প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড

রুদ্রপ্রয়াগের চিতা বিষয়ে সমসাময়িক সংবাদ

রুদ্রপ্রয়াগের চিতা বিষয়ে সমসাময়িক সংবাদ

 দি পায়োনীয়র : ২৫.১২.১৯২৫
 ইউ, পি, কাউনসিল
নরখাদক চিতা

গাড়োয়াল জেলার রুদ্রপ্রয়াগ অঞ্চলে একটি নরখাদক চিতা প্রচণ্ড দৌরাত্ম্য শুরু করেছে। এই ব্যাপারটির বিশেষ কিছু খুঁটিনাটি শ্রী মুকুন্দীলাল জানতে চান। উত্তরে মিঃ বার্ন এই বিবৃতিটি দেন:–”মনে হয় যে একটি জানোয়ারই এই সব কিছুর জন্য দায়ী, এবং দেখা যায় যে এ-পর্যন্ত চিতাটা ১১৪ জন মানুষ মেরেছে। এই আপদ-নিধনে সবরকম চেষ্টাই করা হয়েছে। ষোলজন পেশাদার শিকারী নিয়োগ করা হয়েছে, বিষেরও বহুল-ব্যবহার হয়েছে। জেলা-কর্তৃপক্ষের সৌভাগ্য, যে এই চিতা নিধনে, তাঁদের প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে অক্টোবর থেকে, শিকারে বহু-অভিজ্ঞ ও সাহসী একজন ইউরোপীয় ভদ্রলোক নিজের থেকে এগিয়ে এসেছেন। ভদ্রলোক তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কিন্তু তার অভিজ্ঞতার একটি রোমাঞ্চকর বিবরণী সরকারের কাছে আছে। সেটি শীঘ্রই খবরের কাগজগুলিতে পাঠানো হবে, এবং একটি অনুলিপি মাননীয় সদস্যের কাছে যাবে। কৃতকার্যতার জন্য যে-বিরতি প্রয়োজন, তারপর আবার শুরু হবে ওই একই ধরনের প্রচেষ্টা। এ-পর্যন্ত যে-সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার ফলে অনেকগুলি চিতা প্রাণ হারিয়েছে, কিন্তু বিশ্বাস করার কারণ আছে যে নরখাদক-চিতাটি এখনও জীবিত। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে মোট ১,৫১৮ টাকা আট আনা।

দি পায়োনীয়র : ২৫.১২.১৯২৫
ইউ, পি, কাউনসিল


নরখাদক চিতা
শতাধিক ব্যক্তি বলি
গাড়োয়ালের আপদ-নিধনে শিকারীর প্রচেষ্টা
ব্যর্থ প্রথম-প্রয়াস

বুধবার ইউ,পি. কাউন্সিলে গাড়োয়াল জেলার রুদ্রপ্রয়াগে একটি নরখাদক চিতার দৌরাত্মের উপর একটি প্রশ্নের উত্তরে মিঃ বার্ন জানান যে, মনে হয় একটি জানোয়ারই এই সবকিছুর জন্য দায়ী, এবং দেখা যায় যে এ পর্যন্ত চিতাটি ১১৪ জন মানুষ মেরেছে। এই আপদ-নিধনে সব রকম চেষ্টাই করা হয়েছে। যোজন পেশাদার শিকারী নিয়োগ করা হয়েছে, বিষের বহুল ব্যবহার হয়েছে, এবং জেলা-কর্তৃপক্ষের সৌভাগ্য যে এই চিতা নিধনে তাদের প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে, অক্টোবর থেকে শিকারে বহু-অভিজ্ঞ ও সাহসী একজন ইউরোপীয় ভদ্রলোক নিজের থেকে এগিয়ে এসেছেন। ভদ্রলোক তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কিন্তু তার অভিজ্ঞতার একটি রোমাঞ্চকর বিবরণী সরকারের কাছে আছে। সেটি শীঘ্রই খবরের কাগজগুলিতে পাঠানো হবে।

রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটিকে মারার প্রচেষ্টার বিবরণী-সংবলিত একটি চিঠির এই অংশগুলি সংযুক্ত-প্রদেশ সরকার পাঠিয়েছেন :

 “পৌঁছেই আমি পাটোয়ারীর সঙ্গে কথা বলে যখনি শুনি যে শেষ মানুষটি মারা পড়েছে কেতরিতে, বাকি দিনটা আমি নদীর পশ্চিমপাড় তল্লাসীতে কাটাই। ওই জায়গাটার নাম বুলা রোড। সেখানে দেখলাম একটি চিতার দুদিনের পুরনো আঁচড়ের দাগ। পরদিন সকালের মধ্যে আমি চারটে ছাগল যোগাড় করলাম। বিকেলে কুলা রোড বরাবর জায়গা বুঝে ওগুলোকে বেঁধে দিলাম। যেখানে জঙ্গলের পথ ঝুলা রোডে এঙ্গে মিলেছে, সেখানে বাঁধা ছাগলটিই ছিল আমার আশার কেন্দ্রস্থল। জায়গাটি সেতুর থৈকে একটু দূরে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা গেল, ওর কাছাকাছি একটা গাছের ওপর আমি বসে রইলাম। পরদিন সকালে (১৩ই) ফিরে গিয়ে দেখিছাগলটি নিহত এং তার অর্ধেকেরও বেশি খেয়ে গেছে। দেখলাম যে সুতোর দড়িটাকে ছিঁড়ে ছাগলটাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বিস্তর চেষ্ট করা হয়েছে কিন্তু শেষ অবধি চিতাটা দড়ি ছিঁড়তে পারে নি। দড়ি ছিঁড়ে মড়িটাকে মিয়ে যেতে পারে, আমি তা চাইনি তিনটি ছাগলকে চিতার স্পর্শও করেনি। নরখাদক চিতাটিই ছাগলটাকে মেরেছে এই আমার বিশ্বাস বিশ্বাস ছাড়া আমার কাছে অন্য কোনো প্রমাণ ছিল না। আমার বিশ্বাসের যথার্থ প্রমাণ করার একটি মাত্র উপায় চিতাটির জন্যে বসে থাকা।

প্রস্তুতি

মড়িটার ওপরে আর নিচে ঘন জঙ্গল। সাধারণ একটি চিতা হলে, নিয়ম মত সূর্যাস্তের সম-সম কালে আসবে। নরখাদক চিতাটি হলে হয় দেরি করে আসরে, নয়ত আসবেই না। রাত ৯-টা অবধি কিছুই ঘটুল। তখন, ৯-টার সময়ে, কি একটা জানোয়ার মড়ির কাছের রাস্তার ওপর লাফ দিয়ে পড়ল আর তার ধাক্কায়, আমি যে-গাছটার ওপর বসেছিলাম, সে-দিকে একটা পাথর গড়িয়ে এল। জানোয়ারটা কয়েক মিনিট মড়িটার কাছে রইল। মনে হল শুঁকল। তারপর সাঁকোর দিকে চলে গেল। তখন বেশ অন্ধকার, কিছু দেখতে পাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। তবে, তা হবে জেনেই মড়িটার কাছে বেমার গাছ ছড়িয়ে দিয়েছিলাম বলে, জানোয়ারটার গতিবিধি টের পাচ্ছিলাম। (বেমার এক জাতীয় ছোট গাছ। তাতে শিমের মত দানা হয়। বছরে এই সময়ে গাছগুলো শুকিয়ে যায়। ফলে সামান্য ছুঁলেই খড়খড় করে শব্দ হয়।) সে-রাতে নরখাদকটা সাঁকো পেরিয়ে ওপারে চলে যায়। যেখানে আগের ছাগলটা মারা পড়েছিল, সেখানে ১৪ তারিখ একটা ছাগল বাঁধা হয়। সেটাকে ও ছোঁয়নি।

বন্দুকের ফাঁদ

১৫ তারিখ আমি কেতরি যাবার, এবং ফিরতি-পথে শেতানন্দের ঝলা-পুলটি সরজমিনে দেখার জন্যে, বেরোলাম। কিন্তু মাঝ রাস্তা অবধি যাবার পর, মত পালটিয়ে রুদ্রপ্রয়াগ যাব বলে ফিরলাম। পুলটি থেকে মাইলখানেক দূরে পাটোয়ারীর পাঠানো একজন লোকের সঙ্গে আমার দেখা হল। পাটোয়ারী ওকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে, চুট্টিতে একজন মারা পড়েছে। প্রাতরাশের পর পাটোয়ারী, আর কানুনগোর সঙ্গে চার মাইল চড়াই-পথে চুট্টি রওনা হলাম। গ্রাম থেকে একুশে গজ দুরে খেতের বুকে বহে-যাওয়া একটি ছোট্ট নালার মধ্যে পড়েছিল মুড়িটা। বার-বার মড়িটার কাছে এসে, চিতাটা নালার ডান পাড়ে থাবার ছাপে একটা রাস্তাই করে ফেলেছে। এই পথের ওপর আড়াআড়ি আমার ২৭৫ আর ২৮ বোরের বন্দুক দিয়ে একটা ফাব পাতব বলে ঠিক করলাম। দুটা পাতার পর দেখলাম, বন্দুকের ঘোড়ার সঙ্গে রাঁধা সুতোয় যত জোরে চাপ দিলে ঘোড়া ছুটে ফায়ার হবে, চিতাটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তত জোরে চাপ দিয়ে থাবা ফেলবে না। কিন্তু ও যদি ডান দিকে মুখ করে থাকে, তখন যদি ওকে ভয় খাওয়াতে পারি, তাহলে ও তাড়া খেয়ে, হুড়মুড়িয়ে ফাঁদের ওপর এসে পড়বে সে-সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনার ওপরই ভরসা করে রইলাম। আমার .৪৫০-বোর বন্দুকটি নিশানা করার জন্যে একটা কিছু দরকার। তাই নালার যে-দিকা আমার কাছাকাছি, সে-দিকে মড়ি বরাবর একটি সাদা পাথর বসালাম। নালার যে-দিকটি নিরাপদ, সে-দিকে, মড়ি থেকে তিরিশ গজ দূরে একটি আখরোট গাছ। তার ডালের ওপর খড়ের গাদা। সেই গাদার মধ্যিখানে বসার জায়গা করে নিলাম।

সন্ধে ৬টার মধ্যে সব তোড়জোড় শেষ হল। সেটিক্যাচ-খোলা বন্দুকগুলো উলটোদিক থেকে চোখে পড়বে না এমনি ভাবে চিতার পথে আড়াআড়ি করে রাখা। শেষ বারের মত দেখে নিলাম কিছু ভুলে যাই নি তো! তারপর গাছে উঠে জায়গায় বসলাম। ৬-৩০টার সময়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হল। এক মিনিটে ভিজে জীব হয়ে গেলাম। অবশ্য তাতে খুব একটা এসে গেল না, কেন না চার মাইল চড়াই ভেঙেই আমি ভিজে গিয়েছিলাম। সাতটার সময়ে বৃষ্টি ধরল। দশ মিনিট বাদে মড়ির একটু নিচে একটা পাথর গড়িয়ে নালায় পড়ার শব্দ পেলাম, সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হল বৃষ্টি। বৃষ্টি এসেছে উত্তর দিক থেকে। আমার আগেই চিতাটার গায়ে বৃষ্টি লেগেছে। আমার খড়ের গাদার নিচে আশ্রয় নিতে আসার সময়ে তাড়াহুড়োয়, নালাটা যেখানে একটু চওড়া, সেখান দিয়ে এসেছে আর পাথরটা ওর থাবা লেগে গড়িয়ে পড়েছে। আমি গাছে ওঠার সময় নিচে কিছু খড় পড়ে গিয়েছিল। সেই খড়ের ওপর ও আরাম করে বসল।

চিতাটা ছফুটের মধ্যে

তারপর প্রায় এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় আমরা দুজনে পরস্পরের মাত্র ছ-ফুটের মধ্যে ছিলাম। সুবিধেটা ওর তরফেই, কেননা ও চলতে-ফিরতে পারছিল। ভিজতেও হয়নি ওকে, গরম-সরমে ছিল। আমাকে নিশ্ৰুপে থাকতে হচ্ছিল। পুরো ভিজে গিয়েছিলাম। আর যা ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল, জমিয়ে দিচ্ছিল আমাকে। সারা সময়টা ধরে এত সুন্দর উজ্জ্বল বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল, যে তেমনি আমি কখনো দেখিনি। একাধিক বার ভয় হয়েছিল গাছটার ওপর না বাজ পড়ে। ঝড় চলার মাঝামাঝি সময়ে শব্দ শুনে বুঝলাম আমাদের পঞ্চাশ গজ ওপর-পথ দিয়ে দু-জন লোক যাচ্ছে। অমন সময়ে বেরিয়েছে বলে ওদের সাহসের তারিফ করলাম। (পরে শুনেছিলাম ওদের মধ্যে একজন, ইলেকট্রিক টর্চ-সহ আপনার লোক)।

আটটার সময়ে ঝড় একদম থেমে গেল। তার একটু পরে চিতাটা লাফিয়ে নিচের মাঠে নেমে আবার নালাটা পেরোল এবং গত রাতের পথ ধরে মড়িটার দিকে এগোল। ও যাতে ফাঁদে পা দিয়ে গুলি খায় সে-বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্যে আমি বন্দুকের ঘোড়ার সঙ্গে দুটো করে সুতো বেঁধে দিয়েছিলাম। নিশ্চয় ওর মাথাটা দুটো সুতোর ফাঁকে ঢুকে যায়, ও নির্ঘাত ভয় পায় কেন না মড়ি ছেড়ে ও ছুটে পালাল আর ষাট-সত্তর গজ দূরে গিয়ে গর্জাতে লাগল। জানতাম কিছুক্ষণের মধ্যেই ও ভয় কাটিয়ে উঠবে। আধঘণ্টা বাদে সাদা পাথরটা হঠাৎ ঢাকা পড়ল। এ-রকমটা ঘটবে বলে আমি ভাবিনি। ভেবেছিলাম যখন ওর খাওয়ার শব্দ পাব, তখন নিশানা ঠিক করার জন্যে সাদা পাথরটার সহায়তা পাব। ওটা ঢাকা পড়লে, আমি যেখানে গুলি ছুঁড়তে চাই, তাক ঠিক করে তার কয়েক গজের মধ্যেও গুলি ছোঁড়া আমার পক্ষে অসম্ভব।

কিসমৎ”

সাদা পাথরটা যে-রকম আচমকা ঢাকা পড়েছিল, তেমনি হঠাৎ আবার নজরে এল। তার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমি শব্দে বুঝলাম, চোখেও দেখলাম চিতাটা সোজা আমার দিকে আসছে। এখন মনে হল, ও যখন মড়ির কাছে ফিরবে, ওকে গুলি করার ভাল সুযোগ পাব একটা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ও যে-পথে এসেছিল, সে-পথ দিয়ে ফিরল না। এর কুড়ি বা তিরিশ মিনিট বাদে পাথরটা যখন আবার ঢাকা পড়ল, ফের নজরে এল, আমি ঠিক করলাম একটা গুলি ছোঁড়ার ঝুঁকি আমি নেব। তৃতীয়বার ও যখন আমার নিচে দিয়ে যাচ্ছে, আমি ঝুঁকে পড়ে গুলি করলাম। ও যেখানে ছিল, সে জমিটা হয়তো দু-ফুট চওড়া। আমি গুলি করি ঠিক মাঝ-বরাবর। ওর ঘাড় থেকে কয়েক গাছা লোম খসে পড়ে, ওর এটুকু ক্ষতিই আমি করতে পারলাম—কিসমৎ! আপনার লোকটি যদি দু-ঘন্টা আগে এসেও পোঁছত!-ওই টর্চটা যেমন চেয়েছিলাম, তেমন করে কোনোদিন কিছু চাইনি, হয়তো আমি ওকে ঘায়েল করতে পারতাম-আবার সেই কিসমৎ।

রহস্যময় শব্দ

আমি আগেই বলেছি যে চিতাটাকে আমি দেখেছি, ওর শব্দও শুনেছি। তাই, জানোয়ারটার বিষয়ে আমার কি মনে হয়েছে, তা বলা উচিত। ওকে যে মেঘাঢাকা আকাশ ও অন্ধকার রাতেও দেখা গিয়েছিল, তা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, জানোয়ারটার গায়ের রং খুবই হালকা। ওকে খুব লম্বাটে বলে আমার মনে হয়নি, কিন্তু দেখে মনে হল বেশ গাঁট্টাগোট্টা আর শক্তিশালী গড়ন। ওর শব্দটাই হচ্ছে আমার এ-পর্যন্ত যত অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার মধ্যে আশ্চৰ্যতম। কোনো জানোয়ারের শরীরে শব্দ আমি এ-পর্যন্ত শুনিনি; কোনো মতেই ও-শব্দটা হিসেবে মেলাতে পারব না। তিরিশ গজ দূর থেকে শোনা গিয়েছিল, আওয়াজটা এত জোর। ঠিক যেন ঠাসবুনোটের রেশমী পোশাক পরে একটি মেয়ে হাঁটছে। খেতে কিছুদিন আগেই গম বোনা হয়েছে। একটি ঘাসের শিষ বা একটি পাতাও খেতে নেই। না, চিতাটা পা ফেলার জন্যে শব্দটা হয়নি। শব্দটা এসেছিল ওর শরীর থেকে।

আরো একটি প্রচেষ্টার পরিকল্পনা

চিতাটা যতক্ষণ নদীর এ-পারে আছে, ততক্ষণ তবু সুযোগ পাব বলে মনে হয়। কিন্তু নদী পেরোতে পারলে ও উধাও হয়ে যাবে। সেইজন্যে আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে পাটোয়ারীরদের নির্দেশ দিয়েছি চাপিপল পুল আর শোভানন্দ ঝোলা-পুল রাতে বন্ধ রাখতে। আশা করি এ জন্যে আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি নিজে যে পুলটি আগলাচ্ছি, সেটা বন্ধ রাখার জন্যে কাঁটাঝোঁপ আর একটি লণ্ঠন ব্যবহার করছি। এ অতি বাজে ব্যাপার হচ্ছে, কিন্তু কিছু একটা তো করা দরকার। আমি পুলের মুখে বসি, আর লম্বা দড়ি-লাগানো একটা শিকার-ধরা জাল পুলের মাঝবরাবর আটকানো থাকে। মতলবটা হল, চিতাটা যখন পুলের ওপরে, তখন তাকে গুলি ছুঁড়ে যদি লক্ষভ্রষ্ট হই, তা হয়তো হবও, তখন ওকে তাড়িয়ে জালের মধ্যে নিয়ে ফেলব। চিতাটা জালে পড়ার পর শুরু হবে আসল ঝামেলা। রাইফেল হাতে লোহার আড়াআড়ি পাটাগুলো বেয়ে নামা সম্ভব হবে না। অন্ধকারে যদি ছুরি দিয়ে কাজ সারতে হবে। গণ্ডগোল বেধে দুজনেই পুল টপকে পড়ে যাবার একটা সম্ভাবনা। অবশ্য এ-রকম ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা খুবই কম।

দি, পায়োনীয়র : ১৫..১৯২৬

 ‘রুদ্রপ্রয়াগের ভয়ঙ্কর’ বলে ইদানীং বহুখ্যাত নরখাদক চিতাটি শেষ অবধি নৈনিতালের গার্ষি হাউসের ক্যাপটেন জে করবেটের গুলিতে নিহত হয়েছে। গত সাত বছরে গাড়োয়ালের পশ্চিমাংশে ১২৫-জন মানুষ এই চিতাটির হাতে প্রাণ হারিয়েছে।

হিমালয় সম্বন্ধে যত আশ্চর্যকাহিনী শোনা যায়, এই চিতাটির জীবন-কথা আর মধ্যেও এক আশ্চর্যতম কাহিনী। এ কাহিনীর বিভিন্ন খুঁটিনাটির অনেক কিছুই ভয়াবহ এবং করুণ। সে কাহিনী যদি এমন তথ্যপ্রতিষ্ঠ না হত, তাহলে এর সত্যতা বিষয়ে সন্দেহ করা চলত। কাহিনীটির প্রথম কয়েকটি পর্যায় গত ডিসেম্বর মাসের ‘দি পায়োনীয়র’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে গত শরতে জানোয়ারটিকে মারার জন্য মিঃ একস্ (X)-এর (যাঁকে এখন ক্যাপটেন করবেট বলে প্রকাশ করা চলে) প্রচেষ্টার বর্ণনা ছিল। অন্তিম অধ্যায়টি এখন লেখা যায়। গাড়োয়ালের যে পশ্চিমাংশে চিতাটি তার দৌরাত্ম চালায়, সেখানে লোকবসতি তুলনামূলক ভাবে ঘন। প্রায় তিনশো পঞ্চাশ বর্গমাইল বিস্তৃত অঞ্চলে এই তাণ্ডব চলে। সেখানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ বাস করে। যে-জায়গাটির নামে চিতাটির নামকরণ হয়েছে, সেই রুদ্রপ্রয়াগ তেহরি রাজ্যের সীমান্তবর্তী একটি ছোট্ট জায়গা। অলকানন্দা ও মন্দাকিনী নদীর সঙ্গমে রুদ্রপ্রয়াগের অবস্থিতি। এই মিলিত নদীর ধারা হরিদ্বারের সমতলে পৌঁছে গঙ্গায় পরিণত হয়েছে। কেদারনাথ ও বদ্রীনাথের পবিত্র দেবপীঠে যাবার তীর্থপথের সংযুক্তিস্থলও এই রুদ্রপ্রয়াগ। জায়গাটিতে ঝোপজঙ্গল অনেক, আর রাস্তা কেটে সমতলে নামার পথে অলকানন্দার খরস্রোতা জল পাথরের গায়ে মৌচাকের খোপের মত অনেকগুলি গুহা এখানে সৃষ্টি করেছে। রুদ্রপ্রয়াগকে কেন্দ্র করেই চিতাটিকে মারার জন্য তৎপরতা চালানো হয়। অলকানন্দার পুব পাড়ে প্রায় বাইশ মাইল লম্বা ও আঠার মাইল চওড়া, এবং পশ্চিম পাড়েও অনুরূপ আয়তনের এলাকায় চিতাটি সন্ত্রাস সৃষ্টি করে।

১৯১৮ সাল থেকে চিতাটি মানুষ মারতে শুরু করে এবং উপদ্রুত এলাকায় তার হত্যালীলা নিয়মিত চলতেই থাকে। অবশেষে ১লা মে-তে চিতাটি নিহত হয়। সাধারণত চিতাটি বাড়ির ভেতর থেকে, বা বাড়ির দোরগোড়া থেকে শিকার ধরে নিতে যেত। গরমকালে তার তৎপরতা বেশি বেড়ে যেত, কারণ সেই সময়ে মানুষ রাতে ঘরের দরজা খুলেই রাখতে ভালবাসে। গত কয়েক বছরে চিতাটি সম্পর্কে এমনই বিভীষিকার সৃষ্টি হয়, যে দমবন্ধ ভ্যাপসা গরমেও মানুষ দরজা বন্ধ করে, প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে রাত কাটাত। গত দু-বছরে অন্তত তিনজন তীর্থযাত্রী চিতাটির হাতে প্রাণ হারিয়েছে। তবে চিতাটি সচরাচর তীর্থযাত্রীদের এড়িয়ে চলত। কারণ, প্রথমত এরা বেশ বড় দল বেঁধে চলে, আর আলোর ব্যবস্থা থাকার ফলে এদের আশ্রয়স্থলগুলি রাতে নিরাপদ।

রুদ্রপ্রয়াগের আপদটি বিষয়ে ‘দি পায়োনীয়রে’ পূর্ব-প্রকাশিত লেখাগুলিতে, উপদ্রুত অঞ্চলটিকে এই ভয়ঙ্কর বিভীষিকা থেকে মুক্ত করার জন্য যে অসংখ্য ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, যার সবই বিফল হয়, তার কিছু-কিছু খুঁটিনাটি জানানো হয়েছে। ষোল জন শিকারীকে সরকার টাকা দিয়ে নিয়োগ করেন। তারা চিতাটিকে মারার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন। জেলাতে ঢালাও বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। চিতাটির জীবনলীলা শেষ হবে এই আশায় সরকার বিশেষ ভাবে তৈরি একটি ফাঁদ এবং বিষও সরবরাহ করেন। দু-বার চিতাটি ধরা পড়ে,একবার ফাঁদে, একবার একটি গুহায়। ঘটনাস্থলে হাজির ভয়বিহ্বল লোকেরা, চিতাটাকে গুলি করে মারতে পারে এ-রকম বাছাই-করা লোকদের নিয়ে আসার জন্যে পাহাড় পেরিয়ে বহু মাইল দূরে-দূরে যখন লোকপাঠায়, তখন চিতাটা প্রতিবারই পালায়। ভারতের সমস্ত অন্যায়-অশুভর জন্যে সরকারকে দোষ দেওয়ার দিকে কয়েকটি নির্দিষ্ট মহলের বিশেষ প্রবণতা আছে। তাই, রুদ্রপ্রয়াগের চিতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে সরকারকে দোষারোপ করা হয়েছে। কিন্তু এ-ব্যাপারে যা-কিচ্ছু করা সম্ভব সরকার সবই করেছিলেন এবং পূর্ব বর্ণিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণে এই খাতে ১,৫১৮ টাকা আট আনা খরচ করা হয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর শ্বাপদের কবল থেকে গাড়োয়ালকে মুক্ত করার কাজে সরকারের অক্ষমতায় যে সংসদ-সদস্যরা মেজাজ দেখান, রুদ্রপ্রয়াগে গিয়ে জানোনায়ারটিকে খতম করার জন্যে তাদের নিজেদের আহ্বান জানানো হয়। বলাই বাহুল্য তারা সে-আহ্বানে সাড়া দেন নি। কম বক্তিয়ার লোকেরা কিন্তু বার-বার এ কাজের ঝুঁকি নিয়েছেন।

প্রায় বছর তিনেক আগে দু-জন সামরিক অফিসার চিতাটিকে মারার চেষ্টা করেন এবং বিভিন্ন ধরনের শিকারে বহু অভিজ্ঞ ক্যাপটেন করবেট গত বছর ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ই অক্টোবর অবধি এক নাগাড়ে চেষ্টা চালান। গাড়োয়ালের ডেপুটি কমিশনার এ. ডব্ল, ইবটসন যোগ্যতা ও উৎসাহের সঙ্গে তাঁকে এ-ব্যাপারে সহায়তা করেন। মিঃ ইবটসন, সরকারী কাজের বাইরে যতটা সময় পেয়েছেন, সবই এ-ব্যাপারে দিয়েছেন। কিন্তু আগেই যা বলা হয়েছে, চিতাটির সাবধানতা অনন্যসাধারণ। বন্দুকের ফাঁদ, জাঁতিকল, থাবার ছাপ অনুসরণ করে সযত্ন কড়া তল্লাশী, নিহত মানুষের মড়ি রেখে বসে থাকা, মড়িতে স্টিকনিন-আর্সেনিক সায়ানাইড বিষ-প্রয়োগ, এর কিছুতেই কিছু ফল হয় না। জানোয়ারটির অত্যদ্ভুত সতর্কতা, তার বিপদ আঁচ করার ক্ষমতা, আশ্চর্যভাবে পালিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ঘটনা বার-বার দেখা গেছে। তা থেকে ও-অঞ্চলের সরলচিত্ত অধিবাসীরা এই সিদ্ধান্তে আসে, যে চিটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তারা বিশ্বাস করে, এমন এক ভয়াল অপদেবতা চিতাটির ওপর ভর করে আছে, যাকে তাড়ানো মানুষের সাধ্য নয়।

আগেই বলা হয়েছে, যে ১৬ই অক্টোবরের পর কয়েক মাসের জন্যে চিতাটিকে ধাওয়া-করা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার কারণ হল, ক্রমাগত তাড়া খেতে-খেতে জানোয়ারটি আরো সতর্ক হয়ে উঠেছিল। আর, শীতকালে সে সাধারণত অধিক সংখ্যক লোকও মারত না। এই পরিকল্পনাই গৃহীত হয়। তারপর, গত ১৬-ই মার্চ মিঃ ইবটসন এবং ক্যাপটেন করবেট আবার রুদ্রপ্রয়াগের ছোট্ট রেস্টহাউসটিতে ফিরে এলেন এবং নরখাদকটির বিরুদ্ধে আবার অভিযান শুরু করলেন। ইতিমধ্যে তারা মামুলী মাচা, বন্দুকের ফঁদ এবং ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। যখন তারা রুদ্রপ্রয়াগে পৌঁছল, তখন নদীর ওপরের প্রতিটি পুল রাতে বন্ধ করা থাকছে, আরও বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে চলছে। এ-বছর ১৬ই মার্চের আগেই নরখাদকটি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। আবার জানুয়ারীতে সে মানুষ মারতে শুরু করে। তখন থেকে ১৬-ই মার্চের মধ্যে, তার হাতে পূর্বে নিহত একশো চোদ্দর সঙ্গে আরো আটজন নিহতের সংখ্যা যুক্ত হয়। ১৬-ই মার্চ থেকে শুরু করে ১-লা মে অবধি ক্যাপটেন করবেট এক নাগাড়ে জানোয়ারটির পেছনে ঘুরতে থাকেন। আবার তাকে সহায়তা করেন মিঃ ইবটসন। সরকারী কাজ থেকে যখনি ফুরসত পেয়েছেন, তখনি, সর্বদাই তিনি রুদ্রপ্রয়াগের কাছাকাছি অঞ্চলে হাজির থেকেছেন।

নরখাদকটির ভয়াবহ সন্ত্রাস চলতেই থাকে। ১-লা এপ্রিল রাতে জানোয়ারটি একটি লোককে তার বাড়ির ভেতর থেকে ধরে নিয়ে যায়। ৭-ই এপ্রিল প্রত্যূষে রুদ্রপ্রয়াগ থেকে আড়াই মাইল দূরে একটি গ্রামে, বাড়ি থেকে বেরোবার সঙ্গে-সঙ্গে একজন ৮৫ বছরের বৃদ্ধাকে চিতাটি ধরে নিয়ে যায়। বৃদ্ধাটিকে সে আধমাইল বয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ১৪-ই এপ্রিল, রুদ্রপ্রয়াগের আঠারো মাইল পূবে একটি গ্রামের একটি ১৫ বছরের ছেলে চিতাটির পরবর্তী শিকার।

ইতিমধ্যে মিঃ ইবটসন এবং ক্যাপটেন করবেটও তৎপরতা চালিয়ে যান। ১-লা এপ্রিলে নিহত মানুষটির দেহের কিয়দংশে বিষ প্রয়োগ করা হয়। চিতাটি মড়ির কাছে ২৭ ফিরে আসে এবং দেহের যে-অংশে বিষ দেওয়া হয়নি, সেখান থেকে খায়। ৩-রা এপ্রিল মড়ি-দেহের বিষ মাখানো অংশের খানিকটা খায়, কিন্তু কোনো ক্ষতি হয় বলে মনে হয় না। ৭-ই এপ্রিল মানুষ মারার পর দুটি অভিনব ফঁদ পাতা হয়। মড়ির দিকে নলের মুখ রেখে দুটি রাইফেল গ্রাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। মাছধরার শক্ত সুতো দিয়ে মড়ির সঙ্গে বন্দুকের ঘোড়া বাঁধা থাকে। আশা করা গিয়েছিল, আট তারিখ মড়ির কাছে যখন ফিরে আসবে, তখন চিতাটি সুতোয় টান দেবে ও বন্দুকের গুলি ছুটে যাবে। গত রাতে শিকারটি যে-দিকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল, আজ রাইফেল থেকে দূরে সরিয়ে মড়িটাকে সেই একই দিকে নিয়ে যাবে এও সম্ভব বলে মনে করা হয়েছিল। চিতাটি যাতে তাই করে সে-বিষয়ে সুনিশ্চিত হবার জন্যে মড়ি ও রাইফেলগুলির মাঝামাঝি অনেকগুলো ঝোঁপ পুঁতে দেওয়া হয়। ৮ তারিখ রাত ৭-৪৫-এ চিতাটি এল, ঝোপগুলো উপড়ে ফেলল এবং সেগুলোকে একটা খাদে ফেলে দিল। তারপর মড়িটি টেনে রাইফেলগুলোর দিকে নিয়ে গেল। এর ফলে সুতো গুলোয় ঢিলে পড়ল, গুলি ছুটল না। জানোয়ারটি ব্যাঘাত বোধ করে, এবং লাফিয়ে পালাতে গিয়ে প্রায় ছয়-সাত ফুট লম্বা একটা বিশাল জাঁতিকলের ওপর গিয়ে পড়ে। মিঃ ইবটসন ও ক্যাপটেন করবেট জাঁতিকলটি কাছেই লুকিয়ে রেখেছিলেন। ওঁরা শ-খানেক গজ দূরে নিকটতম গাছটির ওপরে ছিলেন। চিতাটি সচরাচর শিকার এমন জায়গায় টেনে নিয়ে যেত, যার কাছ-পাল্লার ভেতর কোনো গাছ নেই। ওঁরা দুজন তৎক্ষণাৎ জাঁতিকলটার দিকে ছোটেন। জাতিকলে কোনো জানোয়ার ছিল না। তবে কলের দাঁতে এক গোছ লোম আটকে ছিল।

২০শে এপ্রিল ক্যাপটেন করবেট স্থির করেন, অন্তত দশ রাত্তির গোলাৰাই চটির কাছে তিনি চিতাটির জন্য বসে থাকবেন। গোলাই চটি হল রুদ্রপ্রয়াগ রেস্টহাউস থেকে আধ মাইল দূরে তীর্থপথের ওপর তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি ঘাস-ছাউনি। ১০-ই থেকে ২০শে এপ্রিলের মধ্যে চটিটির কাছে চিতাটির থাবার ছাপ দেখা গিয়েছিল, এবং গত বছর এখানে ও তিনটি মানুষ মারে। ক্যাপটেন করবেট ভেবেছিলেন, পরবর্তী দশ রাতের মধ্যে ওখানে চিতাটির অন্তত আরেকবার দেখা দেবার সম্ভাবনা আছে। চটি থেকে উঁচুতে রাস্তার ধারে একটি গাছের ওপর মাচা বেঁধে রেখেছিলেন। ক্যাপটেন করবেট দশ রাত এই মাচায় বসেন কিন্তু চিতাটির কোন চিহ্ন বা সাড়া, দেখতে বা শুনতে পান না। তখন তিনি ঠিক করেন আর একটা রাত, অং ১লা মে-র রাতটা বসে দেখা যাক। এবং তাই-ই করেন। নরখাদকটির সে-রাতে শিকার ধরার কথা। ওর শেষ আহার ও খেয়েছিল, মনে করা হয়, চারদিন আগে। একটা-বাড়ি থেকে ছাগল চুরি করে। এপ্রিলের শেষদিনটিতে চিতাটি একজন মানুষকে ধরবার চেষ্টা করে ও বিফল হয়।

১-লা মে, রাত ১০টায় ক্যাপটেন করবেট হঠাৎ শুনতে পান রাস্তা দিয়ে কি যেন একটা ছুটে গেল। ছাগলের গলার ঘন্টা বাজল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে তিনি অস্পষ্ট একটা অবয়ব দেখতে পেলেন এবং সে দিকে রাইফেল তাক করলেন। ইলেকট্রিক টর্চ জ্বালতেই তিনি দেখলেন, তার রাইফেলের মাছি-বরাবর একটি চিতার শরীর। রাইফেল গর্জে উঠল। চিতাটি একটা লাফ মেরে অদৃশ্য হয়ে গেল। এক সেকেন্ডের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে সমস্ত ব্যাপারটি ঘটে গেল। চিতাটি এত তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়, যে যখন টর্চটি জ্বালেন, তখন যদি ক্যাপটেন করবেট সৌভাগ্যক্রমে না দেখতেন যে তিনি রাইফেলটি চিতাটির দিকে তাক করে ধরে আছেন, তাহলে আর চিতাটি পালাবার আগে নিশানা ঠিক করার সুযোগই পেতেন না। দারুণ উৎকণ্ঠায় ক্যাপটেন করবেটের রাত কাটে, কারণ চিতাটিকে মারতে পারলেন কি না, তা তিনি জানেন না। রাত তিনটের সময়ে চাঁদ উঠল বটে, কিন্তু চিতাটির চিহ্নও দেখা গেল না। ভোর হতে ক্যাপটেন করাবেট চিতাটির খোঁজে বেরোলেন। রক্তের নিশানা ধরে গিয়ে দেখলেন, খাদের পঞ্চাশ ফুট নিচে একটা গর্তের মধ্যে চিতাটি মরে পড়ে আছে। এখানে বলা যেতে পারে, সে-রাতে একশো তীর্থযাত্রী গোলাই চটিতে ছিল।

সেই নরখাদক বলে এই চিতাটিকে শনাক্ত করার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ আছে। রুদ্রপ্রয়াগের চিতার হাতে নিহত প্রত্যেকটি মানুষের মড়িতে তিনটে শ্ব-দাঁতের দাগ পাওয়া যায়, যার মানে হল চিতাটির দাঁতের পাটিতে একটি শ-দন্ত নেই। ক্যাপটেন করবেট যে চিতাটিকে মারেন, তার একটি শ্ব-দাঁত ভাঙা ছিল। আগেই সে-দুজন সামরিক অফিসারের কথা বলা হয়েছে, তারা তিন বছর আগে নরখাদকটিকে গুলি করেন ও রক্তের দাগ দেখে বোঝা গিয়েছিল, গুলিটা তার পায়ে লেগেছে। ক্যাপটেন করবেটের মারা চিতাটা পায়ে একটি পুরনো বুলেট-ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়। এ ছাড়াও চিতাটির ডানদিকের পেছনের পায়ে একটা জায়গায় লোম ছিল না। সেখানকার ঘা-টা সদ্য শুকিয়েছে। ৮-ই এপ্রিলে ফাঁদের মধ্যে যে এক গোছা নোম পাওয়া গিয়েছিল সেটা ওখানকার সঙ্গে খাপে-খাপে মেলে। জানোয়ারটার গায়ে অনেকগুলো পুরনো ও নতুন ক্ষতচিহ্ন ছিল। ওর মৃত্যুর দু-সপ্তাহ আগে ক্যাপটেন করবেট দুটি চিতাকে লড়াই করতে শোনেন। নরখাদকটির ক্ষতচিহ্নগুলির কারণ তাতে বুঝতে পারা যায়। নরখাদক জানোয়ার সম্পর্কে যে-সব থিওরি সাধারণ্যে স্বীকৃত, এই চিতাটির চেহারায় নানা দিক থেকে মিল দেখা যায়। হালকা রঙের বেশ বুড়ো জানোয়ার। গায়ের চামড়ায় চিকন ভাব নেই। গোঁফও প্রায় নেই। দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি, অস্বাভাবিক রকম বড় আকার বিশেষ, পাহাড়ী চিতার পক্ষে। পুরো এক রাত একটা গর্তের মধ্যে মরে পড়ে থাকার পর এই মাপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে দেহটা শুকিয়ে খানিকটা ছোট হয়ে গিয়ে থাকবে। জানোয়ারটা মারা পড়ার খবর উপদ্রুত এলাকায় দেখতে-দেখতে ছড়িয়ে পড়ল। চিতাটাকে ১-লা মে রুদ্রপ্রয়াগ রেস্ট হাউসের সামনে রাখা হয় এবং তাকে দেখার জন্য নিকটবর্তী গ্রামগুলি থেকে শত শত লোক আসে। চিতাটিকে দেখে এবং জানোয়ারটির বর্ণনায় উল্লিখিত কয়েকটি খুঁটিনাটি বিষয় লক্ষ করে তারা একবাক্যে ঘোষণা করে এই হচ্ছে সেই “আদমখোর” (নরখাদক) এবং মানুষের যা অসাধ্য তাই করে তাদের এই ভয়ংকর দুশমনকে খতম করার জন্যে তারা মিঃ ইবটসন ও ক্যাপটেন করবেটকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানায়।

এই নরখাদকটির পেছনে অক্লান্তভাবে লেগে থাকার কাজে মিঃ ইবটসন ও ক্যাপটেন করবেট যে সাহস ও দৃঢ়চিত্ততা দেখান, তা অমন অসাধারণ পর্যায়ের না হলে পরে আজকেও মানুষ অসহায় হয়ে ভাবত, এরপর নরখাদকের হাতে প্রাণ কে খোয়াবে? এর পরে কার পালা?

Contemporary newspaper report on the Man eating Leopard of Rudraprayag.

The Pioneer 25.12.1925
 U. P. Council.
Man Eating Leopard.

Mr. Mukundilal asked for certain details regarding the depreda tion of a man-eating leopard, at a place called Rudraprayag, in the Garhwal district.

Mr: Burn made the following statement in reply:-The Rudraprayag Leopard, assuming then only one animal is concerned, has killed 114 human beings. Every endeavour has been made to destroy this pest. Sixteen paid shikaris have been employed, poison has been freely used, and since October the district authorities have been fortunato in securing the voluntary assistance of an European gentleman of considerable experience, and proved courage in their attempts to run this leopard down. He does not wish his name to be disclosed, but the Government are in possession of an account of his adventures, which will be communicated to the Press and of which a copy will be sent to the Honourable Member. This account will show conclusively that determined and courageous efforts have been made. They will be repeated after an interval which is held to be necessary in order that successful results may be secured. The measures taken have caused the destruction of a number of leop ards, but there is reason to believe that the man-eater is still at large. The amount spent so far is Rs. 1,518-8-0.

The Pioneer : 26.12.1925
U. P. Council.

MANEATING LEOPARD. OVER 100 VICTIMS.

SHIKARI’S EFFORTS TO DESTROY GARHWAL PEST.
Unsuccessful first Attempt.

Replying to a question in the U. P. Council on Wednesday, re garding the depredation of a man-eating leopard at a place called Rudraprayag in the Garhwal district, Mr. Burn said the Rudraprayag leopard, assuming that only one was concerned, had killed 114 hu man beings. Every endeavour had been made to destroy the pest. Sixteen paid shikaris had been employed, poison had been freely used, and Since October the district authorities had been fortunate in securing the voluntary assistance of an European gentleman of con siderable experience and proved courage in their attempts to run the leopard down. He did not wish his name to be disclosed, but the Government were in possession of an account of his adventures, which would be communicated to the Press.

The following extracts from a letter describing the efforts to de stroy the Rudraprayag leopord have now been received from the United Provinces Government : —

“I interviewed the patwari on my arrival and hearing from him that the last kill had taken place at Ketri I spent the rest of the day in prospecting the west bank of ithe river. On this track, called the Jhula Road, I found the two-day old scratch marks of a leopard. I got four goats by the next morning, and in the afternoon I served them out in likely places along the Jhula Road. The goat I hoped most from, was tied where the forest track joins the Jhula Road, a short-distance from the bridge. I sat on a tree near it as long as I could see, and when I went back the next morning (13th) I found it had been killed and more than half of it eaten. Great efforts had been made to break the cotton rope, but it had held, as it was not my intention that the goat should be taken off the track. The other three goats had not been touched. There was nothing but my own conviction to show that the killing had been done by the man-eater, and those convictions could be proved by a sit-up.

There was thick jungle above and below the kill and if it was an ordinary leopard it would come out at the usual time, about sun down, and if the man-eater, it would come late or not at all. Nothing happened until about 9 p.m., when some animal jumped down on to the road near the kill, and dislodged a stone that rolled down to wards the tree I was sitting in. The animal stayed near the kill for a few minutes and appeared to nose it and then went off in the direc tion of the bridge. It was quite dark and impossible for me to see anything, but I could follow the animal’s movements by the bemar plants I had strewn near the kill for that object. (BEMAR is a small plant with long seed pods, dry at this time of the year, that rattle at the slightest touch.) That night the man-eater crossed the bridge. A goat tied upon the 14th where the previous one had been killed, had not been touched.

A GUN TRAP.

On the 15th I set out to visit Ketri and inspect the Jhula at Shevanand on my way back, but half way there I changed my mind and made back for Rudraprayag. A mile from the bridge I met a man sent by the patwari to tell me a kill had taken place at Chutti. After breakfast, accompanied by the patwari and the qanungo, I started on the four mile climb to Chutti. The kill was in a little nala running through fields, a hundred yards from the village. In repeated visits to the kill the leopard had made a track on the right bank of the nala. Across this track I decided to put up a gun trap using my .275 and .28 bore for the purpose. When the trap was ready I found that the pressure required on the trigger strings to discharge the guns, was greater than the leopard under normal conditions was likely to exert; however there was the possibility of driving him into the trap if I could frighten him when he was facing in the right direction, and on this chance I banked. To give me something to aim at with my .450 I placed a white stone on the near side of the nala and in line with the kill. On the safe bank of the nala and thirty yards from the kill there was a walnut tree with a hay stack in its branches. In the middle of the stack I made a place to sit in.

By 6 p.m. everything was ready, guns nicely masked from the off-side, safety catches off and with a final look round to see noth ing had been forgotten I climbed into my nest. At 6.30 a thunder storm burst right overhead and in a minute I was wet to the skin; however that didn’t matter much for I was already wet from the four mile climb. At seven the rain stopped and ten minutes later, I heard a stone drop in the nala a little below the kill and at the same mo ment it came on to rain again. The rain coming from the north had caught him before it had reached me, and in hurrying for shelter to my hay stack he had taken the nala where it was a bit wide and had dislodged the stone. Some hay had drifted off the stack, when I was climbing up and in this he made himself comfortable.

WITHIN SIX FEET OF THE LEOPARD

Then for an hour or more we sat within six feet of each other with the advantage in his favour for while he could move about and was quite dry and warm, I had to sit tight, was wet to the skin and was freezing in the cold wind that was blowing. All this time there was the most brilliant display of lighting I have ever seen, and more than once the tree appeared to be in danger of being struck. About the middle of the storm I heard two man passing fifty yards above us and admired their courage at being out at that hour (I learnt after wards that one of them was my man with the electric light).

At eight the storm ceased for good and a little later the leopard jumped down into the lower field, re-crossed the nala and ap proached the kill by the path he had made the previous night. To make sure of his firing the trap, I had put up two trigger strings, he evidently got his head between the– strings and took fright for he dashed off the kill and growled when he pulled up sixty or seventy yards away. I knew he would get over his fright in time, and half an hour later the white stone suddenly disappeared. I had not counted on this move in the game, the white stone was there to give me something to lay the sights on when I heard him eating and with it gone it would be impossible for me to plant a bullet within yards up where I wanted to.

KISMAT”

The stone appeared in sight as suddenly as it had disappeared and a second later I saw and heard the leopard coming straight to wards me. I now thought I had a good chance of shooting him as he returned to the kill, but unfortunately he did not go back the way he had come, and when after interval of twenty to thirty minutes, the stone disappeared and reappeared for the third time I made up my mind to risk a shot, and as he passed under me for the third time I bent down and fired. The field he was in, was possibly two feet wide and I put a bullet in the middle of it and all the injury I did the leopard was to clip a few hairs from his neck ……. Kismat. If my man had arrived only two hours earlier……. I have never wanted anything so much as I wanted the light, I think I could have hit him…….again KISMAT.

MYSTERIOUS SOUNDS

I must give you my impression of the leopard for I have told you 1 both saw and heard him. From the fact that he was visible on a dark night and overcast sky I conclude that he is a very light coloured animal. He did not appear to be very long but he looked thickest and powerfully built. Hearing him was the strongest experi ence I have ever heard, I never heard any animal’s body before and cannot in any way account for the sound. It was loud enough to be heard at thirty yards and was exactly like a woman walking in a stiff silk dress. The field had been lately planted with wheat and there was not a leaf or blade of grass in it. No, the sound did not come from his feet but from his body.

PLANS FOR ANOTHER ATTEMPT

As fong as the leopard is on this bank I feel I have a chance but once he crosses the river, he is gone. I have therefore, taken the liberty, and hope you won’t mind, of issuing instructions to your patwaris up river to close the Chattupipal bridge and Shevanand jhula at night, using thorn bushes and a lantern for the purpose, the one must do something. I sit on the bridgehead and have a game-net with running line fixed half-way down the bridge. The idea is that if I get a shot at the leopard on the bridge and miss, as I probably will, he is moving, I will drive him into the net. The trouble will begin when he is in the net. I cannot swarm down the iron jugs with a rifle in my hand, so the job will have to be finished in the dark with a knife. There is a chance of us both going over the bridge in a mix up. However that after all is a very small chance.”

The Pioneer : 15.5.1926

The man-eating leopard, which has lately been widely known as the Rudraprayag pest, and has, during the past seven years, killed one hundred and twentyfive human beings in the western part of the Garhwal district, has at last been shot, having fallen to the rifle of Captain J. Corbett, of Gurney House, Nainital.

The career of the animal makes one of the strangest of the many strange stories told of the Himalaya, so strange, indeed, that it might be doubted if the details, many of them tragic and gruesome, were. not so wellestablished. The first instalments of the story were pub lished in The Pioneer in December when the efforts of Mr. X (who may now be identified as Captain Corbett) to bag the animal last autumn were described. The final chapter can now be written. The western part of Garhwal,’ in which the animal had committed its depredations, is comparatively well-populated and there are some fifty thousand people in the area of some three hundred and fifty square miles which it roamed. Rudraprayag, from which the animal has been called, is a hamlet close to the borders of Tehri State, It is at the junction of the Alaknanda River, which, when it reaches the plains at Hardwar, becomes the Ganges, and the Mandakini River..

Here, also, is the junction of the pilgrim routes to the holy shrines of Kedarnath and Badrinath. The area comprise a considerable amount of scrub jungle and parts of it arc honeycombed with caves formed by the waters of Alaknanda cutting their way to the plains. Rudraprayag was the centre from which operations against the leop ard were conducted. The leopard had been the terror of an area about twenty two miles long and eighteen miles broad on the east bank of the Alaknanda and an area of about equal extent on the west bank.

It started killing human beings in 1918 and took a regular toll of the people of the affected area until it was finally disposed of on the 1st May, Its victims were generally snatched from inside houses or from the entrances to the houses at night. It was particularly active during the summer months, when people desire to have their doors open at night. In recent years the fear of the leopard has been such that even in the stifling hot weather houses have been closed up and barricaded at night. At least three pilgrims have been among the beast’s, victims during the past two years, but the pilgrims were usually avoided by the man-eater because they were, as a rule, in bands of considerable size, and their shelters at night were well pro tected by light. In the previous articles in The Pioneer on the subject of the Rudraprayag pest, details were given of some of the many devices which were unsuccessfully resorted to in order to rid the area of the dreaded scourge. Sixteen shikaris, paid by the Govern ment, had vainly endeavoured to dispose of the animal. Gun li cences had been freely issued in the district and the Government had supplied a specially constructed trap as well as poison, in the hopes of ending the beast’s career. The leopard had been caught twice, once in the trap and once in a cave, but it had got away on each occasion, while the frightened people on the spot were sending miles away across the hills for specially chosen men, they hoped would shoot it. As there is inclination in certain quarters to blame the Government for all the evils from which India suffers, the Gov ernment has been blamed for permitting the existence of the Rudraprayag leopard. The Government had done what they could do in the matter and had spent Rs. 1,518 in the measures already de scribed. Legislative Coun-cillors who had been inclined to be indig nant at Government’s inability to rid Garhwal of its scourge had ignored the invitation given to go to Rudraprayag themselves to try and lay the animal low. Less talkative people had on various occa sions essayed the task.

Some three years ago two military officers made an effort, and Captain Corbett, who has had considerable experience of various kinds of shikar, concentrated on the task for a whole month from the 16th September to the 16th October last year. He was ably and enthusiastically assisted by Mr. A. W. Ibbotson, the deputy Commis sioner of Garhwal, who spent on the work as much time as he could spare from his official duties. But, as already recorded, the animal was so extraordinarily cautious that gun traps, gin traps, the most careful tracking, the sitting up over human kills, the poisoning of the kills with strychnine, arsenic and cyanide were of no avail. The uncanny wariness displayed by the animal on many occasions, its ability to sense when there was danger about, and its various won derful escapes had led the simple inhabitants of those parts to the conclusion that the maneater had supernatural powers; they believed the brute was possessed of an evil spirit which no human agency could exercise.

It has already been explained that it was considered advisable after the 16th October to leave the animal alone for a few months as the more it was harried the warier it became, and during the winter its human victims were not generally numerous. This plan was adopted, and it was not until the 16th March last that Mr. Ibbotson and Captain Corbett returned to the little rest-house at Rudraprayag and re-opened their campaign against the man-eater. In the mean time they had been carrying out experiments with patent machans, gun- traps and flash-lights. When they arrived at Rudraprayag the bridges over the river were closed at night and various other precau tions were taken. The man-eater had been busy th’s year before the 16th March. He started killing human beings again in January, and between then and the 16th March eight victims had been added to his previous total of one hundred and fourteen. From the 16th March until the 1st May Captain Corbett was continually on the animal’s tracks and he was again assisted by Mr. Ibbotson, who was always in the neighbourhood of Rudraprayag when his duties per mitted.

The frightful activities of the man-eater continued. On the night of the 1st April the animal snatched a man from inside a house. At dawn on the 7th April an old woman of 85 in a village two and a half miles from Rudraprayag was seized when near her house, which she had just left, and was carried half a mile away. A boy of 15 at a village eighteen miles due east of Rudraprayag was the next victim on the 14th April.

Meanwhile Mr. Ibbotson and Captain Corbett had also been ac tive. Part of the body of the man killed on the 1st April was poi soned. The leopard returned to the kill and ate part of the body which was not poisoned. On the 3rd it ate a part of the body which had been treated with poison, but seemed to suffer no ill effects. After the kill on the 7 th April two ingenious traps were set. Two rifles with the muzzles on the kill were secured to a tree; lines of fishing tackle joined their triggers to the kill. It had been hoped that the leopard would pull the lines and thus let off the rifles when it returned to the kill on the night of the eighth. It was thought prob able that it would endeavour to move the kill away from the rifles in the same direction that it had carried its victim on the previous night. With the object of ensuring that it should do this a number of bushes were stuck in the ground near the kill and the rifles. The leopard came at 7.45 p.m. on the 8th, pulled up the bushes, dropped them down a khud and then moved the kill in the direction of the rifles. The fishing lines were thus slackened and the rifles did not go off. The animal was disturbed and in springing away landed on a huge gin trap some six or seven feet in length, which had been hid den near by Mr. Ibbotson and Captain Corbett, who were in the nearest tree–the leopard usually conveyed its victims to a spot where there were no trees within easy range—about one hundred yards away, immediately they rushed to the trap. There was no ani mal in the trap but a tuft of hair was sticking to its jaws.

On the 20th April Captain Corbett decided that he would sit up for the leopard for at least ten nights, near Golabrai Chatti, a grass shelter for pilgrims, half a mile from the Rudraprayag rest-house on the pilgrim road. Between the tenth and twentieth April the pug marks of the leopard had been seen near this Chatti, where last year it had killed three people. Captain Corbett believed there was a probability of its appearing there again at any rate once during the following ten nights. He sat up in a machan in a tree by the Chatti and above the road. On the road below he had a goat secured with a bell round its neck. Captain Corbett sat up for ten nights on this machan without seeing or hearing any sign of the leopard. He then thought it would be well to persevere in sitting up for one more night, that of the 1st May, and he did so. The man-eater was due to kill that night. Four days- earlier the animal had what was believed to have been his last feed, this, being from a goat which had been taken from a house. On the last day of April the beast had made an unsuccessful attempt to secure a human kill.

It was at 10 p.m. on the 1st May that Captain Corbett heard from his machan something rush down the road and the bell on the goat tinkle. Captain Corbett looked down on the road and saw an indis tinct blur in the direction of which he pointed his rifle. He switched on his electric torch and found that the bead of his rifle was drawn on the body of a leopard and fired. The leopard made a spring and disappeared. All this had happened in little more than a second, and the leopard got away so quickly that, had Captain Corbett not very luckily found, when he switched on the light, that he was already covering the leopard with his rifle he would have had no opportu nity of adjusting his aim before the leopard had been away. Captain Corbett spent a very anxious night, not knowing whether he had killed the leopard or not. The moon, which appeared at three o’. clock in the morning,, did not reveal any sign of it. At daybreak Captain Corbett set out to look for the animal. He found blood tracks which led to the leopard lying dead in a hole into which it had fallen fifty yards down the khud. It may be mentioned that one hundred pilgrims had spent the night in the Gola- brai Chatti.

There are sufficient good reasons for identifying this leopard with the man-eater. In all the human kills by the Rudraprayag leop ard there have been three teeth-marks showing that the leopard was one short of its full complement of teeth. The leopard shot by Cap tain Corbett had one tooth broken. The man-eater had been shot it three yards ago, by the two military officers already referred to and had left behind on that occasion smears of blood which indicated that it had been hit in the foot. The leopard of Captain Corbett had the mark of an old bullet wound in the foot. Moreover, a piece of hair was missing from its right hind leg where there was apparently a recently healed scar: this evidently corresponded with the tuft of hair found in the trap on the 8th April. About; the animal’s body were a number of old scars and some more. recent ones. Two weeks before its death Captain Corbett had heard two leopards fighting. This suggests how the man-eater had received its scars. In various ways the leopard in appearance fulfilled the generally accepted theo ries concerning man- eaters. It was a light-coloured and evidently very old animal with an indifferent coat and practically no whiskers. It length was 7 feet 10 inches, an exceptional size, particularly for a hill leopard. This measurement was taken after it had been in a hole lying out all night, during which it had probably shrunk to some externt.

News of shooting of the animal spread rapidly in the affected area and hundreds of people from the neighbouring hamlets went to see the body as it lay in front of the Rudra- prayag rest-house on the 1st May. Upon catching sight of it and noticing some of the peculiar details mentioned in the description of the beast, they were unani mous in declaring it to be the “adam khwar” (man-eater) and ex pressed delight at being at last rid of their terrible enemy and great gratitude to Mr. Ibbotson and Captain Corbett for persevering un’il they had completed what had seemed to them a superhuman task.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *