঠ করে পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়াবে। হাত ওঠাতে বা হাত বাঁধতে হবে না এবং দু’সেজদা দিতে হবে না। পুরুষের জন্য আল্লাহু আকবার জোরে বলা উত্তম। যদি না দাঁড়িয়ে বসে বসে সেজদা করে অথবা সেজদা করে বসে থাকে, তাও জায়েয আছে।

৪। মাসয়ালাঃ সেজদার আয়াত তেলাওয়াতকারীর ওপর সেজদা করা ওয়াজিব এবং যার কানে ওই তেলাওয়াতের শব্দ পৌঁছবে তার ওপরও সেজদা করা ওয়াজিব। সে ইচ্ছাপূর্বক শুনে থাকুক কিংবা অন্য কাজে নিয়োজিত থাকাবস্থায় শুনে থাকুক অথবা ওযূহীন অবস্থায় শুনে থাকুক, সেজদার আয়াত যে শুনবে, তার ওপরই সেজদা করা ওয়াজিব হবে। এ জন্যই সেজদার আয়াত তেলাওয়াতকালে চুপে চুপে তেলাওয়াত করা ভাল, যাতে অপর কোন ব্যক্তিকে অসুবিধায় পড়তে না হয়।

৫। মাসয়ালা : নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত আছে, যেমন ওযূ থাকা, জায়গা পাক, শরীর পাক, কাপড় পাক এবং ক্বেবলামুখী হওয়া। তেলাওয়াতের সেজদার জন্যও ওই একই শর্ত।

৬। মাসয়ালা : নামাযের সেজদা যেভাবে আদায় করতে হয়, তেলাওয়াতের সেজদাও সেভাবে আদায় করতে হবে। কোন কোন ব্যক্তি কোরআন মাজিদের ওপর সেজদা করে, এতে সেজদা আদায় হবে না।

.

পীড়িত ব্যক্তির নামায

১। মাসয়ালা : কোন অবস্থাতেই নামায ত্যাগ করবে না। যে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম সে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে, আর দাঁড়াতে না পারলে বসে আদায় করবে। বসে বসে রুকূ ও সেজদা করবে। রুক্কালে এতটুকু পরিমাণ ঝুঁকবে, যেন কপাল হাঁটু বরাবর হয়ে যায়।

২। মাসয়ালা : পীড়িত ব্যক্তির রুকূ সেজদা করতে যদি অক্ষম হয়, তাহলে ইশারায় রুকূ সেজদা আদায় করবে। সেজদার সময় রুকূর তুলনায় বেশি ঝুঁকবে।

৩। মাসয়ালাঃ সেজদার জায়গায় বালিশ ইত্যাদি কোন উঁচু বস্তু রাখা এবং তার ওপর সেজদা করা ভাল না, সেজদা করতে না পারলে ইশারায় সিজদা করবে, বালিশের ওপর সেজদা করার দরকার নেই।

৪। মাসয়ালা : কোন পীড়িত ব্যক্তির যদি এমন অবস্থা হয় যে, সে ইচ্ছা করলে দাঁড়াতে পারে কিন্তু তাতে অনেক কষ্ট হয় বা রোগ বৃদ্ধির প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার জন্য বসে নামায আদায় করা জায়েয।

৫। মাসয়ালা : কোন পীড়িত ব্যক্তির যদি এমন অবস্থা হয় যে, সে দাঁড়াতে পারে কিন্তু রুকূ সেজদা করতে পারে না, তবে তার জন্য উভয় অবস্থাই দুরস্ত হবে। দাঁড়িয়ে নামায আদায় করুক অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশারায় রুকূ সেজদা করুক অথবা বসে নামায আদায় করুক অথবা বসে বসে ইশারায় রুকূ সেজদা করুক। অবশ্য এ অবস্থায় বসে ইশারায় নামায আদায় করাই উত্তম।

৬। মাসয়ালা : পীড়িত ব্যক্তির যদি নিজ ক্ষমতায় বসার শক্তি না থাকে, কিন্তু তাকিয়ায় বা দেয়ালে ঠেস দিয়ে অর্ধ বসা অবস্থায় শয়ন করতে পারে, তবে তাকে তদ্রুপ তাকিয়া মাথার এবং পীঠের নিচে দিয়ে পশ্চিম মুখী করে শয়ন করাবে, যাতে কিছুটা বসার মত অবস্থা হয় এবং পা ক্বেবলার দিকে প্রসারিত করে দেবে, পা গুটিয়ে হাঁটু খাড়া করতে পারলে তদ্রূপ করে দেবে এবং হাঁটু খাড়া করে না রাখতে পারলে হাঁটুর নিচে বালিশ রেখে দেবে, যাতে পা যথাসম্ভব ক্বেবলার দিক হতে ফিরে থাকে, কেননা, বিনা কারণে ক্বেবলার দিকে পা রাখা মাকরূহ্। এভাবে বসে মাথার ইশারা দিয়ে রুকূ সেজদা আদায় করে নামায আদায় করবে, তথাপি নামায ত্যাগ করবে না। সেজদার ইশারার সময় রুকূর ইশারার চেয়ে মাথা কিছুটা বেশি ঝুঁকাবে। এভাবে হেলান দিয়েও বসতে না পারলে মাথার নীচে কিছুটা উঁচু বালিশ দিয়ে শোয়াবে, যাতে মুখটা আকাশের দিকে না থেকে যথা সম্ভব ক্বেবলার দিকে থাকে, এরপর মাথার ইশারা দিয়ে রুকূ সেজদা করে নামায আদায় করবে। রুকূর ইশারা একটু কম করবে এবং সেজদার ইশারা কিছুটা বেশি করবে।

৭। মাসয়ালা : কোন ব্যক্তি যদি ডান অথবা বাম কাতে শয়ন করে এবং ক্বেবলার দিকে মুখ করে, অর্থাৎ ডান কাতে শুয়ে উত্তর দিকে মাথা রেখে এবং বাম কাতে শুয়ে দক্ষিণ দিকে। মাথা রেখে মাথার ইশারায় রুকূ সেজদা করে নামায আদায় করে, তাহলে তাও জায়েয হবে। তবে চিৎ হয়ে শুয়ে নামায আদায় করা অধিক উত্তম।

৮। মাসয়ালা : পীড়িত ব্যক্তির যদি মাথা দিয়ে ইশারা করার শক্তিও না থাকে, তাহলে শুধু মাত্র চোখ দিয়ে ইশারায় নামায আদায় হবে না, আর এ অবস্থায় নামায আদায় করা ফরযও থাকে না। কিন্তু উল্লেখিত অবস্থা যদি চব্বিশ ঘন্টা স্থায়ী হয়, অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামায পর্যন্ত থাকে, তাহলে উল্লেখিত সময়ের নামায ক্বাযা আদায় করতে হবে, কিন্তু চব্বিশ ঘন্টার বেশি সময় যদি ওই অবস্থায় থাকে, তবে তার ক্বাযাও আদায় করতে হবে না; নামায সম্পূর্ণ মাফ হয়ে যাবে। চব্বিশ ঘন্টা সময় অথবা তার চেয়ে কম সময় উল্লেখিত অবস্থায় থাকার পর যদি অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয় এবং শুয়ে মাথার ইশারা দিয়ে নামায আদায় করার মত শক্তি পায়, তবে ওই অবস্থাতেই মাথার ইশারা দিয়ে রুকূ সেজদা আদায় করে ওই কয়েক ওয়াক্তের নামাযের ক্বাযা আদায় করে নেবে। একথা ভাবা ঠিক হবে না যে, সম্পূর্ণ ভাল হয়ে তারপর ক্বাযা আদায় করবো। কেননা, উক্ত অবস্থায় মৃত্যু হয়ে যেতে পারে, এর ফলে গুনাহ্গার অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করবে।

৯। মাসয়ালা : এমন কোন লোক যদি হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়ে এবং এক দিন এক রাত কিংবা তার চেয়ে কম সময় বেহুঁশ হয়ে থাকে, অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত কিংবা তদপেক্ষা কম নামায ক্বাযা হয়ে যায় তবে ওই ছুটে যাওয়া নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে। আর যদি এক দিন। এক রাত অপেক্ষা বেশি সময় বেহুঁশ হয়ে থাকে আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায অপেক্ষা বেশি ছুটে যায়, তাহলে তার ক্বাযা আদায় করতে হবে না।

১০। মাসয়ালা : কোন ব্যক্তি নামায শুরুর সময় বেশ সুস্থ অবস্থায় ছিল, কিন্তু কিছু নামায আদায় করার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো যেমন-রগের ওপর রগ ওঠে বা অন্য কোন রোগ উপস্থিত হয়ে এমন অবস্থা হয় যে, তার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি থাকলো না, তাহলে বাকী নামায তার বসেই আদায় করতে হবে। এমন কি, বসে বসে যদি রুকূ সেজদা করতে পারে করবে; নতুবা মাথার ইশারায় রুকূ সেজদা করে নামায আদায় করতে হবে, তথাপি নামায বাদ দেয়া যাবে না। এমন কি, যদি বসে নামায আদায় করতে না পারে, তাহলে শুয়ে শুয়ে বাকী নামায আদায় করবে।

১১। মাসয়ালা : কোন লোক পীড়িত অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারায় বসে আদায় করার নিয়্যত করেছে এবং বসে বসে যথারীতি রুকূ সেজদা করে দু’এক রাক’আত আদায় করেছে, তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে দাঁড়ানোর মতো শক্তি পেয়েছে, এ অবস্থায় বাকী নামায দাঁড়িয়ে পুরো করবে। নতুন করে নিয়্যত বাঁধার প্রয়োজন নেই।

১২। মাসয়ালাঃ রোগীর অবস্থা যদি এমন শোচনীয় হয় যে, রুকূ সেজদা করে নামায আদায় করতে পারে না, মাথার ইশারায় বসে বা শুয়ে নামায আদায় করতে হয় এবং ওই অবস্থায় নামাযের নিয়্যত বেঁধে দু’এক রাক’আত আদায় করেছে, তারপর বসে বা দাঁড়িয়ে রুকূ সেজদা করার মতো যদি শক্তি পায়, তবে যখনই এমন শক্তি পাবে তখনই পূর্বের নামাযের নিয়্যত বাতিল হয়ে যাবে এবং নতুন নিয়্যত করে নামায আদায় করতে হবে।

১৩। মাসয়ালা : রোগীর যদি এমন শোচনীয় অবস্থা দাঁড়ায় যে, (বসে মলও ত্যাগ করতে পারে না, শুয়ে শুয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে) পানি দিয়ে এস্তেঞ্জাও করতে পারে না, এক্ষেত্রে পুরুষ হলে তার স্ত্রী এবং স্ত্রী হলে তার স্বামী যদি পানি দিয়ে এস্তেঞ্জা করিয়ে দেয়, তাহলে অতি উত্তম, নতুবা নেকড়া দিয়ে মুছে ওই অবস্থাই নামায আদায় করবে, তথাপি নামায ত্যাগ করবে না। পুরুষের যদি পুত্র বা ভাই থাকে অথবা স্ত্রীর যদি মেয়ে বা বোন থাকে, তবে তারা ওযূ করিয়ে দিতে পারবে বটে, কিন্তু এস্তেঞ্জা করাতে পারবে না। কেননা, ছেলে, মেয়ে, মা, বাবা, বোন কারো জন্যই গুপ্ত স্থান দেখা বা স্পর্শ করা দুরস্ত নেই। স্বামী-স্ত্রীর জন্য একে অপরের গুপ্তস্থান দেখা বা ছোঁয়া দুরস্ত আছে। রোগী যদি নিজে ওযূ বা তায়াম্মুম করতে না পারে, তবে অন্য কেউ ওযূ বা তায়াম্মুম করায়ে দেবে। যদি নেকড়া দিয়ে মোছার মতো শক্তিও না থাকে এবং পুরুষের স্ত্রী এবং স্ত্রীর স্বামী না থাকে, তাহলে ঐ অবস্থাতেই নামায আদায় করবে, তথাপি নামায ছাড়বে না।

১৪। মাসয়ালা : কোন লোকের সুস্থ অবস্থায় কিছু নামায ক্বাযা হয়ে গিয়েছিল, রোগাক্রান্ত হওয়ার পর তার সে কথা মনে হয়েছে। এখন সে বসে, শুয়ে বা ইশারায় যেভাবে ওয়াক্তের নামায আদায় করবে, সেভাবেই ওই ক্বাযা নামায আদায় করতে পারবে। কখনোই ভাববে না যে, সুস্থ হয়ে আদায় করবে কিংবা যখন দাঁড়িয়ে আদায় করতে পারবে, তখন আদায় করবে অথবা যখন বসে রুকূ সেজদা করতে পারবে, তখন আদায় করবে, এমন খেয়াল শয়তানী থোকা, সুতরাং এরূপ খেয়াল করবে না, যখন স্মরণ হয় তখনই আদায় করে নেবে, বিলম্ব করবে না।

১৫। মাসয়ালা : পীড়িত ব্যক্তির বিছানা যদি অপবিত্র হয়ে যায় এবং বিছানা পাল্টাতে রোগীর অতি মাত্রায় কষ্ট হয়, তাহলে ওই অপবিত্র বিছানায়ই নামায আদায় করবে।

১৬। মাসয়ালা : ডাক্তার চোখ অপারেশন করেছে এবং নড়া-চড়া করতে নিষেধ করেছে, এ অবস্থায় শুয়ে নামায আদায় করবে।

.

মুসাফির অবস্থার নামায (কসর)

১। মাসয়ালা : কেউ যদি এক বা দু’মঞ্জিল সফর করে, তাহলে তাতে শরীয়তের কোন নির্দেশ পরিবর্তন হয় না এবং শরীয়ত অনুযায়ী তাকে মুসাফিরও বলা যায় না। সকল নির্দেশই তার জন্য অপরিবর্তিত থাকবে, যেরূপ বাড়িতে থাকে। চার রাক’আত নামায চার রাক’আতই আদায় করতে হবে এবং চামড়ার মোজার ওপর একদিন এক রাত অপেক্ষা বেশি সময় মাছেহ করতে পারবে না।

২। মাসয়ালা : যে ব্যক্তি কমপক্ষে তিন মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার নিয়্যত করে নিজ বাসস্থান থেকে বের হবে, তাকে শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফির বলা যাবে। যখন সে নিজ শহরের লোকালয় অতিক্রম করবে, তখন তার ওপর মুসাফিরের হুকুম বর্তমান, যতক্ষণ পর্যন্ত সে লোকালয়ে অবস্থান করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুসাফির হবে না।

৩। মাসয়ালা : প্রশ্ন : তিন মঞ্জিল কাকে বলে?

উত্তর : দল বেঁধে চললে খাওয়া-দাওয়া, পাক-ছাফ ও আরাম-আয়েশের সময় বাদ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে কিংবা নৌকায় বসে অথবা উটের পিঠে ছওয়ার হয়ে তিন দিনে যত দূর পর্যন্ত যাওয়া যায়, তাকে তিন মঞ্জিল বলে। আরব দেশে প্রায়ই মঞ্জিল নির্ধারিত আছে। আমাদের দেশের মোটামুটি হিসেবে এর আনুমানিক দূরত্ব (প্রচলিত ইংরেজী মাইল হিসেবে) আটচল্লিশ মাইল। এখানে উল্লেখ্য যে, শরয়ী মাইল এবং ইংরেজী মাইলের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইংরেজী মাইল হয় সতেরশ ষাট গজে এবং শরয়ী মাইল হয় দু’হাজার গজে। হিসেবের সুবিধার জন্য আমরা এখানে ইংরেজী মাইল লিখলাম।

৪। মাসয়ালা : কোন স্থানের দূরত্ব যদি এ পরিমাণ হয় যে, স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে, নৌকা যোগে বা উটে ছওয়ার হয়ে গেলে তিন দিন সময় লাগে; কিন্তু দ্রুত যান বাহনে যেমন, ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ী, স্টীমার, রেলগাড়ী, নৌকা, মটর গাড়ী, এরোপ্লেন ইত্যাদিতে তার চেয়ে কম সময় লাগে। এমন অবস্থায়ও শরীয়ত অনুযায়ী সফরকারী মুসাফিরই হবে।

যদি কেউ কমপক্ষে তিন মঞ্জিল অতিক্রম করার নিয়্যত না করে সারা পৃথিবী ঘুরে আসে, তাতে সে মুসাফির হবে না।

কোথাও যাওয়ার রাস্তা যদি দু’টি থাকে, আর তার একটির দূরত্ব যদি সফর পরিমাণ হয় এবং অপরটির দূরত্ব সে পরিমাণ না হয়, তাহলে যখন যে রাস্তা দিয়ে যাবে, তখন সে রাস্তারই হিসেব ধরা হবে, অপর রাস্তাটির হিসেব ধর্তব্য নয়।

৫। মাসয়ালা : যে ব্যক্তি শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফির সে ব্যক্তি যোহর, আছর ও এশার ফরয নামায চার রাক’আতের জায়গায় দু’ দু’ রাক’আত আদায় করবে এবং সুন্নাতের হুকুম এই যে, যদি ব্যস্ততা থাকে, তাহলে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য ওয়াক্তের সুন্নাত ছেড়ে দেয়া দুরুস্ত আছে, এতে কোন গুনাহ্ হবে না, আর যদি ব্যস্ততা না থাকে এবং সাথীদের নিকট থেকে পশ্চাতে থেকে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে ছাড়বে না। সফর অবস্থায় সুন্নাত পুরোপুরি আদায় করবে, সুন্নাতের কসর হয় না।

৬। মাসয়ালা : ফজর, মাগরীব এবং বেতের নামাযের কসর নেই, সর্বদা যেভাবে আদায় করার নির্দেশ, সেভাবেই আদায় করবে।

৭। মাসয়ালাঃ সফরকালীন যোহর, আছর এবং এশা এ তিন ওয়াক্তের নামায কসর আদায় করতে হয়, যদি কেউ কর না পড়ে ইচ্ছে করে চার রাক’আত আদায় করে তাহলে তার গুনাহগার হতে হবে। যেমন : কেউ যদি যোহরের নামায ছয় রাক’আত আদায় করে তবে সে গুনাহগার হবে।

৮। মাসয়ালা সফর অবস্থায় ভুলে কেউ যদি কসর দু’রাকাআতের স্থলে চার রাক’আত আদায় করে, তবে যদি দু’রাক’আত আদায় করার পর বসে তাশাহ্হুদ পাঠ করে থাকে, তবে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে, অতিরিক্ত দু’রাক’আত নফল হিসেবে গণ্য হবে, তবে ছহু সেজদা করতে হবে, আর যদি দু’রাক’আতের পর না বসে থাকে, তবে তার ফরয আদায় হবে না। ওই নামায সবই নফল হিসেবে গণ্য হবে, ফরয পুনরায় আদায় করতে হবে।

৯। মাসয়ালা : তিন মঞ্জিলের নিয়্যত করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পথে কোথাও যদি কয়েকদিন থাকার ইচ্ছে হয়, তাহলে যে পর্যন্ত পনের দিন বা তদপেক্ষা বেশি দিন থাকার নিয়্যত না করবে, সে পর্যন্ত মুসাফিরের মতো কসর আদায় করতে থাকবে। অবশ্য যদি পনের দিন বা তদপেক্ষা বেশি দিন থাকার নিয়্যত করে, তবে তখন থেকেই পুরো নামায আদায় করা আরম্ভ করবে। তারপর যদি নিয়্যত পাল্টে যায় এবং পনের দিনের পূর্বেই চলে যাওয়ার ইচ্ছে করে, তাহলে পুরো নামায আদায় করতে হবে, এভাবে পনের দিন অবস্থানের নিয়্যত করে মুকীম হয়ে যাওয়ার পর যখন ওই স্থান থেকে অন্য স্থানের উদ্দেশে রওয়ানা হবে, তখন দেখতে হবে, যে স্থানে যাওয়ার ইচ্ছে করেছে সে স্থানের দূরত্ব কত? যদি সে স্থানের দূরত্ব ওই অবস্থানের স্থান থেকে তিন মঞ্জিল অর্থাৎ আটচল্লিশ মাইল হয়, তাহলে পুনরায় কসর আদায় করতে হবে, আর যদি তার দূরত্ব আটচল্লিশ মাইল অপেক্ষা কম হয় তাহলে সে কর আদায় করতে পারবে না, পুরো নামাযই আদায় করতে হবে।

১০। মাসয়ালা : নৌকা পথে যাতায়াতের সময় যদি নামাযের সময় হয়ে যায়, তবে চলন্ত নৌকাতেও নামায আদায় করা দুরুস্ত আছে। যে সকল নামাযে দাঁড়ানো ফরয, সে সকল নামাযে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন গুরুতর কারণ পাওয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়ানো মাফ হবে না। কিন্তু নৌকা যদি দাঁড়ানোর অনুপযুক্ত হয় অথবা দাঁড়ালে মাথা ঘুরে পড়ার আশঙ্কা হয় এবং তকবীরে নামারও কোন উপায় না থাকে কিংবা নামাযের সময় বৃষ্টি হতে থাকার কারণে বাইরে বের হওয়া না যায়, বা চতুর্দিকে কাদাময় স্থান হয়, তাহলে বসে নামায আদায় করা জায়েয হবে।

তদ্রুপ নামাযের সময় ক্বেবলামুখী হওয়া ফরয, এ ফরযও কিছুতেই মাফ হতে পারে না। যদি নৌকা বা স্টীমার ঘুরে যায়, তাহলে নামায অবস্থায়ই ঘুরে দাঁড়াতে হবে, অন্যথায় নামায হবে না। নৌকা যদি তকবীরে বা ঘাটে বাঁধা থাকে, তাহলে তাতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা জায়েয হবে বটে, কিন্তু এ অবস্থায় নৌকার তলা যদি মাটির সাথে লাগানো না থাকে তাহলে কোন কোন আলেমের মতে দাঁড়িয়েও নামায আদায় করলে দুরুস্ত হবে না। অবশ্য নৌকার তলা মাটির সাথে লাগানো থাকলে সকলের মতেই দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা জায়েয হবে।

১১। মাসয়ালা : তদ্রূপ রেল গাড়ীতে যাতায়াতের সময় পথে নামাযের সময় হলে গাড়ীতে নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা দুরুস্ত আছে, যদি কারো মাথা ঘুরে পড়ে যাবার আশঙ্কা প্রবল হয়, তাহলে তার জন্য বসে নামায আদায় করা জায়েয হবে।

১২। মাসয়ালা : নামায পড়া অবস্থায় যদি গাড়ী বা নৌকা ঘুরে যায়, তাহলে নামাযরত অবস্থায়ই ক্বেবলা যে দিকে সে দিকে সাথে সাথে ঘুরে যেতে হবে।

১৩। মাসয়ালা : ওয়াক্তিয়া নামাযে মুসাফীরও মুকীমের এক্তেদা করতে পারে। ক্বাযা নামাযে মাগরীব ও ফজরে এক্তেদা করতে পারে। ক্বাযা নামাযে যোহর আছর ও এশার এক্তেদা করতে পারে না। কারণ, মুসাফীর যখন ক্বাযা নামাযে মুকীমের এক্তেদা করবে তখন ইমামের এক্তেদার কারণে মুক্তাদীও চার রাক’আত আদায় করবে, অথচ ইমামের প্রথম বৈঠক ফরয নয় কিন্তু মুক্তাদীর জন্য ফরয। সুতরাং ফরয আদায় কারীর এক্তেদা গায়ের ফরয আদায়কারীর পেছনে হবে, তাই দুরুস্ত নেই।

১৪। মাসয়ালা : মুসাফির নামাযের সময়ের মধ্যে অর্থাৎ সেজদা ছহু বা সালাম ফেরানোর আগে নামানের মধ্যে যে কোন সময়ে এক্বামতের নিয়্যত করলে তার পুরো নামায আদায় করতে হবে, কিন্তু নামাযরত অবস্থায়ই যদি ওয়াক্ত চলে যায় এবং এ অবস্থায় এক্বামতের নিয়্যত করে, কিংবা লাহেক অবস্থায় এক্বামতের নিয়্যত করে, তাহলে ওই নামায পূরো আদায় করতে হবে না, ক্বসর আদায় করবে।

যেমন : মুসাফিরের নামায এক রাক’আত আদায় করার পর সময় চলে গেল এবং এক্বামতের নিয়্যত করল, তাহলে এ নামায ক্বসর করতে হবে।

মুসাফির অপর মুসাফিরের এক্তেদা করল এবং লাহেক হল। তারপর অতীত নামায শুরু করল, এমন অবস্থায় এক্বামতের নিয়্যত করলে যদি এটা চার রাক’আতের নামায হয়, তবে ক্বসর আদায় করতে হবে।

.

ছলাতুল খওফ বা ভয়ের সময়ের নামায

যখন কোন শত্রুর মুখমুখী হতে হয়, শত্রু চাই মানুষ হোক বা হিংস্র জানোয়ার কিংবা অজগর হোক, এমতাবস্থায় যদি সকল মুসলমান বা অল্প সংখ্যক মুসলমানও যদি একত্রে জামায়াতে নামায আদায় করতে না পারে এবং সওয়ারী হতে নামার অবসর না পায়, তাহলে। সকলেই সওয়ারীর ওপর বসে বসে ইশারায় একাকী নামায আদায় করবে। তখন ক্বেবলামুখী হওয়াও শর্ত নয়। কিন্তু যদি দু’জন একই সওয়ারীতে উপবেশন করে থাকে, তাহলে তারা উভয়ে জামায়াতে নামায আদায় করবে। আর এতটুকুর অবকাশ না হলে মায়ূর। তখন নামায আদায় করবে না, অবস্থা শান্ত হওয়ার পর ক্বাযা আদায় করবে। আর সম্ভব হলে কয়েকজন মিলে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করতে পারবে, যদিও সবাই মিলে আদায় করতে না পারে, তবে এমন অবস্থায়ও জামায়াত ছেড়ে দেয়া উচিৎ নয়। ছলাতুল খওফের নিয়মানুসারে নামায আদায় করবে। অর্থাৎ সকল মুসলমানকে দুভাগে ভাগ করা হবে, একভাগ শত্রুর সাথে অবস্থান করবে এবং অপর ভাগ ইমামের সাথে নামায আরম্ভ করবে, যদি তিন বা চার রাক’আত বিশিষ্ট নামায হয়, যেমন–যুহর, আছর, মাগরীব ও এশা। যদি এরা মুসাফির না হয় এবং ক্বসর না করে, তাহলে যখন ইমাম দু’রাক’আত নামায আদায় করে তৃতীয় রাক’আতের জন্য দাঁড়াবে, আর যদি এরা কসর করে কিংবা দু’রাক’আত বিশিষ্ট নামায হয়, যেমন–ফযর, জুমুআ, ঈদের নামায কিংবা মুসাফিরের যুহর, আসর ও এশার নামায, তাহলে এক রাক’আতের পরই এ ভাগ চলে যাবে এবং দ্বিতীয় ভাগ এসে ইমামের সাথে নামায আদায় করবে, তাদের জন্য অপেক্ষা করা ইমামের উচিত। ইমাম যখন অবশিষ্ট নামায পুরো করবেন তখন সালাম ফেরাবেন আর এরা সালাম না ফিরিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় চলে যাবে এবং প্রথম দল এখানে এসে নিজেদের অবশিষ্ট নামায কেরাআত ব্যতীত শেষ করে সালাম ফেরাবে। কেননা, এরা লাহেক। অতঃপর এরা শত্রুর মোকাবেলায় চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দল এসে নিজেদের নামায কেরাআত সহকারে আদায় করবে এবং সালাম ফেরাবে, কেননা, এরা মাসবুক।

.

ঈদের নামায

 ১। মাসয়ালা : ১লা শাওয়াল যে ঈদ তাকেঈদুল ফিতর এবং ১০ই যিলহজ্জ যে ঈদ, তাকেঈদুল আযহা বলা হয়। ঈদ অর্থ : খুশী। ইসলামের বিধানে দু’টি ঈদ নির্ধারিত। এ উভয় ঈদের দিনে মুসলমানদের সমবেত হয়ে শোকর আদায়ের উদ্দেশে দু’রাকাআত নামায আদায় করা ওয়াজিব। জুমু’আর নামাযের জন্য যে সকল শর্ত, দু’ ঈদের নামাযের জন্যও সে সব শর্ত আবশ্যক। অবশ্য জুমু’আর নামাযের খুৎবা ফরয, আর দু ঈদের নামাযের খুতবা সুন্নাত। জুমু’আর ন্যায় দু’ ঈদের খুৎবা শোনাও ওয়াজিব। খুৎবা চুপ করে মনযোগ সহকারে শুনতে হবে, কথাবার্তা, চলাফেরা, নামায আদায় বা দোয়া করা ইত্যাদি সবই হারাম। ঈদুল ফিতরের দিন নিম্নলিখিত তেরটি কাজ সুন্নাত।

(১) শরীয়তের সীমার ভেতর থেকে সাধ্য মতো সাজগোজ করা। (২) গোসল করা। (৩) মিসওয়াক করা। (৪) যথাসম্ভব উত্তম কাপড় পরা। (৫) সুগন্ধি লাগান। (৬) খুব ভোরে বিছানা থেকে ওঠা। (৭) ফজরের নামাযের পরেই খুব ভোরে ঈদগাহে গমন করা। (৮) ঈদগাহে গমনের পূর্বে খোরমা বা অন্য কোন মিষ্টান্ন আহার করা। (৯) ঈদগাহে গমনের পূর্বে ছদকায়ে ফিতরা দান করা। (১০) ঈদের নামায মসজিদে না আদায় করে ঈদগাহে আদায় করা। অর্থাৎ বিনা প্রয়োজনে মসজিদে না পড়া। (১১) ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া এবং অন্য পথ দিয়ে ফিরে আসা। (১২) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে গমন করা। (১৩) ঈদগাহে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে নিম্নলিখিত তকবীর বলতে বলতে যাওয়া।

الله أكبر الله أكبر. إله إلا الله والله أكبر. الله أكبر ولله

মাসয়ালা ২। ঈদুল ফিতরের নামাযের নিয়্যত :

تويت أن أصلى لله تعالى ركعتى واجب شلوة عيد الفطر مع ست

تكبيرات واجبات–

বাংলা নিয়্যত : আমি ঈদুল ফিতরের দু’রাক’আত ওয়াজিব নামায ঈদের ছয়টি ওয়াজিব তাকবীরের সাথে পড়তেছি।

উল্লিখিত নিয়্যত করে, আল্লাহু আকবার বলে হাত তুলে তাহরীমা বাধবে। এরপর সুবহানাকা (সানা) সম্পূর্ণ পড়বে। এরপর পর পর তিনবারআল্লাহু আকবার বলে তাকবীর বলবে এবং প্রতিবার হাত কান পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দেবে। প্রতি তাকবীরের পর তিনবার সুবহানাল্লাহ্ পড়া যায় পরিমাণ সময় থামবে, তৃতীয়বার তাকবীর বলে হাত না ছেড়ে তাহরীমা বাঁধবে। এরপর আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতেহা ও অন্য একটি সূরা পড়ে অন্যান্য নামাযের ন্যায় রুকূ সেজদা করবে; কিন্তু দ্বিতীয় রাক’আতে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতেহা এবং অন্য যে কোন সূরা পাঠের পর পরই রুকূতে না গিয়ে উল্লিখিত নিয়মে তিনবার তকবীর বলবে, তৃতীয় তকবীর বলে হাত না বেঁধে হাত ছেড়ে রেখে চতুর্থ তকবীর বলে রুকূতে যাবে।

৩। মাসয়ালা : নামাযের পর ইমাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে দু’টি খুৎবা দেবে। দু’ খুৎবার মাঝে জুমু’আর খুৎবার অনুরূপ কিছুক্ষণ বসবে।

৪। মাসয়ালা : ঈদের নামাযের পর দোয়া করা যদিও নবী করীম (ছঃ) এবং তাঁর সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত নয়, কিন্তু অন্যান্য নামাযের শেষে দোয়া করা যেহেতু সুন্নাত, তাই ঈদের নামাযের শেষেও দোয়া করা সুন্নাত হবে বলে ধারণা।

৫। মাসয়ালা : উভয় ঈদের খুৎবা প্রথমে তাকবীর বলে শুরু করবে। প্রথম খুৎবায় নয় বার ও দ্বিতীয় খুৎবায় সাত বার আল্লাহু আকবার বলবে।

৬। মাসয়ালা : ঈদুল আযহার নামাযও ঈদুল ফিতর এর ন্যায় এবং যে সকল বিষয় ঈদুল ফিতরে সুন্নাত সে সকল বিষয় ঈদুল আযহায়ও সুন্নাত। পার্থক্য কেবল (১) নিয়্যতের মধ্যে ঈদুল ফিতরের পরিবর্তে ঈদুল আযহা বলবে। (২) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে গমনকালে কিছু পানাহার করা সুন্নাত কিন্তু ঈদুল আযহার দিন খেয়ে যাওয়া সুন্নাত নয়। (৩) ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমনকালে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলা সুন্নাত। ঈদুল ফিতরের দিন আস্তে বলা সুন্নত। (৪) ঈদুল আযহার নামায ঈদুল ফিতরের নামায অপেক্ষা তাড়াতাড়ি আদায় করা সুন্নত। (৫) ঈদুল ফিতরের নামাযের পূর্বে ছদকায়ে ফিতরের হুকুম, ঈদুল আযহার নামাযের পর সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতি কোরবানীর হুকুম। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা এ দু ঈদের নামাযে কোন আযান ও এক্বামত নেই। 

৮। মাসয়ালা : মহিলারা এবং অন্যান্য যারা কোন কারণ বশতঃ ঈদের নামায পড়েনি, তাদের জন্যও ঈদের নামাযের আগে কোন নফল নামায পড়া মাকরূহ্।

৯। মাসয়ালা : ঈদুল ফিতরের খুৎবায় ছদকায়ে ফিতর সম্পর্কে এবং ঈদুল আযহার খুৎবায় কোরবানী ও তাকবীরে তাশরীক সম্বন্ধে বর্ণনা করতে হবে। নিম্ন লিখিত তাকবীরকে তাকবীরে তাশরীক বলা হয়।

الله أكبر الله أكبر. إله إلا الله والله أكبر. الله أكبر ولله

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর এ তাকবীর বলা ওয়াজিব। যদি সে ফরয শহরে জামায়াতে আদায় করা হয়। নারী ও মুসাফিরের জন্য এ তাকবীরে তাশরীক ওয়াজিব নয়। এরা যদি এমন লোকের মুক্তাদী হয় যার ওপর তকবীর ওয়াজিব, তাহলে এদের ওপরও ওয়াজিব হবে। তবে যদি একা নামাযী, মহিলা এবং মুসাফির পড়ে, তাহলে উত্তম। কেননা, ছাহেবাঈনের মতে এদের ওপরও ওয়াজিব।

১০। মাসয়ালা : যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামায যারা জামা’আতে পড়ে তাদের সকলের ওপর একবার তকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।

১১। মাসয়ালা : এ তাকবীর উচ্চ কণ্ঠে বলা ওয়াজিব, মহিলারা নিঃশব্দে বলবে।

১২। মাসয়ালা : নামাযের পর বিলম্ব না করে সাথে সাথে এই তাসবীহ্ বলতে হবে।

১৩। মাসয়ালা : ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে মুক্তাদীরা উচ্চকণ্ঠে তকবীর বলবে। ইমামের বলার জন্য বসে থাকা ঠিক নয়।

১৪। মাসয়ালাঃ মতান্তরে ঈদুল আযহার নামাযের পরও তকবীর বলা ওয়াজিব।

১৫। মাসয়ালা : উভয় ঈদের নামায সারা শহরের সকল লোক সমবেত হয়ে একই স্থানে পড়া উত্তম। কয়েক স্থানে পড়লে তাতেও নামায হয়ে যাবে। সকলের ঐকমত্যে বিভিন্ন মসজিদে পড়া দুরুস্ত।

১৬। মাসয়ালা : কেউ যদি একা ঈদের নামায না পায় কিংবা নামায পেয়েছিল কিন্তু কোন কারণে একজনের নামায বাতিল হয়ে গেছে, তাহলে একা একা ঈদের নামায বা ঈদের নামাযের ক্বাযা আদায় করতে পারবে না। ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়। কারণ, ঈদের নামায ছহীহ্ হওয়ার জন্য জামায়াত শর্ত। কিন্তু যদি একদল লোকের নামায ছুটে যায় বা বাতিল হয়ে যায়, তাহলে তারা অন্য কাউকে ইমাম বানিয়ে নামায আদায় করবে।

১৭। মাসয়ালা : যদি কোন কারণে শাওয়াল মাসের ১লা তারিখে ঈদুল ফিতরের নামায আদায় করা না হয়, তবে ২রা শাওয়ালও পড়তে পারে। এরপর আর পারবে না। কিন্তু ঈদুল আযহার নামায যদি কোন কারণে ১০ই যিলহজ্জ তারিখে পড়তে না পারে তাহলে ১১ বা ১২ই যিলহজ্জ পর্যন্ত পড়তে পারবে।

১৮। মাসয়ালা : ঈদুল আযহার নামায যদিও বিনা কারণে যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে না। পড়া মাকরূহ, তথাপি কেউ যদি প্রথম দিন না পড়ে ২য় বা ৩য় দিন পড়ে, তবে নামায হয়ে যাবে। বিনা কারণে কেউ যদি ১লা শাওয়াল ঈদুল ফিতরের নামায না পড়ে ২রা শাওয়াল পড়ে, তবে তার নামায আদৌ হবে না।

কারণ : যেমন : (১) কোন কারণে যদি ইমাম হাজির হতে না পারেন। (২) যদি অনবরত বৃষ্টি পড়তে থাকে। (৩) ওয়াক্ত থাকতে চাঁদ ওঠা ঠিক না হয়ে থাকা, ওয়াক্ত চলে গেলে পর চাঁদ ওঠার খবর পেয়ে থাকে। (৪) নামায আদায় করা হয়েছে কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় ওয়াক্ত জানা যায়নি, পরে মেঘ সরে গেলে জানা গেল যে, তখন নামাযের ওয়াক্ত ছিল না।

১৯। মাসয়ালা : ঈদের নামাযে কেউ ইমামের তাকবীর বলা শেষ হওয়ার পর নামাযে শরীক হলে যদি ইমামকে দণ্ডায়মান অবস্থায় কেরাআতরত অবস্থায় পায় তাহলে নিয়্যত বেঁধে একা একা তাকবীর বলে নেবে, আর যদি ইমামকে রুকূতে পায়, তাহলে যদি মনে দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, তকবীর বলেও ইমামকে রুকূতে ধরতে পারবে তবে দাঁড়ানো অবস্থায় নিয়্যত করে তকবীর বলে তারপর রুকূতে যাবে। কিন্তু যদি তকবীর বললে রুকূ না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে নিয়্যত বেঁধে রুকূতে চলে যাবে কিন্তু রুকূতে তাসবীহ্ না পড়ে আগে তকবীর বলে নেবে, তারপর সময় পেলে রুকূর তাসবীহ পড়বে। কিন্তু রুকূতে তকবীর বলতে হাত তুলবে না। যদি তাকবীর শেষ হওয়ার আগেই ইমাম রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তাহলে মুক্তাদীও দাঁড়িয়ে যাবে, যে পরিমাণ বাকী থাকে তা মাফ।

২০। মাসয়ালা : কেউ ঈদের নামাযে দ্বিতীয় রাকাআতে শরীক হলে ইমাম সালাম ফিরালে সে যখন উঠে প্রথম রাক’আত আদায় করার জন্য দাঁড়াবে, তখন সে প্রথমে সানা, তাওউয, সূরা-কেরাআত পড়বে, এরপর রুকূর আগে তকবীর বলবে। কেরাক’আতের আগে তাকবীর বলবে না।

ইমাম যদি দণ্ডায়মান অবস্থায় তাকবীর বলা ভুলে যায় এবং রুকূ অবস্থায় মনে পড়ে তাহলে রুকূ অবস্থায় তাকবীর বলবে। রুকূ ছেড়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু যদি রুকূ ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর। বলে আবার রুকূতে যায়, তাতেও নামায হয়ে যাবে, নামায বাতিল হবে না। লোক সংখ্যার আধিক্যের কারণে ছহু সেজদাও করতে হবে না।

.

কোরআনে তাহাজ্জুদ নামাযের আলোচনা

আল্লাহ্ রবুল আলামীন কোরআন করীমে এরশাদ করেন

ومن الليل فتهجد به نافلة لك–عسى أن يبعثك ربك مقاما

محمودا

উচ্চারণ : ওয়া মিনা লাইলি ফাতাহাজ্জাদ বিহী না-ফিলাত্বাল লাকা, আসা–আই ইয়াবআসাকা রব্বুকা মাকামা মাহমূদা-।

অর্থ : রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাকামে মাহমূদে পৌঁছাবেন। –(সূরা বনী ইস্রাঈল-৭৯)

এ আয়াতে কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ নামায পড়া। এ কারণেই শরীয়াতের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাযকে ছলাতুত্ তাহাজ্জুদ বলা হয়। 

আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন অন্যত্র এরশাদ করেন

ايها المزمل (۱) قم الي الا قليلا (۲) تصفه أو انقص منه قلي؟ (۳) أو زد عليه ورتل القرآن ترتيلا (4) إنا ستلقى عليك قوة ثقي (0) ان ناشئة الليل هي أشد وطاق أقوم ټي (1) ان لك في النهار با طويلاه

অর্থ : (১) হে বস্ত্রাবৃত, (২) রাতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে (৩) অর্ধ রাতি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম (৪) অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কোরআন আবৃত্তি করুন ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে (৫) আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করব গুরুত্বপূর্ণ বাণী। (৬) নিশ্চয় ইবাদতের জন্যে রাতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। (৭) নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।–(সূরা মুযযাম্মিল-১-৭ আয়াত)

.

তাহাজ্জুদ নামাযের বিধান–

এ সম্পর্কিত আয়াতসমূহের তাফসীর

1 ও শব্দদ্বয় থেকেই বোঝা যায়, আলোচ্য আয়াতসমূহ ইসলামের শুরুতে এবং কোরআন অবতরণের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। তখন পর্যন্ত পাঞ্জেগানা নামায ফরয ছিল না। পাঞ্জেগানা নামায মেরাজের রাতে ফরয হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীসদৃষ্টে বাগাভী (রঃ) বলেন : এ আয়াতের আলোকে তাহাজ্জুদ অর্থাৎ রাতের নামায রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) ও সমগ্র উম্মতের উপর ফরয ছিল। এটা পাঞ্জেগানা নামায ফরয হওয়ার পূর্বের কথা। এ আয়াতে তাহাজ্জুদের নামায কেবল ফরযই করা হয়নি, বরং রাতের কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ নামাযে মশগুল থাকাও ফরয করা হয়েছে। কারণ, আয়াতের মূল আদেশ হচ্ছে কিছু অংশ বাদে সমগ্র রাত নামাযে মশগুল থাকা। কিছু অংশ বাদ দেয়ার বিবরণ পরে উল্লেখ করা হবে।

ইমাম বাগাভী (রঃ) বলেন : এ আদেশ পালনার্থ রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) রাতের অধিকাংশ সময় তাহাজ্জুদে ব্যয় করতেন। ফলে তাঁদের পদদ্বয় ফুলে যেত এবং আদেশটি বেশ কষ্টসাধ্য প্রতীয়মান হয়। পূর্ণ এক বছর পর এ সূরার শেষাংশ a ty A t অবতীর্ণ হলে দীর্ঘক্ষণ নামাযে দণ্ডায়মান থাকার বাধ্যবাধকতা রহিত করে বিষয়টি ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়ে ব্যক্ত করা হয় যে, যতক্ষণ সহজ মনে হয় ততক্ষণ নামায পড়াই তাহাজ্জুদের জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়বস্তু আবূ দাউদ ও নাসায়ীতে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মেরাজের রাতে পাঞ্জেগানা নামায ফরয হওয়ার আদেশ অবতীর্ণ হলে তাহাজ্জুদের ফরয আদেশ রহিত হয়ে গেলেও সুন্নত থেকে যায়। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন।–(মাযহারী)। Ji।I” বাক্যাংশের সাথে আলিফ ও লাম্ সংযুক্ত হওয়ায় অর্থ হয়েছে আপনি সমগ্র রাত নামাযে মশগুল থাকুন কিছু অংশ বাদ দিয়ে। অতঃপর ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে–4 5 2 অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা কিছু বেশি সময় নামাযে মশগুল থাকুন। এটা ১ ব্যতিক্রমের বর্ণনা। তাই প্রশ্ন হয় অর্ধেক রাত তো কিছু অংশও হতে পারে না। এর জবাব হচ্ছে, রাতের প্রথম অংশ তো মাগরিব ও এশার নামায ইত্যাদিতে অতিবাহিতই হয়ে যায়। এখন অর্ধেকের অর্থ হবে অবশিষ্ট রাতের অর্ধেক। সেটা সারা রাতের তুলনায় কিছু অংশ। আয়াতে অর্ধ রাতের কম এবং বেশিরও অনুমতি আছে। তাই সমষ্টিগতভাবে এর সারমর্ম হচ্ছে, কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ রাতের চেয়ে কিছু বেশি সময় নামাযে মশগুল থাকা ফরয।

১৪–এর শাব্দিক অর্থ সহজ ও সঠিকভাবে বাক্য উচ্চারণ করা।–(মুফরাদাত)

আয়াতের উদ্দেশ্য দ্রুত কোরআন তেলাওয়াত করবেন না; বরং সহজভাবে এবং অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে উচ্চারণ করবেন।–(কুরতুবী)।

Bও বলে রাতের নামাযে করণীয় কি তা বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেল তাহাজ্জুদ নামায কোরআন, তসবীহ ও রুকূ, সেজদা ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত হলেও তাতে আসল উদ্দেশ্য কোরআন পাঠ। এ কারণেই সহীহ হাদীস সাক্ষ্য দেয়, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) তাহাজ্জুদ নামায অনেক লম্বা করে আদায় করতেন। সাহাবী এবং তাবেয়ীদেরও এ অভ্যাস ছিল। এ থেকে আরও জানা গেল, কেবল কোরআন পাঠই কাম্য নয়; বরং তারতীল তথা সহজ সঠিকভাবে পাঠ কাম্য। রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এভাবেই পাঠ করতেন। রাতের নামাযে তিনি কিরূপে কোরআন তেলাওয়াত করতেন এ প্রশ্নের জবাবে হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-এর কেরাআত অনুকরণ করে শোনান। তাতে প্রত্যেকটি হরফ স্পষ্ট ছিল।–(মাযহারী)

যথাসম্ভব সুললিত স্বরে তেলাওয়াত করাও তারতীলের অন্তর্ভুক্ত। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন, যে সশব্দে সুললিত স্বরে তেলাওয়াত করেন তাঁর কেরাক’আতের মত অন্য কারও কেরাআত আল্লাহ্ তা’আলা শুনেন না।” (মাযহারী)

হযরত আলকামা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে সুমধুর স্বরে তেলাওয়াতে করতে দেখে বললেন :

لقد رتيل القران فيداه ابي وامی۔

অর্থাৎ যে কোরআনে তারতীল করেছে। আমার পিতা-মাতা তার জন্য উৎসর্গ হোন। -(কুরতুবী)

তবে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ চিন্তা করে তদ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই আসল তারতীল। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এক ব্যক্তিকে কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে ক্রন্দন করতে দেখে বলেছিলেন, আল্লাহ্ তা’আলা : ১১। এ আয়াতে যে তারতীলের আদেশ করেছেন এটাই সেই তারতীল। (কুরতুবী)

১a 1 dl lL.–Jai Jai (গুরুত্বপূর্ণ কলাম) বলে কোরআন পাক বোঝানো হয়েছে। কেননা, কোরআনে বর্ণিত হালাল-হারাম, জায়েয-নাজায়েযের নিয়ম স্থায়ীভাবে মেনে চলা সাধারণ দৃষ্টিতে কঠিনই বটে। তবে যার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা সহজ করে দেন তার কথা স্বতন্ত্র। ভারী বলার আরেক কারণ কোরআন নাযিল হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বিশেষ ওজন ও তীব্রতা অনুভব করতেন। ফলে প্রচণ্ড শীতেও তিনি ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তিনি তখন কোন উটের উপর সওয়ার থাকলে বোঝার কারণে উট নুয়ে পড়ত। (বোখারী)

এ আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মানুষকে কষ্টে অভ্যস্ত করার জন্যে তাহাজ্জুদের আদেশ দেয়া হয়েছে। রাতের নিদ্রার প্রাবল্য এবং মানসিক সুখের বিরুদ্ধে এটা একটা জেহাদ। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোরআনে অবতীর্ণ কষ্টসাধ্য বিধি-বিধান পালন সহজ হয়ে যাবে।

L/ { ও ১–৫–শব্দের অর্থ রাতের নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন : এর অর্থ রাতে নিদ্রার পর নামাযের জন্যে গাত্রোত্থান করা। তাই এর অর্থ। হয়ে গেছে তাহাজ্জুদ। কারণ, এর শাব্দিক অর্থ রাতে নিদ্রার পর উঠে নামায পড়া। ইবনে কায়সান (রহঃ) বলেন : শেষ রাতে গাত্রোখান করাকে 4.6 বলা হয়। ইবনে যায়েদ (রহঃ) বলেন ও রাতের যে অংশেই কোন নামায পড়া হয়, তা L 3G-এর অন্তর্ভুক্ত। ইবনে আবী মুলায়কা (রহঃ)-এর বর্ণনা মতে, এক প্রশ্নের জবাবে হযরত ইবনে আব্বাস এবং ইবনে যুবায়ের (রহঃ) ও তাই বলেছেন।-(মাযহারী)

এসব উক্তির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। প্রকৃতপক্ষে রাতের যে কোন অংশে যে নামায পড়া হয়, বিশেষত এশার পর, তাই AL; L ৬-এর অন্তর্ভুক্ত এটা হযরত হাসান বসরী (রহঃ)-এর অভিমত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছঃ), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও বুযুর্গগণ সর্বদাই এ নামায নিদ্রার পর শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে পড়তেন। তাই এটা উত্তম ও অধিক বরকতের কারণ। তবে এশার নামাযের পর যে কোন নফল নামায পড়া যায় এবং তাতে তাহাজ্জুদের সুন্নত আদায় হয়ে যায়। La। ৭ শব্দে দু’রকম কেরাআত আছে। প্রসিদ্ধ কেরাক’আতে ওয়াও-র উপর যবর এবং ত্বোয়া সাকিন–অর্থ দলন করা, পিষ্ট করা। আয়াতের অর্থ রাতের নামায প্রবৃত্তি দলনে খুবই সহায়ক। অর্থাৎ এতে করে প্রবৃত্তিকে বশীভূত এবং অবৈধ বাসনা থেকে বিরত রাখার কাজে সাহায্য পাওয়া যায়। দ্বিতীয় কেরাআত হচ্ছে UK-এর ওজনে 9 এমতাবস্থায় এর অর্থ হবে অনুকূল হওয়া। all। ১৪ use s; als আয়াতেও শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে এ অর্থই বর্ণিত আছে। ইবনে যায়েদ (রাঃ) বলেন : ৮, শব্দের উদ্দেশ্য রাতে নামাযের জন্যে গাত্রোত্থান করা অন্তর, দৃষ্টি, কান ও জিহ্বার মধ্যে পারস্পরিক একাত্মতা সৃষ্টিতে খুবই কার্যকর। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন : 69–এর অর্থ কান ও অন্তরের মধ্যে তখন অধিকতর একাত্মতা থাকে। কারণ, রাতের বেলায় সাধারণতঃ কাজকর্ম ও হট্টগোল থাকে না। তখন মুখ থেকে যে বাক্য উচ্চারিত হয়, কানও তা শুনে এবং অন্তরও উপস্থিত থাকে।

শব্দের অর্থ অধিক সঠিক। অর্থাৎ রাতের বেলায় কোরআন তেলাওয়াত অধিক শুদ্ধতা ও স্থিরতা সহকারে হতে পারে। কারণ, তখন বিভিন্ন প্রকার ধ্বনি হট্টগোলে বা অন্তর ও মস্তিষ্ক ব্যাকুল থাকে না। পূর্ববর্তী আয়াতের ন্যায় এ আয়াতেও তাহাজ্জুদের রহস্য বর্ণিত হয়েছে। তবে পূর্ববর্তী : 3:3 41:51.। আয়াতে বর্ণিত রহস্য রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ব্যক্তি সত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল এবং এ আয়াতে বর্ণিত রহস্য সমগ্র উম্মতের জন্য ব্যাপক। ২০h :–1।—শব্দের অর্থ প্রবাহিত হওয়া ও ঘোরাফেরা করা। এ কারণে সাঁতার কাটাকেও ৫ ও ৭L বলা হয়। এখানে এর অর্থ দিনের কর্মব্যস্ততা, শিক্ষাদান, মানব জাতির সংশোধনের নিমিত্ত দ্বীনের প্রচার অথবা নিজের জীবিকার অন্বেষণে ঘোরাফেরা করা, ইত্যাদি সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এ আয়াতে তাহাজ্জুদের তৃতীয় রহস্য ও উপযোগিতা বর্ণিত হয়েছে, এটাও সবার জন্যে ব্যাপক। তা হচ্ছে, দিবাভাগে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ও অন্যান্য সবাইকে অনেক কর্মব্যস্ততায় থাকতে হয়, ফলে একাগ্র চিত্তে ইবাদতে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই রাত এ কাজের জন্যে নির্দিষ্ট থাকা উচিত। যেন প্রয়োজনমাফিক নিদ্রা ও আরাম এবং তাহাজ্জুদ সবই হয়ে যায়। ফেকাহবিদগণ বলেন : যেসব আলেম, মাশায়েখ জনগণের শিক্ষা-দীক্ষা ও সংশোধনের দায়িত্ব পালন করেন, এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, তাদেরও এ কাজ দিবাভাগে সীমিত রেখে রাতে আল্লাহ তা’আলার এবাদতে মশগুল হওয়া উচিত। পূর্ববর্তী আলেমদের কর্মপদ্ধতি এ অভিমতের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। যদি কোন সময় রাতের বেলাও উপরোক্ত দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তা ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনমাফিক ব্যতিক্রম হতে পারে। এর সাক্ষ্যও অনেক আলেম ও ফেকাহবিদের কর্ম থেকে পাওয়া যায়।

.

তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়্যত

: نويت أن أصلى لله تعالی عتي صلوة التهجد شته شول

الله تعالى–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر–

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাকআতাই ছলা-তিত্ তাহাজুদি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যতঃ আমি ক্বেলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাহাজ্জুদের দু রাক’আত নামায আদায়ের নিয়্যত করিলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

নফল নামায সমূহের বিবরণ

আল্লাহ তা’আলার নির্দেশিত ফরজ, ওয়াজিব নামায এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ ব্যতীত যত নামাযই আছে তা নফল নামায। নফল নামায সমূহের কোন সংখ্যা বা সীমা নেই। যে ব্যক্তি যত বেশি পরিমানে নফল নামায আদায় করবে, সে ততো বেশি পূণ্য লাভ করবে। অতএব সমস্ত মুসলমান পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের অধিক সওয়াবের আকাংখায় বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা উচিৎ। হযরত নবী করীম (ছঃ) যে সকল নফল নামায আদায় করতেন তা ধারাবাহিকভাবে এই কেতাবে উল্লেখ করছি।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : নেক আমল দ্বারা সগীরাহ্ গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। অতএব গুনাহ মাফীর জন্য সদা সর্বদা বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উচিৎ।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেয়ছেন : যখন কোন বান্দা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করে, তখন আল্লাহ তা’আলা সেই বান্দার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার একটি পাপ মোচন কয়ে দেন এবং একটি মর্যাদার আসন প্রদান করেন।–(ইবনে মাজা)

হাদীসঃ যে ব্যক্তি ফরয নামায ব্যতীত দিন-রাত্রিতে ১২ রাক’আত (নফল নামায) আদায় করবে, তার জন্য বেহেশতে একটি গৃহ নির্মিত হয়।–(মুসলিম)

হাদীসঃ ফজরের দু রাক’আত সুন্নাত নামায দুনিয়া ও তার ভেতরে যা কিছু আছে, তা হতে উত্তম।–(মুসলিম)

হাদীসঃ যে লোক যোহরের ফরজের পূর্বে চার রাক’আত নামায আদায় করবে, তার প্রতি জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়।–(আবূ দাউদ ও তিরমিযী)

হাদীসঃ যে লোক আছরের ফরজের পূর্বে চার রাক’আত সুন্নাত নামায আদায় করবে, তাহার জন্য বেহেশতে গৃহ নির্মাণ করা হয়।

প্রকাশ থাকে যে, নেক আমলসমূহের ভেতরে নফল নামাযই অত্যাধিক মর্যাদাশালী, অতএব নফল নামাযের মাধ্যমেই বেশি বেশি গুনাহ্ মাফ হয়ে থাকে। সুতরাং বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা উচিত।

.

ত্যাহিয়্যাতুল ওযূ নামাযের বিবরণ

অজু করার পর দুই রাক’আত নফল নামায আদায় করাকে তাহিয়্যাতুল ওযূর নামায বলা হয়।

হাদীস : কোন ব্যক্তি গুনাহের কাজ করবার পরে ওযূ করতঃ দু রাক’আত (নফল) নামায আদায় করতঃ তওবা করিলে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিযী)

.

তাহিয়্যাতুল অজু নামাযের নিয়্যত

وايت أن أصلى الله تعالى ركعتى صلوۃ تحية الوضوء سنة رسول الله

تعالی متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা রাকআতায় ছলা-তি তাহিয়্যাতুল উযুয়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’ রাক’আত তাহিয়্যাতুল ওযূ নামায আদায় করার নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।

.

এশরাক নামাযের বিবরণ

 এশরাক নামায সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেনঃ

হাদীসঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করতঃ সূর্য উদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার যিকিরে মশগুল থেকে সূর্যোদয়ের পরে দু’ রাক’আত নামায আদায় করিবে, সে ব্যক্তি একটি হজ্জ ও একটি উমরার ছাওয়াব লাভ করবে। (তিবরাণী)

হাদীসঃ যেই ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করতঃ জায়নামাযে বসে কথাবর্তা না বলে যিকরে ইলাহীতে মশগুল থাকবে এবং সূর্যোদয়ের পর দু’ রাক’আত ইশরাক নামায আদায় করবে। তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে; যদিও তার গুনাহ সমূদ্রের অসংখ্য বুদবুদের (ফেনার) তুল্য হয়ে থাকে।–(আহমদ)।

এ নামাযের ওয়াক্ত সূর্যোদয়ের পর হতে বৃক্ষের মাথায় সূর্য উঠা পর্যন্ত থাকে। সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা মিলিয়ে এ নামায আদায় করা যায়। এ নামায চার রাক’আত তবে দু’ রাক’আতও আদায় করা যায়।

.

এশরাক নামাযের নিয়্যত

نويت أن أصى وتعالى ركعتي صلوة الأشرق شة رسول الله

تعالی متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা রাকআতায় ছলা-তিল ইশরাকি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে দু রাক’আত ইশরাকের নামায আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লাহু আকবার।

.

চাশত নামাযের বিবরণ

চাশত নামায সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন : ..

হাদীসঃ মানুষের শরীরের মধ্যে যতগুলো জোড়া আছে, তার প্রত্যেকটির সদকা রয়েছে, সুবহান আল্লাহ বলা সদক্বাহ্; আলহামদু লিল্লাহ বলা সদক্বাহ্; আর আল্লাহু আকবার বলা সদ্ব্বাহ্। আর সৎকার্যের উপদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখার চেষ্টা করাও একটি সদক্বাহ্। আর যদি কোন লোক চাশতের দুই রাক’আত নামায আদায় করে, তবে তার . সমস্ত অঙ্গসমূহের সক্কাহ্ আদায় হয়ে যায়।-(মুসলিম)

হাদীসে কুদসীঃ আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেনঃ হে আদম সন্তান! যদি তোমরা দিনের প্রথম ভাগে চার রাক’আত নামায আদায় কর, তবে আমি সমস্ত দিনের জন্য তোমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকি।–(আহমদ)

এ নামায দু’, চার, আট বা ১২ রাক’আত পর্যন্ত আদায় করা যায়। এ নামাযের প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পর একবার আয়াতুল কুরসী এবং তিনবার সূরা ইখলাছ পড়া যায়। অথবা শুধু সূরা এখলাছ (কুলহু আল্লাহু) দ্বারাও আদায় করা যায় কিংবা যে কোন সূরা মিলিয়ে আদায় করা যায়। এ নামাযের ওয়াক্ত এক প্রহর হতে আরম্ভ হয়ে বেলা দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। এ নামাযকে দ্বোহা নামাযও বলা হয়।

.

চাশত্ নামাযের নিয়্যত

نويت أن أصلی الله تعالى ركعتي صلوة الشحي سه رسول الله

تعالی متوجها إلى جهة الكثبة الشريفة الله أكبر

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাকআতাই ছলা-তিদ দ্বোহা সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল, কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’ রাক’আত চাশতের নামায আদায়ের নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

যাওয়াল নামাযের বিবরণ

যাওয়ালের নামায আদায়কারী অসংখ্য সওয়াব লাভ করে থাকে। বর্ণিত আছে, এ নামায আদায়কারীর সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা শরীক হয়ে থাকে এবং তার জন্য রাত পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করে থাকে। নবী করীম (ছঃ) এ নামায আদায় করতেন। তিনি বলেন :

হাদীসঃ যাওয়ালের নামাযের সময় আসমানের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং আমার ইচ্ছা এই যে, এখনই আমার আমল আসমানে পৌঁছে যায়। এই নামাযের ওয়াক্ত সূর্য পশ্চিম দিকে গড়াবার সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হয়ে আছরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। এই নামায চার রাক’আত এবং এক নিয়্যতে আদায় করতে হয়। সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা মিলিয়ে এ নামায আদায় করা যায়।

.

যাওয়াল নামাযের নিয়্যত

نويت أن أملى الله تعالى اربع ركعات صلوة الوالي شه رسول الله

تعالی–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা–আরবাআ রাক’আতি ছলা-তি্য যাওয়ালি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যতঃ আমি ক্বেবলা মুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যাওয়ালের চার রাক’আত নামায আদায়ের নিয়্যত করিলাম–আল্লাহু আকবার।

.

আউয়াবীন নামাযের বিবরণ

আউয়াবিনের নামাযের ফযলীত সম্পর্কে হযরত রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ

হাদীস : যে ব্যক্তি মাগরিব নামাযের পর ৬ রাক’আত (নফল) নামায আদায় করে এবং নামাযের মধ্যে কথাবার্তা না বলে থাকে, সে ব্যক্তি ১২ বছর এবাদত করার সমান ছাওয়াব লাভ করবে। (ইবনে মাজা)

হাদীসঃ মাগরিব নামাযের পর ২০ রাক’আত নফল নামায আদায়কারীর জন্য বেহেশতে বালাখানা নির্মাণ করা হবে।–(তিরমিযী)

আউয়াবীন নামায আদায়ের নিয়ম হল, মাগরিব নামাযের ফরয ও সুন্নাত আদায়ের পর দুই দু’ রাক’আতের নিয়্যতে কমপক্ষে ৬ রাক’আত নামায এবং বেশির পক্ষে বিশ রাক’আত নামায আদায় করতে হয়। এ নামাযকে আউয়াবীন নামায বলা হয়। এ নামাযের প্রতি রাক’আতে সূরা ফাতিহার পরে একবার আয়াতুল কুরসী ও তিনবার সূরা এখলাছ পাঠ করতে হয়। আয়াতুল কুরসী মুখস্ত থাকলে সূরা এখলাছ ৩ বার করে পাঠ করিবে অথবা যে কোন সূরা মিলিয়ে আদায় করা যায়।

আউয়াবীন নামাযের নিয়্যত

تويت أن أصلى لله تعالى ركعتى صلوة الوبين شسته شول الله

تعالى–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাকআতাই ছলা-তিল আউয়াবীনি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতাশি শারিফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’ রাক’আত আউয়াবীন নামায আদায়ের নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

সলাতুত্ তাসবীহ এর বিবরণ

 রাসূলুল্লাহ (ছঃ) স্বীয় চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে ফরমায়েছেন : হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে এমন নামাযের কথা বলব না, যে নামায আদায় করলে সমস্ত গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। চাচাজান আপনি এ নামায এ নিয়মে চার রাক’আত আদায় করবেন। তার প্রথম রাক’আতে সানাসুবৃহানাকা পাঠ করার পর নিম্নের দোয়াটি ১৫ বার পাঠ করবেন। অতঃপর রুকূর পূর্বে ১০ বার, রুকূর তাসবীর পরে ১০ বার, রুকূ হতে দাঁড়িয়ে ১০ বার, প্রথম সিজদার তাসবীহর পরে ১০ বার, দু’ সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সেজদার তাসবীহ শেষ করে বসা অবস্থায় ১০ বার এভাবে এক রাক’আতে মোট ৭৫ বার হল। এরূপে চার রাক’আতে মোট ৩০০ বার তাসবীহ পাঠ করতে হবে। হে চাচাজান! সম্ভব হলে এ নামায প্রত্যহ একবার আদায় করবেন, এটা সম্ভব না হলে সপ্তাহে শুক্রবার দিনে একবার, এটা সম্ভব না হলে প্রতি মাসে একবার, এটা সম্ভব না হলে বছরে একবার, এটাও সম্ভব না হলে জীবনে একবার আদায় করবেন।–(বায়হাকী, ইবনে মাযা ও আবূ দাউদ)

দোয়াটি এই :

شبحان الله والحمد لله ولا اله إلا الله والله أكبر .

উচ্চারণ : সুবহানাল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

সালাতুত্ তাসবীহ্ এর নিয়্যত

الى اربع ركعات صلوۃ التسبیح شث رسول

نويت أن أتى اللوتعالى–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–আরবাআ রাক’আতি ছলা-তিত্ তাবীহি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যতঃ আমি ক্বেলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে চার রাক্আত তাসবীহের নামায আদায়ের নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

তওবার নামাযের বিবরণ

কোন মু’মিন ব্যক্তি যদি ঘটনাচক্রে কোন গুনাহের কাজ বা কথাবার্তা বলে থাকে কিংবা করে বসে যা কবীরা গুনাহের মধ্যে শামিল হয়ে যায়, তখন দেরী না করে ওযূ করতঃ দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করবে। অতঃপর তওবা করতঃ কান্নাকাটি করে আল্লাহর। দরবারে গুনাহ মাফীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করবে। আর অন্তরে এভাবে শপথ গ্রহণ করবে যে, জীবনে এরূপ কাজ করব না বা বলব না। এভাবে দোয়া করলে আল্লাহ গাফুরুর রাহীম বান্দার গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন, যেহেতু তিনি তওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী। এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বলেন :

হাদীস : কখনো কোন বান্দা যদি গুনাহের কার্য করে ফেলে, তবে সে সঙ্গে সঙ্গে ওযূ করতঃ দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করবে এবং তওবা করবে, হয়তঃ আল্লাহ তা’আলা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।–(তিরমিযী ও ইবনে হাব্বান)

তওবার নামাযের নিয়্যত

نوي أن أضى الله تعالى ركعتي صلوۃ التوبة شة رسول الله

تعالى–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছোয়ালিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা–রাকআতাই ছলা-তিততাওবাতি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেবলা মুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’ রাক’আত তওবার নামায আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

ছলাতুল হাযাতের বিবরণ

যদি কোন বান্দার জরুরী কোন হাত দেখা দেয়, তখন তা পূর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে খালেছ দিলে দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করবে। নামায শেষে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতঃ কয়েকবার দুরূদ শরীফ পড়ে এস্তেগফার করে আল্লাহ তা’আলার দরবারে দু হাত তুলে কান্নাকাটি সহকারে স্বীয় হাযত পূর্ণ হওয়ার জন্য দোয়া করবে।

দোয়াটি হল :

بحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا اله غيرك–

উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রকাসমুকা ওয়া তা’আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক।

ছলাতুল হাযতের নিয়্যত

تويت أن أصلى لله تعالى ركعتى صلوۃ الحجات شنه شول الله

تعالی–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাক’আতাই ছলা-তিল হাযা-তি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলা নিয়তঃ আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’ রাক’আত ছলাতিল হাযত আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

কুসূফ নামাযের বিবরণ

সূর্য গ্রহণকালে যে দু’ রাক’আত নামায আদায় করা হয়ে থাকে, তাকে ছলাতুল কুসূফ বলা হয়। এটা সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদাহ্। এ নামায একা একা আদায় করা যায় এবং জামায়াতের সাথেও আদায় করা যায়। তবে এতে আযান ও এক্বামতের প্রয়োজন নেই। এ নামায মসজিদে গিয়ে আদায় করবে আর মহিলারা নিজ নিজ গৃহে আদায় করবে। এ নামাযের ইমামতি করবে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা মহল্লার ইমাম সাহেব। এ নামাযে চুপে চুপে লম্বা কেরাআত পড়তে হয়, এটা সুন্নাত। এ নামায দু’ রাক’আত আদায় করতে হয়।

নামায শেষ হলে ইমাম সাহেব ক্বেবলামুখী অথবা মুক্তাদীদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে সকলে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কান্নাকাটি সহকারে যতক্ষণ সূর্য গ্রহন থাকবে ততক্ষণ দোয়া করতে থাকবে। সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেলে মুনাজাত শেষ করবে।

কুসূফ নামাযের নিয়্যত :

نويت أن أصلى الله تعالى وعتى صلوة الكسوفي سنة رسول الله

تعالی–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাক’আতাই ছলা-তিল কুসূফি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তাআ-লা–মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশি শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ ইমামের পেছনে দু’ রাক’আত কুসূফের নামায আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

খুসূফ নামাযের বিবরণ

 চন্দ্র গ্রহণকালে যে দু’ রাক’আত নামায আদায় করা হয়, তাকে খুসূফের নামায বলা হয়, এ নামায সুন্নাত। এ নামায একাকী গৃহে বসে আদায় করার নিয়ম। মহিলারাও এ নামায নিজ গৃহে আদায় করতে পারে। এ নামাযের প্রতি রাক’আতে সূরা কেরাআত চুপে চুপে পড়তে হয়। নামায শেষ করতঃ চন্দ্র গ্রহণ না ছাড়া পর্যন্ত হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হয়।

এভাবে কোন দুর্ঘটনা বা বালা মুসীবত দেখা দিলে এ নামায আদায় করা যায়, যেমন–যান বাহনে দুর্ঘটনা, বজ্রপাত, ঝড়-তুফান, অতি বৃষ্টি, শীলাবৃষ্টি, বরফ পড়া, কলেরা-বসন্ত ইত্যাদি। এ নামাযও সুন্নাত।

খুসূফ নামাযের নিয়্যত

نويت أن أصلى لله تعالى ركعتى صلوة الخسوف سه رسول

الله تعالى–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা রাক’আতাই ছলা-তিল খুসূফি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা-মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু। আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’ রাক’আত খুসূফের সুন্নাত নামায আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

শুকুর গুজারী নামাযের বিবরণ

মহান প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে যে, অসংখ্য নিয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, এ জন্য আল্লাহ পাকের শুকুর আদায় করা কর্তব্য। যেমন : আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে বেশুমার ধন-সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি, স্ত্রী-পুত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আরাম আয়েশের বস্তুসমূহ ইত্যাদি দিয়েছেন। যখন মানুষ কোন নেয়ামতের অধিকারী হয়ে থাকে কিংবা বিদেশ হতে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে থাকে কিংবা কোন মুসীবত হতে পরিত্রাণ লাভ করে থাকে, তখন তাদের মুনীবের শুকুর গুজারী করা একান্ত কর্তব্য। তাই আল্লাহর ক্বতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ওযূ করতঃ দু’ রাক’আত শুকুরানা নামায আদায় করা উচিৎ। এ নামায মাকরূহ ওয়াক্ত বাদে যে কোন সময় যে কোন দিনে আদায় করা যায় এবং সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়া যায়।

শুকুরানা নামাযের নিয়ত

تويت أن أصلى الله تعالى ركعتى صلوۃ الشگر متوجها إلى جهة

الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা–রাকা’আতাই ছলা-তিশ শুকরি, মুতাওাজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলায় নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য দু’ রাক’আত শুকুরানা নামায আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

সফরে যাত্রাকালে নফল নামাযের বিবরণ

সফরের নিয়্যতে বিদেশে রওনা করার পূর্বে দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করতঃ রওনা করা এবং বিদেশ প্রত্যাবর্তন করতঃ গৃহে প্রবেশের পূর্বে মসজিদে গমন করতঃ দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করে গৃহে প্রবেশ করা নবীর সুন্নাত। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ

হাদীস : যে বান্দা সফরে বের হওয়ার পূর্বে দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করতঃ গৃহে রেখে যায়, এর চেয়ে উত্তম পুঞ্জী অন্যটি নেই।

হাদীস : রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেন : তিনি প্রবাস হতে প্রত্যাবর্তন করে মসজিদে গমণ করে দু’ রাক’আত নামায আদায় করে গৃহে প্রবেশ করতেন। নামাযের নিয়্যত এই :।

نويت أن أضى الله تعالى ركعتى صلوۃ الفل متوجها إلى جهة

الكعبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাকআতাই ছলা-তিন নফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

.

এস্তেস্কা নামাযের বিবরণ

দেশ-দেশান্তরে অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষেত-খামার বিপদের সম্মুখীন হলে এলাকার সমস্ত লোক একযোগে মাঠে গমন করতঃ আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে বৃষ্টির আকাংখায় জামায়াতের সাথে দু’ রাক’আত নামায আদায় করাকে এস্তেস্কার নামায বলা হয়। এটা সুন্নাতে নববী। এ নামায আদায়ের নিয়ম হল, এলাকার সকল মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক লোকজন দলবদ্ধভাবে পদব্রজে মাঠে গমন করতঃ খালেছ দিলে তওবা করে দু’ রাক’আত নামায আদায়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আর কারো কোন দেনা-পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করে নেবে অথবা মাফ করায়ে নিতে হবে।

অতঃপর একজন বুজুর্গ আলেম ব্যক্তিকে ইমাম নির্বাচন করতঃ সকলে তার পেছনে দু’ রাক’আত ছলাতুল এস্তেস্কা আদায় করবে। এ নামাযে আযান ও এক্বামতের দরকার হয় না, তবে ইমাম সাহেব সূরা-কেরাআত শব্দ করে পাঠ করবেন। নামায শেষে ইমাম সাহেব মাটিতে দাঁড়িয়ে দু’টি খুৎবা পাঠ করবেন। অতঃপর ইমাম সাহেব ক্বেবলামুখী দাঁড়িয়ে এবং মুক্তাদীরা বসে হস্তসমূহ মস্তক পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহ তা’আলার দরবারে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের জন্য কান্নাকাটি করতঃ দোয়া করবে। বৃষ্টি বর্ষিত না হওয়া পর্যন্ত তিন দিন যাবৎ এ প্রকারে নামায আদায় করতে হবে। ইনশাআল্লাহ বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এ তিন দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব।

এস্তেস্কা নামাযের নিয়্যত

نويت أن أضى الله تعالى كى صلوۃ الاشتقاء سته شول

اللوتعالى–متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله أكبر.

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–রাক’আতাই ছলা-তিল ইস্তিস্কা-য়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আ-লা–মুতায়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাকাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

বাংলা নিয়্যত : আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য দু রাক’আত এস্তেস্কার নামায এই ইমামের পেছনে আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

এস্তেস্কা নামাযের দোয়া

اللهم اسقنا غيثا مغيثا مريعا نافعا غير ضارعاجلا غير اجل

مرعا النبات . اللهم اسق عباوك و بهائم وانزل رحمتك أحي

رای بادك الميت.

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আসকিনা–গাইছাম মুগীছাম্ মারীয়ান্ নাফিআন্ গাইরা দ্বোয়াররিন আজিলান গাইরা আজলিন রা-য়িছিম মুমাররি আন্ নাবাতি। আল্লা-হুম্মা আসকি ই’বা-দাকা ওয়া বাহা-য়িমাকা ওয়া আনযিল রহমাতাকা আহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত।

.

মৃত্যুর পূর্বে নফল নামাযের বিবরণ

কোন মু’মিন বান্দা যদি তার মৃত্যু আসন্ন বলে ধারণা করে থাকে, তবে সেই বান্দা জীবনের শেষ সময় খাছ নিয়্যতে জীবনের গুনাসমূহ মার্জনার নিয়াতে দু’ রাক’আত নামায আদায় করবে এবং নামায শেষে জীবনের সমস্ত গুনাহ মার্জনার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করবে।

বর্ণিত আছে, মক্কার কাফেররা হযরত খোবায়েব (রাঃ)-কে মহা খুশির সাথে শহীদ করেছিল। হযরত খোবায়েব (রাঃ) কাফেরদের আয়োজন দেখে তাঁর জীবনের শেষ অবস্থা স্মরণ করতঃ কাফেরদের নিকট নামাযের অনুমতি নিয়ে দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করে ছিলেন। তখন হতে এ নামায মুস্তাহাবরূপে গণ্য হয়ে এসেছে। এই নামায জীবনের শেষ প্রহরে সকল মু’মিন মুসলমানের আদায় করা উচিৎ। এ নামায যে কোন সময় আদায় করা যায় এবং যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়া যায়। এ নামায নফলের নিয়্যতে আদায় করতে হয়।

.

মান্নত নামাযের বিবরণ

যদি কোন বান্দা নামায মান্নত করে থাকে, তবে মান্নতের শর্ত পূরা হলে এ নামায আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। আর এ নামায আদায় না করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহে লিপ্ত হবে। অতএব মান্নত পূরা হলে এ নামায আদায় করতেই হবে। এ নামায যে কোন সময় যে কোন সূরা মিলিয়ে আদায় করা যায়। এর নিয়্যত এভাবে করতে হবে আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য দু’ বা চার রাক’আত মান্নতের নামায আদায় করার নিয়্যত করলাম–আল্লা-হু আকবার।

.

এস্তেখারা কি ও কেন?

এস্তেখারার পরিচিতি : এস্তেখারার শাব্দিক অর্থ মঙ্গল প্রার্থনা করা। সকল কাজের ভবিষ্যত সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহরই সম্যক জ্ঞান আছে। মানুষ নিজের ভবিষ্যত জানে না। তাই কোন কাজ শুরু করার পূর্বে তা তার জন্য ভাল হবে কি মন্দ হবে, তা আল্লাহর নিকট হতেই তাকে জেনে নিতে হবে। এ উদ্দেশে হাদীসে নফলের নিয়্যতে দু’রাক’আত নামায পড়ে এস্তেখারার দোয়া পড়ার বিধান উল্লেখ রয়েছে।

এস্তেখারার একটি বিশেষ নিয়ম

এশার নামায বাদ নতুন ওযূ করে আন্তরিকতার সাথে একশ’ একবার পাঠ করবে

استغفر الله الذي لا إله إلا هو الحى القيوم وأتوب إليه

উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হা ল্লাযী লা–ইলা-হা ইল্লা–হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহ।

বাতেনী ও যাহেরী সকল প্রকার গুনাহ হতে তওবা করবে। একথা ভাববে, আমি আজ যেন নতুন করে আবার মুসলমান হলাম। পরে এ উদ্দেশ্যে দু’রাক’আত এস্তেখারার নফল নামায পড়বে। খুশু খুজু বিনয় ও ধ্যানের সাথে প্রথম রাক’আতে আলহাম-দু সূরা পড়ে আয়াতুল কুরসী, দ্বিতীয় রাক’আতে আলহাম-দু সূরার পর সূরা কাফিরূন তিলাওয়াত করবে। সালাম ফিরানোর পর একশ’ একবার কালেমা তামজীদ পড়ার পর হাত উঠিয়ে খুব কান্নাকাটি করে আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করবে। ঘুম আসলে ঐ স্থানেই ঘুমিয়ে পড়বে। অসুবিধা থাকলে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই শুয়ে যাবে। স্বপ্নে যা দৃষ্টিগোচর হবে তা দ্বীনদার যোগ্য আলেম ব্যতীত আর কারো কাছে বর্ণনা করবে না। এস্তেখারার সময় মনের ভাবের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। মনে যদি আরাধ্য বিষয়ে পূর্বের ন্যায় দৃঢ়তা থাকে তবে ভাববে, এটাই পরম সুসংবাদ। –(যিয়াউল কুলূব)

.

ভবিষ্যত সম্পর্কে জানার আমল

সকল ধরনের ভাবনা হতে অন্তরকে মুক্ত করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবে, হে আল্লাহ্! হে আলীম, হে খাবীর, হে মুবীন, সম্ভাব্য ঘটনা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। এর পর সকল ধরনের খেয়াল হতে যদি নিজের অন্তর মুক্ত দেখতে পায় এবং পিপাসার্ত ব্যক্তির যেমন পানির তীব্র আগ্রহ থাকে, এ ঘটনা জানার জন্য যদি সে ধরনের তীব্র আগ্রহ অনুভব করে, তবে সে ক্ষণে ক্ষণে স্বীয় রূহকে 21, (মালায়ি আ’লা) ঊর্ধ্বজগত, অবস্থাভেদে এic L (মালায়ি আসফাল)-অধঃজগতের দিকে পূর্ণ সাহস ও নিবিষ্টতার সাথে ধ্যানস্থ রাখতে প্রয়াস পাবে। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় এতে গায়বী আওয়াজের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে বা স্বপ্নে কাম্য বিষয় সম্পর্কে সে অবহিত হতে সক্ষম হবে।–(যিয়াউল কুলূব)

.

ভবিষ্যত সম্পর্কে জানার আরেকটি আমল

ডান দিকে 21 L (ইয়া আহাদু), বাম দিকে ১০০ $ (ইয়া ছমাদু), কাঁধের দিকে মাথা ফিরিয়ে। (ইয়া হাইয়ু) এবং দিলে। (ইয়া কাইয়ুম)-এর ঝাঁকুনি লাগাবে। বালা-মসিবত দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ও উল্লিখিত তরীকায় এ যিকির করা পরীক্ষিত একটি আমল।–(যিয়াউল কুলূব)

.

এস্তেখারা নামাযের বিবরণ

কোন মু’মিন বান্দা যখন কোন নূতন কার্যাদি আরম্ভ করার নিয়্যত করবে, তখন আল্লাহ। তা’আলার রহমত ও বরকত লাভের জন্য দোয়া ও মুনাজাত করে নিতে হয়। অতঃপর নূতন। কাজ আরম্ভ করতে হয়। এ প্রকার দোয়াকে শরীয়াতের পরিভাষায় এস্তেখারা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এস্তেখারা করার জন্য বিশেষভাবে বলেছেন।

হাদীস : বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ছঃ) ফরমায়েছেন।

আল্লাহ তা’আলার নিকট কল্যাণ ও বরকত লাভের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা কামনা না করা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ।

মাসয়ালা : ফরজ, ওয়াজিব ও নাযায়েয কাৰ্যাদীর জন্য এস্তেখারা করা জায়েয নেই। বিবাহ, শাদী, সফরে গমন, ক্রয়-বিক্রয়, বাড়ী-ঘর নির্মাণ ইত্যাদির ব্যাপারে এস্তেখারা করা জায়েয আছে। এ সকল বিষয় এস্তেখারা করে নিলে আল্লাহর রহমতে মঙ্গলজনক হবে, অকল্যাণের কোন কারণ হবে না।

.

এস্তেখারা করার নিয়ম

রাতে নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে ওযূ করতঃ পাক-পবিত্র পোশাক পরিধান করে খালেছ দিলে দু’ রাক’আত নফল নামায আদায় করবে। অতঃপর নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে উত্তর দিকে মাথা রেখে ক্বেবলামুখী কাত হয়ে নিদ্রা যাবে। আল্লাহ তা’আলার অসীম রহমতে কার্যের ফলাফল স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারবে। এক রাতে কাংখিত বিষয় ফলাফল জানতে না পারলে তিন রাত পর্যন্ত এস্তেখারা করতে হবে।

দোয়াটির মধ্যে হাজাল আমরা কালামটি উচ্চারণকালে যে কার্জের জন্য এস্তেখারা করতেছে সেই বিষয় খেয়াল করতে হবে। দোয়াটি পাঠ করার পরে উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করে নিদ্রা যাবে।

দোয়াটি এই :

اللهم إتي أستخيرك بعلوك واشترك بقدرتك واشتك وث

فضلك العظيم. فإنك تقدر ولا أقدر وتعلم ولا أعلم أثت علام الغيوب.. اللهم إن كنت تعلم أن هذا الأمر خيولى في ديني ومعاشي

عاقب امیری–فقره لى ويژه إلى ثم بارك لي فيه . و إن كنت تعلم أن هذا الأمر شري في ديني ومعاشي وعاقبة أمري–فاصرفه عيني واصرفني عنه واقوژلى الخير حيث كان ثم ارضعنی به

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বিই’লমিকা ওয়াস্তাক্বদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়াসয়ালুকা মিন্ ফাদ্বলিকাল আযীম। ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়া লা–আক্বদিরু ওয়া তা’লামু ওয়া লা–আ’লামু ওয়া আনতা আল্লামুল গুইয়ুব। আল্লা-হুম্মা ইন্ কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আম্রা খাইরুল্লী ফী দ্বীনি ওয়া মাআ’শী ওয়া আক্বিবাতু আমরী; ফাক্বাদ্দিরহু লী ওয়া ইয়াচ্ছিরহু লী, ছুম্মা বারিক লী ফীহি। ওয়া ইন্ কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুললী ফী দ্বীনি ওয়া মাআ-শী ওয়া আক্বিবাতু আমরী; ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরিফনী আনহু, ওয়াক্বদির লিল খাইরা হাইছু কা-না ছুম্মার দ্বিনী বিহী।

.

উমরী ক্বাযা নামায আদায়ের বিবরণ

কাহারো অনেক দিনের নামায ক্বাযা হয়েছে, যার ওয়াক্তের সংখ্যা অজানা, এটাকে উমরী ক্বাযা বলে। কোন ফরয নামাযই অনাদায়ী থাকা অনুচিত। এর জন্য আল্লাহর দরবারে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ হবে। হাদীসে আছে, আল্লাহর দরবারে সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সুতরাং উমরী ক্বাযা আদায় করা অত্যাবশ্যক। এরূপ নামাযের কোন সময় নির্ধারিত নেই। যে তিন সময়ে নামায নাজায়েয, তা বাদে যেকোন সময় পড়া যায়। এমনকি কয়েক ওয়াক্তের ক্বাযাও এক সাথে পড়া যায়। উমরী ক্বাযা পড়তে এরূপ নিয়্যত করবে–আমার জীবনের প্রথম ফজর বা যোহরের ক্বাযা আদায় করতেছি। এভাবে যে ওয়াক্তের ক্বাযা পড়বে, সে ওয়াক্তের নাম বলবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তা’আলা ওয়াক্তমত নামায না পড়ার অপরাধ। মাফ করে দেবেন।

.

উ’মরী ক্বাযা নামাযের নিয়্যত

تويت أث الى الله تعالى أربع ركعات تكفيرا للقضاء فاتت می

على عمرى مملوة اللفل–متوجها إلى جهة الكثبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন্ উছ-ল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা–আরবা’আ রাক’আতি তাকফীরাল লিল্ ক্বাযা-য়ি ফা-তাত মিন্নী আলা–উমরী ছলা-তিন্ নাফলি; মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

নামাযের পরে যে কোন একটি দুরূদ শরীফ পাঠ করে নিম্নোক্ত দোয়াটি একবার পাঠ করবে। দোয়াটি হল :

موت

ويامحی المان

سم یاسابق الف

نامی 

. صل على محمد وعلى أله واجعلي خرجا ومخرجا ما أنانييه–ائك تعلم ولا أعلم واثت تقي ولا أثير وا علام اليوب–يام العطايا

اغاني الخطايا–سبوح قدوس ربنا ورب المملكة والروح–رب اغفر : واژكم وتجاوژعما تعلم فإنك أنت الله الأعظم–ياساتر العيوب یا و الجلال والإكرام–يا ارحم الرحمين . وصلى الله على محمد واله أجمعين

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইয়া–সা-বিকাল ফাউতি, ওয়া ইয়া–সামি’আচ্ছাওতি, ওয়া ইয়া মুহয়িল ই’যোয়ামি বা’দাল মাওতি, ছল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লিহী, ওয়াজ’আল্লী খারজাওঁ ওয়া মাখরাজাম্ মিম্মা–আনা ফীহি, ইন্নাকা তালামু ওয়া লা–আ’লামু ওয়া আন্তা তাক্বদিরু ওয়া লা–আক্বদিরু ওয়া আল্লামুল গুইয়ুব। ইয়া–রাহিমাল আত্বায়া ওয়া ইয়া গা-ফিরাল্ খাত্বোয়াইয়া–; সুব্বুহুন কুদ্সুসুন্ রব্বনা–ওয়া রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ্। রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া তাযা-ওয়াহ্ আম্মা–তালামু ফাইন্নাকা আন্তাল আলিয়ুল আ’যামু। ইয়া–সাতিরাল উ’য়ুবি ইয়া–যালজালালি ওয়াল্ ইক্রা-ম। ইয়া–আরহামার রাহিমীন। ওয়া ছল্লাল্লাহু আ’লা–মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ-লিহী আজমাঈন।

অর্থ :হে আল্লাহ! হে মৃত্যুহীন! হে আওয়াজ শ্রবনকারী! হে মৃত্যুর পরে হাড্ডি সমূহে জীবন দানকারী! হযরত মুহাম্মদ (ছঃ)-এর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁহার বংশাবলীর প্রতিও নাযিল করুন। আমি যে অবস্থায় আছি, তা হতে আমার জন্য নাজাত ও নাজাতের পথ সৃষ্টি করে দিন। নিশ্চয়ই আপনি জানেন এবং আমি জানি না, আপনি ক্ষমতাবান আর আমি অক্ষম। আপনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানী, হে দানসমূহের দয়ালু দাতা, হে ভুল মার্জনাকারী, অতি পবিত্র ও পবিত্রতম আমাদের প্রভু এবং ফেরেশতাদের ও জিব্রাঈলের রূহের প্রতি পালক। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা ও দয়া করুন। আমার পাপ ও দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে আপনি যা জানেন তা হতে আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি যা জানেন, তা হতে আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি অতি মর্যাদাশীল ও সুমহান। হে দোষ-ত্রুটি গোপনকারী! হে মহত্ব ও ইজ্জতের মালিক! হে দয়াকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) ও তাঁর বংশধরদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *