বরফে ঝাঁপ

বরফে ঝাঁপ

এক ফরাসী রেস্তোরাঁ লা বোহেমি এর জানলার ধারে জর্জ আর আমি বসেছিলাম, যেখানে মাঝেমধ্যেই আজকাল জর্জ আমারই টাকায় বড়মানুষি দেখাত। আমি বললাম, ‘মনে হচ্ছে বরফ পড়বে।’

বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারে এটা এমন কিছু মহান সংযোজন নয়। আঁধার ঘনিয়ে আসছে আর তাপমাত্রা বিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে চলে যাচ্ছে এবং আবহাওয়াবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করেই দিয়েছে বরফ পড়ার। তবু জর্জ আমার মন্তব্যে একেবারেই পাত্তা না দেওয়ায়, আমি আহত বোধ করলাম।

সে বলল, ‘এবার আমার বন্ধু সেপ্টিমাস জনসন এর কথা ভাব।

‘কেন?’ আমি বলি, ‘এরসঙ্গে বরফ পড়ার সম্ভাবনার কি সম্পর্ক।’

‘চিন্তাধারার স্বাভাবিক প্রগতি’ জর্জ কঠিনভাবে বলল, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলেও, অন্যের উল্লেখে শোনার একটি প্রক্রিয়া।’

.

‘আমার বন্ধু সেপ্টিমাস’ (জর্জ বলল,) ‘এক ভয়ঙ্কর যুবা পুরুষ, যার মুখমণ্ডল স্থায়ী ভ্রূকুটিতে ভরা এবং শক্তপোক্ত স্ফীত পেশীবহুল বাহু। পরিবারের সপ্তম সন্তান হওয়ায় ঐ নাম। তার অনুজ ভাইয়ের নাম অক্টেভিয়াস আর অনুজা নিনা। কতদূর পর্যন্ত ভাইবোনদের সারি চলেছিল জানি না, তবে আমার বিশ্বাস যৌবনের এইসব ভীড় ভাট্টার দিনগুলোই তাকে পরবর্তী জীবনে নীরবতা নির্জনতার প্রতি মুগ্ধ করে তুলেছিল। পরিণত বয়সে যখন সে তার উপন্যাস নিয়ে, খানিক নাম করেছে (তোমারই মতন, বন্ধু, তফাতের মধ্যে মাঝে মাঝে সমালোচকরা তার কাজের প্রশংসাও করে থাকে), সে সময়ে আবিষ্কার করল, স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতন যথেষ্ট অর্থ সে উপার্জন করেছে।

সংক্ষেপে, নিউইয়র্কের কাছাকাছি এক বিস্তৃত অঞ্চলে সে এক একটেরে বাড়ি কিনে ফেলল। সেখানে অল্প দিন বা বেশিদিনের অবসরে ও উপন্যাস লিখতে যেত। সভ্যতা থেকে খুব যে দূরে ছিল তা নয়, তবে অন্ততপক্ষে যত দূর চোখ যেত, ধু ধু শূন্যতা। আমার মনে হয়, আমিও একমাত্র ব্যক্তি, তার গ্রামের বাড়িতে যাকে সে আগ্রহভরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমি জানি, আমার শান্ত মর্যাদাপূর্ণ আচরণ তার আলাপচারিতার বৈচিত্র্য ও চমকে সে আকৃষ্ট ছিল। অন্ততপক্ষে এত কথায় সে কখনো তার আকর্ষণের উৎস ব্যাখ্যা করেনি। কিন্তু তাছাড়া আর কীই বা হতে পারে!

অবশ্যই, একজনকে তার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হতো। পিঠের ওপর সেপ্টিমাস জনসনের উৎফুল্ল বন্ধুসুলভ চপেটাঘাতের অভিজ্ঞতা যারই হয়েছে, সে জানে, সে মনে মনে আশঙ্কা করেছে, তার শিরদাঁড়া ভেঙে যাওয়ার। আমাদের প্রথম সাক্ষাতেও এই সাদর সম্ভাষণের ব্যতিক্রম ঘটেনি।

আমাকে একবার কিছু গুণ্ডা আক্রমণ করেছিল, তারা আমাকে উচ্চশ্রেণীর কামরার যাত্রী এবং চেহারা দেখে, ভুল ভেবেছিল, আমার কাছে বুঝিবা প্রচুর নগদ টাকাকড়ি ও রত্নাদি রয়েছে। আমি তীব্রভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম, সত্যিই আমার কাছে একটা পেনীও ছিল না। কিন্তু আমি জানতাম, যখন তারা এটা আবিষ্কার করবে তখন স্বাভাবিক হতাশায় আমার প্রতি না চরম বর্বরতা করে বসে।

ঠিক সেই জায়গায়, সেই সময়ে সেপ্টিমাস আবির্ভূত হল, হয়তো বা কিছু লেখা নিয়ে চিন্তামগ্ন থাকতে থাকতে। বদমাইসগুলো তার রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। সে গভীর ভাবনায় ডুবে থেকে আপন মনে অন্যমনস্ক সোজা এগোচ্ছিল আর তার ধাক্কায় দুজন এদিকে, তিনজন ওদিকে ছিটকে পড়ে গেল।

তার সংবিৎ ফিরলে, আমাকে সকলের নিচ থেকে তুলল আর সাহিত্যের সঙ্কট থেকে বেরিয়ে বুঝল, ব্যাপারটা কি। আমাকে এক সৌভাগ্যের চমক মনে করে ডিনারে নেমন্তন্ন করে ফেলল। আরেকজনের ব্যয়ে ডিনার করে ফেলা, সৌভাগ্যের চমকের থেকে বেশি, অতএব আমি আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম।

যতক্ষণে ডিনার শেষ হল, ততক্ষণে আমার সম্পর্কে তার সম্ভ্রম উদ্রেক হয়ে গেছে, যার ফলে আমি তার গ্রামের বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে গেলাম। এই রকম নিমন্ত্রণ বারে বারে আসতে লাগল। এক সময়ে যেমন সে বলেছিল, আমার সঙ্গে থাকা, তার একা থাকার মতনই প্রিয়। আর সে যেমন নির্জনতা ভালবাসত, তাতে এই প্রশংসা আমার কাছে পরম প্রাপ্তি ছিল।

প্রথমে ভেবেছিলাম, একটা ক্ষুদ্র জঘন্য বাসা হবে। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল। সেপ্টিমাস তার উপন্যাসে সত্যিই কৃতকার্য আর বাসার ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি। (আমি জানি, বন্ধু, তোমার সামনে সফল উপন্যাসের উপস্থাপনা করা খানিক নির্মমতা, কিন্তু আমি সর্বদাই সত্যবদ্ধ)।

বাড়িটা আদতে আমাকে পাকাপাকিভাবে রোমাঞ্চে রাখার মতন বিচ্ছিন্ন হলেও সারা বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল। বেসমেন্টে তৈলচালিত জেনারেটর আর ছাদে, সৌরপাখা। আমরা উপাদেয় খাবার খাচ্ছিলাম আর তার একটা চমৎকার পানশালাও ছিল। অনভ্যাস হলেও, আমি আশ্চর্যজনকভাবে, অনায়াসে নিজেকে সেই বিলাসে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলাম।

জানলা দিয়ে দৃষ্টি না চালিয়ে উপায় ছিল না, আর, দৃশ্যাবলীর অভাব দারুণই বিষাদময়। যদি মূল্য দিতে চাও, এক পাহাড়, মাঠ, ছোট্ট ঝিল আর অফুরন্ত শস্য শ্যামলিমা ছিল, কিন্তু মনুষ্য বসতির বা বড় রাস্তার বা অন্য আকর্ষণীয় কিছুর চিহ্নমাত্র ছিল না। শুধু টেলিফোন থাম্বার সারি।

একদা সুখাদ্য ও উপাদেয় ওয়াইনের পর সেপ্টিমাস বিশদ হল ‘জর্জ, তুমি এখানে রয়েছ বলে, আমার ভারি আনন্দ। তোমার সঙ্গে গল্প করার পর, আমার ওয়ার্ড প্রসেসরে বসতে এত তৃপ্তি পাই যে আমার লেখার যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধন হয়েছে। এখানে যখন খুশি আসতে দ্বিধা করো না। ‘এখানে,’ সে বাইরের দিকে হাত নাড়ল, ‘তুমি তোমার দায়িত্ব ও যে সমস্ত বিরক্তি তোমার পিছু নিয়েছে, সব কিছু এখানে ঝেড়ে ফেলতে পার। আর আমি যখন আমার ওয়ার্ড প্রসেসরে কাজ করবো, তোমার খুশি মতন, আমার বই পড়বে, টেলিভিশন দেখবে, রেফ্রিজারেটর থেকে খাবার নেবে আর আমার ধারণা, তুমি তো আমার পানশালার হদিসও জান।’

অতঃপর তাইই করেছিলাম। আমি নিজের জন্য একটা ছোট নকশাও তৈরি করে নিয়েছিলাম। ওয়াইনের অকুস্থলে মস্ত X চিহ্ন দিয়ে এবং বিভিন্ন বিকল্প রাস্তাও চিহ্নিত করেছিলাম। ‘শুধু একটাই জিনিস’ সেপ্টিমাস বলেছিল, জাগতিক দুর্দশা থেকে রেহাই পাবার এই আশ্রয়স্থল পয়লা ডিসেম্বর থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আমাকে তখন শহরের অপেক্ষায় থাকতেই হয়।

আমি তাতে ক্ষুব্ধই হলাম। কারণ তুষারের সময়, আমার কাছে দুঃখের সময়। শীতের সময়ই আমার ঋণদাতারা সবচেয়ে চাপ দেয়। এইসব পিছু-পড়া লোকগুলো, সবাই জানে আমার তুচ্ছ কয়েক পেনী ঋণ অবজ্ঞা করার মতন তারা যথেষ্ট ধনী। তবু যাতে আমাকে বাইরে বরফের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলা যায়, এই ভেবে মনে মনে আনন্দ পেয়ে থাকে। তারা নেকড়েসুলভ লোভের নতুন কৃতিত্বে উদ্বুদ্ধ হয়। সেই জন্য সর্বোপরি ঐ সময়ই, আমার গুপ্তাবাসের প্রয়োজন।

আমি বলি, ‘শীতে কেন ব্যবহার করতে পার না সেপ্টিমাস। এত চমৎকার ফায়ারপ্লেস, হৈ হৈ আগুন, তোমার সমান চমৎকার তাপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে ছাপিয়ে দিতে পারে, তুমি তো অ্যান্টার্কটিকার ঠাণ্ডাতেও হাসতে পার।’

‘তা পারতাম।’ সেপ্টিমাস বলল, ‘কিন্তু প্রত্যেক শীতেই বোধহয়, প্রবল হিম ঝঞ্ঝার গরগরে শয়তানগুলো আমার স্বর্গতুল্য আবাসে বরফের স্তূপ বানাতে জড় হয়। নির্জনতায় ডুবে থাকা এই বাড়ি, যতই পছন্দ করি, তখন বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

‘পৃথিবীটা ভালই হারিয়ে যায়,’ আমি উস্কে দেই।

‘তুমি একদম ঠিক,’ সেপ্টিমাস বলে, ‘কিন্তু তবু আমার রসদসমূহ যে বাইরের জগৎ থেকেই আসে। যেমন খাদ্য, পানীয়, জ্বালানি, লন্ড্রি। অমানবিক হলেও তো একথা সত্যি, বাইরের জগৎ ছাড়া তো যথার্থই বাঁচা যায় না। অতি সজ্জন বিলাসপ্রিয় ব্যক্তির মতন আমি অন্তত জীবন কাটাতে পারি না।’

আমি বলি, ‘জান সেপ্টিমাস, এমন হতে পারে, আমি এর একটা উপায় বার করতে পারি।

‘ভেবে দেখো।’ সে বলল, ‘কিন্তু সফল হবে না। এই বাড়িটা তো বছরে আটমাসের বা অন্ততপক্ষে ঐ আটমাসে আমি যতদিন এখানে রয়েছি।’

তা সত্যি। কিন্তু কোনো যুক্তিবাদী মানুষ কেন আটমাস থাকবে, যখন বারোটা মাস রয়েছেই। সেই সন্ধ্যায় আজাজেল্‌কে ডাকলাম।

আমার মনে হয় না, তুমি আজাজেল্‌ এর সম্বন্ধে কিছু জানো। সে একটা জিন, দু সে.মি. লম্বা যাদুকর। তার অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে, যা সে আনন্দের সঙ্গে প্রদর্শন করে। কারণ, মনে হয় তার নিজের জগতে সে তেমন পাত্তা পায় না। ফলত-

ওঃ, তুমি তার সম্পর্কে শুনেছ! বেশ বন্ধু, যুক্তি ব্যাখ্যাসহ আমি কেমন করে গল্পটা বলি, যদি তুমি ক্ষণে ক্ষণেই তোমার নিজের মতামত জাহির করতে থাক! সত্যিকারের কথাশিল্পীর কথা তুমি হৃদয়ঙ্গম কর বলে মনে হয় না। এটা হল সম্পুর্ণ মনোযোগী থেকে, আপাত ছুতোয় (যেমন আগে শুনেছ) বক্তাকে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকা।

যাই-ই হোক। ডাকা হয়েছে বলে, আজাজেল্‌ বরাবরের মতন ক্ষুব্ধ। মনে হয়, এক সমাহিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সে ব্যস্ত ছিল। কষ্ট করে আমি নিজের মেজাজ সংযত রাখলাম। সে যা দরকার মনে করে, সর্বদাই তাতে ব্যস্ত রয়েছে আর আমার জন্যে সাড়া দিতে, তার থেকে বিচ্যুত হওয়ার কথা একদম বিবেচনা করে না, অথচ আমি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়োজিত থাকি।

যতক্ষণ না তার কিচিরমিচির তোতলামি বন্ধ হল, আমিও শান্তভাবে অপেক্ষা করলাম আর তারপর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলাম।

তার ছোট্ট মুখে ভ্রূকুটি নিয়ে সে শুনল আর শেষে বলল, ‘বরফ কি?’

নিঃশ্বাস ফেলে আমি বোঝালাম।

‘তার মানে বলছ, এখানে কঠিন জল আকাশ থেকে পড়ে? কঠিন জমা জলের টুকরো! আর তারপরেও তোমরা বেঁচে থাক?’

শিলাবৃষ্টি কাকে বলে, আমি আর উল্লেখ করলাম না। তবে বললাম, ‘এটা পড়ে নরম পালকের মতন পাতলা ঝুরঝুরে। বুঝলে বলশালী!’ (তাকে বোকা বোকা নামে সম্বোধন করলে সে খুশি হয়), ‘যখন খুব বেশি পড়ে, তখন বড়ই অসুবিধাজনক।’

আজাজেল্ বলল, ‘যদি আমাকে পৃথিবীর জলহাওয়ার পরিবর্তন ঘটাতে বল, তাহলে আমি সুবিবেচনায় ও সোৎসাহে প্রতাখ্যান করছি। সেটা গ্রহের প্রতি অবৈধ হস্তক্ষেপের শিরোনামে এসে যাবে। যা আমার মতন উচ্চ নীতিবোধসম্পন্ন লোকদের নীতিবিরুদ্ধ। আমি দুর্নীতিপরায়ণ হতেই পারি না। বিশেষত ধরা পড়ে গেলে, আমাকে ভয়ানক ল্যামেল পাখির খাদ্য হতে হবে, ভয়ানক টেবিল ম্যানারে অভ্যস্ত সে এক জঘন্য জীব। সে আমাকে কিসের সাথে মিশিয়ে খাবে, তা তোমাকে বলতেও আমার ঘৃণা বোধ হচ্ছে।’

‘গ্রহের অন্যায় রূপান্তরে তুমি থাকবে, আমি তা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। হে পবিত্রাত্মা, আমি তোমাকে আরো সহজ কিছু করতে বলছি দেখো, বরফ যখন পড়ে, তা এত নরম পালকের মতন, যে মানুষের ওজন ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে না।’

‘এত মোটাসোটা হওয়া, তোমাদেরই দোষ!’ আজাজেল্‌ বকুনি দিয়ে উঠল। ‘নিঃসন্দেহে’ আমি বলি, ‘কিন্তু এই ওজনই মুস্কিল করছে। আমি চাই আমার বন্ধু যখন বরফের ওপর থাকবে, তখন সে যেন হাল্কা হয়ে যায়।’

আজাজেলের মনোযোগ আটকে রাখা খুব শক্ত ছিল। সে বিদ্রোহীর সুরে বলতে লাগল ‘জলের কঠিন অবস্থা, মাটিকে ঢেকে দিয়ে, ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে সে মাথা নাড়ল।

‘আমার বন্ধুকে কি একটু কম ভারী করে দেওয়া যায়?’ হাল ছেড়ে দিয়ে, আসল একটি মাত্র শর্তে অনড় রইলাম।’

‘অবশ্যই।’ আজাজেল্ ঘৃণাভরে বলল, ‘আসলে যা দরকার তা হল যথার্থ অবস্থায় জলের অণুদ্বারা সৃষ্ট অভিকর্ষ প্রতিরোধ নীতির প্রয়োগ। সহজ নয়, তবে সম্ভব।’

‘এক কাজ কর,’ বরফের অনমনীয়তার বিপদের কথা ভেবে,

অস্বস্তিতে বললাম, ‘অভিকর্ষ প্রতিরোধী তীব্রতা আমার বন্ধুর নিয়ন্ত্রণে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। নয়তো হঠাৎ হঠাৎ নাকানিচোবানি খেতে পারে।’

‘তোমাদের কলাকৌশলহীন স্বায়ত্ব ব্যবস্থায় জুড়ে দেওয়া? সত্যি! তোমার ধৃষ্টতার কোনো সীমা পরিসীমা নেই।’

‘আমি শুধু জিজ্ঞাসা করছি,’ আমি বলি, ‘কারণ এটা তো তোমাদের প্রজাতির যে কারো থেকে তুমি বেশি জানো।’ এই কুশলী মিথ্যাবাদে অপ্রত্যাশিত ফল লাভ ঘটল। আজাজেলের বুক আরো দুই মিলিমিটার ফুলে উঠল আর আদেশের ঢঙে অপ্রচলিত চিঁচিঁ স্বরে বলে উঠল, ‘করা যাবে।’

.

আমি ধরে নিলাম, সেপ্টিমাস সেই মুহূর্তে ঐ গুণের অধিকারী হয়ে গিয়েছেন, তবু নিশ্চিত হতে পারলাম না। তখন আগস্ট মাস আর তুষারপাত নেই। তাই পরীক্ষা করানো গেল না। এবং আমারও এমন মেজাজমর্জি ছিল না যে পরীক্ষা করার জন্য অ্যান্টার্কটিকা, পাটাগনিয়া, নিদেনপক্ষে গ্রীনল্যান্ডে পাড়ি দেই।

তাছাড়া সেপ্টিমাসকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা যাবেও না, বরফ ছাড়া। সে আমাকে বিশ্বাস নাও করতে পারে। এমন কি এহেন হাস্যকর উপসংহারে আসতেও পারে, আমি হয়তো নেশা করেছি।

কিন্তু ভাগ্য সদয় হলো। আমি শেষ নভেম্বরে, সেপ্টিমাসের গ্রামের বাড়িতে এলাম। সে সময়ে সে বলত, তার ঋতুকালীন বিদায়ী বাস আর সেবার, মাসের তুলনায় সার্বিক ব্যাপক তুষারপাত হল। আর তাকে এইভাবে জঘন্য অপমান করার জন্য দায়ী বিশ্ব প্রকৃতির ওপর বিষম ক্ষিপ্ত হয়ে, চিৎকার করে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

কিন্তু এটা তো আমার স্বর্গ, তারও, তবে তখনো সে তা জানে না।

আমি বলি, ‘ভয় পেয়ো না। সেপ্টিমাস। এখন সময় এসেছে, দেখবে বরফ আর তোমার কাছে একেবারেই ভয়াবহ নয়। এবং আমি প্রচুর বিশদভাবে সব কিছু ব্যাখ্যা করলাম।

আশা করেছিলাম তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হবে অবজ্ঞাজনিত অবিশ্বাস। কিন্তু সে আমার মানসিক সুস্থতার ওপর সম্পূর্ণ অনাবশ্যক নিন্দা করে গেল।

যাই হোক, আমার দীর্ঘ পরিকল্পনা করাই আছে।

বললাম, ‘তোমার আশ্চর্য মনে হতে পারে, সেপ্টিমাস আমি কি করে জীবিকা নির্বাহ করি। তুমি আমার বাকসংযমে আশ্চর্য বোধ করতে পার, যদি আমি বলি, অভিকর্ষ প্রতিরোধ তত্ত্বের এক সরকারি গবেষণামূলক কাজে আমিই কর্ণধার। তুমি আমাদের এক অমূল্য পরীক্ষার বিষয়। এছাড়া বিশেষ কিছু বলতে পারব না।

আর এই গবেষণা অনেকটাই অগ্রসরী। জাতীয় নিরাপত্তার অনেক কাজ এতে জড়িয়ে রয়েছে।

বিস্ফারিত নয়নে আমাদের সঙ্গে আমার দিকে তাকাল সেপ্টিমাস। যখন আমি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘তারকা খচিত নিশান’ এর কয়েক পক্তি গুনগুনিয়ে উঠলাম।

‘সত্যি সত্যি!’ সে বলল

‘আমি কি ‘সত্যি’ নিয়ে ইয়ার্কি করছি।’ আমার তরফে বলে উঠলাম। তারপর পাল্টা প্রশ্নের ঝুঁকি নিয়ে বললাম, ‘না কি সিআইএ করছে?’

আমার সরল মন্তব্যে যে সরল সত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়, তাতে পরাভূত হয়ে সে কথাটা হজম করল। বলল ‘আমাকে কী করতে হবে?

আমি বলি, ‘মাটিতে এখন ছয় ইঞ্চি পুরু বরফ। কল্পনা করে নাও, তোমার ওজন শূন্য আর নেমে পড় বরফে।’

‘আমাকে শুধুই কল্পনা করে নিতে হবে!’

‘হ্যাঁ, সেভাবেই এটা কাজ করবে।’

‘আমার পা ভিজে যাবে।

আমি ব্যঙ্গ করে বললাম, ‘তবে তোমার হিপ বুট পড়ে নাও।’

একটু ইতস্তত করে হিপ বুট এনে, ঘষতে ঘষতে তার মধ্যে ঢুকে গেল। আমার ওপর তার বিশ্বাস না রাখার এমন জ্বলজ্যান্ত উদাহরণে আমি ভীষণভাবে আহত হলাম। তার ওপর সে এক মস্ত ওভারকোট চাপাল ও শেষে আরো ভয়ঙ্কর এক টুপী।

‘যদি তুমি প্রস্তুত থাক-?’ ঠাণ্ডা স্বরে বললাম।

‘না বাবা।’ সে বলল।

আমি দরজা খুলে দিলে, সে বেরিয়ে পড়ল। ঢাকা বারান্দায় কোনো বরফ ছিল না। কিন্তু যেইমাত্র সে সিঁড়িতে পা রাখল, মনে হল সেগুলো যেন তার পায়ের নিচ থেকে পিছলিয়ে সরে যাচ্ছে। মরিয়া হয়ে সে পাশের ক্ষুদে ক্ষুদে ছোট থাম আঁকড়ে ধরল।

কোনোরকমে সিঁড়ির শেষ ধাপ পার হয়ে, ঠেলে সোজা উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করল। কিন্তু কাজ হল না, অন্তত সে যেভাবে চাইছিল, সেভাবে নয়। সে কয়েক ফুট ঘষটিয়ে গেল, হাত বরফে আছড়ালো, পা উঠে গেল উপরে। সে পিঠ দিয়ে পড়ে গড়িয়ে চলল। একটা ছোট গাছ পার হওয়ার সময় হাত দিয়ে গাছের গুঁড়ি জড়িয়ে নিল। তিন চার বার তার চারদিকে ঘুরে তবে থামতে পারল।

‘এখানে এত পিচ্ছিল বরফ কেন?’ তার স্বর বিরক্তিতে কেঁপে উঠল। অবশ্যই স্বীকার করছি আজাজেলের ওপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও আমাকে বিস্ময়ে চেয়ে থাকতে হল। বরফে তার কোনো পদচিহ্ন নেই। এমন কি সে যে বরফের ওপর গড়িয়েছে বরফের ওপর তারও কোনো দাগ পড়েনি।

বললাম, ‘বরফের ওপর তোমার কোনো ওজন নেই।’

‘মাথা খারাপ!’ সে বলল।

‘আমি বলি, বরফের দিকে তাকিয়ে দেখো। কোনো চিহ্নই পড়েনি।

সে তাকিয়ে দেখে, কিছু ভাসাভাসা কটু মন্তব্য করল। যেগুলো অতীতে ছাপানোর যোগ্য নয়, ধরা হয়েছে।

আর আমি বলে চলি, ‘যে বস্তুটি ঘষটাচ্ছে আর যার ওপর ঘষটাচ্ছে, তাদের মধ্যে চাপের ওপর ঘর্ষণ আংশিকভাবে নির্ভর করে। যত চাপ কম হবে, তত কমে যাবে ঘর্ষণ। তোমার ওজন শূন্য, কাজেই বরফের ওপর তোমার চাপও শূন্য। ঘর্ষণ শূন্য, তাই তুমি ঘষটে চলেছ, যেন বরফ হচ্ছে মসৃণতম বস্তু, তোমার কাছে।

তাহলে কী করতে হবে আমার। এভাবে আমার আর পা ঘষটাতে দেওয়া যায় না।

‘তোমার কি ব্যথা লাগছে, লাগছে না। যদি তোমার কোনো ওজন নাই থাকে এবং তুমি পিঠের ওপর পড়ে যাও, তোমার ব্যথা লাগছে না।

‘তাহলেও। বরফের ওপর শুয়ে জীবন কাটানোর মতো যথেষ্ট অজুহাত কিন্তু এটা নয়।’

‘শোনো, সেপ্টিমাস, নিজেকে আবার ভারী মনে কর, আর তারপর ওঠ। নিজস্ব ভঙ্গিতে ভ্রূ কুঁচকিয়ে বলল, ‘কেবল, নিজেকে ভারী ভাবব, হ্যাঁ?’

সে তাই করল এবং জবুথবু সোজা পায়ে দাঁড়াতে পারল।

এখন সে বরফের কয়েক ইঞ্চি ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়েছে এবং এবার খুব সাবধানে সে যখন হাঁটতে চেষ্টা করল, বরফে হাঁটতে অন্যদের মতো কোনো কষ্টই তার হলোনা। সাধারণত আমার সিদ্ধান্তে যা আসে, তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রদ্ধাসহ তার কণ্ঠস্বর শুনলাম, ‘কেমন করে করলে জর্জ? আমি তো ভাবতেই পারিনি, তুমি এত বড় এক বিজ্ঞানী।’

‘সিআইএ সংস্থা আমার বিজ্ঞানের জ্ঞান আড়ালে রাখতে বাধ্য করেছে,’ আমি ব্যাখ্যা করি, ‘এখন নিজেকে একটু একটু হাল্কা ভাবতে কল্পনা কর, আর যেমন ভাবে তুমি হাঁট, সেভাবে হেঁটে চল। তুমি আবছা আবছা চিহ্ন ফেলবে, আর বরফ হবে বেশি পিচ্ছিল। ভাবনা থামাবে, যখনই বুঝবে, বিপজ্জনকভাবে পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে।’

যেমন তাকে বললাম, সে ঠিক তাইই করল, কারণ আমাদের বিজ্ঞানীদের বুদ্ধিমত্তা সাধারণদের আয়ত্তাধীনেই রাখে।

‘এইবার’ আমি বলি, ‘ঘষটে ঘষটে চলতে থাক, যখনই থামতে চাইবে নিজেকে একটু ভারী করে তোল। আর এটা করবে খুব ধীরে ধীরে, নয়তো তুমি নাকের ওপর উঠে যাবে।’

সে তক্ষুনি কৌশলটা বুঝে ফেলল, খেলোয়াড় হওয়ার দরুন। আমাকে একবার বলেছিল, ক্রীড়া কৌশলে সে দক্ষ। একমাত্র সন্তরণ ব্যতীত। তার বয়স যখন তিন তাকে সাঁতার শেখানোর সদিচ্ছায়, একঘেয়ে নির্দেশ দেওয়ার কষ্ট স্বীকার না করে, তার বাবা তাকে সোজা জলে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। ফলত পুনরুজ্জীবনের জন্য তার মুখে মুখে কৃত্রিম শ্বাসকার্য চালাতে হয় দশমিনিট।

সেই থেকে জল সম্বন্ধে তার জীবনভর ভয় জন্মে গেছে এবং বরফ সম্পর্কে ও বিতৃষ্ণা। ‘বরফ হচ্ছে কঠিন জল’ সে বলল, যেমন আজাজেল্ বলছিল।

যাই হোক, নতুন পরিস্থিতিতে তুষারের প্রতি এই বিতৃষ্ণা মিথ্যা প্রমাণিত হল। সে তুষার পরিভ্রমণ শুরু করল, থেকে থেকে কর্ণভেদী উল্লাসে ‘হু-ই-ই।’ প্রত্যেক বারে নিজেকে একটু ভারী করে নিচ্ছিল। পুরু বরফ উড়ছিল তখন। আর সে থামতে পারছিল।

‘দাঁড়াও।’ বলেই বাড়ি ঢুকে ফের বেরিয়ে গেল, বুটের সঙ্গে স্কেট আটকে নিয়ে। ‘আমার ছোট ঝিলে কেমন করে স্কেট করতে হয় তা আমি শিখেছিলাম। বলতে বলতে সে স্কেট চালাচ্ছিল, ‘কিন্তু কোনোদিনও মজা পাইনি। সব সময়ে ভয় পেতাম। এই বুঝি বরফে ফাটল এল। এখন আমি নির্ভয়ে স্কেট করতে পারি।’

‘কিন্তু মনে রেখো,’ উদ্বেগের সঙ্গে বলি, ‘এ কিন্তু শুধু H2O অণুর ওপরেই কাজ করবে। যদি তুমি ঐ নীতিতে মাটিতে বা রাস্তায় হাঁটতে যাও, তবে তোমার হালকা ভাব উবে যাবে, তুমি আঘাত পেতে পার।’

‘কিছু ভেবো না।’ স্কেটিং-এ বেরিয়ে গেল সে। তার বরফে ঢাকা প্রান্তর দিয়ে সে বেগে বেরিয়ে গেল, আধ মাইলতক্ তাকে লক্ষ্য করলাম, দূর থেকে আমার কানে গানের কলি ভেসে এল, ‘বরফে ঝাঁপ দিয়ে এক ঘোড়ার স্লেজে…‘

সেপ্টিমাস, তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ, সুরের আনাচে-কানাচে আন্দাজ চালায় আর আন্দাজ সব সময়েই ভুল। আমাকে কানে আঙুল দিতে হল।

.

আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, সেবার এল আমার সবচেয়ে সুখের শীতকাল। পর্যাপ্ত খেয়ে, পান করে, উষ্ণ আরামে রাজার মতন দিন কাটিয়েছি। ভাল ভাল বই পড়েছি, লেখকের সমালোচনা করেছি, খুনিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। আর সহজে আমার ঋণদাতাদের আক্ষেপ কল্পনা করে দুর্দম পুলকিত হয়েছি।

জানলা দিয়ে আমি বরফের ওপর দিয়ে সেপ্টিমাসের অবাধ স্কেটিং পর্যবেক্ষণ করতাম। সে আমাকে বলেছিল নিজেকে পাখির মতন মনে হয়, আর সে যেন ত্রিমাত্রার আনন্দ পেয়ে থাকে, যা ইতিপূর্বে কখনো পায়নি। যার যার নিজের ব্যাপার।

আমি তাকে সাবধান করেছিলাম, বাইরের কেউ যেন তাকে না দেখে।

‘তাতে আমার বিপদ হতে পারে।’ আমি বলি, ‘কারণ সিআইএ কখনোই ব্যক্তিগত পরীক্ষা নিরীক্ষা অনুমোদন করবে না। তবে আমার নিজের বিপদের জন্য আমি পরোয়া করি না। বিজ্ঞান সবার আগে।

তবে তুমি যেভাবে বরফের ওপর দিয়ে অনায়াসে চলেছ, তুমি জনগণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পার, ডজন ডজন সংবাদপত্র তখন তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর তখন তোমাকে শত শত বিজ্ঞানীর গবেষণার ও সামরিক বাহিনীর লোকদের নজরের আওতার মধ্যে পড়ে যেতে হবে। এক মিনিটও তুমি একা থাকতে পারবে না। তখন তুমি জাতীয় সেলিব্রিটি। তখন হাজার হাজার লোক তোমার সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে উঠবে।’

এমন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভেবে সেপ্টিমাস জোরে কেঁপে উঠলো। আমি জানতাম। একজন নির্জনতাপ্রিয়র পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক।

তারপর বলল, ‘কিন্তু আমার রসদ পাব কি করে, যদি বরফে বন্দী থাকি? এটাই তো পরীক্ষার সমস্ত উদ্দেশ্য ছিল।’

আমি বলি, ‘আমি নিশ্চিত, ট্রাকগুলো সবই প্রায় সর্বদা বড় রাস্তার ওপর পর্যন্ত আসেই। যখন তারা পারবে না, তার জন্য সব সময়ই তুমি সঞ্চয় করে রাখতে পার। যদি সত্যিই আকস্মিক কোনো জরুরি প্রয়োজন পড়ে যায় যখন, তুমি বরফ পরিবৃত, তখন তোমার নিজের পদ্ধতি মতন অনায়াসে যতদূর যাওয়া যায়, চলে যাও, খেয়াল রেখো, কেউ তোমাকে লক্ষ্য করছে কি না।

এইসব সময়ে মনে হয় না, বিশেষ কেউ খোলা জায়গায় থাকবে। খুব সম্ভব কেউই থাকবে না। তারপর আবার নিজেকে ভারী করে নেবে। শেষ কয়েকশত ফুট কষ্টে-সৃষ্টে যাবে তোমাকে দেখাবে বিধ্বস্ত! যা দরকার তোমার নিয়ে নিলে। কয়েকশত ফুট আবার কষ্টে-সৃষ্টে পার হও, তারপর হাল্কা হয়ে, দুরন্ত গতিতে। বুঝলে?’

আসলে শীতে একবারের বেশি এটা করার দরকার পড়ে না। আমি বরাবরই জানি তুষার ভীতি সম্পর্কে, সেপ্টিমাস অনেক বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছে। আর কেউই তার তুষার পরিভ্রমণ দেখেওনি।

সেপ্টিমাস যথেষ্ট বরফ পেতে পারেনি। যখন টানা এক সপ্তাহ বরফ থাকতো বা তাপমাত্রা বরফ জমার নিচে নামত, তখন তার মুখ যদি দেখতে। ধরণা করতে পারবে না। বরফঢাকা থাকলেই যেন তার শান্তি।

সে কী চমৎকার শীতকাল। আর সে কী বিয়োগান্ত নাটক, কারণ একবারই এমন শীতকাল এসেছিল।

.

কী ঘটেছিল! বলব তোমাকে কী ঘটেছিল। তোমার মনে আছে, জুলিয়েটের বুকে ছুরি মারার আগে রোমিও কী বলেছিল? তুমি বোধহয় জানো না, আমি বলব তোমায়। সে বলেছিল, ‘জীবনে রমণীর প্রবেশ ঘটলে, শান্তি গেল!’

পরের শরতে, মার্সিডিস গাম নামের রমণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল সেপ্টিমাসের। ইতোপূর্বে সে অনেক নারীর সঙ্গেই পরিচিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও তার খুঁটি বাঁধা ছিল না। তরা কোনো বিশেষ অর্থ নিয়ে তার কাছে আসেনি। সামান্য কিছুদিন মেলামেশা, রোমান্স, একটু উষ্ণতা আর তারপর বিস্মৃতি, তারাও তাকে ভুলে গেছে।

এতে কোনো ক্ষতি নেই। যতই হোক। বহু সুন্দরী তরুণী আমাকেও ভীষণভাবে তাড়া করে ফিরেছে। এতে মোটেই কোনো লোকসান দেখিনি, যদিও আমার সম্পর্কে তারা প্রায়ই দুর্বলতা দেখিয়েছে আর আমাকে বাধ্য করেছে- কিন্তু আমি গল্প থেকে সরে আসছি।

সেপ্টিমাস আমার কাছে বিরস মেজাজ নিয়ে এল। ‘জর্জ আমি তাকে ভালবাসি।’ সে বলল, ‘তাকে ছাড়া আমার কোনো কিছুতেই মন বসছে না। সে আমার অস্তিত্বের চুম্বক।’

‘অতি চমৎকার,’ আমি বলি, ‘কিছুদিন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলাম।’

‘ধন্যবাদ, জর্জ।’ সেপ্টিমাস বিষণ্নভাবে বলল, ‘কিন্তু এখন আমার তার সম্মতি চাই। জানি না, কেন এটা হওয়া উচিত। কিন্তু মনে হয়, আমাকে সে বিশেষ কেউ মনে করে না।’

‘অদ্ভুত,’ আমি বলি, ‘সাধারণত, মেয়েদের ব্যাপারে তুমি যখন সফল পুরুষ। যতই হোক তুমি ধনী, বলিষ্ঠ আর অনেকের থেকেই কম কুৎসিত।’

‘আমার মনে হয়, ঐ বলিষ্ঠতা’ সেপ্টিমাস বলে, ‘আমি নাকি হাবাগোবা!

মিস গামের উপলব্ধির তারিফ করতে হয়। সদয় হয়ে বলতে গেলে ও, সেপ্টিমাস হাবাগোবাই। আমিও তাই ভেবেছিলাম। জ্যাকেটের হাতের নিচে তার পেশী কল্পনা করে, তবে পরিস্থিতি বিবেচনার উল্লেখ করলাম না।

সে বলল, ‘মার্সিডিস, পুরুষের শরীরের ওপর প্রাধান্য দেয় না। সে চায় মননশীল, বুদ্ধিদীপ্ত গভীর যুক্তিবাদী, দার্শনিক এবং ঐ রকমই বালতিভরা বিশেষণ সে বলে, আমি নাকি ওরকম নই।’

‘তুমি কি তাকে বলেছ, তুমি একজন ঔপন্যাসিক?’

‘অবশ্যই। তাকে আমি বলেছি। আর সে আমার দু চারটে উপন্যাস পড়েছেও। কিন্তু জানো তো জর্জ, সেগুলো ছিল ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে। তার মতে, এগুলো বিদ্রোহী সূচক।’

‘তাহলে ধরে নিতে হয় সে খেলোয়াড় মাফিক নয়।

‘একেবারেই নয়। সে সাঁতারু।’ বলেই মুখ বিকৃত করল। হয়তো সেই তিন বছরের শিশু বয়সে তার মুখে নিঃশ্বাসে পুনরুজ্জীবনের কথা মনে পড়ে গেল, ‘তাতে কোনো উপকার হচ্ছে না।’

‘সেক্ষেত্রে,’ আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলি, ‘ভুলে যাও সেপ্টিমাস। মেয়েরা সহজেই আসে। একজন যায়, তো অন্যজন আসে। সমুদ্রে অনেক মাছ, আকাশে অনেক পাখি। অন্ধকারে সবাই সমান। এক নারী বা অন্য, কোনো পার্থক্য নেই।’

আমি অনিশ্চিত বলে যেতে পারতাম, কিন্তু শুনতে শুনতে সে অদ্ভুত অস্থির হয়ে উঠল। হাবাগোবা অস্থির হলেই বা কার কি আসে যায়!

সেপ্টিমাস বলল, ‘জর্জ, এভাবে বললে আমার মনে লাগে। জগতে আমার জন্য মার্সিডিসই একমাত্র নারী। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। সে আমার হৃদয়ের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সে আমার ফুসফুসের নিঃশ্বাস, আমার হৃৎস্পন্দন। আমার নয়নের মণি, সে- ‘ এভাবে, সেও অনির্দিষ্টকাল বলে চলত, আর সে যে এইসব আবেগে ভেসে আমাকে অপ্রসন্ন করছে, তাতে তার কিছু আসত যেত না।

সে বলল, ‘বিয়ে ছাড়া আমি তো আর কোনো পথ দেখছি না।’

কথাগুলো যেন মৃত্যুদণ্ড। আমি জানতাম এর ফল কী হবে, কী হতে পারে। তার বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই আমার স্বর্গচ্যুতি। আমি জানি না কারণটা কী, কিন্তু নব পরিণীতাদের প্রথম দাবী থাকে, ব্যাচেলর বন্ধুদের তাড়াও। আমি তো আর সেপ্টিমাসের গ্রামের বাড়িতে আমন্ত্রিত হবো না।

‘তুমি তা করতে পার না।’ আমি সতর্ক করে বলি।

‘ওঃ, হ্যাঁ, একটু শক্ত বলে বোধ হচ্ছে। তবে মনে হয়, আমি পারি। আমি একটা ছক কষেছি। মার্সিডিস আমাকে হাবাগোবা ভাবতে পারে, কিন্তু আমি সম্পূর্ণ নির্বোধ নই। শীতের শুরুতে তাকে আমি গ্রামের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবো।

সেখানে শান্ত সমাহিত আমার ইডেনে, সে নিজেকে প্রসারিত ভাববে আর তখনই আমার আত্মার সৌন্দর্য সে উপলব্ধি করবে।’

আমার মনে হল, ইডেন নিয়ে সে একটু বাড়াবাড়ি কল্পনা চালাচ্ছে। কিন্তু বললাম, ‘তুমি কেমন করে তুষার পরিভ্রমণ কর। তা নিশ্চয়ই মার্সিডিসকে দেখাতে হচ্ছে না!’

‘না-না,’ সে বলল, অন্তত যতদিন আমাদের বিয়ে না হচ্ছে।’

‘কিন্তু তখনো’-

‘কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই তোমার জর্জ,’ একটু নিন্দাসূচক মন্তব্য করল, ‘পত্নী হল, পতির দ্বিতীয় সত্তা। নিজের আত্মার প্রিয়তম গোপন কথাও স্ত্রীকে বিশ্বাস করে বলা যায়। স্ত্রী–’

আবার সে অনির্দিষ্ট বলে চলেছিল, আর আমি যা করতে পারতাম, বললাম, ‘সিআইএ পছন্দ করবে না।’

সিআইএ সম্পর্কে তার যা মন্তব্য ছিল, তার সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়া সর্বান্তঃকরণে সহমত হত, সাথে সাথে কিউবা এবং নিকারাগুয়াও।

‘যা হোক করে, ডিসেম্বরের শুরুতে আমার সঙ্গে আমার জন্য আমি মার্সিডিসকে মানিয়ে নেবো,’ সে বলল, ‘আমি বিশ্বাস করি, তুমি বুঝবে জর্জ, আমরা দুজনে যদি একা থাকব মনে করি, প্রকৃতির নির্জনতায় আমার আর মার্সিডিসের মধ্যে যে রোমান্টিক সম্পর্কের সম্ভাবনা রয়েছে, তুমি নিশ্চয় কাবাব মে হাড্ডি হতে আসছ না! ধীরে ধীরে, নির্জনতার চুম্বকের টানে আমরা পরস্পরের কাছাকাছি আসব।’

অবশ্যই সেই উক্তিটি মনে এল। এটা হচ্ছে ডানকানের বুকে ছুরি বসাবার সময়, ম্যাকবেথ যা বলেছিল, কিন্তু আমি শীতল ও রাসভারীভাবে শুধুমাত্র সেপ্টিমাসের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এক মাস পরে মিস গাম, সেপ্টিমাসের গ্রামের বাড়িতে চলে গেলে, আর আমার যাওয়া হল না।

.

গ্রামে কী ঘটেছিল, আমি প্রত্যক্ষ দেখিনি। আমি শুধু সেপ্টিমাসের বক্তব্যের সাক্ষ্য থেকে জানি, কাজের শপথ করে বিস্তারিত বিবৃতি দিতে পারবো না।

মিস গাম সাঁতারু ছিল। কিন্তু সেপ্টিমাসের ঐ বিশেষ শখটিতে অজেয় বিতৃষ্ণা থাকায়, ঐ সম্পর্কে কোনো প্রশ্নই কখনো করেনি। মিস গামেরও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়নি, একটা হাবাগোবা লোককে আগ বাড়িয়ে বিশদ বিবরণ দেওয়ার। সে কারণে সেপ্টিমাস কোনো দিন জানতই না, মিস গাম সেই সব পাগল স্ত্রীলোকদের একজন যে কনকনে শীতেও ঝিলের জলের বরফ ভেঙে, বরফঠাণ্ডা জলে স্বাস্থ্যোদ্দীপক সাঁতার উপভোগ করতে পারে।

হয়েছিল কী, একদিন উজ্জ্বল বরফ ঢাকা সকালে সেপ্টিমাস যখন নাক ডাকিয়ে হাবাগোবা ঘুমে কাদা, মিস গাম ঘুম ভেঙে উঠে তার সাঁতারের পোশাক পরে নিল। ওপরে চাপাল টেরিলিনের ক্লোক। পরল সীকার আর বরফ ঢাকা পথে চলল ঝিলের দিকে। ধারের দিক পুরু বরফে ঢাকা, কিন্তু জলের দিকে তুষার-সৱ নেই। ক্লোক আর সীকার খুলে রেখে সে বরফ ঠাণ্ডা জলে ঝাঁপাল, সন্তরণ উপভোগের সাক্ষ্য প্রমাণ রেখেই।

এরপর সেপ্টিমাসের উঠতে খুব একটা দেরি হয়নি আর প্রণয়ীর সূক্ষ্ম অনুভূতি তাকে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দিল, তার আদরের মার্সিডিস বাড়িতে নেই। তার নাম ধরে ডাকতে লাগল সে। তার জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র ঘরেই আছে দেখে নিশ্চিন্ত হল। লুকিয়ে লুকিয়ে সে শহরে ফিরে যায়নি আর প্রথমেই ভয় ধরে গেল, তাহলে তো সে বাইরে বেরিয়েছে।

তাড়াতাড়ি সে খালি পায়ে বুট পরে ফেলল। পাজামার ওপর চড়াল সবচেয়ে ভারী ওভারকোট। মার্সিডিসের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বেগে বেরিয়ে গেল।

মিস গাম অবশ্যই শুনতে পেয়েছিল, সে একদিকে হাত নেড়ে চিৎকার করল, ‘এই যে এখানে সেপ, এই যে এখানে।’

তারপর কী হয়েছিল, সেপ্টিমাসের মুখের কথাতেই বলি ‘মার্সিডিস ‘সেপ’ বলে চিৎকার করেছিল আর আমি শুনেছিলাম, হেল্প হেল্প। স্বভাবতই বুঝে নিলাম, আমার সোনা পাগলামি করে বরফের মধ্যে পা দেওয়ার সাহস করেছে আর ঝিলের জলে পড়ে গেছে। কি করে আমি বুঝব বল, সে ইচ্ছে করে বরফ ঠাণ্ডা জলে ঝাঁপ দিয়েছে!

‘তার জন্য আমার এমন আকুলিবিকুলি ভালবাসা, জর্জ, যে জল আমার সাংঘাতিক ভীতি, বিশেষ করে বরফ ঠাণ্ডা জলে, সেখানেও আমি দৌড়ে নামতে গেলাম। তাকে উদ্ধার করতে। মানে একেবারে তক্ষুনি নয়, তবে চিন্তা করতে মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট সময় নিয়েছিলাম। বাইরে দাঁড়িয়ে।

তারপর আমি চিৎকার করলাম, ‘আসছি সোনা, আমার সোনা। জলের ওপর মাথাটা তুলে রাখ’ আর আমি এগোলাম।

আমি বরফের ওপর দিয়ে সাধারণ হাঁটার চেষ্টা করলাম না। মনে হল, যথেষ্ট সময় নেই। আমি ওজন কমিয়ে ফেলে দৌড়ালাম আর সুন্দরভাবে ঘষটাতে গেলাম, পাতলা বরফের স্তরের ওপর দিয়ে, যেটা ঝিলকে ঘিরে ছিল আর একেবারে বিশাল ঝপাৎ করে সোজা জলে পড়ে গেলাম।

‘তুমি হয়তো ভাবছ, আমাকে উদ্ধার করার রোমান্স, আমাদের দুজনকে আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল, এক সঙ্গে গেঁথে দিয়েছিল। কিন্তু ‘

সেপ্টিমাস মাথা নাড়ল, তার চোখে জল ভরে এল।

‘এটা সেভাবে কাজ করল না।

সে রেগে ফুঁসে উঠল, ‘হাবা কোথাকার,’

সে চিৎকার করে উঠল, ‘হ্যাঁ, ওভারকোট আর বুট পরে জলে ঝাঁপাচ্ছ, আর এতটুকু সাঁতার জান না? কী করতে যাচ্ছিলে, খেয়াল আছে? জানো, তোমাকে বাঁচাতে কী লড়াই করতে হয়েছে আমার? আর এমন ভয় পেয়ে গিয়েছিলে, যে আমাকে কামড়ে ধরেছিলে। তুমি আমাকে একেবারে কাত করে দিয়েছিলে, আর একটু হলে, দুজনেই ডুবে যেতাম। আমার এখনো সর্বাঙ্গ ব্যথা করছে।’

জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে সে ভয়ানক অভিমান ভরে চলে গেল। হতাশ হিম ঠাণ্ডা নিয়ে আমাকে পড়ে থাকতে হল, আমি এখনো ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে পারিনি। সেই থেকে ওর সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। সে আমার চিঠির উত্তর দেয় না। ফোন করলে কথা বলে না। জর্জ, আমার জীবন শেষ।’

আমি বলি, ‘একটুখানি কৌতূহল, সেপ্টিমাস। তুমি কেন নিজেকে জলে ছুঁড়ে ফেললে! ঝিলের পাড়ে কেন দাঁড়িয়ে রইলে না। অন্ততপক্ষে যতদূর পর্যন্ত বরফ ছিল সেই পর্যন্ত, তারপর না হয় একটা লম্বা লাঠি এগিয়ে দিতে বা একটা দড়ি খোঁজার চেষ্টা করতে!’

সেপ্টিমাসকে বিক্ষুব্ধ দেখাল, ‘আমি জলে নিজেকে ছুঁড়ে ফেলতে চাইনি, আমি ভেবেছিলাম, ঘষটে ঘষটে জলের ওপর দিয়ে আলতো চলে যাবো।

‘জলের ওপর দিয়ে আলতো ভাবে? তোমাকে আমি বলে দিইনি, তোমার শূন্য ওজন শুধু বরফের ওপরই কাজ করতে পারে?’

সেপ্টিমাসের চাউনি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল, ‘ভেবেছিলাম তাই। কিন্তু তুমি বলেছিলে, ওটা H2O অণুর ওপর কার্যকরী। সেটা তো জলকেও বোঝায়, নয় কি!’

সে ঠিকই বলেছিল। H,O শুনতে আরো বিজ্ঞানসূচক আর আমাকে তো আমার বিজ্ঞান প্রীতি দেখাতে হবে। আমি বলি, ‘আসলে বলতে চেয়েছিলাম কঠিন H, O’

‘কিন্তু তুমি তো কঠিন H,O বলনি,’ বলে সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল এমনভাবে যে বুঝলাম আমাকে সে পরিত্যাগ করছে।

আমার মনে হওয়াটা যথার্থ ঘটল। তা যাচাই করতে আমি আর সেখানে দাঁড়াইনি। তবে সেই অবধি তাকে আর দেখিনি। তার গ্রামের স্বর্গেও যাইনি। আমার বিশ্বাস, সে এখন দক্ষিণ সাগরের দ্বীপে থাকে, বেশির ভাগ, মনে হয়, সে আর জীবনে বরফ দেখতে চায় না।

সেইজন্যেই বলি, ‘জীবনে স্ত্রীলোক আসতে দিলে ভেবে দেখ,’ হতে পারে হ্যামলেট, ওফিলিয়ার বুকে ছুরি মারার আগে বলেছিল।

***

জর্জ তার আত্মার গভীর থেকে নিংড়ে নিয়ে সুরাসিক্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘এরা রেস্তোরাঁ বন্ধ করছে, তুমি কি বিল মিটিয়েছ!’

দুর্ভাগ্যবশত মিটিয়ে দিয়েছিলাম।

‘বন্ধু, বাড়ি ফেরার জন্য পাঁচ ডলার ধার দিতে পার?’

আরো দুর্ভাগ্যবশত আমাকে তা দিতে হলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *