সেই অজানার খোঁজে ২.১

কলম হাতে নিয়ে অনুভব করছিলাম পাঠকের কাছে লেখক কতটা দায়বদ্ধ। হাওড়া থেকে হরিদ্বারের দীর্ঘ পথ-যাত্রায় যে মানুষটিকে আবিষ্কারের আনন্দে তাঁকে পাঠকের সামনে হাজির করেছিলাম সেই গৃহী তান্ত্রিকসাধক কালীকিংকর অবধূত শত সহস্রজনের হৃদয়ের অন্তঃপুরে এ-ভাবে পৌঁছুবেন আমি ভাবি নি। এই মানুষকে নিয়ে তাঁদের এখন অনেক প্রশ্ন অনেক কৌতূহল অনেক দাবি। তাঁর সকাশে উপস্থিত হবার আশ্চর্য তাগিদ। এই তাগিদের স্রোত ব্যাহত করার অধিকার আমার নেই জেনেও চুপ করে ছিলাম। আর অসহায় বোধ করছিলাম। তাঁদের শত শত চিঠির উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকাটা তৃষ্ণার জলের হদিস দিয়েও উৎসটিকে গোপন করে রাখার মতো।

…কলকাতার বে-সরকারি কলেজের এক অতি সাধারণ মাস্টারের ছেলের এমন বিচিত্র জীবনে পা ফেলার ইতিবৃত্ত অনুসরণ করে প্রৌঢ় প্রহরে দেবভূমি তারকেশ্বরে তাঁর জীবনের যে অত্যাশ্চর্য নাটকটি আমার সামনেই পরি ণতির মোহনায় এসে সম্পূর্ণ হয়েছিল—তারপর কোন্নগরের বাড়িতে এসে যে-কথাগুলো আমার কথার জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমার বুকের তলায় তা সোনার অক্ষরে খোদাই হয়ে গেছল।

…আমি বলেছিলাম, আমাকে একটু পথ দেখান।

তার একটু আগে অবধূতের প্রায় অক্ষয়-যৌবনা গৃহিণী কল্যাণী দেবীর মুখে সংশয়-শূন্য ঈশ্বর-বিশ্বাসের এক অনির্বচনীয় রূপ দেখেছিলাম। সহজ দ্বিধাশূন্য গলায় সেদিন তিনি বলেছিলেন, যা ঘটে, কেউ কেউ ভাবতে পারেন তার পিছনে তাঁর বাহাদুরি আছে ( কটাক্ষ স্বামীর প্রতি ), কিন্তু যিনি ঘটালেন আর ঘটনার শেষ করলেন, তিনি হাসেন।

কল্যাণী দেবী ঘর ছেড়ে চলে যাবার পরে আমার ওই আরজি। মনে আছে, পেটো কার্তিক তার বাবার পা টিপছিল আর হাঁ করে তাঁর শ্রীমুখ দেখছিল। আয়েস করে মাংসের বড়া তল করে ড্রিঙ্ক-এর গেলাসে একটা বড় চুমুক দিয়ে অবধূত ফিরে প্রশ্ন করেছিলেন, তার মানে? কি পথ?

আমি বলেছিলাম, বিশ্বাসের পথ, শান্তির পথ।

অবধূত চুপচাপ চেয়েছিলেন একটু। বলেছিলেন, শাস্তি জিনিসটা যার যার মনের কাঠামোর ওপর নির্ভর করে…কিন্তু আপনি কোন্ বিশ্বাসের কথা বলছেন?

বলেছিলাম, আপনাদের যা বিশ্বাস। ঈশ্বরে বিশ্বাস।

শুনে আবার খানিক চেয়েছিলেন। তারপর হেসেছিলেন। বলেছিলেন, শুনুন, আমার স্ত্রীকে দেখে আমার বিচার করবেন না। আমার মতো টানাপোড়েনের মধ্যে ছনিয়ায় কতজন আছে জানি না।… অনেকে চোখ বুজে বিশ্বাস করে ঈশ্বর আছে। অনেকে চোখ বুজে অবিশ্বাস করে ঈশ্বর নেই, কিন্তু ঈশ্বর আছে কি নেই এই সন্ধান কতজনে করে?

এই কথাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতে আমার মনে হয়েছিল অবধূতের দু‘চোখ কোথায় কোন্ দূরে উধাও। গলার স্বর আরো গভীর। নিজেই সে-কথার জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি করি। করছি। … ঘটনার সাজ দেখে দেখে প্রশ্ন করি, কে ঘটায়? কেন ঘটে? কে সাজায়? কে করে? জবাব পাই না।…আমি খোঁজ করছি। খুঁজে যাচ্ছি। ঈশ্বর আছে কি নেই আমি জানি না।

…একজনের জীবন-মহিমার বিচিত্র পথে বিচরণের ইতিবৃত্ত নয়, দ্বারভাঙার কাঁকুরঘাটির মেয়ে পার্বতী প্রসাদের সদ্য-জাত হারানো সন্তানকে পাঁচ বছর বাদে ফিরে পাওয়ার রোমহর্ষক প্রহসনও নয়—এই-সব রোমাঞ্চকর ঘটনার নিয়ামক হিসেবে অগণিত ভক্তজন যাকে ঈশ্বরের এক জাগ্রত অংশ বলে জানে, বিশ্বাস করে—স্বয়ং সেই মানুষই এমন জিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে,এমন খবর কি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার মতোই হৃদয়ের সম্পদ নয়? শুধু এটুকু মনে রেখেই বিগত প্ৰসাদ পূজা-বার্ষিকীতে সেই অজানার খোঁজে রূপায়ণের ভিতর দিয়ে অবধূতকে এই জিজ্ঞাসার জীবন-দর্শনে এনে কাহিনীর যবনিকা টেনে দিয়েছিলাম।

পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ লেখকের সেই যবনিকা আর একদফা তুলতে হবে ভাবি নি।

কিন্তু ভাবা উচিত ছিল। কলকাতায় ফেরার আগে ঠাট্টার ছলে অবধূত যা বলেছিলেন তাতে হোঁচট একটু খেয়েছিলাম বইকি। আলতো করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এতদিনে লেখার মতো জমজমাট কিছু রসদ পেলেন ভাবছেন বোধহয়?

আমার উদ্দেশ্য তিনি অনেক দিনই বুঝেছেন। হরিদ্বার থেকে ফেরার পরেও দেড় বছর ধরে সঙ্গ করছি, তাঁর মতো চতুর মানুষের আমার লক্ষ্য কি তা না বোঝার কথা নয়। তারকেশ্বরে বসে এ-নিয়ে তিনি ঠাট্টাও করেছিলেন, নিঃস্বার্থ উপকার করা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আপনার লেখা যখন ছাপার অক্ষরে বই হয়ে বেরুবে আমাকে কি তার রয়েলটির ভাগ দেবেন?

অর্থাৎ, এক বছরের ওপর ধরে আমার মগজে যে রূপ আকার নিচ্ছে তা তিনি ভালোই জানতেন।

প্রশ্নটা শুনে একটু খটকা লেগেছিল, জিগ্যেস করেছিলাম, কেন বলুন তো, আপনার আপত্তি আছে?

তাঁর সকৌতুক জবাব, না, আমার আর আপত্তি কি। তবে, রহু ধৈর্যং… আমার পরামর্শ যদি শোনেন কিছুকাল অপেক্ষা করুন, নইলে মুশকিলে পড়ে যেতে পারেন।

বিদায় নেবার আগে কল্যাণীও সামনে ছিলেন। মুশকিল কি হতে পারে ভেবে না পেয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম। কিছু বুঝতে পারছেন? হেসে জবাব দিয়েছেন, ওঁর কথা সব সময় বুঝিও না, তা নিয়ে ভাবি ও না। তবে ওঁর অনেক বাজে কথা অনেক সময় ফলে যেতে দেখেছি, বলছেন যখন কিছুদিন অপেক্ষাই করুন।

অবধূতের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিছুদিন অপেক্ষা করব বলতে কতদিন?

তিনি স্মিত মুখেই জবাব দিয়েছিলেন, আমি তো কিছুদিন বলি নি, কিছুকাল বলেছি…

শুনে একটু হতাশ আমি।—এখনই তো মুশকিলে ফেললেন দেখছি, তবু কতকাল?

—এই ধরুন যখন আমি আর কল্যাণী থাকব না।

মুখের ওই হাসি দেখে আমার ভিতরটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিল। কাল-নির্দেশ আরো অহিষ্ণুতার কারণ। সঙ্গে সঙ্গে আমার তির্যক প্রশ্ন, কাল রাতে বললেন আপনি সন্ধানী, খোঁজ করছেন—কিন্তু এখন তো দেখি বেশ সর্বজ্ঞ ভবিষ্যতদ্রষ্টার মতো কথা বলছেন— আপনি আমার থেকে তিন বছরের বড় আর কল্যাণী আমার থেকে ছ’বছরের ছোট—আপনারা দুজনে না থাকার পরেও আমি থাকব এমন গ্যারান্টি দিচ্ছেন কি করে?

—যাঃ কলা! জোরেই হেসে উঠেছিলেন।—একটা সহজ কথারও কিভাবে অন্য অর্থ হয়ে যায় দেখুন, যখন থাকব না মানে কি মরে যাওয়া! ধরুন, আপনি লেখা থেকে রিটায়ার করলেন, তার মানে কি আপনি মরে গেলেন? তখন নেই মানে আপনি আর কর্মের মধ্যে নেই—

তাতেও আমি বিরত হই নি।আপনার বা কল্যাণীর শিগগীরই সেইরকম না থাকার অবস্থা আসছে ভাবছেন?

জবাবে হাসি মুখে অবধূত স্ত্রীর দিকেই ঘুরে তাকিয়েছিলেন।—কি গো, আমি তোমার কোন্ হুকুমের দাস আর কি জন্যে এখনো আমাদের বেশ কিছুদিন এখানে পড়ে থাকা—ভদ্রলোককে বলে দেব নাকি?

—থাক, আর বলতে হবে না, সব-সময়ে আমাকে কর্ত্রী বানিয়ে বাহাদুরি! আগেও দেখেছি এ-রকম মুখ ঝামটা অবধূত ভারী প্রসন্ন মনে গ্রহণ করেন। আমারও ভিতরটা যে প্রসন্ন হয়ে ওঠে অস্বীকার করি কি করে। কল্যাণীর বয়েস এখন বাহান্ন। কিন্তু দেহশ্রী আর সুঠাম স্বাস্থ্য এখনো বত্রিশের জাদু-কাঠামোয় বন্দী। আমার বিবেচনায় এ-ও রমণীর এক দুর্লভ যোগ-বিভূতির মহিমা। তাঁকে ছেড়ে দুচোখ আবার অবধূতের মুখের ওপরেই সন্ধানী হয়ে উঠেছিল। জিগেস করেছিলাম, এই সৎপরামর্শ কেন, কি-রকম মুশকিলে পড়ার কথা বলছেন?

আবারও হেসে উঠেছিলেন। —আপনি অল্পেতে ঘাবড়েও যান দেখছি, সে-রকম কিছু না। আচ্ছা আমার একটা কথার জবাব দিন, ভাবলে তার মধ্যেই আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আপনি তো কত চরিত্র দেখেছেন, কত রকমের মানুষ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আজ পর্যন্ত এমন একটি মানুষ দেখেছেন যে প্রাণের আনন্দ থেকে বলে, পরম শান্তিতে আছি, কোনো খেদ নেই, কোনো ক্ষোভ নেই, দুঃখ জমা দেবার মতো শোক জমা দেবার মতো কোনো আশ্রয়ের দরকার নেই—দেখেছেন এমন একজনও?

জানি দেখি নি। তবু নিরীহ মুখ করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাদের দু‘জনকে ছাড়া?

সঙ্গে সঙ্গে অট্টহাসি। এমন হাসি, যে কল্যাণী দেবীও হাসি মুখে ভুরু কুঁচকে বলে উঠেছিলেন, বাবারে বাবা, হাসি শুনলে কাক-চিলেও ভয়ে পালায়!

হাসি থামিয়ে শেষে উনি বলে উঠেছিলেন, এতদিন ধরে এত দেখাশোনা বোঝার পর আপনার মুখে এই কথা! আরে মশাই আমাদের দুজনের একজন তো সেই ষোল বছর বয়েস থেকেই তার খেদ ক্ষোভ শোক দুঃখ তার শিবঠাকুর কংকালমালী ভৈরবের ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে বসে আছেন, উপপতি ছেড়ে এখন তার পতির ঘরে যাবার জন্য হাঁসফাঁস দশাখানা এই মুখ দেখে আপনি বুঝবেন কি করে? নেহাত ওই পতিটিরই আর এক চক্রান্তের কলে আটকে গেছে তাই…।

কল্যাণীর আবির গোলা মুখ, সঙ্গে উষ্ণ মন্তব্য, জিভের যদি একটুও লাগাম থাকত—সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে হাসিমুখে আমার দিকে ফিরে অবধূত বলেছিলেন, আর ভক্তজনের দেওয়া আধা-ঈশ্বরের খোলস পরে এই হতভাগা কি টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে আছে সে-তো কাল রাতেই বললাম আপনাকে! এই বিগত প্রসঙ্গ আটাত্তর সালের শেষের দিকের। এর পরেও দীর্ঘ চার বছরের ওপর অর্থাৎ তিরাশি সালের গোড়ার দিকে পর্যন্ত এই দম্পতির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। ঘনিষ্ঠ যোগ বলতে খুব ঘন ঘন দেখা সাক্ষাৎ হতো এমন নয়। চোখের যোগ থেকে মনের যোগ বেশি ছিল। পরস্পরের খবরাখবর রাখতাম। পেটো কাতিকের যাতায়াতের ফলে সেটা আরো সহজ হতো। পেটো কার্তিক আবার অনেকসময় তার বাবা অথবা মাতাজীর ওপর রাগ করেও আমার এখানে চলে আসত। লক্ষ্য করে দেখেছি মাতাজীর থেকেও তার বাবার ওপর অভিমান একটু বেশি। বলে মাতাজীর হলো গিয়ে অধ্যাত্ম তেজের ঘর, অনেক কঠিন ব্যাপার, ভয়ে নাক গলাইনে। আর বাবা হলেন গিয়ে একখানা সূর্যের মতো, ছোট-বড় সক্কলকে কিরণ দিচ্ছেন। আমাদের সুখ-দুঃখের শরিক-সকলে সেইজন্য বাবার থেকে সুবিধেও বেশি নেয়।

একবার হঠাৎ এক সন্ধ্যায় চলে আসতে মুখ দেখেই মনে হয়েছিল রাগের ব্যাপার ঘটেছে কিছু। খবর জিজ্ঞেস করতে মুখের ওপর জবাব, আমার কি কারো ভালো মন্দের খবর রাখার অধিকার আছে?

পরে শুনলাম একশ দুই জ্বর নিয়েও বাবা গত মঙ্গলবার শ্মশানে গেছেন। এমনিতে যেতেন না, কার কি ক্রিয়া-কাজ করার কথা ছিল। সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়, পরের শনি বা মঙ্গলবারে করলেও হতো। কিন্তু সেই লোক ঠিক সন্ধ্যায় এসে হাজির। দোষের মধ্যে বাবার খুব জ্বর বলে পেটো কার্তিক তাকে হটিয়ে দিয়েছিল। সে-ব্যাটা এমনি ত্যাদড় যে বাড়ি ফিরেই বাবাকে ফোন। বাবা ফের তাকে আসতে বলে শ্মশানে যাবার জন্যে তৈরি হলেন, আর জ্বরের জন্যে হোক বা যে-জন্যে হোক খুব রেগে গিয়ে মাতাজীকে হুকুম করলেন, পেটোকে কান ধরে এখানে নিয়ে এসো। বাবা হঠাৎ-হঠাৎ বেশ রেগে যান বটে, কিন্তু ঠাট্টা করা ছাড়া কানটান ধরার কথা কখনো বলেন না। ডাকতে এসে মাতাজীই ইশারায় তাকে বুঝিয়ে দিলেন বাবা দারুণ রেগে আছে। পেটো আর ধারে কাছে থাকে, সোজা সটকান। বাবা রাগেন কমই আর রাগ জল হতে সময়ও লাগে না। শ্মশানের ক্রিয়াকাজ সেরে রাত চারটেয় বাড়ি ফিরেছেন। পেটো স্বপ্নেও ভাবে নি পরদিন পর্যন্ত বাবার মাথায় রাগ চড়ে থাকতে পারে। সকালে প্রণাম করে উঠে দাড়াতেই প্রথম কথা, ফের এ-রকম হলে তোকে নিয়ে আর আমার পোষাবে না, তোকে নিজের রাস্তা দেখতে হবে।

বলতে বলতে দুঃখে অভিমানে পেটো কার্তিক কেঁদে ফেলেছিল।—বলুন তো, এতদিন বাদে আমাকে কিনা এই কথা! কুকুরেরও তো তার মনিবের ভালো-মন্দ দেখার অধিকার আছে—আমি কি কুকুরের অধম। যাক, দু‘চারটে দিন আপনার এখানেই পড়ে থাকব, দয়া করে চাট্টি করে খেতে দেবেন, তার মধ্যে নিজের ব্যবস্থা কিছু করতে পারি ভালো, না পারলে যে-দিকে দু‘চোখ যায় চলে যাব আমি কেবল শুধিয়েছিলাম, এখানে যে এসেছ বাড়িতে বলে এসেছ?

—আমার কে আছে যে বলে আসব, টাকা পয়সা যা আমার কাছে ছিল পুঁটলি করে মাতাজীর ঘরের তাকের ওপর রেখে এসেছি।

রাতে আর কিছু বোঝাতে চেষ্টা করি নি, তাতে কেবল গোঁ আর অভিমান বাড়বে।

অবধূতের কোন্নগরের বাড়িতে ফোন এসেছে, কিন্তু এতদিনের মধ্যে বার পাঁচেকও সে-ফোন ধরতে পেরেছি কিনা সন্দেহ। ধৈর্যও থাকে না। একটা লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, শেষ হতে রাত বারোটা। ভাবলাম এ-সময় একবার চেষ্টা করে দেখা যাক যদি পেয়ে যাই। ভদ্রলোকের জ্বর শুনেছি, তার ওপর পেটো যা বলছে একটু ভাবনার কথাই। ও-বাড়ির রাত বারোটা কিছুই না। কল্যাণী দেবী শুনেছি এখন তাঁর মায়ের মতোই রাতে দু-আড়াই ঘণ্টার বেশি ঘুমোন না, আর অবধূতের তো ঘুমের ব্যাঘাত বলে কোনো কথাই নেই।

অত রাত বলেই হয়তো চট করে পেয়ে গেলাম। উনিই ধরলেন। জিজ্ঞেস করেছি, খুব জ্বর নিয়ে শ্মশানে গেছিলেন শুনলাম, এখন কেমন? জবাবে হা হা হাসি। ভালো আছি, এত রাতে আমার শরীরের জন্য চিন্তা না কার্তিকের জন্য?

ভণিতা বাদ দিয়ে আমাকে কার্তিকের মতলব বলতেই হয়েছে। — ও দু‘চারদিন আমার এখানে থেকে নিজের ব্যবস্থা দেখবে, আর ব্যবস্থা কিছু না হলে যেদিকে দু‘চোখ যায় চলে যাবে বলছে।

আবারও হাসি।—আপনি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোন, দু‘চারদিন ছেড়ে কাল সকালেই দেখুন কি করে!

দেখেছি। সকালে চা জলখাবারের সময়েই তার উসখুস ভাব। আমার প্রস্তাব, চলো তোমাকে নিয়ে একটু বাজারে ঘুরে আসি, আছ যখন বাজারে ভালো-মন্দ কি পাওয়া যায় দেখি—

আমতা-আমতা মুখ।—আমি ভাবছি সার রোদ চড়ার আগে চলেই যাই…

অবাক ভাব দেখাতেই হয়।—কোথায়?

রাগত জবাব।—কোথায় আর, কোন্নগর ছাড়া আমার যাবার আর কোন্ চুলো আছে? মাথাটা একেবারে চিবিয়ে খেয়ে দিয়েছেন সার—বুঝলেন? যাকে বলে ব্রেন ওয়াশিং, এত আরামে শুয়েও কাল সমস্তটা রাত ভালো ঘুম হলো না—সেই আগেরদিন হলে এই ব্রেন কেবল জ্বলত, আর এখন কিনা কেবল মনে হচ্ছে এ-ভাবে চলে এসে ডবল অন্যায় করলাম। যাই হোক, আপনি ফাঁক-মতো বাবাকে একটু সমঝে দেবেন সার, আমার সঙ্গে এমন ব্যাভার করলে কোনদিন নিজের গলায় ব্লেড দিয়ে বসব! আমার নিরীহ গোছের পরামর্শ, তুমি নিজেও তো বলতে পারো…

—পারি বই কি, মওকা পেলে আমি কিছু বলতে ছাড়ি! নিজেই তো দেখেছেন, বাবার তখন সমস্ত মুখ যেন হাসিতে গলে গলে যায়। ও চলে যাবার পর গত রাতে অবধূতের গলার প্রত্যয়ের সুরটুকু আবার মনে পড়েছে। বলেছিলেন, আপনি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোন, দু‘চার দিন ছেড়ে কাল সকালেই দেখুন ও কি করে।

আর পেটো কার্তিক সম্পর্কে সেই পুরনো কথাই আবার মনে হয়েছে। আজকের এই কার্তিক নয়, পাঁচ বছর আগে যা ছিল অমন হাজার হাজার বেকার বোমাবাজ পেটো কার্তিক শহর শহরতলী আর মফঃস্বল শহরে ছড়িয়ে আছে। ধরে ধরে এদের সক্কলকে যদি অবধূতের কাছে পাঠানো যেত!…সেবারে তারকেশ্বরে যাবার সময়েও ট্রেনে দেখেছি অভাবী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ওর বুকের তলায় কত দরদ। বিনা প্রয়োজনে ট্রেনের হকারদের কাছ থেকে এটা কিনছে ওটা কিনছে, তারপর ট্রেন থেকে নেমেই সব বিলিয়ে দিচ্ছে। যারা বেচল তারা খুশি, যারা পেল তারাও খুশি। প্রসঙ্গ থেকে দূরে এসেছি। আগেই বলেছিলাম, প্রাসঙ্গিক ঘটনার ভিতর দিয়ে কালীকিংকর অবধূতের জীবন-দর্শন আর জীবন-জিজ্ঞাসা আমার অনুভবগোচর হয়েছিল সেই আটাত্তর সালে। তারপর যতবার লিখব বলে মন স্থির করে বসতে চেষ্টা করেছি ততবার অবধূতের হাসি-ছোঁয়া সতর্কবাণী একটা বাধার মতো উঠেছে। উনি বলেছিলেন, রহু ধৈর্যং, আমার পরামর্শ যদি শোনেন কিছু-কাল অপেক্ষা করুন, নইলে মুশকিলে পড়ে যেতে পারেন।

কি মুশকিল আমি ভেবে পাই নি। কিন্তু ওই পলকা নিষেধেও হয়তো কান দিতাম না যদি না কল্যাণী বলতেন, ওঁর অনেক বাজে কথা অনেক সময় ফলে যেতে দেখেছি, বলছেন যখন কিছুদিন অপেক্ষাই করুন। …কালীকিংকর অবধূতকে নিয়ে ‘সেই অজানার খোঁজে’ কাহিনী বিস্তারে নেমেছি আরো দীর্ঘ দিন পরে-পঁচাশি সালের প্রসাদ পূজা বার্ষিকীতে। আমার বিবেচনায় আর অপেক্ষা করার মতো কোনো সঙ্গত কারণ ছিল না। অবধূতের সেই হাসি-ছোঁয়া সতর্ক বাণী আর কোনোরকম বাধা হয়ে ওঠে নি। ততদিনে অর্থাৎ তিরাশি সালের শুরু পর্যন্ত ওই একটি পুরুষ আর একটি রমণীর জীবনের অনেক অতীত অধ্যায় আমার কাছে অনাবৃত হয়েছে। নতুন ঘটনার সংযোজনও কম দেখি নি। রমণীটি অর্থাৎ কল্যাণীর ভিতরের সঠিক রূপটি আজও বোধহয় আমি নিজের বিচার-বিশ্লেষণের আওতায় নিয়ে আসতে পারি নি। অনেক সময় মনে হয়েছে পেটো কার্তিকের কথাই ঠিক।…বলেছিল, মাতাজীর হলো গিয়ে আধ্যাত্ম তেজের ঘর, অনেক কঠিন ব্যাপার। আর বাবা হলেন গিয়ে একখানা সূর্যের মতো, ছোট-বড় সক্কলকে কিরণ দিচ্ছেন—আমাদের সুখ-দুঃখের শরিক।…হ্যাঁ, পরের অধ্যায়ে মাতাজী কল্যাণীর অধ্যাত্ম তেজের কিছু হদিশ আমিও পেয়েছি বইকি। কিন্তু ‘সেই অজানার খোঁজে’ লিখতে বসে আমি কেবল আমাদের সুখ দুঃখের শরিক কালীকিংকরের দর্শন আর জিজ্ঞাসার চিত্রটাতেই মনোনিবেশ করেছিলাম। অর্থাৎ সেই আটাত্তর সালের পরের কোনো ঘটনা বা অভিজ্ঞতা সেই অধ্যায়ে টেনে আনি নি। কারণ আগেও বলেছি।…রোমাঞ্চকর সব ঘটনার নিয়ামক হিসেবে অগণিত ভক্তজন যাঁকে ঈশ্বরের এক জাগ্রত অংশ বলে জানে, বিশ্বাস করে—স্বয়ং যেই মানুষই এমন সন্ধান-অভিসারী, যিনি বলেন, ঈশ্বর আছে কি নেই আমি জানি না, আমি খোঁজ করছি, খুঁজে যাচ্ছি। শুধু এটুকু মনে রেখেই ‘সেই অজানা‘র খোঁজের কাহিনী বিস্তার করেছিলাম। শুধু এই খবরটুকু মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার মতো সম্পদ ভেবেছিলাম।

কিন্তু পৌঁছে দেবার পর কি হলো?

প্রশ্ন প্রশ্ন প্রশ্ন প্রশ্ন।

ফোন-গাইড থেকে আমার ঠিকানা বার করে, পাবলিশার আর প্রসাদ পত্রিকা থেকে ঠিকানার হদিস নিয়ে, অথবা লোকমুখে জেনে নিয়ে কেবল প্রশ্ন আর প্রশ্ন, প্রশ্ন আর প্রশ্ন। কালীকিংকর অবধূত কোথায়? কল্যাণী মাতাজী কোথায়? আমরা বড় বিপন্ন, অবধূতজীকে আমাদের বড় দরকার। কল্যাণী মাতাজীকে যে আমাদের বড় দরকার। কোন্নগর চষেও তাঁদের হদিস পাচ্ছি না কেন? বাড়ির হদিস পেলেও সেটা শূন্য ভাঙা-চোরা অবস্থায় পড়ে আছে কেন? অথচ তাঁরা যে নেই এমন কথাও তো কেউ বলছেন না! বরং বলছেন, আছেন কোথাও—ওই লেখকের কাছেই খোঁজ করুন, মনে হয় একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন।

প্রশ্নবাণে আমি জর্জরিত। আকৃতি দেখে আমি দিশেহারা। চিঠির জবাব না পেয়ে তাঁদের অনেকে বাড়িতে এসে হানা দিয়েছেন। ত্রিবেণী শ্রীরামপুর নদীয়া মুর্শিদাবাদ বহরমপুর এমন কি বারাণসী লক্ষ্ণৌ হরিদ্বার থেকে পর্যন্ত এক-একটি দম্পতি ছুটে এসেছেন। সকলের মুখেই এক কথা এক আকৃতি, অবধূতজী কোথায়? কেমন করে তাঁর সন্ধান পাব। তাঁকে যে বড় দরকার।

আমার বুকের তলায় কত যে মোচড় পড়েছে তার হিসেব দিতে পারব না। তখনই অবধূতের সেই হাসি-ছোঁয়া নিষেধের সার বুঝেছি। কি মুশকিলে পড়ার কথা তিনি বলেছিলেন মর্মে মর্মে অনুভব করেছি। তাঁর হালকা কথার সূত্র ধরে তখনো যদি একটু গভীরে ডুব দিতে পারতাম, ওই নিষেধের তাৎপর্য বোঝা তো জল-ভাত ব্যাপার ছিল! আর প্রকারান্তরে তিনি সেটা বলেও দিয়েছিলেন। … আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এই সৎ পরামর্শ কেন, কি-রকম মুশকিলে পড়ার কথা বলছেন? জবাবে তিনি হাসি মুখে ফিরে প্রশ্ন করেছিলেন, আজ পর্যন্ত এমন একটি মানুষ দেখেছেন যে প্রাণের আনন্দ থেকে বলে পরম শান্তিতে আছি, কোনো খেদ নেই কোনো ক্ষোভ নেই, দুঃখ জমা দেবার মতো, শোক জমা দেবার মতো কোনো আশ্রয়ের দরকার নেই—

—দেখেছেন এমন একজনও?

…হ্যাঁ রসিকতার ছলে এই মুশকিলে পড়ার কথাই অবধূত বলেছিলেন, আর মনে হয় কল্যাণীও সেটা বুঝেছিলেন। পরম শান্তিতে কেউ নেই।

দুঃখ জমা দেবার মতো শোক জমা দেবার মতো কোনো আশ্রয়ের দরকার নেই এমন কেউ নেই। অন্যের কথা কেন, দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের যাদুশক্তি ধরে, একমাত্র ছেলের জন্য সমস্ত ভারত ঘুরে এমন মানুষ তো একদিন আমি আর আমার স্ত্রীও খুঁজে বেড়িয়েছি! আমার সেই লেখা থেকে পাঠক সে-রকম শক্তিধর কোনো একজনের হদিস পেয়েছেন ভেবেছেন—সকলে না হোক, যারা বিপন্ন, যাঁরা শোক দুঃখ বা সংকট জমা দেবার মতো আশ্রয় খুঁ জে বেড়াচ্ছেন তাঁরা ভেবেছেন। কালীকিংকর অবধূতকে তাঁরা খুঁজছেন। এমন লোকের সংখ্যা যে কত আমার ধারণা ছিল না, কিন্তু অবধূতের ছিল।

এ-ভাবে বিপর্যস্ত হবার ফলে একটা চিন্তা আমার মাথায় এসেছিল। এত বছর ধরে আমাকে ওই লেখা থেকে বিরত রেখে অবধূত আমার মুশকিলে পড়া ঠেকিয়েছেন না নিজের গা বাঁচিয়েছেন? কিন্তু পরে আরো ভেবে মনে হয়েছে ওটা নিজেরই বিমূঢ় চিন্তা। ওই মানুষ কোনোদিন ছলনার আশ্রয় নেন নি, যদি নিয়েও থাকেন সেটা তাঁর লোকের মঙ্গল করার কৌশল। পাঠকের মনে থাকতে পারে ট্রেনে হরিদ্বারের পথে তার অন্তর্দৃ ষ্টি দেখে আমরা যখন অনেকটাই অভিভূত, আর চৌদ্দ বছর দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগে আমাদের একমাত্র ছেলে চলে গেছে শুনে তাঁর মুখখানাও যখন বিষণ্ণ গম্ভীর, আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার হাতে এলে আপনি কিছু করতে পারতেন? সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাথা নেড়েছিলেন, বলেছিলেন, কিচ্ছু পারতাম না মা, কেউ পারত না।

…কল্যাণীর মা, তারাপীঠের ভৈরবী মা মহামায়ার শিক্ষাই অবধূতের পরবর্তী জীবনের সব থেকে বড় পুঁজি। ওই মায়ের কাছ থেকেই তাঁর দৃষ্টির সাধনা অধিগত। এই দৃষ্টি চালনার ভিতর দিয়ে মানুষের অন্তঃগুলের অনেকটাই তাঁর চোখে ধরা পড়ে। রোগ ব্যাধি শুধু নয়, শোকতাপ পরিতাপের ছায়াও তিনি দেখতে পান। কপাল আর লক্ষণ দেখেও অনেক কিছু নির্ভুল আঁচ করতে পারেন। হাত দেখা বা জ্যোতিষী বিদ্যাও ওই মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। আর সব থেকে বড় পাওয়া মায়ের আয়ুর্বেদ-নিষ্ঠ চিকিৎসাবিদ্যা। এই থেকে অবধূত নিজেও দ্রব্যগুণে বিশ্বাসী। লোকের মন আর মানসিকতা বুঝে তাঁকে তাবিচ-কবচও দিতে দেখেছি। এইসবের সঙ্গে অসাধারণ বুদ্ধি প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, নিষ্ঠা আর আত্মপ্রত্যয়ের যোগ ঘটলে যা হয়—কালীকিংকর অবধূত কেবল তাই। নিজে তিনি কোনোদিন অলৌকিকের পিছনে ছোটেন নি। কত সময় হেসে বলেছেন এ-সবের কোনো কিছুর মধ্যে অলৌকিকের ছিটে ফোটাও নেই—আমি যা পারি আর করি তার সবটাই শিক্ষা আর নিষ্ঠার সাধনার ফল, এই শিক্ষা আর নিষ্ঠা থাকলে ইচ্ছে করলে আপনিও পারেন—সকলেই পারে।

…কিন্তু মানুষ তাঁর কাছে যতটুকু পেয়েছে, বিশ্বাসে আর ভক্তিতে তাতেই তাঁকে অলৌকিক শক্তির অধিকারী ধরে নিয়েছে। তারাই তাঁকে গড-ম্যানের আসনে বসিয়েছে। সেই গড-ম্যান নিজের গড খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ঘটনার সাজ দেখে দেখে তাঁর প্রশ্ন, কেন ঘটে কে ঘটায়, কে সাজায় কে করে—এই বৈচিত্র্যটুকুর দাগ রেখে যাবার তাগিদেই কালীকিংকর অবধূতকে আমি পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছিলাম। সঙ্গে আমার না-বোঝা পেটো কার্তিকের ভাষায় তাঁর আধ্যাত্ম তেজের ঘরের স্থির-যৌবনা স্ত্রী কল্যাণীকেও। কারণ আমার বিবেচনায় একজনকে বাদ দিলে অন্যজন অসম্পূর্ণ।

…কিন্তু পাঠকও তাঁদের ভক্তজনের পথেই চলেছেন। শোক দুঃখ ভয় তাপ জমা দেবার জন্য তাঁদের খুঁজছেন। তাঁরাও তাঁদের গড-ম্যান গড-মাদারের আসনে বসিয়েছেন। দুজনের মধ্যে অলৌকিক শক্তির রূপ দেখেছেন। তাঁরা একেবারে মিথ্যে ভাবছেন এমন বলার ধৃষ্টতাও আমার নেই। কারণ, অলৌকিক না হোক যুক্তির বাইরে শক্তির রূপ পরে এঁদের মধ্যে আরো দেখেছি। যা-ই হোক, পাঠকের অন্বেষণ বা অনুসন্ধিৎসার আড়ালে রাখার মতো কালীকিংকর অবধূত মানুষটি আমার নিজস্ব সম্পদ নন। যে-পর্যন্ত আমি জানি সেই পর্যন্ত তাঁকে চেনা বা জানার সমান অধিকার তাঁদেরও। পাঠকের কাছে লেখক দায়বদ্ধ। সেটা স্বীকার করেই অবধূতের জীবনের আর একটি বিস্তৃত অধ্যায় ( শেষ অধ্যায় কিনা জানি না ) পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

সেইসঙ্গে দিব্যাঙ্গনা স্থির-যৌবনা আধ্যাত্ম তেজের ঘরের মেয়ে কল্যাণীকেও। কারণ, একজনকে ছেড়ে আর একজন যে কত অসম্পুর্ণ সেটা ততদিনে আমি ঢের বেশি অনুভব করতে পেরেছি।
 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *