সাদা মানুষ
হুমায়ূন আহমেদ আজও হাসপাতাল থেকে ফিরে এলেন নিউইয়র্কের ওজোনপার্কে। আজ আর তাঁর হাতে চকলেট বা খেলনার জিনিস নেই। প্রতিবারই কেমোথেরাপি নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসার পথে দুই শিশু সন্তানের জন্য হাসপাতালের গিফট শপ থেকে কোনো না কোনো চকলেট বা খেলনা তিনি নিয়ে আসতেন। বাসায় পৌঁছার আগেই খোঁজ নিতেন ওরা কি বাসায় আছে। নাকি অন্য কোথাও রাখা হয়েছে। বাসায় এসেই প্রথমে দেখতে চাইতেন নিষাদ ও নিনিতকে। জড়িয়ে ধরতেন দুই শিশু সন্তানকে। আজ আর গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করা হলো না, নিষাদ, নিনিত কি বাসায় আছে? কেনা হলো না ওদের জন্য কোন চকলেট বা খেলনা? দুটো শিশু যেমন করে বাবার উপস্থিতিতে এবং অনুপস্থিতিতে নিউইয়র্কে ৯ মাস সময় অতিক্রম করছে, সেভাবে আজও কাটাচ্ছে। অনেক ক্যামেরা, অনেক মানুষ বাড়ির সামনে, অনেকে ছবি তুলছে, ওরা কি জানে? ওদের জন্মদাতা, ওদের ছেড়ে চলে গেছেন, অজানা গন্তব্যে, উড়াল পঙ্খীর মতো।
‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে, যা যা তুই উড়াল দিয়া যা’র স্রষ্টা নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝ থেকে উড়াল দিয়ে চলে গেলেন। গত ১৯ জুলাই নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে। বেলভ্যু হাসপাতালের দশম তলার পশ্চিমদিকের ৪৩তম কক্ষটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সেসময় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ভাই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ভাতৃবধূ ইয়াসমিন, শাশুড়ি তহুরা আলী, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। আমি যখন ১টা ৪৭ মিনিটে বেলভ্যু হাসপাতালের দশম তলায় পৌঁছালাম সব শেষ। ৪৩ নম্বর কক্ষটির সামনে যাওয়ার একটু আগেই নার্স আটকালো। বলল এখন নয় আরো কিছুক্ষণ পরে আসো। প্রায় ৩০ মিনিট পর মেহের আফরোজ শাওনকে নিয়ে তাঁর মা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী, মাজহারুল ইসলাম এবং আমি সাদা ধবধবে বিছানায় শায়িত হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে গেলাম। চিরদ্রিায় শায়িত হুমায়ূন আহমেদের কোনো কষ্ট নেই, ব্যথা নেই, শরীরের কোনো অংশের সাথে অগণিত যন্ত্রপাতির সংযোগ নেই। অন্য এক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা ভাষার ইতিহাসের সবচেয়ে পঠিত লেখক নয়, মিসির আলী নয়, হিমু নয় যেন লেখকেরই নতুন আর এক সৃষ্টি ‘সাদা মানুষ। দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের ২৯ দিন পর এদিন সকাল থেকে নিম্ন রক্তচাপ-এর ফলে তাঁকে চিকিৎসকরা বাঁচিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন। প্রায় তিন সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অনেকটা নীরবে নিভৃতে কিছু না বলেই চলে গেলেন বাংলা ভাষার কিংবদন্তি এই লেখক। ১২টি কেমোথেরাপি বা প্রথম অস্ত্রোপচারের পরও হুমায়ূন আহমেদকে কখনো বিমর্ষ দেখায়নি। সবসময় তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত। হাসপাতালের বিছানায়ও হাসতে হাসতে অবলীলায় বলতেন মৃত্যু নিয়ে রসাত্মবোধক গল্প। সেই মানুষটি কিছুই বলে যেতে পারেননি, কিছু লিখে যেতে পারেননি। জুনের শেষ সপ্তাহে মুখে বলতে পারেননি, তবে লিখে জানতে চেয়েছিলেন কবে তার শরীর থেকে এসব যন্ত্রপাতি খোলা হবে। কবে তিনি আরোগ্য লাভ করে বাসায় যাবেন? কখনোই তিনি ভাবতে পারেননি তিনি এভাবে চলে যাবেন। আমার এখনো জ্বল জ্বল করছে প্রথম অস্ত্রোপচারের আগে সার্জেন্ট মিলারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন নিজেই কত শতাংশ নিশ্চয়তা রয়েছে ভালো হওয়ার। তিনি বলেছিলেন, আমি অস্ত্রোপচার করলে শতভাগ। উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিল হুমায়ূন ভাই’র দুচোখ। অনেকটা আনন্দে হাসতে হাসতে মা মাতৃভূমি আর অতি ভালোবাসার নুহাশ পল্লী দেখতে গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদ দেশ থেকে ফিরে এলেন। কী যে আনন্দ তাঁর চোখে মুখে ছিলো তা বলার মতো নয়। বললেন, অনেক ভালো লেগেছে দেশে গিয়ে। মা’কে নিয়ে হুমায়ূন ভাই’র ভালোবাসার শেষ নেই। মা ছেলের চিকিৎসার জন্য দিয়েছেন সারা জীবনের সঞ্চয়। আর ছেলে ডাক্তার থেকে ছুটি নিয়ে ৩ সপ্তাহের জন্য গেলেন মাকে দেখতে। মার প্রতি লেখকের কত ভালোবাসা তা আজ মুহম্মদ জাফর ইকবালের কথাতেই স্পষ্ট। হুমায়ূন ভাই’র অকাল মৃত্যুর পর পরই বেলভ্যু হাসপাতালে বললেন আমাদের পরিবারকে এবার আর একটি মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকতে হবে। দাদাভাই’র মৃত্যু মা মেনে নিতে পারবেন না। দেশ থেকে আসার পর হুমায়ূন ভাই’র ভালো লাগার গল্প প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় হতো। বিশেষ করে ভালো ভালো দেশের খাবারের গল্প। আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির বইমেলায়, এরপর আবার নিউইয়র্কের বইমেলার জন্য কাজ করতে মার্চে। প্রতিবারই দুসপ্তাহের জন্য ছিলাম। একবারও আমি হুমায়ূন ভাইকে জানাইনি আগে ঢাকায় যাচ্ছি। যেদিন ফ্লাইট ছিলো সেদিনই তিন ঘণ্টা আগে গিয়ে বলেছি, আমি ঢাকায় যাচ্ছি। দুসপ্তাহের জন্য। মাঝখানে ১টি থেরাপির সময় আমি শুধু ছিলাম না। আর একটি থেরাপির আগের দিন নিউইয়র্কে পৌঁছে গেছি। বলে গেছি হুমায়ূন ভাই আমি নেই, রুমা (আমার স্ত্রী রুমা সাহা) আছে। আপনি চিন্তা করবেন না। একটি বিষয়ে গত ৯ মাসে তিনি নিশ্চিত ছিলেন, ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট থাকলে সে আমাদের গাড়ি দিয়ে হোক আর সাবওয়ে হোক বা অন্য কারো গাড়িতে যাওয়া হলেও চিকিৎসক দেখার আগে সেখানে বিশ্বজিত হাজির থাকবে। তাঁর এ বিশ্বাসের কখনো অমার্যাদা হয়নি। এনিয়ে অনেক সময় অনেক কথাও হয়েছে। দেখা গেছে। হুমায়ূন ভাইকে বাসায় ঘুম থেকে উঠিয়েও হাসপাতালে নিতে হয়েছে। অনেক স্মৃতি, অনেক কথা। ১৯৮৭ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘আনন্দপত্র’ ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত উপন্যাস ‘প্রিয়তমেসু’ নিতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাথে ঘনিষ্ঠতা। ২০১২ সালের ১৯ জুন অপরাহ্নে ২৫ বছরের একটি সম্পর্কের ছেদ, একটি বন্ধনের সমাপণ। আমার এখনো মনে আছে হুমায়ূন ভাইর যখন দ্বিতীয় কেমোথেরাপি চলছে স্লোয়েন-ক্যাটারিং হাসপাতালে, সেদিন সকালে হুমায়ূন ভাই আমাকে বললেন, বিশ্বজিত ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে এবার হার্টেরও চেকআপ করিয়ে যাবো। গতবার ২০০১ সালে তুমি বেলভ্যু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে কিন্তু আমি চিকিৎসা না করে চলে গেছি। এবার চিকিৎসা করিয়ে যাবো। তিন ঘণ্টার মতো লাগতো সময়, এরপর পোর্টেবলথেরাপি সঙ্গে দিয়ে হুমায়ূন ভাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। সেদিনই কেমো নেওয়ার ফাঁকে আমি বেল হাসপাতালে খোঁজ নিতে যাই। এসে বললাম, কাগজপত্র নিয়ে এসেছি, বাকিগুলো জমা দিয়ে আপনার হাসপাতাল কার্ড করবো। তারপর এক এক করে সব চিকিৎসা শেষ করে ভালো হয়ে দেশে যাবেন।
কোনোকিছু অপছন্দ হলে হুমায়ূন আহমেদ সরাসরি বলে দেন। এর প্রয়োজন নেই বা অন্যকিছু। কোনো এক প্রসঙ্গে এরপরই কেমোথেরাপির খরচ জানার জন্য একদিন বেলভ্যু হাসপাতালে যাই। পুরো একাউন্ট সেকশন ঘুরেও আমি জানতে পারিনি সিটি হাসপাতালে এর খরচ কত। দুজন বাঙালি কাজ করেন, এ ডিপার্টমেন্টে। তারা চেষ্টা করেও আমাকে জানাতে পারেনি। আমার শাশুড়িমার রেফারেন্সে পরিচয় হলো বেলভু হাসপাতালে কর্মরত রনি বড়য়ার সঙ্গে। এরই মধ্যে হুমায়ূন ভাইরা বেড়াতে যাবেন লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পূরবী বসুর ডেনভারের বাড়িতে। মহা আয়োজন। যাওয়ার দিন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়ে গেলেন, এসে পেলেন হাসপাতালের কার্ড। আমেরিকায় যারা থাকেন, তাদের সকলেই জানেন, কারো অনুপস্থিতিতে কি কখনো তাঁর হাসপাতালের কার্ড হয়। হুমায়ূন আহমেদের বেলায় সেটাই হয়েছিলো। তারপর হুমায়ূন আহমেদ ডেনভার থেকে ফিরে আসলেন। এসেই পেলেন বেলভুর এপয়েন্টমেন্ট। আগে থেকেই আমি এপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছি। এবং অনকোলজিস্ট ডা. জেইনের অধীনে চিকিৎসা শুরু। কাড়ি কাড়ি নগদ টাকা দিয়ে স্লোয়েন-ক্যাটারিং হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়নি। এভাবেই স্লোয়েন-ক্যাটারিং হাসপাতাল থেকে লেখক হুমায়ূন আহমেদ বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। এর পর হাত পাততে হয়নি কারো কাছে টাকার জন্য। বিক্রি করতে হয়নি নিজের গড়া কোনো সম্পত্তি। ঋণ নিয়ে হুমায়ূন ভাই সবসময় চিন্তিত থাকতেন। পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন চ্যানেল আই-এর ঋণ তিনি দেশে গিয়ে শোধ করে দেবেন। স্লোয়েন-ক্যাটারিং হাসপাতালের পাঁচটি থেরাপির খরচ বহন করার পর চিকিৎসার জন্য আর কোনো খরচ বহন করতে হয়নি হুমায়ূন ভাইকে। মুক্তধারা থেকে বেলভ্যু হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলোর অনেক কথা লেখার ইচ্ছে রয়েছে। এবছর নিউইয়র্কের বইমেলা নিয়েও ছিলো হুমায়ূন ভাইর অনেক স্বপ্ন। একদিন নিজে থেকেই বললেন বিশ্বজিত এবারের বইমেলায় একটি অনুষ্ঠান। হবে ‘শতবর্ষের বাংলা গান’। টপ্পা থেকে শুরু করে হাল আমলের গান পর্যন্ত। প্রতিটি গানের শুরুতে গানটির ইতিহাস হুমায়ূন ভাই বলবেন। তখন আলো পড়বে হুমায়ূন ভাই’র ওপর। এরপর গান করবেন মেহের আফরোজ শাওন, তখন আলো থাকবে তার ওপর। গান শেষে আলো পড়বে যন্ত্রীদের ওপর। হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের অনুষ্ঠানটি হলো না, হলো না তাকে সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠানটি। হয়েছিলো তাঁর আঁকা প্রথম চিত্র প্রদর্শনী। ২০টি ছবি স্থান পায় এই প্রদর্শনীতে। এটিই হলো হুমায়ূন ভাইর জীবদ্দশায় শেষ প্রদর্শনী। সেসময় তিনি ছিলেন বেলভ্যু হাসপাতালের সিসিউতে। আসতে পারলেন না। হুমায়ূন আহমেদ বইমেলায়। গত ১৩ নভেম্বর ২০১২ জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারায় অনুষ্ঠিত হয় হুমায়ূন। ভাইর জন্মদিন। স্কাইপিতে নিজের টুপি খুলে সবাইকে অবাক করে দেন, তেমনি গ্রহণ করেন জন্মদিনের সিক্ত ভালোবাসা। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনকে ঘিরে নিউইয়র্কের মুক্তধারা যেভাবে সাজানো হয়েছে তা ছিলো দেখার মতো। ৭ দিনব্যাপী চলে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রদর্শনী। যদুর মনে পড়ে ২০০২ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হুমায়ূন মেলা’ হুমায়ূন আহমেদের উপর সেরা অনুষ্ঠান। সেময়ে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রায়ই আমাকে ঐ অনুষ্ঠানের জন্য অভিনন্দন জানাতেন। দুসপ্তাহের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের শতাধিক বইয়ের প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, হুমায়ূন আহমেদের গানের অনুষ্ঠান, হুমায়ূন আহমেদের নাটক, হুমায়ূন আহমেদের গল্পবলা নিয়ে অনুষ্ঠিত ঐ হুমায়ূন মেলা’ নিউইয়র্কবাসী তথা বাংলাভাষাভাষী মানুষের কাছে অমলিন হয়ে থাকবে। হুমায়ূন আহমেদ শারীরিকভাবে আমাদের কাছ থেকে চলে গেছেন, হুমায়ূন আহমেদের অনেক স্মৃতি আজ উঁকি মারছে। বলেছেন চিকিৎসা শেষ করে কলকাতায় যাবেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবারই প্রথম দীর্ঘদিন পর সামারে আমেরিকায় আসেননি, পায়ের ব্যথার কারণে।
হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে কলকাতায় যাবেন, কলেজ স্ট্রীটের আদর্শ হিন্দু হোটেলের গল্প শুনে বলেছেন, সেই হোটেলে খেতে যাবেন। সেই আদর্শ হিন্দু হোটেলে আমিও কি আর কখনো খেতে যেতে পারবো, আপনাকে ফেলে।
আর আপনার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে মানুষটি বলেছিলেন শরৎচন্দ্র থেকে আপনি জনপ্রিয়। সেই মানুষটিও চলে গেলেন সেই দেশে। হয়তো আপনাদের মধ্যে দেখাও হয়েছে ইতঃমধ্যে। আমরা জানতে পারছি না, দেখতে পারছি না।
.
পাদটীকা
১৯ জুলাই ২০১২ দুপুর ১টা ২৩ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সকাল ১০টায় কথা হলো বেলভ্যু হাসপাতালে কর্মরত রনি বড়ুয়ার সাথে। বললেন, আগের মত আছেন। নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১২টা থেকে দেশের কয়েকটি সংবাদপত্র অফিস থেকে ফোন এলো। আমেরিকার বিভিন্ন শহরের ফোন। সর্বশেষ বাঙালি সম্পাদক কৌশিক আহমেদের ফোন। বললেন, বিশ্বজিত আপনি কি হাসপাতালে? আমি বললাম না, কেন কী হয়েছে। বললেন, হুমায়ূন আহমেদ নেই। তখনি আমি বেলভ্যুতে ছুটলাম। দুপুর পৌনে দুটোনাগাদ বেলভ্যুতে পৌঁছালাম। গেটে পাশ নিতে গিয়েই জানতে পারলাম, বাঙালি দ্রলোক বললেন হুমায়ূন ভাই নেই। এসময় রনি বড়ুয়ার ফোন এলো। বললেন, আপনার আশংকাই ঠিক হলো। উপরে উঠলাম। সিসিউতে ঢুকতেই পুরুষদের ওয়েটিং রুমে ড. জাফর ইকবাল এবং মাজহারুল ইসলাম এবং যে ছেলেটি রাতে স্যারের রুমে থাকতো তার সাথে দেখা হলো। সকলের চোখেই অশ্রু। তার পরপরই মেহের আফরোজ শাওন, তার মা তহুরা আলী, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইয়াসমিন ইকবাল, মাজহারুল ইসলাম এবং আমি এক এক করে কক্ষে থাকা হুমায়ূন আহমেদের কক্ষে তাঁকে দেখতে যাই। ধবধবে সাদা কাপড়ে বাংলা ভাষার নন্দিত লেখক ‘সাদা মানুষ হয়ে শুয়ে আছেন। কয়েক সেকেন্ডের বেশি সেখানে আমি দাঁড়াতে পারলাম না।