১২. স্বপ্নের মৃত্যু

স্বপ্নের মৃত্যু

দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের ২৯দিন পর ১৯ জুন, ২০১২ নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১টা ২৩ মিনিটে নিম্ন রক্তচাপ-এর ফলে বাংলাদেশের নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে আমেরিকার চিকিৎসকেরা বাঁচিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন। প্রায় তিন সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অনেকটা নীরবে নিভৃতে কিছু না বলেই তিনি চলে গেলেন। ১২টি কেমোথেরাপি বা প্রথম অস্ত্রোপচারের পরও তাঁকে কখনো বিমর্ষ দেখায়নি। সবসময় ছিলেন প্রাণবন্ত। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও অবলীলায় বলতেন মৃত্যু নিয়ে রসাত্মবোধক গল্প। সেই মানুষটি কিছুই বলে যেতে পারেননি, কিছু লিখেও যেতে পারেননি শেষ মূহূর্তে। জুনের শেষ সপ্তাহে মুখে। বলতে পারেননি কিন্তু লিখে জানতে চেয়েছিলেন কবে তার শরীর থেকে এসব যন্ত্রপাতি খোলা হবে। কবে তিনি আরোগ্য লাভ করে বাসায় যাবেন? কখনো তিনি ভাবতে পারেননি এভাবে চলে যাবেন। প্রথম অস্ত্রোপচারের আগে সার্জেন্ট মিলারকে নিজেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, কত শতাংশ নিশ্চয়তা আছে তাঁর ভালো হওয়ার। ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন, আমি অস্ত্রোপচার করলে নিশ্চয়তা শতভাগ। উজ্জ্বল হয়েছিলো তার দুটি চোখ। এরপর অনেক আনন্দ নিয়ে মা, মাতৃভূমি আর অতি ভালোবাসার নুহাশ পল্লী দেখতে গিয়েছিলেন। দেশ থেকে ফিরে এলেন, যেন আনন্দ উৎসব করে ফিরেছেন। বললেন, অনেক ভালো লেগেছে দেশে গিয়ে। মা’কে নিয়ে তার ভালোবাসার শেষ নেই। মা ছেলের চিকিৎসার জন্য তুলে দিয়েছেন সারা জীবনের সঞ্চয়। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল হুমায়ূন আহমেদের অকাল মৃত্যুর পর পরই বেলভ্যু হাসপাতালে বললেন, আমাদের পরিবারকে আবার একটি মৃত্যুকে মেনে নিতে হবে কিন্তু দাদাভাইয়ের মৃত্যু মা মেনে নিতে পারবেন না। দেশ থেকে ফেরার পর তাঁর ভালো লাগার গল্প প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় হতো। বিশেষ করে সুস্বাদু বাঙালি খাবারের গল্প। অনেক স্মৃতি, অনেক কথা। ১৯৮৭ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘আনন্দপত্র’র ঈদ সংখ্যার জন্য উপন্যাস প্রিয়তমেসু’র পাণ্ডুলিপি আনতে গিয়ে স্যারের সাথে পরিচয়ের সূচনা। আমার এখনো মনে আছে হুমায়ূন আহমেদের যখন দ্বিতীয় কেমোথেরাপি চলছে মেমোরিয়াল হাসপাতালে, সেদিন সকালে তিনি বললেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে এবার হার্টেরও চেকআপ করিয়ে যাবো। চোখের নিচে কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ডারমোটলজির এপয়েন্টমেন্ট করতে হবে। সেদিনই কেমো নেওয়ার ফাঁকে আমি বেলভ্যু হাসপাতালে খোঁজ নিতে যাই। এসে বললাম, আপনার হাসপাতাল কার্ড করে দেবো। এরপর এক এক করে সব চিকিৎসা শেষ করে ভালো হয়ে দেশে যাবেন। কোনোকিছু অপছন্দ হলে স্যার সরাসরি বলে দেন। তাঁর কেমোথেরাপির খরচ জানার জন্য একদিন বেলভ্যু হাসপাতালে গিয়ে পুরো একাউন্ট সেকশন ঘুরেও জানতে পারিনি সিটি হাসপাতালে কেমোর খরচ কত। দুজন বাঙালি কাজ করেন, এ ডিপার্টমেন্টে। তারাও চেষ্টা করে জানাতে পারেননি। পরিচয় হলো বেলভ্যু হাসপাতালে কর্মরত রনি বড়ুয়ার সঙ্গে। এরই মধ্যে স্যার বেড়াতে গেলেন লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পূরবী বসুর ডেনভারের বাড়িতে। মহা আয়োজন। যাওয়ার দিন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়ে গেলেন, এসে পেলেন। হাসপাতালের কার্ড। ডেনভার থেকে ফিরে এসে বেলভ্যুর এপয়েন্টমেন্টও পেলেন। কারণ আমি আগেই এপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছিলাম। অনকোলজিস্ট ডা. জেইনের অধীনে চিকিৎসা শুরু হলো। কাড়ি কাড়ি নগদ টাকা দিয়ে হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা করাতে হয়নি। এরপর বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসা। আর্থিক অসঙ্গতির জন্য কারও কাছে দ্বারস্ত হতে হয়নি তাকে। বিক্রি করতে হয়নি নিজের গড়া কোনো সম্পত্তি। ঋণ নিয়ে তিনি সবসময় চিন্তিত থাকতেন। পত্রিকায় সাক্ষাৎকারেও বলেছেন চ্যানেল আই’র ঋণ তিনি দেশে গিয়ে শোধ করে দেবেন। ক্যাটারিং হাসপাতালের পাঁচটি থেরাপির পর চিকিৎসার জন্য আর কোনো খরচ তাঁকে বহন করতে হয়নি। মুক্তধারা থেকে বেলভ্যু হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। দীর্ঘ ৯ মাসে হুমায়ূন আহমদের শেষ দিনগুলোর অনেক কথা লেখার ইচ্ছে ছিলো। সেবছর নিউইয়র্কে বইমেলা নিয়েও ছিলো অনেক স্বপ্ন। বলেছিলেন, এবারের বইমেলায় একটি অনুষ্ঠান হবে ‘শতবর্ষের বাংলা গান। টপ্পা থেকে শুরু করে হাল আমলের গান পর্যন্ত। প্রতিটি গানের শুরুতে গানটির ইতিহাস হুমায়ূন আহমেদ বলবেন। তখন আলো পড়বে হুমায়ূন আহমেদের ওপর। এরপর গান করবেন শাওন, তখন আলো থাকবে তার ওপর। গান শেষে আলো পড়বে যন্ত্রীদের ওপর। হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের অনুষ্ঠানটি আর হলো না, হলো না তাঁকে সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠান। তবে তাঁর আঁকা ছবিগুলো নিয়ে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়েছিলো। ২০টি ছবি স্থান পেয়েছিলো প্রদর্শনীতে। এটিই তাঁর জীবদ্দশায় প্রথম ও শেষ প্রদর্শনী। সেময় তিনি ছিলেন বেলভ্যু হাসপাতালের সিসিউতে। ১৩ নভেম্বর ২০১১ জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারায় অনুষ্ঠিত হয় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। স্কাইপিতে নিজের টুপি খুলে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। গ্রহণ করেছিলেন ভক্ত অনুরাগীদের গভীর ভালোবাসা। তার জন্মদিনকে ঘিরে নিউইয়র্কের মুক্তধারা যেভাবে সাজানো হয়েছিলো, তা সত্যিই দেখার মতো। ৭ দিন ধরে চলে তাঁর বইয়ের প্রদর্শনী। ২০০২ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হুমায়ূন মেলা’ ছিলো লেখক হুমায়ূন আহমেদেকে নিয়ে সে সময়ের সেরা অনুষ্ঠান। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সে সময় প্রায়ই আমাকে ঐ অনুষ্ঠানের জন্য অভিনন্দন জানাতেন। দুসপ্তাহের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের শতাধিক বইয়ের প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, গান, মঞ্চ নাটক, তার নিজের মুখে গল্পবলা নিয়ে সেই ‘হুমায়ূন মেলা’ নিউইয়র্কবাসী বাংলাভাষাভাষী মানুষের কাছে। সবসময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হুমায়ূন আহমেদ শারীরিকভাবে আমাদের কাছ থেকে আজ অনেক দূরে। তাঁর স্মৃতি আজও উঁকি দেয় মনে। বলেছিলেন, চিকিৎসা শেষ করে কলকাতায় যাবেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে। কলেজ স্ট্রিটের আদর্শ হিন্দু হোটেলের গল্প শুনে বলেছিলেন, সেই হোটেলে খেতে যাবেন। ১৯৯৬ সালে আমেরিকায় বইমেলা উদ্বোধন করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সারাদিন মুষলধারে বরফ পড়েছে। তখন বইমেলা হতো ফেব্রুয়ারির শেষদিকে। প্রচণ্ড তুষারপাতের মধ্যে (১২ ইঞ্চির ওপর তখন বরফ পড়েছিল) উদ্বোধনের সময় লোকজন থাকবে কিনা সন্দেহে ছিলাম। সন্ধ্যা ৮ টায় উদ্বোধন। হুমায়ূন আহমেদ পৌনে ৭ টায় মিলনায়তনে এলেন। ৩০ মিনিটের মধ্যে শত শত ভক্ত ঘিরে ধরলো তাদের প্রিয় লেখককে। অটোগ্রাফ শিকারীদের কবল থেকে ছাড়া পেয়ে স্যার ফিতা কেটে বইমেলা উদ্বোধন করলেন। সেদিন একজন কিশোরী এসে বলেছিল, তিনি আপনাকে আমি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি? আরেকজন মুখে বলতে পারেননি কিন্তু তার প্রিয় লেখককে স্পর্শ করতে গিয়ে লেখককে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলেন।

একদিন হঠাৎ একটি বিশেষ খামে চিঠি এলো মুক্তধারায়। বিশেষ কতগুলো নথিপত্রসহ। চিঠিটা এসেছে আমেরিকার লস এঞ্জেলেসের একটি জেলখানা থেকে। একজন বাঙালি জেলখানা থেকে মুক্তধারায় চিঠি লিখেছেন হুমায়ূন। আহমেদের ২০১০ সালে প্রকাশিত বই চেয়ে। মানে পাঠকের আগের বইগুলো। পড়া। জেলখানা থেকেও হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ার সেই আকুতির কথা কি কখনো ভোলা যায়? এ রকম আরো অনেক ঘটনা। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছেন, ইমিগ্রেশন পার হচ্ছেন। বাঙালি ইমিগ্রেশন অফিসার এসে সালাম করে হতবাক করে দিলেন বা প্লেনে ওঠার পর ককপিঠে প্লেন চালক সিগারেট খাওয়ার জন্য লেখককে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। কত রকম ঘটনা। এ রকম আরো উল্লেখ করার মতো মজার ঘটনা আছে যা পরবর্তীতে লেখার ইচ্ছে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এলেন ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে আমেরিকায়। লেখা শুরু করলেন প্রথম আলো এবং কালের কণ্ঠে’। নিজের মৃত্যুর কথা নিয়ে এমন। রসিকতা করলেন তা পড়ে পাঠকরা শিউরে উঠলেন। অসুস্থতার মধ্যেও লেখা পাঠ করেই কেটেছে তাঁর সময়। এক কলামে লিখলেন নিউইয়র্ক লেখক গাজী কাশেমের বইয়ের কথা। আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি লেখককুল হুমায়ূন আহমেদের কাছে পাঠিয়েছেন তাদের গ্রন্থ। শ’ পাঁচেক বই। শুধু বয়সী পাঠকদের কাছে নয়, নবাগত লেখকদের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। গত ৪০ বছরের এই ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তার সুগভীর রহস্য শুধু তিনিই জানেন। ‘নন্দিত নরকে’, শংখনীল কারাগার’ লিখে সাড়া জাগিয়ে সত্তর দশকের শুরুতে বাংলা সাহিত্যাকাশে তার যাত্রা। এরপর এক এক করে তার সুনিপুণ লেখনীতে সৃষ্টি করেছেন মিসির আলী, হিমুর মতো চরিত্র। আবার মুক্তিযুদ্ধের ওপর লিখেন। বিশাল ক্যানভাসের ‘জোস্না ও জননীর গল্প’। ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ‘মধ্যাহ্ন’ ও ‘বাদশাহ নামদার বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে সমানভাবে সমাদৃত। আত্মজৈবনিক লেখা আমার ছেলেবেলা’, কিছু শৈশব, বল পয়েন্ট, ‘ফাউন্টেন পেন’, ‘কাঠ পেন্সিল এবং সর্বশেষ রং পেন্সিল’ পাঠকদের আগ্রহের নতুন সংযোজন। দেয়াল’ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তাঁর লেখনীর যাদুকরী স্পর্শে করেছে দেশব্যাপী বিশাল আবেদন। হয়তো দেয়ালই হয়তো তাঁর লেখা শেষ বই। আমার যতদূর মনে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন মৃত্যুর পর তাঁর অনূদিত কোরআন শরীফ প্রকাশিত হবে। সেটি এখন কোথায় এবং কোন অবস্থায় রয়েছে সেটাও অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের আগ্রহের বিষয়। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে হুমায়ূন আহমেদ একটি প্রতিষ্ঠান। যে প্রকাশক তাঁর আশীর্বাদ পেয়েছেন, তিনি হয়ে উঠেছেন সময়ের সফল প্রকাশক। একসময় ছিলো খান ব্রাদার্স, তারপর অবসর প্রকাশনা, এরপর সময়। সর্বশেষ অন্যপ্রকাশ। হুমায়ূন আহমেদের আশীর্বাদে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে গড়ে উঠেছে বড় বড় প্রকাশনা সংস্থা। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাই প্রকাশক ও প্রকাশনা শিল্পে এখন বিষাদের ছায়া। নব্বইর দশক থেকে শুরু হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হুমায়ূন আহমেদে গ্রন্থ প্রকাশ। বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা মিত্র এন্ড ঘোষ প্রকাশ করেছে এই সব দিনরাত্রি’র মতো গ্রন্থ। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত শারদীয় দেশ পত্রিকায় পর পর ৩ বছর প্রকাশিত হয় হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস। দেশ পত্রিকায় এ পর্যন্ত কোনো লেখকের পরপর ৩ বছর উপন্যাস প্রকাশিত হয়নি। এটা। অবশ্যই তাঁর জনপ্রিয়তারই স্বীকৃতি। শিল্প-সংস্কৃতির নানা শাখায় হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন কিংবদন্তি। তাঁর এই সব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’,’ বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’-এর মতো ধারাবাহিক নাটক যেমন মানুষের হৃদয়ে চির জাগরুক তেমনি নিমফুল’, ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘আজ আমাদের ছুটি’ এখনো মানুষ খুঁজে বেড়ায়। হুমায়ূন আহমেদের শঙ্খনীল কারাগার চলচ্চিত্রেও অমর। পরিচালনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আগুণের পরশমণি’। সৃষ্টি করেছেন নতুন ইতিহাস। আবার গ্রামবাংলাকে উপজীব্য করে সৃষ্টি করেছেন শ্রাবণ মেঘের দিন’-এর মতো অসম্ভব জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। আসলে সাহিত্য-সংস্কৃতি যে শাখায় তার হাত পড়েছে সেখানেই তিনি সোনা ফলিয়েছেন।

সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তিনি হাছন রাজাকে করেছেন ব্যাপক জনপ্রিয়। শাহ আব্দুল করিমসহ বিভিন্ন শিল্পীকে তুলে এনেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। আবার যখন নিজে গান রচনা শুরু করলেন, সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ কিছু গান– এক যে আছে সোনার কন্যা, ও আমার উড়াল পঙ্খী, বরষার প্রথম দিন, আমার ভাঙা ঘরের ভাঙা চালা, যদি ডেকে বলি এসো হাত ধরো, কে পরাইল আমার চোখে কলঙ্ক কাজল- এমন অসংখ্য অমর গীতিকথা।

.

পাদটীকা

২৬ জুন ২০১২, অনেক রাতে গিয়েছিলাম বেলভ্যু হাসপাতালে। রাত ১১টা বেজে গেছে। আমি আর আমার স্ত্রী। প্রায় দেড়ঘণ্টা ছিলাম হুমায়ূন আহমেদের পাশে। ২৯ জুন নিউইয়র্কের বইমেলা শুরু, তাই নানা ঝামেলায় দিনে যেতে পারতাম না। যতবারই চলে আসতে চেয়েছি, তিনি হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কপালে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য। দেড়ঘণ্টায় তিনবার চাইলেন পানি, পানি, পানি। আমরা পানি পান করালাম। এরপর যতবারই গিয়েছি, তার সাথে আর কথা হয়নি। বোধহয় বুঝতেও পারেননি আমার উপস্থিতি। স্যার আর কখনো বলবেন না, আর কিছুক্ষণ থাকো। স্যার, ২১ জুলাই আপনি চিরদিনের জন্য দেশে ফিরে যাচ্ছেন। সারাদেশের মানুষ, আপনার মা, ভাই-বোন, সন্তান নোভা, শীলা, বিপাশা, নুহাশ এবং সন্তানদের মা আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। আর যে দুটি শিশু সন্তান নিয়ে গত নয় মাসের সাথী আপনার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তিনি আপনাকে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। পরম করুণাময় তাঁকে শোক সইবার শক্তি দিন, এই শুধু কামনা। আপনি কি এবারো সরাসরি আপনার তৈরি করা নন্দনকানন নুহাশ চলচ্চিত্রে যাবেন। সেখানে খাসি জবাই হবে। আনন্দ হবে। আবার আপনি চিকিৎসা করাতে নিউইয়র্কে ফিরবেন, আপনাকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাবো। আর হবে না এসব কিছুই এটাই এখন সত্য।

(২৩ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাঁকের বিশেষ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *