বিশেষ দ্রষ্টব্য – ১২

১২

আমার একটি টেলিফোন করার জরুরি দরকার হল বিকেলের দিকে। তৎক্ষণাৎ আমি কাছাকাছি পানের দোকান থেকে একটা টাকা ভাঙিয়ে প্রচুর খুচরো করে নিলাম।

কাছেই টেলিফোন কম্পানির একটি শাখা অফিস। সেখানে পরপর ছটি খোপের মধ্যে ছটি সাধারণের ব্যবহার্য টেলিফোন, একটি নেপালি দরোয়ান সেগুলি পাহারা দিচ্ছে। প্রত্যেকটি যন্ত্রের নিচে হিন্দি-বাংলা-ইংরেজিতে প্রচুর নির্দেশ লেখা আছে। পড়লে মনে হয় যেন বিরাট একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাতে হবে এখুনি। এবং ওর সঙ্গে যেন একটা অলিখিত বাক্যও যুক্ত আছে, সাবধান, ৪৪০ ভোল্ট, অসাবধান হইলেই মৃত্যু! আমি সাধারণত এসব যন্ত্রপাতি থেকে দূরেই থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু সেদিন বিষম প্রয়োজন ছিল একটি খবর দেবার।

খুব সাবধানে মাথা ঠাণ্ডা করে প্রথমে ইংরেজি নির্দেশ তারপর বাংলা অনুবাদ পড়ে বিষয়টি বুঝে নেবার চেষ্টা করলাম। কীরকম যেন মনে হল, ঐ নির্দেশ পুরোপুরি মানতে হলে আমার চারটে হাত থাকা দরকার। আমি জামার তলা থেকে আমার লুকোনো আর-দুটো হাত বার করে চার হাতেই কাজ শুরু করলাম। প্রতিমুহূর্তে নির্দেশাবলির দিকে চোখ রেখে। যথারীতি রিসিভার তুলে, চাক্তি ঘুরিয়ে বোতাম টেপার পর ওপার থেকে কী যেন একটা গলা ভেসে এল, আমি পয়সা দিয়ে কথা বলা শুরু করতেই কড়-র কড়-র কট্ কট্ ইত্যাদি কিছু আওয়াজ হয়েই একেবারে চুপ! আর টু-শব্দটি নেই। অর্থাৎ টেকনিক্যাল ভাষায় যাকে বলে ‘ডেঙ্’। রিসিভার রেখে দিলাম। কী ভুল হয়েছে? নির্দেশনামায় আবার চোখ বুলোতেই দেখলাম, মনোবাঞ্ছা সিদ্ধ না-হলে একটা বিশেষ বোতাম টিপলেই পয়সা নাকি ফিরে পাওয়া যায়।

বোতাম ধরে টেপাটেপি করলাম, সেটা গোঁয়ারের মতো চুপ করে রইল। তাতে দুঃখিত হলামনা, কারণ, যে-পয়সা একবার পকেট থেকে বেরিয়ে যায়, তা আবার ফিরে আসবে এমন অলৌকিক ব্যাপারে আমার বিশ্বাস হয়না। বুঝতে পারলাম, আমারই কোন ভুল হয়েছে, নিজের বোকামি আর কেউ দেখে ফেলেছে কিনা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আমি সুট করে পাশের কুঠরিতে ঢুকে গেলাম।

পাশের খোপে ঝঞ্ঝাট কম, রিসিভার তুলতেই পিঁ-পি-পিঁ আওয়াজ এল। অর্থাৎ এনগেজ্‌ড্। পাবলিক টেলিফোন কী করে এনগেজ্‌ড় হয়, এ-তত্ত্ব ভাবতে—ভাবতে আমি এলাম তার পাশের ঘরে। একটি লোক সেই মুহূর্তে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেই বলল, ‘এটায় হবে না, আমি অনেক চেষ্টা করলাম। ফোনটা খারাপ।’ কীধরনের খারাপ, কড়-কড় না পিঁ-পিঁ অর্থাৎ আগের ঘরের মতোই।

আমি চতুর্থ ঘরে গেলাম। এখানে স্পষ্ট ডায়াল টোন। সব ঠিকঠাক হল। ওপাশ থেকে গলা পেলাম। এবার পয়সা ফেলে বোতাম টেপা। তাও নিখুঁত। ওপার থেকে ভেসে আসছে, ‘হ্যালো, হ্যালো?’ আমি জবাব দিলাম। উত্তর এল, ‘জবাব দিচ্ছেননা কেন? কে?’—আমি অত্যন্ত কাতর গলায় নাম জানালাম। উত্তর এল, ‘কী আশ্চর্য কথা বলছেননা ক্নে? কে আপনি?’—আমি কণ্ঠস্বর উচ্চগ্রামে তুলে তবু মিনতির সুর বজায় রেখে বললাম, ‘আমি, আমার এই নাম, চিনতে পারলেনা?’

—কে আপনি? ধেৎ! কথা বলছেননা কেন?

–এত কথা বলছি তবু শুনতে পাচ্ছনা? তুমি কি ভগবান নাকি?

—টেলিফোন করে একটাও কথা বলছেননা! কে আপনি?

আমি তখন ঘর কাঁপিয়ে গর্জন করছি। ওপার থেকে তবু সেই শুনতে না পাবার বিরক্তি। কট করে লাইন কেটে গেল। এবং বোতাম টিপে পয়সা ফেরত এলনা।

পঞ্চম ঘরে গিয়ে, সেই ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় যে-ভাবে ‘ড্যাফোডিল’ কবিতার সাবসট্যান্স মুখস্থ করেছিলাম সেইভাবে নির্দেশনামা মুখস্থ করে নিজেই নিজের পড়া ধরলাম। তারপর প্রতিটি জিনিশ যে ঠিক্‌ঠা করেছিলাম তা আদালতে হল্প করে বলতে পারি। এবার পয়সা ফেলে বোতাম টেপার পর আবার সেই পরিচিত গলা। আমি জীবনের চরম অনুনয়ের সুরে বললাম, আমার নাম অমুক, দয়া করে এবার আমার কথা শোন। ওপাশ থেকে আবার ভেসে এল, কে? কথা বলছেননা কেন?

আমি প্রায় কান্নায় ভেঙে পড়ে বললাম, ‘হে টেলিফোনের দেবতা, দয়া করে আমার কণ্ঠস্বর ওপারে পৌঁছে দাও। আমি কি বোবা হয়ে গেছি, না পৃথিবীর মানুষ আর আমার ভাষা বুঝবেনা?’

ওপার থেকে শুনলাম, ‘মা, দেখো, সেই কোন্ বখা ছেলে বারবার টেলিফোন করে বিরক্ত করছে। কথাও বলছেনা। একটা কথা বললে এমন শুনিয়ে দিতাম। দূর ছাই!’ কট।

আমার পরম বান্ধবী আমাকে বখা বলে আখ্যা দিলেন, নিজের কানে শুনলাম। একটি উত্তর দিতে পারলামনা। পয়সাটা এবার ফেরত দেবে অন্তত, দেবতা? না।

পাশের কামরায় বাইরেই দয়া করে নোটিস ঝোলানো আছে, এই টেলিফোন যন্ত্রটি বিকল। যাক, আর পয়সা গচ্চা গেলনা।

নেপালি দরোয়ানটি বাংলা-ইংরেজি বোঝেনা দেখা গেল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার, তোমাদের মেশিন খালি পয়সা খায়, অথচ কাজ করেনা?’ লোকটা বলল, ‘কমপ্লেন-বুক? হাঁ সাব, ইধার!’ অর্থাৎ দিনের মধ্যে বহুবার ঐ খাতাটি তাকে বার করতে হয়। বেশ যত্ন করে বাঁধানো খাতা। আমি উল্টেপাল্টে দেখলাম। বহুদিন এমন একা-একা হাসিনি। অসম্ভব মজার মজার মন্তব্যে ভরা। শেষদিকের কয়েকটা মন্তব্য এই রকম :

পয়সাও নষ্ট হল, কাজও হলনা। আমার নাম-ঠিকানা দিয়ে গেলাম! কম্পানির উচিত আমার বাড়িতে ষাট নয়া ফেরত পাঠানো।

আরেকজন:

মানুষ ঘুষ খায়, যন্ত্রও বা খাবেনা কেন? আমি প্রত্যেকটা টেলিফোনের জন্য দুবার করে পয়সা দিয়েছি, তবু কোন কাজ হয়নি। যন্ত্রও মানুষের মতো নিমকহারাম!

এর নিচে লেখা, ছনম্বর ঘর ছাড়া আর সবকটি টেলিফোনই ঠিক আছে! পরীক্ষা করে দেখেছি। ইতি, টেকনিক্যাল ইন্সপেক্টর।

এই লেখাটা একটু আগের, তখনও ভালো করে কালি শুকোয়নি। সুতরাং আমি আর-কিছু লিখে সময় নষ্ট করলামনা। খাতাটা ফেরত দিয়ে আমি ছুটে গেলাম পোস্ট-অফিস। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এটিও একটি শাখা পোস্ট-অফিস, পূর্বের শাখা টেলিফোন ভবনটির মতো। নদীর চেয়ে শাখা নদীগুলোর যেমন বিক্রম বেশি, তেমনি শাখা অফিসগুলো অকৃতকার্যতায় আসল অফিসগুলোকে ঢের ছাড়িয়ে যায়। যে-কোন শাখা পোস্ট-অফিস এ-কৃতিত্বে জি. পি. ও.-কেও টেক্কা দিতে পারে।

পোস্ট-অফিসের টেলিফোনের সামনে দু-তিনজন লোক দাঁড়িয়ে। একটু অপেক্ষা করতেই হঠাৎ আমার মনে হল, এত ঝঞ্ঝাটে আমি নম্বরটা ভুলে গেছি। শেষ দুটো সংখ্যা তো বারবার উল্টে যাচ্ছে। মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাদের টেলিফোন গাইডটা কোথায়?’

—চুরি গেছে। নেই।

পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক রুক্ষ গলায় বললেন, ‘আপনাদের তো মশাই যখনই খোঁজ করা হয় টেলিফোন গাইড, তখনই বলেন, চুরি গেছে। আনিয়ে রাখতে পারেননা?’

–কতবার আনব? বারবার চুরি যায় যে! আপনারা কমপ্লেন করুন-না! পাশের স্ট্যাম্পের ঘর থেকে মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, ‘জানেন, মোটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা সত্ত্বেও ইংলন্ডের গির্জা থেকে বাইবেল চুরি যেত?

মেয়েটি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে বুঝলাম। কিন্তু টেলিফোন বই চুরি করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কার কী লাভ হয়, কোন্ ধর্ম-সাধনায় সিদ্ধি পায়, তা আমার বোঝার কথা নয়। স্থান ত্যাগ করে ছুটে গেলাম রাস্তার উল্টোদিকের ডাক্তার—খানায়। বিনীত ভাবে বললাম, ‘দয়া করে পয়সা নিয়ে একটা টেলিফোন করতে দেবেন?’

–টেলিফোন? এই বিকেলবেলা? সন্ধের পর আসবেন।

এরকম কথাও আমি জীবনে শুনিনি। আমার টেলিফোন করা দরকার এখন, আমি আসব সন্ধেবেলা? সবিনয়ে জানালাম, ‘সন্ধেবেলা লোকটির সঙ্গে আলাপ—পরিচয় বা যা-কিছু করবার জন্য আমার আসতে আপত্তি নেই, কিন্তু টেলিফোনটি আমার এখুনি করা দরকার।’ তখন আসল ব্যাপারটা জানা গেল। ওর টেলিফোনের চাক্তিতে তালা আটকানো, সন্ধেবেলা ডাক্তারবাবু স্বয়ং এসে তালা খুলবেন। এখন কল রিসিভ করা যায়, কিন্তু বাইরে করা যায়না। যাই হোক, ভদ্রলোক দয়া করে আমাকে গাইডটা দেখতে দিলেন। নম্বরটা এবার কাগজে লিখে ফিরে এলাম পোস্ট—অফিসে।

টেলিফোনের সামনে আর কোন লোক নেই। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীটি একটি বই পড়ছেন। এখানে অন্যান্য পোস্ট-অফিসের মতো লোকে এসে নিজে ডায়াল ঘুরিয়ে ফোন করতে পারেনা। একজন লোক শুধু এজন্যই রাখা হয়েছে, যিনি লোকের মুখে নম্বর শুনে নিজে চাক্তি ঘুরিয়ে রিসিভার তুলে দেবেন। আপাতত সেই লোকটি বই পড়ছেন। মলাট দেখে বুঝলাম, গোয়েন্দা গল্প। দু-তিনবারের ডাকে সাড়া না দিতে লোকটির প্রতি মায়াবশত আমি একটু অপেক্ষা করতে লাগলাম। আহা, এই মুহূর্তে হয়তো সুন্দরী নায়িকার সামনে পিস্তল তুলে দাঁড়িয়ে আছে দুর্বৃত্ত। এখন কি আর অন্যদিকে মন দেওয়া যায়।

দণ্ড পল মিনিট কাটতে লাগল। শেষ পর্যন্ত আর না থাকতে পেরে আমি কাচুমাচু গলায় বললাম, ‘দয়া করে আমাকে একটা নম্বর ডায়াল করে দেবেন?’ একবার দুবার তিনবার বলার পর লোকটি উত্তর দিলেন, ‘হবে না, লাইন আউট অব অর্ডার।’

–সে কী। এই তো দেখলাম, কয়েকজন টেলিফোন করছিলেন?

–এ লাইন কখনও ভালো থাকে, কখনও খারাপ হয়। ভূতুড়ে কাণ্ড মশাই।

এবার আমার পক্ষে মেজাজ ঠিক রাখা কষ্টকর হল। বেশ রুক্ষ গলায় বললাম, ‘আপনি ওটা কাউন্টারের ওপর তুলে দিন, আমি দেখছি ওটা ভালো কী খারাপ!

লোকটি এবার হাতের বই মুড়ে রেখে ধীরে-সুস্থে চোখ তুলে বললেন, ‘আপনি রাগ করছেন?’ তারপর, যে ভাবে লোকে ব্যবসার সঙ্গীকে গোপন সুখবর বলে, তেমনি মুচকি হেসে, এক চোখ কুঁচকে লোকটি আমাকে বললেন, ‘কমপ্লেন করুন-না। ঐ তো রয়েছে খাতাটা! লিখুন-না যা ইচ্ছে।’

তখন বিনা বাক্যব্যয়ে বেরিয়ে গিয়ে যেখানে আমার টেলিফোন করা দরকার ছিল, সেই ঠিকানায় আমি ট্যাক্সি করে উপস্থিত হলাম।

কিন্তু কমপ্লেন-বুক আমাকে কয়েকদিন তাড়া করেছে। যে-কোন সরকারি অফিসে গিয়ে কোন কিছু নিয়ে রাগারাগি করলেই দেখছি তারা কমপ্লেন-বুক এগিয়ে দেয়। যেন এটা একটা বেশ মজার ব্যাপার। পরম দুর্মুর্খকে চুপ করিয়ে দেবার একমাত্র অস্ত্র। খাতাটা এগিয়ে দেবার সময় সকলেরই মুখ বেশ হাসি-হাসি থাকে।

রাত্রি সাড়ে এগারোটায় শ্যামবাজার থেকে দমদমের শেষ বাস ছাড়ে। এগারোটা আন্দাজ পৌঁছে দেখি বিরাট কাণ্ড। তখনই সার্ডিন মাছের টিনের মতো ভর্তি হয়ে একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাসের সামনেটা ভিজে, ভেতরের লোকদের ঘাম গড়িয়ে এসেছে। প্রতি দশ মিনিট অন্তর বাস ছাড়ার নিয়ম হলেও শুধু আজ এই একটা বাসই ছাড়বে আধঘণ্টা পরে শেষ বাস হিসেবে, আর গাড়ি নেই, বাইরে তখনও শ-দুয়েক লোক দাঁড়িয়ে।

ছোট গুমটিঘরের মধ্যে দু-তিনজন লোক টেলিফোন আর খাতা পেন্সিল নিয়ে কী যেন করছিলেন। সেই ঘর ঘিরে একদল যাত্রী উত্তেজিত গলায় কত কী বোঝাবার চেষ্টা করছে। ভিতরের লোকেরা একদম গ্রাহ্যই করছেননা। দু-একজন শুধু তিরিক্ষে গলায় বলছেন, ‘আর বাস নেই তো কী করতে পারি আমরা? পায়ে হেঁটে বাড়ি যান!’

এমনসময় একটি লোককে দেখলাম। দেখার মতো চেহারা। বিশাল লম্বা ও চওড়া, পাজামা ও পাঞ্জাবি পরনে একটি চলন্ত দৈত্য ভিড়ের সকলের মাথা ছাড়িয়ে সেই গুমটি ঘরে উঁকি মেরে মেঘ-গর্জনের মতো গলায় বলল, ‘কী ব্যাপার, আর বাস নেই কেন?’

একসঙ্গে বহু কণ্ঠের বহু উত্তর। লোকটি সবাইকে এক ধমক দিল, ‘আপনারা চুপ করুন। গুমটির লোকেরা জবাব দিক। বাস নেই কেন?’

—নেই তো আমরা কী করব? আপনারা ওপরওলাকে জানান। কমপ্লেন করুন। ঐ তো কপ্লেন-বুক রয়েছে, জানান-না!

—কমপ্লেন-বুকে লিখব? লোকটা হা-হা করে হেসে উঠল। আমার সঙ্গে কমপ্লেন-বুক নিয়ে ইয়ার্কি করছেন? ওসব রঙ্গরস বুঝি আমি জানিনা? ও-বইতে লিখে কী লাভ হয় আমি জানি। দেখবেন, আমার কমপ্লেন-বুকে লেখার কায়দা?

তারপর লোকটি দুই বিরাট থাবা দিয়ে দমদম করে পেটাতে লাগল গুমটির টিনের দেয়ালে। পুরো গুমটিঘরটা ধরেই নাড়া দিতে লাগল। সঙ্গেসঙ্গে ভিড়ের অনেকেও হাত মেলাল তার সঙ্গে। সেই লোকটা হাসতে-হাসতেই বলল, ‘হয় বাস চাই, নইলে এ-গুমটিঘর আজ উড়ে যাবে! লাগাও! দুম দুম!’

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ভোজবাজি ঘটে গেল। কোথা থেকে চলে এল দুটো খালি বাস। একটা ডবল ডেকার এসেও অপেক্ষা করতে লাগল যদি যাত্রী—সাধারণের সেবার জন্য লাগে। একাধিক সরকারি অফিসার ছোটাছুটি করে দেখতে লাগলেন যাত্রীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। হাতজোড় করে বলতে লাগলেন, আগে প্রত্যেকটি যাত্রীর বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে, তবে তাঁরা নিজেরা বাড়ি ফিরবেন। তাদের কাজই তো জনসাধারণের সেবা।

লম্বা লোকটি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যেকটি লোককে আগে বাসে তোলার ব্যবস্থা করে দিল। তারপর, আমি কাছাকাছি ছিলাম বলে, আমার দিকে ফিরে প্রবল হাস্যে বললেন, ‘হাঃ! আমাকে দেখাচ্ছে কমপ্লেন-বুক! যে-রোগের যে—ওষুধ! কিংবা যে-ক্লাসের যে-রকম অঙ্ক, বুঝলেন? অথবা যে-বিয়ের যে-মন্তোর!

আমি লোকটির কাছ থেকে সরে গিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে উঠলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *