পথের কাঁটা – ৯

জগদানন্দের বাড়ি থেকে ফিরে এসে বাসু-সাহেব শুনলেন তাঁর জন্য একজন সাক্ষাৎপ্রার্থী নাকি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে। আদালতে এমনিতেই নানারকম ধকল গেছে, সেখান থেকে গিয়েছিলেন

জগদানন্দের বাড়িতে, তারপর ক্লান্ত দেহে এতক্ষণে ফিরে এসেছেন নিজের ডেরায়। সন্ধ্যাবেলাটা তিনি কিছুক্ষণ একা থাকেন, কিছুটা স্ত্রীর সান্নিধ্যে গল্পগুজবে কাটান। এ সময় আগন্তুকের ঝামেলা বরদাস্ত হয় না তাঁর। প্রশ্ন করেন, কে লোকটা? কী চায়?

মিসেস্ বাসু বলেন, নাম বলতে আপত্তি আছে তাঁর। ধুতি পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক। বয়স আন্দাজ ত্রিশ। বলেছেন—ব্যাপারটা গোপন।

বাসু-সাহেব জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে বলেন, ব্যারিস্টারের কাছে সাঁঝের অন্ধকারে যে দেখা করতে আসে তার ব্যাপারটা গোপনই হয়ে থাকে রানু, সেটা কোনো সংবাদ নয়। কিন্তু কী করে এসেছে লোকটা? খুন? না তহবিল তছরুপ?

রানি দেবী হেসে বলেন, তোমার কি ধারণা সে-কথা আমার কাছে স্বীকার করার পরেও ভদ্রলোকের গোপনীয়তা বজায় থাকত?

—ঠিক আছে। পাঠিয়ে দাও। আমি বাইরের ঘরে বসছি।

একটু পরে ওঁর চেম্বারে যে ভদ্রলোক এসে ঢুকলেন তিনি মোটেই অপরিচিত ব্যক্তি নয়, যদিও তাঁর সাজে-পোশাকে একটু অভিনবত্ব আছে। ধড়া-চূড়া খুলে রেখে নিতান্ত বাঙালি বাবুটি সেজে এসেছেন।

—কী ব্যাপার মণীশবাবু? হঠাৎ এভাবে ছদ্মবেশে শত্রুশিবিরে? বসুন।

মণীশ বর্মণ ওঁর ভিজিটার্স চেয়ারে বসে বললে, আপনার একটা অভিযোগও কিন্তু টিকছে না বাসু-সাহেব। প্রথমত এটা আমার ছদ্মবেশ নয়, নিতান্তই আমার নামরূপের উপযোগী বাঙালি পোশাক—দ্বিতীয়ত আমি শত্রুপক্ষের লোকও নই। বরং বলব—পাছে আপনি আমার মধ্যে শত্রুপক্ষের আভাস পান তাই পুলিশের সাজ-পোশাক খুলে রেখে এসেছি। সংক্ষেপে আপনার সামনে যে বসে আছে সে ইন্সপেক্টার মণীশ বৰ্মণ নয়, মণীশবাবু!

—ভূমিকাটা ভালই হয়েছে—এবার বিষয়বস্তুতে আসা যাক? কী ব্যাপার?

মণীশ কিন্তু সরাসরি বক্তব্যে আসতে পারল না। কোথায় যেন তার বাধছে। একটু ইতস্তত করল, নড়ে-চড়ে বসল। শেষে গলাটা সাফা করে শুরু করল : ভূমিকাটা আমার শেষ হয়নি বাসু-সাহেব। মুখবন্ধ হিসাবে আরও কয়েকটা কথা বলে নিই। না হলে আমি ঠিক সহজ হতে পারছি না।

—বলুন?

—প্রথমে কিছুটা নিজের কথা বলি। আমার চাকরি আট বছরের। কলেজে পড়াশুনায় ভাল ছাত্র ছিলাম। পুলিশের চাকরিতে উন্নতি হয়েছে বেশ তাড়াতাড়ি। কিন্তু চাকরি জীবনে একটা অভিশাপ থাকে—জানেন নিশ্চয়ই—আমি সেই অভিশাপের খোরাক হয়েছি। যে কেসটায় এখন আপনি আর আমি বিপরীত দিকে দাঁড়িয়েছি—আমি জগদানন্দবাবুর কেসটার কথা বলছি—সে কেসে আমি ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছি। সব কথাই স্বীকার করব—আমার প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল, যোগানন্দ-হত্যা মামলায় জগদানন্দকে আসামি করাটা ভুল হচ্ছে। আমি আমার রিপোর্টে প্রথম থেকেই বলে যাচ্ছি যে, যোগানন্দকে জগদানন্দ খুন করেননি, করতে পারেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে একমত হতে পারলেন না। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। উপরওয়ালার নির্দেশ অনুসারে আমাকে কেস সাজাতে হল। আমি মনে মনে জানতাম যে, আপনি জগদানন্দকে নিরপরাধী বলে নিশ্চয়ই প্রমাণ করতে পারবেন। আজকে আদালতে আপনি মামলাটাকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তাতে আমার ধারণা যে সত্য সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। মজা হচ্ছে এই যে, আমার উপরওয়ালা কর্তৃপক্ষ সব বুঝেও তাঁর গোঁ ছাড়ছেন না।

মণীশ বর্মণ হঠাৎ নীরব হল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন দেখলেন ও আর কিছু বলছে না তখন বাধ্য হয়ে বাসু-সাহেব বলেন, বুঝলাম। এখন আপনি কী চাইছেন ঠিক করে বলুন তো? আমি কী ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? ইচ্ছে করে কেসে হারব?

মণীশ ম্লান হেসে বলে, পুলিশের চাকরিতে এই হচ্ছে বিড়ম্বনা মিস্টার বাসু। আমি কেসটা হারলে আমার চাকরিতে একটা দাগ পড়বে। সরকারি ফাইলে শুধু লেখা থাকবে কেসটা আমি ইনভেস্টিগেট করেছিলাম, আমিই পরিচালনা করেছিলাম এবং এমনভাবে কেসটা সাজিয়েছিলাম, যাতে অভিযুক্তের শাস্তি হয়নি।

বাসু-সাহেব একটু বিরক্ত হয়েই বলেন, কিন্তু আমি তার কী করতে পারি?

—সেই কথাই বলছি স্যার! আমার মনে হল, জগদানন্দ বেকসুর ছাড়া পেয়ে যান তো যান, কিন্তু প্রকৃত অপরাধীকে যদি আমরা ধরতে পারি তাহলে এ অবস্থা থেকেও আমি ভরাডুবিকে ঠেকাতে পারব। আপনার কীর্তি-কাহিনি সবই আমার জানা। আপনার প্রতিটি কেস্-হিস্ট্রি খুঁটিয়ে পড়েছি আমি। তাই ভাবলাম, আপনি কিছুতেই জগদানন্দকে মুক্ত করে আপনার কর্তব্য সমাপ্ত হয়েছে বলে মনে করবেন না। যোগানন্দকে কে হত্যা করেছে সে রহস্যটা ভেদ না করা পর্যন্ত আপনার রাতে ঘুম হবে না। ঠিক নয়?

বাসু-সাহেব একটা চুরুট ধরালেন।

—তাই আমি আদালত থেকে বাড়ি ফিরে জামা-কাপড় ছেড়ে সোজা আপনার কাছেই চলে এসেছি।

—হুম্। কিন্তু আপনার উপরওয়ালা কি এ তথ্যটা জানেন?

—না। জানেন না। কোনদিন জানতেও পারবেন না। আমি চাই আপনাকে সাহায্য করতে, বরং বলা উচিত আপনার সাহায্যে রহস্যটা ভেদ করতে। আপনি কি রহস্যটার কিনারা করতে পেরেছেন?

—না। তবে কয়েকটা সম্ভাবনার কথা মনে জাগছে।

—আমার মনে হয় আরও কয়েকটি ক্লু পেলে হয়তো আপনার পক্ষে রহস্যটা ভেদ করা সহজ হবে। সুতরাং সর্বপ্রথমে আমরা আমাদের সংগৃহীত ‘কু’গুলো বিনিময় করি। আপনি কী বলেন?

বাসু-সাহেব বলেন, আমার আপত্তি নেই, তবে আমাদের সন্ধির শর্তগুলো তার আগে স্থির হওয়া প্রয়োজন। আপনি ঠিক কী চান, তাই আগে বলুন?

—আমার তরফে একটি মাত্র শর্ত। জগদানন্দকে মুক্ত করেই আপনি থামবেন না, প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করে দেবেন এবং কী সূত্রে তাকে চিহ্নিত করলেন তা শুধু আমাকেই জানাবেন!

—আমি রাজি! শুধু ওটুকুই নয়, প্রকৃত অপরাধীকে যাতে আপনিই গ্রেপ্তার করেন সে ব্যবস্থাও আমি করে দেব—যদি আদৌ তাকে ধরতে পারি।

—থ্যাঙ্ক য়ু স্যার!

এরপর দীর্ঘ সময় ওঁরা নিজ-নিজ তথ্যের আদানপ্রদান করতে থাকেন। ইতিমধ্যে কৌশিকও বাসায় ফিরে এসেছিল। তাকেও ডেকে পাঠালেন বাসু-সাহেব। তিনজনে গভীর আলোচনায় ডুবে গেলেন। বাসু-সাহেব বলেন, মণীশবাবু, আপনি প্রথমে বলুন হত্যাকারী হিসাবে কাকে আপনার সন্দেহ হয় এবং কেন?

মণীশ বললে, আমার বিশ্বাস যোগানন্দকে যে হত্যা করেছে তাকে আপনারা চেনেনই না।

কৌশিক ঠাট্টা করে বলে, যা বাব্বা! গোয়েন্দা কাহিনিতে তো এমন হওয়ার কথা নয় মণীশবাবু,—আসল অপরাধীকে ধরতে না পারলেও তার পরিচয় আমাদের পাওয়া উচিত ছিল।

মণীশ বললে, প্রথম কথা এটা গোয়েন্দা গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা। দ্বিতীয় কথা— আমি বলতে চাই যোগানন্দকে যে হত্যা করেছে তাকে না চিনলেও যার নির্দেশে সে হত্যা করেছে তাকে আপনারা চেনেন।

বাসু বলেন, আর একটু পরিষ্কার করে বলুন।

—আমার ধারণা—এটা পাকা হাতের কাজ। অ্যামেচার নয়, প্রফেশনাল খুনির কাজ এ কথা মনে করছি যে ‘ব্লু’-টার সাহায্যে সেটা আগে জানাই। সে খবর আপনাদের অজানা। আমি জানি, য়ু সিয়াঙকে আপনারা সন্দেহজনক ব্যক্তি মনে করে নজরবন্দি করেছেন। কিন্তু যার মাধ্যমে করেছেন সেই জয়দীপ ছোকরা হচ্ছে অ্যামেচার। তাই ‘ব্লু’-টার সাহায্যে সেটা আগে জানাই। সে খবর আপনাদের অজানা। তাই ‘কু’-টার সন্ধান সে পায়নি। য়ু সিয়াঙ সম্বন্ধে আমিও খবরাখবর নিয়েছি। আমার সংবাদসূত্র বলছে—য়ু সিয়াঙ কলকাতায় এসে সর্বপ্রথমেই জগদানন্দের দ্বারস্থ হয়নি, সে ক’লকাতার ‘আন্ডার-গ্রাউন্ড’ জগতের সঙ্গেই প্রথম যোগাযোগ করে টেলিফোনে। দ্বিতীয়ত জয়দীপের ধারণা য়ু সিয়াঙ রবিবার সারাদিন একটা টুরিস্ট বাসে শহর দেখে বেরিয়েছে। খবরটা ভুল। লোকটা অত্যন্ত সেয়ানা। সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছিল তাকে কেউ হোটেলে নজরবন্দি করে রেখেছে। তাই রবিবার সকালে সে টুরিস্ট বাসে রওনা হলেও এসপ্ল্যানেডে নেমে যায়। গুন্ডাদের গোপন আড্ডায় যায় এবং বিকাল তিনটে নাগাদ টুরিস্ট বাসের প্রোগ্রাম অনুযায়ী আবার অন্যত্র বাসে চেপে বসে। জয়দীপের ধারণা রবিবার সমস্ত দুপুর সে ঐ টুরিস্ট বাসেই ছিল। তা সে ছিল না। তৃতীয়ত, রবিবার রাত সাড়ে নয়টায় সেই ‘আন্ডার-গ্রাউন্ড’ জগতের একজন কুখ্যাত গুন্ডা-প্রকৃতির লোক পার্ক হোটেলে আসে। যে সময় ঐ হোটেলে মহেন্দ্র এবং তাঁর উকিল য় সিয়াঙের সঙ্গে দেখা করে প্রায় সেই সময়ই। সে যে ঠিক কার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তা জানি না—তবে আমার অনুমান লোকটা মহেন্দ্র-বিশ্বম্ভর পার্টির সঙ্গে দেখা করতে আসেনি, এসেছিল য়ু সিয়াঙের কাছেই।

—লোকটার নাম কী?—জানতে চান বাসু-সাহেব।

মণীশ বর্মণ বলে, পিতৃদত্ত নামটা ঠিক কী তা জানি না, পুলিশের খাতায় তার নাম খোকা গুন্ডা। বার দুই তাকে খুনের মামলায় জড়ানো হয়েছিল; দু বারই পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে ডাকাতির কেসে বছর পাঁচেক একবার মেয়াদও খেটেছে। লোকটা রীতিমতো দাগি। ভবানীপুর থানায় তাকে প্রত্যহ সন্ধ্যায় হাজিরা দিতে হয়।

কৌশিক বলে, ধরা যাক আপনার অনুমান সত্য। এ খুনটা কোনো অ্যামেচারের হাতে হয়নি, খোকা গুন্ডাই আসল অপরাধী। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে মধ্যরাত্রিতে সে কী করে রুদ্ধদ্বার ঘরের ভিতর ঢুকল?

—রুদ্ধদ্বার বলতে দুটো দরজা। সদর দরজা আর যোগানন্দের শয়নকক্ষের দরজা। দুটো দরজার কোনোটাই ভিতর থেকে ছিটকিনি বা খিল দিয়ে বন্ধ ছিল না—গা-তালা লাগানো ছিল। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, সবকটা দরজার ডুপ্লিকেট চাবির থোকাটাই ঘটনার পূর্বে চুরি গিয়েছিল।

কৌশিক বললে, তা গিয়েছিল; কিন্তু সে-ক্ষেত্রে য়ু সিয়াঙকে সন্দেহ করাটা কি স্বাভাবিক? বহিরাগত য়ু সিয়াঙ কেমন করে নীলিমা দেবীর দেরাজ থেকে ডুপ্লিকেট চাবির গোছাটা চুরি করবে? মহেন্দ্রবাবু সেটা করতে পারে হয়তো—যে-হেতু সে ঐ বাড়িতে ছিল; কিন্তু আপনিই তো বলছেন খোকা গুন্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল য়ু সিয়াঙ, মহেন্দ্র নয়। আর তার চেয়েও বড় কথা—মোটিভ। মহেন্দ্ৰ অথবা-য়ু সিয়াঙ কী কারণে যোগানন্দকে হত্যা করবার উদ্দেশ্যে ভাড়াটে গুন্ডা লাগাবে তাই বলুন?

মণীশ বলে, এ বিষয়ে আমার থিয়োরি এই যে, যোগানন্দকে হত্যা করবার ইচ্ছা য়ু সিয়াঙ-এর আদৌ ছিল না। সে ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়েছিল মহেন্দ্রকে খুন করতে। ভেবে দেখুন—ঐ খাটে মহেন্দ্ররই রাত্রে শোওয়ার কথা। য়ু সিয়াঙ কেমন করে জানবে ওরা ঘর বদলাবে?

কৌশিক অসহিষ্ণু হয়ে বলে, কিন্তু কে কোন ঘরে রাত্রে শোয় সেটা য়ু সিয়াঙ জানবে কেমন করে? সে তো মাত্র ঘণ্টাখানেকের জন্য একবার ঐ বাড়িতে গিয়েছিল। জগদানন্দের সঙ্গে কথা বলে চলে আসে। তার পক্ষে কি জানা সম্ভব মহেন্দ্র কোন ঘরে রাত্রে শোয়?

মণীশ সে-প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বাসু-সাহেবকে বলে, আপনি কী বলেন?

বাসু-সাহেব এতক্ষণ নীরবে ধুমপান করে যাচ্ছিলেন। নড়ে-চড়ে বসে বলেন, আমি বলি কি ঘরে বসে এসব তত্ত্ব-আলোচনা না করে, চলো আমরা একটু সরেজমিনে তদন্ত করে আসি।

—সরেজমিনে তদন্ত। সে আবার কোথায়?

বাসু বলেন, প্রথম কথা, মণীশবাবু, তুমি এখান থেকে ভবানীপুর থানায় একটা ফোন করে জেনে নাও সেই খোকাবাবু আজ তাঁর হাজিরা দিয়ে গেছেন কি না। যদি না দিয়ে গিয়ে থাকেন তবে তিনি এলে যেন তাঁকে আটকে রাখা হয়। আমরা রাত নটা নাগাদ ভবানীপুর থানায় যাব। দেখ, তাকে পাওয়া যায় কি না।

মণীশ মনে মনে খুশি হল। সে লক্ষ্য করেছে ইতিমধ্যে বাসু-সাহেব ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে নেমেছেন। অর্থাৎ মণীশ বর্মণ তাঁর স্নেহের পাত্রে উন্নীত হয়েছে। সোৎসাহে সে বাসু-সাহেবের টেলিফোনটা টেনে নিয়ে ভবানীপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করল। ভাগ্য ভাল—খোকা গুন্ডা এখনও তার হাজিরা দিতে আসেনি। মণীশ থানায় জানিয়ে রাখল, সে এলে তাকে যেন আটকে রাখা হয়। বাসু বলেন, প্রয়োজনবোধে খোকাবাবুকে যেন আমার অ্যাকাউন্টে চা-পান-সিগ্রেট জোগান দেওয়া হয় এটাও বলে রাখা।

মণীশ হাসতে হাসতে বলে, তার প্রয়োজন হবে না। আপনি বিখ্যাত ক্রিমিনাল সাইডের ব্যারিস্টার। অপরাধ-জগতের সবাই আপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়াটা সৌভাগ্য বলে মনে করে। কিন্তু রাত নটা বাজতে তো এখনও অনেক দেরি। এতক্ষণ কী করব আমরা?

বাসু গাত্রোত্থান করেন, ঐ যে বললাম—একটু সরেজমিনে তদন্ত করব। চল পার্ক হোটেলটা ঘুরে আসি। আটত্রিশ নম্বর কামরাটা একবার স্বচক্ষে দেখে রাখা ভালো।

মণীশ উঠে দাঁড়ায়। বলে, যেতে চান চলুন, কিন্তু একটা কথা বলে রাখি—য়ু সিয়াঙ ঐ ঘরটা ছেড়ে দিয়েছিল রবিবার রাত দশটায়। সেখানে অ্যাশট্রেতে কোনও চুরুটের ছাই অথবা ছেঁড়া-কাগজের ঝুড়িতে কিছুই পাবেন না! ইতিমধ্যে হয়তো একাধিক বোর্ডার ঐ ঘরে বাস করে গেছে!

বাসু-সাহেব আবার চটি জোড়া খুলে জুতো পায়ে দিতে দিতে বলেন, তা কি আগে-ভাগে কেউ বলতে পারে? কবি বলেছেন, যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলে পাইতে পার অমূল্য রতন! কী কৌশিক, যাবে না কি?

কৌশিক দৃঢ়ভাবে মাথা নেড়ে বললে, নিশ্চয় নয়! এতদিন পরে সেই ঘরটা সার্চ করতে যাবার মতো বাসনা আমার আদৌ নেই!

বাসু বললেন, ঠিক আছে। পরে কিন্তু তুমি পস্তাবে। চল হে মণীশবাবু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *