মৃত্যু উপত্যকা – ৬

ছয়

এ শুধু জবাব না দেয়া জনিত বিরোধ নয়। এ বিরোধ এমন দু’জন মানুষের, যাদের জীবিকা একে অপরের জন্যে ক্ষতিকারক। অন্তরের গভীর থেকে পরস্পরকে ঘৃণা করে ওরা। সে ঘৃণা লুকিয়ে রাখার নয়। এখন ওরা মুখোমুখি হয়েছে। শেষ বিন্দু শক্তি থাকা পর্যন্ত পিছাবে না ওরা।

দুটো বুনো জানোয়ার যেন, শক্তি পরীক্ষার লড়াইতে নেমেছে। এ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।

স্টিচ আঘাত হানার আগেই দু’পা ফাঁক করে দৃঢ় ভঙ্গিতে দাঁড়াল জিম। বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা অনুভূতি। মনে হচ্ছে যেন অত্যন্ত শক্তিশালী কোন হিংস্র বুনো প্রাণী জেগে উঠেছে। লড়াইয়ের সম্ভাবনা ওর ভেতর উন্মাদনা সৃষ্টি করল। বিকৃত একটা আনন্দ বোধ করল ও নিজের ভেতর। স্টিচ সামনে আসতেই দড়াম করে ঘুসি মারল তার চোয়ালে। সংঘর্ষের আওয়াজটা শুনে তৃপ্তি পেল মনে।

থরথর করে কেঁপে উঠে থমকে গেল স্টিচ, তবে দ্রুতই সামলে নিল। পাল্টা মারল সে। মাথা সরিয়ে তার ঘুসিটা কাঁধের ওপর দিয়ে যেতে দিল জিম, পরক্ষণেই আবার ঘুসি বসাল। এবার স্টিচের কানে লাগল ওর মুঠো করা হাত।

আঘাতের প্রচণ্ডতা এতই বেশি যে টাল খেয়ে এক পাশে পড়ে গেল স্টিচ। দেয়ালে পিঠ দিয়ে ধাক্কা খেল তার দেহ। ভারসাম্য রক্ষা করতে সুবিধেই হলো তাতে। সামলে নিয়ে ছিটকে সামনে বাড়ল সে। দু’হাত পিস্টনের মত ছুঁড়ছে।

আক্রমণের প্রথম চোটে আত্মরক্ষা ছাড়া আর কোন উপায় থাকল না জিমের পিছাতে হলো ওকে। ধাওয়া করে এগোল স্টিচ। শরীরের বাড়তি ওজনটা ব্যবহার করে ঘুসির জোর বাড়াচ্ছে সে। একের পর এক ঘুসি এড়াল জিম, পাল্টা আঘাতের সুযোগ পেল না।

একটা ঘুসি নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কপালে আঘাত করায় মাথায় যেন ব্যথার আগুন ধরে গেল জিমের। টলতে টলতে পিছাল ও। মেঝেতে পড়ে আছে বেশ কয়েকটা কুঠারের হাতল। ওগুলোর একটায় পা বেধে পড়ে গেল ও মেঝেতে।

স্টিচের গলার গভীর থেকে সন্তুষ্টির আওয়াজ বের হলো। তাড়াহুড়ো করে সামনে বাড়ল সে। মাটিতে পড়া শত্রুকে লাথিয়ে খুন করে লড়াই শেষ করবে।

পা পেছনে নিয়ে গায়ের জোরে লাথি চালাল স্টিচ। তার বুটের ডগা গেঁথে গেল জিমের পাঁজরে। জিমের মনে হলো সারাশরীরে ব্যথার স্রোত ছড়িয়ে পড়ছে। বুঝতে পারছে ও, উঠে দাঁড়াতে পারবে না, তার আগেই লাথিয়ে ওকে মেরে ফেলবে স্টিচ। এধরনের এক তরফা লড়াই স্টিচের পছন্দ। প্রতিপক্ষকে সমান সুযোগ দেবে না সে কিছুতেই।

এক পাশে শরীর গড়িয়ে দিল জিম, ধাক্কা খেল টেবিলের পায়ার সঙ্গে। থামল না, দেহ কুঁকড়ে ঢুকে গেল টেবিলের তলায়, বের হলো অন্য পাশ দিয়ে। স্টিচ ধাওয়া করে টেবিল ঘুরে আসার আগেই নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পারল ও। স্টিচের প্রথম আক্রমণ মাথা নিচু করে পার হয়ে যেতে দিল জিম, পরক্ষণে সামনে বাড়ল। দু’হাতে সমানে ঘুসি মারছে স্টিচের চিবুক লক্ষ্য করে।

থমকে গেছে স্টিচ। সুযোগটা নিল জিম, হাত চালানো বন্ধ করল না। প্রতিটা ঘুসি স্টিচের চিবুক লক্ষ্য করে মারল। প্রতিবার থরথর করে কেঁপে উঠল স্টিচ। প্রতিটা আঘাত যেন জিমকে আরও হিংস্র করে তুলছে। অন্তরের রাগ প্রকাশ পাচ্ছে বিদ্যুদ্‌গতি ঘুসিগুলোর মাধ্যমে। ক্রমেই মাথার ফাঁকা ভাবটা দূর হয়ে যাচ্ছে ওর। শিরায় শিরায় টগবগ করে বইছে উষ্ণ রক্ত। এখন ও বুঝতে পারছে, চাইলেই স্টিচকে খালি হাতে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারবে। পরিশ্রম করার জন্যেই বোধহয়, মন থেকে তিক্ততা কমে আসছে।

ঘুসির পর ঘুসি মারছে জিম। স্টিচ পিছাল। সামনে বাড়ল জিম। ওর কাঁধে লেগে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে স্টিচের দুর্বল ঘুসিগুলো। হাতুড়ির মত লোকটার চিবুকে পড়ছে জিমের ঘুসি।

কিন্তু স্টিচের মত বিশালদেহী লোককে ধাওয়া করে মারতে যাওয়া সুস্থ বুদ্ধির কাজ নয়। আস্ত একটা ষাঁড় স্টিচ। পেশি আর হাড় ছাড়া শরীরে যেন অন্য কিছু নেই। লোকটার ব্যথার বোধ বলতে কিছু আছে কিনা সন্দেহ। দুর্বল জায়গাগুলো শক্তিশালী পেশি দিয়ে ঢাকা।

স্টিচের দু’হাতের নাগালে চলে যাওয়ার পর নিজের ভুল বুঝতে পারল জিম। দু’হাতে প্রচণ্ড শক্তিতে ওকে আলিঙ্গনে আটকাল স্টিচ। স্টিচের দু’হাতের সাঁড়াশির বেড়ে আটকে গেছে জিমের দু’হাত। গায়ের জোর খাটিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হলো ও।

শরীর পেছনে হেলিয়ে চেষ্টা করে দেখল জিম। কাজ হলো না। স্টিচ সামনে বাড়ছে, ফলে ভারসাম্য হারাচ্ছে না। ক্রমেই আরও জোরে আলিঙ্গন করছে সে। জিমের পাঁজরের হাড় মড়মড় করে উঠল। আরও বাড়ছে চাপ। আর সামান্য শক্তি প্রয়োগ করলেই ভেঙে যাবে হাড়। ফোঁস ফোঁস করে গরম শ্বাস ফেলছে স্টিচ জিমের মুখে। হুইস্কির গন্ধে বমি চলে এল জিমের। ব্যথায় চোখে অন্ধকার দেখছে।

শ্বাস বেরিয়ে যেতে শক্ত আলিঙ্গনের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেল জিমের বুক। চেষ্টা করল, কিন্তু শ্বাস নিতে পারল না। শরীর ঝাঁকাল শ্বাস নেবার চেষ্টায়, সুবিধে করতে পারল না। টের পেল সারা মুখ ঘামে ভিজে গেছে ওর। দম নেবার চেষ্টায় টানটান দড়ির মত শক্ত হয়ে আছে শ্বাসনালী। কিছুই যেন করার নেই। দম আটকে ওকে খুন করছে স্টিচ। ক্রমেই আরও বাড়ছে বাহুর চাপ

জিম বুঝতে পারছে ঝটকাঝটকি করে স্টিচের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে গিয়ে নিজের শক্তি নিঃশেষ করে ফেলছে ও। পেছনে হটেও কোন লাভ হবে না। ভাল মতই বাগে এনে ফেলেছে ওকে স্টিচ।

সময় শেষ হয়ে আসছে জিমের জন্যে। আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই লড়াইয়ের শক্তি শেষ হয়ে যাবে ওর। লড়াইটা ও-ই শুরু করেছিল। পরিণতিটা ওকেই বরণ করতে হবে। চোখের সামনে নিজের লাশ দেখতে পাচ্ছে জিম। বুঝতে পারছে বাঁচতে হলে কিছু একটা করতে হবে। করতে হবে দ্রুত।

হাঁটু তুলে গায়ের জোরে স্টিচের অণ্ডকোষ লক্ষ্য করে গুঁতো দিল জিম। লাগল না। ঊরুতে ধাক্কা খেল স্টিচ। হাঁটু আরও তুলতে হবে। আরও জোরে চেপে ধরেছে স্টিচ। পা দুটো মেঝে থেকে তুলে ফেলল জিম, স্টিচের আলিঙ্গনে ঝুলছে। এবার হাঁটু তুলে গুঁতো মারল আবার।

একে জিমের ওজন সম্পূর্ণ বইতে হচ্ছে, তারওপর অণ্ডকোষে জোরাল গুঁতো-ঝটকা দিয়ে পেছনে সরে গেল স্টিচ। জিমকে ছেড়ে দু’হাতে অণ্ডকোষ চেপে ধরে পিছাল আরও।

হাঁটু দিয়ে মেঝেতে পড়ল জিম, শ্বাস নিল বুক ভরে, তারপর খানিক শক্তি সঞ্চয় করেই লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে বাড়ল। তখনও সামলে নিতে পারেনি স্টিচ, গোঙাচ্ছে মেঝেতে বসে তলপেট চেপে ধরে। চোখে শূন্য দৃষ্টি, ঘন. ঘন মাথা দোলাচ্ছে।

তার দু’ফুট দূরে থেমে দাঁড়াল জিম।

একটু পর সচেতন হলো স্টিচ। বুকের গভীর থেকে বেরিয়ে এল রাগের হুঙ্কার। কোথায় আছে, কী করছিল, কেন কী হচ্ছে-সব মনে পড়ে গেছে। উঠে দাঁড়াল সে। টলছে এখনও। দেয়ালের গা থেকে একটা স্যাডল খুলে নিয়ে জিমের মাথা লক্ষ্য করে হাতুড়ির মত চালাল।

চল্লিশ পাউণ্ড ওজন স্যাডল আর সঙ্গের লোহালক্কড়ের। সোজা ওটা জিমের মাথার পাশে আঘাত করল। স্ট্র্যাপ আর বাকলে পেঁচিয়ে গেল জিমের কাঁধ। অপ্রস্তুত থাকায় মেঝেতে পড়ে গেল সে। কয়েক মুহূর্ত লাগল তার দড়িদড়ার বন্ধনমুক্ত হতে।

ততক্ষণে টেবিলটার কাছে চলে গেছে স্টিচ। ওটা উল্টে ফেলে টান দিয়ে একটা পায়া ভেঙে নিল। মুগুরের মত জিনিসটা হাতাহাতি লড়াইয়ে অস্ত্র হিসেবে ভয়ঙ্কর। এক পলক ওটা দেখল স্টিচ, আনন্দে চকচক করে উঠল তার চোখ, তারপর সবেমাত্র উঠে দাঁড়াতে ব্যস্ত জিম কার্সনের দিকে এগোল সে। ঘড়ঘড়ে গলায় বলল, ‘খেলার সময় শেষ, কার্সন। এবার আসল কাজ।’

স্টিচ আরও দু’পা এগোনোর আগেই উঠে দাঁড়াল জিম, তৈরি। কুঠারের একটা হাতল শোভা পাচ্ছে ওর হাতে।

মাথার ওপর পায়াটা তুলে জিমের মাথার তালু বরাবর সজোরে নামাল স্টিচ। লাফ দিয়ে এক পাশে সরে নিজেকে বাঁচাল জিম।

ভারী পায়া সজোরে ঘোরানোর পর তা লক্ষ্যে আঘাত না হানায় সামনে ঝুঁকল স্টিচ। সুযোগটা কাজে লাগাল জিম। ডান কাঁধ পেছনে নিয়ে গায়ের জোরে কুঠারের হাতল চালাল ও। হাতলের সঙ্গে স্টিচের মাথা বাড়ি লাগায় ঠকাস করে শব্দ হলো। কাতরে উঠল স্টিচ। সুযোগ না দিয়ে আবার বাড়ি মারল জিম। এবার স্টিচের পায়া ধরা হাতে। হাড় ভাঙার মড়াৎ আওয়াজটা স্পষ্ট শুনতে পেল। স্টিচের হাত থেকে পায়াটা মেঝেতে পড়ে গেল। অদ্ভুত স্বরে গোঙাল স্টিচ। তাকাল পায়ের কাছে পড়ে থাকা পায়ার দিকে, তারপর উবু হলো ওটা তুলে, নিতে। মুহূর্তের মধ্যে টের পেল হাত যতই দীর্ঘ হোক কাজে আসবে না। থমকে গেল সে। বোকার মত পায়াটার দিকে তাকিয়ে থাকল। চেষ্টা করেও হাত নাড়াতে পারছে না সে। পেশিগুলো বিশ্বাসঘাতকতা করছে?

না।

বামহাত দিয়ে লড়লড় করে ঝোলা ভাঙা ডানহাতটা তুলে কৌতূহলী চোখে দেখল সে। তার ভাব দেখে মনে হলো ওটা কী জিনিস তা বুঝতে পারল না। হাতটা ছেড়ে দিতেই মরা একটা সাপের মত দেহের এক পাশে ঝুলে পড়ল। আরেকবার উঠিয়ে দেখল স্টিচ। আবারও ছেড়ে দিতে আগের মতই নেতিয়ে গেল ডানহাত।

‘কিচ্ছু যায় আসে না,’ জিমের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিস করে বলল স্টিচ। ‘একটা হাতই তোকে শেষ করতে যথেষ্ট।’

সামনে বাড়ল সে। দু’চোখ থেকে নগ্ন ঘৃণা ঝরছে। ও যেন বুনো একটা জন্তু, যে মরণের আগে পর্যন্ত লড়বে। নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তার। এ যেন তার ভবিতব্য! পিছাতে জানে না সে। আত্মসমর্পণ করতেও জানে না। খুনির অদম্য প্রবৃত্তি তাকে অন্ধের মত চালিত করছে।

মুখটা হাঁ হয়ে আছে স্টিচের। ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত মেশানো লালা গড়িয়ে নেমে থুতনি ভিজিয়ে দিচ্ছে। চেহারাটা ফাটা তরমুজের মত দেখাচ্ছে। এখানে ওখানে ফেটে গেছে চামড়া-মাংস, রক্তমাখা হাড় বেরিয়ে এসেছে। চোখে মরণ লড়াইরত হিংস্র প্রাণীর দৃষ্টি। এমন ভাবে জিমের দিকে এগোল যেন কোন বদ্ধ উন্মাদ, না জেনে আগুনে ঝাঁপ দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত যুক্তির বাইরে চলে গেছে সে।

পরিষ্কার বুঝতে পারল জিম, লোকটা অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত থামবে না এ লড়াই। মাথার ওপর কুঠারের হাতলটা তুলে গায়ের জোরে স্টিচের মাথার ওপর নামিয়ে আনল ও।

ঠাস করে একটা বিশ্রী শব্দ হলো। থমকে দাঁড়াল স্টিচ। জিভটা বের হয়ে এল পরিশ্রান্ত কুকুরের মত। আঘাতটা পিছলে তার কানেও লেগেছে। ডান কানের নিচের অর্ধেক ছিঁড়ে ঝুলে পড়ল। রক্ত নেমে ভিজিয়ে দিল স্টিচের শার্ট। মারাত্মক একটা আঘাত। তারপরও স্রেফ বুনো প্রাণীর ইচ্ছে শক্তির কারণে দাঁড়িয়ে থাকল সে, বোধ বুদ্ধি কাজ করছে না, দুলছে সে সামনে পেছনে-যেকোন সময়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে।

হাত থেকে কুঠারের হাতলটা ফেলে দিল জিম।

‘এবার সমানে সমানে লড়াই হবে,’ বলল সামনে বাড়তে বাড়তে। ‘এবার লড়ব গাস লিওস্টর্মের জন্যে। চিনতে না ওকে? ভাল লোক ছিল গাস। আমার বন্ধু ছিল।’

স্টিচ ওর কথা শুনছে না, শুনলেও বোঝার অবস্থায় নেই। তাতে কিছু যায় আসে না। জিমও জানে না কী বলছে ও, কেন বলছে। এখন দুটো জন্তু ওরা। প্রতিপক্ষকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে লড়াই শেষ করতে ব্যস্ত।

স্টিচের সামনে চলে এল জিম। এখনও গাসের কথা বলছে। একের পর এক ঘুসি মারতে শুরু করল স্টিচের গালে, চিবুকে, কপালে, নাকে। ডান হাত ওপরে তুলে গার্ড নেয়ার চেষ্টা করল স্টিচ। একচুল নড়ল না হাতটা। বাম হাত ওপরে তুলল। হাতের ঝাপটায় ওটা সরিয়ে দিল জিম। আবার হাত ওপরে তুলল স্টিচ। আবারও নামিয়ে দিল জিম।

বিভ্রান্ত বিচলিত পরিশ্রান্ত হয়ে দিশে হারিয়ে ফেলেছে স্টিচ, কিন্তু এখনও দাঁড়িয়ে আছে নিজের পায়ে। জিমের ঘুসির ধাক্কায় পিছু হটছে সে। সামনে বাড়ছে জিম। ছাড়তে রাজি নয় লোকটাকে। দু’জনের বুট ঘষটে যাচ্ছে, খসখস আওয়াজ হচ্ছে মেঝেতে।

পতিতা চুপ করে বসে দেখছে, ঠোঁটে কফির কাপ।

নতুন উদ্যমে ঘুসি মারছে জিম, অনুভব করছে দ্রুত শক্তি ফিরে আসছে শরীরে। কোথায় এত শক্তি পাচ্ছে নিজেও বলতে পারবে না ও।

জং ধরা স্টোভের পাশে একটা কাঠ রাখার বাক্স আছে, সেটার ওপর ঠেলে নিয়ে স্টিচকে ফেলল ও। বাক্সে পা বেধে চিৎ হয়ে পড়ে গেল স্টিচ। হাত আর হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠতে চেষ্টা করল। অকেজো ডান হাত কোন কাজে এল না। বাম হাতের জোরে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসতে পারল, আহত একটা মৃত্যুপথযাত্রী ভালুক যেন, হার মানতে রাজি নয়।

ক্যাণ্ডির কাউন্টার ধরে স্টিচ উঠে দাঁড়াতে পারার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করল জিম, তারপর এগোল আবার। বড় করে শ্বাস নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করল যেন, তারপর কাঁধের সমস্ত জোর দিয়ে ঘুসি বসাল স্টিচের চিবুকের মাঝখানে।

হাড়ের সঙ্গে হাড়ের সংঘর্ষের তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল জিমের হাত বেয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত। ব্যথাটা বরং উপকারই করল। মাথা পরিষ্কার হয়ে গেল ওর। দেখল উল্টে পড়ে গেছে স্টিচ, অজ্ঞান। খোলা চোখ দুটোর শূন্য দৃষ্টি ছাদের দিকে, কিন্তু দেখছে না সে কিছুই। ফুঁপিয়ে শ্বাস টানল জিম।

সত্যি স্টিচ আর লড়তে পারবে না সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারার আগে পর্যন্ত অজ্ঞান লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকল ও, তারপর হোলস্টারে আবদ্ধ সিক্সগানটার বাঁট স্পর্শ করল। লড়াইয়ের সময় ওটার অস্তিত্বের কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল ও। এখন মনে হলো জ্যাকফর্ক উপত্যকার সাধারণ মানুষদের অনেক উপকার করা হবে, যদি একটা গুলি সেঁধিয়ে দেয় স্টিচের রক্তাক্ত মাথায়।

কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় কাউকে খুন করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। স্টিচের মুখে থুতু ফেলে ঘুরে দাঁড়াল ও, কাউন্টারে গিয়ে সার্ডিনের ক্যানগুলো সংগ্রহ করল। অসম্ভব পরিশ্রান্ত লাগছে এখন, কিন্তু মনের বোঝা হালকা হয়েছে খানিকটা। সেটাই দরকার।

পনিরের ওপর আবার ছুরি বাগিয়ে ধরল জ্যাক। জিমের দিকে তাকাল। তার একমাত্র ভাল চোখটায় কোন অনুভূতির প্রকাশ নেই।

‘কতটুকু পনির যেন নেবে বলছিলে?’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *