বোল্ড আউট – নির্মলেন্দু গৌতম

বোল্ড আউট – নির্মলেন্দু গৌতম

জ্যাঠামশাই সাদাসিধে সহজ একজন মানুষ

কমলকাকা জ্যাঠামশাইয়ের ঘনিষ্ঠ একজন। বয়স ৪০-৪৫

বব জ্যাঠামশাইয়ের একমাত্র ভাগনে

স্বপন ববের বন্ধু

ঘুচু জ্যাঠামশাইয়ের একমাত্র ভাইপো

ভাস্কর কমলকাকার চেনা একটি ছেলে

প্রথম দৃশ্য

[ মধ্যবিত্ত একটি বাইরের ঘর। চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো। বব ধ্যানের ভঙ্গিতে বসে। আর কেউ নেই। হাতে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলেন জ্যাঠামশাই। বুঝতে চেষ্টা করলেন কিছু ]

জ্যাঠা। (আপনমনে) কী হল, এভাবে বসে আছে কেন বব? মনে হচ্ছে, ধ্যান-ট্যান করছে। কিন্তু হঠাৎ ধ্যান করতে যাবে কেন? (আবার ভালো করে দেখে) কিছু একটা নিশ্চয় ঘটেছে। ঘটতেই হবে। না, বব তো এভাবে বসে থাকবার ছেলে নয়। … বব… বব… নাঃ, সাড়া দিচ্ছে না। (গায়ে হাত দিতে গিয়েও গায়ে হাত দিলেন না) না, থাক, কী থেকে কী হয়ে যাবে- বরং যা করবার পরেই করা যাবে।

[ ঘুচুর প্রবেশ ]

জ্যাঠা। এই যে ঘুচু এসে গেছে। দেখতে পাচ্ছ ব্যাপারটা?

[ ঘুচু এগিয়ে এসে ববকে দেখে। বুঝতে চেষ্টা করে কিছু, তারপর তাকায় জ্যাঠামশাইয়ের দিকে ]

জ্যাঠা। বুঝতে পারছ, তোমার ববদা ধ্যান করছে।

ঘুচু। সত্যিই মনে হচ্ছে ধ্যান করছে ববদা।

জ্যাঠা। হঠাৎ এরকম ধ্যান করছে কেন, নিশ্চয়ই তুমি সেটা বলতে পারবে। মানে, বলতে পারাটা তোমার উচিত।

ঘুচু। না, জ্যাঠামশাই। পারব না। ববদা আমায় ধ্যান-ট্যান নিয়ে কিচ্ছু বলেনি।

জ্যাঠা। দেখতে পাচ্ছ, এই যে আমরা ববকে ডাকছি, কথাবার্তা বলছি, এতেও কিচ্ছু এসে যাচ্ছে না ববের। যাই বলো, এটাকে ধ্যানই বলতে হবে।

[ ঘুচু ফের ববের সামনে যায়। দেখে ভালো করে, বুঝতে চেষ্টা করে ]

ঘুচু। শুধু ধ্যান নয়, জ্যাঠামশাই, গভীর ধ্যান।

জ্যাঠা। ঠিক। একদম ঠিক। যাকগে, আমার আর অপেক্ষা করবার সময় নেই। তুমি এখন কোথাও যাবে না। এখানেই থাকবে। কীভাবে ধ্যানটা ভাঙে ভালো করে সেটা দেখবে। ধ্যান ভাঙবার পর ঠিকঠাক থাকলে তবেই চলে যেতে বলবে আমার অফিসে। সাতদিন আমার অফিসে গিয়ে আমার সঙ্গে ওর কাজ করবার কথা।

ঘুচু। আমি বলছিলাম, ববদার ধ্যানটা যদি ভাঙিয়ে দিই এক্ষুনি?

জ্যাঠা। (জ্যাঠা ঘড়ি দেখে) না না, কোনো দরকার নেই। নিজে নিজেই ধ্যানটা ভাঙুক। ভাঙাতে গেলে যদি গোলমাল হয়ে যায়, কী হবে তাহলে! এখনও তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না আমরা।

ঘুচু। ঠিক বলেছ। এখনও আমরা ঠিকঠাক বুঝতে পারছি না।

জ্যাঠা। (ঘড়ির দিকে চোখ রেখে) যাকগে, আমি চলি। আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। যা বললাম তোমায়, তাই করবে। তেমন দরকার হলে অফিসে আমায় টেলিফোন করে জানিয়ে দেবে।

[ বেরিয়ে যায় জ্যাঠা

[ ঘুচু ববের দিকে তাকায়। কাছে আসে। দেখে ভালো করে। বুঝতে চেষ্টা করে কিছু। বব আস্তে আস্তে চোখ খোলে। ধ্যানের ভাবটা চলে যায়। গম্ভীর গলায় ঘুচুকে বলে- ]

বব। কতক্ষণ?

ঘুচু। কতক্ষণ মানে?

বব। মানে, কতক্ষণ আমার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস?

ঘুচু। তা মিনিট পাঁচ-সাত।

বব। নারে, কিচ্ছু টের পাইনি আমি। ধ্যানের ভেতর ডুবে ছিলাম। জানিস, পৃথিবীটা যদি ধ্বংস হয়ে যেত, তাহলেও টের পেতাম না।

ঘুচু। হঠাৎ ধ্যানের ভেতর ডুবে গেলে কেন?

বব। না, কেন ডুবে গিয়েছিলাম, তা জানি না। বিশ্বাস কর, ভেতর থেকে কে যেন আমায় বলল, ধ্যানে বসে যা, ধ্যানে বসে যা। না না, কিছুতেই তাকে অস্বীকার করতে পারিনি। ধ্যানে বসে গেছি। জানিস তো, কথা দিয়েছিলাম আজ থেকে মামাবাবুর সঙ্গে সাত দিন অফিসে যাব। যাওয়া হল না। মামাবাবু তো জানেও না, এরকম হঠাৎ ধ্যানে বসবার জন্য গোলমাল হয়ে গেল যাওয়াটা।

ঘুচু। জ্যাঠামশাই সব জানেন।

বব। (একটু ভেবে) বুঝতে পেরেছি, এ ঘরে এভাবে যখন ধ্যানে বসেছি, তখন তো মামাবাবু আমায় দেখবেনই! কিন্তু বলছিলাম, আমায় ধ্যানে বসে থাকতে দেখে তোকে কিছু বলেননি মামাবাবু?

ঘুচু। বলেছেন, ধ্যান ভাঙবার পর তুমি ঠিকঠাক থাকলে অফিসে চলে যাবে। কি, ঠিকঠাক আছ?

বব। নারে ঘুচু, ঠিকঠাক নেই। ধ্যানের একটা ভাব আমায় যেন কীরকম করে ফেলেছে। সব কিছু কীরকম অর্থহীন মনে হচ্ছে। বল, আমার এখন মামাবাবুকে সাহায্য করবার জন্য অফিসে যাওয়া উচিত?

ঘুচু। মনে হচ্ছে তা যাওয়াটা উচিত নয়।

বব। ঠিকই মনে হচ্ছে তোর। (একটু সময় উদাস চোখে ঘুচুর দিকে তাকিয়ে থেকে) সত্যিই যেতে পারলাম না বলে খুব খারাপ লাগছে আমার।

ঘুচু। একটা কথা জিজ্ঞেস করব ববদা?

বব। কর।

ঘুচু। ধ্যানে বসে তোমার কী মনে হচ্ছে?

বব। এক সাধু আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বলছে, আয় রে-চলে আয়। সেই সাধুর হাতে গেরুয়া আর চাদর। আমার জন্য। বুঝলি ঘুচু, হয়তো আমি চলে যাব সাধু হয়ে। কোথায় যে যাব, তা বলতে পারব না। জানি, তোর খুব দুঃখ হবে। কিন্তু না, দুঃখ করবি না। ভাববি তোর ববদার ভাগ্যে সাধু হওয়াটাই লেখা ছিল।

ঘুচু। ঠিক আছে, তাই ভাবব। কিন্তু একটা কথা বলো তো, হঠাৎ তোমার ধ্যান করবার কথাটা মনে এল কেন?

বব। সেটা কী করে তোকে বোঝাব? বুঝতে পারছি না। আসলে জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে কাজে যাব বলেই বসেছিলাম। হঠাৎ যে কীরকম হয়ে গেল চারদিকটা! অদ্ভুত একটা সুর ভেসে এল। বুজে গেল চোখদুটো। পদ্মাসন হয়ে বসে পড়লাম। নিজের অজান্তেই। তারপর-হ্যাঁ, তারপরই সেই সাধু। আর তার ডাক, আয় রে, চলে আয়। ভাবতেই এখন কাঁটা দিয়ে উঠছে শরীর। দেখ-

ঘুচু। যাই বলো ববদা, ব্যাপারটা আমি ভাবতেই পারছি না-

বব। পারবি কী করে, পারা যায় কখনো। যাকগে, মনটা কীরকম হালকা হয়ে গেছে আমার। বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও।

ঘুচু। কিন্তু এখন তোমার কি একা বেরোনো ঠিক হবে!

বব। নিশ্চয়ই ঠিক হবে। একটা কাজ করে দিবি আমার? মানে, কবে সাধু হয়ে বেরিয়ে যাব তার তো ঠিক নেই, তাই আশা করি এ কদিন আমার অনুরোধগুলি রাখবি।

ঘুচু। বলো না কাজটা।

বব। এখুনি সোজা ছাতে উঠবি। একটা জায়গা পরিষ্কার করে টব দিয়ে ঘিরে দিবি। বসবার জন্য একটা আসন পেতে রাখবি চমৎকার করে। রাতে সেখানে বসে আমি ধ্যান করব।

ঘুচু। সে পরে করে দিলেও তো হবে।

বব। নারে ঘুচু, আমার প্রাণ চাইছে, তুই আমার চোখের সামনে এখুনি ছাতে উঠে যাবি। প্রাণের এই চাওয়াকে তুই অবহেলা করিস না।

ঘুচু। ঠিক আছে, তোমার প্রাণ যখন চাইছে, তখন ছাতে গিয়ে তোমার ধ্যানের জায়গা এক্ষুনি ঠিক করছি।

বব। সাধু হয়ে গেলে দেখবি, প্রথম আশীর্বাদটা আমি তোকেই করব। জানিস তো সাধুদের আশীর্বাদ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। নে, যা এবার-

[ ববের দিকে একটু সময় তাকিয়ে থেকে মুহূর্তে ভেতরে চলে যায় ঘুচু। বব তাকিয়ে দেখে ]

যাক ছাতে পাঠানো গেছে ঘুচুকে। এবার এক মিনিট-

[ ভেতরে যায় বব। একটু সময় মঞ্চ শূন্য। খুব সাবধানে চারদিক দেখতে দেখতে বব ঢোকে একটা ব্যাগ হাতে ]

বব। মামাবাবুর সঙ্গে কখনো অফিসে যাওয়া যায়! আজ খেলতে না গেলে ওরা আর টিমে রাখবে না। কিন্তু মামাবাবুকে সেকথা কে বোঝাবে! বলবেন, খেলতে হলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট খেলার কথা ভাববে। টি.ভি. চালিয়ে তোমার সেই খেলা আমরা দেখব। মিছিমিছি পাড়ার ক্লাবে খেলে কী হবে। না, আর দাঁড়ানো ঠিক নয়। যখন-তখন এসে পড়তে পারে ঘুচু। আর একবার যদি ব্যাগটা দেখে ফেলে-না বাবা, চলি-

[ পায়ে পায়ে বব বেরিয়ে যায়, মঞ্চ অন্ধকার হয়ে আসে ]

দ্বিতীয় দৃশ্য

[ মঞ্চ আলোকিত হলে দেখা যায় জ্যাঠামশাই এবং ঘুচু কথা বলছে। বাইরের ঘর ]

জ্যাঠা। ধ্যান ভেঙে বব তোমায় কাল যা যা বলেছে, সব শুনে মনে হচ্ছে, বব সাধু হয়ে যাবে।

ঘুচু। আমারও তাই মনে হচ্ছে জ্যাঠামশাই!

জ্যাঠা। বব সাধু হয়ে গেলে কী যে হবে; ভাবতেই পারছি না। কমলের সঙ্গে একবার কথা বলতে হবে। মাথাটা পরিষ্কার আছে কমলের। ঠিক কিছু একটা ভেবে ফেলবে কমল।

ঘুচু। ঠিক, কমলকাকার সঙ্গেই কথা বলা উচিত।

জ্যাঠা। তাহলে টেলিফোন কর তো কমলকে।

ঘুচু। (টেলিফোন তুলে ডায়াল করে) হ্যালো, কমলকাকা-আমি ঘুচু বলছি-জ্যাঠামশাই তোমার সঙ্গে কথা বলবেন-দিচ্ছি-

জ্যাঠা। হ্যালো কমল-তোমার সঙ্গে একটা জরুরি আলোচনা আছে আমার-মানে, খুব বিপদ, কী বললে, শুনতে চাও এখুনি? বলছি-বুঝলে, হঠাৎ ধ্যানে বসেছে বব। ধ্যানে তাকে একজন সাধু -আয় আয়- বলে ডেকে যাচ্ছেন। তার হাতে গেরুয়া। সেটা নাকি কাকে দিতে চাচ্ছেন। ছাতের ওপর গুছিয়ে ধ্যানের জায়গাও তৈরি করেছে। কাল রাতে সেখানে ধ্যানে বসেছে। কী বলছ, এখুনি চলে আসবে? ঠিক আছে, আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। (টেলিফোন রাখেন) কমল আসছে। দেখি ব্যাপারটা নিয়ে ও কী বলে।

ঘুচু। কিছু একটা ঠিক বলবেই কমলকাকা।

জ্যাঠা। নাঃ, কমল না আসা পর্যন্ত অন্য কোনো কাজে ঠিক মন বসবে না।

[ বাড়ির ভেতর থেকে বব ঢুকল। উদাসীনের মতো কাউকে না দেখেই পা বাড়াল বাইরে যাওয়ার জন্য ]

কী হল বব, চলে যাচ্ছ যে, আমাদের দেখতে পাওনি?

[ থমকে দাঁড়ায় বব। দেখে দুজনকে ]

বব। পেয়েছি। দেখতে পেয়েছি। কিন্তু ভেতর থেকে-

জ্যাঠা। ভেতর থেকে কী?

বব। তিনি আমায় ডাকছেন। বলছেন, নির্জনে বাড়ির বাইরে কোথাও গিয়ে এক্ষুনি ধ্যানে বসে যা।

ঘুচু। তিনি মানে তো সেই সাধু।

বব। ঠিক তাই। তিনি মানে সেই সাধুই। আমি যাই জ্যাঠামশাই। আর পারছি না দাঁড়াতে। দেরি হলেও ভাববেন না। আসলে, কতক্ষণ ধ্যানে বসতে হবে তা তো আমি জানি না। যা জানার সবই তো তিনি জানেন।

জ্যাঠা। আচ্ছা, সেই সাধু মানে, যাকে তুমি ধ্যানে দেখতে পাও, তাকে দেখতে কীরকম বলো তো?

বব। দেখতে কীরকম? না জ্যাঠামশাই, তা আমি বলতে পারব না।

জ্যাঠা। তবু একবার চেষ্টা করো বলতে।

ঘুচু। তিনি নিশ্চয়ই তোমায় বলতে না করেননি।

বব। (একটু সময় ভেবে) ঠিক আছে, যতটুকু পারছি, বলছি। এই পর্যন্ত তার সাদা শাড়ি। কপালে রক্ত চন্দনের টিপ। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। মাথায় জটা। পায়ে খড়ম। গেরুয়া বসন। আরও যে কত কী তা বলতে পারব না। সত্যিই, তাকালে ভক্তিতে কীরকম যেন করে ওঠে ভেতরটা।

ঘুচু। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে সত্যিই তুমি সাধু হয়ে যাবে ববদা।

জ্যাঠা। ঠিক বলেছে ঘুচু। আমারও তাই মনে হচ্ছে।

বব। কপালের লেখা, কে খণ্ডাবে মামাবাবু। আচ্ছা, আমি চলি, আমায় টানছে। দারুণভাবে টানছে। কিছুতেই আর এখানে থাকতে পারছি না আমি।

জ্যাঠা। টানছে যখন তখন তো আর ধরে রাখতে পারব না। যাও-

[ বব চলে যায়

জ্যাঠা। না, এরকম টানাটানির ব্যাপার আমি কখনো দেখিনি।

ঘুচু। যারা সাধু হয় তাদেরই বোধ হয় সাধুরা এরকম টানাটানি করে। মানে, আমরা তো আর কাউকে সাধু হয়ে যেতে দেখিনি। দেখলে হয়তো তাই দেখতাম।

জ্যাঠা। ঠিক-ঠিক বলেছ কথাটা।

[ কমলের প্রবেশ ]

কমল। কী হল সুধাদা, বব যে আমায় দেখেও চিনতে পারল না রাস্তায়। অত করে ডাকলাম, কিন্তু সে ডাক ও শুনতেই পেল না! অদ্ভুতভাবে চলে গেল।

জ্যাঠা। আমাদেরও মাঝে মাঝে চিনতে পারছে না বব। ওকে এখন সেই সাধু টানছে নির্জনে যাবার জন্য।

কমল। পুরো ব্যাপারটা আমায় একবার গুছিয়ে বলুন তো সুধাদা।

জ্যাঠা। কী করে যে গুছিয়ে বলব! আসলে কী জানো, গতকাল থেকে আমার অফিসে গিয়ে দিন সাতেক কাজে সাহায্য করবার কথা ছিল ওর। কিন্তু অফিস যাবার সময় এ ঘরে এসে দেখি ও ধ্যান করছে।

কমল। কী করে বুঝলেন ধ্যান করছে!

জ্যাঠা। তুমি দেখলেও সেটা বুঝতে পারতে।

কমল। যাকগে, তারপর কী হল বলুন।

জ্যাঠা। তার পরেরটুকু ঘুচু বলবে।

কমল। তার পরেরটুকু ঘুচু বলবে কেন?

জ্যাঠা। কী জানো কমল, বব তো আমার একমাত্র ভাগনে। তার সাধু হবার গল্প বলতে বুকটা ভেঙে যাচ্ছে আমার।

কমল। তা তো ভাঙবেই। যাকগে, ঘুচু বলে ফেলো।

ঘুচু। ধ্যান ভাঙতেই ববদা আমায় বলল, কে যেন ভেতর থেকে ধ্যান করতে বলে যাচ্ছিল বলেই ধ্যানে বসে পড়েছিল ববদা। সেই ধ্যানের ভেতর নাকি এক সাধু গেরুয়া বসন নিয়ে ডেকে যাচ্ছিল ববদাকে। এখন শুধু ধ্যানের জন্য নির্জন জায়গায় চলে যাচ্ছে ববদা।

কমল। ব্যাপারটা যদি সত্যি হয় সুধাদা, তাহলে কিন্তু সাধু হয়ে যাবে বব। আমরা কেউ ধরে রাখতে পারব না।

জ্যাঠা। না কমল, আমার ওই একটাই ভাগনে-তাকে সাধু হতে দিতে পারব না। কিছু একটা ভাবতেই হবে।

ঘুচু। সত্যি কমলকাকা, তোমায় ভাবতেই হবে কিছু।

কমল। কিন্তু ভেবে কি কিছু হবে? না, বোধ হয় হবে না।

জ্যাঠা। না কমল, তোমার মুখ থেকে -হবে না- কথাটা শুনতে চাই না আমি।

কমল। কী করে আপনাকে বোঝাই বলুন সুধাদা, সাধুর ডাক যখন শুনেছে বব, তখন কি আর আমার ডাক শুনবে? না কখনোই শুনবে না।

জ্যাঠা। তুমি আমায় হতাশ করে দিচ্ছ কমল। না, কমল, আমার চোখের বাইরে চলে যাবে বব, এটা আমি সহ্য করতে পারব না।

কমল। (একটু সময় ভেবে) একটা কাজ করুন সুধাদা। একটা আশ্রম তৈরি করবার ব্যবস্থা করুন। বব যখন পুরোপুরি সাধু হয়ে যাবে, তখন সেই আশ্রমটা দিয়ে দেবেন ববকে। বব আর তাহলে সাধু হয়ে হিমালয়-টিমালয়ে চলে যাবে না। চোখের সামনেই থাকবে।

জ্যাঠা। না না কমল, তোমার কাছ থেকে এসব কথা শুনব না আমি।

কমল। ঠিক আছে। ববের সঙ্গে একবার ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলে নিই। তারপর কী করব না করব ভাবা যাবে।

জ্যাঠা। সেই ভালো। ববের সঙ্গে তুমি একবার কথা বলে নাও।

কমল। কিন্তু ববকে কখন পাব সেটা আমায় বলুন।

জ্যাঠা। সে তোমায় আমি টেলিফোন করে জানিয়ে দেব।

কমল। ঠিক, টেলিফোন করে জানিয়ে দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে চলে আসব আমি।

[ কথা শেষ হতেই স্বপন ঢোকে ]

জ্যাঠা। নিশ্চয়ই ববের সঙ্গেই দেখা করতে এসেছ?

স্বপন। ঠিকই ধরেছেন মামাবাবু, ববের সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি।

জ্যাঠা। ববকে আর পাচ্ছ না।

স্বপন। ববকে আর পাচ্ছি না মানে? কী হয়েছে ববের?

জ্যাঠা। না স্বপন, সেটা আমি বলতে পারব না। কমলকে জিজ্ঞেস করো-ও-ই বলবে।

কমল। যদ্দুর বোঝা যাচ্ছে, সাধু হয়ে যাচ্ছে বব।

স্বপন। সাধু হয়ে যাচ্ছে মানে!!

ঘুচু। মানে-টানে কেউ কিছু জানে না। আজ থেকে ববদাকে হঠাৎ ধ্যানে পেয়েছে। যখন-তখন ধ্যানে বসে যাচ্ছে ববদা। ধ্যানের ভেতর একজন সাধু নাকি ডেকে যাচ্ছে ববদাকে। সাধুর হাতে গেরুয়া। সেই গেরুয়া নিশ্চয়ই ববদার জন্য। যাই বল, এটাই সাধু হয়ে যাবার লক্ষণ।

স্বপন। গোলমাল আছে।

জ্যাঠা। গোলমাল আছে মানে?

স্বপন। মানেটা খুঁজে দেখতে হবে।

কমল। কোথায় খুঁজবে মানে! এসবের মানে খোঁজার জন্য নিশ্চয়ই কোনো ডিকশনারি নেই।

স্বপন। তা নেই। কিন্তু (দু-মুহূর্ত কিছু ভেবে নিয়েই) যাকগে, আগে ববের সঙ্গে কথা বলে নিই। বব এখন কোথায় রে ঘুচু।

ঘুচু। ধ্যান করতে কোথায় গেছে জানি না।

স্বপন। সেকী, ধ্যান করতে বাইরে যায় নাকি!

জ্যাঠা। তাহলে বুঝতে পারছ ব্যাপারটা?

স্বপন। বুঝতে পারছি-কিন্তু যাই বলুন, গোলমাল একটা আছেই। (কমলকে) আপনার কী মনে হচ্ছে?

কমল। ভাবতে হবে।

স্বপন। ঠিক আছে, আমিও ভাবি, আপনিও ভাবুন।

জ্যাঠা। আচ্ছা, তোমার সঙ্গে শেষ দেখা কবে হয়েছিল ববের?

স্বপন। (ভেবে) তা ধরুন এই দিন চারেক আগে।

জ্যাঠা। তখন কি এই সব ধ্যান-ট্যান নিয়ে বব তোমায় কিছু বলেছিল?

স্বপন। না, বলেনি।

জ্যাঠা। চোখেমুখে কি ধ্যান-ট্যানের কোনো ভাব দেখেছিলে?

স্বপন। না, তাও দেখিনি।

জ্যাঠা। কথাবার্তা কি ঠিক ছিল?

স্বপন। হ্যাঁ, কথাবার্তাও ঠিক ছিল।

জ্যাঠা। বুঝলে কমল, এভাবেই হঠাৎ সাধু হয়ে যায় সবাই। আগে থেকে কিছু বোঝা যায় না।

কমল। ঠিকই বলেছেন। তবে আমরা চেষ্টা করব, কিছুতেই যেন বব সাধু হয়ে যেতে না পারে।

স্বপন। সত্যিই মামাবাবু, চেষ্টা করতেই হবে আমাদের। কিছুতেই ববকে সাধু হতে দেব না আমরা।

জ্যাঠা। সেটা যদি করতে পার, তাহলে সারাজীবন তোমাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আসলে, বব আমার একমাত্র ভাগনে তো!

স্বপন। তাহলে এখন আমি চলি মামাবাবু।

জ্যাঠা। এসো। [ স্বপন চলে যায়

কমল, চলো, আমরা ভেতরে গিয়ে বসি।

কমল । চলুন । [ পা বাড়ায় দুজন

তৃতীয় দৃশ্য

[ বব একা। বাইরের ঘর ]

বব। (চারদিক দেখে নিয়ে আপন মনে বলে) মামাবাবু আমার ধ্যান-ট্যান নিয়ে কী ভাবছেন ঠিক ধরতে পারছি না। ঘুচুকেও ঠিকঠাক জিজ্ঞেস করা যাচ্ছে না। একটু এদিক-ওদিক হলে ঠিক ধরে ফেলবে ঘুচু। ক্রিকেট ম্যাচ খেলার জন্যেই যে এভাবে সাধু হবার ব্যাপারটা তৈরি করে ফেলেছি, সেটা নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন না মামাবাবু। আচ্ছা, ক্রিকেট ম্যাচ ছেড়ে সাত সাতটা দিন মামাবাবুর সঙ্গে অফিস যাওয়া যায় কখনো? কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ শেষ হবার পর কী করব? বেশি দিন তো আর ধ্যান-ট্যান নিয়ে এরকম করা যাবে না। (একটু ভেবে) একটা কাজ করব, খেলা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান-ট্যান ছেড়ে দেব। অমনি নিশ্চয়ই লক্ষ লক্ষ প্রশ্ন করবে সবাই। ওই একটা কথাই তখন বলব, ধ্যান করতে আমায় কেউ আর বলছে না। চোখ বুজে চেষ্টা করলে ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। কেউ তো আর প্রমাণ দিতে বলবে না। তবে খুব সাবধানে থাকতে হবে। কমলকাকা আর স্বপনকে যখন বলেছেন মামাবাবু, তখন ওরা ঠিক কিছু একটা করতে চেষ্টা করবে। না, ধরা পড়লে চলবে না কিছুতেই। পুরো ম্যাচটা আমায় খেলতেই হবে।

[ হঠাৎ কমল ঢুকে পড়ে। ববের চেহারা পালটে যায়। ধ্যান-ধ্যান ভাব করে বব। কমল গভীরভাবে দেখে ববকে ]

কমল। সত্যি, তোমাকে আমার অন্যরকম লাগছে বব। না, তুমি আর সেই বব নও।

বব। কিছু করবার নেই কমলকাকা। সেই ববকে আর কখনো খুঁজে পাবে না। ভেতরে ভেতরে আমার চব্বিশ ঘণ্টাই কী যেন হয়ে যাচ্ছে। না, কমলকাকা, এরকম যে হবে, তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি কখনো।

কমল। আচ্ছা, ভেতরে ভেতরে কী হয়ে যাচ্ছে তা আমায় বলতে পারবে?

বব। বলতে পারব কি না, বলতে পারব না কমলকাকা। (কী ভাবতে থাকে) কী জানেন কমলকাকা, এ ব্যাপারটা ঠিক চেষ্টা করে বলার ব্যাপার নয়।

কমল। ঠিক আছে, মেনে নিচ্ছি তোমার কথা। কিন্তু একটা কথা আমায় বলো, ধ্যানের ভেতর সেই সাধু তোমায় কাছ থেকে ডাকছেন, না দূর থেকে ডাকছেন।

বব। আপনার কথাটা কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কমলকাকা।

কমল। আসলে কী জানো, কাছ থেকে ডাকলে তোমার যে সাধু হতে আর দেরি নেই, সেটাই বুঝব। মানে-বুঝব, তোমাকে ছেড়ে তিনি আর দূরে থাকতে পারছেন না।

বব। আমি এবার ধ্যানে বসে ভালো করে সেটা দেখে নিয়ে আপনাকে বলব কমলকাকা। আসলে, কাছ থেকে ডাকছেন। কিন্তু কতটা কাছ থেকে ডাকছেন, সেটা আপনাকে ঠিকঠাক বলতে চাই।

কমল। ঠিক আছে, তাই বোলো। কী জানো, তুমি সাধু হয়ে যাবে ভাবতে আমাদের সবারই খুব খারাপ লাগছে।

বব। লাগবারই তো কথা।

কমল। আচ্ছা, তোমার কি আর কোনো কিছুতেই কোনো ইচ্ছে নেই? মানে, ওই যে, ক্রিকেট-ট্রিকেট খেলতে, বেড়াতে-টেড়াতে যেতে, দিব্যি জমিয়ে গল্প করতে আমাদের সঙ্গে-

বব। বিশ্বাস করুন কমলকাকা ওসব মনে হচ্ছে গত জন্মের কথা।

কমল। তারমানে সাধু হয়ে যেতে তোমার আর বেশি দেরি নেই।

বব। সে তো আমি জানি না।

কমল। সাধু হয়ে গেলে কী করবে?

বব। তাও জানি না।

কমল। হিমালয়ে গিয়ে নিশ্চয়ই তপস্যা করবে?

বব। হয়তো তাই করব।

কমল। (একটু সময় ভেবে) দু-একদিনের মধ্যেই তাহলে সুধাদার সঙ্গে আমায় বেরিয়ে পড়তে হবে।

বব। কোথায় বেরিয়ে পড়তে হবে কমলকাকা?

কমল। হিমালয়ে। তোমার জন্য হিমালয়ের জঙ্গলে নিশ্চয়ই ঠিকঠাক একটা জায়গা বেছে দিতে হবে। আসলে, হঠাৎ করে হিমালয়ের জঙ্গলে গিয়ে ঠিকঠাক তো আর থাকতে পারবে না। দেখতে হবে বাঘ-টাঘ আসে কি না সেখানে, কাছাকাছি কোথাও ভালো হোটেল আছে কি না, দেখতে হবে সেটাও। খেতে তো হবে তোমায়। রান্নাবান্নাও শেখনি যে রান্না করে খাবে। দরকার হলে কাছাকাছি কোথাও ঘর-টর বানিয়ে লোক রেখে দিতে হবে। হাজার হলেও সুধাদার একমাত্র ভাগনে তো তুমি-

বব। আমি এসব কিছু ভাবতে পারছি না কমলকাকা।

কমল। কী করে ভাববে! ধ্যানে যখন কাছাকাছি এসে গেছেন সাধু, তখন ভাববার কোনো সুযোগই নেই তোমার! সব কিছুই অর্থহীন মনে হবে তোমার কাছে।

বব। ঠিক তাই, সব কিছুই আমার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে কমলকাকা। (ধ্যানের ভঙ্গি করে)

কমল। (ববকে ভালো করে দেখে) কী হল-তোমাকে বেশ খানিকটা অন্যরকম দেখাচ্ছে বব।

বব। না, আর কথা বলব না। বলতে পারব না। ধ্যানের ভাব এসে গেছে আমার। সাধুকে আমি খুব কাছে দেখতে পাচ্ছি। -আয় আয়- বলে ডাকছেন তিনি। ওই তো, হাতে তার গেরুয়া বসন। নির্জনে কোথাও আমি চলে যাচ্ছি কমলকাকা। ধ্যানে বসব। ধ্যানে না বসলে আমার উপায় নেই- [ বেরিয়ে যায় বব

কমল। (সেদিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে) নাঃ, কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না ববকে। ব্যাপারটা সত্যি হলে কিছু বলার নেই-কিন্তু এরকম ঘটনা কি সত্যি হয়? যাকগে, সুধাদার সঙ্গে একবার কথা বলে যাই। সুধাদা-

[ ঘুচুর প্রবেশ ]

ঘুচু। জ্যাঠামশাই তো বাড়িতে নেই। অফিসে।

কমল। আমি ভেবেছিলাম এখন বাড়িতেই পেয়ে যাব সুধাদাকে। যাকগে, আমি চলি।

ঘুচু। ববদার ব্যাপারটা নিয়ে এখনও কিছু ভাবনি?

কমল। তাইতো। না বলে গেলে ভুল করে ফেলতাম। হ্যাঁ, একটু আগেই এখানে দাঁড়িয়ে তোমার ববদার সঙ্গে কথা বলছিলাম।

ঘুচু। ববদার সঙ্গে কথা বলে কিছু বুঝতে পেরেছ?

কমল। বুঝতে পারলেও ধরতে পারিনি।

ঘুচু। কী করবে তাহলে?

কমল। অন্যরকম কিছু একটা ভাবতে হবে। ভেবে ফেললেই বলব তোমায়। চলি-

[ কমলকাকা চলে যায়

ঘুচু। যে যাই বলুক, ববদা ইচ্ছে করেই এরকম করছে। একবার যদি কোনোভাবে ধরতে পারি, তাহলে আর ছাড়ব না। …না, যাই সুখেনদের বাড়ি থেকে একবার ঘুরে আসি।

[ বেরিয়ে যায় ঘুচু। কয়েক মুহূর্ত মঞ্চ ফাঁকা। তারপরই ঢুকে পড়ে বব ]

বব। উফ, কীসব প্রশ্ন কমলকাকার। শেষপর্যন্ত হয়তো আজই আমায় নিয়ে হিমালয়ের জঙ্গলে বসিয়ে দিয়ে আসত। ভাগ্যে তখুনি ধ্যান করবার কথাটা মাথায় এসে গিয়েছিল। এই সাত দিন কমলকাকা আর স্বপনকে এড়িয়ে থাকতে হবে। সত্যি, ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে অফিসে যাওয়া যায়! না, অফিসে না গিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্যই যে ধ্যানের প্ল্যান করেছি, এটা কিছুতেই কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। …যাকগে, কবে কবে খেলা আছে, ভালো করে আর একবার দেখেনি- (পকেট থেকে কাগজ বের করে চোখ রাখে তার ওপর) কাল বুলেটস ক্লাবের সঙ্গে, অনামী ক্লাবের সঙ্গে পরশু। সঙ্ঘশ্রীর সঙ্গে তার পর দিন-

[ স্বপনের প্রবেশ ]

স্বপন। এই যে বব, পেয়ে গেছি তোমাকে। কী পড়ছ এটা?

বব। (বব দ্রুত ভাঁজ করে কাগজটা) ওই মানে, কিছু মন্ত্র লেখা আছে কাগজটাতে। পড়ছি। মন্ত্র ছাড়া আর কী আছে পড়বার বলো।

স্বপন। মন্ত্র মানে? কীসের মন্ত্র?

বব। কীসের মন্ত্র, কী করে বলব। ধ্যানে পেয়েছি। লিখে রেখেছি ধ্যান ভাঙতেই।

স্বপন। একবার মন্ত্রগুলো দেখি।

বব। না-না-মন্ত্রগুলো আমি তোমায় দেখতে দিতে পারব না স্বপন। আসলে, এই মন্ত্রগুলো শুধু আমার জন্যেই। বিশ্বাস করো-

স্বপন। তাহলে ঠিকই শুনেছি, সাধু হয়ে যাচ্ছ তুমি? ধ্যান-ট্যান শুরু হয়ে গেছে তোমার।

বব। জানি না কী হচ্ছি। শুধু জানি, গেরুয়া বসন নিয়ে ডেকে যাচ্ছেন একজন সাধু। তার ডাককে আমি অস্বীকার করতে পারছি না। …এই দেখো, তার কথা বলতেই কীরকম করছে ভেতরটা।

স্বপন। কীরকম করছে মানে?

বব। জানি না।

স্বপন। একটু চেষ্টা করো জানতে।

বব। পারব না।

স্বপন। আমি বলছিলাম-

বব। না, কিছু বোলো না। আমি যাই। একটু নির্জনে বসব ছাতের ওপর। বোধ হয় ধ্যানেই বসতে হবে। তুমি কিছু মনে কোরো না স্বপন। ভেবে নিয়ো, তোমার পুরোনো একজন বন্ধু, চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। ভাবতে তোমার কষ্ট হবে জানি, কিন্তু সে কষ্ট তোমায় মেনে নিতেই হবে।

[ ধ্যানের ভঙ্গি করে বব। তারপর চলে যায়। স্বপন দাঁড়িয়ে থাকে। ববের চলে যাওয়া দেখে ]

স্বপন। গোলমাল একটা আছেই। কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে আমাদের। কমলকাকার সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে কথাও বলতে হবে। (হাত ঘড়ি দেখে) হ্যাঁ, এখন পাওয়া যাবে কমলকাকাকে। যাই, একবার কমলকাকার কাছ থেকে ঘুরেই আসি।

[ চলে যায় স্বপন

চতুর্থ দৃশ্য

[ বাইরের ঘর। ভাস্কর বসেছিল। জ্যাঠামশাই ঢুকতেই উঠে দাঁড়াল ]

ভাস্কর। কমলদা আমায় পাঠিয়েছে। একটা চিঠি-

জ্যাঠা। চিঠি কেন? টেলিফোন করলেই তো পারত কমল।

ভাস্কর। টেলিফোনে আপনাকে পায়নি কমলদা। আমি যেতেই সেজন্য আমায় চিঠিটা দিয়ে পাঠিয়েছে।

জ্যাঠা। (চিঠিখানা খুলে) সুধাদা, একটা বুদ্ধি মাথায় এসেছে। কালপরশু সেই বুদ্ধি কাজে লাগাব। দেখা হলে বলব। টেলিফোনে আপনাকে পাচ্ছি না বলে ভাস্করকে দিয়ে চিঠিটা পাঠালাম। ইতি কমল। (চিঠিখানা পড়া হতেই ভাস্করের দিকে ফিরে বলল) বুদ্ধিটা সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?

ভাস্কর। কীসের বুদ্ধি বলুন তো-

জ্যাঠা। ও, তাহলে তুমি কিছু জান না। অবশ্য তোমার তো জানবার কথাও নয়।

[ বব ঢুকল। কপালে একটা স্টিকিং-প্লাস্টার। চিঠিটা মুহূর্তে আড়াল করেন জ্যাঠা ]

জ্যাঠা। কোথাও বেরুচ্ছ মনে হচ্ছে?

বব। সেটা তো ঠিক বলতে পারব না মামাবাবু।

জ্যাঠা। সেকী, কোথায় বেরুচ্ছ বলতে পারবে না কেন?

বব। কী করে বলব মামাবাবু। আমায় যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

জ্যাঠা। টেনে নিয়ে যখন যাচ্ছে, তখন আর কী করবে। কিন্তু বেশি দেরি কোরো না।

বব। সে ব্যাপারটা তো আমার হাতে নেই মামাবাবু।

জ্যাঠা। কেন?

বব। ওই যে কোথাও হঠাৎ ধ্যানের জন্য বসে পড়তেই হবে আমায়। কতক্ষণ ধ্যান চলবে, কী করে তা বলব। ধ্যানে বসলে আমি কী আর আমি থাকি? না, আর দাঁড়াতে পারছি না। চলি-

[ বব বেরিয়ে যায়

ভাস্কর। ওর নাম তো বব।

জ্যাঠা। তুমি বুঝি ওকে চেনো?

ভাস্কর। শুধু আমি কেন, অনেকেই চেনে।

জ্যাঠা। অনেকেই চেনে কেন?

ভাস্কর। ওই যে, দারুণ ক্রিকেট খেলে। ব্যাট হাতে নিলে গোটা কয়েক বাউন্ডারি ও মারবেই। ছক্কা-টক্কাও মেরে দেয়। সেঞ্চুরি তো করবেই।

জ্যাঠা। এত সব তো জানতাম না!

ভাস্কর। আসলে, ও খেলে স্টার ক্লাবে। স্টার ক্লাব তো আর এ পাড়ার ক্লাব নয়। জানবেন কী করে?

জ্যাঠা। ঠিক, পাড়ায় খেললে সবই তো জেনে ফেলতাম।

ভাস্কর। এই তো পরশুদিন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সেমিফাইন্যালে দারুণ খেলে সেঞ্চুরি করল। হঠাৎ একটা বল লাফিয়ে উঠে কপালে লাগল বলে আর ঠিকঠাক খেলতে পারল না। না হলে যা খেলছিল, ডবল সেঞ্চুরি করে ফেলতই।

জ্যাঠা। ববের কপালে ওই যে স্টিকিং-প্লাস্টার দেখলাম, সেটা তাহলে পরশুদিন বল লেগে কপাল কেটে যাবার জন্যেই লাগিয়েছে।

ভাস্কর। তা ছাড়া আর কী জন্য লাগাবে।

জ্যাঠা। ঠিক জানো তো?

ভাস্কর। সেকী, ঠিক জানব না কেন? আমি নিজের চোখে দেখেছি স্টিকিং-প্লাস্টার লাগাতে।

জ্যাঠা। ওর মতো চেহারার কাউকে দেখনি তো?

ভাস্কর। না না; ওকেই দেখেছি। সেই কতদিন ধরে খেলতে দেখছি ওকে। ভুল করবার কোনো কারণই নেই।

জ্যাঠা। উফ তুমি যে একটা কী দারুণ খবর দিলে আমায়!

ভাস্কর। বুঝতে পারছি, ববদা দারুণ ক্রিকেট খেলে শুনে আপনি খুব খুশি হয়েছেন।

জ্যাঠা। উহু, ধরতে পারনি, খবরটা কেন দারুণ একটা খবর। পরে তোমায় সব বলব। আমার এখন যে করেই হোক ববের মুখোমুখি হতে হবে।

ভাস্কর। তাহলে আমি চলি-

জ্যাঠা। আচ্ছা, এসো।

ভাস্কর। কমলদাকে গিয়ে কী বলব?

জ্যাঠা। শিগগির একবার চলে আসতে বলবে।

ভাস্কর। আচ্ছা-

[ চলে যায় ভাস্কর। জ্যাঠামশাই ভেতরের দিকে তাকিয়ে ঘুচুকে ডাকেন ]

জ্যাঠা। ঘুচু-ঘুচু-(এবার নিজের মনেই বলেন) ভাবা যায়, খবরটা কী দারুণ খবর। ধ্যান করতে যাবার নাম করে বব ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছে! আশ্চর্য, আমাদের বুঝতেই দেয়নি কিচ্ছু! দাঁড়াও একবার কাছে পাই ববকে।

[ ঘুচু ঢোকে ]

জ্যাঠা। এই যে ঘুচু, তোমার ববদার ব্যাপার-স্যাপার এবার বুঝে নাও!

ঘুচু। ববদার ব্যাপার-স্যাপার মানে?

জ্যাঠা। ধ্যান করতে নির্জন জায়গায় যাবার কথা বলে রোজ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে! মানে, আমার সঙ্গে কাজে গেলে তো আর খেলতে যাওয়া হবে না। যাই বলো, রীতিমতো মাথা খাটিয়ে বের করেছে বুদ্ধিটা।

ঘুচু। এরকম দুর্দান্ত একটা খবর তোমায় কে দিল?

জ্যাঠা। দেয়নি, পেয়ে গেছি। কমলের কাছ থেকে একটি ছেলে এসেছিল। ববকে দেখেই সে চিনেছে। ছেলেটিই বলল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলছে বব। ববের কপালে যে স্টিকিং-প্লাস্টার লাগানো, ওটা ক্রিকেটের বল লেগে কেটে গিয়েছিল বলেই লাগাতে হয়েছে। ছেলেটি নিজের চোখে দেখেছে লাগাতে।

ঘুচু। ব্যাপারটা ভাবতেই পারছি না জ্যাঠামশাই।

জ্যাঠা। কিন্তু এখুনি ওকে কিছু বলবে না। গুছিয়ে কমল আর স্বপনের সঙ্গে কথা বলে যা করবার আমরা করব।

[ কথা শেষ হতেই ববের প্রবেশ। জ্যাঠামশাই আর ঘুচু বরের কপালের স্টিকিং-প্লাস্টারের ওপর চোখ রাখে। বব ঠিক কিছু বুঝতে পারে না। তারপর হঠাৎ সহজ হতে চেষ্টা করে ]

বব। আপনি এটা দেখছেন তো মামাবাবু। …কী জানেন মামাবাবু, সবই পরীক্ষা। সহজে কি আর সাধু হওয়া যায়! পরীক্ষা দিতেই হবে। তবে একটা কথা ঠিক, পরীক্ষায় কিন্তু আমি ফেল করিনি।

জ্যাঠা। তুমি কী বলতে যাচ্ছ, আমি কিন্তু তা ধরতে পারছি না বব।

বব। আসলে আমার ধ্যান কতটা গভীর, সেটারই পরীক্ষার চিহ্ন এটা।

ঘুচু। একটু খুলেই বলো না।

বব। বলব, খুলেই বলব। সেই সাধুই পরীক্ষা করতে চেষ্টা করেছিলেন আমার ধ্যান কতটা গভীর। আসলে, গতকাল পার্কের ভেতর একটা নির্জন জায়গা খুঁজে নিয়ে ধ্যান করতে বসেছিলাম। ধ্যানে প্রায় ডুবে গেছি। ঠিক সেই সময় হঠাৎ একটা ঢিল এসে লাগল কপালে। তখুনি বুঝতে পারলাম, আমায় পরীক্ষা করছেন সাধু। ব্যথা সহ্য করে ধ্যান করতেই থাকলাম। না, কিছুতেই নড়িনি, চোখও খুলিনি। আশ্চর্য, ধ্যানের মধ্যে সাধু আমায় আশীর্বাদ করলেন। …এই যে, ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

ঘুচু। ধ্যানের ভেতরেই কি সাধু তোমার কাটা জায়গায় প্লাস্টার লাগিয়ে দিয়েছিলেন?

বব। না না, ওটা আমি পরে লাগিয়ে নিয়েছি।

ঘুচু। কিন্তু সাধু তো রাগ করতে পারেন সেজন্য।

বব। এ ব্যাপারটা তুই কিছু বুঝবি না।

ঘুচু। কেন?

বব। আগে সাধু হয়ে যাই, তারপর তোকে সব বুঝিয়ে দেব। যাই বল, আমায় তো সাধু হয়ে যেতেই হবে। সেদিনের তো আর দেরিও নেই-

জ্যাঠা। যাকগে, তোমাকে হয়তো এরকম আরও পরীক্ষা দিতে হবে বব।

বব। সেজন্য তৈরি হয়েই আছি আমি। দেখবেন সব পরীক্ষাতেই আমি পাশ করব।

জ্যাঠা। আচ্ছা, একটু আগে তো বেরোবার সময় বললে, কখন ফিরবে জান না। তা এত তাড়াতাড়ি ফিরলে কী করে?

বব। ওই তো, বললাম না, কোনো কিছুই আমার হাতে নেই। কাল হয়তো সকালে বেরোব, ফিরব বিকেলে। সন্ধেও তো হয়ে যেতে পারে।

জ্যাঠা। (একবার ঘুচুর দিকে তাকিয়ে) ঠিক আছে, আমি ভেতরে যাই। বেরোবার জন্য এখুনি তৈরি হতে হবে আমায়।

[ হাতঘড়ি দেখে ভেতরে পা বাড়ালেন জ্যাঠামশাই

বব। কপালের -এটা-র দিকে তুই আর মামাবাবু এমনভাবে তাকিয়েছিলি, যেন অনেক ব্যাপার আছে এটার পেছনে।

ঘুচু। তুমি বুঝি তাই ভেবে ফেলেছ!

বব। না ভেবে কী করব। অবশ্য আমারই গতকাল বলা উচিত ছিল। কিন্তু ওই যে, সর্বক্ষণ একটা ধ্যান-ধ্যান ভাব। তার জন্যেই তো কোনো কিছুই ঠিকঠাক করতে পারছি না।

ঘুচু। বলতে গেলে তুমি বোধ হয় চব্বিশ ঘণ্টাই ধ্যানের ভেতর থাকো। কী, ঠিক বলেছি কি না!

বব। একদম ঠিক বলেছিস। চব্বিশ ঘণ্টাই আমি ধ্যানের মধ্যে থাকি। ধ্যান ছাড়া এখন আর কিছু নেই আমার জীবনে। বুঝলি ঘুচু, এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। অনেক ভাগ্য থাকলে বোধ হয় এরকম ঘটে!

ঘুচু। আচ্ছা, তুমি যে ক্রিকেট খেলা অত ভালোবাস, সেই ক্রিকেট তোমার আর খেলতে ইচ্ছে হচ্ছে না?

বব। এক্কেবারে না। মনে হচ্ছে, এই প্রথম ক্রিকেট শব্দটা শুনলাম।

ঘুচু। ব্যাট, বল, স্টাম্প এসব নিয়ে যে ক্রিকেট খেলা হয়, তা তোমার মনে আছে তো?

বব। কেন বল তো?

ঘুচু। ওই মানে, বললে না, ক্রিকেট খেলতে তোমার আর ইচ্ছে হয় না, সেজন্যেই ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্ন করছিলাম।

বব। না, আর ক্রিকেট নিয়ে কোনো কথা বলব না। হ্যাঁ, যে কথাটা জিজ্ঞেস করব ভাবছিলাম, খানিক আগে একটা ছেলে এসেছিল মামাবাবুর কাছে। ছেলেটা কে বলতে পারিস?

ঘুচু। দেখলে বলতে পারতাম। কেন, তোমায় সে কিছু বলেছে নাকি?

বব। না না, কিচ্ছু বলেনি। তবে ছেলেটাকে কোথায় যেন দেখেছি। মনে হচ্ছিল, আমাকে খুব দেখছে ছেলেটা।

ঘুচু। তোমাকে হয়তো মাঠে ক্রিকেট খেলতে দেখেছে কোথাও।

বব। আবার তুই সেই ক্রিকেট খেলার কথা তুলছিস। (বলেই ধ্যানের ভাব করে বব) দেখলি, ক্রিকেট খেলার কথা তুলতেই ধ্যান আমায় টানছে। যাই, ছাতে গিয়েই এখন বসি।

[ ধ্যানের ভঙ্গিতেই চলে যায় বব

ঘুচু। ধ্যান তোমায় টানছে, না? দাঁড়াও টানাচ্ছি।

পঞ্চম দৃশ্য

[ জ্যাঠা, কমল আর বব। বাইরের ঘর। কমল হাতঘড়ি দেখছে ]

কমল। (জ্যাঠার দিকে তাকিয়ে) এতক্ষণ তো এসে পড়া উচিত ছিল স্বপনের।

জ্যাঠা। পথঘাটের যা অবস্থা, ঘড়ি ধরে কি আর সব কাজ করা যায়!

বব। কিন্তু আমার যে একটু ধ্যান-ধ্যান আসছে মামাবাবু।

জ্যাঠা। আর মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করো, তারপর তোমায় ছেড়ে দেব। প্রাণের সুখে যেখানে ইচ্ছে গিয়ে ধ্যান করবে।

[ বব কিছু বলল না। ভাস্কর ঢোকে। হাতে একটা প্যাকেট। সেটা কমলের দিকে এগিয়ে দেয় ]

ভাস্কর। আজ একটা সেট দিল। কাল আরেকটা সেট দেবে বলেছে।

কমল। কাল কিন্তু তোমাকেই যেতে হবে সেই সেটটা আনবার জন্য।

ভাস্কর। সে ভাবতে হবে না। ঠিক চলে যাব।

জ্যাঠা। দেখি, কীরকম হল জিনিসটা।

[ প্যাকেটটা নিয়ে ভেতর থেকে গেরুয়া কাপড় বের করেন জ্যাঠামশাই। বব সেটা দেখেই উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে ]

জ্যাঠা। একী, উঠে পড়লে কেন? তোমার জন্যেই তো এই গেরুয়া আনা হল। ভালো করে দেখে নাও। কী জানো, এগুলো পরে থাকলে তোমার ধ্যান করতে আরও অনেক বেশি ভালো লাগবে। আনন্দ পাবে আরও বেশি।

কমল। এক্কেবারে ঠিক বলেছেন সুধাদা। শুনে নাও, অনেক ভেবেচিন্তেই এটা ঠিক করেছি।

ভাস্কর। এখুনি এগুলো ববকে পরিয়ে দিলে কেমন হয় বলুন তো কমলদা?

জ্যাঠা। তাইতো পরবে। নাও, বব দেরি কোরো না, পরে ফেলো।

বব। আমি বলছিলাম কী মামাবাবু-

কমল। কিছু বলবে না তুমি। আমরা যেটা বুঝেছি, সেটা ঠিকই বুঝেছি।

ভাস্কর। ববকে নিয়ে তারপর যা করাবেন, সেটা এবার বলুন ববকে।

কমল। কী সুধাদা, আমি বলব, না আপনি বলবেন?

জ্যাঠা। তুমিই বলো।

কমল। ঠিক আছে। আমিই বলছি। বুঝলে বব, এখানে যে তোমার ধ্যান-ট্যান ঠিকমতো হচ্ছে না সেটা আমরা বুঝতে পারছি। সেজন্যেই যে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ছ বাইরে, বুঝতেও অসুবিধে হচ্ছে না আমাদের। বুঝেই আমরা ঠিক করে ফেলেছি, আজ নয় কাল তোমায় নিয়ে আমরা যাব আমাদের গ্রামের বাড়িতে। সনাতন থাকে সেখানে। দারুণ নির্জন জায়গা। সারাদিন বাড়ির ভেতর যেখানে ইচ্ছে সেখানে বসে ধ্যান করতে পারবে। কেউ তোমায় কিছু বলবে না।

জ্যাঠা। এটাও বলে দাও, সনাতন ওর জন্য চমৎকার করে নিরিমিষ রান্না করবে। শুনেছি, নিরিমিষ রান্নায় ওর জুড়ি নেই।

বব। আমি যে ঠিক কী বলব, তা কাউকে ঠিক বোঝাতে পারছি না মামাবাবু।

জ্যাঠা। কিছু তোমায় বোঝাতে হবে না।

বব। হবে, নিশ্চয়ই বোঝাতে হবে মামাবাবু।

ভাস্কর। বড়োদের কথা কিন্তু তোমার শোনা উচিত। কমলদা, ঠিক বলেছি কি না বলুন!

কমল। এক্কেবারে ঠিক বলেছ।

[ কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়ে স্বপন ]

জ্যাঠা। এই যে স্বপন এসে গেছে। নাও, বলে ফেলো, কী বললেন তিনি।

স্বপন। ভাবতেই পারবেন না কী বললেন।

বব। আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না।

স্বপন। দিচ্ছি-বুঝিয়ে দিচ্ছি। বুঝলেন মামাবাবু, সাধুর খবর তো আপনি সহজেই নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টা বাসে গিয়ে প্রায় দশ মিনিট হেঁটে সেই সাধুর কাছে পৌঁছুতে হয়েছে আমায়। দুর্দান্ত সাধু। হিমালয় থেকে সদ্য এসেছেন। আমায় দেখেই বললেন, -কার জন্য আমার কাছে এসেছিস জানি।- বলেই ববের নামটা বলে চেহারার হুবহু বর্ণনা দিয়ে ফেললেন।

জ্যাঠা। ভাবাই যাচ্ছে না। বুঝলে কমল, গাঁয়ে কাঁটা দিচ্ছে আমার।

কমল। কাঁটা তো দেবেই। এরকম সাধুর খবর শোনাও পুণ্যের ব্যাপার। স্বপন, এবার বলে ফেলো তারপর কী হল?

স্বপন। তারপর সাধু বললেন, -আমি যাব ববের কাছে।- সঙ্গে সঙ্গে আমি তাকে ঠিকানা দিতে চাইলাম। তিনি বললেন, -ঠিকানা আমার জানা।- বলেই গড়্গড় করে বলেও দিলেন এবাড়ির ঠিকানাটা। না, এরকম সাধু আমি আমার জীবনে কখনো দেখিনি।

জ্যাঠা। বব, তুমি ভাগ্যবান। এরকম সাধুর শিষ্য হতে যাচ্ছ। বলো, কে এরকম সুযোগ পায়! না কমল, আমাদের দুঃখ না করে আনন্দ করা উচিত।

ভাস্কর। তাহলে সত্যি সত্যি গেরুয়াটা পরে ফেলুক বব।

জ্যাঠা। দাও ওর হাতে দাও গেরুয়াটা। বব, নিয়ে নাও গেরুয়া-

[ ঘুচু ঢোকে। দ্রুত চারদিকটা দেখে ]

ঘুচু। ববদা, বাইরে একজন তোমায় ডাকছে।

বব। (হঠাৎ পালাবার সুযোগ পেয়ে) আমায় ডাকছে বাইরে!

কমল। কিন্তু বব কি এখন যেতে পারবে?

বব। কেন পারব না। নিশ্চয়ই পারব। পারতেই হবে আমায়। আমি যাচ্ছি-

[ প্রায় ছুটেই বব বাইরে চলে যায়

জ্যাঠা। কী বুঝলে কমল?

কমল। বুঝলাম, য পলায়তি, স জীবতি-

ঘুচু। আমি কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না কিছু।

জ্যাঠা। পরে তোমায় সব বুঝিয়ে দেব।

স্বপন। সাধুর গল্পটা কীরকম তৈরি করেছিলাম, বলুন মামাবাবু।

জ্যাঠা। দারুণ বানিয়েছিলে। না, তুমি যে এতটা বলতে পারবে, তা আমি ভাবতেই পারিনি।

কমল। আমি শুধু তখন ববের মুখখানা দেখছিলাম।

ভাস্কর। একটুর জন্য শুধু গেরুয়াটা পরিয়ে দেওয়া গেল না।

কমল। ক্রিকেট খেলার জন্য যে এরকম ঘটনা ঘটবে, বব বোধ হয় সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি।

জ্যাঠা। কিন্তু আপাতত বব আর ফিরছে না।

ভাস্কর। আসলে, ওই যে য পলায়তি, স জীবতি-

ষষ্ঠ দৃশ্য

[ ঘুচু আর বব বাইরের ঘরে বসে কথা বলছে ]

ঘুচু। বুঝলে ববদা, জ্যাঠামশাই বলছিলেন, ওরকম চমৎকার একজন সাধু তোমায় শিষ্য করবার জন্য ডাকছেন, এটা তোমার সৌভাগ্য।

বব। ঠিক বলেছিস।

ঘুচু। সবাই যখন বলছে, তখন কিন্তু তোমার গেরুয়া পরে নেওয়াই উচিত।

বব। পরব, নিশ্চয়ই পরব। কিন্তু যে গেরুয়া আনা হয়েছে, সে গেরুয়া পরব না, পরব সাধুর হাতে ধ্যানের ভেতর যে গেরুয়া দেখতে পাই, সে গেরুয়া।

ঘুচু। কথাটা অবশ্য ঠিকই বলেছ। সাধুর হাত থেকে পাওয়া গেরুয়াই তোমার পরা উচিত।

[ হঠাৎ বাইরে -জয় শম্ভু- বলে হাঁক। মুহূর্তে বব সোজা হয়ে দাঁড়ায় ]

ঘুচু। বোধ হয় সেই সাধু এসে গেছেন। দাঁড়াও, দেখছি।

[ বাইরে যায় ঘুচু

বব। নিশ্চয়ই মামাবাবুরা প্ল্যান করে কাউকে সাধু বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। কাল যেভাবে স্বপন সাধুর গল্পটা বানিয়ে আমায় ভয় দেখাতে চেষ্টা করেছে, আজও হয়তো অমনি কিছু একটা করবে। মনে হচ্ছে, আজকের ম্যাচটা বোধ হয় আমায় খেলতে যেতে দেবে না। অথচ যেতেই হবে। এখুনি বেরিয়ে না পড়লে চলবেও না। ধ্যান করবার প্ল্যানটা করে ভুলই করে ফেলেছি সত্যি। অন্য কিছু একটা বলে মামাবাবুকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল। …কিন্তু সাধু বানিয়ে কাউকে নিয়ে এলে কী করব?

[ কথা শেষ হতেই স্বপন আর ঘুচু ঢোকে ]

স্বপন। জয় শম্ভু!! নিশ্চয়ই ভেবে নিয়েছিলে সেই সাধু এসে গেছেন।

বব। সত্যিই তাই ভেবেছিলাম। এই দেখো, আনন্দে কাঁটা দিয়েছে গায়ে। ভেবেছিলাম, তার হাত থেকে গেরুয়া নিয়ে আজই পরব। নাঃ, মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

ঘুচু। সত্যি স্বপনদা, এভাবে তোমার ববদাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।

স্বপন। তা উচিত নয়। কিন্তু দেখছি, কত সুন্দর করে বলতে পারে বব।

ঘুচু। তোমার চেনাজানা নাটকের একটা ক্লাব আছে, সেখানে নিয়ে যাও ববদাকে!

স্বপন। আর কী করে নেব-সাধু হয়েই তো চলে যাচ্ছে বব। সাধুরা কখনো নাটক করে বলে আমি শুনিনি।

ঘুচু। আমিও অবশ্য তা শুনিনি।

[ বব দ্রুত বুঝতে চেষ্টা করে কথাটা ]

বব। শোন, আমি ভেতরে যাচ্ছি।

স্বপন। কেন?

বব। ধ্যান-ধ্যান পাচ্ছে আমার। ধ্যানে বসতেই হবে এখন।

স্বপন। ঠিক আছে, চলে যাও, ধ্যান করতে।

[ ভেতরে চলে যায় বব

স্বপন। ভাবাই যাচ্ছে না, কী দারুণ অভিনয় করছে বব। সত্যিই ওকে একটা নাটকের ক্লাবে নিয়ে যাওয়া উচিত।

ঘুচু। ভাস্করদা যদি ববদাকে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলতে না দেখত, বুঝতেই পারতাম না, ক্রিকেট খেলার জন্য এরকম করছে।

স্বপন। যাকগে, আমি চলি। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, ববকে ভয় দেখাবার জন্যই -জয় শম্ভু- বলে ঢুকে পড়েছিলাম।

[ স্বপন চলে যায়। স্বপনের যাওয়া দেখে ঘুচু। কী যেন ভাবে। পায়ে পায়ে মঞ্চে ঢোকে বব। ব্যাগ হাতে। কিন্তু সেটা পেছনে দু-হাত দিয়ে ধরে আড়াল করে রাখা। ঘুচুর দিকে তাকিয়ে স্বগত সংলাপ ]

বব। একা যখন ঘুচু, তখন এমন কিছু ভাবতে হবে না। ঠিক বেরিয়ে যাওয়া যাবে ব্যাগটা নিয়ে। ব্যাগটা যদি দেখে ফেলে, তাহলেও অবশ্য ভাবতে পারবে না এর মধ্যে ক্রিকেটের জিনিসপত্র আছে-

[ ঘুচু ঘুরেই দেখে ববকে। ধ্যানের মতো মুখ। কাছে এসে ভালো করে দেখে ]

ঘুচু। ভেতরে গিয়ে যে ধ্যানে বসবে বলেছিলে?

বব। বলেছিলাম ঠিকই। বসেওছিলাম ধ্যানে। কিন্তু বসে থাকতে পারলাম না। বাইরে একটা নির্জন জায়গা আমায় হাতছানি দিচ্ছে। জানি না জায়গাটা কোথায়! শুধু যেতে হবে, এটুকুই জানি।

ঘুচু। কিন্তু তোমার হাতদুটো ওরকম পেছনে কেন?

বব। হাতদুটো পেছনে চলে গেছে নাকি! তাহলে ওটা বোধ হয় ধ্যানের নতুন লক্ষণ!

ঘুচু। আশ্চর্য না, নতুন নতুন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

বব। কী করব বল, কিছুই তো আমার হাতে নেই। যাকগে, চলিরে।

ঘুচু। কিন্তু আমি বলছিলাম কী-

বব। নারে ঘুচু, এসময় কিছু বলিস না। ঠিক নয় বলা। মিছিমিছি কষ্ট পাব আমি।

ঘুচু। তোমায় দেখে মনে হচ্ছে, আজ অনেকক্ষণ ধ্যান করবে তুমি।

বব। সব তো তাঁরই ইচ্ছে-

[ বব কৌশলে ঘুরে ঘুচুর মুখের দিকে চোখ রেখে পেছনে হাঁটতে থাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঢোকে ভাস্কর। বুঝতে চেষ্টা করে। ঘুচুর মুখে হাসি ]

বব। কী হল? হাসছ যে?

ঘুচু। কই, হাসছি না তো!

[ ইচ্ছে করে ভাস্কর খুক করে কাশতেই চমকে ঘুরে দাঁড়ায় বব ]

বব। একী, তুমি! মানে, হঠাৎ কখন এলে-মানে, আমি ঠিক কিছু বুঝতে পারছি না।

ভাস্কর। কিছু বোঝার নেই বব। এরকম একটা ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছ সেটা বলো।

বব। ব্যাগ!! (সামনে ব্যাগটা তুলে) হ্যাঁ, তাইতো, একটা ব্যাগই তো! আমার হাতে কোত্থেকে এল ব্যাগটা? না, উত্তর নেই। উত্তর দিতে আমি পারব না রে।

ঘুচু। ব্যাগটার মধ্যে কী আছে ববদা?

বব। জানি না। কিচ্ছু জানি না। সারাক্ষণ যিনি আমায় ডাকছেন, তিনি আমার জানবার সব ইচ্ছে নিয়ে চলে গেছেন। না, আর নয়। আমি চলি। ধ্যানে সব কিছু চোখ থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে।

ভাস্কর। ব্যাগটা আমায় একবার দাও তো।

বব। না না, ব্যাগটা চেয়ো না? আসলে, ধ্যানের সময় কিছু চাইতে নেই।

ভাস্কর। একথাটা তোমায় কে বলেছে?

বব। সেই যে, সেই তিনিই বলাচ্ছেন। চলি-

[ কথাটা শেষ হতেই পায়ে পায়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে স্বপন, জ্যাঠা, কমল ]

জ্যাঠা। উফ, তোমার জন্য কী কাণ্ড। …একী, ধ্যান হচ্ছে নাকি। (জ্যাঠা ববের চোখের দিকে তাকায়। বব ধ্যানের চোখে তাকায় জ্যাঠার দিকে) না, না বব আর ধ্যান নয়।

বব। কিন্তু না বললেই তো হবে না মামাবাবু। আমি যে ধ্যান না করে আর পারছি না।

কমল। এখনও যদি ধ্যান করতে ইচ্ছে হয়, তাহলে সেই ধ্যান কিন্তু কাতুকুতু দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।

বব। (চমকে উঠে) কাতুকুতু দিয়ে বন্ধ করতে হবে!!

জ্যাঠা। হ্যাঁ, কাতুকুতু দিয়েই বন্ধ করতে হবে। কাতুকুতু দেবে ঘুচু।

বব। কেন? কেন কাতুকুতু দিয়ে আমার ধ্যান বন্ধ করতে হবে?

স্বপন। সেই সাধুর কাছে ফের আমি গিয়েছিলাম। তিনিই বললেন, আজ থেকে তোমার যদি ধ্যান করতে ইচ্ছে হয়, তাহলে সেই ধ্যান কাতুকুতু দিয়ে ভাঙাতে হবে। বলো, তার কথা কি আমরা না মেনে থাকতে পারি?

বব। আমি কিন্তু কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

কমল। পারবে, ঠিক বুঝতে পারবে-একটু শুনে নাও আমাদের কথা।

জ্যাঠা। আসলে, আসলে কী জানো, সাধুও নেই, ধ্যানও নেই। আছে শুধু- (জ্যাঠা ববের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে যান)

বব। কী আছে শুধু?

জ্যাঠা। কমল, বলে দিই-

কমল। বলতে তো হবেই সুধাদা।

জ্যাঠা। আছে শুধু-ঘুচু বলে দিই-

ঘুচু। আর দেরি করলে ববদার ওপর অবিচার করা হবে জ্যাঠামশাই।

জ্যাঠা। ঠিক। (ববকে) আছে শুধু ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। উফ, কী গল্প বানিয়েছিলে। ধ্যান-সাধু-গেরুয়া-

বব। গল্প বানিয়েছিলাম! ধ্যান-সাধু-গেরুয়া!

কমল। কপালটা তোমার নেহাতই খারাপ বব-নাহলে ভাস্করকে আমি চিঠি দিয়ে পাঠাতাম না, আর ভাস্কর তোমায় চিনেও ফেলত না।

স্বপন। ফাঁসও হয়ে যেত না সব কিছু।

ভাস্কর। যাই বলুন, ক্রিকেটটা কিন্তু ভালোই খেলে বব।

জ্যাঠা। কিন্তু এই যে সাধুর গল্প বানিয়ে আমার সঙ্গে আমার অফিসে না গিয়ে ক্রিকেট খেলতে যাওয়া, এর জন্য নিশ্চয়ই শাস্তি পাওয়া উচিত।

বব। কিন্তু মামাবাবু গল্পটা তো সাধুর গল্প ছিল। সাধুর গল্পে কক্ষনো শাস্তি হয় না মামাবাবু। হওয়া উচিত নয়।

জ্যাঠা। চুপ করো তুমি। নেহাত তুমি আমার একমাত্র ভাগনে।

কমল। শাস্তিটা কী হবে, আমি বলব সুধাদা?

জ্যাঠা। নিশ্চয়ই বলবে। বলো-

কমল। পুরো একটা দিন সেই গেরুয়া পোশাকটা পরে থাকতে হবে ববকে। এটাই ওর শাস্তি। এক্কেবারে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত।

জ্যাঠা। সত্যি, দারুণ একটা শাস্তি ভেবে ফেলেছে কমল।

ঘুচু। গেরুয়া পোশাকপরা তোমার চেহারাটা আমি সত্যিই দেখতে পাচ্ছি ববদা।

স্বপন। বব, এরকম চমৎকার একটা শাস্তি পেতে নিশ্চয়ই তোমার খারাপ লাগছে না।

ভাস্কর। লাগাটা উচিতও নয়।

বব। (অসহায় চোখে দুজনকে একবার দেখে নিয়ে) একটা কথা বলব মামাবাবু?

জ্যাঠা। নিশ্চয়ই বলবে। শাস্তি পেয়েছ বলে তোমার কথা শুনব না তা কখনো হতে পারে না।

বব। মানে, কথা দিচ্ছি দু-দুটো দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পরে থাকব ওই গেরুয়া পোশাক।

জ্যাঠা। সেকী, একদিনের শাস্তিকে তুমি দু-দিনের শাস্তি করছ কেন?

বব। মানে, সাধুকে নিয়ে বানানো গল্পের শাস্তি একদিন, আর আজ এই যে এক্ষুনি সব গল্প জেনে ফেলার পরও আপনার সঙ্গে অফিসে না গিয়ে ক্রিকেট খেলতে চলে যাচ্ছি তার জন্য শাস্তি একদিন। বিশ্বাস করুন মামাবাবু, কথা দিচ্ছি দু-দিন গেরুয়া পোশাক পরে থাকব।

কমল। তার মানে!

বব। আমি চলে যাবার পর মানেটা নিয়ে আপনারা খুব করে ভাবুন কমলদা। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। চলি-

[ বলেই মুহূর্তে বেরিয়ে যায় বব

জ্যাঠা। একী, কী হল ব্যাপারটা!

ঘুচু। ববদার শেষ বলটাতে একসঙ্গে আমরা সবাই বোল্ড আউট। কী, ঠিক বলেছি কি না?

কমল। একদম ঠিক বলেছ, ববের শেষ বলটাতে আমরা বো-ল্ড-আ-উ-ট।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *