সাত
কাগজের একটা ব্যাগে জিনিসগুলো নিয়ে কাউন্টারের ওপর দুটো রুপোর ডলার রাখল জিম।
‘দোকানের যে ক্ষতি হলো সেটা দেবে কে?’ বিধ্বস্ত দোকানের ভেতর ঘুরে এল জ্যাকের দৃষ্টি। ‘দু’জনে তোমরা অনেক ক্ষতি করে ফেলেছ।’
‘কেলটনের অ্যাকাউন্টে লিখে রাখো,’ তিক্ত গলায় বলল জিম। ‘যা দেবার ও-ই দেবে।’ দোকান থেকে বেরোনোর জন্যে পা বাড়াল ও পেছন দরজার দিকে।
‘সামনে দিয়ে বেরোও,’ বলল জ্যাক।
থামল না জিম। ‘পেছনে আমার কাজ আছে।’
দোকানের পেছনে চলে এল জিম। পতিতা এখনও দু’হাতে কফির কাপ ধরে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। জিমকে এগোতে দেখে তার চোখে উৎসাহের ছাপ ফুটে উঠল। আশা নিয়ে জিমের দিকে তাকাল সে।
‘আমি অ্যাগনেস,’ নিজের পরিচয় দিল। স্বরটা ক্লান্ত আর কর্কশ। ‘আশপাশে থাকলে চলে আসতে পারো আমার ওখানে। রাস্তার ধারেই ছোট একটা কেবিনে থাকি আমি।’
এবার তার চেহারায় খানিকটা গর্বের ছাপ পড়ল। ‘হলুদ বাড়িটা। নরম বিছানা আছে আমার বাড়িতে। আরাম পাবে।’
জিম দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় হতাশ হলো মেয়েটা। দু’হাতে ধরে টিনের কাপটা ঠোঁটে তুলল।
বাড়িটার পেছনের গলিতে চলে এল জিম। তোবড়ানো টিনের কৌটো আর নানারকমের আবর্জনায় ভরে আছে জায়গাটা। বিশ্রী গন্ধ ছড়ানো একটা আউট হাউস পাশ কাটাল ও। পাশ কাটিয়েই খুঁজে পেল যা খুঁজছিল। স্টিচের ঘোড়াটা একটা পোল করালে রাখা আছে। ছাউনির নিচে পড়ে আছে তার স্যাডল।
দড়ি ছুঁড়ে ঘোড়াটা ধরল ও, দোকান পাশ কাটিয়ে ঘোড়াটাকে নিয়ে ঢুকে পড়ল বনের ভেতর। স্টিচ বা আর কেউ আগেই গিয়ে কেলটনকে সতর্ক করুক সেটা ও চায় না। কেলটনকে আগেই জানানোর কোন অর্থ হয় না যে ও তাকে খুঁজছে।
নিজের ঘোড়ায় চেপে স্টিচের ঘোড়াটার দড়ি ধরে সরু বুনো পথ ধরে সামনে বাড়ল ও। আস্তে আস্তে ওপরের দিকে উঠছে ট্রেইলটা, পাহাড়ের দিকে যাচ্ছে। দ্রুত এগোল জিম। এক ঘণ্টা পর পর ঘোড়া বদল করছে, ফলে গতি কমাতে হচ্ছে না ওকে, ঘোড়াগুলোও মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্ত হচ্ছে না। ফিরতি পথে হয়তো তাজা ঘোড়ার দরকার পড়বে ওর।
তবে ফেরার আগে কেলটনকে খুঁজে পেতে হবে ওকে।
যত ওপরে উঠছে ততই পরিবেশ এবং এলাকাটা অপরিচিত ঠেকছে ওর। আগের চেয়ে সাবধানে এগোচ্ছে। সতর্ক হয়ে আছে। খেয়াল করছে নতুন কোন ট্র্যাক দেখা যায় কিনা। ট্রেইল যেখানে বাঁক নিচ্ছে সেখানে অপেক্ষা করছে। রওনা হবার আগে ঘোড়া থেকে নেমে আগে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছে কেউ পাহারা দিচ্ছে না বা ফাঁদ পেতে রাখেনি। মাথার ওপর পাইনের সবুজ পাতার নিশ্ছিদ্র ছাউনি। সূর্যের আলো এখানে প্রবেশাধিকার পায়নি, আবছা আলোয় পথ চলতে হচ্ছে। আরও সামনে কোথাও আছে কেলটনের গোপন আস্তানা। সেখানে আছে পাহাড়ী আউট-লর দল। যত ওপরে উঠছে ততই কেলটনের জমির আরও ভেতরে ঢুকছে ও। বাড়ছে হঠাৎ পেছন থেকে গুলি খেয়ে মরার সম্ভাবনা। ট্রেইলের দু’ধারে বিশাল সব পাইন গাছের সারি। যে কেউ লুকিয়ে গুলি করে মারতে পারবে ওকে কিছুই করার থাকবে না ওর। মরার আগে হয়তো টেরও পাবে না কীভাবে মরল। এই গভীর জঙ্গল দস্যুদের নিরাপদ ঘাঁটি।
আস্তে আস্তে বেলা গড়াচ্ছে। অবসাদ তার ছাপ রাখতে শুরু করেছে জিমের ওপর। চোখ বুজে আসতে চাইছে। শরীরের নানা জায়গায় টিসটিসে ব্যথা করছে। না থেমেই খানিকটা পনির খেয়েছে ও। এখনও সার্ডিনের ক্যান খোলা হয়নি। তীব্র একটা শীতল জেদ ওকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাঝ-দুপুরে শূন্যের কোঠায় নেমে এল জিমের শক্তি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিশ্রাম নিতে থামতে হলো। ট্রেইলের মাঝ দিয়ে আড়াআড়ি চলে যাওয়া একটা ঝর্নার পাড়ে ঘোড়া থেকে নামল ও। ঘোড়া দুটোকে নিয়ে ঢুকে পড়ল পাশের বনে। ঝর্না অনুসরণ করে ওটার উৎসমুখের কাছে চলে এল। খাড়া একটা টিলার ওপর দুটো পাথরের মাঝ থেকে নেমেছে ঝর্নাটা।
ঘোড়াগুলোর তৃষ্ণা মিটিয়ে এক ঝাড় ঘন ঝোপের মধ্যে ওগুলোকে বাঁধল জিম। ঝর্নার শীতল জল আর সার্ডিন দিয়ে সেরে নিল খাওয়ার পালা। একটা সিগারেট রোল করে ধরাতে গিয়েও থমকে গেল হঠাৎ, মূর্তির মত স্থির হয়ে গেল।
ও জানে না কী জন্যে ইন্দ্রিয় ওকে সতর্ক করেছে। বোধহয় এমন ক্ষীণ একটা আওয়াজ হয়েছে যেটা সচেতন ভাবে শোনেনি ও। অনুভব করল কেউ আড়াল থেকে ওকে দেখছে।
সিগারেট ফেলে সিক্সগানটা বের করল ও, চোখ বুলাল চারপাশে। যেকোন অস্বাভাবিক শব্দের জন্যে কান খাড়া। ঝোপের ভেতর ঘোড়াগুলোর নড়াচড়ার আওয়াজ হচ্ছে। দেখল একটা শিংওয়ালা ব্যাঙ পাথরের ওপর উঠে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। মাথা দু’দিকে নাড়ল ওটা। একটা নীল মাছি ভনভন আওয়াজ করে উড়ে গেল ঝর্নার ওপর দিয়ে, নিচে নেমে একটা পানির মাকড়সা ধরে চলে গেল কোথায় যেন। একগুচ্ছ ঘাসের ভেতর থেকে মাথা তুলে তাকাল একটা সবুজ ডোরাকাটা তৃণ-সাপ, জিভ বের করে আশপাশে বিপদ আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করল।
প্রতিটি সেকেণ্ড যেন একেকটা ঘণ্টা। অতি ধীরে পার হচ্ছে সময়। সিক্সগানের বাঁটে চেপে বসেছে জিমের হাত। আঙুলগুলো থেকে রক্ত সরে গেছে। থমথমে একটা উত্তেজনা অনুভব করছে ও।
তারপর পেছন থেকে নিচু একটা স্বর শুনতে পেল।
‘অসুবিধে নেই, জিম। আমি শর্টি।
শর্টি ব্রাউনের গলা চিনতে পারল ও। এতক্ষণে অজান্তে আটকে রাখা শ্বাস ছাড়ল। টানটান উত্তেজনার পর শিথিল হয়ে গেল শরীর, ক্লান্তির বোধ ফিরে এল।
‘বেরিয়ে এসো, শর্টি।
ঘাড় ফিরিয়ে গলার স্বর যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে তাকাল ও। টিলার ফুট দশেক ওপরে আছে শর্টি। প্রথমে নজর কাড়ল তার বিরাট কান দুটো, তারপর দেখা গেল খর্বকায় শরীরটা।
ঘুরে নামতে হবে শর্টিকে। শর্টির পায়ের ধাক্কায় গড়িয়ে নামল কিছু নুড়ি পাথর। ঝোপঝাড় ভেঙে ঝর্না টপকে উদয় হলো সে।
‘জানটা খারাপ হয়ে গেছে,’ বলল অনুযোগের সুরে। ‘একটা সিগারেট দাও শীঘ্রি!’
দু’জন দুটো সিগারেট ধরানোর আগে পর্যন্ত একটা কথাও হলো না। জিম অপেক্ষা করছে, মুখ খুলবে শর্টি। জানে তাড়া দিয়ে লাভ নেই। উপযুক্ত সময় হয়েছে সেটা অনুভব না করা পর্যন্ত শর্টির মুখ থেকে একটা কথাও বের হবে না। বলবে যখন, বলবে নিজের মত করে। আর কারও বলার ভঙ্গির সঙ্গে তার কোন মিল থাকবে না।
সিগারেটে গোটা কয়েক টান দিয়ে ধোঁয়ার ফাঁক দিয়ে জিমকে গভীর মনোযোগে দেখল শর্টি। এতক্ষণে তার মনে হলো এবার মন্তব্য করা যায়। অলস গলায় বলল, ‘একবার আমি একটা কাউন্টি জেলে ছিলাম। ওখানে একটা জিনিস শিখেছি। জেলে থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়।’
‘যেমন?’
‘নতুন একটা আবিষ্কার। লাঠির মাথায় লোহার একটা খণ্ড। ওটাকে ওরা হাতুড়ি বলত। পাথর ভাঙা হত ওটা দিয়ে। নাকের গুঁতোয় পাথর ভাঙার চেয়ে ওটা দিয়ে ভাঙা অনেক সহজ।’
‘ওহ্!’ বন্ধুর বক্তব্য বুঝতে পেরে হাসল জিম। রসিকতা করে বলল, এদিকের সবাই বলে আমি নাকি অত্যন্ত সুদর্শন। সেকারণে অনেকে আমাকে ঈর্ষা করে। তাদের মধ্যে ম্যাক স্টিচও একজন। আজকে সকালে ওর সঙ্গে দেখা হতেই ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করেছিল সে। এখন নিশ্চয়ই বলা যায় যে সাধারণের তুলনায় আমার চেহারা মোটেই আর বেশি সুন্দর নয়?’
‘হ্যাঁ, তা বলা যায়। বিরাট মাপের মিথ্যেবাদিনী না হলে কোন মেয়ে তোমাকে এখন সুদর্শন বলতে পারবে না। আমি তো আরেকটু হলে তোমাকে চিনতেই পারতাম না। তোমার মারমুখী ভঙ্গি দেখে একবার তো ভেবেছিলাম আগে পিঠে গুলি করে পরে পরিচয় জিজ্ঞেস করব কিনা। নীচ চেহারার কেউ আমার ঝর্নার ধারে আসবে সেটা আমি পছন্দ করি না। তা তুমি হঠাৎ এখানে যে? ব্যাপারটা কী?’
‘মনে আছে, তোমাকে বলেছিলাম লেভি ফক্সের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর আমার ফোরম্যান উধাও হয়ে গিয়েছে? ফিরেছে ও। লাশ হয়ে। একটা ঘোড়ার পিঠে বাঁধা অবস্থায়। আমি ওকে পছন্দ করতাম, শর্টি।’
‘তাই তুমি ভাবছ কেলটনের ওখানে গিয়ে বলবে যে কাজটা সে ঠিক করেনি? এত সহজ নয় ব্যাপারটা, জিম। তোমার প্রতি কেলটনের মনোভাব অত্যন্ত বিরূপ। এই যে, এখন যদি আমাকে সে তোমার সঙ্গে গল্প করতে দেখে তা হলে কেলটন আর আমার মিষ্টি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। ওর কারণেই এখানে হোমস্টেডিং করছি আমি। বাড়ি নেই, ঘোড়া নেই, নিধিরাম সর্দার। এমনকী খাবার পর্যন্ত নেই! ‘
‘আমার স্যাডল ব্যাগে খানিকটা পনির পাবে,’ জানাল জিম।
‘পাব না,’ নির্বিকার চেহারায় দ্বিমত পোষণ করল শর্টি। ‘তুমি ঘোড়াটাকে বাঁধার পাঁচ মিনিট পর ওগুলো হাতিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলেছি।’ ভ্রূ কুঁচকাল শর্টি। ‘জরুরী কাজে সময় নষ্ট করা বাপু মোটেই সয় না আমার।’
‘শীতটা কি এখানেই কাটাবে ঠিক করেছ?’
‘না। জায়গাটা পছন্দ নয়। অপেক্ষা করছি, কেউ ঘোড়া নিয়ে এলে চলে যাব। আমার ঘোড়াটা গেছে।’
‘জানি দিনে দুটো করে ঘোড়া হারায় তোমার। আমি বাড়তি একটা নিয়ে এসেছি। নাকি ভুল বললাম?’
‘ঠিকই বলেছ।’ আরেকটা সিগারেট রোল করতে শুরু করেছে শর্টি জিমের ব্যাগ থেকে তামাক বের করে। ‘তবে ঘোড়াটাকে হারিয়ে ক্ষতি হয়নি। এমনিতেও মরা ঘোড়ায় চেপে কোথাও যেতে পারতাম না।’
‘মরল কী করে?’
‘কেলটন গুলি করে মেরেছে। ব্যাটার হাতের তাক মনে হয় ভাল না। ঘোড়ার পিঠে অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিলাম, তারপরও আমার গায়ে গুলি লাগাতে পারেনি।’
‘হয়তো ঘোড়াটাকেই মারতে চেয়েছিল।’
‘তা চায়নি। লোকটা তোমার ওপর বোম ক্ষ্যাপা খেপে আছে।’
‘সেই ঝাল তোমার ওপর দিয়ে নিয়েছে?’
‘নেবে না কেন? তোমার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন যে-কাউকে পেলেই গুলি করবে সে। শুরুতে ভালই ছিলাম। পটিয়ে ফেলেছিলাম ব্যাটাকে। চাকরিতে নিয়ে নিল। সে-ও খুশি, আমিও খুশি। তারপর ব্যাটার এক লোক শহর থেকে ফিরে বলে দিল যে আমাকে সে তোমার সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে। কেলটন ভাবল আমি দু’মুখো সাপ। তোমার চর। ওর ওপর নজর রাখতে গিয়েছি। খুবই সন্দেহপরায়ণ লোক।’
‘খুন করতে পারেনি সেটাই আশ্চর্য।’
‘কপাল ভাল ছিল। মারতে পারেনি, কারণ সবখানেই বন্ধু থাকে আমার। এই কেলটন ব্যাটার এক ছোট ভাই আছে। সে সঙ্গে করে ছয়জন গানম্যান নিয়ে এসেছে। বড় ভাইকে লড়াইতে সাহায্য করবে। তাদের মধ্যে একজনকে আমি চিনি। ওর নাম রেড ম্যাসন। বন্ধুমানুষ। সে বেচারা বান্ধবীর স্বামীর তাড়া খেয়ে পালাচ্ছিল। পরে গোলাগুলিতে স্বামীটা মরেছে। রেড এসে এখানে জুটেছে।
‘সে যাই হোক, কেলটনের সঙ্গে কেলটনের ছোট ভাইয়ের কথা রেড শুনে ফেলেছিল। ও-ই আমাকে সতর্ক করল, বলল যে কেলটনের ওখানে অনেক বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছি আমি। বলল এবার সরে পড়ার সময় হয়েছে। দেরি করিনি। ওরা আমাকে খুন করতে লোক পাঠানোর পাঁচ মিনিট আগেই রওনা হয়ে গেলাম, হাওয়া হয়ে যেতে সময় লাগেনি। এ থেকে প্রমাণ হয় তোমার সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণে খামোকা বিপদে পড়ি আমি।’
‘একটু আগে বললে শুরুতে ভাল ছিলে। তা হলে কি আমি ধরে নেব যে পরে তুমি কেলটনকে খেপিয়ে দিয়েছ?’
‘তা দিয়েছি। বাছুর যেখানে লুকিয়ে রাখা হয় সেই জায়গাটা খুঁজে পাওয়ায় ওর মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল।’
‘আচ্ছা!’ শুকনো শোনাল জিমের কণ্ঠ। ‘ওই বাছুরের খোঁজ বের করতেই তোমাকে পাহাড়ে পাঠিয়েছি আমি। তুমি যদি মনে করো তোমার জীবনবৃত্তান্ত বলা শেষ হয়েছে তা হলে আমি জানতে চাইব বাছুরগুলো কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এক বছর ধরে জায়গাটার খোঁজ করছি আমরা। কেলটনের বাড়ি কোথায় সেটাও জানা দরকার। ওর সঙ্গে জরুরী কাজ আছে আমার।’
‘যাওয়া ঠিক হবে না। আগে আমার কথা শুনে নাও। কালকে অদ্ভুত একটা দৃশ্য দেখেছি কেলটনের লোকদের তাড়া খেতে খেতে। একটা উঁচু উপত্যকায় শর্টহর্ন গরুর পালে চরছে অসংখ্য সাদা মুখওয়ালা হেরিফোর্ড বাছুর! সবগুলোর সমান বয়স! তারচেয়েও বড় কথা, পালে একটা ষাঁড়ও নেই। মা-বাপ ছাড়া বাছুর এল কোত্থেকে সেটা বুঝলাম না। বেশিক্ষণ দেখার সুযোগ হলো না। কেলটনের লোকগুলো একটা বক্স ক্যানিয়নে আমাকে আটকে ফেলল। ওখানেই মরেছে আমার ঘোড়াটা।’
‘কালকে যখন জানলে তখনই শহরে এসে আমাদের জানালে না কেন? জানালে ভাল হত।
চোখ কপালে তুলল শর্টি। ‘পাগল নাকি পেট খারাপ? আমি যাব হেঁটে? তাও এই পাহাড়ী এলাকায়! অপেক্ষা করছিলাম, কেউ ঘোড়া নিয়ে আসবে। দেখা গেল আমার অপেক্ষা করাটা সার্থক হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় বুদ্ধি খাটালে খাটনি বাঁচে।’
‘আগে জানলে এত উপকার হত যে তোমার জন্যে বাকবোর্ড নিয়ে আসতাম,’ শুকনো গলায় বলল জিম। ‘যাক গে, যা হবার হয়েছে। এখন চলো স্টিচের ঘোড়াটা নিয়ে তোমার স্যাডল আনতে যাই। স্যাডল পাওয়ার পর গরুর পালটা দেখব এক নজর। কেলটনের সঙ্গে পরে দেখা করলেও চলবে।’
‘এখনই স্টিচের ঘোড়ায় আমার স্যাডল চাপিয়ে ফেলব,’ এক গাল হাসল শর্টি। ‘ঠেকায় পড়লে তাড়াতাড়ি পালাতে সুবিধে হবে। …তুমি কি এখানেই অপেক্ষা করবে?’
‘স্যাডল কোথায় তোমার?’
‘ওই তো, পাথরের পেছনে রেখেছি।’
‘তুমি কি বলতে চাইছ সারাটা সময় ওই ভারী স্যাডল বয়ে তাড়া খেয়ে বেড়িয়েছ?’
‘না। টিলার ওদিকটাতেই আমার ঘোড়াটাকে গুলি করে মেরেছে কেলটন।’
‘তারমানে ঘোড়া নেই এমন অবস্থায় তোমাকে তাড়া করেনি ওরা?’
‘নিশ্চয়ই করেছে। কিন্তু চালাক খরগোস সবসময় শিকারীর গোঁফের তলায় লুকিয়ে থাকে। এক চক্কর মেরে ঠিক আগের জায়গায় ফিরে এসেছি আমি। ওদিকের উপত্যকা ঘুরে ব্যাটাদের খসিয়ে আসার পর এদিকে কারও কোন চিহ্নও আর দেখিনি। বলতে পারো আমি চালাক খরগোসের মতই বুদ্ধিমান।’
‘তা হলে স্যাডল চাপিয়ে ফেলো। সম্ভব হলে সন্ধ্যার আগেই গরুর পালটা আমি দেখতে চাই।’
‘সেজন্যে তোমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। আসলে বলতে গেলে ওদের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছ তুমি।’
‘মানে?’
‘সিকি মাইল দূরেই আছে পালটা। তবে কেলটন যখন উপত্যকা থেকে তোমাদের উৎখাত করবে তখন ওগুলো ওখানে থাকবে না। বলিনি বুঝি তোমাকে? কেলটন তোমাদের খেদানোর পরিকল্পনা করেছে।’
‘তাই?’
‘তা হলে এতক্ষণ কী বলছি!’ ভ্রূ কুঁচকাল বিরক্ত শর্টি। ‘আমার কথার মাঝে বাগড়া দিচ্ছ বলেই তো খুলে বলতে পারছি না। কেলটনের চাকরি পেয়েছিলাম কারণ গানম্যান ভাড়া করছে সে। আমাকে বলেছে গত কয়েক দিন উপত্যকার র্যাঞ্চাররা তাকে বড় বেশি জ্বালাচ্ছে। পঞ্চাশজন লোক নিয়ে সব কয়জন র্যাঞ্চারকে এই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেবে সে। একটা বাড়িও আস্ত রাখবে না। ধরতে পারলে একজনকেও জীবিত ছাড়বে না। ওরা ঠিক করেছে কাউন্টি সীট দখল করে অফিসে নিজেদের লোক বসাবে। এদিকের গোটা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার মতলব করেছে কেলটন। এখন তুমি জানলে গত কয়েক দিনে আমার জীবনে কী ঘটেছে। এবার যদি গরু দেখতে যেতে চাও তো চলো।’
উঠল ওরা। চটপট স্টিচের ঘোড়ার পিঠে নিজের স্যাডল চাপিয়ে ফেলল শর্টি। ওকে অনুসরণ করে পেঁচানো একটা ট্রেইল ধরে এগোল জিম। উপত্যকার দিকে চলেছে, নিজের ভাবনায় মগ্ন। অনেকক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল, ‘একটা কথা মনের ভেতর খচখচ করছে। এটা জানো যে ঠিক কখন লড়াই শুরু করবে কেলটন?’
‘নিশ্চয়ই! এক সপ্তাহ পর। প্রথমে একদল লোক নিয়ে তোমাদের বন্দি করা লোকটাকে ছুটিয়ে আনবে, তারপর গোলমালের সুযোগে খুন করবে শেরিফকে। ওদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ালে তাকেও শেষ করে দেবে। শহরে আগে হামলা করবে, পরে র্যাঞ্চারদের উৎখাতের সময় যাতে দলবদ্ধ হয়ে ওদের প্রতিরোধ করার শক্তি কারও না থাকে। আরও লোক আসবে সে অপেক্ষায় আছে কেলটন। রীতিমত সেনাবাহিনী গঠন করছে সে। এমন ব্যবস্থা করছে যাতে লড়াই শুরু করলে প্রথম চোটেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়।’
‘শর্টি,’ বলল গম্ভীর জিম, ‘আমরা এক বছরে যা জানতে পারিনি সেটা তুমি কয়েক দিনে জেনেছ। তুমি না বললে আমরা জানতেও পারতাম না যে এরকম একটা হামলা আসতে যাচ্ছে সবার ওপর।’
‘আমার মাথায় যেটা ঢুকছে না সেটা হলো বাছুরের দুটো দল দেখেছি। একটার বাছুরের বয়স আরেকটার চেয়ে মাস তিনেকের কম। ওগুলোর মা গেল কোথায়? গাভী?’
জবাব দিল না জিম। ওর ঘোড়াটা একটা ঢাল বেয়ে ওপরে উঠেছে। নিচে দেখা যাচ্ছে ঘাসজমি। এক সময় জায়গাটায় লেক ছিল। এখন শুকিয়ে গেছে। সমতল ভূমিতে চরছে অসংখ্য বাছুর। সব হেরিফোর্ড। ওগুলোকে সঙ্গ দিচ্ছে শর্টহর্ন গরু, দুধের চাহিদা মেটাচ্ছে।
স্পষ্ট বুঝতে পারল জিম, হেরিফোর্ডগুলো সব ওদের কাছ থেকে চুরি করা গরু।
‘ব্র্যাণ্ড আছে?’
‘আছে। সব কেলটনের সার্কেল কে। ‘
‘এবার ধরা পড়বে কেলটন,’ দাঁতে দাঁত চাপল জিম। ‘এতদিনে ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। হেরিফোর্ড পেল কোথায় সে? কী জবাব দেবে কেলটন? ওর তো হেরিফোর্ড গরুই নেই!’