সংসার বিষয়ক

সংসার বিষয়ক

(১) “পিতার ঘরে বিবাহিত যুবক”

“ভ্রাতৃদিগের একত্র বসতি”

সাঁওতাল যুবক বিয়ে করা মাত্রই ভিন্ন হয়ে যায় না। সে তার বাপমার সঙ্গে বাস করে। শ্বশুরের ঘরে বাস করলে লোকে ভারী তার নিন্দা করে, এবং পরে সে সম্পত্তির ওয়ারিস হ’তে পারে না। কোন কোনও পিতা এরূপ ছেলের উপর বিরক্ত হ’য়ে তার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। আজকাল দুএকজন তাকে ‘সাবেক’ পৈত্রিক ধনের অংশ দিয়ে থাকে, কিন্তু ইহা পিতামাতার একমাত্র ‘মরজি’; ছেলে ন্যায়মত কোন অংশ দাবী করতে পারে না।

বাপ ছেলেদের সঙ্গে ভিন্ন না হওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে কাজকর্ম্ম করে ও এক পরিবারে থেকে খাওয়া দাওয়া করে; বাপমা ছেলের বৌকে নিজের মেয়ের মত দেখে। ছেলেদের মধ্যে বাপ বড় ছেলেকে বেশী ভালবাসে (অবশ্য ভাল হ’লে), আর মা সর্ব্বকনিষ্ঠ পুত্রকে ভালবাসে, ছেলেরা তাদের খুড়ো-খুড়ী, জেঠা-জেঠী, মামা-মামী, পিসা-পিসী প্রভৃতিকে নিজেদের বাপমায়ের মত ভক্তি ও মান্য করে। আর এরাও এদের নিজের ছেলেমেয়ের মত দেখে।

বাপ ছেলেদের শিক্ষার ভার নেয়; আর মা মেয়েদের ও বৌদেরকাজকর্ম্ম শিখা’বার ভার নেয়। ছোট বৌরা বড় বৌদের মান্য করে চলে, এবং তাদের কথা শাশুড়ীর কথার মত পালন করে; আর বড় বৌরাও ছোট বৌদের নিজেদের ছোট বোনের মত ভালবাসে ও স্নেহ করে। বাপমা কাজকর্ম্ম করতে অশক্ত হ’লে বড়ছেলে ও বড়বৌর সঙ্গে বাস করে। সে সময়ে তারা ছোট ছেলেমেয়েদের যত রকম দোষ সহ্য করে; ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক সময় ঝগড়াও হ’য়ে থাকে। বুড়ো বুড়ীকে প্রায়ই ভর্ৎসনা করে; আজ কাজকর্ম্ম না চললে ছেলেমেয়ে—দেরও বকে; কিন্তু ছেলের বৌকে কিছু বলে না। আসল ঝগড়া শাশুড়ী বৌতে হয়; তাদের ঝগড়াতেই অনেক সময় ভাইএ ভাইএ ভিন্ন হয়, এবং তাদের মধ্যে মনোমালিন্যেরও সৃষ্টি হয়।

বড় বৌ দেবর ও ননদের সঙ্গে বেশ মিলেমিশে থাকে; তাদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করে না। ননদেরা বৌকে ভালমন্দ সব বলে থাকে; দেবরেরা বৌদিদির সঙ্গে নানারকম ঠাট্টাতামাসা করে থাকে; তাতে লোকে কোন দোষ ধরে না।

বুড়োবুড়ী নাতিনাতনীদের খুব ভালবাসে, তাদের কোলে ক’রে চুমা খায়। মিলেমিশে থাকলে বুড়োবুড়ী দুজনে সকলের ছেলেপেলেদেরই কোলে ক’রে স্নেহ করে, আর আরামব্যারামে খুব যত্ন করে।

(২) ভ্রাতৃবিচ্ছেদ

“ভাই ভাই ঠাই ঠাই”

কোন পরিবারে পুত্রপৌত্রাদির সংখ্যা বেড়ে গেলে, অথবা নিজেদের মধ্যে গরমিল হ’লে ছেলেরা বাপ-মাকে ভিন্ন করে দেয়। গৃহস্বামী মাঁঝি ও গ্রামের পাঁচজনকে ডেকে ঘরবাড়ী, জমিজমা, গাইবাছুর, আর যা কিছু সম্পত্তি থাকে, সব সমান ভাগে ছেলেদের ভিতরে ভাগ করে দেয়, এবং নিজের জন্যে এক ভাগ রেখে দেয়। আর বুড়োবুড়ী যার কাছে থাকে তাদের ভাগও তার সঙ্গে একত্রে থাকে। বাপ-মা চলাফিরা করে না খেতে পারলে তাদের পালন করা ছেলেদের কর্তব্যকর্ম্ম, যেহেতু বাপ-মা অনেক কষ্ট ক’রে ছেলেপেলেদের মানুষ করে থাকে। মেয়েরা কোন ‘বকরা’ পায় না। অনেকে তাদের বিবাহকালে একটা মাত্ৰ বাছুর দিয়ে থাকে। আর ভিন্ন হ’বার সময় কুমারী কন্যা থাকলে তাকেও একটা বাছুর দিতে হয়। ভিন্ন হইবার সময় অবিবাহিত ছেলেরা গাই-বাছুরের দুভাগ পায় একভাগ বিবাহের নামে। বৌরা বিবাহের সময় যে সব গাইবাছুর পিতামাতার কাছ থিকে কিংবা শ্বশুরবাড়ী হ’তে পায় তাহার ভাগ হয় না; কিন্তু ছেলেরা যে সব গোধন বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ী হ’তে পায় তাহার ভাগ হ’য়ে থাকে।

(৩) স্বামী-স্ত্রীর সংসার—ঘর দুয়ার

ছেলে ও ছেলের বৌ বাপ মার সঙ্গে ভিন্ন হ’য়ে আলাদা নিজেদের ঘরবাড়ী তৈরি করে। মাঁঝির কাছে একখানা বাড়ী মেগে নেয়; হাঁড়ি ও ভাতের মণ্ড সকলকে বিতরণ করে থাকে। ছেলে জঙ্গল হইতে ছণ ও কাঠ কেটে আনে অথবা কারও কাছ থিকে কিনে নেয়; তারপর খুঁটি পুতে আড়া পাইর লাগিয়ে একখানা ঘর উঠায়। ছন দিয়ে চাল ছাইনি করে, আর চারদিকে বেড়া দিয়ে ঘিরে। আবার ভিতরে বেড়া দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কামরা করে। স্ত্রী মাটি গুলে বেড়াতে লাগিয়ে ঘরগুলিকে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে, আর মাটি দিয়ে চুলাও বানায়। স্বামী বাঁশের অথবা কাঠের দরজা তৈরি করে। ঘরের ভিতর দুখানা খাট, ছিয়া, ঝুড়ি, ঝাঁটা, চালনি, হাড়ি-পাতিল, হাতা, বাউলি, কোদাল, কুড়োল, দাও, লাঙ্গল-জোয়াল, চুরি, তীর-ধনুক, খাঁড়া, তরবারি ও ঢাক-ঢোল প্রভৃতি জিনিষ রাখে। গরীবের ঘরে খাঁড়া, তরবারি, কিংবা ঢাক-ঢোল থাকে না।

ঘরের ভিতর কতকটা অংশ পূর্ব্বপুরুষদের নামে গুপ্তভাবে রাখে; সেখানে অন্য পরিবারের কোন লোক প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে একটা বেদীর মত থাকে; সেটাকে পূর্বপুরুষদের পীঠস্থান ব’লে নির্দেশ করা হয়। টাকাপয়সাও ভিতরে থাকে। ঘরের পেছনে জায়গা রাখে; সেখানে জন্দ্রা চাষ করে। ঘরের সামনে উঠান থাকে; উঠানের চারিদিক্ বেড়া দিয়ে বন্ধ করা হয়; কেবল দুই দিকে ছুটা দুয়ার থাকে। গাইবাছুরের জন্য পুরুষটি একটি স্বতন্ত্র গোশালা নিৰ্ম্মাণ করে; মেষ ছাগলের জন্যও একটা কামরা আর শুকরের জন্য একটা পৃথক জায়গা রেখে দেয়। মুরগী ও বিড়াল ঘরের ভিতরেই থাকে। কুকুর ঘর পাহারা দেবার জন্য পিড়াতে বসে থাকে।

(৪) স্ত্রী-পুরুষের পোষাক পরিচ্ছদ

পরিধানের জন্য পুরুষেরা একহাত ওসার আর পাঁচহাত লম্বা একখানা বস্ত্র ব্যবহার করে; আর গা ঢাকিবার জন্য পাঁচহাত লম্বা আর তিনহাত ওসার একখানা চাদর রাখে। ধনীলোকেরা পাঁচহাত লম্বা কাপড়ের একটা পাগড়ীও মাথায় জড়িয়ে থাকে। গরীব লোকেরা দুহাত লম্বা আর আঠহাত ওসার একখানা “কুপশি” (কৌপীন) পরিধান করে। অথবা আড়াই হাত লম্বা একহাত ওসার একখানা ধুতি কোমরে জড়াইয়া লজ্জা নিবারণ করে; শীতেরঋতুর জন্য তিনহাত পরিমিত একখানা সূতার চাদরও থাকে। মেয়েদের কেবলমাত্র দশহাত লম্বা একখানা শাড়ী থাকে; এতেই এদের সমস্ত শরীর ঢাকে। আট বছর পর্য্যন্ত ছেলেমেয়েরা উলঙ্গ থাকে; তারপর ছেলেরা একখানা “ভাগত্তা” বস্ত্র, আর মেয়েরা একখানা “পুটলি” শাড়ী পরে। পুরুষেরা সকলেই পাগড়ী বাঁধে, আর মেয়েরা খোপা বাঁধে। সকলেই চিরুণী দিয়ে মাথা আঁচরায়।

(৫) সাঁওতালদের আভরণ (অলঙ্কার)

প্রাচীনকালে সাঁওতালদের কোন অলঙ্কার ছিল না। একমাত্র কুলই এদের আভরণ ছিল। আজকাল কি পুরুষ কি স্ত্রী, ছেলে কি মেয়ে সকলেই মাকড়ি ব্যবহার করে থাকে। প্রাচীন সাঁওতালদের কেবল বালা ছিল; এতদ্ব্যতিরেকে তাদের অন্য কোন অলঙ্কার ছিল না। বুড়ো মেয়েদের চুড়ি, মালা, ও হাতে অঙ্গুরী থাকত।

পুরুষেরা আজকাল বালা, মালা ও অঙ্গুরী ব্যবহার করে থাকে; আর নাচবার সময় পায়ে নুপূর, ঘুঘরি, প্রভৃতি পরে এবং মাথায়ও নানাপ্রকার অলঙ্কার দিয়ে সাজায়। মেয়েরা চুড়ি, মল, বাঁক, পায়ের অঙ্গুরী, আউঠা, মালা, অঙ্গুরী, হাস-হাসলি, টাগা, বাজু, ও মাথায় অলঙ্কার পড়ে থাকে। ছেলেমেয়েরাও পায় ঘুঘড়ি কিংবা ঝুনকি পড়ে থাকে।

(৬) পুরুষদের কাজকৰ্ম্ম

ফাল্গুনমাস থেকে বৈশাখের শেষ পর্য্যন্ত সাঁওতালেরা ঘরে বসে কাটায়; এসময়ে পুরুষেরা নানাপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করে, এবং ঘরদুয়ারের জন্য উপকরণ সংগ্রহ করে। তখন লাঙ্গল-জোয়াল, মই, চড়কা চড়কি, কোদাল, কুড়াল, দা, খাড়া, তীর-ধনুক ও অন্যান্য অস্ত্রাদি তৈরি করে, কাপড় বুনে এবং খাট-পালঙ ছেয়ে থাকে। ঘরের জন্য কাঠ এনে ঘর মেরামত করে।

জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ভাদ্র পর্য্যন্ত চাষের সময়। এসময় ভোর হইতে দুপুর পর্য্যন্ত এরা মাঠে চাষ করে এবং জমির মধ্যে আল-বাতর নির্দ্দিষ্ট করে। প্রথমে দড়ি, গুন্ডালি, আর এরবা (নানারকম ডাল) বাইন করে; তারপর জান্‌হে, জন্দ্রা, বজরা, রহড়, ঘানথ্রা প্রভৃতি নানারকম ডালের চাষ করে। পরে ধান বাইন করে ও জন্দ্রা কুড়িয়ে নেয়। তারপর ধান রোপণ করিবার জন্য আবার জমিতে চাষ দেয় এবং ধানের চারা লাগায়। মেয়েরাও চাষের কার্য্যে পুরুষদের সাহায্য করে থাকে। এসময়ে শ্রাবণ মাসের ভিতরেই কাপাস ও তিল বুনে থাকে। ভাদ্র মাস মধ্যে সুরওজা ও চাষাবাদ হয়, জন্দ্রা তোলা হয়। মেয়েরা এই সব কাজে সাহায্য করে। ইড়ি, গুনডালি, এরবা প্রভৃতিও এসময়ে তোলা হয়। এতেও মেয়েরা সাহায্য করে। ছেলেরা মইএর কাজ করে। আশ্বিন মাসে জন্দ্রা উঠিয়ে ক্ষেতে সরিষা আবাদ করে। আর জানহে ও ভাদই ধান কেটে ঘরে তুলে। অগ্রহায়ণ মাসে খোলা তৈয়ার হয়। স্ত্রী-পুরুষ মিলে ধান মলে, বজরা ও তিল কাটে, ‘রহড়’ তুলে, ঘানঘ্রা ও সুরগুজব প্রভৃতি শস্য উঠায়। কেবল মেয়েরাই কাপাস তুলে থাকে। পুরুষেরা বলদ জুড়ে খোলাতে নানাপ্রকার মলনের কার্য্য করে। এইভাবে সকল রকম শস্য তৈরি ক’রে ঘরে তুলে। মাঘ মাসে সরিষা ও খড় চাষ হয়; তারপর চাষের কার্য্য শেষ হয়। .

এইসকল কাজ ছাড়া পুরুষেরা “সাউ”-দের (বণিকদের) সঙ্গে নানাপ্রকার কারবার করে থাকে। আর মাঁঝির খাজনাও দিয়া থাকে। স্ত্রী-পুরুষ মিলে নানাপ্রকার ফল থেকে তেল বের করে; তিল ও সরিষার তেল তৈরি করে না; সেগুলি বিক্রী করে দেয়। নিম, করঞ্জই প্রভৃতি ফল থেকে তেল তৈরি করে।

(৭) মেয়েদের কাজকর্ম্ম

মেয়েরা সব সময়ই কাজে ব্যস্ত থাকে। অতি প্রত্যূষে মোরগের ডাকের সঙ্গে সঙ্গে তারা ঘুম থেকে উঠে ধান বানুতে আরম্ভ করে। পরে ভোর হলে উঠানে গোবরলেপ দেয়, আর জল তুলে আনে। তারপর বাড়ীর পুরুষদের ও ছেলেপেলেদের বাসি পান্ত ভাত খেতে দেয়, এবং পরে নিজেরাও খায়। তারপর আগুন জ্বেলে ভাত ব্যঞ্জন রেধে থালায় থালায় বেড়ে দুপুর বেলা সকলকে খেতে দেয় ও নিজেরাও খায়। দুপুর বেলা হইতে বিকাল বেলা পৰ্য্যন্ত এরা নানাপ্রকার কাজে ব্যস্ত থাকে। কেহ কেহ জঙ্গল থেকে শাকপালা তুলে; কেহ কেহ লতাপাতা আনে; কেহ কাঠ আনে, কাটে; আর কেহ বা সূতা কেটে বিকাল বেলা জল তুলতে যায় আর কেহ বা চরকায় কাপাস তুলা পুরুষদের জন্য কাপড় বুনায়। রান্নার জন্য সব তৈরি করে। তারপর রাত দুই দণ্ডের সময়ে সকলকে খেতে দেয়; নিজের কিছু পরে খায়। এরা মাংস ক্বচিৎ খেয়ে থাকে। বেশীর ভাগ ভাত, ডাল, ও শাকসবজী খেয়ে থাকে। হলুদ, পানমৌরি, রসুন, তেল, ও লবণ মাংসের মসল্লা; হলুদ, মেথি, তেলনুন মাছের মসল্লা; ডাল ও শাকসবজীর মসল্লা কেবল নুন। খাওয়া দাওয়ার পর সকলে মিলে গল্প করে এবং কিছুক্ষণ পরে শুইতে যায়। চাষবাষের দিনে মেয়েরাও ধান রু’য়ে থাকে, জন্দ্রা তোলে, আর ধান বেনে চাল তৈরি করে। আশ্বিন মাসে ঘরদুয়ার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। এসবও মেয়েদের কাজ।

(৮) ছেলেমেয়েদের কাজ ও তাদের খেলা

ছেলেরা যে পর্য্যন্ত রাখালের কাজ না শিখে সে পর্যন্ত কেবল খেলা করে বেড়ায়। তারপর গ্রামের অন্যান্য ছোকরাদের সহিত ছাগল ভেড়া রেখে চরায়। ভোরবেলা গাই বাছুর খুলে দেয়, আর দুজন দুজন কিংবা তিনজন তিনজন মিলে এদের মাঠে চরায়; বাঁশী বাজায় ও পাখী শিকার করে। দুপুরবেলা ছাগল-ভেড়াগুলিকে খাওয়াইবার জন্যে ঘরে নিয়ে আসে, খাওয়ার পর আবার ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যাবেলা আবার এদের এনে খোয়াড়ে রেখে দেয়। দুপুরবেলা পুরুষেরা গাই দুয়ায়, ছেলেমেয়েদের দুধ খাওয়ায়। অবশিষ্ট দুধ রেখে জমিয়ে ঘি তৈরি করে। ঘির জন্য দুধ প্রথমে খুব জ্বাল দেয়; জ্বাল দিয়ে দই করে; দই মন্থন ক’রে মাখন তুলে, এবং মাখন গালিয়ে ঘি করে; ঘোল নিজেরাও খায়, এবং গরীবদেরও বিলিয়ে দেয়।

ছেলেরা মাটির গাড়ী তৈরি ক’রে খেলা করে; সময় সময় কাঠের গাড়ীও বানায়। এরা তীর-ধনুক বানিয়ে টিকটিকি প্রভৃতি মেরে থাকে। একটু বড় হ’লে তীর-ধনুক নিয়ে খেলা করে। ছোট মেয়েরা ছোট ছেলেপেলে কোলে ক’রে বেড়ায়, শাকসবজী তুলে, এবং মেয়েদের নানা কাজে সাহায্য করে থাকে। একটু বড় হ’লে জল আনে, পাতা আনে, এবং অন্যান্য কাজও করে থাকে। ছেলেবেলায় ধূলা দিয়ে ভাতব্যঞ্জন রেঁধেও খেলা করে। ছেলেবেলায় ছেলেরা ও মেয়েরা একত্র মিশে খেলা করে। কিছু বড় হ’লে সন্ধ্যাবেলা নাচ-গানও করে থাকে।

(৯) বুড়ো-বুড়ীর সুখ-দুঃখ

পুরাকালে বুড়োবুড়ীরা বেশ শান্তিতে ও সুখে থাকৃত; বুড়ো বুড়ীর কাজের লাঘব ক’রে দিত, আর বুড়ীও বুড়োর কাজে সাহায্য করে হালকা করে দিত। সন্ধ্যাবেলা দুজনে বসে নানারকম কাজের কথা বলত। আবশ্যক হ’লে বুড়ো বুড়ীকে বলত, “আজকাল বুঝে সুঝে চালাও, বড় টানাটানির দিন পড়েছে।” আবার বুড়ীও বুড়োকে বলত, “খরচের চেষ্টা দেখ; সব কিন্তু ফুরিয়েছে;” অথবা, “ছেলেপেলেদের কাপড় ছিঁড়ে গেছে, কি করে কাপড় চোপড় দিব?” অথবা “খোকা বড় হয়েছে, কনে খোঁজ কর না।” অথবা, কিছু ঘটনা হ’লে, “ছেলেপেলেগুলি কথা শুনে না, আমি কি করব? গাল দিলেও ভয় করে না।” অথবা, “ছেলেমেয়েদের জ্বর হয়েছে, কবিরাজকে হাত দেখাও!” বুড়োবুড়ীতে এইরূপ পরস্পর কথাবাৰ্ত্ত। হ’ত; দুজনে মিলেমিশে কাজ কৰ্ম্ম ক’রে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করত।

কিন্তু সময় সময় মেয়েরা বড় ‘খিচমিস্’ করে; সব সময়ে পুরুষদের সঙ্গে ঝগড়া করে, কড়া কড়া কথা বলে, ও মুখ ভার করে থাকে। পুরুষদের আর সুখ থাকে না; কোন সময়ে কথা উঠলে লোকে বলে থাকে, “অমুকের পরিবার বড় ঝগড়াটে।” কোনখান থেকে পুরুষের ফিরে আসতে একটু দেরী হ’লে পরিবার মুখ ভার করে থাকে, কড়া কড়া কথা ব’লে এবং যা তা ব’লে গাল দেয়। পুরুষ মেয়েদের সঙ্গে এটে উঠে না; কিন্তু সময় সময় রেগে স্ত্রীকে মারপিট করে। তারপর স্ত্রী নানাপ্রকার কুৎসিৎ ভাষায় পুরুষটাকে গালিগালাজ করে; ছেলেমেয়েগুলি ‘কাউমাউ’ করে কাঁদাকাটি করে, আর ছুটাছুটি ক’রে কাঁদাকাটি করে বলে “বাবু, বাবু, মাকে মেরে ফেলেছে!” তখন গ্রামের লোকজন এসে দুজনকে থামায় এবং দোষগুণ বিচার ক’রে দোষীকে শাস্তি দেয়। কতক কতক মেয়ে স্বভাবতঃ কুঁড়ে আর সংসারেয় জিনিষপত্র নষ্ট করে। কতক কতক পুরুষ ভীষণ রাগী, ‘খামাখা’ পরিবারকে ধরে ‘পিটায়, আর ভাততরকারি কিংবা কাজের খুটিনাটি দোষ বের করে পরিবারের সঙ্গে কেবল ঝগড়া করে। কেহ কেহ মদ খেয়ে মাতাল হয়ে জিনিষপত্র ভাঙ্গে চুরে। স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে এরূপ বিবাদ বিসম্বাদ হ’লে দুজনে ছাড়াছাড়ি হয়ে থাকে। বেশীর ভাগ পুরুষেরা স্ত্রী তালাক দেয়; কিন্তু অনেক সময় ছেলেপেলেদের মায়ায় স্ত্রীকে তালাক দেয় না। এসকল লোক বড় দুঃখে কাটায়।

(১০) শিশুদের সুখ-দুঃখ

বাপমা ‘খামাকা খামাকা’ ছেলেপেলেদের মারে না—খুব রাগলেও না। সময় সময় নিজেরা না খেয়ে ছেলেপেলেদের খাইয়ে থাকে। মার সামনে বাপ ছেলেদের মারতে সাহস করে না, মা বাধা দেয়। ছেলেপেলেদের শাস্তি খুব কম, তারা নিজেদের ইচ্ছামত থাকে; কোনও কথা দুএকবার না শুনলে বাপ-মা ক্ষমা করে থাকে। আর যদি কখনও তারা মার খায় তবে তারা আত্মীয়-স্বজনের কাছে গিয়ে নালিশ করে! তারা বাপ-মাকে ভর্ৎসনা করে এবং ছেলেপেলেদের নিজেদের বাড়ীতে রেখে দেয়; বাপ-মা এদিকে অনেক বাছাধন ব’লে ঘরে ফিরিয়ে আনে; এতে ছেলেপেলেদের সাহস বাড়ে। ছেলেপেলে বড় হলেও নির্ভয়ে দোষ করলে লোকে বাপ-মাকে মন্দ বলে কিন্তু এদের কিছু বলে না। ছেলেপেলেরা বশ না মানলে সাঁওতালদের বড় ‘জ্বালা’ পেতে হয়। ছেলেবেলায় পিতামাতার সম্মান না করলে পরে নিজেদের বেলা তাদের ছেলেপেলে তাহাদিগকে তেমনি সমানে সমানে দুষ্টুমি ক’রে পুরোপুরি শোধ তুলবে। সময় সময় বাপ-মা বিরক্ত হয়ে বলে, “ওহে বাপু, (অথবা) ওগো খুকী, আমরা না থাকলে হাঁড়ি ধু’বার জলও মিলবে না। আর ঘূর্ণিবায়ুর মত চারিদিকে ঘুরে বেড়াবে।

(১১) চাকর-চাকরাণী

যে সংসারে মানুষ কম সেখানেই চাকর-চাকরাণী রাখা হয়। আগে চারিদিকে সন্ধান নেওয়া হয়; পরে খবর পেলে চাকর কিংবা চাকরাণী কিংবা তাদের বাপ-মাকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। ভাত, ডাল, মদ প্রভৃতি খাওয়া হয়, তারপর কথাবার্তা ঠিক হয়। ছোকরা চাকর দুটাকা মাহিনা পায় অথবা শস্যের একভাগ পায়। চাকরাণীরা সাধারণতঃ একটাকা মাহিনা নেয়, অথবা চাকরদের মত শন্তের একাংশ নেয়। জল-বৃষ্টির দিনে চাকরেরা পোষাক পায়-পাঁচহাত একটা গামছা, আর একটা “ভাগত্তা”, চাকরাণীরা ঋতুবিশেষে কাপড়চোপড় পেয়ে থাকে।

চাকরেরা মনিবের আর চাকরাণীরা গিন্নীর কাজে সহায়তা করে। যে সকল চাকর ধনী মনিবকে কাজ দেখায়ে খুসী করতে পারে তারা বেশ সুখে থাকে। কিন্তু ধনী গিন্নীর বিরাগভাজন হ’লে চাকরদের ভারি কষ্ট হয়; খারাপ ভাত খেতে দেয়, আর স্বামীকে ব’লে চাকরকে শাসায়। ধনী গিন্নীর বড়মেয়ে থাকলে, সময় সময় চাকরকে ঘরজামাই ক’রে বিবাহ দিয়ে থাকে। গিন্নী খুসী থাকলে চাকর-চাকরাণীদের ভারি সুখ হয়; তাদের কোন কষ্ট হয় না।

রাখালের কাজের জন্য চাকর রাখলে তারা বৎসরে একটাকা মাহিনা আর পাঁচহাত লম্বা দুইখানা কাপড়, ও খোরাকী পেয়ে থাকে। চাষের সময় মজুর রাখলে তাদিগকে স্ত্রী কি পুরুষ উভয়কেই ভোরে দুপুরে খেতে দেওয়া হয়।

(১২) জ্বর-জ্বালা

স্বামী-স্ত্রীর কিংবা ছেলেপেলেদের অসুখ হ’লে কবিরাজকে ডেকে হাত দেখান হয়। কবিরাজ হাত দেখে বলে, “ভাল হয়ে যাবে। কিছু ঔষধপত্র খাওয়াও ভাল হবে।” রোগীকে বলে “তুমি ঔষধ খাবে?” তারপর জঙ্গলে গিয়ে ঔষধ এনে পিষে রস ক’রে রোগীকে খেতে দেয়। তিন চার দিন এরূপ ঔষধ খেয়ে রোগী না সারলে কবিরাজ বলে থাকে, “এ ঔষধে সকলেই ভাল হয়েছে, এ কেন ভাল হচ্ছে না! আর কাকে ও দেখাও।” তখন ওঝার ডাক পড়ে। ওঝা তেলখরি দিয়ে শালপাতায় গণনা করে। ওঝাকে বলা হয়, “আসুন বাবা, এই তেলপত্র দিয়ে গণে দেও।” ওঝা জিজ্ঞাসা করে “কার ব্যামো হয়েছে?” তখন বলা হয় “পরিবারের কিংবা কোন ছেলের।” ওঝা জিজ্ঞাসা করে, “তার নাম কি?” নাম বলা হয়। তারপর ওঝা গ্রামের নাম জিজ্ঞাসা করে; গ্রামের নামও বলা হয়। গ্রামের নাম জেনে ওঝা একটা পাতায় তেল ঢালে, আর গুরুর নামে মাটিতে তিনবার পাতার তেল ছিটিয়ে দেয়। তারপর আর একটা পাতা দিয়ে তেল ও পাতা ঢেকে ফেলে এবং মন্ত্র পড়তে থাকে। একঘণ্টা কাল এরূপে রাখা হয়; তারপর ওঝা সেগুলি মাটি থেকে নিয়ে প্রণাম করে, আর পাতা দুটি খুলে ফেলে। তখন গৃহস্বামী ওঝাকে জিজ্ঞাসা করে “কি দেখলেন,—উপদেবতা, না মানুষ ওঝা উত্তর করে “অমুক উপদেবতা তোমার উপর রাগ করেছে; তার বাতাস লেগেছে।” ওঝারা প্রথমে ডানের কথা বলে না। এরূপ ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের দুতিন জন ওঝা একমত হ’লে লোকটি বাড়ীতে এসে ঠাকুরের পূজা দিয়ে বলে, “সব ভাল করে দাও, আমি তোমাকে আরও পূজা দিব। “

পরে গ্রামের ওঝাকে ধরা হয়। সে দেবতার উদ্দেশ্যে বাইরে খড়ি ক’রে বলে “বাতাসের দেবতা অমুক তাঁকে মানত কর।” ওঝা কিছু আদা ও চাল নিয়ে পাতার উপর রাখে; তারপর রোগীর পায়ে ও হাতে জল স্পর্শ করায়, ও শরীরের চারিদিকে ঘুরায়। বাড়ীর পেছন থেকে কাটা এনে রোগীর উরুতে পাঁচ জায়গায় ফুরে এবং রক্তের সঙ্গে চাল মিশিয়ে দেয়। তার পর সেই চাল ও পাতার চাল একত্র ক’রে উপদেবতার উদ্দেশ্যে মন্ত্ৰ পড়ে বলে, “তবে দেখ, তুমি ফলনা ফলনা, মাঁঝির ঘরে লেগেছিলে, আজ তোমাকে মাছের মত—কাঁকড়ার মত ধরলাম; আজ থেকে এবাড়ী হ’তে ঢি করে চলে যাও, সব ভাল হউক, আমার গোঁসাই ঠাকুর!”

তারপর গ্রামপ্রান্তে গিয়া দেবতার পূজা দিয়ে বলে, “ওগো, গোঁসাই ঠাকুর তবে নেও, তুমি এখানে আছ গাছের কাণ্ডে, খুঁটিতে, জলে, গর্ভে, কন্দরে – যেখানেই থাক সেখান থেকে এসে দয়া কর।” তারপর শিকড় এনে বেটে তার রস রোগীকে খাওয়ান হয়; এতে রোগী ভাল হয়ত ভাল, না হয় ওঝা বলে ‘মাঁঝি পারাণিককে ডাক কে যেন আবার লেগেছে।”

(১৩) আত্মীয় কুটুম্ব

আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে পিতামাতা ছাড়া শ্বশুরবাড়ীর লোকদের সঙ্গে বিশেষ কুটুম্বিতা হয়। ছেলের বৌর ভাই কিংবা মামার উপরেও কর্তা গিন্নীর বিশেষ নজর থাকে; এ দুজনেই বেশীর ভাগ দেখাশুনা করে, খোজ খবর নেয়; এরা অতিথি হইলে মুরগী ও শূকর মেরে ও মদের আয়োজন করে অভ্যর্থনা করা হয়। এরাও উহাদের বেশ খাতির করে। জামাইর ভাই ও মামাকেও খাতির করা হয় বটে, কিন্তু ততটা নয়। মেয়ের নিজের স্বামীর ভাইদের বিশেষ অসম্মান করে না, কিন্তু তাদের প্রতি বিশেষ ভাব থাকে না; তবে কেবল লাভের জন্য আত্মীয়তা রাখে। বছর বছর আশ্বিনমাসে কর্তা ও গিন্নী খুব কাছে হ’লে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে; ঘরে বড় বেটাছেলে থাকলে দুজনেই যায়, অন্যথা কেবল কৰ্ত্তা একেলা যায়। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখাশুনা করার অর্থ এই—

“কেহ যেন বিস্তৃত না হয়। “

আত্মীয়-স্বজনের কারও অবস্থ। খারাপ হ’লে কর্তা ও গিন্নী উভয়েই তাদের সাহায্য করে থাকে, বিশেষ ভাব থাকলে খাদ্রব্য ও কাপড়-চোপড় দিয়ে থাকে। বাপ-মার উপর মেয়েদের বিশেষ টান থাকে। স্বামীস্ত্রীতে বনিবনাও না হ’লে, অথবা পুরুষ স্ত্রীকে গালাগাল করলে কিংবা মারলে স্ত্রী তার বাপ-ভাইয়ের নিকট গিয়া কান্না-কাটি করে, আর এরাও তার সঙ্গে এসে স্বামীকে বলে, “কেন বিয়ের সময় ত একে বলে রেখেছ”; বাপমার অনুমতি ছাড়া এরা কখনও জ্যোতিষের নিকট যায় না; জ্যোতিষের কাছে প্রতিকার না হ’লে এরা পাঁচ জায়গা থেকে লোক জোগাড় করে। সেজন্য বাপ—ভাইএর উপর মেয়েদের বিশেষ ভরসা থাকে।

(১৪) বুড়োবুড়ীর মৃত্যু

ছেলেদের বিবাহের পূর্ব্বে তাদের মা মারা গেলে ছুটকি সংসারে থাকলেও বাপ তাদের পৃথক ক’রে দেয়না। কিন্তু ছেলেরা বিবাহিত হ’লে, ইচ্ছা করলে বাপ তাদের পৃথক ক’রে দিতে পারে। গ্রামের পাঁচজন ডেকে ধনসম্পত্তি ভাগ করা হয়, বাপ একভাগ রাখে, আর ছেলেরা প্রত্যেকে এক এক ভাগ পায়। পুরুষ মরবার সময় যদি ছুটকির কোলে পুত্রসন্তান না থাকে, তবে বড়কীর ছেলেরা বাপের অবশিষ্ট অংশ পরে দাবী করতে পারে; এ অংশ নিলে ছোটমা মরলে তার শ্রাদ্ধ করতে হয়।

কোনও স্ত্রীলোক পুত্রসন্তান বিহীন হয়ে বিধবা হ’লে তার স্বামীর বাপ-ভাইরা সমস্ত সম্পত্তি পায়; স্ত্রীলোকটি কেবল একটা বাছুর, এক বস্তা ধান, একটা বাটি ও একখানা কাপড় পায়; আর সে বাপভাইদের বাড়ীতে চলে যায়। অনেকে নিজেদের ভাইপো কষ্টে পড়লে তাকে নিজের বাড়ীতে রেখে দেয়। বাপের বাড়ীতে যেতে দেয় না। এসব লোক নিতান্ত ভালমানুষ। যারা এরূপ ভাইবোনকে রেখে দেয় তারা পরলোকগত ঠাকুরদাদার সম্পত্তির একভাগ পায়, অবশ্য সব পায় না।

বিধবা মেয়ের মেয়ে সন্তান থাকলে মেয়েও মার সঙ্গে তার ঠাকুর দাদার ঘরে চলে যায়; তারা মা ও মেয়ে উভয়কেই ভরণপোষণ করে এবং এদের ধনসম্পত্তিও তত্ত্বাবধান করে। মেয়ে বড় হ’লে তার বিয়ে দেওয়া হয়; আর বিয়ের সময় বাপের নিকট যেমন মরজি চলে এদের কাছেও তেমনি অবদার চলে; মেয়ে মাকে মরণ পর্য্যন্ত নিজের বাড়ীতে রাখে। সেখানে না থাকলে নিঃসন্তান বিধবাদের মত, মা নিজের অংশ নিয়ে বাপের বাড়ীতে চলে যায়। অথবা আবার মেয়ের বাড়ীতে এসে থাকে।

‘বিধবার পুত্রসন্তান থাকলে সম্পত্তি তার নিজের হাতে রেখে দেয়। ছেলের ঠাকুরদাদা নজর রাখে যেন সে সম্পত্তি নষ্ট না করে। ছেলের বিবাহের পূর্ব্বে মা সাঙ্গা বসলে ঠাকুরদাদা ছেলেকে ও তার ধনসম্পত্তি রেখে দেয়; হকমত ছেলের মা কিছুই পায় না। অনেকে খুসী হ’য়ে শ্রাদ্ধের জন্য একটা মাত্র বাছুর দিয়ে থাকে। “ওয়ারিশ” আইন এই প্রকার;-ছেলের বাপ ছেলের সম্পত্তির অংশ পায়; বাপ না থাকলে সোদর ভাই সে অংশ পায়; এরা না থাকলে কিংবা মরে গেলে এদের পুত্রসন্তান, এমন কি এদের ভাইপোরাও সে অংশ পেয়ে থাকে। আর এরা কিংবা এদের ছেলেমেয়ে না থাকলে মৃত ব্যক্তির কাকাখুড়ো কিংবা তাদের ছেলেরা তার অংশ পায়। আর যদি কোন ওয়ারিশ না থাকে তবে দেশের রাজা সম্পত্তির মালিক হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *