তেরো
‘বনের ভেতরে ঢোকো,’ নির্দেশ দিল জিম, পরক্ষণে ঘোড়াটাকে ঘুরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল।
উডফোর্ডের ঘোড়ার সঙ্গে ধাক্কা খেল ওটা। একটা গুলি · উডফোর্ডের ঘোড়াটার হৃৎপিণ্ড ভেদ করে চলে গেল। হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল জন্তুটা, কাত হয়ে পড়ে গেল।
আগেই লাফ দিয়ে নেমে পড়েছে উডফোর্ড। তাকে নিজের ঘোড়াটার আড়াল দিল জিম। বনের দিকে দৌড় দিল উডফোর্ড। শেষ কয়েক পা ক্রল করে ঢুকে গেল গাছের আড়ালে, অন্ধকার তাকে গ্রাস করে নিল।
আওয়াজের প্রচণ্ডতায় কাঁপছে যেন চারপাশ। চেঁচাচ্ছে লোকজন। গর্জন ছাড়ছে অস্ত্র। সব ছাপিয়ে উঠেছে ভীত বাছুরগুলোর ছুটে যাওয়ার আওয়াজ। দিশেহারা হয়ে দিগ্বিদিকে পালাচ্ছে ওগুলো।
বনের ধারে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ লক্ষ্য করে হাতের অস্ত্র খালি করল জিম। ট্রিগার চাপল আবার। খালি গুলির খোসায় আঘাত করল হ্যামার। বনের ধারে ঘোড়াটাকে নিয়ে গেল ও, অন্ধকারে নেমে একটা গাছের পেছনে দাঁড়াল। দ্রুত হাতে গুলি ভরতে শুরু করল অস্ত্রে।
স্লিঙে ঝুলছে ওর বামহাত। প্রায় কোন কাজেই আসছে না। ওই হাতেই অস্ত্রটা ধরে আছে ও, ভাল হাতে গুলি ভরছে।
বেশুমার মরছে বাছুরগুলো। কাউবয়রা তাড়াহুড়ো করে সরে যাচ্ছে ছুটন্ত বাছুরের সামনে থেকে। তাদের হট্টগোল গুলির আওয়াজ ছাপিয়ে উঠছে।
জিম তিক্ত মনে ভাবল, ভালই পরিকল্পনা করেছে কেলটন। শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে কী করবে।
উপত্যকায় সে নেই এখবর ছড়িয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ র্যাঞ্চারদের টেনে এনেছে তৈরি করা ফাঁদে। এখন যদি জিম আর জে বি উডফোর্ড মারা যায় তা হলে বাকিদের সামাল দিতে খুব একটা ভুগতে হবে না তাকে। ভেবেচিন্তে কাজ করেছে কেলটন। সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও গেছে।
সিক্সগান রিলোড করা হয়ে গেছে জিমের, এবার সিলিণ্ডারটা আটকে নিয়ে বনের ধার দিয়ে এগোল ও। বেশ কয়েকটা ঘোড়া চোখে পড়ল ওর, গাছের গায়ে বাঁধা। বুঝতে দেরি হলো না কেলটনের লোকরা আগেই এসে উপস্থিত হয়েছে এখানে। জানত র্যাঞ্চাররা এপথে আসবে। তৈরি ছিল তারা। অ্যাম্বুশ করতেই এসেছে।
পাশ কাটানোর সময় ঘোড়াগুলোর বাঁধন খুলে দিল জিম। গোলাগুলির আওয়াজে ভীত হয়ে আছে জন্তুগুলো। মুক্তি পেয়ে ছুটে হারিয়ে গেল অন্ধকারে।
গাছের ফাঁক দিয়ে রাগী ভোমরার মত গুঞ্জন তুলে বাতাস চিরে যাচ্ছে অসংখ্য বুলেট। দুপক্ষের গোলাগুলির আওয়াজ বাড়ছে কমছে। কেলটনের লোকদের পেছনে চলে এসেছে জিম। রাইফেলের ঝিলিক লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করল।
কাউবয়রা বাছুরগুলোর মাঝে ছোটাছুটি করছে। ভাল লোক তারা। নির্বিরোধী। কিন্তু কাপুরুষ নয়। লড়ছে প্রাণপণে। ঘোড়ার পিঠে দু’তিনজনের আবছা আকৃতি দেখতে পেল জিম। অন্যরা ঘোড়া হারিয়েছে। মৃত বাছুরের দেহের পেছনে অবস্থান নিয়ে পাল্টা হামলা করছে তারা।
কেলটনের এক লোক ছায়া থেকে বেরিয়ে এল। সিধে হয়ে দাঁড়িয়েছে সে। অশ্বারোহী এক কাউবয়কে নিখুঁত লক্ষ্যে গুলি করার মতলব।
লক্ষ্যস্থির করে গুলি করল জিম। লোকটার মাথার পেছনটা ফেটে মগজ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার করল লোকটা, তারপর পড়ে গেল মুখ থুবড়ে।
হঠাৎ জিম বুঝতে পারল কেলটনের লোকদের ঘেরাওয়ের মাঝখানে পড়ে গেছে ও। বন্ধুদের কাছ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
‘ওই যে একটা!’ চেঁচাল একজন।
জিমের চারপাশে তুমুল গোলাগুলি আরম্ভ হয়ে গেল।
জমিতে চাঁদের আলো পড়েছে, সে আলো লাফ দিয়ে পার হলো জিম, দৌড়ে এগোল কেলটনের এক স্যাঙাতের দিকে। একজন চিনে ফেলল ওকে।
‘ওই যে কার্সন!’ উঁচু স্বরে জানাল কে যেন। ‘গুলি করো! গুলি করো!’ মরা একটা গাছের গুঁড়ির আড়ালে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল জিম, পরক্ষণেই উঠে বসে অস্ত্র উঁচাল।
‘পারলে মারো আমাকে,’ শ্বাসের ফাঁকে বলল ও। একদল লোক পিছু নিয়ে ছুটে আসছে, তাদের দিকে অস্ত্র তাক করল।
প্রথম লোকটা মারা গেল গাছের পাঁচ ফুটের মধ্যে আসার পর। ক্রল করে এগিয়ে তার পিস্তল দুটো সংগ্রহ করে বেল্টে গুঁজল জিম। এত দ্রুত গুলি করতে হচ্ছে যে নিজের অস্ত্র ভরার কোন সুযোগ নেই।
আরও দু’জন সাহস করে এগোচ্ছিল। চাঁদের আলোয় পাখি মারার মত সহজে তাদের শেষ করে দিল জিম। দু’জনই বুকে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছে। আর কেউ এগোনোর সাহস দেখাল না।
পাঁচ সেকেণ্ড অপেক্ষা করে ক্রল করতে শুরু করল ও, গাছের আড়াল নিয়ে এগিয়ে চলল। ক্রমেই বনের ভেতর প্রবেশ করছে। একটু পর থেমে ফাঁকা জায়গাটা জরিপ করল। দু’পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে গুলি করছে, পিছাচ্ছে না কেউ।
একটা গাছ ঘুরতেই কেলটনের এক লোকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খেল জিম। অস্ত্র তুলতে শুরু করেছিল লোকটা, কিন্তু জিম তার পেটে সিক্সগানের নল ঠেকিয়ে গুলি করায় পেট চেপে ধরে পড়ে গেল। ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে। বার কয়েক ঘড়ঘড় করে স্তব্ধ হয়ে গেল। হাতের খালি অস্ত্রটা ফেলে দিয়ে লোকটার অস্ত্র তুলে নিল জিম।
খোলা জায়গাটায় এখন আর কোন অশ্বারোহী নেই। গোলাগুলিও কমে গেছে আগের তুলনায়। কাউবয় আর র্যাঞ্চাররা গাছের আড়ালে সরে যেতে পেরেছে। এখন আর বাড়তি সুবিধে পাবে না কেলটনের লোকরা।
আরও কিছুক্ষণ থেমে থেমে গুলি হলো, তারপর নামল অস্বস্তিকর থমথমে নীরবতা। লুকিয়ে থাকা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসাহ বোধ করছে না কেলটনের লোকরা, তাতে বড় বেশি ঝুঁকি নেয়া হয়ে যায়।
যেরকম হঠাৎ করে লড়াই শুরু হয়েছিল তেমনি আচমকা থেমেও গেল। কয়েকটা আহত বাছুর কাত হয়ে পড়ে আছে। বাঁ-বাঁ করে ডাক ছাড়ছে ওগুলো।
ঝোপঝাড়ের ভেতর মানুষ, ঘোড়া আর বাছুরের নড়াচড়ার আওয়াজ শুরু হলো একটু পর। কেলটনের লোকরা সরে গেছে আগেই। তাদের দু’একজনের ঘোড়ার আওয়াজ দূরে মিলিয়ে গেল।
অনেকক্ষণ চুপ করে অপেক্ষা করল জিম। সতর্ক, মনের মাঝে সন্দেহের দোলা। একসময় গলা উঁচিয়ে ডাকল।
‘বার্ট, টয়, লুথার! সব ঠিক?’
খোলা জমিতে বের হয়ে এল লুথার। জিজ্ঞেস করল, ‘আগে ওদের দেখেছে কে? কে দেখল ওদের?’
বার্টও বেরিয়ে এসেছে। তার পাশে বাবা, খোঁড়াচ্ছে অল্প অল্প। টয় লেনি বন থেকে বের হবার পর তিন চারজন কাউবয় সাহস করে বের হলো।
‘মারা গেছে কেউ?’ জিজ্ঞেস করল জিম
মাথা গোনা হলো। কেউ মারা যায়নি। ‘জে বি সামান্য আহত হয়েছে, ‘ জানাল টয়। ‘মাংস চিরে বেরিয়ে গেছে গুলি। আমি হ্যাট হারিয়েছি। মুখের এক পাশ কেটে গেছে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ায়। প্যাট? তোমার কী হাল?’
ভিড়ের মাঝখানে এসে দাঁড়াল সেলুনকীপার, ডানহাতে ঝুলছে পিস্তল। তার কালো রঙের ডার্বি হ্যাট মাথার ওপর চেপে বসানো। ক্রাউন থেকে ছিঁড়ে দু’কানের ওপর ঝুলছে হ্যাটের ব্রিম। সাদা শার্টের হাতা ছিঁড়ে গেছে। প্যান্টও ক্ষতবিক্ষত। জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে গেছে। সেসব ফাঁক দিয়ে ম্যালোনের পায়ের বেশিরভাগই দেখা যাচ্ছে।
হ্যাটটা মাথা থেকে খুলে পরীক্ষা করে দেখল সে। চেহারায় হতাশার ছাপ পড়ল। ছুঁড়ে বনের ভেতর হ্যাট ফেলে দিল সে।
‘জীবনে এত কম কাপড় পরে থাকিনি আমি কখনও,’ মন্তব্য করল হতাশ ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘বাজি ধরে বলতে পারি, আমার অন্তত দশ গ্যালন মদ ওদের পেটের ভেতর থেকে বের করে ছেড়েছি।’
হঠাৎ টলে উঠল টয় ল্যানি, তারপর পড়ে গেল উপুড় হয়ে। ঝুঁকে দেহটা পরখ করল জিম। হাত বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করল কোথায় লেগেছে। টের পেল ল্যানির পায়ে ঢুকেছে বুলেট।
‘ব্যথা টের পায়নি বলে গুলি খেয়েছে সেটা ও জানত না,’ মন্তব্য করল জিম। ‘বার্ট, হ্যাটে করে ক্রীক থেকে পানি নিয়ে, এসো তো।’
গালে চাপড় দিয়ে ল্যানির জ্ঞান ফেরানো হলো। ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিল জিম। কোল গিয়ে ল্যানির ঘোড়াটা নিয়ে এল। সবাই মিলে ল্যানিকে ওঠাল ঘোড়ার পিঠে।
‘আপাতত এখানে আর কোন কাজ নেই,’ বলল জিম। ‘কালকে সারাদিন লাগবে পাহাড়ে ছড়িয়ে যাওয়া গরু জড়ো করতে। বসে থাকবে না কেলটন, আবার হামলা করবে। আমাদের এখন এখান থেকে সরে যাওয়াই মনে হয় ভাল হবে।
‘তা হলে রাস্তা ধরে যাওয়াই ভাল,’ মন্তব্য করল কোল লুথার। ‘শর্টকাট। সহজেই বন থেকে বেরিয়ে যেতে পারব।’
বার্ট বলল, ‘একটা কথা বলো তো, লুথার, গরু নিয়ে এগিয়ে গেলে না কেন তুমি?’
‘জানি না,’ বলল কোল। ‘তবে ভয় পাচ্ছিল গরুগুলো। বনের ভেতর ঢুকতে চাইছিল না। মনে হয় লোকগুলোর গন্ধ পেয়েছিল।’
‘তা বোধহয় পেয়েছিল,’ সায় দিল বার্ট, পরক্ষণেই খোঁচা মেরে বলল, ‘আমাদের উচিত ছিল সামনে একটা গরু রাখা। তা হলে ওটা আমাদের সতর্ক করে দিত।’
‘তুমি কি বলতে চাও আমি জানতাম যে ওরা এখানে হামলা করবে?’ তীক্ষ্ণ শোনাল লুথারের কণ্ঠ।
উপত্যকার তরুণ প্রজন্ম কোল লুথারকে পছন্দ করে না। তিরিশ বছর বয়স লোকটার। এখনও অবিবাহিত। ভাল একটা র্যাঞ্চ আছে তার। মেয়েরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। সাধারণ তরুণ যাদের টাকা-পয়সা তেমন নেই তারা একারণেও লুথারকে দেখতে পারে না। লুথার যে শুধু টাকার পেছনে ছোটা মেয়েদেরই আকৃষ্ট করে তা নয়, বরং শহর এবং রেঞ্জের ভাল মেয়েদের কাছেও তার আকর্ষণ দারুণ। বুদ্ধিমান লোকের উচিত দু’জাতের মেয়েদের আলাদা চোখে দেখা। লুথার সেটা করে না। হয়তো এক ঘণ্টা আগে ভাল কোন মেয়ের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে, তারপর দেখা যাবে হালকা চরিত্রের কোন মেয়ে তার নতুন সঙ্গিনী।
বার্ট বিনা দ্বিধায় মুখের ওপর বলে যে লুথারের আচরণ ভাল মেয়েদের জন্যে অপমানজনক। অবশ্য বার্টের বন্ধুদের ধারণা ওর এমন মনোভাব পোষণের আসল কারণ হচ্ছে স্রেফ হিংসা।
বার্ট কোন জবাব না দেয়ায় কথা আর বাড়ল না। একটু পর রওনা হয়ে গেল ওরা। অস্বস্তিকর নীরবতার মাঝে পাহাড়ী এলাকা পার হতে হলো। সূর্যের প্রথম আলোয় পৌছে গেল ওরা প্রেয়ারিতে। অত্যন্ত ক্লান্ত সবাই। বুড়ো জে বি আর টয় ল্যানির ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
তবে জিম আশ্চর্য হলো প্যাট ম্যালোনের উৎফুল্ল আচরণ দেখে। সেলুনে বসে ব্যবসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে উত্তেজনার খোঁজে বেরিয়েছিল লোকটা। যথেষ্ট উত্তেজনার খোরাক পেয়েছে। চাঙা হয়ে উঠেছে একেবারে। জিমকে বলল, ‘আমি বরং শহরে গিয়ে ডাক্তারকে পাঠিয়ে দেব। বলে দাও কোথায় থাকবে তোমরা, তা হলে ডাক্তার ওখানেই চলে যেতে পারবে।’
জিম কিছু বলার আগেই বার্ট বলল, ‘ভাল হয় সে আমাদের ওখানে চলে এলে। আমাদের র্যাঞ্চটাই সবচেয়ে কাছে। অসুস্থদের জন্যে ওখানে যাওয়া বেশি সুবিধেজনক হবে।’
উডফোর্ডদের র্যাঞ্চে পৌছে বুড়ো র্যাঞ্চারকে তার ঘরে বিছানায় শুইয়ে দেয়া হলো। ল্যানিকে শোয়ানো হলো একটা কাউচে। সাধ্যমত তার ক্ষত ড্রেসিং করে দিল জিম। একটু পরই একটা ঘোড়া এসে থামল র্যাঞ্চের উঠানে। উঁচু গলায় জিমের নাম ধরে ডাকছে লোকটা। গলা চিনতে পারল জিম। শর্টি এসেছে। দরজা খুলে দিল বার্ট।
‘কোন্ জাহান্নামে ছিলে?’ জিজ্ঞেস করল জিম।
আকর্ণ হাসল শর্টি। ‘তুমি ছিলে কোন্ জাহান্নামে?’
‘পাহাড়ে যেতে হয়েছিল। অনেক মজা থেকে বঞ্চিত হয়েছ তুমি। ছিলে কোথায়?’
‘ওই পাহাড়েই ছিলাম। কেলটনের লোকদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছিলাম। তখন বুঝলাম যে স্যাডলটায় চড়ছি সেটা আমার পছন্দ নয়। পরে আমার ঘোড়া থেকে স্যাডল খুলে আনতে গিয়েছিলাম। কেলটনের ছেলেরা কোথায় যেন সরে পড়ল। আমি আর কী করি, আমিও চলে গেলাম পাহাড়ের দিকে।’
‘স্যাডল এনেছ?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু আবার হারিয়ে গেছে ওটা। আসলে যেটা খুঁজছিলাম সেটা দেখলাম না কোথাও।’
‘কী খুঁজছিলে?’
‘বাছুরগুলো।’
বার্ট উডফোর্ড ছাড়া উপস্থিত আর কাউকে শর্টি চেনে না। সবার সঙ্গে বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দিল জিম। হাত মেলানোর পালা শেষ হতে জিম জিজ্ঞেস করল, ‘আমাদের বলার মত কিছু জানলে পাহাড়ে?’
‘তেমন কিছু না। তোমরা কী করছিলে পাহাড়ে? যার সঙ্গেই কথা হয়েছে সে-ই বলেছে কোথাও গেছ তুমি। কেউ জানে না কোথায়। প্যাট ম্যালোনকেও খুঁজে পেলাম না।’
কী ঘটেছে খুলে বলল জিম। শুরু করল লুথার কীভাবে কেলটনের মাতাল কাউবয়ের মুখ থেকে নানা কথা শুনেছে তা দিয়ে। জানাল তারপর ওরা পাইনটপে যায়। সেখানে কেলটনের লোকদের সঙ্গে গোলাগুলির কথাও বাদ গেল না। অ্যাম্বুশের কথা শুনে ভ্রূ কুঁচকে গেল শর্টির। নীরবে শুনল সব, তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে ভুসভুস করে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল।
‘একটা ব্যাপারে আমরা এখন নিশ্চিত,’ বলল বার্ট। ‘কেলটন সরাসরি লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছে। চেয়েছিল পাহাড়েই আমাদের খতম করে দিতে। তা না পারায় এখন সে চেষ্টা করবে যত দ্রুত সম্ভব বিরোধ নিষ্পত্তি করতে।’
‘কোন সন্দেহ নেই,’ সায় দিল ল্যানি। ‘এখন আমাদের উচিত যত বেশি সম্ভব লোক সংগ্রহ করে পাহাড়ে গিয়ে কেলটনের মোকাবিলা করা। কেলটন না মরা পর্যন্ত সমস্যার কোন সমাধান হবে না।’
শর্টিকে দেখে মনে হলো অস্বস্তিতে ভুগছে। বলল, ‘চরম কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরও ভাল করে ভেবে দেখা উচিত।’
নতুন পরিচিত বলে সবাই শর্টির দিকে তাকাল। ভ্রূ কুঁচকে গেছে কারও কারও। জানতে চায় শর্টির মন্তব্যের কারণ। উপদেশ না চাওয়া হলে সাধারণত মুখ খোলা দস্তুর নয় নতুন মানুষের। আর কোন কথা বলল না শর্টি, একটা সিগারেট রোল করতে শুরু করল গভীর মনোযোগে।
ডাক্তারের বাগি এসে থামল উঠানে। একটু পরেই ভেতরে ঢুকল ডাক্তার। বেঁটে লোক ডাক্তার বেনসন। দড়ির মত পাকানো দেহ। চোখে লোহার ফ্রেমের চশমা। দরজায় দাঁড়িয়ে ঘরের ভেতর নজর বুলাল সে।
‘ব্যাপারটা কী!’ বিরক্ত কণ্ঠে বলল, ‘শহরের ধারে কাছে যা করার করতে পারো না?’
‘ড্রিঙ্ক নাও একটা,’ ঘড়ঘড়ে গলায় বলল জে বি। ‘ড্রিঙ্ক সেরে হাত ধুয়ে কাজে নেমে পড়ো। শেষ গরুটার বাচ্চা প্রসব করানোর পর থেকে তো মনে হয় না আর কখনও হাত ধুয়েছ।’
কিচেনে ঢুকে লিণ্ডা দেখল বার্ট আগেই পানি গরম করতে দিয়েছে। ডাক্তার আর ও লেগে পড়ল দু’জনের চিকিৎসার কাজে। কারও আঘাতই গুরুতর নয়। সিগারের ছাই রোগীদের গায়ে ঝাড়তে ঝাড়তে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করল ডাক্তার।
‘হাতে অস্ত্র নেয়া উচিত নয় তোমাদের। ডাক্তার গায়ে হাত দিলেই যেভাবে বাচ্চাদের মত কুঁকড়ে যাচ্ছ!’ তাকাল লিণ্ডার দিকে। ‘দেখেছ কীরকম বাচ্চাদের মত করছে? এরা আবার নিজেদের বলে পুরুষ মানুষ। হাহ্!’
দক্ষ হাতে ব্যাণ্ডেজ করছে ডাক্তার, ব্যথা পাচ্ছে বলে রোগীদের টিটকারি মারতে ছাড়ছে না। কাজ শেষ করতে করতে বলল, ‘এবার বুড়িটাকে তালাক দিয়ে লিণ্ডাকে বিয়ে করে ফেলব। গত চল্লিশ বছর ধরে ডাক্তারী করছি, ওর মত ভাল নার্স আর দেখিনি।’
‘চল্লিশ বছরের তিরিশ বছর তো করেছ ঘোড়াদের চিকিৎসা,’ বলল ল্যানি। ‘মানুষের চিকিৎসা শুরু করার পর নিজের চোখে দেখেছি তোমার ডিপ্লোমাটা দেয়াল থেকে খুলে রেখেছিলে। ওটা ছিল ভ্যাটেরিনারি স্কুলের ডিপ্লোমা।’
‘দেখো, ছোকরা,’ ডাক্তারের চেহারা গম্ভীর। ‘আমি না থাকলে আজকে বেঁচে থাকতে না তুমি। জন্মেছিলে তো মরার মত। আমি তোমার বাপকে বলেছিলাম খামোকা এটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। মরতে, যদি না তোমার বেয়াক্কেলে বুড়ো বাপটা আমার পাঁজরে সিক্সগান ধরত। সে ব্যাটার কথা শুনে ফুঁ দিয়ে তোমার ফুসফুসে বাতাস ভরেছিলাম আমি। তারপর থেকে বহুবার সে দুঃখ করেছে যে কেন ওকাজ করল। সেই দুঃখেই আর কখনও সে সিক্সগান ঝোলাত না।’
শর্টি এখনও ফায়ারপ্লেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অযাচিত উপদেশ দেয়ার পর থেকে একবারও মুখ খোলেনি। এবার বলল, ‘মিস্টার কোল, আমার সঙ্গে একটু বাইরে আসবে? জরুরী কথা ছিল।’
থমথমে মুখে শর্টির পিছু নিয়ে বাইরে গেল লুথার কোল।
জিমের দিকে তাকাল ডাক্তার বেনসন। ‘মনে হলো তোমার বন্ধু মনে মনে
কিছু একটা পরিকল্পনা আঁটছে।’
‘হতে পারে,’ বলল জিম। ‘নিজে মুখ না খুললে ওর মুখ খোলানো যায় না।’
বাইরে পরপর দুবার গর্জে উঠল সিক্সগান।
চমকে গেল সবাই।
সামলে নিয়ে দরজার দিকে এগোল ওরা। পোর্চে পৌঁছে বিস্ময়ে থমকে গেল।
লুথার কোলের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শর্টি, হাতের অস্ত্র থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। ঘুরে তাকাল সে, অস্ত্রে নতুন গুলি ভরে নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে এল। পোর্চে উঠে মুখোমুখি হলো লুথারের পরিচিত লোকগুলোর। শর্টির চেহারায় খেলা করছে উত্তেজনা। সতর্ক দৃষ্টিতে সবার ওপর নজর বুলাচ্ছে সে।
বিরোধের সময় পরস্পরের প্রতি নির্ভর করে এই এলাকার লোক। এখন বিরোধের সময়। লুথারের মৃত্যু র্যাঞ্চার এবং কাউবয়রা সহজ ভাবে মেনে নেবে তার কোন কারণ নেই। জিম ছাড়া বাকি সবার চেহারায় সন্দেহ আর রাগের ছাপ দেখল শর্টি।
চুপ করে আছে সবাই। শর্টির কাছ থেকে উপযুক্ত অজুহাত আশা করছে।
‘কেন?’ জিজ্ঞেস করল জিম।
‘একটু আগে কি বলেছিলাম মনে আছে?’ থামল শর্টি, সবার ওপর ঘুরে এল ওর চোখ, স্থির হলো জিমের ওপর। ‘বলেছিলাম আগেই আলোচনা কোরো না কী করবে। বলেছিলাম কারণ পাহাড়ে যা জেনেছি সব আমি তোমাদের বলিনি। কিছু কথা গোপন রাখতে হয়েছে আমাকে। এমন কিছু কথা যেগুলো আমি সবার সামনে বলতে চাইনি।’
ডাক্তার বেনসন লুথারকে পরীক্ষা করে দেখল। পোর্চে এসে জানাল মারা গেছে র্যাঞ্চার। মাথায় একটা গুলি। মগজ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
‘মনে আছে একরাত আমি পাইনটপে জ্যাকের ওখানে কাটিয়েছি?’ আবার শুরু করল শর্টি। ‘জ্যাক এমন একটা ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা করল যেখানে ওর বন্ধুরা সহজেই আমাকে খুঁজে পাবে। সন্ধ্যা নামার পর কাউকে না জানিয়ে পেছনের একটা ঘরে সরে গেলাম আমি।
‘অনেক কষ্টে একটু আরামের ব্যবস্থা করে নিয়েছি জ্যাকের জঘন্য বিছানায়, এমন সময়ে টের পেলাম পাশের ঘরে লোক আছে। ওঘরে কয়েকজন লোক ঢুকল। ওদের সঙ্গে একটা বোতল ছিল। আলোচনা করতে এসেছিল। নাক গলানো আজন্মের অভ্যেস, তাই কান খাড়া করলাম আমি। একটু খুঁজতে দেয়ালে ছোট একটা ফুটোও পেয়ে গেলাম। চোখ রেখে দেখলাম কারা উপস্থিত হয়েছে।’
‘জিমের ব্যাপারে আলাপ হচ্ছিল। ঠিক হলো তোমাদের জন্যে পার্টির আয়োজন করা হবে। অতিথি সেবায় কোন ত্রুটি রাখা হবে না। কাল রাতে তোমরা কেলটনের অতিথি হলে। আগেই আমি তোমাদের সতর্ক করে দিতাম, কিন্তু পারলাম না কেলটনের লোকরা আমার ঘোড়া চুরি করে নিয়ে যাওয়ায়।’
‘একটা ঘোড়াও কি নিজের কাছে রাখতে পারো না তুমি,’ বলল জিম।
‘ঘোড়া চুরি করে আমাকে বিপদে ফেলে দিল কেলটনের লোকরা,’ বলে চলল শর্টি, ‘সময় মত আরেকটা ঘোড়া যোগাড় করতে পারলাম না। জানাতে পারলাম না যে তোমাদের জন্যে ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করবে কেলটন।’
‘যে লোক নেতৃত্ব দিয়েছে সে কেলটন হতে পারে না,’ বলল বার্ট। ‘কেলটন আহত হয়ে ডুরাণ্টে গেছে চিকিৎসা করতে। পাইনটপে কেলটনের নিজের লোকের মুখে একথা শুনেছে লুথার কোল।’
‘মিথ্যে বলেছে লুথার কোল,’ বলল শর্টি। ‘কারও মুখে কিছু শোনেনি সে। কেলটনও অনুপস্থিত ছিল না। ওকে আমি চিনি। নিজের চোখে ওকে দেখেছি নেতৃত্ব দিতে। তার চেয়েও বড় কথা, ওর হয়ে যে ফাঁদ পাততে সাহায্য করেছে তাকে অনেক টাকা পেতে দেখেছি।’
‘কে সেই লোক?’ বার্টের প্রশ্নের পর থমথমে নীরবতা নামল।
‘আগে তাকে কখনও দেখিনি,’ বলল শর্টি। ‘দেখলাম আজকে। ওর নামও জানতাম না।’ আঙুল তুলে লাশটা দেখাল শর্টি। ‘ওই যে পড়ে আছে। ওকে তোমরা লুথার কোল নামে চেনো। ওর পকেটে যদি পঞ্চাশ ডলারের অনেকগুলো কয়েন পাওয়া যায় তা হলেও আমি অবাক হবো না।’
অবাক বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে সময় লাগল সবার। বার্ট লোকটাকে পছন্দ করত না, কিন্তু এখন সেকারণেই নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার হতে ও বলল, ‘শক্ত অভিযোগ এনেছ তুমি, শর্টি। কোলকে নিজের পক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগও দাওনি। এটা কি ধরে নেয়া অনুচিত হবে যে…’
‘ওকে পুরো সুযোগ দিয়েছি আমি,’ থামিয়ে দিয়ে বলল শর্টি। ‘আগেই তোমাদের বলিনি তার কারণও ছিল। এখন তোমরা জানো একবার সে তোমাদের ফাঁদে ফেলেছে। লুথার কোলই কেলটনের সঙ্গে আলোচনা করে ফাঁদটা পাতে।
‘বুঝতে পারছি প্রতিবেশী সম্বন্ধে ধারণা পাল্টাতে সময় লাগছে তোমাদের। যাকে বিশ্বাস করা যায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা সবসময়েই কঠিন। কথা বলার সুযোগটা নিলে হয়তো তোমাদের সে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ত যে সে দোষী নয়। এখানে আমি আগন্তুক। জিম কার্সনের বন্ধু আমি, সেজন্যেই ওর লড়াই নিজের মনে করছি। লুথার কোল জিমকে শেষ করে দিত। নিজের চোখে ওকে আমি বিপক্ষের হয়ে কাজ করতে দেখেছি। এরপর বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয়নি আমার সাপটাকে শেষ করে দিতে। একবার ফাঁদ পেতেছে সে, আমি ঠেকাতে পারিনি। এরপর তার সামনে পরিকল্পনা করা মানে আরেকটা ফাঁদে পড়া। জিমের হয়ে কাজ করছি আমি। আমার কাজ ওর শত্রুদের মোকাবিলা করা। কোল ছিল জিমের শত্রু।
‘তারপরও তাকে আমি সুযোগ দিয়েছি। যখন বললাম কী দেখেছি আমি পাইনটপে, অমনি ড্র করল সে। দুটো গুলির আওয়াজ শুনেছ তোমরা। প্রথম গুলি সে-ই করে। দ্বিতীয় গুলিটা আমার। বিশ্বাস না হলে ওর অস্ত্র পরীক্ষা করে দেখতে পারো। আমার আর কিছু বলার নেই।’
দু’জন কাউবয় লুথারের লাশের পকেট হাতড়ে দেখল। ফিরে আসতে সময় নিল না তারা। একজনের হাতে একটা চামড়ার থলে। ভেতরে হাত ভরে অনেকগুলো সোনার কয়েন বের করল সে। গম্ভীর চেহারায় কয়েনগুলো দেখল সবাই। থলের ভেতর আবার ভরা হলো স্বর্ণমুদ্রা।
‘টাকাগুলোর কী হবে?’ জিজ্ঞেস করল কাউবয়।
কিছু বলল না কেউ একমুহূর্ত। তারপর জিম বলল, ‘সম্ভবত আমাদেরই টাকা ওগুলো। কেলটন চুরি করেছিল। লুথারের মাধ্যমে ফেরত পেলাম। মিস লিণ্ডাকে দেয়া যেতে পারে স্কুলের ফাণ্ডের জন্যে। অভিশপ্ত টাকা এগুলো। ভাল কাজে ব্যয় হলে হয়তো অভিশাপ কাটবে।’
লুথার কোলের বিশ্বাসঘাতকতা গভীর ছাপ ফেলেছে প্রত্যেকের মনে। নীরবে অস্বস্তি ভরে নড়ছে সবাই, যেন একদল পিঁপড়ে, যাদের বাসা ভেঙে দেয়া হয়েছে। কথা বলার মত মন নেই কারও। সবার মাথায় চলছে একই চিন্তা। কেলটন একটা পাগলা কুকুর। এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যেখানে কেলটন চাইছে সবাইকে খুন করতে। নিরাপদ নয় কেউ।
শর্টিকে ডেকে নিয়ে উঠানে চলে এল জিম, বসল মস্ত সিকামোর গাছের নিচে একটা বেঞ্চে।
‘তুমি তো কেলটনের চাকরি নিয়েছিলে। ওর র্যাঞ্চে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারবে আমাদের?’
‘পারব। পাইনটপের পেছনে ওর র্যাঞ্চ। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কড়া। সহজে ভেতরে ঢোকা যাবে না। তারওপর জ্যাকের দোকানটাও কেলটনের। কারা আসছে সে খবর আগেই পেয়ে যাবে সে।’
‘যত কঠিনই হোক চেষ্টা করে দেখতে হবে আমাদের,’ বলল গম্ভীর জিম। ‘এরপর ওকে ছাড়া যায় না। রাতের আঁধারে ওর র্যাঞ্চে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারবে?’
‘দিনে পারব। রাতেও হয়তো সম্ভব, যদি দিনেই আমরা জ্যাকের দোকান ছাড়িয়ে বনের ভেতর লুকিয়ে পড়তে পারি। তবে র্যাঞ্চের আগে আছে পাথুরে জমি। সেখানে কেলটনের লোকরা পাহারা দেয়। ওই জায়গা পার হতে পারব কিনা জানি না। জায়গাটা কতখানি দুর্গম তা বলার সুযোগ হয়নি আমার।’
‘এখন বলো।’
‘একটা গামলামত জায়গার মাঝখানে ওর র্যাঞ্চ হাউস। গাছপালা বিশেষ নেই। ঢোকার পথটা সরু, দুটো ক্লিফের মাঝ দিয়ে। ওখানে ফাঁদে পড়লে মরতে হবে।’
‘যখন তাড়া করল তখন পালিয়েছিলে কীভাবে?’
‘র্যাঞ্চ হাউসের বাম দিকে একটা সরু ট্রেইল আছে, ওদিক দিয়ে। ওই পথেই গোপন উপত্যকাগুলোয় যায় ওরা।’
‘ওই পথে যেতে পারব না আমরা?’
‘পারবে। কিন্তু অনেক পথ ঘুরতে হবে। তাছাড়া ট্রেইলটা এত সরু যে একেকবারে একজন করে যেতে হবে। ওখানে যদি ফাঁদ পাতা হয় তা হলে বাঁচবে না একজনও।’
‘ওদিক দিয়েই যাব আমরা,’ সিদ্ধান্ত নিল জিম, উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘দেরি করে লাভ নেই। রওনা হয়ে যাব যত দ্রুত সম্ভব।’
বার্নে তরুণ বার্টকে পেল জিম। কয়েকজন কাউবয়ের সাহায্য নিয়ে লুথার কোলের লাশটা একটা ওয়্যাগনে তুলছে। শাবল কোদাল আগেই তোলা হয়ে গিয়েছে।
‘আমাদের জমিতে কিছুতেই ওকে কবর দেব না,’ নিচু গলায় জানাল
‘ওর মত একটা স্কাঙ্কের শেষকৃত্য পাওয়ার কোন অধিকার নেই। রাস্তার ধারে কোথাও পুঁতে দেব। ক্রুশ দিয়ে চিহ্ন রাখব না। যত দ্রুত লোকে ওকে ভুলে যায় ততই মঙ্গল।’
‘কাজটা শেষ করে এসো,’ বলল জিম। ‘আরেকটা কাজে তোমাকে আমার দরকার। কেলটনের ওখানে যাব আমরা।’
‘অনেক আগে থেকেই একথা বলছি আমি,’ বলল বার্ট। ‘আমাকে কী করতে হবে?’
‘রেঞ্জের কিছু লোকের নামের লিস্ট দেব তোমাকে আমি। তাদের খবর দেবে তুমি, প্রত্যেককে আলাদা ভাবে বলবে যাতে কাল ঠিক দুপুর বারোটার সময় পাইনটপে আমার সঙ্গে দেখা করে। ঝুঁকি নিতে রাজি এমন লোক যদি হাতে থাকে তা হলে যেন তাদেরও নিয়ে আসে। আমরা কী করতে যাচ্ছি তা কাউকে বোলো না। আমি চাই সবাই মনে করুক শুধু তাকেই আমি ডেকেছি। শহরের লোকদের আমিই খবর দেব। বুঝেছ?’
‘আলাদা করে বলার কারণটা বুঝলাম না।’
‘আমি চাই না এই পরিকল্পনার কথাও ফাঁস হয়ে যাক। কেলটন যদি জানে বড় একটা দল নিয়ে আমরা হানা দেব তা হলে হয় সে নিজের লোকদের নিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবে, নয়তো পালাবে। এমন কোথাও লুকাবে যে খোঁজ পাওয়া যাবে না। দুটোর কোনটাই আমি চাই না।’
উডফোর্ডদের কিচেনে লিণ্ডাকে পেল জিম, টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল লুথারের কাছ থেকে পাওয়া চামড়ার ব্যাগটা।
‘তোমার সানডে স্কুলের জন্যে কিছু টাকা আছে এতে। কেলটনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। আসলে আমাদেরই টাকা। আমরা চাই এ টাকা ভাল কাজে ব্যয় হোক।’
কয়েনগুলো ঢেলে বের করে চোখে প্রশ্ন নিয়ে জিমের দিকে তাকাল লিণ্ডা।
জিম বলল, ‘নাও। কোন প্রশ্ন কোরো না। বাচ্চাদের কাজে আসুক সেটাই চাইছে সবাই।’
কয়েনগুলো থলেতে রেখে লিণ্ডা জিজ্ঞেস করল, ‘কফি চলবে?’
‘চলবে।’ একটা চেয়ারে বসল জিম। কফির মগ এগিয়ে দিল লিণ্ডা।
‘ঘুম দরকার তোমার। দাড়িগোঁফে ডাকাতের মত লাগছে দেখতে। শেভও করা দরকার।’
কফির কাপ হাতে নিয়ে লিণ্ডাকে মুগ্ধ নয়নে দেখল জিম। গুহায় সেই ঘটনার পর যেন অন্য মানুষে পরিণত হয়েছে লিণ্ডা। সবসময়েই ও ছিল একটা দুর্লঙ্ঘ দেয়ালের ওপারে, এখন আর তা নেই। সহজ স্বাভাবিক ব্যবহারে প্রাচীরটা ভেঙে গেছে। এখন আরও অনেক বেশি আকর্ষণীয়া লাগছে মেয়েটাকে।
নিজের জন্যে কফি ঢেলে টেবিলের উল্টোদিকে বসল লিণ্ডা। জিজ্ঞেস করল, ‘এবার কী করবে তুমি?’
সত্যি কথাটা বলতে ইচ্ছে হলো না জিমের। কিন্তু জবাব দিল। ‘আগামী কাল কেলটনের খোঁজে যাব।’
‘তারমানে আরেকটা লড়াই, তাই না?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু এড়ানোর কোন উপায় নেই।’
‘জানি,’ জিমকে বিস্মিত করে দিয়ে বলল লিণ্ডা।
‘কিন্তু তুমি তো আগে ভাবতে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ এড়ানো যাবে?’
‘ভুল ভাবতাম। বাস্তব জ্ঞান ছিল না। সেদিন লোকটাকে গুলি করার পর অনেক ভেবেছি আমি। এখন আমি জানি কী করতে হবে আর কী না করে পারা যায় না।’
নরম গলায় কথাগুলো বলেছে লিণ্ডা। ওর চোখের দৃষ্টি আন্তরিক। যা বলেছে তা মন থেকেই বলেছে।
‘দেশটা এখনও বুনো,’• বলল জিম। ‘আগামী কিছুদিন হয়তো আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। কিন্তু কিছু করার নেই। …আচ্ছা, উডফোর্ড আর ল্যানির কী অবস্থা? আমাদের সঙ্গে লড়াইতে অংশ নিতে পারবে?’
‘ভাল আছে ওরা।’
‘তা হলে তো খুবই ভাল হলো। সেক্ষেত্রে তোমাকে নিয়ে আজকে শহরে যাব আমি। আপাতত ওখানে থাকাই তোমার জন্যে নিরাপদ হবে। ডাক্তারের বাড়িতে থাকতে পারবে।’
‘কেন, জিম? এখান থেকে সরে যাব কেন? এটাই তো আমার বাড়ি।’
‘সতর্কতার জন্যেই যাওয়া দরকার। কেলটনের খোঁজে যাব আমরা সবাই। একা তোমার এখানে থাকা ঠিক হবে না। পাগলা কুত্তা হয়ে গেছে কেলটন। ওকে কোণঠাসা করার পর কী করে বসে তার কোন ঠিক নেই।’
দীর্ঘক্ষণ চিন্তা করল লিণ্ডা, তারপর বলল, ‘জিম, এই লড়াই কি কখনও শেষ হবে? কখনও কি শান্তিতে থাকতে পারবে না এখানে মানুষ? নিজের বাড়িতেও কি নিরাপদে থাকতে পারবে না?’
‘পারবে, লিণ্ডা, পারবে। তার আগে কেলটনকে শেষ করতে হবে। ও জীবিত থাকলে কখনও শান্তি আসবে না এই অঞ্চলে।’