শব্দের নাম বিষ
অফিসে বেরোবার আগে খবর শোনাটা সীতানাথের বরাবরের অভ্যেস। তাই ভিটামিন ‘এ’, দু-চামচ ভিটামিন ‘সি’ ও চার চামচ প্রোটিন সাধারণত তিনি খেয়ে থাকেন। ঊর্মিলা জানে তাঁর অভ্যেস। তাই প্লেটে করে সেইটুকু গুঁড়ো খাবারই সাজিয়ে দিয়েছে। টাইয়ের নটটা ঠিক করে নিয়ে প্রথম চামচ ভিটামিন মুখে তুলতেই টিভিতে খবর শুরু হল। প্রথম খবরটা একটা দুর্ঘটনার, একটা জেট প্লেন কোনও এক অজানা কারণে এক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর ভেঙে পড়েছে। দ্বিতীয় খবরটা শুরু হওয়ার মুহূর্তে ঘরে এসে ঢুকল সুমন— সীতানাথের একমাত্র ছেলে। বছর বারো বয়েস। প্রথমে বাবার দিকে দেখল সুমন, তারপর তাকাল টিভির দিকে। গম্ভীর মুখে বলল, ‘বাবা, টিভির ভলিয়ুমটা একটু আস্তে করে দিচ্ছি। তুমি বড্ড জোরে চালিয়েছ। কম করে নব্বই ডেসিবেল তো হবেই—’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘এতে তোমার ক্ষতি হতে পারে—।’
সীতানাথের ভিটামিন ‘সি’ সমেত চামচ মাঝপথেই থেমে গেল। মুখ পর্যন্ত পৌঁছোল না। কোনও উত্তর তিনি ভেবে পেলেন না। দেখলেন, সুমন পায়েপায়ে এগিয়ে গিয়ে টিভির ভলিয়ুমটা কমিয়ে দিল। তারপর ঘর ছেড়ে চলে যেতেযেতে বলে গেল, ‘আর ভয় নেই। এখন ষাট ডেসিবেলের নীচেই আছে—।’
সীতানাথ নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন। সত্যি, সুমনটা ভারি অদ্ভুত হয়ে উঠছে দিনকে দিন। মাস কয়েক হল এই ‘শব্দ’ ব্যাপারটা ওর মাথায় ঢুকেছে। দোষটা অবশ্য সীতানাথেরই। তিনিই প্রথম ওকে ‘শব্দকল্প’ নামে একটা বই কিনে দেন, সুমনের জন্মদিনের উপহার। সে-বইতে শব্দের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকের কথা লেখা ছিল। বইটা সুমনের প্রচণ্ড মনে ধরে যায়। তখন থেকেই ও ইস্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে দিনরাত্তির শব্দ নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে। ওর কাছেই সীতানাথ প্রথম শিখেছেন, জিনিসপত্র যেমন ওজন করে মাপে ঃ এক কেজি, দু-কেজি, তেমনি শব্দ মাপে ‘ডেসিবেল’ দিয়ে : পাঁচ ডেসিবেল, দশ ডেসিবেল…। তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, একদিন অফিসে বেরোবার ঠিক আগে সুমন এসে ঘরে ঢুকল। বলল, ‘বাবা, তোমার অফিসে যাওয়ার পথে রাস্তায় ভীষণ হই-হট্টগোল না?’ হয়,
ব্যাপারটা সীতানাথ আগে কখনও চিন্তা করে দেখেননি। সাধারণত পাতাল রেলে করেই তিনি অফিসে যান; খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে তবেই হেলিকপ্টার ট্যাক্সি। সুতরাং, অফিস যাওয়ার পথে বিরক্তিকর শব্দ যে বেশ কিছু শুনতে হয় তা অস্বীকার করা যায় না। অবশ্য অফিসে পৌঁছে গেলে আর চিন্তা নেই। তুখোড় হিসাবশাস্ত্রবিদ সীতানাথ সেন এইথ্ জেনারেশন কম্পিউটার নিয়ে বসে যান কোম্পানির লাভ-ক্ষতির খতিয়ান কষতে। সেখানে সবকিছু শান্ত, চুপচাপ— কোনও গোলমাল নেই।
সুতরাং বারো বছরের ছেলের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেছেন, ‘হ্যাঁ, গোলমাল-হট্টগোল একটু হয়। টিউব রেলের শব্দ, হেলিকপ্টারের শব্দ, জেট প্লেনের শব্দ…।’
‘তুমি তা হলে এক কাজ করবে,’ উৎসাহ ভরা চোখে সুমন বলেছে, ‘খুব জোরে কোনও শব্দ হলেই কানে হাত চাপা দেবে। বিজ্ঞানীরা বলেন এর চেয়ে ভালো ওষুধ নাকি নেই—’ কী ভেবে সুমন আবার বলেছে, “ঠিক আছে, দাঁড়াও, তোমার জন্যে আমি একটা ‘ইয়ার প্রোটেক্টর’ বানিয়ে দেব। তাহলে যতই শব্দ হোক, তোমার কানে কিচ্ছু হবে না।’
সীতানাথ আর পারেননি, হেসে উঠেছেন। বলেছেন, “ঠিক আছে, দিয়ো। এখন যাও, পড়তে বোসো গিয়ে।’
তখন ব্যাপারটাকে অত গুরুত্ব দেননি সীতানাথ। সুমনের ছেলেমানুষি ভেবেছেন। কিন্তু ক্রমে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে লাগল। ওর শোওয়ার ঘরটাকে এক অদ্ভুত ঘরে পরিণত করল সুমন। স্টিরিয়ো, স্টিরিয়ো রেডিয়ো, অ্যাম্পলিফায়ার, অসিলেটর ইত্যাদি ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ঘরটাকে ভরিয়ে ফেলল। এ-সবই নাকি শব্দ তৈরির যন্ত্র। বিভিন্ন ধরনের শব্দ নিয়ে এসব যন্ত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো যায়। মাথায় হেডফোন লাগিয়ে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই সুমন ওই ঘরে পড়ে থাকতে লাগল।
পড়াশোনা উঠল শিকেয়।
প্রথম-প্রথম ঊর্মিলা অনুযোগ করত, সুমন একটুও লেখাপড়া করছে না। কিন্তু সীতানাথকে নির্বিকার দেখে সে-ও চুপ করে গেছে। তবে ঘটনা কিছুই সীতানাথের নজর এড়ায়নি। তাই একদিন অফিস থেকে ফিরে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সল্যুশন দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সময় সুমনকে তিনি ডাকলেন। সুমন এল। সীতানাথ প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার মা বলছিল, তুমি নাকি একটুও পড়াশোনা করো না?’
‘করি তো—’ মাথা নীচু করে জবাব দিল সুমন।
‘শব্দ নিয়ে আজকাল তুমি এসব কী শুরু করেছ?’ রুক্ষ স্বরে জানতে চাইলেন সীতানাথ।
‘শব্দ’ কথাটা শুনে সুমনের মুখ-চোখ ঝকমক করে উঠল। বলল, ‘বাবা, তুমি যে শব্দের বইটা জন্মদিনে কিনে দিয়েছ, ওটা দারুণ চমৎকার। জানো, সব থেকে কম যে শব্দ আমরা কানে শুনতে পাই—মানে জিরো ডেসিবেল—তাতে আমাদের কানের পরদা কতটুকু কাঁপে? এক সেন্টিমিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ। দুটো ঘাসের শিষ ডগায়-ডগায় ঠেকালেও ওইরকম শব্দ পাওয়া যায়।’
‘আমি তোমার কাছ থেকে এসব শুনতে চাইনি।’ গম্ভীর হয়ে বললেন সীতানাথ, ‘এখন মন দিয়ে লেখাপড়া করার বয়েস — তাই করো। তোমার ঘরের ওই সব ছাইপাঁশ আমি সমস্ত ধরে মেটাল ইভাপোরেটর-এ ফেলে দেব!’
‘বাবা, এই যে তুমি এখন রেগে যাচ্ছ, তার কারণ কী জানো? সারাদিন ধরে তুমি এত বিরক্তিকর শব্দ শোনো—একশো, একশো কুড়ি ডেসিবেলের শব্দ তো হবেই; আর, সেইজন্যে অল্পতেই সবার ওপরে বিরক্ত হয়ে ওঠো। জানো, একশো পঞ্চাশ ডেসিবেলের শব্দ শুনলে মানুষ কালা পর্যন্ত হয়ে যায়?’
আর সহ্য করতে পারেননি সীতানাথ। সজোরে এক চড় কষিয়ে দিলেন ছেলের গালে। চিৎকার করে উঠলেন একই সঙ্গে, ‘অসভ্য, ইতর ছেলে কোথাকার! ভদ্রভাবে কথা পর্যন্ত বলতে শেখোনি? তোমাকে এই শেষবারের মতো—।’
সীতানাথের কথা শেষ হওয়ার আগেই ঊর্মিলা বেরিয়ে এসেছে পাশের ঘর থেকে।
‘কী হল, তুমি আবার হঠাৎ রেগে উঠলে কেন? সুমন, যা শিগগির তোর ঘরে গিয়ে বই নিয়ে বোস!’
সুমন চলে গেলে নীচু গলায় ঊর্মিলা বলল, ‘তুমি অল্পতে এত রাগ কোরো না। সুমন কাল বলছিল, বেশি বাজে শব্দ কানে গেলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়, হার্ট খারাপ হয়। তোমার তো আবার দুটোরই দোষ আছে।’
সীতানাথ নিশ্চুপ হয়ে স্ত্রীর মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন, তারপর সটান গিয়ে শুয়ে পড়লেন বিছানায়। অসহ্য। ভাবলেন তিনি।
ঊর্মিলা ঘরে ঢুকতেই চমক ভাঙল সীতানাথের। ভিটামিন ‘সি’র চামচ এখনও তাঁর মুখের সামনে ধরা। সুমনটাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। নইলে দিনের পর দিন যেভাবে বেয়াড়া হয়ে উঠছে তাতে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো হাতের বাইরে চলে যাবে। সীতানাথের দুশ্চিন্তা ঘন হয়ে ওঠে।
‘সে কী, তোমার এখনও খাওয়া হয়নি? অফিসের যে দেরি হয়ে যাবে।’ কথাগুলো বলে সীতানাথকে একদৃষ্টে দেখতে থাকে ঊর্মিলা। শেষে ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারল। বলল, ‘সুমনের ওপর আজকাল তুমি কথায়-কথায় রাগ করো। এমনকী আমাকেও রেহাই দাও না। তোমার কী হয়েছে বলো তো?’
স্ত্রীর কথার কোনও উত্তর না দিয়ে খাওয়ার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লেন সীতানাথ। সুইচ ঘুরিয়ে টিভি সেট অফ করে দিলেন। অফিসে বেরোবার সময়তেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। ভাবলেন তিনি।
‘সুমন আজকাল আমাদের ‘লাকি’কে নিয়ে কীসব পরীক্ষা করছে।’ নরম গলায় বলল ঊর্মিলা। প্লেট-চামচ সব গোছাতে শুরু করল অভ্যস্ত হাতে। লাকি সীতানাথের পোষা অ্যালসেশিয়ান। অত্যন্ত প্রিয়। জুতোর ফিতে
বাঁধতে-বাঁধতে ভুরু কুঁচকে তাকালেন সীতানাথ। প্রশ্ন করলেন, ‘কী পরীক্ষা?’ ঊর্মিলা বিরক্তিভরে বলল, ‘ওর ঘরের সব যন্ত্রপাতির একটা সুইচ বসিয়েছে ঘরের বাইরে। ওই লাকিকে ঘরে বন্দি করে বাইরে থেকে ওই সুইচটা টিপে দেয়। তারপর মিনিট পাঁচেক বাদে কুকুরটাকে বের করে আনে। আমি বারণ করতে গেলে শোনে না। বলে, “এক্সপেরিমেন্ট করছি। শব্দের হাত থেকে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। জানো, মা, প্রতি বছরে বিরক্তিকর শব্দের জোর এখানে এক ডেসিবেল করে বাড়ছে! তাহলে ভাবো তো, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে, দুহাজার একাত্তর সালে, কী অবস্থাটাই না হবে! কেউ আর কানে শুনতে পাবে না!” ’ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে-যেতে ঊর্মিলা বলল, ‘আমি বাবা বিজ্ঞানের অত মারপ্যাঁচ বুঝি না; তবে ক’দিন ধরে দেখছি লাকি তেমন করে খাওয়া-দাওয়া করে না, সবসময়েই বসে-বসে ঝিমোয়।’
সীতানাথ কোনও উত্তর দিলেন না। অফিসে রওনা হয়ে গেলেন। অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে পা দিতেই বাড়ি-ফাটানো এক বিরক্তিকর শব্দ সীতানাথের কানে আছড়ে পড়ল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাগিদে তিনি আজ হেলিকপ্টার ট্যাক্সিতে ফিরেছেন। সুতরাং হেলিকপ্টারের একঘেয়ে গোঁ-গোঁ শব্দের পর এই গোলমাল তাঁকে ভীষণ বিরক্ত করল। চেঁচিয়ে ঊর্মিলাকে ডাকলেন তিনি। ঊর্মিলা আসতেই ফেটে পড়লেন সীতানাথ, ‘কী হচ্ছে এসব? সারাদিন পরিশ্রমের পর বাড়িতে ফিরেও কি এতটুকু স্বস্তি পাওয়া যাবে না??
এতক্ষণ রান্নাঘরে আধুনিক রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত ছিল ঊর্মিলা। সেও উঁচু গলায় জবাব দিল, ‘তা আমি কী করব? তোমার আদরের ছেলে, তুমিই বলো। আমার কথা শুনলে তো হতই!’
এমন সময় হট্টগোল থামল। তার একটু পরেই ঘরে ঢুকল সুমন। পিছনপিছন লাকি। কুকুরটা কেমন নির্জীবভাবে টলতে-টলতে হাঁটছে—যেন এক্ষুনি পড়ে যাবে কাত হয়ে।
হঠাৎই প্রচণ্ড চিৎকার করে সীতানাথ বলে উঠলেন, ‘লাকিকে নিয়ে কী শুরু করেছ তুমি?’
‘এক্সপেরিমেন্ট।’ শান্ত স্বরে উত্তর দিল সুমন।
আরও রেগে গেলেন সীতানাথ। বললেন, ‘তোমাকে কতদিন বারণ করেছি যে—।’
বাবাকে বাধা দিয়ে বলে উঠল সুমন, ‘তুমি যে সামান্য কারণে রেগে উঠছ, তার কারণ তোমার সারাদিন শোনা গোলমালের শব্দ। এই যে তুমি আমাকে বুঝতে চাও না, আমি তোমাকে বুঝতে পারি না—এরও কারণ ওই একই। আর তুমি যে আজকাল মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করো, তাও একই কারণে—বিজ্ঞানীরা তাই বলেন।’
যেন ভিসুভিয়াস ফেটে পড়ল ঘরের মধ্যে। ছেলেকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি হাত-পা চালাতে লাগলেন সীতানাথ। সুমনের চুলের মুঠি ধরে নিয়ে চললেন ওর ঘরে। কিল-চড় মারতে মারতে বললেন, ‘লাকিকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা! চলো, আমিও তোমার ওপর এক্সপেরিমেন্ট করব। মুখে যা আসে তুমি তাই বলবে! এতদূর সাহস!’
সুমনকে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজায় শিকল তুলে দিলেন সীতানাথ। তারপর দরজার পাশে বসানো যন্ত্রপাতির সুইচটা ‘অন’ করে দিলেন। সঙ্গে-সঙ্গে ঘরের ভেতরে শুরু হল শব্দের তাণ্ডব। সুমনের চিৎকার ও ঊর্মিলার চিৎকারে সবকিছু কেমন গুলিয়ে গেল সীতানাথের। কিছুক্ষণ আচ্ছন্নের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। সংবিত ফিরতেই দেখলেন, সুইচ ‘অফ’ করে ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে ঊর্মিলা। ‘সুমন! সুমন!’ বলে ডাকছে। হাজার হলেও মায়ের মন তো!
আচ্ছন্ন পায়ে টলতে টলতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল সুমন। দু-চোখে অর্থহীন শূন্য দৃষ্টি। হঠাৎই ও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল, তারপর হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করল। আর সামনে দাঁড়ানো সীতানাথ ও ঊর্মিলাকে বারবার করে বলতে লাগল, ‘তোমরা কে? আমার মাকে আর বাবাকে একটু ডেকে দেবে?
দাও না ডেকে! ওরা জানে না, গোলমালের শব্দ থেকে পৃথিবীর কী ক্ষতি হতে চলেছে। পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। যে করে হোক…।’ আবার হাসতে শুরু করল সুমন।
ঊর্মিলা ডুকরে কেঁদে উঠল। সীতানাথ অনড়-অচল। কিন্তু পরক্ষণেই চেতনা ফিরে পেলেন তিনি। ছুটে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন সুমনকে। রুদ্ধ স্বরে বলতে লাগলেন, ‘সুমন! সুমন রে! এ আমি কী করলাম? তোর কথাই ঠিক। শব্দের মধ্যে বিষ লুকিয়ে আছে। এ-বিষ থেকে আমাদের বাঁচতে হবে, সবাইকে বাঁচাতে হবে।’
সীতানাথ হতবুদ্ধি ছেলেকে আকুলভাবে আদর করছিলেন। যে করেই হোক সুমনকে তিনি সুস্থ করে তুলবেন। হিসাবশাস্ত্রবিদ সীতানাথ সেনের সমস্ত হিসেব কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল।