মৃত্যু উপত্যকা – ১৪

চোদ্দ

শেষ বিকেলে বাকবোর্ডে করে লিণ্ডাকে নিয়ে শহরে পৌঁছল জিম। শর্টি জিমের ঘোড়াটা নিয়ে সঙ্গে এসেছে। ডাক্তার বেনসনের বাড়িতে লিণ্ডাকে দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল ওরা। জিমের বামকাঁধ এখনও নীল রঙের রুমাল দিয়ে বাঁধা, কিন্তু সুস্থ বোধ করছে ও এখন।

শর্টি ঢুকেছে সেলুনে। বস্কেটের দোকানের দিকে পা বাড়াল জিম, ওর নজর কিছুই এড়াচ্ছে না। শহরে প্রচুর নতুন লোকের আমদানী হয়েছে। পাহাড়ী লোক। কেলটন পাঠিয়েছে এদের। কিছু একটা মতলব এঁটেছে লোকটা। সতর্ক হয়ে উঠল জিম। যেকোন সময় বিপদের খাঁড়া নেমে আসতে পারে ওর ওপর।

একটা দোকানের বাইরে বেঞ্চে বসে আছে কয়েকজন পাহাড়ী লোক। প্রত্যেকে সশস্ত্র। অলস দৃষ্টি চোখে। যেন অপেক্ষারত শকুনের দল, শহরটা মরে যাবে সে আশা নিয়ে বসে আছে।

বস্কেটের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে এক লালচুলো অল্পবয়সী দানব আর কুঁজো মত এক লোক। ইঁদুরের মত সরু তার চেহারা।

জিম লক্ষ করল ওর দিকে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল তারা। জিম দরজার দিকে পা বাড়ানোর পরও জায়গা থেকে নড়ল না। থামল জিম, বুঝতে পারছে এটা একটা ফাঁদ হতে পারে।

এতক্ষণে ইঁদুরমুখোকে চিনতে পারল। শর্টি আর ওকে পাহাড়ে যারা ধাওয়া করেছিল তাদের মধ্যে এও ছিল। লোকটা নিশ্চিত ভাবেই ওকে চিনেছে। এই লোকের গুলিতেই আহত হয়েছিল জিম।

জিমের সহজাত বুদ্ধি বলছে এটা একটা ফাঁদ। ফাঁদটা এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু চোখের সামনে লোকটাকে দেখে রাগ ওর স্বাভাবিক বুদ্ধি ঘোলা করে দিল। অন্তরে অনুভব করল, ওর পক্ষে পিছানো সম্ভব নয়। সামনে থেকে লোকটাকে সরিয়ে দোকানে ঢুকবেই ও, তাতে যদি পরিকল্পনা উচ্ছন্নে যায় তবু।

‘আমি দোকানে ঢুকব, স্লিম,’ নিচু গলায় বলল জিম। ‘তোমার কোন আপত্তি আছে?’

চোখ সরু করে জিমকে দেখল লম্বা লোকটা। ‘আপত্তির কী আছে! ঢুকলে ঢোকো।’

‘তা হলে সরে দাঁড়াও। পথ জুড়ে আছো তুমি।’

‘এটা তো অন্য কথা হয়ে গেল, বন্ধু। সাইডওয়াকটা জনগণের। যেখানে খুশি সেখানেই দাঁড়াব আমি। ঘুরে যাও।’

‘সরবে না তুমি?’ রাগে কেঁপে গেল জিমের গলা।

‘না। আমাকে সরানোর ইচ্ছে জাগছে নাকি তোমার?’

‘জাগছে। সরো!’

কুঁজো লোকটা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছে। যেকোন সময় গোলাগুলি শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু পিছাতে জিম অভ্যস্ত নয়।

গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধানোও ঠিক নয়। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে লোকটাকে পাশ কাটাল জিম। চোখের কোণে দেখল মাতালটার ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠেছে। ঝটকা দিয়ে সিক্সগান বের করল ও, ঠেসে ধরল চিকন লোকটার পাঁজরে।

‘স্লিম, তোমাকে আমি সরে দাঁড়াতে বলেছিলাম,’ নিচু স্বরে বলল। ‘তুমি কি চাও গুলি করে পথ করে নিই আমি?’

লালচুলো দানব দোকানের দরজার পাশে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবার সিধে হয়ে দাঁড়াল সে, সঙ্গীর বাহু ধরে সরিয়ে নিয়ে গেল। হাসছে দানব।

‘ওকে ঢুকতে দাও, স্লিম।’

দরজাটা খুলে দোকানের ভেতর ঢুকল জিম, দেখল শুকনো খাবারের কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বস্কেট। জিমকে দেখে কাঁধ থেকে রাইফেলটা নামাল সে।

‘ব্যাপার কী?’ জিজ্ঞেস করল জিম।

‘আস্ত পাগল নাকি তুমি?’ জবাবে ভ্রূ কুঁচকাল বস্কেট। ‘শহরে ওরা অন্তত পনেরোজন আছে। খুন হবার শখ চেপেছে নাকি তোমার! ভুলেও এখানে ওদের সঙ্গে লাগতে যেয়ো না।’

‘লাগতে যাব না? এটাই তো আমাদের সমস্যা। শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা আমরা বড় বেশি দিন ধরে করে আসছি। আমরা যত দু’পায়ের ফাঁকে লেজ গুটাব ওরা তত বাড় বাড়ার সাহস পাবে। আর এরকম চলতে দেয়া যায় না। এখন এখানে কেন এসেছি জানো? জ্যাকফর্ক থেকে কেলটনের নামগন্ধ মুছে দেব আমি। দরকার হলে একা লড়ব। ইচ্ছে থাকলে তোমরাও যোগ দিতে পারো।’ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে দিল ও। ‘এই যে, যাদের সঙ্গে পেলে উপকার হবে তাদের একটা লিস্ট। যারা ঝুঁকি নিতে রাজি তারা যেন কাল দুপুরে পাইনটপে আমার সঙ্গে দেখা করে। খবরটা চেপে রেখো।’

বস্কেট একটু ভেবে দেখল। কস্টিগ্যানের মৃত্যুর পর সে-ই শহরের শেরিফের দায়িত্ব পালন করছে। তাই বলে লড়াইতে নেতৃত্ব দেয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই। জিম কার্সন দায়িত্বটা নিচ্ছে বলে স্বস্তি বোধ করল সে। ভয় পায়নি বস্কেট, কিন্তু মনেপ্রাণে ব্যবসায়ী সে, লড়াইতে তেমন উৎসাহ পায় না।

‘ঠিক আছে,’ একটু পর বলল সে। ‘কাজটা আমাদের করতেই হবে। যত আগে সারা যায় ততই ভাল।’

‘আমি তা হলে ম্যালোনকে বলতে যাচ্ছি। তাজা বাতাস ওর পছন্দ। যেতে চাইতে পারে ও।’

‘ওর সেলুনে ঢুকো না,’ সতর্ক করল বস্কেট। ‘ওখানে পাহাড়ী দস্যুরা গিজগিজ করছে। একটু পরপর ওদের ঢুকতে বেরতে দেখছি।’

‘ম্যালোনকে পেলে ভাল হয়,’ জবাবে বলল জিম। ‘তাছাড়া এখন আমার মনের যে অবস্থা তাতে ঝামেলা এড়াব না আমি।’

বস্কেটের দোকানের জানালার সামনে দাঁড়াল ওরা। দেখতে পেল লালচুলো দানব তার কাঠির মত সঙ্গীকে নিয়ে ম্যালোনের সেলুনের ব্যাট উইং দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল।

‘দেখলে?’ বলল বস্কেট। ‘শহরটা প্রায় দখল করে রেখেছে ওরা। গোলমাল করার সুযোগ খুঁজছে। বিশেষ করে তোমাকে ফাঁসাতে পারলে ওরা খুশি হবে। কেলটন সম্ভবত তোমার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ওদের পাঠিয়েছে।’

‘প্রথমে আমারও তাই মনে হয়েছিল,’ বলল জিম। ‘তারপর একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। সহজেই আমাকে গোলাগুলিতে নামাতে পারত, অথচ ওই লালচুলো লোকটা তার সঙ্গীকে তর্কের মাঝখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল।’

‘চিকন লোকটা মাতাল। লাল চুলের লোকটা হয়তো ভেবেছে দু’জন মিলে তোমাকে শেষ করতে পারবে না। তোমার একটা নাম আছে কঠোর লোক হিসেবে। একটা হাত অকেজো থাকলেও হেলা করা উচিত হবে না বলে ভেবেছে। পাহাড়ে এমন লোক খুব বেশি নেই যে তোমার অস্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইবে।’

‘আমার তা মনে হয় না,’ বলল জিম। ‘আমার ধারণা কেলটন জানে একটা পরিণতি ঘনিয়ে আসছে। সেজন্যেই লোক পাঠিয়েছে সে নজর রাখতে। আমরা সংগঠিত হলে যাতে সে-খবর ওর কাছে পৌঁছে যায়। মনে হয় না শহরে লড়াই করার ইচ্ছে আছে তার। ও এমন জায়গায় আমাদের চাইবে যাতে সহজেই জিততে পারে। গোটা এলাকায় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় সে, কেউ যাতে আর তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস না করে। আমার মত মাত্র একজন লোককে মারলে তার ফলাফল ব্যাপক হবে না।’

‘তা হলে লোক যোগাড়ের সময় তোমাকে সাবধান থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে কোন পচা আপেল থাকতে পারে।’

অধৈর্য ভাবে বাতাসে হাত ঝটকা মারল জিম। ‘পচা আপেল থাকুক আর না থাকুক, আমি কেলটনের বিরুদ্ধে নামছি। …পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে।’

‘বোকার মত কাজ কোরো না। ম্যালোনের সেলুন থেকে দূরে থাকো!’

‘ম্যালোনের ওখানে যাচ্ছি,’ বলে দোকান থেকে বেরিয়ে এল জিম, বোর্ডওয়াকে নেমে সেলুনের দিকে পা বাড়াল।

সামনে তিনজন পাহাড়ী লোক দেখল ও, ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। স্যাডল শপের সামনের বেঞ্চে বসে আছে দু’জন, অপরজন একটা খুঁটিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো। আলাপ চলছে তাদের মাঝে। হয় তিনজনের মাঝ দিয়ে জিমকে পার হতে হবে, নয়তো ঘুরে বোর্ডওয়াক থেকে নেমে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে।

মাঝখান দিয়ে এগোল জিম। তিনজনের সঙ্গেই চোখাচোখি হলো। বাঁকা হাসি লোকগুলোর ঠোঁটে। লোকগুলোকে পাশ কাটানোর পর পিঠের কাছটা শিরশির করে উঠল ওর, কিন্তু পিছন ফিরে তাকাল না।

আরও কয়েক পা এগিয়ে রাস্তা পার হয়ে ম্যালোনের সেলুনে ঢুকল ও। ব্যাট উইঙের কাছে থেমে দাঁড়াল, ভেতরের আবছায়ায় চোখ সইয়ে নিচ্ছে।

ঘরের ভেতর চোখ বুলাল ও। টানটান উত্তেজনা সেলুনের ভেতরে।

ওর বামদিকে বারের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে শর্টি। ডানদিকে পাঁচজন লোক, শর্টির দিকে তাকিয়ে। দেয়ালের দিকে পিঠ রেখে শর্টিও লোকগুলোকে দেখছে। হাতে বীয়ারের গ্লাস। ওর সামনে দেয়া তিনটে বীয়ারের দ্বিতীয়টায় চুমুক দিল শর্টি।

পেছনের, বারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে প্যাট ম্যালোন। তেল দিয়ে চুল আঁচড়েছে সে। ঠোঁটে ঝুলছে মোটা একটা সিগার। কোমরে ঝুলছে সাদা একটা অ্যাপ্রন। হাত দুটো বুকের কাছে ভাঁজ করা। শোল্ডার হোলস্টারের খুব কাছে।

থমথম করছে পরিবেশটা। পাহাড়ী লোকরা তাদের ড্রিঙ্কিং নিয়ে ব্যস্ত। হাসি হাসি মুখে চোখে ফাঁকা দৃষ্টি নিয়ে বীয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে শর্টি।

শর্টির দিকে এগোল জিম, দেখল ওর মুখে ফুটে উঠেছে স্বস্তির হাসি।

‘একটা বীয়ার নাও, জিম। বেশ উত্তপ্ত একটা পরিবেশ, কি বলো?’

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা বীয়ার টেবিলে জিমের সামনে রাখল ম্যালোন। টের পেল ওকে কাভার করছে জিম। বীয়ারটা রেখে পিছু হটে আবার বারে হেলান দিল সে।

চারপাশে নজর বুলাল জিম, একজনও ওর চোখ এড়াল না। লালচুলো দানব ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। সহজ সাদাসিধে হাসি। ভেতরে কোন প্যাচ আছে বলে মনে হলো না। চিকন লম্বা লোকটা জিমের দিকে বিষদৃষ্টিতে তাকাল।

‘শহরে অনেক অতিথি এসেছে দেখছি,’ স্বাভাবিক স্বরে ম্যালোনের উদ্দেশে বলল জিম। ‘আতিথেয়তা দেখানো উচিত। দেখো তো ওরা কী মদ খাচ্ছে?’

কী যেন বলতে গিয়েও চুপ করে থাকল ম্যালোন। একটু ইতস্তত করে তারপর বারের কোনা ঘুরে পাহাড়ী লোকদের উদ্দেশে উঁচু গলায় বলল, ‘এই ভদ্রলোক সবাইকে ড্রিঙ্ক অফার করছে। কে কী নেবে?’

কুড়ালমুখো চিকন লোকটা নিচু স্বরে গালি দিয়ে জানাল সে যার তার পয়সায় মদ খায় না। কিন্তু হাসল লালচুলো। দরাজ গলায় বলল, ‘ধন্যবাদ। আমাকে ডাবল রাই।’

একে একে প্রত্যেকের সামনে মদ দিল ম্যালোন, তারপর ফিরে গিয়ে লোকগুলোর মুখোমুখি হয়ে বারে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল আবার।

গ্লাসটা ঘুরিয়ে ভেতরের তরলটার রং দেখল লালচুলের যুবক। প্রশংসা করে বলল, ‘দামি জিনিস।’ তাকাল জিমের দিকে। ‘ধন্যবাদ তোমাকে। আনন্দে ভরে উঠুক তোমার জীবন। তোমার স্বাস্থ্য কামনা করছি।’ চুমুক দিল গ্লাসে।

জবাবে মুখের কাছে গ্লাস নিয়ে বীয়ারে ঠোঁট ভিজাল জিম।

ঠিক সেই মুহূর্তে বারে সজোরে চাপড় দিল চিকন লোকটা। খেঁকিয়ে উঠল, ‘ব্যাপারটা কী! আমাকে কার্সন বোকা বানাতে পারবে না।’

চালু হাত লোকটার। ঝট করে পিস্তল তুলে আনছে। তাক করতে শুরু করেছে জিমের বুক লক্ষ্য করে। জিমের ডানহাত বীয়ারের গ্লাস ধরে আছে। বাম হাত ঢাকা নীল একটা ব্যাণ্ডানা দিয়ে। ওটার তলা থেকে বিস্ফোরিত হলো জিমের সিক্সগান।

কাঁধে গুলি খেয়ে পিছিয়ে গেল লোকটা, একটা টেবিলে বাড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ল। চট করে তার বুকের ওপর বুট সুদ্ধ পা তুলে দিল লালচুলো, যাতে সে উঠতে না পারে।

এখনও ডানহাতে বীয়ারের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিম। বামহাতে ধরা অস্ত্রের নল থেকে পাক খেয়ে খেয়ে ধোঁয়া উঠছে।

দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শর্টি। বারে দাঁড়ানো চারজন পাহাড়ী লোকের ওপর তাক করে রেখেছে দু’হাতের সিক্সগান দুটো।

ম্যালোনের হাতেও শোভা পাচ্ছে পিস্তল। লালচুলোর দিকে অস্ত্র তাক করে রেখেছে। লাথি দিয়ে সঙ্গীর হাত থেকে পিস্তল ফেলে জিমের দিকে ফিরে তাকাল লালচুলের যুবক।

ফাঁকা চোখে জিমের নীল ব্যাণ্ডানা বাঁধা হাতটা দেখছে শর্টি। ম্যালোনের চেহারা থেকে নিস্পৃহ ভাবটা দূর হয়ে গেছে। জিম তাকিয়ে আছে লালচুলোর দিকে। হাসছে লালচুলো। হাসিটা ছোঁয়াচে, তবে চোখে তার খেলা করছে বদমায়েশী। চিকন লোকটা টলমল পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।

‘স্লিম আর কিছু করবে না,’ জানাল লালচুলো। ‘আমি নিজে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। মাতাল হয়ে গেছে ও।’

জবাব দিল না জিম বা ম্যালোন। শর্টির অস্ত্র এখনও পাহাড়ী লোকদের ওপর। মুখ খুলল ও।

‘খারাপ লোকের সঙ্গে মিশছ তুমি, বাছা। এদের সঙ্গে ঘুরে ভাল কিছু হবে না তোমার।’

‘ওদের সঙ্গে এসেছি আমি,’ বলল লালচুলো। ‘ওদের সঙ্গেই থাকব।’

‘এধরনের আনুগত্যের কোন মূল্য নেই।’

‘তবু।’

‘দুঃখের কথা। সৎ পথে থাকলে অনেক মেয়ে তোমাকে চাইত। ভাল ব্যবহার আর সম্মান পেতে মানুষের কাছ থেকে। পাহাড়ে তা কখনও পাবে না তুমি।’

‘হয়তো তোমার কথাই সত্যি। তবে চোখ বন্ধ করলে একটা মেয়ে যা হাজার মেয়েও তা-ই। আমার সঙ্গিনী বিষয়ে তোমাকে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছে?’

‘হঠাৎ মনে পড়ে গেল যে কিছুদিন আগে আমি সনোরায় ছিলাম। সুন্দরী মেয়ের অভাব নেই ওখানে। লাল চুলের যুবক স্বামী পাবার জন্যে রীতিমত লড়াই করবে ওরা।’

‘কথাটা মনে থাকবে আমার। এদিকের কাজ শেষ হওয়ার পর হয়তো যাব সনোরায়।’

‘হাতে বেশি সময় নেই। অনেক কিছুই ঘটতে পারে এখানে। গেলে তোমার দেরি করা উচিত হবে না। সে যাই হোক, আমি আসলে মেক্সিকান মেয়েদের ভাল চিন্তা করেই কথা বলছিলাম।’

‘ধন্যবাদ, আমাকে জানানোর জন্যে।’ চিকন লোকটা একটা চেয়ারে বসেছে, সেদিকে তাকাল লালচুলো। ‘স্লিম, রওনা হচ্ছি আমরা। সাবধান থাকবে। আমি না বলতে যদি আবারও কোন বিপদে জড়াও তা হলে মনে রেখো আমি নিজে তোমাকে টাইট দেব। বেরোও, স্লিম। ছেলেরা, চলে এসো, আরও দুটো সেলুনে মদ খাওয়া বাকি।

ঘুরে জিমের দিকে তাকাল সে, চোখে মিটিমিটি হাসি। ‘আবার দেখা হবে, বন্ধু। ড্রিঙ্কের জন্যে ধন্যবাদ।’

চুপ করে থাকল জিম। দেখল সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেল লাল চুলের যুবক। ওদের পেছনে দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবার পর শিস দিল শর্টি।

‘ঝামেলাবাজ লোক দেখলে সাধারণত খুশি হই না আমি,’ জিমের দিকে তাকাল সে। ‘তবে তোমাকে ঢুকতে দেখে স্বস্তি পেয়েছি সেটা অস্বীকার করব না। তা, কবে থেকে তুমি লুকানো অস্ত্র রাখতে শুরু করলে?’

‘আজ থেকে। বস্কেটের বুদ্ধি। ঘটনা যা ঘটল তাতে একথা বলা যাবে না যে স্লিমকে আমি সমান সুযোগ দিইনি।’

‘তা বলা যাবে না,’ সায় দিল ম্যালোন। ‘বীয়ারের গ্লাস গানহ্যাণ্ডে ধরে ছিলে এমন সময় ড্র করেছে স্লিম। আমিও তৈরি ছিলাম। ওরা ঢোকার পর থেকেই ভয় পাচ্ছিলাম যেকোন সময় গোলাগুলি শুরু হতে পারে। বুঝলাম না আজকে এত ভদ্র আচরণ করল কেন। ওদের বেশিরভাগকেই দেখলাম চুপচাপ ড্রিঙ্ক করছে। মাতাল শুধু হয়েছে ওই স্লিম লোকটা।’

‘শর্টি, তুমি না বলেছিলে কেলটনের একজন লোকের চুল লাল? এ-ই কি সে?’

‘হ্যাঁ। ঝামেলা করল না কেন বুঝলাম না। কেলটনের যেকোন নির্দেশ মানবে লোকটা। ওর আচরণের কারণ আমার মাথায় ঢুকল না।’

‘একটাই মাত্র কারণ আছে,’ বলল জিম। ‘কয়েক মিনিট আগে সুযোগ পেয়েও আমাকে গুলি করেনি ওরা। মনে হচ্ছে কেলটন বলেছে শহরে থাকতে, কিন্তু লড়াই শুরু করার কথা বলেনি।’

‘সেক্ষেত্রে ওর মাথায় অন্য কোন ফন্দি আছে,’ বলল শর্টি। ‘কী হতে পারে সেটা?’

ম্যালোনকে নিজের পরিকল্পনা খুলে বলল জিম। জানাল আগামী কাল দুপুরে পাহাড়ী দস্যুদের নিজেদের এলাকায় ঢুকবে ও।

সঙ্গে যেতে চাইল ম্যালোন, বলল, ‘খুশি মনে যাব আমি। ছেলেদের চাঙা করার জন্যে সামান্য ভাল মদও নেব। দোকান করতে করতে ধসে গেছি একেবারে। মাঝে মাঝে তাজা বাতাস দরকার।’

‘গোলাগুলি মানুষকে চাঙা করে তোলে,’ হাসল শর্টি।

‘কিন্তু করছে কী লোকগুলো শহরে ঘুরঘুর করে?’ চিন্তিত দেখাল ম্যালোনকে। ‘ব্যাপারটা পছন্দ হচ্ছে না আমার। ভদ্র আচরণ করলে ওদের মতলব বোঝা মুশকিল।’

‘সময় আসুক, তখন ওদের, নিয়ে চিন্তা করব,’ বলল জিম। ‘ম্যালোন, শর্টিকে আর বীয়ার দিয়ো না। সেলুনের সব বীয়ার সেঁটে দিতে পারবে ও। আরেকটা কথা, ওর কোন কথা ভুলেও বিশ্বাস কোরো না, ঠকবে।’

‘শোনা কথা আমি মোটেও বিশ্বাস করি না,’ বলল ম্যালোন। ‘যা দেখি তার অর্ধেক বিশ্বাস করি। এই যেমন পাহাড়ের লোকগুলো ভদ্র আচরণ করছে, কিন্তু আচরণ বদলে যাবে না সেটা আমি বিশ্বাস করি না। কী যে মতলব আঁটছে…’

দরজার দিকে পা বাড়াল জিম, সেলুনমালিকের মত একই কথা চিন্তা করছে। মাথা থেকে জোর করে চিন্তা দূর করে দিল। হাতে অনেক কাজ বাকি। বিকেলের পরবর্তী সময়টা কাটাল ও শহরের এখানে ওখানে ঘুরে লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে। অলস ওর ভাবভঙ্গি, দেখে মনে হলো না কোন তাড়া আছে। ছয়টার সময় সবাইকে জানানো শেষে বস্কেটের দোকানে ফিরল ও।

শহরের অস্বাভাবিক শান্ত পরিবেশটা ওর পছন্দ হচ্ছে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *