নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদের ৬৩তম জন্মদিন
১৩ নভেম্বর ২০১২। নিউইয়র্কবাসী বাঙালিদের জন্য বিশেষ একটি দিন। দিনটি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। আনন্দের বিষয়, হুমায়ূন আহমেদ এ সময় আছেন নিউইয়র্কে জ্যামাইকায়। দীর্ঘদিন পর জন্মদিনে দেশের বাইরে এবার হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর পরিবারের জন্যও দিনটি খুব আনন্দের। ১২ নভেম্বর থেকেই জন্মদিনের আয়োজন শুরু। সকালেই হুমায়ূন আহমেদের। বাড়ির নিচের একটি রুম পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা হয়। যাতে কোনো ভক্ত লেখকের সাথে দেখা করতে এলে এখানে বসতে পারেন। লেখকের উদ্দেশ্যে কিছু লিখতে চাইলে এখানে বসে লিখতেও পারেন। চিকিৎসকের নিষেধ কোনোভাবে ভাইরাস সংক্রমণ হতে দেওয়া যাবে না। সেভাবেই প্রস্তুতি। পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল নেওয়া হবে, শুভেচ্ছা বিনিময় হবে।
সকাল থেকেই বেশ কয়েকজন ভক্ত এলেন। এ দিনই দুয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়, যারা পরবর্তীতে হুমায়ূন পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ হন। ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন লেখক এদিন। নতুন পাঞ্জাবি আর অন্যপ্রকাশ-এর বিশেষ উপহারে হুমায়ূন আহমেদ বেশ আনন্দিত। নিষাদ, নিনিতও বেশ হাস্যোজ্জ্বল। বাংলাদেশ থেকে কয়েকদিন আগে এসেছেন অন্যপ্রকাশ-এর অন্যতম পরিচালক মাসুম রহমান। এদিকে মুক্তধারায় হুমায়ূন স্যারের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে আমরাও খুব ব্যস্ত। ১১ তারিখে স্যারের কাছে পুরো অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট বর্ণনা করলাম। মুক্তধারার বড় স্ক্রিনে ভেসে উঠছে ‘হে লেখক, আপনার শুভ জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি’। ৬৪টি বেলুন, ৬৪ স্মারক মোমবাতি, এ উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থ রঙ পেন্সিল’- এর মোড়ক উন্মোচন, কেক কাটা, স্মৃতিচারণ, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং হুমায়ূন আহমেদের গান পরিবেশন। এর সবই নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের চিত্রনাট্য। স্কাইপিতে ভক্তদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে, কেক কাটবে স্যারের ছেলে নিষাদ। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন ড. গোলাম মুরশিদ। সবশেষে জন্মদিনের মিষ্টি বিতরণ। এ উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারায় তিনদিনব্যাপী লেখকের একক বইমেলা।
হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন ছবি, চলচ্চিত্রের পোস্টার এবং বিভিন্ন বইয়ের কভার দিয়ে সাজানো হয় মুক্তধারার দোতলা অফিসে ওঠার সিঁড়ি। সারাদিন লাউড স্পিকারে বাজছে স্যারের লেখা বিভিন্ন গান। ১২ তারিখ থেকেই শুরু হয়ে গেছে জন্মদিনের উৎসব জ্যাকসন হাইটসে। সময়ের তারতম্যে বাংলাদেশে ১৩, নিউইয়র্কে ১২। তার মাঝামাঝি রাত ১২ ০১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদ কেক কাটবেন। হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে লেখকের কেক কাটার অনুষ্ঠান খুবই ঘরোয়া। আমরা পৌঁছুলাম রাত ১১টায়। আমার স্ত্রী রুমা পায়েশ বানিয়ে নিয়ে গেলো। পায়েশের আর এক নাম পরমান্ন। পরমান্নে নাকি পরমায়ু বৃদ্ধি পায়। আমরা পৌঁছে দেখি স্যার, তার স্ত্রী আর শিশু সন্তানদের সাথে ঢাকায় স্যারের মায়ের স্কাইপির মাধ্যমে কথা চলছে। আমরা স্যারকে সালাম জানালাম। স্যার আমাদের বসতে বললেন। চ্যানেল আই-এর দুজন সাংবাদিক এসেছেন কেক নিয়ে। তারা জন্মদিনের অনুষ্ঠান ধারণ করবেন। লেখক কেক কাটলেন। প্রিয়জনরা লেখককে কেক খাওয়ালেন। রুমা তার বানানো মিষ্টান্ন দিলেন। স্যার মিষ্টান্নের প্রশংসা করলেন। বিভিন্ন ছবি তোলা হলো। সেখানে তখন হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে তাঁর স্ত্রী শাওন, দুই সন্তান নিষাদ-নিনিত, শাওনের বোন। সেঁজুতী, অন্যপ্রকাশ-এর পরিচালক মাসুম রহমান, স্যারের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের আত্মীয়া জলি আবেদীন এবং তার স্বামী আবেদীন আর গাজী কাশেমকে দেখলাম। স্যারেকে বেশ হাসিখুশি মনে হলো। এর মাঝেই আমি ডেনভার প্রবাসী লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং পূরবী বসুকে হুমায়ূন আহমেদের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিলাম। স্যারের বাসায় আসার আগে জ্যোতিদা ফোন করে বলছিলেন, বিশ্বজিত শাওনকে ফোনে পাচ্ছি না। তুমি হুমায়ুনের বাসায় গেলে আমাকে একটু ফোনটা ধরিয়ে দিয়ো। আমরা হুমায়ূনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবো। রাতের খাবার খেয়ে সেদিন অনেক রাতে আমরা জ্যাকসন হাইটেস ফিরলাম। পরের দিন মুক্তধারায় অনুষ্ঠান। বিভিন্ন শহর থেকে হুমায়ূন ভক্তরা আসছেন নিউইয়র্কে। মধ্যরাত তখনও মুরাদ আকাশ, তানভীর রাব্বানী, মেহেদী হাসীন, শাহীন মিয়া মুক্তধারার নিবেদিতপ্রাণ তরুণরা অক্লান্ত পরিশ্রমে কাজ করে চলেছে। রাতেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। শুধুমাত্র বেলুন ফোলানো বাকি। আমরা যে যার বাসায় চলে গেলাম। আর কিছুক্ষণ পরই ১৩ নভেম্বর সকাল হবে। নতুন সূর্য উঠবে।
সকালে মুক্তধারা কর্মী আজাদ এসেই হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির সিডি চালিয়ে দিলেন: ‘এক যে আছে সোনার কন্যা’। কালজয়ী গানগুলো বাজতে থাকে লাউড স্পিকারে আর হুমায়ূন ভক্তরা দলে দলে আসতে থাকেন মুক্তধারায়। লেখক উপস্থিত থাকুক না থাকুক তাঁর সৃষ্টি নিয়েই কথা, তাঁকে নিয়ে আলোচনা তিনদিন ধরেই চলেছে। হুমায়ূন আহমেদের নিউইয়র্কে জন্মদিন নিয়ে বিশেষ সংবাদদাতা শহীদুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাঁক-এ লিখলেন: ‘নিউইয়র্কে জন্মদিনের উৎসবে বাবার হয়ে কেক কাটলেন পুত্র নিষাদ। মাথার হ্যাট খুলে দেখিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বললেন, এই যে সব চুল পড়ে গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু দেশে নয়, ৬৩তম জন্মদিনে সুদুর মার্কিন মুলুকেও প্রবাসী বাংলাদেশি ভক্ত ও অনুরাগীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। মরণব্যাধি তাকে বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি করে দূরে সরিয়ে রাখলেও প্রযুক্তির কল্যাণে ভক্তদের কাছে এসেছিলেন তিনি। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় (১৩ নভেম্বর) নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারায় আয়োজিত তিনদিনব্যাপী হুমায়ূন উৎসবের প্রথম দিনে জন্মদিনের কেক কাটার শুভ মুহূর্তে ভিডিও আলাপে ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের এই অনুষ্ঠানে আমি শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারছি না। এজন্য নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। দুঃখ ও বেদনাবোধ তো অবশ্যই আছে। তবে মানসিকভাবে তোমাদের সঙ্গে যুক্ত আছি। মানসিক যুক্তি শারীরিক যুক্তির চেয়ে অনেক বেশি। তবে আমি যখন সুস্থ হয়ে যাবো তখন সবার সামনে আসবো। সবাইকে আমার হৃদয় থেকে শুভেচ্ছা।’ তিনি হাত নেড়ে সবাইকে অভিবাদন জানান।
প্রতিবছর জন্মদিনে ঢাকায় ব্যাপক আয়োজনে জন্মদিন পালন করেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু ৬৩তম জন্মদিনে প্রিয় এই লেখক সবাইকে ছেড়ে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। ঢাকায় তার মা আয়শা ফয়েজ ছেলেকে ছাড়াই জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেছেন। তবে সুদুর প্রবাসে ভক্তরা তাকে বুঝতেই দেননি রোগশোক তাকে দূরে সরিয়ে রাখলেও সবার ভালোবাসা রয়েছে তাঁর সাথে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভক্তরা জানতেন হুমায়ূন আহমেদ মুক্তধারায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসছেন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে ভক্তদের মাঝে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। স্কাইপে ভক্তদের ভালোবাসার জবাব দিয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও পুত্র নিষাদ। অনুষ্ঠানে ৬৩তম জন্মদিনে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙপেন্সিল’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষক গোলাম মুরশিদ। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে জীবদ্দশায় অমর হয়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যের আড়াইশ বছরের ইতিহাসে কোনো লেখকের বই এত বেশি বিক্রি হয়নি। তিনি সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝতে পারেন। তার লেখায় তিনি সেই কথাগুলোই তুলে ধরেন। এ কারণে জনপ্রিয়তায় হুমায়ূন আহমেদ অসাধারণ। গোলাম মুরশিদ আরু বলেন, হুমায়ূন আহমেদ গানও লেখেন। তাঁর লেখা ও শাওনের গাওয়া গান আমার মনে দাগ কেটেছে। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ অসুস্থ শুনে অবাক হয়েছি। তবে আমার বিশ্বাস ঢাকায় গিয়ে হাসিমুখেই হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা হবে। অনুষ্ঠানে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ৬৩তম জন্মদিনে দেশে থাকলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখানে মনে হয় না যে দেশে নেই। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঈদের দিনের চেয়েও আমাদের কাছে আনন্দের। আমার শাশুড়ি দুদিন আগে বাসায় এসে বসে থাকেন। জন্মদিনে বাসায় এতো ফুল আসে তা দেখতেই তিনি মজা পান। দেশের মানুষ তার ছেলেকে এতো ভালোবাসে তা দেখে তিনি খুব আনন্দ পান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবেগ আপুত হয়ে শাওন বলেন, এখন আমাদের মানসিক সাহায্য দরকার। হুমায়ূন। আহমেদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে শাওন বলেন, সবাই হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু কেউ যে তাকে দেখতে যান না এটাই এক ধরনের সাহায্য। কারণ ক্যান্সারের কেমোথেরাপি দিলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তিনি বলেন, আমি হুমায়ূনকে কখনো ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখিনি। তবে এক ছেলেকে কোলে আর এক ছেলের হাত ধরে ঈদের নামাজে যেতে তার খুব আগ্রহ। কিন্তু এবার ইচ্ছা থাকার পরও যেতে পারেননি।
কারণ নামাজে গেলে কোলাকুলি করতে হবে। এতে ক্ষতি হবে। আপনারা যে ধৈর্য ধরেছেন এজন্য আপনাদের মন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ভালো আছেন। শুধু লেখক হিসাবে নয়, সন্তানের বাবা হিসাবে হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন, অভিনেত্রী রেখা আহমেদ, লুৎফুন নাহার লতা, লেখক বেলাল বেগ, অন্যপ্রকাশ-এর অন্যতম পরিচালক মাসুম রহমান, গাজী কাশেম প্রমুখ। আমাকেই সেদিন অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসায় সাহায্য করতে চান। কিন্তু এ মুহূর্তে নয়, হুমায়ূন আহমেদ যখন ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। নেবেন তখন এসব সাহায্য গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষ ছিলেন। ভক্ত ও অনুরাগীরা হুমায়ূন আহমেদকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফুল ও কেক নিয়ে আসেন। হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সেগুলো গ্রহণ করেন।
মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদ নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র মোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতঃমধ্যে তাঁর প্রথম দফা কেমোথেরাপি সফলভাবে শেষ হয়েছে। খুব
শীগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা শুরু হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কারও সঙ্গে দেখা করা একেবারেই বারণ। বারণ উপেক্ষা করে অনেকেই তার বাসায় হাজির হচ্ছেন। তবে এ মুহূর্তে কাউকে বাসায় না যাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা বিশেষ অনুরোধ জানান। বাসায় লেখালেখি করেই সময় পার করছেন হুমায়ূন আহমেদ। পাশাপাশি ছোট ভাই জনপ্রিয় লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের পাঠানো কোরআনের কিছু সূরা পাঠ করছেন তিনি, যা জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি একজন নারী হুমায়ূন আহমেদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। এই সূরা পাঠ করে জনৈক ব্যক্তি ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেয়েছেন এই বিশ্বাস থেকে ওই প্রবাসী জাফর ইকবালের মাধ্যমে সূরাগুলো পাঠান। এ তথ্য জানান মেহের আফরোজ শাওন।
৬৪তম জন্মদিন
গান, কবিতা, স্মৃতিচারণ, লেখা, কেক কাটা আর ৫ দিনের বইমেলা উদযাপনের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদের ৬৪তম জন্মোৎসব পালিত হয়েছে গত ৯ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর ২০১২। নিউইয়র্কের সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক জগতের ব্যাপকসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ১৩ নভেম্বর অপরাহ্ন থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জন্মোৎসব পালিত হয়। স্মৃতিচারণ করেন সাহিত্যিক হাসান ফেরদৌস, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, মঞ্জুর আহমেদ, বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহের, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক হাসানুজ্জামান সাকী, হুমায়ূন আহমেদের আত্মীয় এ আর কে ইউসুফ জাই প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস বলেন, হুমায়ূন পড়তে ভালো লাগে। কারণ তিনি স্বপ্ন দেখান। তাঁর লেখা পড়ি কিন্তু ভুলে যাই। তবে মনের মধ্যে একটা প্রলেপ তৈরি হয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পটি সংক্ষেপে শোনান হাসান ফেরদৌস। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের যে অমিত সম্ভাবনা ছিলো তা তিনি ব্যবহার করেননি। নিনি ওয়াহেদ বলেন, মুক্তধারা যখনই এ ধরনের অনুষ্ঠান করে সেটি কোনো না কোনোভাবে নতুন মাত্রা পায়। এই অনুষ্ঠানে আমাদের মতো মানুষের জন্য আনন্দের। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সাহিত্য বিচারে কতটুকু সফল তা নিয়ে সাহিত্য সমালোচকরা নিরূপণ করবেন। তবে এটা সত্যি হুমায়ূন আহমদকে উপজীব্য করে এখন অনেকেই মাঠে নেমেছেন। যাদেরকে কখনো আগে দেখা যায়নি, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ ছিলো না। সাংবাদিক মঞ্জুর আহেমদ বলেন, মুক্তধারার বইমেলার মাধ্যমে নিউইয়র্কে আমরা হুমায়ূন আহমেদকে বিভিন্ন সময়ে কাছে পেয়েছি। বাংলাদেশের মতো নিউইয়র্কও হুমায়ূন আহমেদের জীবনের অনেকাংশ জুড়ে ছিলো। আর এর জন্য মুক্তধারাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। হাসানুজ্জামান সাকী তার সাথে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয়ের বিভিন্ন কথা তুলে ধরেন। কবিতা পাঠ পর্বে হুমায়ূন আহমদকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করেন মুকুট ইব্রাহীম। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের লেখা কবিতা পাঠ করেন সেমন্তী ওয়াহেদ, গোপন সাহা, সেলিফ আফসারী, কামরুজ্জামান ও শাহ আলম দুলাল। ছবি বানানোর গল্পের মজার অংশ পড়ে শোনান রানু ফেরদৌস। হিমুর বাবার কথামালার অংশ বিশেষ পড়ে শোনান মুহাম্মদ আরিফ হোসেন। শেষে হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় গান ‘চাঁদনীপসর রাতে যেন আমার মরণ হয়, নেশা লাগিল রে, আমার গায়ে যত দুঃখ’ পরিবেশন করেন দিলরুবা নার্গিস ও আল আমিন বাবু। সবশেষে সমবতে কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘মঙ্গলালোকে আনন্দলোকে’ গানটি পরিবেশনের পর সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদের কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ফারুক ফয়সল। উল্লেখ্য, ৯ নভেম্বর ২০১২ থেকে মুক্তধারায় হুমায়ূন আহমেদের শতাধিক বই এবং চলচ্চিত্র, নাটক ও গানের সিডির প্রদর্শনী শুরু হয়। জন্মোৎসবের অনুষ্ঠানের শুরুতে বড় পর্দায় হুমায়ূন আহমেদের সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রদর্শিত হয়। জন্মোৎসব উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারা বিভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছিলো।
.
পাদটীকা
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে নিউইয়র্কে মুক্তধারা প্রথম বইমেলা শুরু করে। লেখকের জীবদ্দশায় সর্বশেষ জন্মদিনের অনুষ্ঠানও হয় নিউইয়র্কে মুক্তধারায়। মুক্তধারা, নিউইয়র্ক’ তাই হুমায়ূন আহমেদের জীবনের অনেকখানি অংশ জুড়ে। তিনি আজ শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার সৃষ্টি, তার আকাঙ্ক্ষার যেন অবমূল্যায়ন না হয়। আমরা কৃতজ্ঞ ও সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি মুক্তধারার সাথে লেখকের সম্পর্কের স্বর্ণালি সেই দিনগুলোর কথা।